কিতাবঃ ইসলামের মূলধারাঃ (পর্ব ৪) খারেজীদের বৈশিষ্ট্য

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

খারেজী
➖➖➖
বর্তমান মুসলিম বিশ্বে ‘খারেজীনামে কোন বাতিল ফিরকার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া না গেলেও এদের আদর্শবাহী সম্প্রদায়ের তো অভাব নেই। ইসলামের ইতিহাসে খারেজী হলো প্রথম বাতিল ফিরকা। আর পরবর্তীতে আবির্ভুত বাতিল দলগুলো মূলত; ঐ প্রথম দলেরই উত্তরসুরী। পুরোপুরিভাবে খারেজীদের আক্বীদাসমূহ পরবর্তী ভ্রান্ত দলগুলোর মধ্যে পাওয়া না গেলেও অধিকাংশের সাথে আংশিক মিল রয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশে ওহাবীদেরকে ‘খারেজী’ নামেও অভিহিত করা হয়। কারণ, খারেজীদের সম্পর্কে হুযুর সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সব ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে এগুলোর বেশ কিছু আজকের ওহাবীদের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে । অনুরূপ ভাবে মওদুদী মতাবলম্বীদের মধ্যেও।
➖➖➖
খারেজীদের সংক্ষিপ্ত ইতিবৃত্ত
➖➖➖
সিফফীনের যুদ্ধের তীব্রতা দেখে সিরিয় সৈন্যগণ নিজেদের আশংকায় যুদ্ধ উদ্দেশ্যে হযরত আমর ইবনে আ’স-এর পরামর্শক্রমে জেনারেল বন্ধের ইবনে এর আবুল আওয়ার সুলামী মাথার উপর অথবা তীরের মাথায় কোরআন নিয়ে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুর পক্ষের উদ্দেশ্যে ঘোষণা দিলেন, আপনাদেরকে কোরআনের দিকে আহবান করছি। এতে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর পক্ষের সেনাপতি ওশতর নাহফী নিজ সৈন্যদের বললেন, এটা একটা প্রতারণা মাত্র এবং তিনি আরো প্রচণ্ড আক্রমণ করলেন। কিন্তু, এর ফলে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুর সৈন্যের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়ে গেল। আশআছ ইবনে কায়স,মুসরির ইবনে ফদক, আবদুল্লাহ ইবনে কাওয়াসহ বেশ কিছু সংখ্যক সৈন্য বলল, “এটা কেমন করে হতে পারে যে, আমাদেরকে কিতাবুল্লাহর দিকে আহবান করছে আর আমরা এ আহবান প্রত্যাখ্যান করব।”এছাড়াও তারা কোরআন করীমের আয়াত পেশ করলো, “হে রাসুল (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যাদেরকে কিতাবের অংশ দেয়া হয়েছে। তারা পরস্পরের মধ্যে মীমাংসার জন্য আল্লাহর কিতাবের দিকে আহ্বান করছে ?” হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করলেন যে, এটা শুধুমাত্র ধোকাবাজী । তোমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাও। তখন উল্লেখিত ব্যক্তিগণ বলল, “আপনি যুদ্ধ বন্ধ করেন এবং ওশতরকে ডেকে পাঠান। অন্যথায় আপনার অবস্থাও তাই হবে যা ওসমানের হয়েছে।” তখন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু
তা’আলা আনহু বললেন, “তোমাদের যা ইচ্ছা কর।” তারা ওশতরের অনিচ্ছা সত্বেও তাঁকে যুদ্ধ বন্ধ করতে বাধ্য করল। অতঃপর উভয় পক্ষ যুদ্ধ বন্ধ করল।
➖➖➖
সালিশ নিৰ্ধারণ
➖➖➖
সালিশ নিৰ্ধারণ
উভয়ের মধ্যে সমঝোতা ও মীমাংসা করার জন্য প্রস্তাব হলে, হযরত মুয়াবিয়ার পক্ষ ঝানু রাজনীতিবিদ হযরত আমর ইবনে আ’স রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর নাম পেশ করে এবং হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর পক্ষ হযরত আবু মুসা আশয়ারী রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাম পেশ করে। হযরত আমর ইবনে আ’সের মোকাবেলায় হযরত আবু মুসা আশয়ারী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মত সহজ-সরল ব্যক্তির নাম অযৌক্তিক দেখে হ্যরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আপত্তি করেন এবং হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহ তদস্থলে মালেক ওশতরের নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু, উল্লেখিত ব্যক্তিরা এ ক্ষেত্রে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। অতঃপর এর ফলও হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর বিপক্ষে যায়। যে সব ব্যক্তি কোরআনের আহবানের প্রেক্ষিতে যুদ্ধ বন্ধ করার চাপ সৃষ্টি করে। এবং সালিশ নির্ধারণের ক্ষেত্রে হযরত আবু মুসা আশয়ারী রাদিয়াল্লাহু তাআলা
আনহুর নাম প্রস্তাব করে তারাই এ বলে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর পক্ষ ত্যাগ করে যে, “আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বিচারক মেনে নেয়া
জায়েয নয়।” এদের সংখ্যা প্রায় বার হাজারের কাছাকাছি ছিল; এরাই ইসলামের ইতিহাসে “খারেজী” নামে পরিচিত। এটিই ইসলামে প্রথম বাতিল ফিরকা। অতঃপর তারা হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর পক্ষ ত্যাগ করে এবং
‘হারুরানামক কুফার এক স্থানে অবস্থান করে। এ কারণে হাদিস শরীফে খারেজীদের হারুরীয়াও বলা হয়েছে।
➖➖➖
খারেজীদের সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত উক্তিসমূহ
➖➖➖
খারেজীদের সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত উক্তিসমূহ
০১. এমন এক সম্প্রদায় বের হবে তারা সত্য কথা বলবে যা তাদের গলদেশ অতিক্রম করবে না। (তাবারী)।

০২. এরা সুন্দর ও ভাল কথা বলবে এবং খারাপ কাজ করবে। (তাবরানী শরীফ)।

০৩. তাদের ঈমান কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। (বোখারী শরীফ)।

০৪. তারা অধিক এবাদত করবে। (তাবায়ী)।

০৫.তোমাদের কেরাত তাদের (খারেজীদের) কেরাতের তুলনায় কিছুই নয়।(মুসলিম শরীফ)।

০৬.হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু খারেজীদের সাথে তার মোনাজারার বর্ণনা প্রসংগে বলেন, আমি তাদের নিকট আসলাম, অতঃপর একদলের নিকট প্রবেশ করলাম। এদের চেয়ে এবাদতে অধিক সচেষ্ট আমি কাউকে দেখিনি। তাদের হাতগুলো উটের হাটুর মত শক্ত এবং তাদের
চেহারায় সেজদার চিহ্ন ছিল। (তাবরানী শরীফ)।

০৭. তারা সৃষ্টির সর্বোত্তম কথা বলবে। অর্থাৎ কোরআনের কথা বলবে।(বোখারী শরীফ)।

০৮. তারা মানুষকে কিতাবুল্লাহর প্রতি দাওয়াত বা আহবান করবে। অথচ এরা কোন দিক দিয়ে আমার সাথে সম্পর্কিত নয়। মিশকাত শরীফ)।

০৯. তারা ঘন ঘন মাথা মুণ্ডাবে ।(মিশকাত শরীফ)।

১০. তারা সর্বদা কোরআন তেলাওয়াত করবে। ফতহুল বারী পঞ্চদশ খণ্ড , পৃষ্ঠা ৩২২, মুসলিম শরীফ)।

১১. তারা উত্তমরূপে কোরআন তেলাওয়াত করবে। (ফতহুল বারী পঞ্চদশ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২২)।

১২. তারা সুন্দর কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত করবে। (ফতহুল বারী)।

১৩. তারা সৃষ্টির সর্ব নিকৃষ্ট -(বোখারী শরীফ) তাদের বিরুদ্ধে আমার উম্মতের উত্তম ব্যক্তিগণ লড়বে। (মসনদে বায্যার)।

১৪. খারেজীগণ জাহান্নামের কুকুর সমতুল্য। (ইবনে মাজা শরীফ)।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment