কিতাবঃ নবী করীম (ﷺ) নাম শুনে বৃদ্ধা আঙ্গুলে চুমা খেয়ে চোখে লাগানো সুন্নাত
কৃত: মুফতি আবুল হাসান মুহাম্মদ ওমাইর রজভী
(বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম )
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য যিনি আপন হাবীব (ﷺ) এর মুহাব্বতকে আপন বান্দাদের উপর আবশ্যক করেছেন এবং লক্ষ কোটি দরুদ ও সালাম তার প্রিয় রাসূলের উপর , যিনি কিয়ামতের দিবসে শাফায়াত করবেন তার আশিকদের জন্য এবং সালাত ও সালাম তার পরিবার , আসহাবদের উপর যারা নবীয়ে পাককে আপন জান থেকেও প্রিয় জানতেন আমরা সবাই আল্লাহ তায়ালার বান্দা ও তার হাবীব (ﷺ) এর উম্মতের দাবিদার এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু কিছু কিছু উম্মতের দাবীদার (যারা উম্মত নামের কলঙ্ক) তারা হাবীবে দুজাহানের প্রতি ভালবাসা , শ্রদ্ধা নিবেদন করাকে শিরিক মনে করে।যেমন, দাঁড়িয়ে নবীকে সালাম প্রদান করা, রাসূলে পাক (ﷺ) নাম শুনার পর মুহব্বতে বৃদ্ধ ও শাহাদাত আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মুখে মালিশ করা, রাসূলকে নূরের সৃষ্টি মানা, রাসূলকে এলমে গায়েবের অধিকারী মানা ইত্যাদি।
❏ তাই আমি অধম আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খাঁন (رحمة الله) সুপ্রসিদ্ধ কিতাব منير العين فى حكم تقبيل الابهامين (মুনিরুল আইন ফী হুকমি তাক্ববিলুল ইবহামাইন) এবং মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁ নঈমী (رحمة الله) এর সুপ্রসিদ্ধ কিতাব جا الحق وزهق الباطل (জা’আল হ্বক ওযাহাকাল বাতিল) ও অন্যান্য কিতাব সমূহ পড়ে মনস্থ করলাম যে, রাসূলে পাক (ﷺ) এর নাম মোবারক আজানে শুনার পর দরূদ শরীফ পড়তঃ আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করার ফজিলত দুনিয়া ও আখিরাতে কি রকম ?
এ বিষয়টি সাধারণ জনতার মাঝে বই আকারে দিতে পারলে সরল প্রাণ মুসলিম জনতা ও আমি নিজেও উপকৃত হব।সাথে সাথে এই ক্ষুদ্র প্রয়াসকে রাসূলে পাক(ﷺ) এর নূরানী কদমে উৎসর্গ করলাম।হতে পারে এই বইয়ের দরূণ বহু বিভ্রান্ত জনতা হকের দিশা পাবে এবং হতে পারে এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য নাজাতের উছিলা হবে।
আল্লাহ আমাদের সকলকে তার রাসূলে পাক (ﷺ) এর গোলাম হিসেবে কবুল এবং মন্জুর করুক ।আমিন।
❏ আল্লাহ পাক কুরআনে পাকে এরশাদ করেন-
اليوم نختم على أفواههم وتكلمناايديهم وتشهدارجلهم بماكانوايكسبون(سوره يس٦٥)
অর্থ:-আজ (কিয়ামতের দিবসে) আমি তাদের মুখে তালা মেরে দেব এবং তাদের হাত কথা বলবে, তাদের পা সাক্ষ্য দেবে দুনিয়ার মধ্যে তারা যা অর্জন করেছিল। (সূরা ইয়াছিন-৬৫)
উপরোক্ত আয়াত দ্বারা বুঝা যায় কিয়ামতের ময়দানে মানুষের হাত, পা কথা বলবে এবং তারা হাত, পা কে কোন কাজে ব্যবহার করেছিল, পক্ষে ও বিপক্ষে তথা পূণ্য করেছিল না গুনাহের কাজ করেছিল তা আল্লাহর সামনে বলে দিবে।
আর যে উম্মত রাসুলে পাক (ﷺ) এর নাম শুনে মহব্বতে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করে অবশ্যই কিয়ামতের ময়দানে সেই আঙ্গুল ও সাক্ষ্য দেবে, হয়ত এটাই নাজাত তথা মুক্তির বড় মাধ্যম হতে পারে।
কারণ মানুষ তার ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে জান্নাত পাবে এর কোন সিউরিটি নেই বরং একমাত্র আল্লাহ তায়ালার দয়ার মাধ্যমেই জান্নাত পাওয়া যায়। আর কাজটি যেহেতু তার হাবীব (ﷺ) এর প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।সেহেতু আল্লাহ তায়ালা চাইলে আপন হাবীবের প্রতি দৃষ্টিপাত করে তার গুনাহগার উম্মতের উপর রহমত ও দয়া করতে পারেন।
যা আমাদের বিশ্বাস যাতে কোনো সন্দেহ নাই। তা ছাড়া রাসুলে পাক (ﷺ) এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করা যে মুস্তাহাব তার অসংখ্য দলিল ও প্রমাণাদি রয়েছে। অথচ অনেকে রাসুলের এই মহব্বতের কাজটাকে নাজায়েজ বলে । অথচ তারা জানে না যে, একটা কাজ নাজায়েজ বলার জন্য অকাট্য প্রমাণের প্রয়োজন হয়।
আর এই কাজটি নাজায়েজ হওয়ার পক্ষে শরীয়তের কোন দলিল নাই।আর এমন একটি ভালো বা পূণ্যের কাজে কেউ যদি বাধা দেয় ধরে নিতে হবে তার অন্তরে হাবীবে খোদার প্রতি বিদ্বেষ রয়েছে। বুঝে নিতে হবে সে রাসুলে পাকের শান ও মান সহ্য করতে পারেনা।
কুরআনের ভাষায় তাদের অন্তরে বক্রতা , কপটতা , নিপাকতি রয়েছে। আমরা আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাব যারা না বুঝে এরকম ভালো কাজে মানুষকে বাধা দেয় আল্লাহ যেন তাদের বুঝার তাওফিক দান করেন। (আমিন)
রাসুলে পাক (ﷺ) এর নাম শুনে আঙ্গুলদ্বয় চুমু খেয়ে চোখে মাসেহ করা মুস্তাহাব তথা পুন্যের কাজ।
❏ রাসুলে পাক (ﷺ) হাদীসে পাকে ইরশাদ করেন –
انما الاعمال بالنيات.
অর্থ:- সমস্ত কাজের ফলাফল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। (বুখারী শরীফ)
সুতরাং এই হাদীস থেকেই স্পষ্ট বুঝা যায় যে নিয়ত যদি ভালো হয় তাহলে আমলের উপর সাওয়াব পাওয়া যায়।আর নিয়ত খারাপ হলে আমলই গ্রহণযোগ্য হবেনা। এ থেকেই বুঝা যায় রাসুলে পাক(ﷺ) নামে চুমু খেয়ে আঙ্গুলদ্বয় চোখে মালিশ করা এটা রাসুলের প্রতি মহব্বতের বহিঃপ্রকাশ যা পূণ্যোর কাজ।সুতরাং এটি নাজায়েজ বা বিদায়াত হওয়ার প্রশ্নই আসেনা।
বরং যারা এ কাজকে নাজায়েজ ও বিদায়াত বলে মানুষকে রাসুলে পাক সরওয়ারে কায়েনাত ,ইমামুল আম্বীয়ার মহব্বত থেকে বিরত রাখছে বুঝে নিতে হবে তাদের নিয়তে গরমিল রয়েছে বরং তা নবী বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ।বরং যারা না বুঝে নবীর মহব্বত থেকে তার আশেকদের বিরত রেখে তারা নিজেদের পায়েই কুড়াল মারছে।
এছাড়া ও রাসুলের উম্মতের কিছু হাক্কানী আলেমগণ মিলে যখন কোন বিষয়ের উপর ঐক্যমত পোষন করে যে কাজটি ভালো।তখন কাজটির বিরোধীতা করা ও হারাম।
হাদিস থেকে প্রমাণ
রাসুলে পাক (ﷺ) এর নাম শুনে মহব্বতে যারা আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করবে তাদের প্রতি রাসুলে পাক(ﷺ) এর শুভ সংবাদ-
❏ হাদিস ১ :
রাসুল (ﷺ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
روى عن النبى صلى الله عليه وسلم انه قال من سمع اسمى فى الاذان ووضع ابهامين على عينيه فانا طالبه فى صفوف القيامة وقئده الى الخنة (صلوة مسعودى ٢)
অর্থ:- যে উম্মত আজানে আমার নাম শুনবে অতঃপর আঙ্গুলদ্বয় চোখের মধ্যে রাখবে আমি তাকে কিয়ামতের কাতার থেকে তালাশ করে জান্নাতে নিয়ে যাব। (সালাতে মাসউদি ২য় খন্ড)
❏ হাদিস ২ :
ইমাম ছাখাবী (رحمة الله)বলেন, আল ফেরদৌস নামক কিতাবে ইমাম দায়লমী (رحمة الله) উল্লেখ করেন, হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (رحمة الله) এর হাদিস থেকেঃ
قال السخاوى ذكره الدلمى فى الفردوس من حديث ابى بكر الصديق رضى الله عنه انه لما سمع قول المؤذن اشهد ان محمد الرسول الله قال مذا يعنى صلى الله عليك يا رسول الله وقرة عينى بك يا رسول الله وقبل باطن الانملتين السبابتين ومسح عينيه فقال صلى الله عليه وسلم من فعل مشل ما فعل حليلى فقد حلت له شفاعتى ولم يصح (مقاصد الحسنة فى الاحاديث الدائرة على السنة)
ছিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه) যখন মুয়াজ্জিন থেকে আজানে রাসুল (ﷺ) এর নাম শুনলেন প্রথম বারে “সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ” এবং দ্বিতীয় বারে “কুররাতু আইনি বিকা ইয়া রাসুলাল্লাহ” বলে আপন আঙ্গুলদ্বয় চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করলেন। রাসুল(ﷺ) এটা দেখে খুশি হয়ে বলেন , আমার বন্ধু যে কাজটা করেছে এই কাজ আমার উম্মতের মধ্যে যারাই করবে কিয়ামতের দিবসে তার জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হয়ে যাবে। হাদিসটি বর্ণনার ক্ষেত্রে সহীহ হওয়ার শর্তগুলো পাওয়া যায় নাই। (মাকাছেদে হাসনা)
যারা বলে হাদিসটি সহিহ নয় তাদের জবাব
উল্লেখ্য যে, হাদিসটির শেষ অংশ দেখে অনেকে বলে থাকে হাদিসটি সহীহ নয়, বিদায় আমল করা যাবে না। মূলত এগুলো বলে তারা প্রমাণ করে যে তাদের কাছে উসুলে হাদিসের জ্ঞান নেই ।আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ তাদেরকে উসুলে হাদিস বুঝার জ্ঞান দান করুক। আমিন।
❏ অথচ حديث صحيح এর পরে হাদিসের বহু স্তর রয়েছে, তারপর حديث ضعيف তথা দূর্বল হাদিস।যেমন- صحيح لغيره ،حسن لغيره، حسن لذاته তারপর ضعيف হাদিস।
❏ ইমাম মুহাম্মদ বিন আমীরুল হাজ্ব হালবী (رحمة الله) এর কিতাব حلية شرح منية (হুলিয়া শরহে মুনিয়া) তে উল্লেখ করেন-
قول الترمذى لا يصح عن النبى ﷺ فى،مذاالباب شئ انتهى لا ينفى وجود الحسن ونحوه والمطلوب لا يتوقف ثبوته على الصحيح بل كما يثبت به يثبت بالحسن ايضا.
অর্থাৎ ইমাম তিরমিযীর কথা এটা নবী (ﷺ) থেকে ছহীহের শর্তে আসেনি। উনার কথা “ছহীহ নয়” দ্বারা হাদিসের অপর প্রকার “হাসান” হওয়াকে নিষেধ করে না। অর্থাৎ সহীহ না হলে হাসান হতে পারে।প্রত্যেকটা মকসুদ হাদিসে সহীহের উপর নির্ভর নয়।বরং হাসান থেকেও হতে পারে।যা কিছু সহীহ দ্বারা প্রমাণ হয় তা “হাসান”দ্বারা ও প্রমাণ হতে পারে।
❏ বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও উসুলবিদ আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) বলেন-
قول احمد انه حديث لايصح اى لذاته فلا ينفى كونه محسن لغيره والحسن لغيره يحتج به كما بين فى الحديث
অর্থাৎ এই হাদিসকে ইমাম আহমদ(رحمة الله) “ছহীহ নয় ” বলেছেন , এর ব্যাখ্যাতে আল্লামা ইবনে হাজর (رحمة الله) বলেন “ছহীহ নয় “অর্থ হল লিজাতিহী নয় , আর এই কথাটি দ্বারা “হাসান লিগাইরিহি” হওয়াকে নিষেধ করেনা।” হাদিসে ছহীহ দ্বারা যা প্রমাণিত হয় “হাদিসে হাসান দ্বারা ও তা প্রমাণিত হতে পারে।
❏ বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন-
من نفى الصحة لا ينتفى الحسن
অর্থাৎ “ছহীহ নয়” দ্বারা “হাসান” হওয়াকে নিষেধ করেনা।
❏ বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও হানাফী মাযহাবের প্রখ্যাত মুফতি মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তার প্রসিদ্ধ কিতাব
موضوعات كبير
(মাউদোয়াতে কবির) এ উল্লেখ করেন-
لايصح لا ينافى الحسن
অর্থাৎ সহীহ নয় কথাটি হাসান হওয়াকে বারণ করেনা।
❏ আল্লামা নুরুদ্দীন আলী ছামহুদী(رحمة الله) তার কিতাব-
جواهر العقدين فى فضل الشريفين.
(জাওয়াহিরূল আক্বদাইন ফী ফদলিশ শরীফাইন) নামক কিতাবে উল্লেখ করেন-
قديكون غير صحيح وهم صالح للاحتجاج به اذاالحسن رتبة بين الصحيح والضعيف
অর্থাৎ কখনো কখনো সহীহ ছাড়াও প্রমাণ দেওয়া যায় । কেননা “হাদিসে হাসান” হলো সহীহ ও দূর্বলের মধ্যখানে।
❏ ইমাম কামাল উদ্দীন ইবনে হুমাম (رحمة الله) বলেন-
وقول من يقول فى حديث انه لم يصح ان سلم لم يقدح لان الحجية لا تتوقف على الصحة بل الحسن كاف
অর্থাৎ কেউ যদি কোন হাদিসের ব্যাপারে “সহীহ নয়” বলে কোন অসুবিধা নেই। কেননা, দলিলের জন্য ” সহীহ ” হওয়ার উপর নির্ভর নয়। বরং,হাদিসে ” হাসান” যথেষ্ট।
উল্লেখিত বর্ণনার মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে গেল , কেউ যদি হাদিসটা” সহীহ ” নয় বলে তখন ও ঐ হাদিস দ্বারা দলিল দেওয়ার মধ্যে কোন আপত্তি নেই।
❏ এই ব্যাপারে মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তার কিতাব (موضوعات كبير ) এ উল্লেখ করেন –
قلت واذاثبت رفعه الى الصديق رضى الله عنه فيكفى للعمل به لقوله عليه الصلاة والسلام عليكم بسنتى وسنة الخلفاء الراشدين
অর্থাৎ আমি (মোল্লা আলী) বলছি, যদি হাদিসটা হযরত ছিদ্দিকে আকবর (رضي الله عنه) পর্যন্ত পৌছে , আমল করার জন্য এটাই যথেষ্ট। কেননা রাসুলে কারীম (ﷺ) এরশাদ করেন তোমাদের উচিত আমার সুন্নাত এবং খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত কে আকড়ে ধরা।
ফোকাহায়ে কিরামের অভিমতঃ
হানাফী মাযহাবের অনুসারীর কিতাবের উদ্ধৃতিঃ
❏ (রদ্দুল মুখতার আলা দুরলিল মুখতার- ردالمحتار على در المختار) তথা فتاوى شامى তে আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) باب الاذان (বাবুল আযান) এ এবং شرح نقاية ( শরহে নিকায়া) তে উল্লেখ করেন –
يسنتحت ان يقال عند سماع الاولى من الشهادة صلى الله عليك يارسول الله وعند الثانية منها قرة عينى بك يا رسول الله ثم يقول اللهم متعنى بااسمع والبصر بعد وضع ظفرى الابهامين على العنين فانه عليه الصلاة والسلام يكون قائداله الى الجنة
অর্থাৎ মুয়াজ্জিন যখন আযানে রাসুলে আকরামের (ﷺ) নামে সাক্ষ্য দিবে তখন প্রথম বারে ” সাল্লাল্লাহু আলাইকা ইয়া রাসুলাল্লাহ” বলে আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখের মধ্যে রেখে দোয়া করা ” আল্লাহুম্মা মাত্তিনি বিসসাময়ী ওয়াল বসরি ” বলা মুস্তাহাব।
❏ হাদিস ৩ :
❏ একই ধরনের হাদিস সহীহ সূত্রে ইমাম তাহতাবী (رحمة الله) তার “মারাকিল ফালাহ” কিতাবে নকল করে বলেন , আমলের জন্য এটাই যথেষ্ট।
❏ আরিফ বিল্লাহ ফজলুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন আইয়ুব সোহরাওর্য়াদী (رحمة الله) এবং
❏ তার ছাত্র ইমাম ইউসুফ বিন ওমর (رحمة الله) جامع المضمر ات شرح قدرى বা فتاوى صوفية (ফতোয়া-এ- সূফিয়াতে),
❏ ইমাম কুহাস্তানী كنزالعباد (কানজুল ইবাদ),
❏ ইমাম দাইলমী كتاب الفردوس (কিতাবুল ফেরদৌস), এবং
❏ ইমাম রমলী البحر الرائق (বাহরূর রায়েক) এর হাশিয়াতে নকল করেন ,
من قبل ظفرى ابهاميه عند سماع اشهدان محمداً الرسول الله فى الاذان انا قئدومدخله فى صفوف الجنة
রাসুলে পাক (ﷺ) বলেন, “যে উম্মত আযানে আমার নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করবে, আমি তাকে তালাশ করে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেব।”
❏ মাওলানা জামাল ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে ওমর মক্কি তার ফতোয়ার কিতাবে উল্লেখ করেন –
تقبيل الابهامين ووضع هما على العنين عند ذكراسمه عليه السلام فى الاذان جائربل مستحب صرح به مشائخنا
অর্থাৎ আযানে নবীর (ﷺ) নাম শুনার পর আঙ্গুলদ্বয়কে চুমু দিয়ে চোখের মধ্যে রাখা জায়েজ বরং মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে আমাদের ইমামগণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
❏ ইমাম ত্বাউছি (رحمة الله) বর্ণনা করেন-
انه سمع من الشمس محمد بن ابى نصر البخرى هذا الحديث من قبل عند سماعه من الموذن كاملة الشهادة طفرى ابهاميه ومسهما على عينيه وقال عندالمس اللهم احفظ حدقتى ونورهما ببركة حدقتى محمد صلى الله عليه وسلم ونورهما لم يرمد
অর্থাৎ ইমাম ত্বাউছি বিখ্যাত মুহাদ্দিস আশশামস মুহাম্মদ বিন আবি নছর আল বুখারী (رحمة الله) তথেকে এই হাদিস খানা বর্ণনা করেন, যে উম্মত মুয়াজ্জিনের আযানে নবী (ﷺ) ‘র নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করে এই দোয়াটি পড়বে “আল্লাহুম্মা ইহফাজ হাদকাতাইয়া ওয়া নুরাহুমা বিবরকতে হাদকাতাই মুহাম্মদী (ﷺ)ওয়া নুরিহিমা ” তার চোখ কখনো দৃষ্টি হারা হবে না।
❏ হাদিস ৪ :
❏ ইমাম আবুল আব্বাস আহমদ বিন আবি বকর সুফী (رحمة الله) তার প্রসিদ্ধ কিতাব (موجبات الرحمة وعزائم المغفرة)
(মওজিবাতুর রাহমাহ ওয়া আজাইমুল মাগফিরা) তে উল্লেখ করেন হযরত খিজির (عليه السلام) থেকে মধ্যখানে সূত্র মাজাহিল ও মুনকাতি রয়েছে। অতঃপর বর্ণনা করেছেন,
عن الخضر عليه السلام انه قال من قال حين يسمع المؤذن يقول اشهد ان محمد الرسول الله مرحبا بحبيبى وقرة عينى محمد عبد الله صلى الله عليه وسلم ثم يقبل ابهاميه ويجعلها على عينيه لم يرمد ابدا (مقاصد حسنه)
হযরত খিজির (عليه السلام) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , যে ব্যক্তি আজানে নবীর নাম শুনে ” মারহাবান বিহাবীবি ওয়া কুররাতু আইনি মুহাম্মদ বিন আব্দিল্লাহ ” (ﷺ) বলে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে রাখে ,তার দৃষ্টি শক্তি কখনো নষ্ট হবেনা। উল্লেখ্য হাদিসখানা বর্ণনার ক্ষেত্রে দূর্বল হলেও আমলের ক্ষেত্রে গ্রহণীয় যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
❏ মদিনা শরীফের ইমাম ও খতিব আল্লামা আশশামস মুহাম্মদ বিন ছালেহ মাদানী (رحمة الله) তার “তারীখে” নকল করেন মিশরে বড় আলেমদের একজন আল্লামা মজদ (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন –
من صلى على النبى صلى الله عليه وسلم اذا سمع ذكره فى الاذان وجمع اصبعيه المسجة والابهام وقبالها رمسح بهما عينيه لم يرمد ابدا
অর্থাৎ, যে আজানে নবীর নাম শুনে দরূদ শরীফ পড়ে, বৃদ্ধ ও শাহাদাত আঙ্গুল একত্রিত করে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করবে, তার চোখের দৃষ্টি যাবে না বরং নিরাপদ থাকবে।
❏ আল্লামা মুহাম্মদ ইবনুল বাবা (رحمة الله) তার নিজের ঘটনা বর্ণনা করেন,
انه هبت ريح فو قعت منه حصاة فى عينيه وعياه خروجها والمته اشهد الا لم وانه لما سمع المؤذن يقول اشهد ان محمد الرسول الله قال ذلك فخرجت الحصاة من فوره قال الرداد رحمه الله وهذا يسير فى جنب فضائل الرسول صلى ا لله عليه وسلم
অর্থাৎ একদিন ব্যাপকভাবে বাতাস হয়ে একটি কংকর আমার চোখে ঢুকে পড়ে, বের করা কষ্টকর হয়ে যায়।ব্যাথা ও অসহ্য হয়ে যায়,আর যখন মুয়াজ্জিন আজানে রাসুলে পাক (ﷺ) নামে শাহদাতের কালিমা বলছিল আমি এই কাজটি করলাম অর্থাৎ আঙ্গুলে চুমু দিয়ে চোখে মালিশ করলাম সাথে সাথে কংকর টি বের হয়ে যায়।
❏ ইমাম রদাদ (رحمة الله) বলেন, এটা একটা রাসুল (ﷺ)এর ফজায়েল ও মুজিজা।
❏ ইরাক আজমের কিছু আলেম সমাজ বলেন,
منذ فعلته لم ترمد عينى
যে দিন থেকে এই কাজটা করলাম চোখের কোন অসুস্থতা দেখা যায়নি।
قال ابن صالح وانا والله الحمد والشكر منذ سمعته منها استعملته فلم ترمد عينى وارجوان عافيتها تدوم وانى اسلم من العمى انشاء الله تعالى (مقاصد حسنه )
❏ ইবনে সালেহ বলেন, আল্লাহর প্রসংশা ও শুকর,যে দিন থেকে আমি আজানে রাসুলে পাকের নাম শুনার পর আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করছি, সে দিন থেকে ও আমার চোখে কোন রোগ হয়নি এবং আশা রাখি অন্ধ হওয়া থেকে নিরাপদ থাকব ইনশাআল্লাহ।
❏ হাদিস ৫ :
روى عن الفقيه محمد بن سعيد الخولانى قال اخبرنى الفقيه العلم ابوالحسن على بن محمد بن جديد الحسينى اخبرني الفقيه الزاهد البلالى عن الحسن عليه السلام انه قال من قال حين يسمع المؤذن يقول اشهد ان محمد الرسول الله مرحبا بحبيبى وقرة عينى محمد بن عبد الله صلى الله عليه وسلم ويقبل ابهاميه ويجعلهما على عينيه لم يعم ولم يرمد (مقاصد حسنه)
❏ অর্থাৎ ফকিহ মুহাম্মদ বিন সাঈদ খাওলানী (رحمة الله) বলেন, আমাকে➡ ফকিহুল আলম আবুল হাসান আলী বিন মুহাম্মদ বিন হাদিদ আল হুসাইনী (رحمة الله) বলেছেন, আমাকে ➡ ফকিহ আজ জাহিদুল বিলালী (رحمة الله) ➡ হযরত ইমাম হাসান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি আজানে নবী কারীম (ﷺ) এর নাম শুনে ” মারহাবান বি হাবীবি ওয়া কুররাতু আইনি মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ ” বলে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করবে , তার চোখ কখনো অন্ধ ও অসুস্থ হবেনা।
❏ আল্লামা মুহাদ্দিস তাহের পটনি (رحمة الله) তার সুপ্রসিদ্ধ কিতাব مجمع بحار الانوار এর মধ্যে উল্লেখিত হাদিসকে সহীহ নয় বলে উল্লেখ করেন,
وروى تجربة عن كثير
অর্থাৎ আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করে ফায়দা পেয়েছেন, তা অনেকের অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত।
❏ আল্লামা সদরুল আফাজিল নঈমুদ্দীন মুরাদাবাদী (رحمة الله) বলেন , ইন্জিল কিতাবের বড় একটা পান্ডুলিপি আমার কাছে আছে যার নাম انجيل بر نباس (ইন্জিল বরনিবাস ) ঐ কিতাবের অধিকাংশ আহকাম ইসলামী আহকামের সাথে মিলে যায়। ঐ কিতাবে লিখা আছে , হযরত আদম (عليه السلام) نور مصطفى ( তথা “আমাদের নবী (ﷺ) এর নূর ” যেটা সৃষ্টির মূল) দেখার জন্য ইচ্ছা পোষন করলেন ,তখন আল্লাহ তায়ালার কুদরতী ব্যবস্থাপনায় হযরত আদম (عليه السلام) এর বৃদ্ধ আঙ্গুলের নখে নূর চমকে ওঠে তখন তিনি খুব মুহাব্বত সহকারে আপন নখে চুমু দিয়ে চোখে লাগালেন।
❏ হাদিস ৬ :
❏ গাজীয়ে দ্বীন ও মিল্লাত ইমামে আহলে সুন্নাহ আল্লামা আযিযুল হক আল কাদেরী (رحمة الله) তার প্রসিদ্ধ ফতোয়ার কিতাব,
مجموعئه فتاوى عزيزيه (মজমুয়ায়ে ফতোয়ায়ে আযিযিয়া) এই কিতাবে دربيان تقبيل الابهامين عند الشهادتين فى الاذان والاقامة
নামে এই বিষয়ে অধ্যায় রচনা করে উল্লেখ করেন –
ذكر بعض الصالحين انه لقى الخضر عليه السلام فقال من قبل ظفر ابهاميه ويمسح بهما على عينه امن من وجع العين حين يقول المؤذن فى الاذان والاقامة اشهد ان محمد الرسول الله ويقول المستمع مع ذلك مرحبا بك يا حبيبى وقرة عينى يا رسول الله (خزينة الاسرار ،خواص القران)
অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার নেক বান্দাহ যার সাথে হযরত খিজির (عليه السلام) এর সাক্ষাত হয়েছে তিনি হযরত খিজির (عليه السلام) থেকে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি আজানে রাসুলে পাক (ﷺ) এর নাম শুনে “মারহাবা ইয়া হাবীবী ও কুররাতু আইনি ইয়া রাসুলাল্লাহ” বলে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করবে , তার চোখ বিভিন্ন ব্যাথা থেকে রক্ষা পাবে।
❏ আল্লামা শেরে বাংলা (রহঃ) আরোও উল্লেখ করেন –
فى قصص الانبياء وغيره ان ادم عليه السلام اشتاق الى لقاء محمد صلى الله عليه وسلم حين كان فى الجنة فاوحى الله تعالى اليه هومن صلبك ويظهر فى اخر الزمان فسال لقاء محمد صلى الله عليه وسلم حين كان فى الجنة فاو حى الله تعالى اليه فجعل الله النور المحمدى فى اصبعيه المسبحة من يده اليمنى فسبح زلك النور فلذلك سميت تلك الاصبع مسبحة كذا فى الروضة الفائق
কাছাছুল আম্বিয়া ও অন্যান্য কিতাবে রয়েছে , হযরত আদম (عليه السلام) জান্নাতে থাকাকালিন মুহাম্মদ (ﷺ) এর সাথে সাক্ষাত করার ইচ্ছা করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে বলেন, তিনি মুহাম্মদ (ﷺ) এখন তোমার পৃষ্টে রয়েছে এবং শেষ জামানায় পৃথিবীতে তশরীফ আনয়ন করবেন। অতঃপর হযরত আদম (عليه السلام) জান্নাতে অবস্থান রত সময়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করলেন (মুহাম্মদ (ﷺ) এর সাথে সাক্ষাতের ব্যাপারে)রাব্বুল আলামিন মুহাম্মদ (ﷺ) এর নূর কে আদম (عليه السلام) এর ডান হাতের তাছবিহ পাঠকারী আঙ্গুলে প্রকাশ ঘটালেন, অতপর ঐ নূর তাছবিহ পাঠ করতে শুরু করে,এই কারণে সেই আঙ্গুলকে اصبع مسبحه বলা হয়। (রাউদাতুল ফায়েক)
❏ আর ও উল্লেখ রয়েছে –
اظهر الله تعالى جمال حبيبه فى صفار ظفرى ابهاميه ومسح على عينيه فصار اصلا لذيته فلما اخبر جبرائيل عليه السلام النبى صلى الله عليه وسلم بهذه القصة قال صلى الله عليه وسلم من سمع اسمى فى الاذان فقبل ظفرى ابهاميه ومسح على عينيه لم يعم ابدا
আল্লাহ তায়ালা যখন আদম (عليه السلام) এর আঙ্গুলে আপন হাবীব (ﷺ) এর সৌন্দর্য আয়নার মত প্রকাশ করলেন, আদম (عليه السلام) তার আঙ্গুলের পৃষ্ঠকে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করে নিলেন।অতঃপর তার সন্তানদের জন্য এই কাজটা দলিল হয়ে যায়। হযরত জীব্রাইল (عليه السلام) যখন আদম (عليه السلام) এর এই ঘটনা নবী করিম (ﷺ) কে বললেন, রাসুল (ﷺ) বলে দিলেন , উম্মত আজানে আমার নাম শুনে আঙ্গুলে পৃষ্ঠে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করবে , তার চোখ কখনো অন্ধ হবে না বা চোখের দৃষ্টি শক্তি কমবে না।
❏ আল্লামা শেরে বাংলা (رحمة الله) এই মাসয়ালাটি কোন কোন কিতাবে রয়েছে তার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন,
১. তাফসীরে রুহুল বয়ান, ৮ম খন্ড। সুরা আহযাবের اذكر والله ذكرا كثيرا এর তাফসীরে ব্যাপক ভাবে আলোচনা করেন।
২. আল্লামা শেখ সাহরওয়ার্দী তার কিতাব عوارف المعارف এ ব্যাপক আলোচনা করেন ।
৩. মাওলানা আব্দুল হাই লক্ষোনভীর فتاوى مولانا عبد الحى لكهنوى ৩য় খন্ড ৪২ পৃষ্ঠায়।
৪. جامع الرموز( জামেউর রুমুজে)১ম খন্ড ৫৬পৃষ্ঠায়।
৫. হিদায়াতুল হারামাইনে ৪৬পৃষ্ঠায়।
৬. كتاب الفوائد مطبع مصر (কিতাবুল ফাওয়ায়েদে) ১৫পৃষ্ঠায়।
৭. فتح المبين ( ফতহুল মুবিনে) ৬৪ পৃষ্ঠায় ও ৪৯২ পৃষ্ঠায় ব্যাপক বর্ণনা রয়েছে।
তাই উলামায়ে কিরাম বলেন, নবী কারীম (ﷺ) এর নাম শুনে শুধু বৃদ্ধ আঙ্গুলের পিঠে চুমু খাওয়া হযরত আদম (عليه السلام) সুন্নাত। আর শাহাদাত আঙ্গুলের পেটে চুমু খাওয়া হযরত সিদ্দীকে আকবর (رضي الله عنه) সুন্নাত। তাই আমাদের উচিত উভয় আঙ্গুলে চুমু খেয়ে উভয়জনের সুন্নাত আদায় করা।
শাফেয়ী মাযহাবের অনুসারীর কিতাবের উদ্ধৃতিঃ
❏ শাফেয়ী মাযহাবের বিখ্যাত কিতাব
اعانة الطالبين على حل الفاظ فتح المعين (ইয়ানাতুত তালিবীন আলা হিল্লে আলফাজি ফতহিল মুয়িন) এ উল্লেখ আছে,
يقبل ابهاميه ويجعل هما على عينيه لم يعم ولم يرمد ابدا
অর্থাৎ নবী (ﷺ) নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করলে চোখ অন্ধ ও রুগ্ন হবে না।
মালেকী মাযহাবের কিতাবের উদ্ধৃতিঃ
❏ মালেকী মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব,
كفاية الطالب الربانى لرسالة ابن ابى زيد القيروانى ج ا صف ١٦٩
(কিফায়াতুত তালিবির রাব্বনী লিরিছালাতি ইবনে আবি যায়েদ আল কাইরুওয়ানী) এ উল্লেখ আছে –
ثم يقبل ابهاميه ويجعل هما على عينيه لم يعم ولم يرمد ابدا
অর্থাৎ হুজুরে পাক (ﷺ) নাম শুনে মুহাব্বত সহকারে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করলে চোখ অন্ধ ও রুগ্ন হবে না।
❏ মালেকী মাযহাবের উল্লেখিত কিতাবের ব্যাখ্যাতে ১৭৭ পৃষ্ঠায় আল্লামা শেখ আলী আস স্বায়েদী আদবী (রঃ ) লিখেন-
لم يبين موضع التقبيل من ابهاميه الا انه نقل عن الشيخ العالم المفسرنور الدين الخراسانى قال بعضهم لقيته وقت الاذان فلما سمع المؤذن يقول اشهد ان محمد الرسول الله قبل ابهامى نفسه ومسح بالظفرين اجفان عينيه من الماق الى نحية الصدع ثم فعل ذلك عند كل تشهد مرة فسالته عن ذلك فقال كنت افعله ثم تركته فمرضت عيناى فرءيته صلى الله عليه وسلم منا ما فقال لما تركت مسح عينيك عند الاذان ان اردت ان تبرء عيناك فعد فى المسح فاستيقظت ومسحت فبرءت ولم يعاود فى مرضها الى الان
লিখক আঙ্গুলে চুমু খাওয়ার মাসআলা বর্ণনা করেননি, কিন্তু শায়েখুল আলম ও মুফাচ্ছির নুরুদ্দিন খোরাসানী (رحمة الله) থেকে বর্ণিত , কিছু মানুষ তাকে আজানের সময় তার সাথে সাক্ষাত করতে গিয়ে বলেন,তাকে দেখলাম আজানে নবী (ﷺ) এর নাম শুনতেই আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করেন( আঙ্গুলের নখ চোখের এক কোণায় লাগালেন)। এভাবে প্রত্যেকবার শাহাদাতের সময় এরকম করেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলে, উনি বলেন, একাজটা আমি করতাম,পরে ছেড়ে দিয়েছিলাম। অতঃপর আমার চোখে রোগ হয়ে যায় , একদিন ঘুমে নবী (ﷺ) কে স্বপ্নে দেখলাম তিনি বললেন, তুমি আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করার কাজ ছেড়ে দিয়েছ কেন?তুমি যদি ভাল হতে চাও ! কাজটা অর্থাৎ আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করা আবার শুরু কর।আমি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করার সাথে সাথেই ভাল হয়ে গেলাম,এখনো ভালো আছি।
❏ হাদিস ৭ :
রাসুল (ﷺ) এর নাম শুনে চুমু খাওয়ার কারণে একশত বছরের পাপিষ্ট ব্যক্তির ক্ষমা ঘোষণাঃ
كان فى بنى اسرائيل رجل اخطى مائة سنة لما مات ارمى الناس الى مزبلة واوحى الله تبارك وتعالى الى موسى عليه الصلاة والسلام ان يغسله ويصلى عليه فقال موسى يارب العالمين كيف اصنع هذا بنو اسرائيل يغبضه قال تعالى انى غفرته لانه اذا راى فى التورات اسم محمد صلى الله عليه وسلم تقبل ظفر يه ومسح على عينيه وادخلته فى الخنة وتزوجته سبعين حور (روح البيان،تاريخ الخمسين ، خصائص الكبرى )
❏ বনী ইসরাঈলে এমন এক ব্যক্তি ছিল, যে একশত বছর পাপের কাজ করেছিল, সে যখন মারা যায় মানুষ তাকে ময়লাতে নিক্ষেপ করে দেয়। রাব্বুল আলামিন হযরত মুছা (عليه السلام) ওহীর মাধ্যমে জানালেন, তাকে গোসল, কাফন দিয়ে দাফন করে দিতে। হযরত মুছা (عليه السلام) বলেন, হে আল্লাহ ! তাকে আমি এগুলো কিভাবে করি? অথচ মানুষ তাকে ঘৃণা করে । আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। কেননা সে ‘তওরাতে’ মুহাম্মদ (ﷺ) এর নাম দেখে আঙ্গুলের নখে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করেছে,আমার মাহবুবের প্রতি মুহাব্বত প্রকাশ করেছে, তাই আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে সত্তরটি হুরের সাথে শাদী করিয়ে দিয়েছি। উল্লেখিত বর্ণনার মাধ্যমে বুঝা যায়, কাজটা সম্পূর্ণ রাসুল (ﷺ) এর মুহাব্বতের উপর নির্ভর । যাদের অন্তরে ইশকে রাসুল (ﷺ) থাকবে , সে সহজেই কাজটা করবে।আর যার অন্তরে ভালবাসা থাকবে না। সে কাজটা করা তো দূরের কথা কেউ করতে চাইলে ও তার কাছে ভাল লাগবে না।
রাসুল (ﷺ) এর তাজিম ও মুহাব্বতের কিছু দৃষ্টান্তঃ
রাসুল (ﷺ) এর মুহাব্বতের একটি আলামত হলো , রাসুলের নামের সময় তাজিম- সম্মান করা এবং হুজুরের নাম শুনতেই নিজেকে ছোট মনে করে একেবারে নরম হয়ে যাওয়া।
❏ শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) তার প্রসিদ্ধ কিতাব مدارج النبوت (মাদারিজুন নাবুওয়াত) এ উল্লেখ করেন-আবু ইব্রাহিম ইয়াহয়া (رحمة الله) বলেন,
প্রত্যেক মুসলমানের দরকার যখনি তার সামনে রাসুল (ﷺ) এর নাম মুবারক জিকির হবে , আদবের সাথে শুনা এবং শরীর নড়াচড়া না করা, এমন হয়ে যাওয়া, যেন তার সামনে রাসুল (ﷺ) আছেন।
❏ হযরত আবু আইয়ুব (رحمة الله) এর সামনে যখন রাসুল (ﷺ) এর নাম জিকির করা হতো, সাথে সাথে ক্রন্দন করে দিতেন।
❏ হযরত জাফর বিন মুহাম্মদ (رحمة الله) অনেক ঠাট্টা করতেন, কিন্তু যখনি তার সামনে রাসুল (ﷺ) এর নাম জিকির হতো, তার চেহেরার রং পালটিয়ে যেত এবং খুব আদব সহকারে নিজেকে ছোট মনে করে বসে যেতেন।
এভাবে আশেকে রাসুলগণ রাসুলে পাকের নামে তাজিম করতেন।
তাই উল্লেখিত মাসয়ালার ব্যাপারে সমালোচনা না করে মাথা পেতে নেওয়াই আদব ও উত্তম।
❏ তাফসীরে জালালাইন এর হাশিয়াতে রাসুল (ﷺ)এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খেয়ে চোখে মালিশ করার ব্যাপারে যথেষ্ট দলিল দিয়ে বলেন,
যাদের কাছে কিতাবের দখল নাই এবং ব্যাপক গবেষণা করেনা তারাই মানে না এবং বুঝার চেষ্টাও করে না।”
(তাফসীরে জালালাইন ৩৫৭ পৃষ্ঠা)تفسير جلالين
পরিশেষে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ, আল্লাহ তায়ালা সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুক এবং উভয় জাহানের কল্যাণ সাধন করার সুযোগ দান করুক। আমিন।