ফরয নামাযের পর বিশেষ আমল
================
আমল ১
প্রত্যেক ফরয নামাযের সালাম ফিরানো পরপরই উচ্চ আওয়াজে নিম্নের দোয়া পাঠ করবেন,
لا اله الا الله وحده لا شريك له له الملك وله الحمد وهو على كل شئ قدير اللهم لا مانع لما اعطيت ولا معطى لما منعت ولا ينفع ذا الجد منك الجد-
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আ’লা কুল্লি শাইয়িন কাদির। আল্লাহুম্মা লা মানিয়া লিমা আ’তাইতা ওয়ালা মু’তিয়া লিমা মানা’তা ওয়ালা ইয়ানফাউ জালজাদ্দে মিনকাল জাদ্দু। (বুখারিশরীফ ১ম জিলদের ১১৬ ও ১১৭ পৃষ্ঠা)
অতঃপর তিন মরতবা দরূদ ও সালাম পাঠ করে দোয়া করে নিবেন,
الصلوة والسلام عليك يا سيدى يا رسول الله
الصلوة والسلام عليك يا سيدى يا نبى الله
الصلوة والسلام عليك يا سيدى يا حبيب الله
وعلى اله واصحابه وبارك وسلم
(মাদারিজুন নবুয়ত)
অতঃপর একবার আয়াতুল কুরছি পাঠ করবেন। এরপর নিম্নের আয়াতে কারীমা পাঠ করবেন ১ বার।
ومن يتق الله يجعل له مخرجا ويرزقه من حيث لا يحتسب ومن يتوكل على الله فهو حسبه ان الله بالغ امره قد جعل الله لكل شئ قدرا-
তারপর সূরায়ে এখলাস ৩বার সর্বশেষ দরূদশরীফ ৩বার পাঠ করে আকাশের দিকে (উপরের দিকে) ফুঁক দিবেন।
উপকারিতা
১.রিজিক বৃদ্ধি পাবে
২.আল্লাহতা’য়ালা মালাকুল মউতের ওসিলা ছাড়াই তার রূহ কবজ করবেন
৩.সাকরাতুল মউত আসান হবে
৪.কবরে শান্ত্বি পাবে
৫.মরণের সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহতা’য়ালা তাকে বেহেশতে দাখিল করবেন। (কানযুল উম্মাল, তাফসিরে দুররে মনসুর)
এছাড়া ফরয নামায বাদে অন্যান্য ওয়াজিব, সুন্নাত ও নফল নামাযের সালাম ফিরানোর পরপর,
ক. তিনবার সালাত ও সালাম পাঠ করবেন আওয়াজ না দিয়ে।
খ. অতঃপর আয়াতুল কুরছি পাঠ করবেন ১ বার।
দলিল ১
ফরয নামাযের পর উচ্চ আওয়াজে দোয়া ও জিকির পাঠ সম্পর্কে বুখারি শরীফের ১ম জিলদের ১১৬ পৃষ্ঠায় রয়েছে,
عن ابن عباس رضى الله عنهما ان رفع الصوت بالذكر حين ينصرف الناس عن المكتوبة كان على عهد النبى صلى الله عليه وسلم وقال ابن عباس كنت اعلم اذا انصرفوا بذالك اذا سمعته-
ভাবার্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে সাহাবায়ে কেরামগণ ফরয নামাযান্তে (নামায শেষ করে) উচ্চ আওয়াজে জিকির পড়তেন। এরূপ উচ্চস্বরে জিকিরের প্রচলন আল্লাহর নবীর যুগে ছিল।
হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি যখন শুনতাম মুসলমানগণ জিকির করে ফিরছেন, তখন আমি বুঝে নিতাম নামায শেষ হয়ে গেছে। অর্থাৎ হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বয়োপ্রাপ্ত (বালেগ) ছিলেন না। এজন্য মধ্যে মধ্যে ঘরে নামায আদায় করে নিতেন এবং জিকিরের আওয়াজ শুনে নামাযের জামাত শেষ হয়েছে বুঝে নিতেন।
মোদ্দাকথা হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পবিত্র যুগে সাহাবায়ে কেরাম ফরয নামাযের পর উচ্চ আওয়াজে জিকির বা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত দোয়া পাঠ করতেন।
সুতরাং ফরয নামাযের পর উচ্চ আওয়াজে জিকির বা দোয়া পাঠ করা সুন্নতে রাসূল ও সুন্নতে সাহাবা।
দলিল ২
ফরয ও নফল প্রত্যেক নামাযের পর তিন মরতবা দরূদ ও সালাম পাঠ করা সম্পর্কে মাদারিজুন নবুয়ত নামক কিতাবের ১ম জিলদের ৩৭৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে,
بعداز نماز این فقیررا از نعضے فقرا سلسلہ شریفہ قادریہ اجازت است کہ بعداز ہرنماز فرض یا نفل سہ باردرور بگوید باللہ التوفیق-
আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত বলেন, কাদেরিয়া তরিকার নিসবত অনুযায়ী প্রত্যেক ফরয ও নফল নামাযের পরপর তিন তিনবার করে দরূদ ও সালাম পাঠ করার জন্য এ ফকিরকে অনুমতি প্রদান করা হয়েছে। সুতরাং কাদেরিয়া তরিকার ফয়েজ ও বরকত লাভ করার জন্য এ আমল অতীব প্রয়োজন।
দলিল ৩
প্রত্যেক ফরয নামাযের পরে এক মরতবা আয়াতুল কুরছি পাঠ করলে এমনকি ফরয ও নফল প্রত্যেক নামাযের পরে আয়াতুল কুরছি পাঠ করলে, মরণের সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতবাসী হবে।
এ প্রসঙ্গে ইমাম জালালউদ্দিন সুয়ুতি আলাইহির রহমত তদীয় شرح الصدور ‘শরহুস সুদুর’ নামক কিতাবের ২৯৯ পৃষ্ঠায় দুইখানা হাদিস শরীফ উল্লেখ করেন,
(۵۳/۱) اخرج النسائى وابن حبان فى صحيحة وابن مردويه والدار قطنى عن ابى امامة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قرأ اية الكرسى فى دبر كل صلوة مكتوبة لم يمنعه من دخول الجنة الا ان يموت-
(۵۳/۲) واخرج ايضا من حديث الصلصال بن الدلهمش بلفظ من قرأ اية الكرسى فى دبر كل صلوة لم يكن بينه وبين ان يدخل الجنة الا ان يموت فاذا مات دخل الجنة-
ভাবার্থ: হাবিবে খোদা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নূরানী ফরমান, যে ব্যক্তি ফরয ও নফল প্রত্যেক নামাযের পরে আয়াতুল কুরছি পাঠ করবে, সে ব্যক্তি মরণের সঙ্গে সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে।