উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেমেদ্বীন উস্তযুল আসাতিযাহ সুলতানুল মুনাযিরীন নায়েবে আ’লা হযরত রাহবরে আহলে সুন্নাত বহু গ্রন্থ প্রণেতা মুহিউস সুন্নাহ বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মুর্শিদে বরহক হযরতুল আল্লামা সিরাজনগরী ছাহেব ক্বিবলা (মা.জি.আ.) এর
দোয়া ও অভিমত
========
بسم الله الرحمن الرحيم
বর্তমান যামানা ফিতনার যামানা। সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান-আমল নিয়ে সৃষ্টি করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রকার ফিতনা-ফাসাদ। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদসহ অনেক জঘন্যতম কর্মকা-কে ইসলামের নামে চালিয়ে দেওয়ার বহুমূখী ষড়যন্ত্র চলছে। অপরদিকে প্রকৃত ইসলামী আকিদা ও নেকআমলের বিরুদ্ধে কিছুসংখ্যক নামধারী আলেম ফতোয়াবাজি করে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। উদাহরণ স্বরূপ উল্লেখ করতে চাই, যুগ-যুগ ধরে পবিত্র মিলাদ-মাহফিলে আমরা সালাত-সালাম ‘ইয়া নবী সালাম আলাইকা’ ছন্দাকারে পাঠ করে আসছি, সেটাকে বর্তমানে আরবি গ্রামারের দোহাই দিয়ে ভুল প্রমাণ করার দুঃসাহস দেখানো হয়েছে। আল্লাহর ফজল ও করমে আমি দলিলভিত্তিক ও আরবি গ্রামার অনুযায়ী তাদের অপব্যাখ্যার সমোচিত জবাব দিয়েছি এবং প্রমাণ করেছি যে, এই বাক্যটি সহি-শুদ্ধ ও চমৎকার বাক্য।
সম্প্রতি আমাদের ঈমানি কালিমা নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। আল্লাহর মেহেরবাণীতে আমার স্নেহের মুফতি ইকরাম উদ্দিন এ পুস্তকে তাদের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছেন। আমি পুস্তকটির বহুল প্রচার কামনা করি। দোয়া করি আল্লাহ যেন লেখকের নেক মাকসুদ কবুল করেন। আমিন।
শেখ মোহাম্মদ আব্দুল করিম সিরাজনগরী
**********************************
আঞ্জুমানে ছালেকীনের মহাসচিব, পীরে তরিকত উস্তাযুল উলামা ক্বারীউল কুররা মুনাযিরে আহলে সুন্নাহ মুফাসসিরে কোরআন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ সিরাজনগর ফাজিল মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক আমার পরম শ্রদ্ধেয় উস্তাদ
আল্লামা শেখ জুবাইর আহমদ রহমতাবাদী হুজুরের
অভিমত
====
بسم الله الرحمن الرحيم
কালিমায়ে তাইয়্যিবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ। এটাই ঈমানি কালিমা, যা সর্বপ্রথম আমরা শিখেছি। শিশুকাল থেকে আজ পর্যন্ত মা-বাবা, পীর-উস্তাদ, আলেম-উলামা, আউলিয়ায়ে কেরামের কিতাবাদি, সর্বোপরি হাদিসশরীফ থেকে আমরা তাই শিখেছি। বর্তমানে কয়েকজন নামধারী আলেম এই কালিমাশরীফ নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাদের দাবি-
* এই কালিমাশরীফ নাকি পবিত্র হাদিসে নাই
* এই কালিমা নাকি দুনিয়ার কোন উল্লেখযোগ্য কিতাবে নেই
* এই কালিমার দুটি অংশ নাকি একই জায়গায় পাশাপাশি নাই। একটি অংশ উপরে একটি অংশ নিচে ছিল। আমরা যেভাবে পাঠ করি বা লিখি তা ঠিক নয়, ভুল বরং শিরক।
* তাছাড়া আল্লাহ শব্দ এক পার্শ্বে মোহাম্মাদ শব্দ অন্য পার্শে¦ এভাবে লিখাও শিরক।
প্রিয় পাঠক- কালিমা সম্পর্কে ওদের এসব হাস্যকর উদ্ভট বক্তব্যের জবাব দেওয়ার কোন প্রয়োজন ছিল না। কারণ এসব উদ্ভট আপত্তি কোন প্রকৃত আলেম করতে পারে না। আসলে ওরা ইসলামের দুশমন। ওদের মুনাফিকি চরিত্র ধরা পড়ে গেছে। ওরা বিশ্বের নিকট আমাদের ইসলাম ধর্মকে একটি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে দেখাতে চায়। আর আমাদেরকে এটা বলে বিভ্রান্ত করতে চায় যে, এতদিন যাবত যেই কালিমাকে ঈমানি কালিমা বলা হয়েছে তার কোন দলিল প্রমাণ নেই।
সুতরাং বর্তমানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের পক্ষ থেকে ওদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কলম ধরা অপরিহার্য কর্তব্য হয়ে দাড়িয়েছে। আল্লাহতা’য়ালার অশেষ মেহেরবাণী আমার প্রিয় ছাত্র হাফিজ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ ইকরাম উদ্দিন অত্র পুস্তকে ওদের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছে। এরপূর্বেও ‘বিভ্রান্তির অবসান’ নামক অন্য একটি পুস্তকে ঈদে মিলাদুন্নবী বিদ্বেষীদের আপত্তির খ-ন ও যথোপযুক্ত জবাব দিয়েছেন।
দোয়া করি আল্লাহতা’য়ালা যেন তাকে বাতিলের বিরুদ্ধে আজীবন কলম চালিয়ে যাওয়ার তৌফিক দেন এবং তাঁর প্রবাসজীবনে শান্তি, সুন্দর ও সফলতা দান করেন। আমিন।
শেখ জুবাইর আহমদ রহমতাবাদী
*******************************************
প্রকাশকের কথা
========
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার যিনি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’। অসংখ্য দরূদ ও সালাম সে নবীর প্রতি যিনি ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’।
বর্তমান যামানা বড় ফিতনার যামানা। বিভিন্ন আলিম নামধারী বাতিল ফিরকাদের মনগড়া ফতোয়ার কারণে সাধারণ মুসলমানগণ আজ বিভ্রান্ত। অনেক সময় দেখা যায় কুরআন হাদিসের জ্ঞান ব্যতিরেখেই অনেকে ফতোয়াবাজি করছেন। তারা কথায় কথায় বলেন- ‘ইন্টারনেটে পেয়েছি অমুক হাদিস জাল, অমুক হাদিস জয়িফ, মাযহাব মানা বিদআত ইত্যাদি।
সর্বোপরি ঈমানের কালিমাকেও শিরক বলে ফতোয়া প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষ করে কালিমায়ে তাইয়্যিবাহ সম্বন্ধে আব্দুর রহিম সালাফি ও তারেক মনোয়ারের বক্তব্যটি শুনে আমি নিজেও হতবাক হয়ে যাই। তাই আমাদের বৃস্টল সেন্ট্রাল মসজিদের খতিব জনাব মাওলানা ইকরাম উদ্দিন সাহেবকে অনুরোধ করি এ বিষয়ের উপর একটি পুস্তক লিখার জন্য। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি অত্যন্ত পরিশ্রম করে ‘কালিমায়ে তাইয়্যিবাহ’ নামক বইটি রচনা করেছেন। আশা করি বইটি পাঠ করলে সরল প্রাণ মুসলমানগণ তাদের ঈমান আকিদাকে হিফাযত করতে পারবেন। তাই আমি বইটি প্রকাশ করতে পেরে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করছি।
হে আল্লাহ আমার এ খিদমতটুকু আমার মা-বাবা ও শ্বশুর শ্বাশুড়ির জন্য সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল কর। মাওলানার জন্য দোয়া করি আল্লাহ যেন তার ইলম ও হায়াতে বরকত দান করেন। আমিন।
প্রকাশক
মোহাম্মদ শফিক চৌধুরী
প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান
বৃস্টল সেন্ট্রাল মসজিদ, ইউকে।
➖➖➖
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله رب العالمين – والصلوة والسلام على سيد المرسلين- وعلى اله واصحابه اجمعين- اما بعد
আজ এমন একটি সময় ‘কালিমায়ে তাইয়্যিবাহ’ নামক পুস্তকটি লিখতে যাচ্ছি যখন সমগ্র বিশ্বজুড়ে চলছে অন্যায়, অত্যাচার, যুলুম, নির্যাতন। বিশেষ করে মুসলিম জাতি আজ চরমভাবে নির্যাতিত।
ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল তৈরি করছে উগ্র সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, আইএসবাদ ইত্যাদি। যার নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন সরলপ্রাণ সাধারণ মুসলমানগণ।
ওহাবিবাদ, মওদুদীবাদসহ পুরাতন বাতিল মতবাদগুলোর সাথে নতুন করে আবির্ভাব হয়েছে সালাফিবাদ নামে আরেকটি উগ্র মতবাদ। যারা কখনো সালাফি, কখনো আহলে হাদিস, আবার কখনো লা মাযহাবি বলে পরিচয় প্রদান করে।
জনৈক আব্দুর রহিম সালাফি তাদেরই একজন প্রচারক। কালিমায়ে তাইয়্যিবাহ সম্বন্ধে তিনি বলেছেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ এর সাথে ‘মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ যুক্ত করা শিরক। এই কালিমা নাকি ইহুদি নাসারাদের চক্রান্তের ফসল! এই কালিমার দ্বারাই আমাদের ঈমান আকিদার সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। লোভী মৌলভীরা নাকি মক্তব থেকে অশুদ্ধভাবে এই কালিমা শিক্ষা দিয়েছেন, পৃথিবীর বুকে এমন কোন কিতাব কেউ দেখাতে পারবে না যাতে এই কালিমা বর্ণিত হয়েছে।’
এমনিভাবে তারেক মনোয়ার নামে আরেকজন জামাতি মাওলানা একই সূরে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন- এই কালিমা কোন হাদিস থেকে সাবিত হয় নাই। এক পাশে আল্লাহ এবং অন্য পাশে মুহাম্মদ লিখা এটাও শিরক।
তাদের বক্তব্যগুলো আমার কাছে সংরক্ষিত আছে। এ সমস্ত মনগড়া বক্তব্যের কারণে সরলপ্রাণ, মুসলমানগণ মারাত্মকভাবে বিভ্রান্তির শিকার হচ্ছেন। তাই আমি উক্ত পুস্তকটি লিখার প্রয়াস পাই। এতে আমি প্রায় ৮টি তাফসির ও ১০টিরও অধিক হাদিস গ্রন্থের উদ্ধৃতি সহকারে প্রমাণ করেছি যে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ ইহাই হচ্ছে ঈমানের কালিমা বা কালিমায়ে তাইয়্যিবা। আশা করি বইটি পাঠ করে সর্বস্তরের মুসলমানগণ উপকৃত হবেন।
বইটি প্রকাশনার ক্ষেত্রে যার নিকট আমি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ তিনি হচ্ছেন আমার শ্রদ্ধেয় উস্তাদ সিরাজনগর ফাজিল মাদ্রাসার আরবি প্রভাষক উস্তাযুল উলামা পীরে তরিকত হযরতুল আল্লামা শেখ জুবাইর আহমদ রহমতাবাদী। তিনি বইটির আদ্যোপান্ত দেখে বিশেষ করে আরবি ইবারতগুলো যাচাই-বাছাই করে বইটির গুনগত মান বৃদ্ধি করেছেন। আল্লাহ যেন তাঁর ইলমে, হায়াতে বরকত দান করেন। অতঃপর প্রাণ খুলে দোয়া করছি বৃস্টল সেন্ট্রাল জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জনাব মোহাম্মদ শফিক চৌধুরী সাহেবের জন্য। যার আর্থিক সহযোগিতায় বইটি প্রকাশিত হয়েছে। আল্লাহ যেন তাকে রাসূলের গোলাম হিসেবে কবুল করেন।
হে আল্লাহ আমার এ ক্ষুদ্র খিদমতটুকু আমার শ্রদ্ধেয় আম্মা ও মরহুম আব্বার জন্য সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল কর।
পরিশেষে পাঠকবর্গের নিকট আরজ যদি কোথাও কোন অনিচ্ছাকৃত ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হয় তাহলে আমাকে অবহিত করবেন। তাহলে পরবর্তী সংস্করণে সংশোধন করে নিব। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন সুন্নিয়ত প্রচারে আমার কলম চালিয়ে যেতে পারি। আমিন।
মুহাম্মদ ইকরাম উদ্দিন
খতিব, বৃস্টল সেন্ট্রাল মসজিদ
ইউকে।