কিতাবঃ ইসলামের মূলধারাঃ (পর্ব ২১) নজদী, ওহাবী ও ইবনে তাইমিয়্যার আক্বিদা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ইবনে তাইমীয়ার আক্বাঈদ
তাইমীয়া ৬৬১ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। ভ্রান্ত আকীদার কারণে ৭০৫ হিজরীতে কারারুদ্ধ হন। অতঃপর তাওবা করলে ৭০৭ হিজরীতে কারামুক্ত হন।  পুনরায় ভ্রান্ত আক্বীদা প্রচারে লিপ্ত হলে দ্বিতীয়বার গ্রেফতার হন । পুনরায় তাওবা করলে মুক্তি লাভ করেন। এবারও সে ভ্রান্ত আকীদা প্রচারে লিপ্ত হলে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং কারারুদ্ধ অবস্থায় ৭২৮ হিজরীতে মৃত্যু বরণ করেন। বিশ্ববরেণ্য আলেমগণ এ বিতর্কিত ব্যক্তির ভ্রান্ত মতবাদ খন্ডন করেন এবং তাকে ঘৃণা করতেন। অপরদিকে ওহাবী ও মওদুদী মতাবলম্বীগণ তাকে হিজরী সপ্তম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও শাইখুল ইসলাম ইত্যাদি সম্মানসূচক উপাধিতে ভূষিত করে থাকেন। ইবনে তাইমিয়াই প্রথম ব্যক্তি যিনি “মদীনা শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাকে হারাম” ফতোয়া দেন। মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী ইবনে তাইমিয়ার কিতাব দ্বারা বেশী প্রভাবিত হয়ে মুসলমানদের মধ্যে “ওহাবী ফিতনার জন্ম দেন।

• নিম্নে তার ভ্রান্ত আকীদা সংক্ষেপে পেশ করা হলো

১. আল্লাহ তা’আলা দেহ বিশিষ্ট । তিনি আরশের উপর উপবিষ্ট এবং তার পার্শ্বে কিছু জায়গা খালি রেখেছেন, যাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বসাবেন। (কাশফুযযুনুন, আততাওয়াস বিন্নবী, পৃষ্ঠা১১, নিবরাস,পাদটীকা পৃষ্ঠা ১১৬)। (আল ঈমান ওয়াল ইসলাম, পৃষ্ঠা ১৫০ আল বাসাঈর,ইস্তাম্বুল, তুর্কী)।

২. মদীনা শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা হারাম।

৩. মাসিক ঋতুস্রাব কালে তালাক দিলে তা পতিত হবে না।

৪. ইছাকৃত ভাবে ছেড়ে দেয়া নামাযের কাযা ওয়াজিব নয়।

৫. মাসিক ঋতুস্রাব অবস্থায় মহিলাদের বাইতুল্লাহ শরীফ তাওয়াফ করা জায়েয।

৬. হুযুুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্যান্য মানুষের মত একজন মানুষ। সুতরাং, তার উসিলা নিয়ে দোয়া করা নাজায়েজ।

৭. কোরআন শরীফ আল্লাহ তা’আলার সবার মধ্যে সৃষ্ট।

৮. খায়র বা ‘ভাল’ সৃষ্টি করতে আল্লাহ বাধ্য।

৯. আম্বীয়া কেরাম নিষ্পাপ নয়।

১০. রাসুল সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট শাফায়াত’ কামনা করা হারাম।

১১. তাওরিত-ইঞ্জিলের ভাষায় কোন প্রকার বিকৃতি ঘটেনি, বিকৃতি ঘটেছে-অর্থের। (আল ইমান ওয়াল ইসলাম, পৃষ্ঠা ১৪৯-১৫১ ও আল বাসাঈর,ইস্তাম্বুল তুর্কী)।

১২. হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর ইসলাম গ্রহণ শুদ্ধ হয়নি। কারণ, তিনি তখন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছিলেন।

১৩. হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর নিকট সম্পদের মোহ অধিক ছিল । (হাশিয়ায়ে নিবরাস, পৃষ্ঠা ১১৬)।

১৪. এক সাথে তিন তালাক দিলে একটিমাত্র তালাক পতিত হবে। এটাই ইজমা-এ উম্মতের পরিপন্থী।

এ ছাড়া তার আরো ভ্রান্ত আক্বীদা রয়েছে। শেখ নজদীর মৌলিক চার ভ্রান্ত আক্বীদার সবকটি ইবনে তাইমিয়ারই প্রবর্তিত। উল্লেখিত চৌদ্দটি ভ্রান্ত আকীদার সাথে ওহাবীদের বেশ মিল রয়েছে। আর মওদুদী মতাবলম্বীরা ইবনে তাইমিয়ার উল্লেখিত ৯ নং আক্বীদা সহ অনেক ক্ষেত্রে একমত। ফলে উভয়দল ইবনে তাইমীয়াকে বেশ মূল্যায়ন করে। বর্তমান সৌদী ওহাবীগণও ইবনে তাইমীয়াকে তাদের মহান ইমাম হিসেবে মূল্যায়ন করে। ইবনে তাইমীয়ার রচনাবলী প্রকাশের পেছনে সৌদী সরকার প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে।
➖➖➖
আম্বিয়া কেরামের শানে জঘন্য আক্রমণ
নবী আলাইহিমুস সালামদের দ্বারা আল্লাহ যে কাজ সমাধা করেন নাই, তাবলিগীদের দ্বারা তদপেক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমাধা করতে পারেন। (মোকাতিবে ইলিয়াস, পৃষ্ঠা ১০৭; তাবলিগ দর্পন, পৃষ্ঠা-৬৩)
➖➖➖
তাবলিগী আক্বীদা ও আকায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের তুলনামূলক আলোচনা
এখানে শুধু তাবলিগীদের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ভ্রান্ত আক্বীদা তাদের কিতাবের উদ্ধৃতি সহকারে পেশ করা হলো।

★তাবলিগী আক্বীদা-০১

মুসলমান দু’প্রকার হতে পারে। তৃতীয় কোন প্রকার নেই।

(১) যারা আল্লাহর রাস্তায় বের হয় এবং

(২) যারা আল্লাহর রাস্তায় গমনকারীদের সাহায্য করে। (মালফুযাত, পৃষ্ঠা ৪৩)।

• আকায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

সপ্ত বিষয়ে আন্তরীক বিশ্বাস স্থাপনকারী নিঃসন্দেহে মুমিন মুসলমান। তাবলিগীদের এ বিভক্তিকরণ কোরআন-সুন্নাহ পরিপন্থী। এতে বুঝা যায় যে, যারা প্রত্যক্ষভাবে তাবলিগে অংশ গ্রহণ করে আর যারা অংশ গ্রহণকারীদের সাহায্য করে তারাই মুসলমান। যারা নিজে তাবলিগ করেনা এবং তাবলিগকে সাহায্যও করেনা তারা দু’প্রকারের কোন প্রকারে অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় মুসলমান নয়। কারণ তাবলিগীদের মতে মুসলমানের তৃতীয় কোন প্রকার নাই। নিজেরা ব্যতীত অন্যদের মুসলমান মনে না করা খারেজী ওহাবীদের অন্যতম ভ্রান্ত আক্বীদা।

★তাবলিগী আক্বীদা-০২

তাবলিগের সফর কোন কোন দিক থেকে জেহাদের সফরের চেয়েও অনেক উত্তম । (মালফুযাত পৃষ্ঠা- ৭৬)।

• আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

সরলপ্রাণ মুসলমানদেরকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে সফরকে কোন কোন দিক থেকে জেহাদের সফর থেকে উত্তম বলা ইসলামের ঘৃণ্য বিকৃতি । এধরণের ব্যাখ্যা হারাম।
  
★তাবলিগী আক্বীদা-০৩

মাদ্রাসায় শিক্ষাদান ও খানাকায় তাসাউফের শিক্ষাদান এর তুলনায় তাবলিগের কাজ অনেক উত্তম। (মালফুযাত, পৃষ্ঠা৭৬)

• আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত

মাদ্রাসা হলো মুসলমান আলেম তৈরীর কারখানা আর প্রকৃত পীর মাশায়েখের খানাকাহ ইলমে মারফত অর্জনের কেন্দ্র। ইলিয়াসের উক্ত মন্তব্য ইসলামের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিদ্রোহ।

★তাবলিগী আক্বীদা-০৪

একদা মৌং ইলিয়াস বললেন, দ্বীনের দাওয়াতের গুরুত্ব আমার নিকট বর্তমানে এতো জরুরী যে, কোন ব্যক্তি যদি নামাযরত অবস্থায় দেখে যে, একজন নতুন মানুষ আসছে এবং ফিরে যাচ্ছে। পুনরায় তাকে পাবার সম্ভাবনা নেই। তখন আমার মতে মধ্যখানে নামায ভেঙ্গে ঐ ব্যক্তির সাথে দ্বীনি কথা বার্তা সেরে নেয়া উচিত। ঐ ব্যক্তির সাথে কথা সেরে অথবা তাকে অপেক্ষা করতে বলে নিজের নামায পুনঃ পড়া উচিত। (মালফুযাত, পৃষ্ঠা ১৭১)।

• আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত

কারো সাথে দ্বীনের কথা বলার উদ্দেশ্যে নামায ভেঙ্গে ফেলার অনুমতি শরীয়তে নেই। অথচ তাবলিগীরা নাযাযরত অবস্থায় শুধু এ খেয়ালে থাকে যে, কোন নতুন মানুষ এসে ফিরে যাচ্ছে কি না। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, এমনি ভাবে এবাদত করো যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। অতঃপর তুমি যদি তাকে দেখতে না পাও, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে দেখছেন । (মেশকাত শরীফ)। অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, এটা মৌং ইলিয়াসের মনগড়া ভ্রান্ত মতবাদ। এতে তিনি নামাযের চেয়ে তাবলিগের শুরুত্ব অধিক, এটাই বুঝাতে চেয়েছেন।

**তাবলিগ জামাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন

★তাবলিগ জামাত, কৃত- আল্লামা আরশাদ আল ক্বাদেরী
★ইলিয়াসী জামাত; কতঃ আল্লামা মুফতি রেফাকাত হোসাইন,
★তাবলীগ দৰ্পন কৃত: হাফেজ মাওলানা মুঈনুল ইসলাম,
★তাবলীগ জামাত কা ফারেব ইত্যাদি।
➖➖➖
বাতিল ফিরকাসমূহ সম্পর্কে শরীয়তের ফয়সালা
একমাত্র নাজাত প্ৰাপ্ত দল “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত”। বাতিল ফিরকা সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসে হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন – “তিয়াত্তর ফিরকার মধ্যে একটি মাত্র দল ছাড়া বাকী সব দলই জাহান্নামী।” (মিশকাত শরীফ)

আলোচ্য হাদিসের আলোকে ফকীহগণ বলেন, বাতিল ফিরকা সমূহের মধ্যেনযাদের ভ্রান্ত আক্বীদা কুফরীর পর্যায়ে পৌছেছে, তারা সর্ব সম্মতিক্রমে কাফের,স্থায়ীভাবে জাহান্নামী। আর যেসব ফিরকার ভ্রান্ত আক্বীদা যা মানুষকে নতুন মনগড়া আক্বীদা, ও আমলের দিকে ধাবিত করে, এদেরকে কাফির সাব্যস্ত করা যাবে কি না এ বিষয়ে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ইমামগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তন্মধ্যে অনেকে বলেন, সকল বাতিল ফিরকা কাফের। আর অনেকে বলেন যে, যেসব বাতিল ফিরকার বেদআত ও ভ্রান্ত আক্বীদা কুফরীর পর্যায়ে পৌছেনি তারা-ফাসেক, গুনাহগার, গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট। (হাশীয়াতুদদুররে -আল্লামা সৈয়দ আহমদ আহতাবী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, ফিতনাতুল ওহাবীয়া)

অতএব, কোন বাতিল ফিরকা কাফির না হলেও গোমরাহ ও পথভ্রষ্ট এতে কোন সন্দেহ নেই। তারা ভ্রান্ত মতবাদের দরুন জাহান্নামী। সুতরাং কোন বাতিল ফিরকার ভ্রান্ত আক্বীদা অবগত হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র বাহ্যিক ইসলামী চাল-চলনে আকৃষ্ট হয়ে, তাদের কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করা কোন সচেতন মুসলমানের কাজ হতে পারে না। উল্লেখ্য যে, এসব ভ্রান্ত দলের অনুসারীগণ ভ্রান্তির মাত্রানুসারে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে। অপরদিকে গুনাহগার অথচ ঈমানদার এ ধরণের মুসলমানগণও পাপের ফলে জাহান্নামে শাস্তি পাবে, আর ইচ্ছা করলে আল্লাহ তা’আলা ক্ষমা করে দেবেন। উভয়ের মধ্যে শান্তির প্রকৃতিগত পার্থক্য থাকবে। ভ্রান্তদলের অনুসারীদের শাস্তি তুলনামূলক ভাবে অনেক কঠোর ও অধিক যন্ত্ৰনাদায়ক হবে।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment