কিতাবঃ আল-বিদআত: বিদআতে সাইয়্যা ও বিদআতে হাসানা।

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

কিতাবঃ আল-বিদআত: বিদআতে সাইয়্যা ও বিদআতে হাসানা।

লেখক, সংকলকঃ

মাসুম বিল্লাহ সানি (০১৭১০৩৫৫৩৪২)

প্রথম প্রকাশকালঃ ২০.১২.১৯

প্রকাশনায়ঃ সুন্নি সাইবার টিম

কপিরাইট © লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত।

উৎসর্গঃ

পীরে কামেল, আওলাদে রাসূল আল্লামা সৈয়দ মুহাম্মদ তাহের শাহ (মা.জি.আ.)। 

সূচীপত্রঃ

প্রথম অধ্যায়ঃ বিদআত এর অর্থ, সংজ্ঞা ও পরিচিতি।

❏ বিদআতের ব্যাপারে কত রকম হাদিস আছে?

❏ বিদআতের অর্থ।

❏ বিদয়াতের সংজ্ঞা।

➥বিদআতের সংজ্ঞা ১

➥বিদআতের সংজ্ঞা ২

দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ বিদআতের বিস্তারিত শ্রেনী বিন্যাস।

➥ বিদআতের শ্রেনীবিন্যাস ১ 

➥ বিদআতের শ্রেণীবিন্যাস ২ 

তৃতীয় অধ্যায়ঃ বিদআতে সাইয়্যাহ সম্পর্কে বিস্তারিত।

❏ বিদআতে সাইয়া সম্পর্কিত হাদিস।

❏ হাদিসের শরাহগ্রন্থ থেকে ব্যাখ্যা।

➥ব্যাখ্যা ১-৫:

চতুর্থ অধ্যায়ঃ বিদআতে হাসানা সম্পর্কে বিস্তারিত।

আল কুরআন আলোকে উত্তম বিদআতের আলোচনা।

❏ আয়াত নং ১-৫

আল হাদিসের আলোকে উত্তম বিদআতের আলোচনা।

❏ হাদিস নং ১-১০: 

রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের বর্ণনা বিদআতে হাসানার সমর্থন।

❏ হাদিস নং ১১-১৪: 

আবু বকর (رضي الله عنه), উমর (رضي الله عنه) ও হযরত উসমান (رضي الله عنه)’র বিদাতে হাসানার প্রচলন।

পঞ্চম অধ্যায়ঃ বিদআত সম্পর্কে ইমামগণের বর্ণনা।

❏ শাফেঈ (رحمة الله) ও  হাফিজুল হাদিস ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) 

❏ ইমাম নববী (رحمة الله)

❏ হযরত আল্লামা ইবনে হাজার হাইতামী মক্কী শাফেয়ী (رحمة الله) (ওফাত-৯৭৩ হিজরী)

❏ সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারক ইমাম বদরুদ্দীন আঈনী (رحمة الله)

❏ শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله)

❏ ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله)

ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ বিদআতের  উদাহরণ।

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর বিদাতে হাসানার প্রচলন।

❏ তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ ও সালেহীনগনের বিদআতে হাসানার প্রচলন।

❏ বিভিন্ন শব্দে দরূদ শরীফ পাঠ।

❏ ভাল কিছু বিদআতের  উদাহরণ।

❏ সর্বমহলে পরিচিত কিছু ভাল ও মন্দ বিদআতের উদাহরণ।

             বিদআতের ব্যাপারে কত রকম হাদিস আছে?

🖋উত্তরঃ ৩ রকম হাদিস। যার বিষয়বস্তুঃ

● ১) এক প্রকার হাদিস যা বিদআত শব্দের উল্লেখ আছে কিন্তু তা ভাল বিদআত না মন্দ বলা নেই। শুধু রাসুলের পরে সেগুলোর আবিষ্কার হবে বলা আছে। তা ভালও হতে পারে খারাপও হতে হতে পারে।

● ২) স্পষ্ট ভাবে সেই সব বিদআতে নিষিদ্ধ করা করা হয়েছে, ঘৃনা, লানত, শাস্তি, অভিশাপ ইত্যাদি বর্নিত আছে, তা কুরআন ও সুন্নাহর পরিবর্তন করবে বলা আছে। তা হল বিদআতে সাইয়া।

● ৩) স্পষ্টভাবে এক প্রকার নতুন কিছুর প্রবর্তনকে সওয়াব ও কল্যাণময় বলা হয়েছে যা কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কিয়াস কোনটার বিপরীতে নয়। তা হল বিদআতে হাসানা।

            ◾বিদআত এর অর্থ ও সংজ্ঞা কি?

NOTE : এগুলো মুলত প্রকৃত পক্ষে মন্দ বিদআতের অর্থ ও সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে অধিকাংশ কারন বিদাত কি বুঝানোর জন্য। কারন বিদাতে হাসানাকে প্রকৃতপক্ষে আমরা বিদাত বলে সম্বোধন করি না। যেমনঃ

আল-কোরআন বাইন্ডিং বা কোরআন খতম, খতমে ইউনুস এগুলো বিদআত কিন্তু আমরা একে বিদাত বলিও না চিন্তায়ও আনি না, সংজ্ঞারও প্রয়োজন মনে করি না কিন্তু আসলে নির্দিষ্ট করে বললে তা বিদাতে হাসানা বলা উচিত। যেমনঃ

❏ ইমাম শারানী (رحمة الله) বলেন, “প্রত্যেক নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতিই যে নিকৃষ্ট বা নিষিদ্ধ হবে, তার কোন যুক্তি নেই।” (আরওয়ারে কুদসিয়্যাহ্) অথচ আজকাল কিছু জাহিল লোক সকল বিদয়াতকেই (নতুন উদ্ভাবিত পদ্ধতি) গোমরাহী বলে থাকে এবং দলীল হিসাবে তারা নিম্নোক্ত হাদীস শরীফখানা পেশ করে থাকে।

❏ আর তাই শায়খ ইব্রাহীম হালবী (رحمة الله) বলেন,

“নতুন উদ্ভাবিত কোন কাজ হযূর পাক (ﷺ), হযরত সাহাবা-ই-কিরাম (رضي الله عنه) তাবেয়ীনগণের নিকট হতে প্রমাণিত না থাকলে অথবা উক্ত কাজের প্রতি বিদয়াত শব্দ আরোপিত হলেই যে, তা মন্দ বা গোমরাহী একথা যুক্তিযুক্ত নয়। বরং তা ভালও হতে পারে।” (কবীরী শরহে মুনিয়াতুল মুসল্লী পৃঃ২৫১)

            বিদআতের অর্থঃ

(১) “বিদয়াত হলো-দ্বীনের পূর্ণতার পর নতুন কোন বিষয় উদ্ভব হওয়া অথবা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক (ﷺ)-এর পর আমল ও খাহেশাত সম্পর্কিত কোন বিষয় নতুন উদ্ভব হওয়া।” 

(লোগাতুল কামূস আল মহীত্ব ৩য় জিঃ পৃঃ৩, বায়ানুল লিসান, পৃঃ১১৫)

(২) “বিদয়াত হলো- নমুনা ব্যতীত সৃষ্ট জিনিস।” (মিছবাহুল লোগাত, পৃঃ ২৭)

(৩) “বিদয়াত মূলতঃ ওটাকেই বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয়েছে।” (ফাতহুল বারী শরহে বুখারী ৪র্থ জিঃ পৃঃ২১৯, মিরকাত শরীফ)

(৪) “জেনে রাখ, হুযূরে পাক (ﷺ)-এর পারে উদ্ভব ঘটেছে এমন প্রত্যেক কাজই বিদয়াত।” (আশয়াতুল লোমআত)

(৫) “বিদয়াত হলো- নতুন কথা, নতুন প্রথা।” (আরবী ফিরোজুল লোগাত পৃঃ৫৩)

(৬) “বিদয়াত ওটাকে বলা হয়, যা পূর্ব নমুনা ব্যতীত সৃষ্টি করা হয়।” (লোগাত আল মনজিদ পৃঃ৭৬)

(৭) “বিদয়াত হলো- নতুন কথা।” (লোগাতে সাঈদী পৃঃ৯৬) 

সুতরাং বিদয়াত শব্দের লোগাতী বা আভিধানিক মূল অর্থ হলো- নতুন উৎপত্তি, নতুন উদ্ভব, নতুন সৃষ্টি। পূর্বে যার কোন অস্তিত্ব ছিলনা।

            বিদয়াতের সংজ্ঞাঃ

বিদআতের সংজ্ঞা ১ : 

বিদআত হল এমন নতুন বিষয়াদির আবিষ্কার যা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে ছিল না, পরে আবির্ভুত বা আবিষ্কৃত হয়েছে। তা ভালও হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে। 

❏ (১) বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ্ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (رحمة الله) লিখেছেন, “প্রকৃতপক্ষে বিদয়াত হলো- এমন জিনিসের আবির্ভাব, যার নমুনা হুযূর পাক (ﷺ)-এর সময় ছিলনা।” (ওমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী ৫ম জিঃ পৃঃ৩৫৬)

❏ (২) আল্লামা ইসমাইল নাবিহানী (رحمة الله) লিখেছেন, (শায়খুল ইসলাম) ইজদুদ্দীন ইবনে সালাম বলেন, “বিদয়াত এমন একটি কাজ, যা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূর পাক (ﷺ)-এর যামানায় সম্পন্ন হয়নি।” (জাওয়াহিরুল বিহার পৃঃ২৮০)

❏ (৩) ইমাম নববী (رحمة الله) লিখেছেন, 

“শরীয়ত মুতাবেক বিদয়াত হচ্ছে- এমনসব নব আবিস্কৃত জিনিসের নাম, যা হুযূর পাক (ﷺ)-এর সময় ছিলনা।” (শরহে মুসলিম লিন নববী)

❏ (৪) হাফেজ ইবনে রজব (رحمة الله) লিখেছেন, 

“বিদয়াত ঐ বিষয়কেই বলা হয়, যার ভিত্তি শরীয়তে নেই। সুতরাং শরীয়তে যে বিষয়ের ভিত্তি রয়েছে, শরীয়ত মুতাবেক তা বিদয়াত নয়, যদিও আভিধানিক অর্থে বিদয়াত বলা হয়।” 

(জামিউল উলূম ওয়াল হাকাম পৃঃ১৯৩, ইরশাদুল উনূদ পৃঃ১৬১)

❏ (৫) ইমাম নববী (رحمة الله) লিখেছেন, ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, “বিদয়াতের শরীয়তী অর্থ হচ্ছে এমন একটি নতুন কর্ম, যা হুযূরে পাক (ﷺ)-এর যামানায় ছিলনা।” (তাহযীবুল আসমা ওয়াল লোগাত) শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদয়াত শব্দের মূল অর্থ হলো- ঐ নতুন উদ্ভব বিষয়, যার ভিত্তি কুরআন শরীফ, হাদীস শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াসে নেই। উপরোক্ত আলোচনা দ্বারা এটা স্পষ্টই বুঝা যায় যে, বিদয়াত হলো- হুযূর পাক (ﷺ)-এর পর হতে ক্বিয়ামত পর্যন্ত উদ্ভাবিত প্রত্যেক নতুন বিষয়। এখন তা ‘খায়রুল কুরুনে’ও হতে পারে অথবা তার পরেও হতে পারে।

❏ (৬) ইমাম সুলতান মোল্লা আলি কারী (رحمة الله) ‘মিরকাত’ الاعتصام অধ্যায়ে বলেন,

وَفِى الشَّرْعِ اِحْدَاثُ مَالَمْ يَكُنْ فِىْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ عَلَيْهِ السَّلَامُ

“বিদআত হচ্ছে শরীয়তে ওই ধরনের কাজের সূচনা করা, যা হুযুর (ﷺ)’র যুগে ছিল না।”

❏ (৭) শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) “আশআতুল লুমআতে” কিতাবে বলেন,

“যে কাজ হুযুর (ﷺ)’র পরে সূচিত হয়েছে, তা বিদআত”

NOTE:এই বিদআত ভালও হতে পারে খারাপও হতে পারে। কেননা নিচের কাজগুলোও কিন্তু সুস্পষ্ট বিদআত যা রাসুলের যুগে ছিল না পরে আবিষ্কার হয়ে কিন্তু এসব ভাল বিদআত বা বিদআতে হাসানা। যেমনঃ

বিদআতের সংজ্ঞা ২: 

বিদআত হল এমন কিছু যা কুরআন এবং সুন্নাহর পরিবর্তন কারী।

❏ অনুরুপ হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকেও সহীহ বুখারীতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। রাসুল (ﷺ) বলেন, “কেউ যদি নতুন কিছু (বিদাত) সংযোজন করে এবং তা ধর্মীয় রীতিনীতির সাথে সাংঘর্ষিক হয় তা প্রত্যাখ্যাত।” [বুখারী ৩য় খণ্ড, বুক ৪৯, হাদিস নং ৮৬১]

❏ মিশকাত শরীফের الاعتصام অধ্যায়ের প্রথম হাদীসে আছে।

مَنْ اَحْدَثَ فِىْ اَمْرِنَا هذَا مَالَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَد

“যে ব্যক্তি আমার এ ধর্মে ওই ধরনের আকীদার প্রচলন করে, যা ধর্মের বিপরীত, সে অভিশপ্ত।”

NOTE: অভিশাপ, লানত বা শাস্তির ব্যাপারে এরকম যত বিদআত সম্পর্কিত হাদিস এসেছে সেগুলো মূলত মন্দ বিদআতকে বুঝানো হয়েছে। খারাপ বিদআত হল এক কথায় আকিদাগত বিদআত।

            ◾বিদআতের বিস্তারিত শ্রেনী বিন্যাসঃ

কুরআন ও হাদিসের আলোকে বিদাতের প্রকারভেদ আলোচনা করা হল। সুতরাং ইহা এক প্রকার বলা মানে পথভ্রষ্টতা ছাড়া আর কিছু নয়।

❏ বিদআতের শ্রেণী বিন্যাসঃ ১ :

শব্দের ব্যাখ্যাঃ 

(১) বিদয়াতে ই’তেক্বাদী বা আক্বীদাগত বিদয়াত। সেগুলো হলো – যে সমস্ত আক্বীদা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফের মূলনীতির বহির্ভূত, মূলতঃ এ আক্বীদাগত বিদয়াতের সবটাই হারামের পর্যায়ভূক্ত এবং অবশ্যই পরিত্যাজ্য। যেমন- খারেজী, মু’তাজিলা, জাবারিয়া, ক্বদরিয়া, শিয়া ইত্যাদি বাতিল ফিরকার আবির্ভাব। এই নব আবির্ভূত ফিরকার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করা সম্পূর্ণই হারাম ও কুফরী।

(২) বিদয়াতে আ’মালী বা কর্মগত বিদয়াতঃ

বিদআতে আ’মালী প্রথমতঃ ২’ভাগে বিভক্ত-

(A) বিদয়াতে হাসানা। ইহা ৩ প্রকারঃ

  • (i) বিদয়াতে ওয়াজিব,
  • (ii) বিদয়াতে মোস্তাহাব ও
  • (iii) বিদয়াতে মোবাহ্।

❏ উদাহরণঃ 

বিদআতে হাসানার উদাহরণ হল এই ধরনের হাদিসঃ   

“যে কেউ দ্বীন ইসলামে উত্তম কোন পদ্ধতি উদ্ভাবন করবে (যা শরীয়ত সম্মত), তার জন্য সে সাওয়াব পাবে এবং তারপরে যারা এ পদ্ধতির অনুসরণ করবে, তার সাওয়াবও সে পাবে।” (মুসলিম শরীফ)

(B) বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহ্। ➡ ইহা ২ প্রকারঃ

  • (i) বিদয়াতে হারাম,
  • (ii) বিদয়াতে মাকরূহ্।

❏ উদাহরণঃ 

বিদআতে সাইয়্যার উদাহরণ হল এই ধরনের হাদিসঃ   

❏ “যে ব্যক্তি আমার এ দ্বীনের ভিতরে কোন নতুন জিনিসের প্রবর্তন করবে, যার ভিত্তি এ দ্বীনে নেই, তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।” (মিশকাত শরীফ)

❏ “প্রত্যেক বিদয়াতই গোমরাহী, আর প্রত্যেক গোমরাহ লোকই জাহান্নামে যাবে।” উল্লেখিত হাদীস শরীফের দৃষ্টিতে বিদয়াতে সাইয়্যিয়াহকে বিদয়াত ফিদদ্বীন বলা হয়।

❏ বিদআতের শ্রেণী বিন্যাস ২ :

বিদ‘আত ২ প্রকারঃ

  • (i)  বিদ‘আতে ফিদ্দীন (البدعةفيالدين)  (মন্দ)
  • (i)  বিদ‘আতে লিদ্দীন (البدعةللدين)  (ভাল)

(১) বিদআতে সাইয়া সম্পর্কিত হাদিসঃ

এই মন্দ বিদাত সম্পর্কিত কিছু হাদিস জেনে নিন :

❏ সাহাল বিন সাদ (رضي الله عنه) বলেনে,”আমি নবী করীম (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে,(যখন আমি হাউজে কাউসারের পানি পান করাব তখন) “অবশ্যই আমার কাছে এমন কিছু লোক আসবে যাদের আমি চিনি, এবং তারাও আমাকে চিনতে পারবে। অত:পর তাদের ও আমার মাঝে আড়াল করে দেয়া হবে। তখন আমি (ফেরেস্তাদের) বলব-এরাতো আমার উম্মত!” তখন আমাকে বলা হবে-আপনি জানেন না যে, তারা আপনার পর ““`কি সব নতুন নতুন কাজের আবিস্কার করেছে। অত:পর আমি বলল-”যারা আমার পর আমার দ্বীনের পরিবর্তন সাধন করেছে““, তারা দূর হোক, তারা দূর হোক।”-[বুখারী শরীফ, হাদিস নং-৬৬৪৩]

NOTE: আগেই আলোচনা করেছি আয়েশা (رضي الله عنه) এর হাদিসহাদিস : বিদাত হল এমন জিনিস যা কুরআন ও সুন্নাহ এর পরিবর্তনকারী। সুতরাং এই হাদিসে নিষ:ন্দেহে বিদাতে সাইয়ার দিকে ইংগিত করা হয়েছে।

❏ ● রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,”যে ব্যক্তি কোন বিদআতিকে সাহায্য করে, আল্লাহ্‌ তাকে লানত করেন।”-[মুসলিম]

❏ “যে ব্যক্তি এমন কাজ করল যার প্রতি আমাদের (ইসলামের) নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।”-[মুসলিম]

❏ “নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহ্‌র কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদের আদর্শ। আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হল (দ্বীনের মধ্যে) নব উদ্ভাবিত বিষয়। আর নব উদ্ভাবিত প্রত্যেক বিষয় বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআত হল ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।

  • হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থ থেকে ব্যাখ্যাঃ

NOTE : উপরোক্ত বিদাতে সাইয়ার কথা মুলত বুঝানো হয়েছে। অথচ তার ব্যাখ্যা সম্পর্কে তারা নেহায়েতই অজ্ঞ।

ব্যাখ্যা ১:

❏ ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন, “আল আজহার” নামক কিতাবে كل بدعة ضلالة  হাদীস শরীফের এ অংশটুকুর ব্যাখ্যা এভাবে করা হয়েছে,

“সকল বিদয়াতে সাইয়্যিয়াই গোমরাহী।”

[ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله), মেশকাত শরাহ্ মেরকাত]

ব্যাখ্যা ২:

❏ মিশকাত শরীফের الاعتصام অধ্যায়ের প্রথম হাদীসে আছে,

مَنْ اَحْدَثَ فِىْ اَمْرِنَا هذَا مَالَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَد

যে ব্যক্তি আমার এ ধর্মে ওই ধরনের আকীদার প্রচলন করে, যা ধর্মের বিপরীত, সে অভিশপ্ত।

এ প্রসঙ্গে ‘মিরকাত’ গ্রন্থে বর্ণিত আছে।

وَالْمَعْنى اَنَّ مَنْ اَحْدَثَ فِى الْاِسْلَامِ رَايًا فَهُوَ مَرْدُوْد عَلَيْهِ اَقُوْلُ فِىْ وَصْفِ هَذَا الْاَمْرِ اِشَارَة اِلى اَنَّ اَمْرَ الْاِسْلَامِ كَمَلَ

যে কেউ ইসলামে এ ধরণের আকীদা প্রচলন করে, যা ধর্মের পরিপন্থী সে মরদুদ। আমি বলতে চাই যে هذالامر দ্বারা ওদিকে ইংগিত করা হয়েছে যে, ইসলামের ব্যাপারটা পরিপূর্ণ হয়েছে।

ব্যাখ্যা ৩:

মিশকাত الايمان بالقدر অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) কে কেউ বললেন অমুক ব্যক্তি আপনাকে সালাম দিয়েছেন। তখন তিনি বললেন-

بَلَغَنِىْ اَنَّهُ قَدْ اَحْدَثَ فَاِنْ كَانَ اَحْدَثَ فَلَا تُقْرِئَه مِنِّى السَّلَامَ

আমি জানতে পারলাম যে, সে বিদআতী হয়ে গেছে। তা যদি হয়, তাকে আমার সালাম বলবেন না।

জিজ্ঞাসা করা হলো বিদআতী কিভাবে হতে পারে? ফরমালেন :-

يَقُوْلُ يَكُوْنُ فِىْ اُمَّتِىْ خَسْفٌ وَمَسْخٌ اَوْقَذْفٌ فِىْ اَهْلِ الْقَدْرِ

হুযুর (ﷺ) ইরশাদ ফরমাতেন যে, আমার উম্মতের মধ্যে কদরীয়া সম্প্রদায়ের বেলায় ভূমি ধ্বসে যাবে, চেহারা বিকৃত হবে, অথবা পাথর বর্ষিত হবে।

Note:

প্রতিভাত হলো যে, কদরীয়া ফিরকাকে অর্থাৎ যারা তকদীরকে অস্বীকার করতো তাদেরকে বিদআতী বলা হয়েছে। এই হল আকিদাগত বিদআতের উদাহরণ।

ব্যাখ্যা ৪:

দুররুল মুখতারের কিতাবুল সালাত الامت শীর্ষক অধ্যায়ে বর্নিত আছে।

وَمَبْتَدَعٍ اَىْ صَاحِبِ بِدْعَةٍ وَهِىْ اِعْتِقَادُ خِلَافِ الْمَعْرُوْفِ عَنِ الرَّسُوْلِ

বিদআতী ইমামের পিছনে নামায পড়া মাকরূহ। বিদআত হচ্ছে সেই আকীদার বিপরীত আকীদা পোষন করা যা হুজুর আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম থেকে প্রসিদ্ধ লাভ করেছেন।

ব্যাখ্যা ৫:

ফাতওয়ায়ে রশীদিয়া প্রথম খন্ড কিতাবুল বিদআতের ৯০ পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে- যে বিদআতের ব্যপারে কঠিন হুমকি দেয়া হয়েছে, তা হচ্ছে আকীদাগত বিদআত। যেমন : রাফেজী ও খারেজীদের আকিদাগত বিদআত।

       ২) বিদআতে হাসানা সম্পর্কে বিস্তারিতঃ 

আল কুরআন আলোকে উত্তম বিদআতের আলোচনাঃ

❏ আয়াত ১:

মহান আল্লাহ বলেন,

مَّن يَشْفَعْ شَفَاعَةً حَسَنَةً يَكُن لَّهُ نَصِيبٌ مِّنْهَا ۖ وَمَن يَشْفَعْ شَفَاعَةً سَيِّئَةً يَكُن لَّهُ كِفْلٌ مِّنْهَا ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ مُّقِيتًا

অর্থঃ যে ব্যক্তি কল্যাণ ও সৎকাজের সুপারিশ করবে, সে তা থেকে অংশ পাবে এবং যে ব্যক্তি অকল্যাণ ও অসৎ কাজের সুপারিশ করবে, সে তা থেকে অংশ পাবে৷ আর আল্লাহ সব জিনিসের প্রতি নজর রাখেন৷”[সূরা নিসা ৮৫]

❏ আয়াত ২:

আল্লাহ তায়ালা ফরমান :

وَجَعَلْنَا فِىْ قُلُوْبِ الَّذِيْنَ اتَّبَعُوْاهُ رَافَةً وَّرَحْمَةً وَّرَهْبَانِيَّةٍ اِبْتَدَعُوْاهَا مَا كَتَبْنَا هَاعَلَيْهِمُ اِلّابْتِغَاءَ رِضْوَانِ اللهِ

“আমি তাদের আত্মায়, যারা তাঁর অনুসরণ করেছেন, আরাম ও রহমত দান করেছি সন্ন্যাসবাদ তারাই প্রবর্তন করেছিল; আমি তাদেরকে এর হুকুম দিইনি। আল্লাহর রেজামন্দির উদ্দেশ্যে এর সূচনা করেছিল।”

❏ আয়াত ৩:

পুনরায় ইরশাদ করেন,

فَاَتْيَنَا الَّذِيْنَ امَنُوْا مِنْهُمْ اَجْرَهُمْ

“তাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে, আমি ওদেরকে পুরস্কার দিয়েছি”।

❏ আয়াত ৪:

তবে হ্যাঁ, যারা একে চালু রাখতে পারেনি, তাদের নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছে-

فَمَارَعَوْهَا حَقَّ رِعَايَتِهَا

“এটাও তারা যথাযথভাবে পালন করেনি”।

❏ আয়াত ৫:

কুরআনে কারীমে আছে-

ويتبع غير سبيل المؤمنين نوله ماتولى ونصله جهنم –

যে মুসলমানের পথ থেকে ভিন্ন পথ চলে, আমি তাকে সে অবস্থায় ছেড়ে দেব এবং তাকে দোযখে প্রবেশ করাবো।

Note: লক্ষ্য করুন এখানে বিদআতের জন্য নিন্দা করা হয়নি বরং এটা চালু রাখতে না পারায় আল্লাহ অসুন্তুষ্ট।

আল হাদিসের আলোকে উত্তম বিদআতের আলোচনাঃ

রাসূলুল্লাহ  (ﷺ) ও সাহাবায়ে কেরামের বর্ণনা বিদআতে হাসানার সমর্থনঃ

❏ হাদিস ১:

হুজুর নবী-পাক (ﷺ) প্রশ্ন করেছিলেন,

-(হে মুয়ায!) আপনার নিকট যখন কোন বিচার নিয়ে আসা হবে, তখন আপনি কীভাবে সেটির ফায়সালা করবেন? 

– তিনি জবাবে বললেন, আমি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফায়সালা করব। 

– নবী-পাক (ﷺ) বললেন, আপনি যদি বিষয়টি আল্লাহর কিতাবে না পেয়ে থাকেন? 

– হযরত মুয়ায রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনুহ জবাব দিলেন, তখন আমি আল্লাহর রসুলের সুন্নাহ মােতাবেক ফায়সালা করব। 

– অত:পর হুজুর (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি যদি সুন্নায়ও ফায়সালাটি না পেয়ে থাকেন? 

– তিনি জবাব দিলেন, তখন আমি আমার মতামত অনুযায়ী ইজতিহাদ করব। কোনরূপ কার্পণ্য করব না। হযরত মুয়ায (رضي الله عنه) বলছেন, 

– অত:পর তিনি (ﷺ) তার আদরমাখা হাত মােবারক দিয়ে আমার বক্ষে (আলতাে ভাবে) আঘাত করলেন। আর বললেন, সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহরই জন্য, যিনি তাঁর রসুলের প্রেরিত প্রতিনিধিকে এমন তাওফিক দান করলেন, যা তাঁর রসুলকে সন্তুষ্ট করে। “

তথ্যসূত্রঃ

(ক) আবু দাউদ : আস সুনান, বাকুল ইজতিহাদির রাইয়ি ফীল ক্বদা ৯:৪৮৯, হাদিস নং-৩১১৯।

(খ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, বাবুল আমলি ফীল ক্বদা, গ. ৫০। 

(গ) বায়হাকী : সুনানুল কুবরা , ১০:১১৪। 

(ঘ) তাহাবী : মুশকিলুল আসার, ৮: ১১৮।

❏ হাদিস ২:

হযরত আমর বিন আস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,

ﻋَﻦْ ﻋَﻤْﺮِﻭ ﺑْﻦِ ﺍﻟْﻌَﺎﺹِ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ- « ﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻢُ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺻَﺎﺏَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮَﺍﻥِ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﺣَﻜَﻢَ ﻓَﺎﺟْﺘَﻬَﺪَ ﻓَﺄَﺧْﻄَﺄَ ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮٌ

রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন-“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দু’টি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব।

তথ্যসূত্রঃ

● সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৬৯১৯,

● সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং-৩৫৭৬,

● সহীহ মুসলিম, হাদিস নং-৪৫৮৪

❏ হাদিস ৩:

হযরত আবু হােরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, হুজুর পাক (ﷺ) এরশাদ করেন,

“কোন বিচারক যখন ইজতিহাদ দ্বারা বিচার করে, আর বিশুদ্ধ বিচার করে, তখন তার জন্য রয়েছে দুইটি প্রতিদান। আর যদি ইজতিহাদ সহকারে বিচার করে, কিন্তু তাতে ভুল হয়ে যায়, তাহলেও তার জন্য রয়েছে একটি প্রতিদান।”

তথ্যসূত্রঃ

(ক) বুখারী : আস সহীহ বাবু ইযা হাকামাল হাকীমু ২২:৩৩৫, হাদিস নং- ৬৮০৫। 

(খ) মুসলিম : আস সহীহ বাবু বয়ানি আজরুল হাকেম, ৯:১১৪, হাদিস নং-৩২৪০। 

(গ) তিরমিযী : আসসুনান, বাবু মা-জা’আ ফীল ক্বদা, ৫:১৬০, হাদিস নং-১২৪৮। 

(ঘ) নাসায়ী : আস-সুনান,বাবুল ইসাবা ফীল হুকমি, ১৬:২১২, হাদিস নং-৫২৮৬। 

(ঙ) আবু দাউদ: আল সুনান, বাবু ফীল ক্বদা বিখাতায়ি ৯:৪৬৪, বলিস – ৩১০৩।

❏ হাদিস ৪:

আবু যার (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদীসে পাওয়া যায় যে আল্লাহ্‌র রাসূলকে (ﷺ) জিজ্ঞেস করা হয়েছেঃ “ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে কী বলবেন যে কোনো ভালো কাজ করল এবং মানুষ এর জন্য তাকে প্রশংসা করল?” আল্লাহ্‌র রাসূল (ﷺ) বললেনঃ “এটি হোলো মু’মিনের জন্য আগাম সুসংবাদ।” [মুসলিম]

❏ হাদিস ৫:

সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন-

فما رآه المؤمنُ حسنًا فهوا عند اللّٰهِ حسنٌ وما رآه المؤمنون قبيحاً فهو عند اللّٰهِ قبيح

যে আমল মুমিনের দৃষ্টিতে ভালো সেটা আল্লাহর নিকটও ভালো।আর যে আমলটি মুমিনদের দৃষ্টিতে খারাপ সেটা আল্লাহ তাআলার নিকটও খারাপ।

তথ্যসূত্রঃ

● মুসনাদে বাজ্জার,হাদীস নং ১৮১৬;

● তাবরানীর-মুজামুল কাবীর,হাদীস নং৮৫৮৩;

● মুসনাদে আহমদ,হাদীস নং৩৬০০;

● মুসতাদরাক,হাদীস নং ৪৪৬৫।

❏ হাদিস ৬:

‘‘ভাল কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদন কারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে।”[সুনান-তিরমীযি, ২৬৭০]

❏ হাদিস ৭:

 عن جرير رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من سن فى الاسلام سنة حسنة فله اجرها واجر من عمل بها من بعده من غيره ان ينقص من اجرهم شىء .

অর্থঃ হযরত জারীর ইবনে আব্দুল্লাহ বাজালী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দ্বীন ইসলামে কোন উত্তম বিষয় বা আমলের প্রচলন করলো, তার জন্য প্রতিদান বা ছওয়াব রয়েছে এবং তার পরে যারা এই আমল করবে তাদের জন্য ছওয়াব বা প্রতিদান রয়েছে, অথচ এতে তাদের ছওয়াবের কোন কমতি করা হবে না।’ (মুসলিম, মিশকাত)

❏ হাদিস ৮:

“যেই ব্যক্তি ইসলামে কোন নেক কাজের সূচনা করবে, সে তার কাজটিরও প্রতিদান পাবে এবং পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী আমলকারীদের আমলেরও প্রতিদান পাবে। আর সেই আমলকারীদের প্রতিদানে কোনরূপ ঘাটতি হবে না। 

– পক্ষান্তরে যেই ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ কাজের সূচনা করল, কাজটি প্রচলনের গুনাহ্ এবং পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী আমলকারীদের আমলের গুনাহ তার উপর বর্তাবে। আর সেই আমলকারীদের গুনাহে কোনরূপ ঘাটতি হবে না।”

তথ্যসূত্রঃ

(ক) মুসলিম : আস সহীহ, বাবুল হাসি আলাস সাকাহ ৫:১৯৮, হাদিস নং- ১৬১১।

(খ) নাসায়ী : আস্ সুনান, বাবুত তাহরিদী আলা সদকাহ, ৮:৩২৯, হাদিস নং- ২৫০৭। 

(গ) আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, ৩৯:১৬৬, হাদিস নং- ১৮৩৬৭। 

(ঘ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ইলম, প্রথম পরিচ্ছেদ, পু, ৪৫। 

(ঙ) ইবনে আবু শায়বা : আল মুসান্নাফ, ৩৪।

❏ হাদিস ৯:

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন-

ﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻲ ﺍﻹِﺳْﻼﻡِ ﺳُﻨَّﺔً ﺣَﺴَﻨَﺔً ﻓَﻠَﻪُ ﺃَﺟْﺮُﻫَﺎ ﻭَﺃَﺟْﺮُ ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﺑَﻌْﺪَﻩُ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْ ﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ ﺃُﺟُﻮﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻲْﺀٌ ﻭَﻣَﻦْ ﺳَﻦَّ ﻓِﻲ ﺍﻹِﺳْﻼﻡِ ﺳُﻨَّﺔً ﺳَﻴِّﺌَﺔً ﻛَﺎﻥَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭِﺯْﺭُﻫَﺎ ﻭَﻭِﺯْﺭُ ﻣَﻦْ ﻋَﻤِﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﻣِﻦْ ﺑَﻌْﺪِﻩِ ﻣِﻦْ ﻏَﻴْﺮِ ﺃَﻥْﻳَﻨْﻘُﺺَ ﻣِﻦْ ﺃَﻭْﺯَﺍﺭِﻫِﻢْ ﺷَﻲْﺀ  ٌ

যে ব্যক্তি ইসলামে একটি নতুন ভাল প্রথা আবিষ্কার করল তার জন্য উত্তম প্রতিদান রয়েছে, এবং যারা এর উপর আমল করবে তাদের জন্যও উত্তম প্রতিদান রয়েছে। এতে লোকেরা যে অনুযায়ী আমল করেছে,তাকে সব আমলকারীর সমান সওয়াব দেওয়া হবে।আবার তাদেরকে ও কম দেওয়া হবে না। আর যে ইসলামে একটি খারাপ প্রথা চালু করেছে ও লোকেরা সে অনুযায়ী আমল করেছে,তাকে সব আমলকারীর সমান পাপ দেওয়া হবে। আবার তাদের পাপে কম করা হবে না।  

তথ্যসূত্রঃ

●সহীহ মুসলিম-কিতাবুয যাকাত, হাদীস নং১০১৭; কিতাবুল ইলম,হাদীস নং ১০১৭।

●সুনান নাসায়ী-কিতাবুয যাকাত-বাবুত তাহরীদে আলাস সাদকাতে,হাদীস নং ২৫৫৪।

●সুনান ইবনে মাজাহ-আল মোকাদ্দামা, হাদীস নং ২০৩, সহিহ।

●মিশকাত শরীফের العلم অধ্যায়।

❏ হাদিস ১০: 

মিশকাত শরীফের الاعتصام অধ্যায়ে উল্লেখিত আছে-

اتبعوا السواد الاعظم فانه من شذشذ فى النار-

বড় জামাতের অনুসরণ করুন। যে এর থেকে পৃথক রইল, সে দোযখে পৃথক অবস্থায় থাকবে।

আবু বকর (رضي الله عنه) এর বিদাতে হাসানার প্রচলনঃ

❏ হাদিস ১১: 

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত (رضي الله عنه) কে যখন কুরআনে পাক একত্রিত করার হুকুম দিলেন, তখন তিনি আরয করলেন,

كيف تفعلون شيئالم يفعله رسول الله صلى الله عليه وسلم قال هو خير-

আপনি এ কাজ কেন করতে যাচ্ছেন, যা হুযুর (ﷺ) করেননি। হযরত সিদ্দিক (رضي الله عنه) ফরমালেন, এতো ভাল কাজ। অর্থাৎ হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত হযরত সিদ্দীক (رضي الله عنه) এর সমীপে আরয করলেন, কুরআন একত্রিতকরণ হচ্ছে বিদআত। তাই আপনি কেন বিদআতে হাত দিচ্ছেন। তখন হযরত সিদ্দীক (رضي الله عنه) ইরশাদ ফরমালেন- বিদআত বটে তবে উত্তম বিদআত। এর থেকে প্রমাণিত হলো সাহাবায়ে কিরামের কাজ হচ্ছে বিদআতে হাসানা।

[বুখারী শরীফ : দ্বিতীয় খন্ড :  كتاب فضائل القران এর جمع القران অধ্যায়।]

❏ হাদিস ১২: 

হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) যখন কুর্‌আন সংকলন করার কথা বললেন তখন সাহাবা গণ আরজ করলেন হে খলিফাতুল মুসলেমিন” আপনি কি এমন কাজ (বিদআত) করবেন যা রাসূল (ﷺ) করেননি? তখন সিদ্দিকে আকবর বললেন আল্লাহর কসম এটা ভাল কাজ.। [মেশকাত শরিফ পৃষ্ঠা ১৯৩]

প্রমাণিত হল হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ভাল বিদআত গ্রহণ করেছেন ।

উমর (رضي الله عنه) এর বিদআতে হাসানার প্রচলনঃ

হযরত উমর (رضي الله عنه) ৩০ দিন জামাত সহকারে তারাবিহ নামাজ চালু করেন, যা রাসূল (ﷺ) ও আবু বকর (رضي الله عنه) এর সময় ছিলনা।

❏ হাদিস ১৩: 

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আব্দুল কারী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হযরত উমর (رضي الله عنه) সাথে এক রাত মসজিদের উদ্যেশ্যে বাহির হলাম, আমরা দেখলাম লোকেরা বিক্ষিপ্তভাবে নামাজ পড়ছে। কেউ একাকী পড়ছে আবার কোন লোক নামাজ পড়ছে কিন্তু তার পিছনে কতগুলো লোক ইকতেদা করছে।হযরতে উমর (رضي الله عنه) বলেন আমার মনে হলো এদেরকে যদি একজন কারীর পিছনে একত্রিত করে দিই তাহলে অনেক ভালো হবে। তাই তিনি উবাই ইবনে কা’ব এর পিছনে সবাইকে একত্রিত করে দিলেন।অতঃপর আমি হযরত উমার (رضي الله عنه) এর সাথে অন্য একটি রাতে যখন বাহির হলাম,আমি দেখলাম লোকেরা তাদের কারীর পিছনে নামাজ পড়ছে-

قال عمرُ نعمَ البدعةُ هذهِ

এটা কতইনা ভালো বিদাআত অর্থাৎ বিদাআতে হাসানা।

তথ্যসূত্রঃ

(ক) ইমাম মালেকঃ মোয়াত্তায়ে ইমাম মালেক, কিতাবুস সালাতি ফি রমাদ্বান, বাবু মা জাআ ফি কিয়ামি রমাদান,হাদীস নং ৬৫০।

(খ) বুখারী : আস্ সহীহ, কিতাবু সালাতিত তারাবিহ, বাবু ফাদ্বলি মান কামা রমাদান, ২:৭০৭, হাদিস নং ১৯০৬; ৭:১৩৫, হাদিস নং-১৮৭১। 

(গ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, বাবু কিয়ামী শাহরি রমদ্বান, ১:২৯০, হাদিস নং-১৩০১। 

(ঘ) বায়হাকী : সুনানুল কুবরা, ২:৪৯৩। 

(ঙ) বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান ৭:২৭১, হাদিস নং-৩১২২।

হযরত উসমান (رضي الله عنه) বিদাতে হাসানার প্রচলনঃ

❏ হাদিস ১৪: 

হযরত ওসমান (رضي الله عنه) জুমার নামাজে খুতবার আযান (দ্বিতীয় আজান) চালু করেছেন, যা রাসূল (ﷺ) ও দুই খলিফার আমলে ছিলনা। (সহীহ বুখারী খন্ড ১. পৃষ্ঠা ১২০)

যদিও গায়র মুকাল্লিদীনের অর্থাৎ আহলে হাদিস ভাইদের নিকট এই আযান মন্দ বেদআত (নাউযুবিল্লাহ)। যেমন :

❏ মুহাম্মদ ইদরীস সালাফী এক প্রশ্নের জবাবে লিখে-“প্রথম আযান বেদআত” (জমীমা জাদীদা ফতোয়ায়ে সাত্তারিয়া-২য় খন্ড, ১৩পৃ:)

❏ আব্দুস সাত্তার রহমানী গায়র মুকাল্লিদ “আজীব ও গরীব বেদআত” নামক এক কিতাব লিখেছেন,

উক্ত কিতাবে বেদআতের নামে হযরত উসমান (رضي الله عنه) এর চালুকৃত আযানের আলোচনা করতে গিয়ে এটাকে বেদআতের মধ্যে শামীল করেছেন। (আজীব ও গরীব বেদআত-২৯)

বিদআত সম্পর্কে ইমামগণের বর্ণনাঃ

❏ শাফেঈ (رحمة الله) ও  হাফিজুল হাদিস ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) 

ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সহিহ সনদসহ ➡ “মানাকিব আল-ইমাম শাফেঈ (رحمة الله)” কিতাবে বর্ননা করেন,➡ মুহাম্মদ ইবনে মুসা ইবনে আল-ফজল (رحمة الله) আমাদের নিকট বর্ননা করেছেন➡

➡ মুহাম্মদ ইবনে মুসা ইবনে আল-ফজল (رحمة الله), তিনি ➡ আবু আল-আব্বাস আল আসসাম (رحمة الله) থেকে তিনি ➡ রাবী ইবনে সুলায়মান (رحمة الله) থেকে তিনি ➡ ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) থেকে বর্ননা করেছেন যে ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) তাকে (সুলায়মানকে) জানিয়েছেন :

যে কোন নতুন কাজ বা বিষয় দুই ধরনেরঃ

(১) প্রথমত, প্রথম প্রকার হল, সেসব নতুন কাজ বা বিষয় যা কুরআন, সুন্নাহ্, সাহাবাগণের জীবনাদর্শ এবং ইজমায়ে উম্মতের পরিপন্থী। আর তা হল ‘বিদ’আতে-দ্বালালাহ্ তথা গােমরাহীপূর্ণ বিদ্আত।

(২) দ্বিতীয়ত, সেসব নতুন কাজ বা বিষয় যেগুলাে মঙ্গল কিংবা কল্যাণের স্বার্থে প্রণয়ন করা হয়েছে এবং কুরআন, সুন্নাহ্, সাহাবাগণের জীবনাদর্শ এবং ইজমায়ে-উম্মতের কোন একটির পরিপন্থী নয়। সুতরাং, এই ধরনের নতুন কাজ বা বিষয় ‘গাইরে-মাযমূমাহ’ তথা নিন্দনীয় নয়। 

তাই তাে হযরত ওমর ফারূক (رضي الله عنه) রমজানের তারাবীহর নামাজের ব্যাপারে বলেছিলেন, এ কতই যে উত্তম বিদআত’।

তথ্যসূত্রঃ

(ক) মালেক : আল মুয়াত্তা ,১:১১৪, হাদিস : ২৫০।

(খ) বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান, ৩:১১৭, হাদিস : ৩২৬৯। 

(গ) ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) : মানাকিব আল-ইমাম শাফেঈ (رحمة الله)।

(ঘ) ইবনে রজব হাম্বলী : জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ১:২৬৬। 

(ঙ) ফুরকানী : শরহে ফুরকানী আলা মুরায়ে ইমাম মালেক, ১:৩৪০।

(চ) সুয়ুতী : তানভীরুল হাওয়ালেক শরহে মুয়ায়ে মালেক, ১:১০৫, হাদিস :২৫৩। 

(ছ) মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) : মেরকাত শরহে মেশকাত, ১ম জিঃ পৃঃ১৮৯।

❏ ইমাম নববী (رحمة الله) লিখেছেন,

ﻓﻴﻪ ﺍﻟﺤﺚ ﻋﻠﻰ ﺍﻻﺑﺘﺪﺍﺀ ﺑﺎﻟﺨﻴﺮﺍﺕ ﻭﺳﻦ ﺍﻟﺴﻨﻦ ﺍﻟﺤﺴﻨﺎﺕ ﻭﺍﻟﺘﺤﺬﻳﺮ ﻣﻦ ﺍﺧﺘﺮﺍﻉ ﺍﻻ ﺑﺎﻃﻴﻞ ﺍﻟﻤﺴﺘﻘﺒﺤﺎﺕ –

অর্থাৎ, “উপরোল্লিখিত হাদীস শরীফে ভাল কাজের সূচনা এবং উত্তম রীতি-রেওয়াজ চালু করার প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে এবং ভ্রান্ত ও অনিষ্ট রীতি-রেওয়াজ চালু করার ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে।”

[শরহে নববী আলা মুসলিম,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-৩২৭]

❏ ইমাম নববী (رحمة الله) উল্লিখিত হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে আরও বলেন,

ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺗﺨﺼﻴﺺ ﻗﻮﻟﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ( ﻛﻞ ﻣﺤﺪﺛﺔ ﺑﺪﻋﺔ ﻭﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ ) ﻭﺍﻥ ﺍﻟﻤﺮﺍﺩ ﺑﻪ ﺍﻟﻤﺤﺪﺛﺎﺕ ﺍﻟﺒﺎﻃﻠﺔ ﻭﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﺬﻣﻮﻣﺔ 

অর্থাৎ, উপরোল্লিখিত হাদীস -এ হুজুর সরকারে দো’আলম (ﷺ) এর ফরমানে মুবারক,

ﻛﻞ ﻣﺤﺪﺛﺔ ﺑﺪﻋﺔ ﻭﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ

(প্রত্যেক নতুন বস্তুই বিদ’আত এবং প্রত্যেক বিদ’আত গোমরাহী) এর ব্যাখ্যা হল যে, অত্র হাদীসের মধ্যে বিদ’আত থেকে উদ্দেশ্য নব্য ভ্রান্ত বিষয়াদি এবং মন্দ বিদ’আত।

[শরহে নববী আলা মুসলিম,খন্ড-১,পৃষ্ঠা-৩২৭]

ইমাম ইবনে রজব হাম্বলী (رحمة الله) [৭৯৫হি] শীয় কিতাব ‘জামেউল-উলুমি ওয়ালহিকাম’-এ বিদআতের প্রকারভেদ বিষয়ে ইমাম শাফেঈর বরাত দিয়ে লিখছেন,

ইবরাহীম বিন জোনাইদীর সনদে হাফেজ আবু নাঈম রেওয়ায়ত করছেন। তিনি বলেন, আমি ইমাম শাফেঈকে এই কথা বলতে শুনেছি যে, বিদ্আত দুই প্রকারঃ

১. বিদ’আতে মাহমুদা (নন্দিত বিদআত) এবং 

২. বিআতে মাযমূমাহ (নিন্দিত বিদ্আত)। 

যেই বিদআত সুন্নাহর অনুকূলে এবং সুন্নাহর অনুসরণে হবে, সেটি মাহমুদা তথা নন্দিত।

পক্ষান্তরে যেই বিদ্আত সুন্নাহর বিপরীতে এবং সুন্নাহর পরিপন্থী হবে, সেটি মাযমূমাহ্ তথা নিন্দিত। তিনি (হযরত ওমর ফারূক (رضي الله عنه)র বাণী “এটি কতই যে উত্তম বিদ্আত”)-টিকে দলিল রূপে গ্রহণ করেছেন। এদিকে ইমাম শাফেঈর উদ্দেশ্যও একই। যা আমরা ইতােপূর্বে আলােচনা করেছি। ‘বিদ’আতে-মাযমূমাহ’ বা নিন্দিত বিদ্আত বলতে সেটিকেই বুঝায় যার কোন মূল ভিত্তি কিংবা দলিল শরীয়তে নাই, যেদিকে এটি ধাবিত হয়। এবং সেটিকেই ‘বি’আতে-শরঈ’ তথা শরীয়ত ভিত্তিক বিদ্আত বলা হয়। পক্ষান্তরে বিআতে-মাহমূদাহ্ হল সেই বিদ্আত যা সুন্নাহর অনুকুল ও সুন্নাহর অনুসরণে হয়ে থাকে। অর্থাৎ সেটির মূল ভিত্তি শরীয়তে বিদ্যমান রয়েছে, যেদিকে এটি ধাবিত হয়। আর এটিই হল বিদআতে-লুগাবী তথা আভিধানিক অর্থে বিদ্আত; এটি শরঈ বিদ’আত নয়। অর্থাৎ এটিকে শরীয়ত ভিত্তিক বিদ্আত বলা যায় না। এরই ব্যাখ্যায় ইমাম শাফেঈর দ্বিতীয় দলিল তার এই উক্তি যে, নব-আবিষ্কৃত বিষয়াদি দুই ধরনেরঃ

প্রথম, সেসব বিদআত যা কিতাব, সুন্নাহ্, সাহাবাগণের জীবনাদর্শ এবং উম্মতগণের ইজমার পরিপন্থী হবে এটি হল ‘বি’আতে-দ্বালালাহু’ তথা গােমরাহীপূর্ণ বিদ্আত।

পক্ষান্তরে এমন আবিষ্কার যাতে মঙ্গল ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে, আর ওসবের (কিতাব, সুন্নাহ্, সাহাবাগণের জীবনাদর্শ ও ইজমার) পরিপন্থী নয়, সেটি ‘বিদআতে গাইরে-মাযমূমাহ্’ তথা নিন্দনীয় বিদ্আত নয়। 

❏ হযরত আল্লামা ইবনে হাজার হাইতামী মক্কী শাফেয়ী (رحمة الله) (ওফাত-৯৭৩ হিজরী) বর্ণনা করেন,

ﻗﺎﻝ ﺍﻟﻌﺰﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ – ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻓﻌﻞ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﻌﻬﺪ ﻓﻰ ﻋﻬﺪ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻭﺗﻨﻘﺴﻢ ﺍﻟﻰ ﺧﻤﺴﺔ ﺍﺣﻜﺎﻡ ﻳﻌﻨﻰ ﺍﻟﻮﺟﻮﺏ ﻭﺍﻟﻨﺪﺏ ﺍﻟﺦ ﻭﻃﺮﻳﻖ ﻣﻌﺮﻓﺔ ﺫﻟﻚ – ﺍﻥ ﺗﻌﺮﺽ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻋﻠﻰ ﻗﻮﺍﻋﺪ ﺍﻟﺸﺮﻉ- ﻓﺎﻯ ﺣﻜﻢ ﺩﺧﻠﺖ ﻓﻴﻪ، ﻓﻬﻰ ﻣﻨﻪ – ﻓﻤﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻮﺍﺟﺒﺔ ﺗﻌﻠﻢ ﺍﻟﻨﺤﻮ ﺍﻟﺬﻯ ﻳﻔﻬﻢ ﺑﻪ ﺍﻟﻘﺮﺍﻥ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺔ ﻣﺬﻫﺐ ﻧﺤﻮ ﺍﻟﻘﺪﺭﻳﺔ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﻨﺪﻭﺑﺔ ﺍﺣﺪﺍﺙ ﻧﺤﻮ ﺍﻟﻤﺪﺍﺭﺱ ﻭﺍﻻﺟﺘﻤﺎﻉ ﻟﺼﻠﻮﺓ ﺍﻟﺘﺮﺍﻭﻳﺢ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﺒﺎﺣﺔ ﺍﻟﻤﺼﺎﻓﺤﺔ ﺑﻌﺪ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺒﺪﻉ ﺍﻟﻤﻜﺮﻭﻫﺔ ﺯﺧﺮﻓﺔ ﺍﺍﻟﻤﺴﺎﺟﺪ ﻭﺍﻟﻤﺼﺎﺣﻒ ﺍﻯ ﺑﻐﻴﺮ ﺍﻟﺬﻫﺐ ﻭﺍﻻ ﻓﻬﻰ ﻣﺤﺮﻣﺔ- ﻭﻓﻰ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ – ﻛﻞ ﺑﺪﻋﺔ ﺿﻼﻟﺔ ﻭﻛﻞ ﺿﻼﻟﺔ ﻓﻰ ﺍﻟﻨﺎﺭ- ﻭﻫﻮ ﻣﺤﻤﻮﻝ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺤﺮﻣﺔ ﻻ ﻏﻴﺮ –

অর্থাৎ, হযরত আল্লামা ইজ্জ বিন আব্দুস সালাম (رحمة الله) ইরশাদ করেন, বিদ’আত এমন একটি কাজ যার প্রচলন হুজুর পাক সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা এর যুগে ছিল না।এবং এটা (বিদ’আত) কে পাঁচটি বিধানে বিভক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ ওয়াজিব-মুস্তাহাব এবং অন্যান্য। এটা জানার উপায় এই যে, বিদ’আত (নতুন উদ্ভাবন) কে ইসলামী শরীয়তের মূলনীতিতে পেশ করা হবে। ফলে ঐ বিদ’আত (নতুন উদ্ভাবন) যেই বিধানে পড়বে তবে তা উহার অন্তর্ভুক্ত হবে।

১। ওয়াজিব বিদ’আতঃ এর মধ্যে (অন্যতম) রয়েছে ইলমে নাহু শিক্ষা করা। যার মাধ্যমে কুরআন মাজীদ ও নবীজী (ﷺ) এর হাদীস শরীফকে বুঝা যায়।

২। হারাম বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে ক্বদরিয়্যাহ এবং অন্যান্য সম্প্রদায় (বাতিল ফির্কা) সমূহ।

৩। মুস্তাহাব বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে মাদ্রাসা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করা এবং তারাবীহ নামাজের জন্য একত্রিত হওয়া।

৪। মুবাহ (বৈধ) বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে নামাজের পর মুসাফাহা (করমর্দন) করা।

৫। মাকরুহ বিদ’আতঃ এর মধ্যে রয়েছে মসজিদ এবং পবিত্র কুরআন মাজিদের সৌন্দর্যকরণ। অর্থাৎ স্বর্ণ ব্যতিরেকে অন্যান্য বস্তু দ্বারা (মসজিদ এবং কুরআন মাজিদের) সৌন্দর্যকরণ। (অন্যদিকে) স্বর্ণ দ্বারা এহেন সৌন্দর্যকরণ করাও হারাম (এগুলো হল বিদ’আতের পাঁচটি প্রকার।) আর হাদীস শরীফের মধ্যে রয়েছে যে,প্রত্যেক বিদ’আত হল গোমরাহী (ভ্রষ্টতা) এবং প্রত্যেক গোমরাহী-ই জাহান্নামে যাওয়ার মাধ্যম। তাহলে এই হাদীস শুধুমাত্র হারাম বিদ’আতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। 

(অর্থাৎ এই হাদীস শরীফে শুধুমাত্র হারাম বিদ’আতের কথা উল্লেখ হয়েছে, নতুবা অসংখ্য নব্য সৃষ্টি দ্বীনের জন্য আবশ্যকীয়।)

[ইবনে হাজার হাইতামী মক্কী শাফেয়ী (رحمة الله) ফতোয়ায়ে হাদীসিয়্যাহ,পৃষ্ঠা-১০৯,দারুল ফিকার, বৈরুত,লেবানন]

❏ সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাকারক ইমাম বদরুদ্দীন আঈনী (رحمة الله) বলেন,

ﺛﻢ ﺍﻟﺒﺪﻋﺔ ﻋﻠﻲ ﻧﻮﻋﻴﻦ _ ﺍﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﻣﻤﺎ ﻳﻨﺪﺭﺝ ﺗﺤﺖ ﻣﺴﺘﺤﺴﻦ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﻓﻬﻲ ﺑﺪﻋﺔ ﺣﺴﻨﺔ ﻭﺍﻥ ﻛﺎﻧﺖ ﻣﻤﺎ ﻳﻨﺪﺭﺝ ﺗﺤﺖ ﻣﺴﺘﻘﺒﺢ ﻓﻲ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﻓﻬﻲ ﺑﺪﻋﺔ ﻣﺴﺘﻘﺒﺤﺔ

অতঃপর বিদআত ২ প্রকার। বিদআতটি যদি শরীয়ত সম্মত ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত হয়, তবে তা বিদআতে হাসানাহ বা ভাল বিদআত । আর যদি তা শরীয়তের দৃৃষ্টিতে খারাপ ও জঘন্য কাজ হয় তবে তা বিদআতে মুস্তাকবিহা বা জঘন্য বিদআত। 

(ইমাম বদরুদ্দীন আঈনীঃ উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারী)

❏ শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) “আশআতুল লুমআতে” কিতাবে বলেন,

যে বিদ্আত ধর্মের মূলনীতি, নিয়ম-কানুন ও সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এর সাথে কিয়াস করা হয়েছে, একে বিদ’আতে হাসানা বলা হয়। আর যা বিপরীত, সেটাকে বিদআতে গুমরাহী বা বিআতে সায়্যিয়াহ বলা হয়। 

[শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভীঃ আশআতুল লুমআত গ্রন্থের প্রথম খন্ড]

❏ শাহ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) আরো বলেন,

يس برجه خلفائـ راشدين بدان كرده باشند- اكرجه باجتهاد وقياس ايشان بود موافق سنت نبوى است اطلاق بدعت بران نتوان كرد-

যে বিষয়ে খুলাফায়ে রাশেদীন রায় দিয়েছেন, তা যদি নিজস্ব কিয়াস ও ইজতিহাদ দ্বারা হয় এবং সুন্নাতের নববী অনুযায়ী হয়, তবে তাকে বিদআত বলা সমচীন নয়।

[‘আশআতুল লুমআত’ এ فعليكم بسنتى এর প্রোপটে উল্লেখিত আছে]

❏ ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) কৃত ফাতওয়ায়ে শামীর ভুমিকায় ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) এর ফযীলত বর্ণনা প্রসঙ্গে উল্লেখিত আছে।

“উলামায়ে কিরাম বলেন- এসব হাদীস সমূহ ইসলামের কানুন হিসেবে প্রযোজ্য- যে কেউ ইসলামে কোন মন্দ কাজের সূচনা করলে সে এর উপর সমস্ত আমলকারী দের গুনাহের ভাগী হবে; আর যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের প্রচলন করেন, তিনি কিয়ামত পর্যন্ত সমস্ত আমলকারীদের ছওয়াবের ভাগী হবেন। এর থেকেও প্রমাণিত হলো ভাল বিদআতে ছওয়াব আছে ও মন্দ বিদআতে গুনাহ হয়।

ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর বিদাতে হাসানার প্রচলনঃ

❏ মুসাব্বিহ বিন সায়ীদ (رحمة الله) বলেন,

ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর অভ্যাস ছিল, রামাদান মাসের প্রথম রাত থেকেই তাঁর সাথীগণ তাঁর নিকট জমায়েত হতেন। অতঃপর তিনি তাদের নিয়ে সালাত আদায় করতেন। অতঃপর প্রতি রাকাতে তিনি ২০ আয়াত করে তেলাওয়াত করতেন। এভাবে সেহরী পর্যন্ত তিনি কোর’’আনে কারীমের এক তৃতীয়াংশ তেলাওয়াত করতেন। আর এভাবে প্রতি তিনদিনে সেহরীর সময় তাঁর এক খতম কোর’আনে কারীমের তেলাওয়াত হয়ে যেত।

আর প্রতি এক খতম কোর’আনে কারীমের তেলাওয়াত শেষে ইমাম বুখারী বলতেন, এখন দোয়া করলে দোয়া কবুল হবে।

১.সিফাতুস সাফওয়াহঃ২/৩৫৪

২.ইমাম যাহাবীঃ সিয়ারু আ’লামিন নুবালা

তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ ও সালেহীনগনের বিদআতে হাসানার প্রচলনঃ

❏ ইমামগন ও মুহাদ্দিসগন হাদিস সংকলন বিদাতে হাসানা এগুলো রাসুলের যুগে ছিল না তাই কেউ সংকলনও করেন নি, এসব হাদিস সংগ্রহ শুরু হয়েছিল তাবেঈগনের যুগ থেকে।

❏ বর্তমানে যে সহিহ সিত্তাহ ছাড়াও শত শত হাদিসের কিতাব পেয়েছি আমরা তা সব বিদাতে হাসানার ফসল। নয়তো এক বার ভাবুন তো যদি আমাদের কাছে হাদিস না পোছাত কি অবস্থা হত আমাদের? তাছাড়াতাছাড়া পুর্ববর্তী ইমামগন থেকে আজ পর্যন্ত ইমামগন কুরআন-সুন্নাহ থেকে গবেষনাভিত্তিক যুগ উপযোগী বিভিন্ন ফতোয়ার উদ্ভাবন করে থাকেন যেগুলো ছাড়া আমাদের জীবন অনেক কঠিন হয়ে যেত। এসব উত্তম বিদআত।

বিভিন্ন শব্দে দরূদ শরীফ পাঠঃ

ইমাম বুখারী (رحمة الله)’র ব্যবহৃত দরূদ

ইমাম বুখারী (رحمة الله)-এর উনি নিজেও নবীজির নাম মােবারকের পর দরুদে ইব্রাহিম লিখেননি। বরং (ﷺ) দরুদখানা লিখেছেন। শুধু তাই নয় তিনি বুখারী শরীফে এ দরুদটি ১০ হাজারেরও অধিক বার লিখেছেন।

[ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) বিরোধীদের আপত্তির জবাব, পৃষ্ঠা ১০৩]

❏ লেখা বা বয়ানের শুরুতে বিভিন্ন দরুদ পাঠ

“আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন, ওয়াল আক্বিবাতু লিল মুত্তাক্বিন, ওয়াচ্ছালাতু ওয়াচ্ছালামু আ’লা ছায়্যিদিল আম্বিয়ায়ি ওয়াল মুরছালিন।”

অনুরূপ বক্তব্য বা কোন লেকচার দেওয়ার শুরুতে দরুদ পড়ার সময় সবাই পাঠ করে, 

نحمده ونصلی علی رسوله الكريم 

(নাহমুদুহু ওয়া নুছাল্লিই আ’লা রাছুলিহিল করিম) 

এ দরুদটি হাদিসে বর্ণিত দরুদ নয়, বরং সময় সংক্ষেপের জন্য অনির্দিষ্ট শব্দাবলী ব্যবহার করে দরুদটি সংক্ষিপ্তভাবে পাঠ করা হয়। যা সুন্নি ওহাবী-সালাফীরা নিজেরাও বক্তৃতার শুরুতে এভাবে দরুদ পড়ে থাকেন।

❏ তাছাড়া বিভিন্ন ফতোয়ার কিতাব, অথবা ৪ মাজহাব সেগুলো সব উত্তম বিদআত।

ভাল কিছু বিদআতের  উদাহরণঃ

নিচের সমস্ত কাজগুলো বিদআত কারন কুরআন হাদিসে এগুলোর নিয়ম উল্লেখ নেই যে এভাবে এই খতম পড়তে হবে, অমুক তসবিহ এত হাজার বার বা এত লক্ষ বার পড়তে হবে কিন্তু এগুলো উত্তম বিদআত তথা বিদআতে হাসানা যা অনুমতি স্পষ্ট সহিহ হাদিসে এসেছে। এর নিয়ম কুরআন হাদিসে নেই তবুও এসব কাজকে নাজায়েয ফতোয়াদানকারী জাহান্নামের পাপ অর্জনকারী।

❏ ইটের তৈরি মসজিদ বিদআত ➡ সুন্নতী মসজিদ হল মাটির তৈরি।

❏ সকল মাদ্রাসা বিদআত ➡ যা রাসুলের যুগে ছিল না।

❏ জুমুয়ার ২য় আজান বিদআত ➡ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা  করে যান নি। হযরত উসমান (رضي الله عنه) এর খেলাফতকালে তা চালু করা হয় (বুখারী)

❏ কুরআন শরীফ একত্রিত করে বাইন্ডিং করা বিদআত ➡ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা করে যান নি। হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) এর নির্দেশে তা করা হয়। (বুখারী)

❏ সিহাহ সিত্তার সব হাদিস সংকলন বিদআত ➡ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা করে যান নি। এগুলো তাবেয়ী-তাবে তাবেয়ীদের যুগ থেকে কিতাব আকারে সংকলন শুরু হয়।

❏ তারাবিহ’র নামাজ জামায়াতে আদায় করা বিদআত ➡ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা করে যান নি। হযরত উমর (رضي الله عنه) এর খিলাফত কালে চালু হয় (বুখারী)

❏ রমজানে ৩ দিনে তারাবিহ নামাজের মধ্যে কুরআন খতম করা বিদআত ➡ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তা  করে যান নি। ইমাম বুখারী তার সঙ্গীদের নিয়ে রমজানে তারাবিহ’র জামায়াতে ৩ দিনের মধ্যে এক খতম দিতেন। 

❏ ইদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) ইসলামিক স্বর্নযুগের পুর্ববর্তী সমস্ত উম্মতের ইজমা।

❏ সম্মিলিত খতমে কুরআন। 

❏ খতমে বুখারী : বুখারী শরীফ খতম (যা রাসুলের যুগের ২০০-৩০০ বছর পর ইমাম বুখারী সংকলন করেছিলেন উক্ত কিতাব)

❏ খতমে ইউনুস : “লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নী কুন্তু মিনাজ জুয়ালিমিন” উক্ত আয়াতের নির্দিষ্ট সংখ্যক খতম।

❏ খতমে তাসমিয়াঃ বিসমিল্লাহ শরীফ এর খতম।

❏ খতমে খাজেগানঃ অনেক কিছু নিয়ে এই খতম।

❏ খতমে গাউসিয়াঃ অনেক তসবিহ ও সুরা নিয়ে এ খতম।

❏ গেয়ারবী শরীফের খতমঃ অনেক তসবিহ ও সুরা নিয়ে এ খতম।

❏ তাছাড়া অলীগনের লিখা বিভিন্ন দুরুদ ও অলীগনে কাশফ (অন্তরচক্ষু) বা স্বপ্নে প্রাপ্ত দুরুদ যা ফজিলতের জন্য পাঠ করা হয় সব সওয়াবের কাজ। যেমন : আমি যদি কোন দুরুদ লিখি যে :

”হে আল্লাহ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ওনার বংশধরগনের উপর আপনার স্বীয় সন্তুষ্টি অনুপাতে ও স্বীয় গুনাবলী, স্বীয় সৃষ্টি , স্বীয় ক্ষমতা, স্বীয় জিকির এবং সমস্ত দৃশ্য অদৃশ্য সৃষ্টির জিকিরের সংখ্যানুপাতে শান্তি ও রহমত বর্ষিত করুন, প্রতি মুহুর্তে মুহুর্তে উপরে উল্লেখিত সমস্ত কিছুর কোটি কোটি গুনে বর্ধিত করে কিয়ামত পর্যন্ত, হে পরম করুনাময়, হে মহামহিম আল্লাহ।

তা কি গুনাহের কাজ হবে নাকি সওয়াবের কাজ হবে তা আপনারাই ভাল বুঝবেন।

❏ রেডিও টেলিভিশন এ ইসলামিক প্রোগ্রাম শুনা ও দেখা।

❏ এমন বহু খাদ্য আছে হালাল কিন্তু তা কুরআন হাদিসে নাও পেতে পারেন তাই বলে কি হারাম হয়ে যাবে?

❏ ওহাবী সালাফীরা যখন ডাক্তার জাকির নায়েকের ভাষন শুনে টিভিতে সেটাও কিন্তু বিদআত যদিও তারা নিজের বেলায় ষোল আনা ঠিক বাকি সব বিদআত বলে।

❏ মানুষ বিভিন্ন ধরনের পোষাক ব্যাবহার করে ইবাদতের জন্য এসবের মধ্যেও বিদাতে হাসানার উদাহরন রয়েছে।

❏ মাটির পাত্রে খাওয়া সুন্নত। এখন কয়জন খান মাটির পাত্রে যে পাত্রই আবিষ্কার হয়েছে তা বিদাতে হাসানা।

NOTE: অনেকে যুক্তি দিয়ে বলে এসব নাকি ইসলামের সাথে সম্পর্কিত নয়। সত্যি কি তাই?

ইসলাম কি কাপড়-চোপর,  হাট -বাজার, চলা-ফেরা, হাটা-খাওয়া, উঠা-বসা, কথা বলা এসব কিছুর সুন্নত শিখায় নি?

এসব কিছুর সাথে সম্পর্কিত সকল নব আবিষ্কৃত জিনিস গুলো সবই বিদআত। ভাল বা কল্যানের জন্য হলে বিদাতে হাসানা। আর মানুষের ক্ষতির জন্য হলে তা বিদাতে সাইয়্যাহ।

সর্বমহলে পরিচিত কিছু ভাল ও মন্দ বিদআতের উদাহরণঃ 

১.তারাবিহ ৩০ দিন জামআতে পড়া বিদআত,

২.কোরআন তেলাওয়াতের পর সাদাকাল্লাহুল আজিম বলা বিদআত,

৩.সাহাবাগণের নামের পর রদিয়াল্লাহু আন্হ

বলা বিদআত,

৪.কারো নামের পর “রহঃ বলা, হাফিজাল্লাহ

বলা ” বিদআত,

৫.কনফারেন্সে হাত তালি দেওয়া বিদআত,

৬.খোতবার আযান বিদআত,

৭.কোরআন একত্রিকরণ বিদআত,

৮.কোরআনে হরকত বিদআত,

৯.বিশ্ব ইজতেমা বিদাআত,

১০.বিশ্ব ইজতেমায় আখেরী মুনাজাত বিদআত,

১১.মাদ্রাসার বার্ষিক সভা বিদআত,

১২.পিস টিভি বিদআত,

১৩.ইসলামিক কনফারেন্স বিদআত,

১৪.ইসলামিক কনসার্ট বিদআত, 

১৫.মাদ্রাসা নির্মাণ বিদআত,

১৬.সিরাতুন্নবী ﷺ পালন বিদআত ,

১৭.তাবলীগি চিললা বিদআত,

১৮.১ দিনের চিললা , ৩ দিনের চিললা, ৪০ দিনের চিললা বিদআত,

১৯.জিহাদের নাম দিয়ে মসজিদে বোমা ফাটিয়ে মুসল্লি হত্যা নিৎকৃষ্ট বিদআত,

২০.জঙ্গিবাদ নিৎকৃষ্ট বিদআত।

২১.মাদ্রাসার জন্য টাকা তোলা বিদআত।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment