কিতাবঃ প্রিয় নবীর পরকালীন জীবন (পর্ব ৮), হাদিস ২৬-৩০ : ইয়া মুহাম্মদ/ইয়া রাসুলুল্লাহ ﷺ বলে সম্বোধন, উসীলা ও সাহায্য প্রার্থণা/ইস্তিগাসা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

হাদিস ২৬

وفي رواية :
ځدرت رجل رجل عند ابن عباس رضي الله عنهما ، فقال ابن عباس رضي الله عنهما : أذكر أحب الناس إليك . فقال : محمد صلي الله عليه وسلم ، فذهب خدره .

رواه ابن السنی .

এক বর্ণনায় আছে যে,
হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাছ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা এর নিকট বসাবস্থায় কোন এক ব্যক্তির পা অনুভূতিহীন হয়ে গেল। তখন তিনি ঐ ব্যক্তিকে বললেন, লােকদের মধ্যে যিনি আপনার নিকট সর্বাধিক প্রিয় তাঁর স্মরণ করুন, তখন ঐ ব্যক্তি এয়া মুহাম্মদ! (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এই শ্লোগান লাগালেন, তখনই তার পায়ের অবশাবস্থা চলে গেল।

এ হাদিসকে ইমাম ইবনুসসুন্নী বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ২৭

وفي رؤية :
عن الهيثم بن حنش قال : كنا عند غبد الله بن عمر رضي الله عنهما فخدرت رجله ، فقال له رجل : آذكر احب الناس إليك . فقال : يا محمد صلي الله تعالي عليه وسلم ، فقال : فقام فكانما نشط من عقال .

رواه ابن السنئ،

এক বর্ণনায় হযরত হায়ছম ইবনু হানাশ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বয়ান করেন যে, আমরা হযরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমার নিকট ছিলাম। এক ব্যক্তির পা অবশ হয়ে গেল, তখন তাকে অপর এক ব্যক্তি বলল, লােকদের মধ্য থেকে তােমার নিকট যিনি সর্বাধিক প্রিয় তার স্মরণ করুন। তখন তিনি বললেন, এয়া মুহাম্মদ! (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) বর্ণনাকারী বয়ান করেন যে, সেখানেই ঐ ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল, যেমন রশির বাঁধ থেকে মুক্তি পেয়ে আরােগ্য হয়ে গেছে।

এ হাদিসকে ইমাম ইবনুসসুন্নী বর্ণনা করেছেন।

হাদিস ২৮

عن أبي أمامة بن سهل بن حنيف، عن عمه عثمان بڼ حنيف: أن رجلا، گان يختلف إلى عثمان بن عفان رضي الله عنه في حاجة له، فكان عثمان لا يلتفت إليه ولا ينظر في حاجته، فلقي ابن حنيف فشگی ذلك إليه، فقال له عثمان بن حنيف: ” اءت الميضاة فتوضا، ثم اءت المسجد فصل فيه ركعتين، ثم قل: اللهم إني أسألك وأتوجه إليك بنبيا محمد صلى الله عليه وسلم نبي الرحمة، يا محمد إني أتوجه بك إلى ربي فتقضي لي حاجتي وتذكر حاجتك ” ورح حتى أروح معك، فانطلق الرجل فصنع ما قال له، ثم أتي باب عثمان بن عفان رضي الله عنه، فجاء البواب حتى أخذ بيده فادخله علي  عثمان رضي الله عنه، فأجلسه معه على الطنفسة، فقال: حاجتك؟ فذكر حاجته وقضاها له، ثم قال له: ما ذكرت حاجتك حتى كان الساعه، وقال: ما كانت لك من حاجة فاذكرها، ثم إن الرجل خرج من عندي قلقي عثمان بن حنيف، فقال له: جزاك الله خيرا ما كان ينظر في حاجتي ولا يلتفت إلى حتى كلمته في، فقال عثمان بن حنيف: والله ما كلمته، ولكني شهدت رسول الله صلى الله عليه وسلم وأتاه ضرير فشگی إليه ذهاب بصره، فقال له النبي صلى الله عليه وسلم: «فتصبر» فقال: يا رسول الله، ليس لي قاءد وقد شق علي، فقال النبي صلى الله عليه وسلم: «اءت الميضأة فتوضا، ثم صل ركعتين، ثم ادع بهذه الدعوات» قال ابن حنيف: فوالله ما تفرقنا وطال بنا الحديث حتى دخل علينا الرجل كأنه لم يكن به ضر قط .

رواه الطبراني والبيهقي . وقال المنذري : والحديث صحيح

হযরত আবু উমামা ইবনু সাহাল ইবনু হানিফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু নিজ চাচা হযরত ওসমান ইবনু হানিফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি হযরত ওসমান ইবনু আফফান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকট কোন প্রয়ােজন আসছিলেন কিন্তু হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার দিকে দৃষ্টিপাত করছিলেন না এবং তার প্রয়ােজনের বিষয়ে চিন্তাও করতে ছিলেন না। সে ব্যক্তি ওসমান (ইবনু হানিফ) রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করল। নিজ জিজ্ঞাস্য বিষয়ে তার নিকট অভিযােগ করল। ওসমান ইবনু হানিফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাকে বললেন, বদনা নাও, অজু কর। অতঃপর মসজিদে এসে দুই রাকাত নামায পড়। তারপর (এই দোয়া) পড়, হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট চাইতেছি এবং আপনার দিকে নিজ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম রহমতের নবীর অসিলায় সম্মুখীন হচ্ছি। হে মুহাম্মদ! আমি আপনার অসিলায় নিজ রবের দিকে সম্মুখীন হচ্ছি যে, তিনি আমার এই প্রয়ােজন পূর্ণ করবেন। তারপর নিজ প্রয়ােজন স্মরণ কর। (এবং এই দোয়া পড়ে হযরত ওসমান ইবনু আফফান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকট যাও) শেষ পর্যন্ত আমিও তােমার সাথে এসে যাব। তখন ঐ মানুষটি গেল এবং সে তাই করল যা তাকে বলা হয়েছিল।

আবার সে হযরত ওসমান ইবনু আফফান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর দরজায় আসল তখন দারােয়ান তার হাত ধরল এবং হযরত ওসমান ইবন আফফান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নিকট নিয়ে গেল, হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তাকে নিজের পাশে চাটাইর উপর বসালেন এবং জিজ্ঞাসা করলেন, আপনার প্রয়ােজন কি? তখন সে নিজ প্রয়ােজন বয়না করল এবং তিনি উহা পূর্ণ করে দিলেন। তারপর তিনি তাকে বললেন, তুমি নিজের এ প্রয়ােজনের কথা এতদিন বল নাই কেন? আগামীতে তােমার যে প্রয়ােজন হােক না কেন আমাকে বল। তখন লােকটি তার নিকট থেকে চলে গেল এবং হযরত ওসমান ইবনু হানিফের সাথে সাক্ষাৎ করল এবং তাঁকে বলল, আল্লাহ তা’আলা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক যদি আপনি আমার জিজ্ঞাসা বিষয়ে হযরত ওসমানের সাথে আলাপ না করতেন তিনি আমার প্রয়ােজনের বিষয়ে চিন্তা করতেন না। আমার দিকে দৃষ্টিপাতও করতেন না।

হযরত ওসমান ইবনু হানিফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, খােদার কসম আমি তার সাথে তােমার বিষয়ে আলাপ করিনি। বরং আমি আল্লাহ তায়ালার রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম যে, এক অন্ধ লােক আসল এবং তাঁর নিকট নিজ দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলার অভিযােগ পেশ করল। তখন হযরত সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তুমি ধৈয্য ধর। সে আরজ করল এয়া রাসূলল্লাহ! আমার কোন খাদেম নেই এবং আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, তখন হযরত সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, বদনা নিয়ে এস এবং অজু কর (এবং তাকে এই আমল শিক্ষা দিলেন) হযরত ইবনু হানিফ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, খােদার কসম! আমরা তখনও মজলিস থেকে দূরে যাইনি এবং আমাদের মধ্যে দীর্ঘ কোন কথােপকথনও হয়নি। শেষ পর্যন্ত অন্ধ লােকটি আমাদের নিকট (এ অবস্থায়) আসল যে যেমন তার নিকট কোনদিন অন্ধত্ব ছিলই না।

এ হাদিসকে ইমাম তৃবরানী এবং বায়হাক্বী বর্ণনা করেছেন। ইমাম মুনজেরী বললেন, এ হাদিস সহীহ।

________________________
ক. তাবরানী : আল মু’জামূল কবীর, ৯/৩০, হাদিস : ৮২১১; আল মু’জামুস্ সগীর, ১/১৮৩, হাদিস : ৫০৮; আদ্ দোয়া, ১/৩৩০, হাদিস : ১০৫০;
খ. বায়হাকী : দালায়িলুন নবুয়ত, ৬/১৬৭;
গ. আল মুনযিরী : আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/২৩, ২৭৪, হাদিস : ১০১৮;
ঘ. সুবকী : সিফাউস্ সিকাম, ১/১২৫;
ঙ. হায়ছুমী : মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ২/২৭৯;
চ. সুয়ূতী : খাসায়েসুল কুবরা, ২/২০১;

হাদিস ২৯

عن أبي هريرة رضي الله تعالى عنه
…… وحمل خالد بن ولید رضي الله تعالی عنه حتي جاؤهم وسار لجبال مسيلمة وجعل يترقب أن يصل إليه فيقتله ثم رجع ثم وقف بين الصفيين ودعا البراز . وقال : أنا ابن الوليد العود، أنا ابن عامر وزيد – ثم نادي  بشعار المسلمين ، وكان شعارهم يومءذ یا محمداه .

رواه الطبري وابن كثير واللفظ له .

হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু (দীর্ঘ বর্ণনায়) বয়ান করেন যে, (জঙ্গে ইয়ামামার স্থলে হযরত হুযায়ফা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদতের পর) হযরত খালেদ ইবনু অলিদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু (ইসলামী সেনার) পতাকা হাতে নিলেন এবং সেনাদলকে অতিক্রম করে মুসায়লামা কাজ্জাব এর পাহাড়ের দিকে গেলেন আর তিনি এ অপেক্ষায় ছিলেন যে, মুসায়লামা কাজ্জাব পর্যন্ত পৌছে তাকে হত্যা করবেন। অতঃপর তিনি ফিরে আসলেন এবং উভয় সেনাদলের মাঝখানে দাঁড়িয়ে রণকৌশলের আহ্বান জানালেন এবং উঁচু স্বরে ডাক দিলেন। আমি অলিদের পুত্র হই। আমি আমের ও যাইদ এর পুত্র হই। তারপর তিনি মুসলমানদের প্রচলিত শ্লোগান উঁচু করলেন এবং সেদিন তার যুদ্ধ শ্লোগান ছিল ‘এয়া মুহাম্মদাহ্ (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (এয়া মুহাম্মাদ! সাহায্য করুন)।

এ হাদিসকে ইমাম তবরানী এবং ইবনু কাছির উল্লিখিত শব্দ রাজির সাথে বর্ণনা করেছেন।

_______________________
ক. তাবারী : তারিখুল উমামি ওয়াল মূলক, ২/২৮১;
খ. ইবনে কাসীর : আল বিদাইয়াতু ওয়ান নিহায়া, ৬/৩২৪;

হাদিস ৩০

عن مالك الدار، قال: أصاب الناس قحط في زمن عمر، فجاء رجل إلى قبر النبي صلى الله عليه وسلم فقال: یا رسول الله، استسق لأمتك فانهم قد هلكوا، فأتى الرجل في المنام فقيل له: عليك الكيش، المنام فقيل له: ” اءت عمر فاقرءه السلام، وأخبره أنكم مسقيون وقل له : عليك الكيس “، فاتی عمر فاخبره فبگی عمر ثم قال: يا رب لا آلو إلا ما عجزت عنه .

رواه ابن أبي شيبة والبيهقي في الدلاءل . وقال ابن گثير : إسناده صحيح . وقال العسقلاني : رواه ابن أبي شيبة بإسناد صحيح.

হযরত মালেকদার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করছেন যে, হযরত ওমর ইবনু খাত্তাব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর আমলে লােকজন অভাবে পড়ে গেল, তখন একজন সাহাবী হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র কবরের নিকট হাজির হলেন এবং আরজ করলেন, এয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি আল্লাহ তা’আলার নিকট নিজ উম্মতের তৃপ্তির জন্য দোয়া করুন, কেননা তারা (অভাবগ্রস্থ হওয়ার কারণে) ধ্বংস হয়ে গেছে, তখন স্বপ্নে হুযূর নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ঐ সাহাবীর নিকট আসলেন এবং বললেন, ওমরের নিকট যাও। তাকে আমার সালাম বল এবং তাঁকে জানিয়ে দাও যে, তােমাদেরকে তৃপ্ত করা যাবে এবং ওমরকে (ইহাও) বলে দাও যে, (শত্রু আপনার প্রাণ নাশে তৎপর রয়েছে, তাদের নিকট থেকে) সতর্ক থাক, সতর্ক থাক। তারপর ঐ সাহাবী হযরত ওমরের নিকট গেলেন এবং তাকে সংবাদ দিলেন, তখন হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কাঁদলেন এবং বললেন, হে আল্লাহ! আমি কুণ্ঠা করছি না, কিন্তু আমার অপারগ হওয়া ছাড়া কোন কাজ রইল না।

এ হাদিসকে ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ এবং বায়হাক্বী দালায়েলুন নুবুওয়াত এ বর্ণনা করেছেন। ইমাম ইবনু কাছির বললেন, ইহার সনদ সহীহ। ইমাম আসক্বালানীও বললেন, ইমাম ইবনু আবি শায়বাহ ইহাকে সহীহ সনদের সাথে বর্ণনা করেছেন।

________________________

ক. ইবনে আবূ শায়বা : আল মুসান্নাফ, ৬/৩৫৬, হাদিস : ৩২০০২;
খ. বায়হাকী : দালায়েলুন নবুয়ত, ৭/৪৭;
গ. আবদুর রায্যাক : আল ইসতিয়াব, ৩/১১৪৯;
ঘ, সুবকী : সিফাউস্ সিকাম, ১/১৩০;
ঙ. হিন্দী : কানযুল উম্মাল, ৮/৪৩১, হাদিস : ২৩৫২৫;
চ. ইবনে তাইমিয়া : ইকতিদ্বায়ুস সিরাতিল মুসতাকিম /৩৭৩;
ছ. ইবনে কাসীর : আল বিদায়াতু ওয়ান নিহায়া, ৫/১৬৭;
জ. আসকালানী : আল ইসাবাহ, ৩/৪৮৪;

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment