সমস্ত নবীগণ নিষ্পাপ ছিলেন
৭. নবিগণের নিষ্পাপ হওয়া আবশ্যক। নিষ্পাপ হওয়াটা একমাত্র নবি ও ফিরেশতাগণের বৈশিষ্ট্য। নবি ফিরেশতা ব্যতীত কেই নিষ্পাপ নয়। শরীয়তের ইমামদের নবিদের মতো নিষ্পাপ মনে করাটা গোমরাহী ও ধর্মহীনতার পরিচায়ক। ইসমতে আম্বিয়া বা নবিগণ নিষ্পাপ হওয়া মানে আল্লাহ তাঁদেরকে পাপমুক্ত রাখার জন্য ওয়াদাবদ্ধ। কিন্তু ইমাম ও পীর-আওলিয়াদের জন্য এ রকম কোন ওয়াদা নেই। তাই নবিদের থেকে গুনাহ প্রকাশ পাওয়াটা অসম্ভব। (আরবাঈন, ৩২৯পৃ.)
শয়তানের জন্য নির্দিষ্ট কিছু স্পেশাল বান্দা রয়েছেন যাদের শয়তান কখনই মন্দ কাজ তো দূরের কথা তাদের অন্তরে খারাপ ধারণাও সৃষ্টি করতে শয়তান সক্ষম নয়। মহান আল্লাহ তা‘য়ালা তাদেরকে হিফাযত করেন, আর তা ইরশাদ করেন এভাবে-
إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ
-‘‘ওহে ইবলিশ, আমার বিশিষ্ট বান্দাদের উপর তোমার কোন কর্তৃত্ব নেই।’’
➤সুরা হিজর,আয়াত ৪২
শয়তান নিজেই স্বীকার করেছিল-
وَلَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ (৩৯) إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
-‘‘হে মওলা, তোমার বিশিষ্ট বান্দাগণ ব্যতীত বাকী সবাইকে বিপদগামী করবো।’’
➤সুরা হিজর,আয়াত ৩৯-৪০
হযরত ইউসুফ (عليه السلام) নবীগণের চরিত্র সম্পর্কে বলেছেন-
وَمَا أُبَرِّئُ نَفْسِي إِنَّ النَّفْسَ لَأَمَّارَةٌ بِالسُّوءِ إِلَّا مَا رَحِمَ رَبِّي إِنَّ رَبِّي
-‘‘আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না। মানুষের মন অবশ্যই মন্দকর্ম প্রবণ। তবে (তারা ছাড়া) যার প্রতি আল্লাহর দয়া রয়েছে।’’
➤সুরা ইউসুফ,আয়াত ৫৩
আল্লামা মোল্লা জিওন (رحمة الله) সূরা বাক্বারার ১২৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
انَّهُمْ مَعْصُومونَ عَن الكُفْر قَبْل الوحى وَ بَعَده باجماع
-‘‘নবীগণ ওহী প্রাপ্তির আগে ও পরে কুফুরী থেকে পূতঃপবিত্র থাকেন।’’
➤মোল্লা জিওন, তাফসীরে আহমদিয়া, ২১২ পৃষ্ঠা,
তিনি এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আরও বলেন-
لاخلاف لاحد فى ان نبينا عليه السلام لم يرتكب صغيرة ولاكبيرة طرفة عين قبل الوحى وبعده كما ذكره ابو حنيفة فى الفقه الاكبر. –
-‘‘এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, আমাদের নবী (ﷺ) নবুয়াতের আগে বা পরে এক মুহূর্তের জন্যও সগীরা বা কবীরা কোন প্রকারের গুনাহে লিপ্ত হননি, যেমন ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) তাঁর ফিকহুল আকবারে উল্লেখ করেছেন।’’
➤মোল্লা জিওন, তাফসীরে আহমদিয়া, ২১৩পৃ
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) সুরা শূরা এর ১৫২ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
يدل عليه انه عليه السلام قيل له هل عبدت وثنا قط قال لاقيل هل شربت خمرا قط قال لافمازلت اعرف ان الذى هم عليه كفر-
-‘‘হুযুর (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল আপনি কখনও মূর্তি পূজা করে ছিলেন? তিনি ইরশাদ ফরমান-‘না’। ‘‘আপনি কখনও শরাব পান করেছিলেন?’’ ফরমালেন-‘না, আমি তো সবসময় জানতাম যে, আরববাসীদের এ আচরণ কুফরী।’’
➤ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহূল বায়ান, ৮/৩৪৭ পৃষ্ঠা,দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
তিনি এ হাদিসটিকে হুবহু হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে মারফু সূত্রে সংকলন করেছেন এভাবে-
قال على رضى الله عنه قيل للنبى عليه السلام هل عبدت وثنا قط قال لا قيل هل شربت خمرا قط قال لا وما زلت اعرف ان الذي هم اى الكفار عليه كفر
-‘‘হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ)‘র কাছে একদা এক ব্যক্তি জানতে চাইলেন…..উপরের হাদিসের মত।’’
➤ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহূল বায়ান, ৫/৩৫৮ পৃষ্ঠা, ও ৮/৭৫ পৃষ্ঠা,প্রাগুক্ত, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১২/৪৮৭ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৩৫৫৯৮
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী (رحمة الله)‘র ‘জা‘আল হক’ ২য় খন্ডের (বাংলা) ২৮৬-৩১৪ পৃষ্ঠা দেখুন।
এক নজরে তাদের সম্পর্কে আরও কিছু আক্বিদা
৮. নবিগণ শিরক, কুফুরী, ওই ধরনের কাজ, যার দ্বারা মানুষের কাছে ঘৃণার পাত্র হতে হয়, যেমন মিথ্যা, আত্মসাৎ, অজ্ঞতা ইত্যাদি ও মান-সম্মান বিবর্জিত আচরণ থেকে নবুয়াতের আগে ও পরে তাঁরা ইচ্ছাকৃত সগিরা গুনাহ থেকেও পবিত্র। (উসূলে বাযদবী, ১৬৭পৃ.)
৯. আল্লাহ তা‘য়ালা সমস্ত নবিদেরকে ইলমে গায়ব দান করেছেন।
➤সুরা নিসা, ২৬-২৭, সুরা আলে-ইমরান-১৭৯, সুরা তাকবীর, ২৪
আসমান জমীনের প্রতিটি অণু পরমাণু নবিদের সামনে উদ্ভাসিত। তাঁদের এ ইলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান) খোদা প্রদত্ত। প্রদত্ত জ্ঞান আল্লাহর জন্য অসম্ভব। কেননা তার কোন সিফাত বা কামালিয়াত কারো প্রদত্ত হতে পারে না, বরং তাঁর সমস্ত গুণবলী সত্তাগত।
সমস্ত নবীরা তাদের কবরে জীবিত
১০. সমস্ত নবি ওফাতের পর তাঁদের নিজ নিজ সমাধিতে জীবিত এবং সেখানে তাঁরা নামাজ পড়েন।
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -: الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ-
-‘‘হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : নিশ্চয় আম্বিয়ায়ে কিরাম (রাঃ) তাঁদের নিজ নিজ কবরে জীবিত এবং তারা সেখানে নামায আদায় করেন।’’
➤ ইমাম আবু ই‘য়ালা : আল মুসনাদ : ৬/১৪৭ পৃ: হাদিসঃ ৩৪২৫, ইমাম বায়হাকী : হায়াতুল আম্বিয়া : ৬৯-৭০ পৃষ্ঠা,ইমাম হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২১১ পৃষ্ঠা, হাদিস ১৩৮১২, ইমাম আবু নঈম ইস্পাহানী : তবকাতে ইস্পাহানী : ২/৪৪ পৃ:, ইমাম আদী : আল কামিল : ২/৭৩৯ পৃ:,ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: আল-জামেউস সগীর : ১/২৩০ পৃ: হাদিস- ৩০৮৯, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: শরহুস সুদূর: পৃষ্ঠা, ২৩৭, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী: সিলসিলাতুস সহীহা: হাদিস : ৬২২, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী : সাহীহুল জামে : হাদিস নং- ২৭৯০, দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ১/১১৯ পৃষ্ঠা, হাদিস ৪০৩।
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, হাদিসটি ‘হাসান’। ➤ সূয়ুতি, আল-জামেউস সগীর : ১/২৩০ পৃ: হাদিস- ৩০৮৯ এবং শরহুস সুদূর: পৃষ্ঠা, ২৩৭
আলবানী তার দুটি গ্রন্থে হাদিসটি সহীহ বলে মত প্রকাশ করেছেন। ➤আলবানী, সিলসিলাতুস সহীহা: হাদিস/৬২২ এবং সহীহুল জামে : হাদিস/২৭৯০
অপরদিকে আল্লামা নুরুদ্দীন ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) বলেন-
رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى وَالْبَزَّارُ، وَرِجَالُ أَبِي يَعْلَى ثِقَاتٌ.
-‘‘এ হাদিসের সকল রাবি সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’
➤ মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৮/২১১ পৃষ্ঠা, হা/১৩৮১২, এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মাচন’’ এর ১ম খন্ডের ৪০৭-৪১১ পৃষ্ঠা, দেখুন। ইনশাআল্লাহ আপনাদের সঠিক বিষয়টি বুঝে আসবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:وَقَدْ رَأَيْتُنِي فِي جَمَاعَةٍ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ، فَإِذَا مُوسَى قَائِمٌ يُصَلِّي، فَإِذَا رَجُلٌ ضَرْبٌ، جَعْدٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَةَ، وَإِذَا عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمٌ يُصَلِّي، أَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ الثَّقَفِيُّ، وَإِذَا إِبْرَاهِيمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ قَائِمٌ يُصَلِّي، أَشْبَهُ النَّاسِ بِهِ صَاحِبُكُمْ – يَعْنِي نَفْسَهُ – فَحَانَتِ الصَّلَاةُ فَأَمَمْتُهُمْ-
-‘‘রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, মি‘রাজের রাত্রে আম্বিয়া (عليه السلام) এর এক বিরাট জামাতকে দেখেছি, মুসা (عليه السلام)কে তার কবরে নামায পড়তে দেখেছি। তাকে দেখতে মধ্য আকৃতির চুল কোকরানো সানওয়া দেশের লোকের মত। আমি ঈসা (عليه السلام) কে দন্ডায়মান অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি, তিনি দেখতে ওরওয়া ইবনে মাসউদ সাকাফীর মত ……….. তার পরে নামাযের সময় আসলো আমি সকল নবী (عليه السلام)এর ইমামতি করলাম।’’
➤ ইমাম মুসলিম : সহীহ : ফাদ্বায়েলে মূসা (عليه السلام) : ১/১৫৭ : হাদিস : ১৭৩, খতিব তিবরিজী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ৩/২৮৭ : হাদিস : ৫৮৬৬,ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুয়ত : ২/৩৮৭ পৃ:, ইমাম তকি উদ্দিন সুবকী :শিফাউস-সিকাম : ১৩৫-১৩৮ পৃষ্ঠা, ইমাম সূয়ূতী : আল-হাভীলিল ফাতওয়া : ২/২৬৫পৃ:, ইমাম সাখাভী : কওলুল বদী : ১৬৮ পৃষ্ঠা, ইমাম মুকরিজী : ইমতাঈল – আসমা: ৮/২৪৯ পৃ:
বুঝা গেল যে সমস্ত নবীরাই তাদের কবরে জীবিত থাকার কারণে বায়তুল মুকাদ্দাসে উপস্থিত হয়েছিলেন।
পঞ্চম অধ্যায়ঃ
রাসূল (ﷺ) সম্পর্কে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আক্বিদা
১.মহান আল্লাহ রাসূল (ﷺ) কে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেনঃ
রাসূল (ﷺ) এর নূর সম্পর্কে কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন স্থানে ➤ সূরা মায়েদা আয়াত ১৫, সূরা তাওবাহ, ৩২ আয়াত, সূরা নূর,৩৫, সূরা ছাফ, ৮, সুরা আহযাব, ৪৫-৪৬
এবং অসংখ্য হাদিসে পাকে রয়েছে। তন্মধ্যে হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহু কর্তৃক রাসূল (ﷺ) কে সর্বপ্রথম সৃষ্টি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে রাসূল (ﷺ) বলেন,-
فَقَالَ: يَا جَابِرُ! إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ قَبْلَ الأَشْيَاءِ نُورُ نَبِيِّكَ مِنْ نُورِهِ، فَجَعَلَ ذَلِكَ النُّورِ يَدُورُ بِالْقُدْرَةِ حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ، وَلَمْ يَكُنْ فِي ذَلِكَ الْوَقْتِ لَوْحٌ وَلا قَلَمٌ وَلا جَنَّةٌ وَلا نَارٌ وَلا مُلْكٌ وِلا سِمِاءٌ وَلا أَرْضٌ وَلا شَمْسٌ وَلا قَمَرٌ وَلا جِنِّيٌ وَلا إِنْسٌ.
-‘‘অতঃপর রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন হে জাবের! নিশ্চয় আল্লাহ তা‘য়ালা সবকিছুর পূর্বে তার স্বীয় নূর হতে তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন। তখন লওহ, কলম, জান্নাত, জাহান্নাম…..কিছুই ছিল না।’’
➤ ইমাম আবদুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ (জুযউল মুফকুদ): ১/৬৩, হাদিস-১৮, (ঈসা মানে হিমইয়ারা সংকলিত), আল্লামা আজলুনী : কাশফুল খাফা: ১/৩১১ পৃষ্ঠা, হাদিস/৮১১, আল্লামা কুস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া: ১/১৫, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, আল্লামা জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব: ১/৮৯, আশরাফ আলী থানবী, নশরুত্ত্বীব : পৃষ্ঠা, ২৫, আব্দুল হাই লাখনৌভী, আসারুল মারফূআ, ৪২-৩৩ পৃষ্ঠা, ইবনে হাজার মক্কী, ফতাওয়ায়ে হাদিসিয়্যাহ, ৪৪ পৃষ্ঠা, ও (শামেলা), শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহিল আলামিন: ৩২-৩৩ পৃষ্ঠা, ও জাওয়াহিরুল বিহার, ৩/৩৭ পৃষ্ঠা, আনোওয়ারে মুহাম্মাদিয়্যা, ১৯ পৃষ্ঠা, মোল্লা আলী ক্বারী, মাওয়ারিদুর রাভী, ২২ পৃষ্ঠা, এ হাদিস এবং এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মাচন’’ এর ১ম খন্ডের ২৯৩-৫৭৪ পৃষ্ঠা, দেখুন।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَمَّا خَلَقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ آدَمَ خَيَّرَ لِآدَمَ بَنِيهِ، فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ، قَالَ: فَرَآنِي نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ، فَقَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخَرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ –
-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন আল্লাহ তা‘য়ালা হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করলেন, তখন তাকে তার সন্তান-সন্ততি দেখালেন। হযরত আদম (عليه السلام) তাদের পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরীক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে তিনি একটি চমকপ্রদ নূর দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে পরওয়ারদিগার! এ কার নূর? আল্লাহ তা‘য়ালা বললেন, এ তোমার আওলাদ হবে, তার নাম আসমানে আহমদ। যিনি (সৃষ্টিতে) প্রথম এবং তিনি প্রেরণে (নবীদের) শেষ। তিনি সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী।’’ ➤ ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুল নবুয়ত : ৫/৪৮৩ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইমাম সুয়ূতী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/৭০ পৃষ্ঠা, হাদিস : ১৭৩, ইমাম ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক : ৭/৩৯৪-৩৯৫ পৃষ্ঠা,দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম যুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব, ১/৪৩ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১১/৪৩৭ পৃ, হাদিসঃ ৩২০৫৬, আবু সা‘দ নিশাপুরী, শরফুল মুস্তফা, ৪/২৮৫ পৃষ্ঠা, কুস্তালানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৪৯ পৃষ্ঠা, দিয়ার বকরী, তারীখুল খামীস, ১/৪৫ পৃষ্ঠা, সার্রাজ, হাদিসাহ, হাদিসঃ ২৬২৮, ইবনে হাজার আসকালানী, আল-মুখাল্লিসিয়্যাত, ৩/২০৭ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ২৩৪০, সালিম জার্রার, আল-ইমা ইলা যাওয়াইদ, ৬/৪৭৮ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৬০৮৩।
তাই প্রমাণিত হল যে বাবা আদম (عليه السلام)ও আমাদের নবীজিকে নূর হিসেবেই জানতেন। আহলে হাদিসদের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (১৯৯৯খৃ.) এ সনদটি প্রসঙ্গে লিখেন-
قُلْتُ: وَهَذَا إِسْنَادُ حَسَنٌ؛ رِجَالُه كُلُّهُمْ ثِقَات رجال البخاري؛
-‘‘আমি (আলবানী) বলছি, এই হাদিসের সনদ ‘হাসান’ , ইহার সকল বর্ণনাকারীগণ ইমাম বুখারী (রহ.) এর বর্ণনাকারী ন্যায়।’’
➤ আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ দ্বঈফাহ, হাদিস নং ৬৪৮২।
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাঁর তাফসীরে সুরা যুখরুফের ৮১ নং আয়াত-
قُلْ إِنْ كَانَ لِلرَّحْمَنِ وَلَدٌ فَأَنَا أَوَّلُ الْعَابِدِينَ
-‘‘হে হাবিব! আপনি বলুন দয়াময় আল্লাহর যদি কোন সন্তান হতো তাহলে ইবাদাতকারীদের মধ্যে আমিই সর্ব প্রথম তার ইবাদত করতাম।’’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) একটি হাদিস উল্লেখ করেন এভাবে-
قَالَ جَعْفَرْ الصَادِقْ رَضِى الله عَنْهُ أَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِ مُحَمَّد صلى الله عليه وسلم قَبْلَ كُل شىء
-‘‘হযরত ইমাম জাফর সাদেক (رضي الله عنه) বলেন, সকল কিছুর পূর্বে আল্লাহ ‘নূরে মুহাম্মাদী’ কে সৃষ্টি করেছেন।’’
➤ইসমাঈল হাক্কী : রূহুল বায়ান : ৮/৩৯৬ পৃষ্ঠা,সুরা যুখরুফ, আয়াত ৮১।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকায়েদের ইমাম আবুল হাসান আশ‘আরী (رحمة الله) বলেন-
اِنَّهُ تَعَالٰى نُوْرٌ لَيْسَ كَالْاَنْوَارِ وَ رُّوْحُ النَّبُوْيَّةُ القُدْسِيَّة لُمْعَةُ مِنْ نُوْرِهِ وَالْمَلاَئِكَةٌ اشرار تِلْكَ الْاَنْوَارِ وَقَالَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَوَّلُ مَا خَلَقَ اللهُ نُوْرِى وَمِنْ نُوْرِى خَلَقَ الله كُلِّ شّئٍ-
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা নূর, তবে অন্যান্য নূরের মতো নন। আর নবী করীম (ﷺ) এর রূহ মোবারক হচ্ছে তাঁর নূরের ঝলক। আর ফেরেশতাগণ হচ্ছেন তাঁর নূরের শিখা। হুযুর (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম আমার নূরকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমার নূর থেকে আল্লাহ প্রত্যেক কিছু সৃষ্টি করেছেন।’’
➤ ইমাম মাহদী আল ফার্সী : মাতালিউল মাসার্রাত : ২১ পৃষ্ঠা, মাতবায়ে মাকতুবায়ে নূরীয়া, পাকিস্তান, শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানী : জাওয়াহিরুল বিহার, ২/২২০ পৃষ্ঠা, মারকাযে আহলে সুন্নাহ বি বারকাতে রেযা, গুজরাট।
তাই বুঝা গেল, আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ইমামের আক্বিদা রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি। যারা এ আক্বিদায় বিশ্বাসী নয়, তারা কি করে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অনুসারী বলে দাবি করেন? রাসূল (ﷺ) ‘র সৃষ্টি নূরের এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ এর ১ম খন্ডের ২৯৩-৫৭৪ পৃষ্ঠা দেখুন। ইনশাআল্লাহ আপনাদের সঠিক বিষয়টি বুঝে আসবে।
২. রাসূল (ﷺ) হযরত আদম (عليه السلام)‘র বহু আগেই সৃষ্টি, যদিও প্রেরিত হয়েছেন সকল নবির শেষে
এ প্রসঙ্গে ‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) নিজেই ইরশাদ করেন-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، رضى الله تعالى عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: كُنْتُ أَوَّلَ النَّبِيِّينَ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ-
-‘‘আমি ছিলাম সৃষ্টিতে নবিগণের সর্বপ্রথম এবং প্রেরণে নবীগণের সর্বশেষ।’’
➤ ইমাম আদী : আল কামিল : ৩/৩৭৩ পৃষ্ঠা, দায়লামী : ফিরদাউস বিমাসুরিল খিতাব : ৩/২৮২ পৃ হাদিস : ৪৮৫০, দায়লামী : ফিরদাউস বিমাসুরিল খিতাব : ৪/৪৪১ পৃ : হাদিস : ৭১৯৫, আযলূনী : কাশফুল খাফা : ২/১১৯ পৃ : হাদিস : ২০০৭, ইমাম বগভী : মা‘লিমুত তানজিল : ২/৬১১ পৃষ্ঠা, হাদিস ১৬৮০, ইবনে কাসীর : তাফসীরে ইবনে কাসীর : ৬/৩৮২ পৃষ্ঠা,ও সিরাতে নববিয়্যাহ, ১/২৮৯ পৃষ্ঠা, ১/৩১৮ পৃষ্ঠা, সুয়ূতি : খাসায়েসুল কুবরা : ১/৫ হাদিস : ১, আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : দালায়েলুন নবুওয়াত : ১/৪২ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৩, আবি হাতেম : আত্ তাফসীর : ৯/৩১১৬ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ১৭৫৯৪, মুত্তাকি হিন্দী কানযুল উম্মাল : ১১/৪৫২ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৩২১২৫, তাবরানী, মুসনাদিস্-শামীন, ৪/৩৪ পৃষ্ঠা, হাদিস ২৬৬২, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন।
এই হাদিসটি এক সূত্রে সহীহ, আরেকটি সূত্রে ‘হাসান’ পর্যায়ের।
قَالَ قَتَادَةُ : إِنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ:كُنْتُ أَوَّلَ الْأَنْبِيَاءِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ
-‘‘হযরত কাতাদা (رحمة الله) হতে সহীহ সনদে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত নিশ্চয়ই রাসূলে করীম (ﷺ) ইরশাদ করেন : আমি সৃষ্টিতে নবীদের প্রথম এবং প্রেরণের দিক দিয়ে সবার শেষে।’’
➤ শায়খ ইউসূফ নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩৬৬পৃ, ইবনে সা‘দ : আত্-তবকাতুল কোবরা : ১/১৪৯ পৃষ্ঠা, ইমাম বগভী : তাফসীরে মা’লিমুত তানযিল : ৪/৪৩৫পৃ, ইমাম তবারী : তাফসীরে তবারী : ১০/২৬২, তিনি বলেন হাদিসটির সনদ সহীহ, দায়লামী : মুসনাদিল ফিরদাউস : হাদিস : ৪৮৫০, আবু নুঈম ইস্পাহানী : দালায়েলুল নবুয়ত, হাদিস ৩, ইমাম আদি : আল-কামিল : ৩/৪৯ পৃ হাদিস : ৩৭২, ইমাম কাযি আয়াজ, শিফা, ১/১১৪ পৃষ্ঠা,ও ১/৪৬৬ পৃষ্ঠা, তাবরানী : মুসনাদিস্-সামীন : ৪/২৬৬২ পৃষ্ঠা।
ইমাম সুয়ূতী সহ আরও অনেকে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।’’
➤ ইমাম সুয়ূতি, জামেউস সগীর, ২/২৪৮ পৃষ্ঠা, হা/৬৪২২-২৩এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মাচন’’ এর ১ম খন্ডের ২৪৮-২৫১ পৃষ্ঠা,য় দেখুন।
ইমাম ইবনে সা‘দ (رحمة الله) {ওফাত. ২০৭হি.}একটি হাদিস সংকলন করেন-
عَنْ قَتَادَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ. صلى الله عليه وسلم : كُنْتُ أَوَّلَ النَّاسِ فِي الْخَلْقِ وَآخِرَهُمْ فِي الْبَعْثِ
-‘‘হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, আমাদেরকে জানানো হয়েছে, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এরূপ বলেছেন, সৃষ্টির মধ্যে আমিই প্রথম মানুষ এবং প্রেরিত হয়েছি সবার শেষে।’’
➤ ইমাম ইবনে সা‘দ, আত্-তবকাতুল কোবরা, ১/১৯৯ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩৯৩ পৃষ্ঠা,দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, শিফা শরীফ, ১/১১৪ পৃষ্ঠা, কাসতাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৪২ পৃষ্ঠা,।
আহলে হাদিসদের ইমাম এবং ইবনে তাইমিয়ার ছাত্র আল্লামা হাফেজ ইবনে কাসির (رحمة الله) {ওফাত. ৭৭৪হি.}এই হাদিসটি সংকলন করে লিখেন- وَهَذَا أَثْبَتُ وَأَصَحُّ -‘‘এই সনদটি প্রমাণিত ও অধিক সহীহ।’’
➤ ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/৩৯৩ পৃষ্ঠা,
তাই আদম (عليه السلام)-এরই পূর্বেই রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে; যা এই সহীহ হাদিস থেকে প্রমাণিত হল।
তাই আদম (عليه السلام)-এরই পূর্বেই রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই এই দিকেই ইশরা করে হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى وَجَبَتْ لَكَ النُّبُوَّةُ؟ قَالَ: وَآدَمُ بَيْنَ الرُّوحِ وَالجَسَدِ
-‘‘রাসূল (ﷺ)‘র কাছে জানতে চাওয়া হলো যে, আপনি কখন নবুয়ত লাভ করেছেন? তিনি বলেন, আদম (عليه السلام) যখন রূহ ও দেহের মাঝামাঝি ছিলেন।’’ ➤তিরমিযি, আস্-সুনান, ৫/৫৮৫ পৃষ্ঠা, কিতাবুল মানাকিব, হাদিসঃ ৩৬০৯, তিনি বলেন হাদিসটি ‘হাসান’। আহলে হাদিস আলবানী সনদটিকে সহিহ বলেছেন।
তাই যারা বলছেন তিনি ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত লাভ করেছিলেন তারা যে গোমরাহ তা স্পষ্ট প্রমাণিত হল।
৩. তিনিই সৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু; তাঁর উসিলায় জগত সৃষ্টিঃ
আমরা যে জান্নাত লাভের প্রতীক্ষায় এবং জাহান্নামের ভয় পাই তাও নবীজি (ﷺ)‘র ওসিলায় মহান আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। হাদিসে পাকে রয়েছে-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: أَوْحَى اللَّهُ إِلَى عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَامُ يَا عِيسَى آمِنْ بِمُحَمَّدٍ وَأْمُرْ مَنْ أَدْرَكَهُ مِنْ أُمَّتِكَ أَنْ يُؤْمِنُوا بِهِ فَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ آدَمَ وَلَوْلَا مُحَمَّدٌ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَا النَّارَ هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحُ الْإِسْنَادِ وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ.
-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ তা‘য়ালা হযরত ঈসা (عليه السلام) এর নিকট ওহী নাযিল করলেন, হে ঈসা! তুমি মুহাম্মদ (ﷺ) এর উপর ঈমান আন এবং তোমার উম্মতের মধ্যে যারা তাঁর যুগ পাবে তাদেরকে ঈমান আনতে বলো। কারণ যদি মুহাম্মদ (ﷺ) না হতেন, তাহলে আমি না আদমকে সৃষ্টি করতাম, না বেহেশত, না দোযখ সৃষ্টি করতাম।’’
➤ ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল মুস্তাদরাক ২/৬৭১, পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৪২২৭, ইমাম তকিউদ্দিন সুবকীঃ শিফাউস সিকাম ৪৫ পৃষ্ঠা, জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ খাসায়েসুল কোবরাঃ ১/১৪ হাদিসঃ ২১, হাইসামীঃ শরহে শামায়েলঃ ১/১৪২ পৃষ্ঠা, আল্লামা শায়খ ইউসূফ বিন নাবহানীঃ যাওয়াহিরুল বিহারঃ ২/১১৪ পৃষ্ঠা, ইমাম ইবনে হাইয়্যানঃ তবকাতে মুহাদ্দিসিনে ইস্পাহানীঃ ৩/২৮৭পৃ, আবু সা‘দ ইবরাহিম নিশাপুরী, শরহে মুস্তফা : ১/১৬৫ পৃষ্ঠা, যুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব : ১২/২২০ পৃষ্ঠা, ইবনে কাসীর, কাসাসুল আম্বিয়া,১/২৯ পৃষ্ঠা,দারুল তা‘লিফ, কাহেরা, মিশর, ইবনে কাসীর, সিরাতে নববিয়্যাহ : ১/৩২০ পৃষ্ঠা, দারুল মা‘রিফ, বয়রুত লেবানন, ইবনে কাসীর, মু‘জিজাতুন্নাবী : ১/৪৪১ পৃষ্ঠা, মাকতুবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, কাহেরা, মিশর, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ : ১২/৪০৩ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান :
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا مَرْفُوعًا أَتَانِي جِبْرِيلُ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ لَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ الْجَنَّةَ وَلَوْلَاكَ مَا خَلَقْتُ النَّار
-“একদা আমার কাছে হযরত জিব্রাঈল (عليه السلام) এসে বললেন, হে মুহাম্মদ! (ﷺ) আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, আপনাকে সৃষ্টি না করা হলে সৃজন না হতো বেহেশত আর না দোযখ।’’
➤ দায়লামীঃ আল-মুসনাদিল ফিরদাউস : ৫/২২৭ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৮০৩১, মোল্লা আলী ক্বারী : আসারুল মারফূআ, ১/২৯৫ পৃষ্ঠা, হাদিস :৩৮৫ মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন, শায়খ ইউসূফ নাবহানীঃ যাওয়াহিরুল বিহারঃ ৪/১৬০ পৃষ্ঠা, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪৩১ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৩২০২৫।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডের ১০৬-১২৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত দেখুন।
৪. রাসূল (ﷺ)‘র সৃষ্টি অন্যান্য সৃষ্টির মতো নয়ঃ
ইমাম শিহাবুদ্দীন কুস্তালানী (رحمة الله) বলেন-
اعلم أن من تمام الإيمان به- صلى الله عليه وسلم- الإيمان بأن الله تعالى جعل خلق بدنه الشريف على وجه لم يظهر قبله ولا بعده خلق آدمى مثله-
-‘‘জেনে রাখুন! রাসূল (ﷺ)‘র প্রতি পরিপূর্ণ ঈমান হলো- এভাবে ঈমান আনা যে, আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর শরীর মোবারককে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, তাঁর পূর্বে পরে কোন মানুষকে তাঁর মতন করে সৃষ্টি করেননি।’’ ➤কুস্তালানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, ২/৫ পৃষ্ঠা, মাকতাবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, কায়রু, মিশর।
তাই সকলের জানা উচিত মানব জাতির অনুসরণ ও অনুকরণের সুবিধার্থে আল্লাহ তাঁকে বাহ্যিকভাবে মানবীয় আকৃতি ও মানবীয় কতেক গুণাবলি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। বিভিন্ন আকায়েদের কিতাবে রয়েছে যে, হুযুরের অনুরূপ হওয়া অসম্ভব। হুযুরের বিশেষ গুণের ক্ষেত্রে কাউকে হুযুরের গুণের মতো বললে, সে কাফির। (আল-মুতামেদ, ১৩৩পৃ. বাহারে শরীয়ত, ১/১৯পৃ.)
সমস্ত মানুষ মাটির তৈরী নয়
অনেক সাধারণ মানুষের ধারণা তারা মাটির তৈরী। অথচ এটি কোরআন বিরোধী কথা। কোরআন সুন্নাহে গবেষণা করে সমস্ত মানুষ পাঁচভাগে সৃষ্টি প্রমাণ পাওয়া যায়।
ক. আদি পিতা আদম (عليه السلام) কে সরাসরি মাটি দিয়ে। ➤সুরা সোয়াদ, আয়াত, ৭১
খ. মা হাওয়া (عليه السلام) কে তাঁর স্বামী তথা আদম (عليه السلام)-এর পাজর থেকে। ➤ এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আপনারা আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডের ২৪৬-২৪৭ পৃষ্ঠা, দেখুন।
সূরা নিসায় আল্লাহ ইঙ্গিত করেছেন- وَخَلَقَ مِنْهَا زَوْجَهَا -‘‘তাঁর থেকে তার সঙ্গীনীকে বানানো হয়েছে। (সুরা নিসা, আয়াত, ১) তার কি থাকে বানানো হয়েছে তা কোরআনে স্পষ্ট নেই। তাই সহিহ বুখারী ও মুসলিমে আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- فَإِنَّ المَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلَعٍ، -‘‘নিশ্চয় সকল স্ত্রীদেরকে {আদম (عليه السلام)-এর স্ত্রী হযরত হাওয়া (عليه السلام)ও অন্তর্ভুক্ত} তাঁর স্বামীর পাজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে।’’
➤বুখারী, আস-সহিহ, ৪/১৩৩ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৩৩৩১, মুসলিম, আস্-সহিহ, ২/১০৯১ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ১৪৬৮, সুনানে দারেমী, ৩/১৪২৫ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ২২৬৭, হাকিম নিশাপুরী, আল-মুস্তাদরাক, ৪/১৯২ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৭৩৩৩, ও ৭৩৩৪, ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, হাদিস নং ৪১৭০
গ. ঈসা (عليه السلام) কে শুধু মাত্র জিবরাঈল (عليه السلام)‘র ফুঁ থেকে। ➤সূরা মারিয়াম, আয়াত, ১৭-১৯
ঘ. আমরা সাধারণ মানুষদেরকে মা-বাবার নুতফা বা বীর্য থেকে।
এ বিষয়ে কোরআনের মোট ১১টি স্থানে মহান রব ইরশাদ করেছেন। তাকে কেউ হেয় করলে কাফির হয়ে যাবেন। যেমন- {দেখুন- সূরা ফোরকান, আয়াত, ৫৪, সূরা ত্বারেক, ৫, সূরা দাহর/ইনসান, ৩৭-৩৯, সূরা মুরছালাত, ২০-২১, সূরা সাজদা, আয়াত, ৭-৮, সূরা ইয়াছিন, ৭৭, সূরা নাজাম, ৪৫-৪৬, সূরা আবাসা, ১৮-১৯, সূরা আলাক্ব, ২, সূরা নাহল, ৪, সূরা কিয়ামা, আয়াত, ৩৬-৩৮, এ মোট ১১ স্থানে কোরআনে রয়েছে মানুষ নুতফার বা মা-বাবার বীর্যের তৈরী। আর আমাদের দেশের কাটমোল্লারা কোরআনের বিরুদ্ধে ফাতওয়া দিচ্ছেন।}
ঙ. রাসূল (ﷺ) কে আল্লাহর নূরের তাজাল্লী হতে।
➤সুরা মায়িদা, ১৫, সূরা নূর, ৩৫, সূরা তাওবা, আয়াত,
৫. রাসূল (ﷺ)‘র পিতামাতা মু‘মিন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা হলো মহানবি হযরত মুহাম্মদ (ﷺ)‘র সম্মানিত পিতা-মাতা কুফরি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেননি; তারা বনী হানিফের উপরে ছিলেন। তারপর আবার মহান রব তাদেরকে নবীজির প্রতি ঈমান আনার সুযোগ দিয়েছিলেন। ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) তার ‘নাসেখ ওয়াল মানছুখ’ গ্রন্থে ইবনে আসাকির তার তারীখে দামেস্কে, হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন বিদায় হজ্জের সময়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বেদনার্ত ছিলেন। এতসময় তিনি আনন্দচিত্তে আয়েশা (رضي الله عنه)‘র নিকট আগমন করেন। তিনি কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন-
فَقَالَ: ذَهَبْتُ لِقَبْرِ أُمِّي فَسَأَلْتُ اللَّهَ أَنْ يُحْيِيَهَا فَأَحْيَاهَا فَآمَنَتْ بِي وَرَدَّهَا اللَّهُ
-‘‘অতঃপর আমি আমার মা আমেনা (رضي الله عنه)‘র নিকট গমন করি এবং আল্লাহর কাছে দু‘আ করি তাঁকে জীবিত করতে। তখন আল্লাহ তাঁকে জীবিত করেন, তিনি আমার উপর ঈমান আনয়ন করেন, অতঃপর আল্লাহ তাঁকে কবরের জগতে ফিরিয়ে নেন। কোনো কোনো বর্ণনায় পিতা-মাতা উভয়ের কথা বলা হয়েছে।’’
➤ইমাম সুয়ূতী, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৭৮ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ-১৪২৪হিজরি। ইমাম কুরতুবী, তাযকিরাহ, ১৫ পৃষ্ঠা, ইমাম কুস্তালানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, ১/১০৩ পৃষ্ঠা, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ২/১২২ পৃষ্ঠা, দিয়ার বকরী, তারীখুল খামীস, ১/২৩০ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- বুরহানুদ্দীন হালবী, সিরাতে হালবিয়্যাহ,১/১৫৫ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ১/৩১৫ পৃষ্ঠা,
ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) এ সনদটিকে দ্বঈফ বলেছেন। কিন্তু আমরা বলি এ হাদিসটি ইমাম তবারী (رحمة الله) এ হাদিসটির আরেকটি সনদ বর্ণনা করেছেন যার কারনে সনদটি ‘হাসান’।
➤ ইমাম কুস্তালানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া, ১/১০৩ পৃষ্ঠা,
বিখ্যাত মুহাদ্দিস এবং সকলের মান্যবড় ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী লিখেন-
وَلِهَذَا عَمَّمَ الحافظ ابن حجر فِي قَوْلِهِ: الظَّنُّ بِآلِ بَيْتِهِ كُلِّهِمْ أَنْ يُطِيعُوا عِنْدَ الِامْتِحَانِ.
-‘‘নিশ্চয় রাসূলে পাক এর পিতা মাতা সম্বন্ধে যে ধারণা করা হয় যে, তারা প্রত্যেকেই কিয়ামতের দিন পরীক্ষায় আনুগত্যশীল হবেন।’’
➤ ইমাম সুয়ূতী, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৫১ পৃষ্ঠা,
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) তাঁর অভিমত উল্লেখ করেন-
وَلَعَلَّهُ يَصِحُّ مَا جَاءَ أَنَّهُ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَأَلَ اللَّهَ سُبْحَانَهُ، فَأَحْيَا لَهُ أَبَوَيْهِ، فَآمَنَا بِهِ، وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوْقَ هَذَا، وَلَا يُعْجِزُ اللَّهَ سُبْحَانَهُ شَيْءٌ
-‘‘সম্ভবত এজন্য ইহা সঠিক যে রাসূল আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। তখন আল্লাহ তা‘য়ালা তাঁর পিতা-মাতাকে জীবিত করে দিলেন। অতঃপর তারা নবীজির প্রতি ঈমান আনয়ন করলেন। কারণ আল্লাহর নিকট কোন কিছুই অসম্ভব নয়।’’
➤ ইমাম সুয়ূতী, আল-হাভীলিল ফাতওয়া, ২/২৫২ পৃষ্ঠা,
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) প্রাথমিক জীবনে রাসূল (ﷺ)-এর পিতা-মাতা জাহান্নামী ও কাফির হওয়ার উপরে অভিমত পেশ করেন। ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতির কিতাব অধ্যায়নের পরে তার ভুল ভেঙ্গে যায় এবং ইতোপূর্বের আক্বিদা ঠিক করে নেন। যেমন তার শেষের দিকের গ্রন্থে তিনি লিখেছেন-
وأما اسلام أبويه ففيه أقوال والأصح اسلامهما على ما اتفاق عليه الأجلة من الأئمة كما بينه السيوطي في رسائله الثلاث المؤلفة
-‘‘রাসূল (ﷺ) এর পিতা-মাতার ইসলাম গ্রহনের ব্যাপারে একাধিক মতামত রয়েছে, তবে বিশুদ্ধ অভিমত হল, রাসূল (ﷺ)-এর পিতা-মাতা উভয়ই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন; এমনটি উম্মতের মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিগণ উল্লেখ করেছেন যেমনটি ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (ﷺ) তার তিনটি রিসালায় উল্লেখ করেছেন।’’
➤ মোল্লা আলী ক্বারী, শরহে শিফা, ১/৬০৫ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
এ বিষয় সম্পর্কে বিশদ আকারে জানতে চাইলে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ এর ২য় খন্ডের শুরুতে দেখুন। ইনশাআল্লাহ ! আপনাদের বুঝে আসবে।
৬. অন্যান্য নবিদের থেকে আল্লাহ আমাদের নবি হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুস্তাফা (ﷺ) কে বেশী ইলমে গায়ব দান করেছেনঃ
সৃষ্টির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যত নবি মানুষ এবং আল্লাহ যত সৃষ্টি রয়েছে তাদের সকলকে যতটুকু ইলম দিয়েছেন তার চাইতে হাজারও কোটি গুণ নবীজিকে ইলম দান করেছেন। রাসূল (ﷺ) এর ইলম সম্পর্কে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যেমন-
عَنْ وَهْبِ بْنِ مُنَبِّهٍ، قَالَ: قَرَأْتُ إِحْدَى وَسَبْعِينَ كِتَابًا فَوَجَدْتُ فِي جَمِيعِهَا أَنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَمْ يُعْطِ جَمِيعَ النَّاسِ مِنْ بَدْءِ الدُّنْيَا إِلَى انْقِضَائِهَا مِنَ الْعَقْلِ فِي جَنْبِ عَقْلِ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَّا كَحَبَّةِ رَمْلٍ مِنْ بَيْنِ رِمَالِ جَمِيعِ الدُّنْيَا، وَأَنَّ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْجَحُ النَّاسِ عَقْلًا، وَأَفْضَلُهُمْ رَأْيًا. –
-‘‘হযরত ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, আমি (আসমানী) ৭১ টি কিতাব পাঠ করেছি। সবগুলো তেই পাঠ করেছি আর বুঝতে পেরেছি যে, আল্লাহ তা‘য়ালা সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকে মহা প্রলয় পর্যন্ত সকল মানুষকে যে জ্ঞান বুদ্ধি দান করেছেন তা রাসূলে আকরাম (ﷺ) এর জ্ঞানবুদ্ধির তুলনায় এমন, যেমন বিশ্বের সমস্ত বালুকণা হল রাসূল (ﷺ) এর ইলম আর বালুকণা সমূহের মধ্যে একটি বালুকণা হল সবার ইলম। নিঃসন্দেহে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) সমগ্র মানব জাতির মধ্যে সর্বাধিক বুদ্ধিমান ও সর্বাধিক বিচার-বিবেচনাশীল।’’
➤ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : খাসায়েসুল কোবরা : ১/১১৯ পৃ: হাদিস নং-৩১৪, ইমাম আবু নুঈম ইস্পাহানী : হুলিয়াতুল আউলিয়া : ৪/২৬ পৃষ্ঠা, ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক : ৩/২৪২ পৃ
উক্ত তাবেয়ী রাসূল (ﷺ) এর ইলমের কিছুটা প্রকাশ করেছেন মাত্র। কারণ রাসূল (ﷺ) এর ইলমের পরিমাপ করার ক্ষমতা এক আল্লাহ ব্যতীত আর কারও নেই। রাসূল (ﷺ)‘র ইলমে গায়ব সম্পর্কে আল্লাহ তা‘য়ালা বলেন-
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُطْلِعَكُمْ عَلَى الْغَيْبِ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَجْتَبِي مِنْ رُسُلِهِ مَنْ يَشَاءُ-
‘‘(হে সাধারণ লোকগণ!) এটা আল্লাহর শান নয় যে, তোমাদেরকে ইলমে গায়ব দান করবেন। তবে হ্যাঁ, রাসূলগণের মধ্যে যাকে তিনি ইচ্ছা করেন, তাকে এ অদৃশ্য জ্ঞান দানের জন্য মনোনীত করেন।’’
➤ সূরা আলে ইমরান: আয়াত, ১৭৯
শুধু্ তা-ই নয় আল্লাহ তায়ালা অন্যত্র বলেন,
عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا (২৬) إِلَّا مَنِ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍـ
-‘‘(আল্লাহ পাক) তাঁর মনোনীত রাসূলগণ ব্যতীত কাউকেও তাঁর অদৃশ্য বিষয় সম্পর্কে অবহিত করেন না।’’ ➤সূরা জ্বিন: আয়াত ২৬-২৭
রাসূল (ﷺ) গায়বের সংবাদ প্রদানে কার্পণ্য করেন না । যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
وَمَا هُوَ عَلَى الْغَيْبِ بِضَنِينٍ- -‘‘তিনি {নবি করিম (ﷺ)} গায়ব প্রকাশের ক্ষেত্রে কৃপণ নন।’’
➤ সূরা তাকভীর, আয়াত-২৪
উক্ত আয়াত সম্পর্কে বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও তাফসিরকারক ইমাম বগভী (رحمة الله) বলেন,
وَما هُوَ، يَعْنِي مُحَمَّدًا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، عَلَى الْغَيْبِ …وَخَبَرِ السَّمَاءِ وَمَا اطَّلَعَ عَلَيْهِ مِمَّا كَانَ غَائِبًا عَنْهُ مِنَ الْأَنْبَاءِ وَالْقَصَصِ، بِضَنِينٍ، –
-‘‘হুযুর (ﷺ) অদৃশ্য বিষয়, আসমানি গায়েবি সংবাদ ও কাহিনী সমূহ প্রকাশ করার ব্যাপারে কৃপণ নন।’’
➤ইমাম বগভী, মা’আলিমুত তানযিল : ৫/২১৮ পৃষ্ঠা, দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম খাযেন (رحمة الله) বলেন-
وَما هُوَ يعني محمدا صلّى الله عليه وسلّم عَلَى الْغَيْبِ أي الوحي وخبر السّماء، وما اطلع عليه مما كان غائبا عن علمه من القصص والأنباء
-‘‘আর তিনি এর মমার্র্থ হুযুর (ﷺ), গায়বের ব্যাপারে অর্থাৎ ওহী, আসমানী গায়েবী সংবাদ ও কাহিনী সমূহ প্রকাশ করার ব্যাপারে কৃপণ নন।’’
➤ইমাম খাযিন : তাফসীরে খাযিন: ৪/৩৯৯ পৃষ্ঠা,
ইমাম বাগভী (رحمة الله) বলেন,
أَيْ يَبْخَلُ يَقُولُ إِنَّهُ يَأْتِيهِ عِلْمُ الْغَيْبِ فَلَا يَبْخَلُ بِهِ عَلَيْكُمْ بَلْ يُعَلِّمُكُمْ وَيُخْبِرُكُمْ بِهِ –
-‘‘এ আয়াতে এ কথাই বুঝানো হয়েছে যে, হুযুর (ﷺ)‘র কাছে অদৃশ্য বিষয়ের সংবাদ আসে। তিনি তা তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করেন না, বরং তোমাদেরকে জানিয়ে দেন’’।
➤ ইমাম বগভী, মা’আলিমুত তানযিল : ৫/২১৮ পৃষ্ঠা, দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।
শরহে আকায়িদে নসফী গ্রন্থের ১৭৫ পৃষ্ঠায় আছে,
بِالْجُمْلَةِ الْعِلْمُ بِالْغَيْبِ اَمْرُ تَفَرَّدَ بِهِ اللهُ تَعَالَىِ لَاسَبِيْلَ اِلَيْهِ لِلْعِبَادِ اِلَّابِاِ عْلاَمٍ مِنْهُ اَوْ اِلْهَا مٍا بِطَرِيْقِ الْمُعْجِزَاتِ اَوِالْكِرَاَمَةِ.
-‘‘সার কথা হলো যে অদৃশ্য বিষয়াবলীর জ্ঞান এমন একটি বিষয়, যার একমাত্র (সত্তাগত) অধিকারী হচ্ছেন খোদা তা’য়ালা। বান্দাদের পক্ষে ওইগুলো আয়ত্ত করার কোন উপায় নেই, যদি মহান প্রভু মু‘জিযা বা কারামত স্বরূপ ইলহাম বা ওহীর মাধ্যমে জানিয়ে দেন।’’
➤সা’দ উদ্দিন মাসউদ তাফ তাযানীঃ শরহে আকায়িদে নাসাফীঃ ৭৫ পৃষ্ঠা,
তাই আমরা সেটাই বলি নবিদেরকে মু‘জিযা স্বরূপ এবং ওলীদেরকে কারামাত রূপে আল্লাহ ইলমে গায়ব দান করেছেন। সুপ্রসিদ্ধ ‘দুর্রুল মুখতার’ গ্রন্থের কিতাবুল হজ্বের প্রারম্ভে আছে,
فُرِضَ الْحَجُّ سَنَةَ تِسْعٍ وَإِنَّمَا أَخَّرَهُ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ – لِعَشْرٍ لِعُذْرٍ مَعَ عِلْمِهِ بِبَقَاءِ حَيَاتِهِ لِيُكْمِلَ التَّبْلِيغَ
-‘‘হজ্ব নবম হিজরীতে ফরজ হয়, কিন্তু হুযুর আলাইহিস সালাম বিশেষ কোন কারণে একে দশম হিজরী পর্যন্ত বিলম্বিত করেন। হুযুর আলাইহিস সালাম তার পবিত্র ইহকালীন জীবনের বাকী সময় সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন বিধায় হজ্ব স্থগিত করেছিলেন যাতে ইসলাম প্রচারের কাজ পূর্ণতা লাভ করে।’’
➤আলাউদ্দিন হাস্কাফীঃ দুররুল মুখতারঃ কিতাবুল হাজ্বঃ ১৫৯ পৃষ্ঠা,
যারা আম্বিয়া কিরাম এমনকি হুযুর (ﷺ)‘র কোন প্রকার ইলমে গায়বের ইলম নেই বলে দাবী করেন, তাদের বেলায় বেলায় কুরআন করীমের এ আয়াতটি প্রযোজ্য হবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন-
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَابِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ
-‘‘তবে কি তোমরা (কাফেররা/মুনাফিকরা) কোরআনের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর।’’
➤সুরা বাক্বারা, ৮৫
তাই দেওবন্দী ও আহলে হাদিসদের অবস্থা হচ্ছে ইহুদিদের মতো। কেননা বাতিল পন্থীরা সাধারণ মানুষের সামনে যেখানে আল্লাহ ছাড়া সত্ত্বাগতভাবে কেউ ইলমে গায়ব জানে না সেই আয়াতগুলো তারা শুধু বলে বেড়ায় ➤সুরা আনআম, ৫০, সুরা নামল, ৬৫
আর এ ছাড়া যে আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহর মননীত রাসূলদের ইলমে গায়ব দান করেছেন, অনেক সময় তারা এমন ভাব নেয় যে তারা মনে হয় এ আয়াতগুলো জানেই না।
➤সুরা আলে-ইমরান,১৭৯ সুরা জ্বীন, ২৬-২৭, সুরা তাকবীর-২৪
৭. রাসূল (ﷺ) নিরক্ষর ছিলেন নাঃ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন-
وَإِنَّمَا بُعِثْتُ مُعَلِّمًا
-‘‘আমি পৃথিবীতে শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’’
➤খতিব তিবরিযীঃ মিশকাতুল মাসাবিহঃ কিতাবুল ইলমঃ ১/৮৫ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ২৫৭, দারেমী, আস্-সুনান, ১/৩৬৫ পৃষ্ঠা, হাদিস ৩৬১, সুয়ূতী, জামেউস, সগীর, হাদিসঃ ৪২৪২, আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক, আয্-যহুদ, ১/৪৮৮ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ১৩৮৮, আবু দাউদ তায়লসী, আল-মুসনাদ,৪/১১ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ২৩৬৫, ইবনে ওয়াহ্হাব, আল-মুসনাদ, আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্-দ্বঈফাহ, ১/৬৭ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ১১, ইবনে মাজাহ, আস্-সুনান, ১/৮৩ পৃষ্ঠা, হাদিস ২২৯,হারিস, আল-মুসনাদ, ১/১৮৫ পৃষ্ঠা, হাদিস ৪০, বায্যার, ৬/৪২৮ পৃষ্ঠা, হাদিস ২৪৫৮, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৩/৫১ পৃষ্ঠা, হাদিস ১২৫, ও ১৪/৯৪ পৃষ্ঠা, হাদিস ১৪৭০৯, বায়হাকী, আল-মাদখাল, ১/৩০৬ পৃষ্ঠা, হাদিস ৪৬২, বাগাভী, শরহে সুন্নাহ, ১/২৭৫ পৃষ্ঠা, হাদিস ১২৮,
যিনি নিজেই কিছু জানেন না তাহলে তিনি কিভাবে শিক্ষক হবেন? বুঝা গেল যে, তিনি পৃথিবীতে শিখতে আসেননি বরং তিনি পৃথিবীবাসীকে শিখাতে এসেছেন।
ইমাম শরফুদ্দীন বুছুরী (رحمة الله) বলেন-
فَاِنَّ مِنْ جَوْدِكَ الدُّنْيَا وَضَرَّتَهَا – وَمِنْ عُلُوْمِكَ عِلْمُ اللَّوْحِ وَالْقَلَمِ.
-‘‘হে রাসূল (ﷺ) আপনার বদান্যতায় দুনিয়া ও আখিরাতের অস্তিত্ব। লওহে মাহফুজ ও ‘কলমের’ জ্ঞান আপনার জ্ঞান ভান্ডারের কিয়দাংশ মাত্র।’’
➤মোল্লা আলী ক্বারীঃ শরহে কাসীদায়ে বুরাদাঃ ১১০ পৃষ্ঠা।
আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তার ‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে’ ولا تخط بيمينك আয়াতটির
➤সূরাঃ আনকাবুতঃ আয়াতঃ ৪৮, পারাঃ ২১।
ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলেন,
كَانَ عَلَيْهِ السَّلاَمُ يَعْلَمُ الْخَطُوْطَ وَيُخْبِرُ عَنْهَا.-‘‘হুযুর আলাইহিস সালাম লিখতে জানতেন এবং সে বিষয়ে অপরকেও জ্ঞাত করতেন।’’
➤আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রূহুল বায়ানঃ ৬/৬১০ পৃষ্ঠা।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খন্ডের ২১৯-২২৫ পৃষ্ঠায় দেখুন।
৮.স্বয়ং আল্লাহ তা‘য়ালা নিজেই রাসূল (ﷺ) কে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেনঃ
জিবরাঈল (عليه السلام) কে রাসূল (ﷺ)-এর উস্তাদ বা কেউ শিক্ষা দেননি। যারা অনুরূপ বলবে তারা পথভ্রষ্ট।
اَلرَّحْمَنُ. عَلَّمَ الْقُرْاَنَ. خَلَقَ الْاِنْسَانَ -عَلَّمَهُ الْبَيَانَ.
তাফসীর সমৃদ্ধ অনুবাদঃ দয়াবান আল্লাহ তা’য়ালা স্বীয় মাহবুবকে কুরআন শিখিয়েছেন, মানবতার প্রাণতুল্য হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে সৃষ্টির পূর্বাপর সব কিছুর তাৎপর্য বাতলে দিয়েছেন।’’
➤সূরা রাহমান, আয়াতঃ ১-৪
তাফসীরে ‘মাআলেমুত-তানযীলে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যা করা হয়েছে নিম্নরূপ,
خَلَقَ الْاِنْسَانَ اَىْ مُحَمَّدً عَلَيْهِ السَّلاَمُ عَلَمَّهُ الْبَيَانَ. يَعْنِىْ بَيَانَ مَاكَانَ وَمَا يَكُوْنَ.
-‘‘আল্লাহ তা’য়ালা মানবজাতি তথা মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সমস্ত বিষয়ের বর্ণনা শিক্ষা দিয়েছেন।’’
➤মোল্লা মুঈন কাশেফীঃ তাফসীরে হুসাইনীঃ সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ১১১
‘তাফসীরে খাযেনে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখা হয়েছে,
قِيْلَ اَرَادَ بِالْاِنْسَانِ مُحَمَّدًا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ عَلَّمَهُ الْبَيَانَ يَعْنِىْ بَيَانَ مَاكَانَ وَمَايَكُوْنَ لِانَّهُ عَلَيْهِ السَّلاَمُ نَبِّى عَنَ خَبْرِ الْاُوَّلِيَنَ وَالْاَخِرِيْنَ وَعَنْ يَوْمِ الدِّيْنِ.
-‘‘বলা হয়েছে যে, (উক্ত আয়াতে) ‘ইনসান’ বলতে হযরত মুহাম্মদ (ﷺ) কে বোঝানো হয়েছে। তাঁকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সব বিষয়ের বিবরণ শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কেননা, তাঁকে পূর্ববতী ও পরবর্তীদের ও কিয়ামতের দিন সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে।’’
➤ইমাম খাযিনঃ তাফসীরে খাযিনঃ ৪/২০৮ পৃষ্ঠা,
তাফসীরে ‘রূহুল বয়ানে’ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে,
وَعَلَّمَ نَبِيَّنَا عَلَيْهِ السَّلاَم الْقُرْاَنَ وَاَسْرَارَ الْاُلُوْهِيَةِ كَمَا قَالَ وَعَلَّمْكَ مَالَمْ تَكُنَ تَعْلَمُ.
-‘‘আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের নবী কে কুরআন ও স্বীয় প্রভুত্বের রহস্যাবলীর জ্ঞান দান করেছেন, যেমন স্বয়ং আল্লাহ তা’য়ালা ফরমায়েছেন, وَعَلَّمَكَ مَاَلَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ সে সব বিষয় আপনাকে শিখিয়েছেন, যা আপনি জানতেন না।’’ ➤আল্লামা ঈসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রূহুল বায়ানঃ ৯/২৮৯ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
৯. চাঁদ ও সূর্যের আলোতে রাসূল (ﷺ)‘র ছায়া জমিনে পড়তো নাঃ
এটি নবি (ﷺ)‘র অসংখ্য মু‘জিযা হতে অন্যতম একটি মু‘জিযা। ইমাম সুয়ূতি সংকলন করেন-
اخْرُج الْحَكِيم التِّرْمِذِيّ عَن ذكْوَان ان رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم لَمْ يَكُنْ يَرَى لَهُ ظلّ فِي شَمْسِ وَلَا قَمَرـ
-‘‘ইমাম হাকেম তিরমিযি (رحمة الله) তার নাওয়াদিরুল উসূল’ গ্রন্থে হযরত যাকওয়ান (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন হুযুর (ﷺ) এর ছায়া চাঁদ সূর্যের আলোতে জমীনে পড়ত না।’’
➤ইমাম হাকেম তিরমিযী: নাওয়াদিরুল উসূল : পৃ-১/২৯৮পৃ, জালালুদ্দীন সূয়তী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/১২২ পৃ:, হাদিস : ৩২৮, ইমাম কুস্তালানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ২/১২০পৃ, ইমাম যুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৪/২২০ পৃষ্ঠা, শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী : মাদারেজুন নবুওয়াত : ১/১৪২পৃ, শায়খ ইউসূফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন : পৃ : ৬৬৮, মাকতুবাতুল তাও-ফিকহিয়্যাহ, মিশর, শায়খ ইউসূফ নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/১৪২ পৃ: ইমাম মাহদী আল-ফার্সী : মাতালিউল মুসাররাত : পৃষ্ঠা, নং : ৩৬৫, ইবনে সালেহ : সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ : ২/৯০পৃ, আল্লামা ইমাম আহমদ রেযা : নুরুল মুস্তফা : পৃষ্ঠা, নং – ৮২, ইমাম মুকরিযী : আল ইমতাওল আসমা : ১০/৩০৮ পৃষ্ঠা, ইমাম মুকরিযী : মাকারুম বিখাসায়েসুন্নবী : এর ২/২৩৫ পৃষ্ঠা,।
ইমাম আব্দুর রায্যাক (ওফাত. ২১১হি.) বর্ণনা করেন-
عَنْ عَبْدُ الرَّزَّاقْ عَنْ ابن جريج قَالَ : اَخْبَرْنِىْ نَافِع أَنَّ اِبْن عباس قَالَ : لَمْ يَكُنْ مَعَ الشَّمْسِ قَطٌّ اِلَّا غَلَبَ ضَوْءَه الشَّمْسِ , وَلَمْ يَقُمْ مَعَ سِرَاجٍ قُطٌّ اِلَّا غَلَبَ ضَوْءه السِّرَاجِ-
-‘‘ইমাম আব্দুর রায্যাক (رحمة الله) হযরত ইবনে জুরাইজ (رحمة الله) হতে তিনি হযরত নাফে (رحمة الله) হতে তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে তিনি বলেন, হুযুর (ﷺ)‘র কোন ছায়া ছিল না, তাঁর ছায়া সূর্যের আলোতে পড়তো না বরং তাঁর নূরের আলো সূর্যের আলোর উপরে প্রধান্য বিস্তার করতো এবং কোন বাতির আলোর সামনে দাড়ালেও বাতির আলোর উপরে তাঁর নূরের আলো প্রাধান্য বিস্তার করতো।’’
➤ইমাম আব্দুর রাজ্জাক : জযউল মুফকুদ মিন মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক : ১/৫৬ পৃষ্ঠা, হাদিস : ২৫
وَقَاَلَ عُثْمَانُ إِنَّ اللهُ مَا أَوْقَعَ ظِلُّكَ عَلَى الْأَرْضِ لِئَلاً يَضَعَ إِنْسَانُ قَدَمَهُ عَلَى ذٰلِكَ الظِّلِّ
-‘‘ইসলামের তৃতীয় খলিফা আমিরুল মু‘মিনীন হযরত উসমান ইবনে আফ্ফান (رضي الله عنه) বলেন হুযুর (ﷺ) এর ছায়া আল্লাহ যমিনে ফেলেননি যাতে কোন মানুষ তার ছায়ার উপর পা রাখতে না পারে।’’
➤ ইমাম আবুল বারাকাত নাসাফী : তাফসীরে মাদারিক : ২/৪৯২ পৃষ্ঠা, সূরা নুর, আল্লামা শফী উকাড়ভী : শামে কারবালা : ৩২৪প, এবং জিকরে জামীল:৩২৪প, গোলাম রাসূল সাঈদী : তাওজিহুল বায়ান: পৃ-২৪২, আহমদ ইয়ার খঁান নঈমী, রিসালায়ে নূর,২৫ পৃষ্ঠা।
ইমাম কাজি আয়ায মালেকী এবং ইমাম সাখাভী (رحمة الله) বলেন-
وَمَا ذُكِرَ من أنَّهُ كَانَ لَا ظل شخصه فِي شَمْسٍ وَلَا قَمَرٍ لِأَنَّهُ كَانَ نُورًا وَأَنَّ الذُّبَابَ كَانَ لَا يَقَعُ عَلَى جَسَدِهِ وَلَا ثِيَابِهِ-
-‘‘তাঁর নবুওয়াত ও রিসালাতের প্রমাণাদির মধ্যে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, তাঁর শরীর মোবারকের ছায়া হতো না, না সূর্যালোকে না চন্দ্রালোকে। কারণ তিনি ছিলেন নূর। তাঁর শরীর ও পোশাকে মাছি বসত না।’’ ➤কাজী আয়ায : শিফা শরীফ, ১/৪৬২ পৃষ্ঠা, ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা, ৮৫ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ১২৬, (এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মাচন’’ ১ম খন্ডের ১৭৩-১৮৬ পৃষ্ঠা, পর্যন্ত দেখুন। ইনশাআল্লাহ আশা করি পাঠকবৃন্দের সঠিক বিশ্বাস ফিরে আসবে।)
১০.রাসূল (ﷺ) এর মি‘রাজ জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল:
আল্লামা শায়খ জামালুদ্দীন আহমদ গাযনুভী হানাফী {৫৯৩হি.}বলেন-
والمعراج حق عرج رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم بشخصه فِي الْيَقَظَة إِلَى السَّمَاء ثمَّ إِلَى حَيْثُ شَاءَ الله
-‘‘মি‘রাজ সত্য, তা হলো রাসূল (ﷺ)‘র জাগ্রত অবস্থায় আসমানে ভ্রমণ, তারপর আল্লাহর ইচ্ছা যতটকু ততটুকু।’’ ➤শায়খ জামালুদ্দীন আহমদ গাযনুভী হানাফী, উসূলুদ্-দ্বীন, ১/১৩৪ পৃষ্ঠা, দারুল বাশায়েরুল ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ, ১৪১৯ হিজরি।
ইমাম ত্বাহাবী (رحمة الله) বলেন-
وَالْمِعْرَاجُ حَقٌّ، وَقَدْ أُسْرِيَ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعُرِجَ بِشَخْصِهِ فِي الْيَقَظَةِ، إِلَى السَّمَاءِ. ثُمَّ إِلَى حَيْثُ شَاءَ اللَّهُ مِنَ الْعُلَا وَأَكْرَمَهُ اللَّهُ بِمَا شَاءَ، وَأَوْحَى إِلَيْهِ مَا أَوْحَى
-‘‘মি‘রাজ হলো রাসুল (ﷺ) এর জীবনে সংঘটিত একটি সত্য ঘটনা। নবি করিম (ﷺ)-কে রাত্রিতে ভ্রমন করানো হয়েছে এবং জাগ্রত অবস্থায় সশরীরে আল্লাহ তা‘য়ালা যতদূর ইচ্ছা করেছেন, আকাশের দিকে তাকে উত্তোলন করেছেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন, তা দ্বারা তাঁকে সম্মানিত করেছেন। আর আল্লাহ তাঁর প্রতি যা প্রত্যাদেশ করার তা প্রত্যাদেশ করেছেন।’’
➤ ইমাম তাহাভী হানাফী, (শরাহ সহ) আক্বিদাতুত তাহাবী, ১/১৯৫ পৃষ্ঠা,
মুফতি আমিমুল ইহসান (رحمة الله) এর মতে-
وَالْمِعْرَاجُ صعوده صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ إِلَى السَّمَاءِ فِي الْيَقَظَةِ
-‘‘মি‘রাজ হলো রাসূল (ﷺ)‘র ঊর্ধ্বগমন, যা জাগ্রত অবস্থায় আসমানে হয়েছিল।’’
➤ মুফতি আমিমুল ইহসান, কাওয়াইদুল ফিক্হ, পৃষ্ঠা,২৭২
ইমাম কালাবাজি বুখারী হানাফি (ওফাত. ৩৮০হি.) বলেন-
أقروا بمعراج النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم وَأَنه عرج بِهِ إِلَى السَّمَاء السَّابِعَة وَإِلَى ماشاء الله فِي لَيْلَة فِي الْيَقَظَة بِبدنِهِ
-‘‘রাসূল (ﷺ)‘র মি’রাজের উপর বিশ্বাস রাখতে হবে যে, নিশ্চয় তা জাগ্রত অবস্থায় এবং সপ্তম আকাশেরও উপরে রাতে আল্লাহর যতটুকু ইচ্ছা ততটুকু নিয়েছেন।’’ ➤ ইমাম কালাবাজি, আল-তারুফুল মাযহাবে আহলে তাসাউফ, ৫৭ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বর্ণনা করেন হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেছেন যে,
فِي الْيَقَظَةِ رَآهُ بِعَيْنِهِ، -‘‘ রাসূল (ﷺ) মি’রাজের রজনীতে তার রবকে জাগ্রত অবস্থায় চর্ম চক্ষু দ্বারা অবলোকন করেছেন।’’
➤মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৯/৩৭৫৭ পৃষ্ঠা, হাদিস ৫৮৬১, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত , লেবানন।
বুঝা গেলে জাগ্রত অবস্থায় মি’রাজ না হলে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহ দেখার কথা চিন্তা করা অবান্তর। আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন-
أَنَّ الْإِسْرَاءَ إِلَى بَيْتِ الْمَقْدِسِ كَانَ فِي الْيَقَظَةِ لِظَاهِرِ الْقُرْآنِ-‘‘নিশ্চয় বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত রাতে ভ্রমণ ইসরা বা মি’রাজ জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে তা কোরআন থেকেই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত।’’
➤ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১৩/৪৮৯ পৃষ্ঠা,
তাই বুঝা যায় বায়তুল মুকাদ্দাস যদি জাগ্রত অবস্থায় না হয় তার পরপরই তো তিনি বুরাকে আসমানে গিয়েছিলেন। বুঝা গেল বাকীটাও জাগ্রত অবস্থায়ই হয়েছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তিনি এ কিতাবের অন্য স্থানে বলেন-
أَنَّ الْإِسْرَاءَ كَانَ فِي الْيَقَظَةِ
-‘‘নিশ্চয় ইসরা জাগ্রত অবস্থায় হয়েছে।’’
➤ইবনে হাজার আসকালানী, ফতহুল বারী, ১৩/৪৮০ পৃষ্ঠা।
বর্তমান আহলে হাদিস তথা সালাফিরা রাসূল (ﷺ)‘র জাগ্রত অবস্থায় মি‘রাজ হওয়াকে অস্বীকার করছে। তাদের এ মতের খন্ডনে ‘আকিদাতুত ত্বহাবী’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুহাম্মদ তাইয়্যিব (رحمة الله) বলেন-
قوله تعالى: أَسْرَى بِعَبْدِهِ اشارة الى الْمِعْرَاجُ الجسمانى لا فى المنام فان العبد ان ذات الشريف مجموع الجسم والروح لا روح فقط والا قيل أَسْرَى بروحه او ذهب بروحه-
-‘‘আল্লাহর বাণী- أَسْرَى بِعَبْدِهِএটা সশরীরে মি‘রাজ হওয়ার প্রতি ইশারা করছে। কেননা العبد হলো দেহ ও রূহের সমষ্টি। কেবল روح কে العبد বলা হয় না। روح -কে যদি عبد বলা হতো অথবা স্বপ্নের মাধ্যমে যদি মি‘রাজ হতো, তাহলে أَسْرَى بِعَبْدِهِ -এর পরিবর্তে أَسْرَى بروحه অথবা ذهب بروحه বলা হতো।’’{তথ্য সূত্রঃ আকিদাতুত তাহাভী (শরাহ সহ) পৃ.৬৯}
আমাদের বক্তব্য হলো যদি ঘুমন্ত অবস্থায় মি‘রাজ হতো, তাহলে কোন বিতর্কের সৃষ্টি হতো না। কারণ স্বপ্নেযোগে মানুষ সেকেন্ডের মধ্যে প্রাচ্য থেকে প্রাশ্চাত্য পর্যন্ত ভ্রমণ করা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। আরবদের এটা জানা ছিল। অথচ কাফেররা মি‘রাজের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর এর বিরুদ্ধে তুমুল বিতর্কে লিপ্ত হলো। সুতরাং এতে প্রমাণিত হয়, রাসূল (ﷺ)‘র মি‘রাজ সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় হয়েছিল। যা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতেরও অভিমত। ইমাম তাযুল কুরা বুরহান উদ্দিন কিরমানী (ওফাত.৫০৫হি.) বলেন-
ومذهب أهل السنة والجماعة في المعراج أنه أسرى بروحه وجسده إلى بيت المقدس، ثم إلى السماوات حتى انتهى إلى سدرة المنتهى، فَكَانَ قَابَ قَوْسَيْنِ أَوْ أَدْنَى
-‘‘এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অভিমত যে, রাসূল (ﷺ)‘র ইসরা বায়তুল মুকাদ্দাস এবং সেখান থেকে সিদরাতুল মুনতাহা এবং আল্লাহর নিকট দু ধনুকের নিকটবর্তী হওয়া পর্যন্ত রূহ ও সশরীরের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছে।’’
➤ ইমাম তাযুল কুরা বুরহান উদ্দিন কিরমানী, গারায়েবুল তাফসীর, ১/৬২০ পৃষ্ঠা, মুয়াস্সাতুল উলূমুল কোরআন, বয়রুত, লেবানন।
১১.মি’রাজের সময়ের বিষয়ে সঠিক আক্বিদা:
রাসূল (ﷺ)‘র মি’রাজ হলো ২৭ই রজব বা ২৬ই রজব দিবাগত রাত। এ মতটিই সুপ্রসিদ্ধ ও অধিক গ্রহণযোগ্য। আল্লামা বদরুদ্দীন মাহমুদ আইনী (رحمة الله) বলেন-
كَانَ الْإِسْرَاء لَيْلَة السَّابِع وَالْعِشْرين من رَجَب
-‘‘রাসূল (ﷺ)‘র ইসরা ভ্রমণ বা মি’রাজ ২৭ই রজব হয়েছিল।’’ ➤আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৪/৩৯ পৃষ্ঠা, দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।
বিশ্বের মুসলিম সমাজের সর্বত্র এ মতই সমধিক সুপ্রসিদ্ধ ও সুপরিচিত। বিখ্যাত ইতিহাসবিদ ও আহলে হাদিসদের ইমাম এবং সকলের মান্যবড় আল্লামা ইবনে কাসির (رحمة الله) তার একাধিক বিখ্যাত গ্রন্থে উল্লেখ করেন-
أَنَّ الْإِسْرَاءَ كَانَ لَيْلَةَ السَّابِعِ وَالْعِشْرِينَ مِنْ رَجَبٍ وَاللَّهُ أَعْلَمُ.
-‘‘অবশ্যই মি‘রাজ সংগঠিত হয়েছে রজব মাসের ২৭ তারিখ। মহান রব আল্লাহ তা‘য়ালাই ভাল জানেন।’’
➤ইবনে কাসির, আল-বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৩/১৩৫ পৃষ্ঠা, দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, সিরাতে নববিয়্যাহ, ২/৯৩ পৃষ্ঠা,
ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-
كان ليلة السابع والعشرين من رجب
-‘‘মি’রাজ ২৭ই রজব হয়েছিল।’’
➤কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া, ১/১৬২ পৃষ্ঠা, দারু ইহইয়াউত্-তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন।
ইমাম জুরকানী (رحمة الله) অনুরূপ মতামত পেশ করেছেন। ➤ জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া, ২/৭১ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
তিনি আরও বলেন- قال بعضهم: وهو الأقوى -‘‘অনেক উলামাগণ বলেছেন যে, এটিই শক্তিশালী অভিমত।’’
➤ জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া, ২/৭১ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
১২.রাসূল (ﷺ) সশরীরে জাগ্রত অবস্থায় আল্লাহ তা‘য়ালা কে স্ব চক্ষে অবলোকন করেছেন:
এ বিষয়ে নিম্নে কিছু হাদিসে পাক ও ইমামদের বক্তব্য দেয়া হলো-
قَالَ: كَانَ الْحَسَنُ يَحْلِفُ بِاللَّهِ ثَلَاثَةً لَقَدْ رَأَى مُحَمَّدٌ رَبَّهُ-‘‘ইমাম আব্দুর রায্যাক (رحمة الله) তাঁর “তাফসীরে” হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন তিনি কসম করে বলেছেন, নিশ্চয়ই রাসূল (ﷺ) আল্লাহ তা‘য়ালাকে দেখেছেন।’’
➤ ইমাম আব্দুর রায্যাক, আত-তাফসির, ৩/২৫১ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৩০৩৩, কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৫, মোল্লা আলী কারী : শরহে শিফা : ১/৪২৮ পৃষ্ঠা,
وَرَوَى شَرِيكٌ عَنْ أَبِي ذَرّ رَضِيَ اللَّه عَنْهُ فِي تَفْسِيرِ الآيَةِ قَالَ رَأَى النَّبِيّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وسلم رَبَّهُ
-‘হযরত তাবেয়ি শারিক (رحمة الله) হযরত আবু যর গিফারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, অত্র আয়াত (হৃদয় যা দেখেছে তা মিথ্যা নয়) প্রসঙ্গে যে, হুযুর (ﷺ) আল্লাহ তা‘য়ালার দর্শন লাভ করেছেন।’’
➤ কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৬ পৃষ্ঠা, মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৬ পৃ
হযরত আবুল হাসান আশ‘আরী (رحمة الله) বলেন,
وَقَالَ أَبُو الْحَسَنِ عَلِيُّ بْنُ إِسْمَاعِيل الْأَشْعَرِي رَضِيَ اللَّه عَنْهُ وَجَمَاعَةٌ مِنْ أَصْحَابِهِ أنَّهُ رَأَى اللَّه تعالى ببصره وعيسى رَأسِهِ وَقَالَ كُلّ آيةٍ أُوتِيهَا نَبِيّ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ فَقَدْ أُوتِي مِثْلَهَا نَبِيُّنا صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَخُصَّ مِنْ بَيْنِهِمْ بِتَفْضِيلِ الرُّؤْيَةِ-
-“আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকায়েদের ইমাম আবুল হাসান আলী আশ‘আরী (رحمة الله) ও তাঁর এক জামাত সঙ্গী-সাথী বলেন হুযুর (ﷺ) আল্লাহ তা‘য়ালাকে কপালের চোখ দ্বারা অবলোকন করেছেন। তাঁরা আরও বলেন, অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কেরামকে যত মু‘জিজা দেওয়া হয়েছে অনুরূপ মু‘যিজা হুযুর (ﷺ) কে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হুযুর (ﷺ) কে অগ্রবর্তী করে দিদারে এলাহী মু‘যিজা দেওয়া হয়েছে।’’
➤কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৮ পৃষ্ঠা, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৯ পৃষ্ঠা,
বুঝা গেল, কেউ যদি রাসূল (ﷺ)‘র মি‘রাজে আল্লাহ দেখার বিষয়টি অস্বীকার করে তাহলে সে নিঃসন্দেহে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বহির্ভূত এবং পথভ্রষ্ট বাতিল ফিরকা হিসেবে গণ্য।
قَالَ الْقَاضِي أَبُو الْفَضْلِ وَفَّقَهُ اللَّهُ : والحق الذي لا امتراءالحق الذى لا امتراء فيه ان فِيهِ أَنَّ رُؤْيَتَهُ تَعَالَى فِي الدُّنْيَا جَائِزَةٌ عَقْلًا. وَلَيْسَ فِي الْعَقْلِ مَا يُحِيلُهَا-
-“ইমাম কাযি আবুল ফজল আয়াজ (رحمة الله) তিনি বলেন, সত্য কথা হলো আকলের দিক থেকে এ বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করার কোন অবকাশ নেই যে, দুনিয়াতে তিনি আল্লাহর দীদার লাভ করেছেন। আর আকলের দিক থেকে বিরূপ কোন প্রমাণও নেই যে, এরূপ হওয়া অসম্ভব।’’
➤কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/১১৮ পৃষ্ঠা, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৯ পৃষ্ঠা,
মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-
وقال الغزالي في الإحياء والصحيح أن رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم رأى الله تعالى ليلة المعراج-
-“ইমাম গায্যালী (رحمة الله) ‘ইহইয়াউল উলুমুদ্দী’নে লিখেন, এ মতই সহীহ বা বিশুদ্ধ যে মি‘রাজের রজনীতে রাসূল (ﷺ) আল্লাহ তা‘য়ালাকে দেখেছেন।’’
➤ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৩ পৃষ্ঠা।
ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন,
فَالْحَاصِلُ أَنَّ الرَّاجِحَ عِنْدَ أَكْثَرِ الْعُلَمَاءِ إن رسول الله صلى الله عليه وسلم رَأَى رَبَّهُ بِعَيْنَيْ رَأْسِهِ لَيْلَةَ الْإِسْرَاءِ لِحَدِيثِ بن عَبَّاسٍ وَغَيْرِهِ مِمَّا تَقَدَّمَ وَإِثْبَاتُ هَذَا لَا يَأْخُذُونَهُ إِلَّا بِالسَّمَاعِ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-‘‘অধিকাংশ ওলামার নিকট এই মতই প্রাধান্য পেয়েছে যে, নবী করীম (ﷺ) মি‘রাজের রজনীতে স্বীয় প্রতিপালককে তাঁর কপালের চক্ষু দ্বারা দেখছেন। যেমনটি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। এই বিষয়ে যারা (সাহাবীরা) রাসূল (ﷺ) হতে মি‘রাজের সময় (মি‘রাজের ঘটনা) শ্রবণ করেছেন কেবল তাদের অভিমত ছাড়া বাকি অভিমত (যেমন মা আয়েশার অভিমত; কেননা তিনি তখন খুব ছোট ছিলেন) গ্রহণ করা হবে না।’’
➤ ইমাম নববী : শরহে মুসলিম : ৩/৫ পৃষ্ঠা, দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহেব : ৬/১১৬পৃ, মোল্লা আলী ক্বারী : শরহে শিফা : ১/৪২৫ পৃষ্ঠা, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/৩২২ পৃষ্ঠা,
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডের ১২৮-১৩৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত দেখুন।
১৩. রাসূল হায়াতুন্নবি (ﷺ) হিসেবে এখনও রওজা শরিফে আছেন :
ইতোপূর্বে সমস্ত নবিরা জীবিত তা আলোকপাত করা হয়েছে সে হিসেবে রাসূল (ﷺ)ও নিঃসন্দেহ রওজা শরিফে জীবিত। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন-
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: حَيَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُحْدِثُونَ وَيُحَدَثُ لَكَمْ، وَوَفَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُعْرَضُ عَلَيَّ أَعْمَالُكُمْ، فَمَا رَأَيْتُ مِنْ خَيْرٍ حَمَدَتُ اللَّهَ عَلَيْهِ، وَمَا رَأَيْتُ مِنْ شَرٍّ اسْتَغْفَرْتُ اللَّهَ لَكَمْ. –
-‘‘আমার হায়াত তোমাদের জন্য উত্তম বা রহমত। কেননা আমি তোমাদের সাথে কথা বলি তোমরাও আমার সাথে কথা বলতে পারছ। এমনকি আমার ওফাতও তোমাদের জন্য উত্তম বা নেয়ামত। কেননা তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে এবং আমি তা দেখবো। যদি তোমাদের কোন ভালো আমল দেখি তাহলে আমি আল্লাহর নিকট প্রশংসা করবো, আর তোমাদের মন্দ কাজ দেখলে আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য (তোমাদের পক্ষ হতে) ক্ষমা প্রার্থনা করবো।’’
➤ বায্যার, আল-মুসনাদঃ ৫/৩০৮ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ১৯২৫, সুয়ূতি, জামিউস সগীরঃ ১/২৮২ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৩৭৭০-৭১, ইবনে কাছির ,বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/২৫৭ পৃষ্ঠা, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪০৭ পৃষ্ঠা, হাদিস ৩১৯০৩, ইমাম ইবনে জওজী, আল-ওফা বি আহওয়ালি মোস্তফা, ২/৮০৯-৮১০ পৃষ্ঠা, আল্লামা ইবনে কাছির, সিরাতে নববিয়্যাহ, ৪/৪৫ পৃষ্ঠা,
উক্ত হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেন-
رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ.
-‘‘উক্ত হাদিসের সমস্ত বর্ণনাকারী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’
➤ ইমাম হাইছামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৯/২৪ পৃষ্ঠা, হা/১৪২৫০
ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله)ও সহীহ বলেছেন।
➤ ইমাম সুয়ূতি, জামিউস সগীরঃ ১/২৮২ পৃষ্ঠা, হাদিস/৩৭৭০-৭১,
হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ، فَنَبِيُّ اللَّهِ حَيٌّ يُرْزَقُ
-‘‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘য়ালা আম্বিয়ায়ে কিরামগণের দেহকে ভক্ষণ করা মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন। সুতরাং আল্লাহর নবী স্বীয় রওজা পাকে জীবিত। তাঁকে রিযিক দেওয়া হয়।’’ (সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/৫২৪পৃ. হা/১৬৩৭) এ বিষয়ের বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা সম্পর্কে ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী (رحمة الله) দীর্ঘ আলোচনার সর্বশেষ বলেন-
حَيَاةُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي قَبْرِهِ هُوَ وَسَائِرِ الْأَنْبِيَاءِ مَعْلُومَةٌ عِنْدَنَا عِلْمًا قَطْعِيًّا لِمَا قَامَ عِنْدَنَا مِنَ الْأَدِلَّةِ فِي ذَلِكَ وَتَوَاتَرَتْ الْأَخْبَارُ، وَقَدْ أَلَّفَ الْبَيْهَقِيُّ جُزْءًا فِي حَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ فِي قُبُورِهِمْ، فَمِنَ الْأَخْبَارِ الدَّالَّةِ عَلَى ذَلِكَ
-“হায়াতুন্নবী (ﷺ) তথা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) স্বীয় রওজা মোবারকে জীবিত এবং সমস্ত নবীগণই জীবিত যা অকাট্য জ্ঞান দ্বারা পরিজ্ঞাত। কেননা, এ ব্যাপারে আমাদের নিকট দলীল প্রমাণ অকাট্য এবং এ প্রসঙ্গে অনেক মুতাওয়াতির হাদিস বর্ণিত হয়েছে (আনবিয়াউল আযকিয়া)।’’
➤ আল্লামা আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়তী : আল হাভীলিল ফাতাওয়া : ২/১৪৯ পৃষ্ঠা,
সকল উলামাগণ একমত যে (মুতাওয়াতির) এ পর্যায়ের হাদিসকে ইনকার করলে কাফের হয়ে যাবে। এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ এর ১ম খন্ডের ৪০৭-৪১১ পৃষ্ঠা দেখুন। ইনশাআল্লাহ আপনাদের সঠিক বিষয়টি বুঝে আসবে।
১৪.তিনি (ﷺ) ওফাতের পরেও তেমন; যেমন হায়াতে ছিলেন:
আল্লামা ইমাম ইবনুল হজ্জ (رحمة الله) “আল মাদখাল” গ্রন্থে ও ইমাম শিহাবুদ্দীন কাস্তালানী (رحمة الله) তার “মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া” গ্রন্থে “বাবুল জিয়ারাতুল কুবুর শরিফ” শীর্ষক অধ্যায়ে বলেছেন-
وَقَدْ قَالَ عُلَمَاؤُنَا رَحْمَةُ إذْ لَا فَرْقَ بَيْنَ مَوْتِهِ وَحَيَاتِهِ أَعْنِي فِي مُشَاهَدَتِهِ لِأُمَّتِهِ وَمَعْرِفَتِهِ بِأَحْوَالِهِمْ وَنِيَّاتِهِمْ وَعَزَائِمِهِمْ وَخَوَاطِرِهِمْ، وَذَلِكَ عِنْدَهُ جَلِيٌّ لَا خَفَاءَ فِيهِ. ـ
-‘‘আমাদের সুবিখ্যাত উলামায়ে কিরাম বলেন যে, হুযুর (ﷺ) এর জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তার কাছে সম্পূর্ণ রূপে সুস্পষ্ট, বরং এই কথার মধ্যে কোন রূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই।’’
➤ ইমাম কুস্তালানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : ৪/৫৮০ পৃষ্ঠা, আল্লামা ইবনুল হাজ্ব : আল মাদখাল : কালাম আলা যিয়ারতে সাইয়্যিদিল মুরসালীন : ১/২৫২পৃ, আল্লামা ইমাম যুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ৪/৩১২ পৃ:।
১৫. রাসূল (ﷺ) যেখানে যেখানে ইচ্ছা সেখানে পরিভ্রমণ করতে পারেন
এ বিষয়ে ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) (ওফাত.৯১১হি.) এর প্রসিদ্ধ কিতাব [أَنْبَاءُ الْأَذْكِيَاءِ بِحَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ] এর ৭ পৃষ্ঠায় একটি হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
النَّظَرِ فِي أَعْمَالِ أُمَّتِهِ وَالِاسْتِغْفَارِ لَهُمْ مِنَ السَّيِّئَاتِ، وَالدُّعَاءِ بِكَشْفِ الْبَلَاءِ عَنْهُمْ، وَالتَّرَدُّدِ فِي أَقْطَارِ الْأَرْضِ لِحُلُولِ الْبَرَكَةِ فِيهَا، وَحُضُورِ جِنَازَةِ مَنْ مَاتَ مِنْ صَالِحِ أُمَّتِهِ، فَإِنَّ هَذِهِ الْأُمُورَ مِنْ جُمْلَةِ أَشْغَالِهِ فِي الْبَرْزَخِ كَمَا وَرَدَتْ بِذَلِكَ الْأَحَادِيثُ وَالْآثَارُ ـ
-‘‘‘উম্মতের বিবিধ কর্ম কান্ডের প্রতি দৃষ্টি রাখা, তাদের পাপরাশির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের বালা মসিবত থেকে রক্ষা করার জন্য দুআ করা, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আনাগোনা করা ও বরকত দান করা এবং নিজ উম্মতের কোন নেক বান্দার ওফাত হলে তার জানাযাতে অংশগ্রহণ করা, এগুলোই হচ্ছে হুযুর (رحمة الله) এর সখের কাজ। অন্যান্য হাদিস থেকেও এসব কথার সমর্থন পাওয়া যায়।’’
➤ ইমাম সুয়ূতি, আল-হাভী লিল ফাতওয়া, ২/১৮৪-১৮৫ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) তাফসীরে রুহুল বায়ানে সূরা মূলকের ২৯নং আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন-
قال الامام الغزالي رحمه الله تعالى والرسول عليه السلام له الخيار فى طواف العوالم مع أرواح الصحابة رضى الله عنهم لقد رآه كثير من الأولياء ـ
-‘‘সুফীকুল সম্রাট হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গায্যালী (رحمة الله) বলেছেন, হুযুর (ﷺ) এর সাহাবায়ে কিরামের রূহ মোবারক সাথে নিয়ে জগতের বিভিন্ন স্থানে পরিভ্রমণের ইখতিয়ার আছে। তাই অনেক আওলিয়া কিরাম তাঁদেরকে দেখেছেন।’’
➤ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বয়ান : ১০/৯৯ পৃষ্ঠা, সূরা মুলক, আয়াত নং ২৯।
মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতুল মাফাতীহ এর بَابُ مَا يُقَالُ عِنْدَ مَنْ حَضَرَهُ الْمَوْتُ শীর্ষক অধ্যায়ের মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-
وَلَا تَبَاعُدَ مِنَ الْأَوْلِيَاءِ حَيْثُ طُوِيَتْ لَهُمُ الْأَرْضُ، وَحَصَلَ لَهُمْ أَبْدَانٌ مُكْتَسَبَةٌ مُتَعَدِّدَةٌ، وَجَدُوهَا فِي أَمَاكِنَ مُخْتَلِفَةٍ فِي آنٍ وَاحِدٍ، ـ
-‘‘ওলীগণ একই মুহূর্তে কয়েক জায়গায় বিচরণ করতে পারেন। একই সময়ে তারা একাধিক শরীরের অধিকারীও হতে পারেন।’’
➤আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত চতুর্থ খন্ড, পৃ- ১০১ হাদিস নং-১৬৩২
তাই এক সময়েই বহু জায়গায় মিলাদ মাহফিল হয় ওলীগণ যদি একাধিক শরীরে বহু জায়গায় যেতে পারেন তাহলে রাসূল (ﷺ) যেতে পারবেন না কেন? বরং তার সাথে কোন তুলনাই হতে পারে না ? শিফা শরীফে ইমাম কাযী আয়ায আল-মালেকী (رحمة الله) লিখেন,
قَالَ: إِنْ لَمْ يَكُنْ فِي الْبَيْتِ أَحَدٌ فَقُلْ السَّلَامُ عَلَى النَّبِيِّ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَى عِبَادِ اللَّهِ الصَّالِحِينَ ـ
-‘‘যে ঘরে কেউ না থাকে, সে ঘরে (প্রবেশের সময়) বলবেন, হে নবী আপনার প্রতি সালাম, আপনার উপর আল্লাহর অশেষ রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক।’’ ➤ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা তাহরিফে হুকুকে মোস্তফা : ২/৪৩ পৃষ্ঠা,
এর ব্যাখ্যায় আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) শরহে শিফা গ্রন্থে লিখেন-
أي لأن روحه عليه السلام حاضر في بيوت أهل الإسلام
-‘‘কেননা, নবী (ﷺ) এর পবিত্র রুহ মুসলমানদের ঘরে ঘরে বিদ্যমান আছেন।’’
➤আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী শরহে শিফা : ২/১১৮ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইসলামিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
১৬. রাসূল (ﷺ) এর দৃষ্টিতে সব কিছু হাযির ও নাযিরঃ
আমরা কি করি না করি তিনি তা রওজা শরিফ থেকে অবলোকন করেন। ইতোপূর্বে আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) এর হাদিস বর্ণনা করেছিলাম, সেখানে রয়েছে রাসূল (ﷺ) আমাদের ভালো-খারাপ সব কাজ তিনি দেখতে পান। এ বিষয়ে আমরা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে,
إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ قَدْ رَفَعَ لِيَ الدُّنْيَا فَأَنَا أَنْظُرُ إِلَيْهَا وَإِلَى مَا هُوَ كَائِنٌ فِيهَا إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ كَأَنَّمَا أَنْظُرُ إِلَى كَفِّي هَذِهِ،.
-‘‘আল্লাহ তা’য়ালা আমার সামনে সারা দুনিয়াকে তুলে ধরেছেন। তখন আমি এ দুনিয়াকে এবং এতে কিয়ামত পর্যন্ত যা’ কিছু হবে এমনভাবে দেখতে পেয়েছি, যেভাবে আমি আমার নিজ হাতকে দেখতে পাচ্ছি।’’
➤ ইমাম আবু নুঈমঃ হুলিয়াতুল আউলিয়াঃ ৬/১০১ পৃষ্ঠা, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তীঃ খাছায়েসুল কোবরাঃ ২/১৮৫ পৃষ্ঠা, ইমাম তাবরানীঃ মু’জামুল কবীরঃ ১/৩৮২ পৃষ্ঠা, মুত্তাকী হিন্দিীঃ কানযুল উম্মালঃ ১১/৪২০ হাদিসঃ ৩১৯৭১, ইমাম কুস্তালানীঃ মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়াঃ ৩/৯৫ পৃষ্ঠা, মুত্তাকী হিন্দীঃ কানযুল উম্মালঃ ১১/১৩৭৮ হাদিসঃ ৩১৮১০, হায়সামীঃ মাযমাউদ যাওয়াহিদঃ ৮/২৮৭ পৃষ্ঠা, (এ হাদিসটির সনদের ব্যাপারে অনেক বাতিলপন্থী আপত্তি তুলেছেন। তাদের আপত্তির দাঁতভাঙা জবাব সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হাদিস শাস্ত্রের উপর গবেষনামূলক গ্রন্থ ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডের ৫০৭-৫০৮ পৃষ্ঠা, দেখুন।)
হযরত ছাওবান (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
إِنَّ اللهَ زَوَى لِي الْأَرْضَ، فَرَأَيْتُ مَشَارِقَهَا وَمَغَارِبَهَا،.
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালা আমার সম্মুখে গোটা পৃথিবীকে এমনভাবে সঙ্কুচিত করে দিয়েছেন যে, আমি পৃথিবীর পূর্বপ্রান্ত ও পশ্চিমপ্রান্ত সমূহ স্বচক্ষে অবলোকন করেছি।’’
➤মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ৪/২২১৬ হাদিসঃ ২৮৮৯, আবু দাউদঃ আস-সুনানঃ কিতাবুল ফিতানঃ ৪/৯৫ হাদিসঃ ৪২৫২, ইমাম আহমদঃ আল-মুসনাদঃ ৫/২৮৪ হাদিসঃ ২২৫০, আবু দাউদঃ আস-সুনানঃ ৪/৯৭ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৪২৫২, তিরমিজীঃ আস-সুনানঃ হাদিসঃ ২১৮২, নাসায়ীঃ সুনানে কোবরাঃ হাদিসঃ ১৬২৭, ইবনে হিব্বানঃ আস-সহীহঃ ১৬/ হাদীসঃ ৭২৩৬, ইবনে মাজাহঃ আস-সুনানঃ হাদীসঃ ৩৯৫২, খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ৪/৩৫৪ পৃষ্ঠা, হাদীসঃ ৫৭৫০
১৭.রাসূল (ﷺ) এর রওজা জিয়ারত একটি বরকতময় আমল:
কেননা তাঁর রওজা জিয়ারত পূর্নাঙ্গ বিশ্বাস স্থাপন করে করলে মু‘মিনের জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- مَنْ زَارَ قَبْرِي وَجَبَتْ لَهُ شَفَاعَتِي -‘‘যে আমার রওজা যিয়ারত করবে তার জন্য আমার শাফায়াত ওয়াজিব।’’
➤ দারেকুতনী, আস্-সুনান, ৩/৩৩৪ পৃষ্ঠা, হাদিস: ২৬৯৫, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- ১৪২৪হিজরি।
এ হাদিস থেকে দূর থেকে সফর করে রওযা যিয়ারতের বৈধতা প্রমাণ হয়।
➤ এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডের ৪২৩-৪৪০ পৃষ্ঠা, দেখুন।
১৮. হুযুর (ﷺ) এর শাফায়াত সত্যঃ
হাশরে তিনি শুধু উম্মতের সগীরা গুনাহের জন্য নয়, বরং তাঁর উম্মতের কবীরাহ গুনাহের জন্যই শাফায়াত করবেন। হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- شَفَاعَتِي لِأَهْلِ الْكَبَائِرِ مِنْ أُمَّتِي -‘‘আমি আমার উম্মতের কবীরাহ গুনাহের জন্য সুপারিশ করবো।’’
➤আবু দাউদ, আস্-সুনান, ৪/২৩৬ পৃষ্ঠা, হাদিসঃ ৪৭৩৯, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- ১৪২৪হিজরি। আলবানীও সনদটিকে সহিহ বলেছেন।
এ হাদিসটি অনেক সাহাবায়ে কেরাম বর্ণনা করেছেন।’’ ➤এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ২য় খন্ড দেখুন।
১৯. হাশরে শুধু নবীজী শাফায়াত করবেন শুধু তাই নয়, বরং রাসূল (ﷺ) আরও অনেককে সুপারিশ করার ক্ষমতা দিবেন।
হযরত উসমান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান-
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَشْفَعُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ثَلَاثَةٌ: الْأَنْبِيَاءُ، ثُمَّ الْعُلَمَاءُ، ثُمَّ الشُّهَدَاءُ
-‘‘কিয়ামতের ময়দানে তিন ধরনের মানুষই সুপারিশ করবে, নবীগণ, তারপর আলেমগণ এবং তারপর আল্লাহর রাস্তায় শহীদগণ।’’
➤ ইমাম ইবনে মাজাহ : আস-সুনান : ২/১৪৪৩ পৃষ্ঠা, হাদিস : ৪৩১৩, ইমাম জালালুদ্দীন সুয়তী : জামেউস-সগীর : ২/৭১৪ পৃষ্ঠা, হাদিস : ১০০১১, আহলে হাদিস আলবানী : দ্বঈফাহ : হাদিস : ১৯৭৮, আযলূনী : কাশফুল খাফা : ২/৩৬৫ পৃষ্ঠা, হাদিস : ৩২৫৯, খতিব তিবরিযী : মেশকাত : বাবুল হাওজওয়া শাফায়াত : ৩/৩১৮ পৃষ্ঠা, হাদিস নং : ৫৬১১, বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ২/২৬৫ পৃষ্ঠা, হাদিস : ১৭০৭, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১০/১৫৯ পৃষ্ঠা, হাদিস : ২৮৭৭০
বিভিন্ন হাদিসে আরও অনেক লোকদের বর্ণনা রয়েছে। ➤এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ২য় খন্ড দেখুন।
উক্ত হাদিসটিকে নবম শতাব্দীর মুজাদ্দেদ ইমাম হাফেয জালালুদ্দীন সুয়ূতি বলেন হাদিসটি “হাসান”। অনুরূপভাবে আল্লামা আযলূনী, ইমাম বায়হাকীও গ্রহণযোগ্য বলে মেনে নিয়েছেন।
২০.রাসূল (ﷺ)‘র আগমনের দিনে ঈদ উদ্যাপন করা বৈধ:
মহান আল্লাহ তা‘য়ালা নিয়ামত প্রাপ্তির পর তার শোকরিয়া আদায়ের জন্য মহান রব কুরআনে বহুবার তাগিদ দিয়েছেন। আর আল্লাহর বড় অনুগ্রহ বা নিয়ামত হলো রাসূল (ﷺ)। মহান আল্লাহ কুরআনে ইরশাদ করেন-
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ
অনুবাদঃ হে হাবিব! আপনি বলে দিন আল্লাহর অনুগ্রহ (ইলম) ও তার রহমত (রহমাতাল্লিল আলামিন) প্রাপ্তিতে তাদের মু‘মিনদের খুশি উদ্যাপন করা উচিত এবং তা তাদের জমাকৃত ধন সম্পদ অপেক্ষা শ্রেয়।’’
➤সুরা ইউনূছ, আয়াত, ৫৮
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) বলেন-
وَأخرج أَبُو الشَّيْخ عَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا فِي الْآيَة قَالَ: فضل الله الْعلم وَرَحمته مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ الله تَعَالَى (وَمَا أَرْسَلْنَاك إِلَّا رَحْمَة للْعَالمين) (الْأَنْبِيَاء الْآيَة ১০৭)
-‘‘সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আল্লাহর (ফদ্বল) বা অনুগ্রহ দ্বারা ইলমকে এবং (রহমত) দ্বারা নবি করিম (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- হে হাবিব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ব-জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্ররেণ করেছি। (সুরা আম্বিয়া, ১০৭)।’’
➤ সুয়ূতি, তাফসীরে দুররুল মানসূর, ৪/৩৬৭ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
আওলাদে রাসূল (ﷺ) ইমাম আবু জাফর বাকের (رحمة الله) বলেন, এখানে (ফদ্বল) দ্বারাও নবি পাক (ﷺ) কে উদ্দেশ্য।
➤ সুয়ূতি, তাফসীরে দুররুল মানসূর, ৪/৩৬৭ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম আলূসী, তাফসীরে রুহুল মা‘য়ানী, ১১/১৮৩ পৃষ্ঠা, ইমাম তিবরিসী, মাজমাউল বায়ান, ৫/১৭৭-১৭৮ পৃষ্ঠা, হাইয়্যান, তাফসীরে বাহারে মুহিত, ৫/১৭১ পৃষ্ঠা, ইমাম জওজী, তাফসীরে যাদুল মাইসীর, ৪/৪০ পৃষ্ঠা,
তাই বুঝা গেল মহান রব তা‘য়ালাই তার রাসূল কে পাওয়ার কারণে আনন্দ বা ঈদ উদ্যাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।
৬ষ্ঠ অধ্যায়:
খোলাফায়ে রাশেদীনের বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদাঃ
হযরত আবু বকর ও উমর (رضي الله عنه)‘র ব্যাপারে আহলে জামাআতের আক্বীদাঃ
আল্লাহর রাসূল (ﷺ)‘র পরে পৃথিবীতে হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه) এরপর হযরত উমরের মর্যাদা। শীয়াসহ বিভিন্ন বাতিল পন্থীগণ হযরত আলী (رضي الله عنه)‘র প্রতি ভালবাসা দেখাতে গিয়ে শাইখাইনের প্রতি খারাপ অমূলক কথা বার্তা বলে থাকেন এবং দাবি করে থাকেন যে রাসূল (ﷺ)‘র পরে মাওলা আলী (رضي الله عنه)‘ই ছিলেন খিলাফতের উপযুক্ত পুরুষ, আর প্রথম দুই খলিফা কৌশলে ক্ষমতা দখলে নিয়েছিলো। নাউযুবিল্লাহ!
অথচ রাসূল (ﷺ) বারবার বলেছেন যে, আমার পরে তোমরা আবু বকর ও উমরকে অনুসরণ করবে। হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) ও ইরবাদ বিন সারিয়া (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসুল (ﷺ) বলেন-
فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي، وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّين
-‘‘তোমরা আমার সুন্নাত ও আমার চার খলিফার সুন্নাতকে আঁকড়ে ধর।’’
➤ আহমদ, আল-মুসনাদ, ৪/১২৬ পৃষ্ঠা, হাদিস : ১৭২৭৫-৭৬, আবু দাউদ, আস্-সুনান :৫/১৩ পৃষ্ঠা, হাদিস ৪৬০৭, তিরমিযী, আস্-সনান, ৫/৪৩ পৃষ্ঠা, হাদিস : ২৬৭৬, ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, ১/১৭৮ পৃষ্ঠা, হাদিস : ৫, দারেমী, আস্-সুনান, ১/৫৭ পৃ, হাদিস- ৯৫, খতিব তিবরিযী, মিশকাত, কিতাবুল ইতিসাম, ১/৪৫ পৃ, হাদিস- ১৬৫, বায়হাকী, আস্-সুনানুল কোবরা, ১০/১১৪ পৃ, ও শুয়াবুল ঈমান, ৬/৬৭ পৃ, হাদিস- ৭৫১৫-৭৫১৫, বগভী, শরহে সুন্নাহ, ১/১৮১ পৃ, হাদিস- ১০২।
অন্য আরেক বর্ণনায় হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
اقْتَدُوا بِاللَّذَيْنِ مِنْ بَعْدِي أَبِي بَكْرٍ، وَعُمَرَ.
-‘‘আমার পরে তোমরা আবু বকর এবং উমর (رضي الله عنه) কে অনুসরণ করবে।’’
➤সুনানে তিরমিযি, ৬/৫০ পৃ, হাদিস:৩৬৬২ এবং হাদিস:৩৮০৫, সুনানে ইবনে মাযাহ, হাদিস : ৯৭,মুসনাদে আহমদ, হাদিস:২৩৩০৫, বায়হাকী, আস্-সুনানুল কোবরা, ৫/১২ পৃ, এবং ৮/১৫৩ পৃষ্ঠা, হাকেম নিশাপুরী, আল্-মুস্তাদরাক, ৩/৭৫পৃ,
তাই রাসূল (ﷺ) এর এ হাদিসের আদেশ মোতাবেক তাঁদের (চার খালিফার) অনুসরণ করাও আমাদের জন্য সুন্নাত।
হযরত উসমান (رضي الله عنه)‘র ব্যাপারে আহলে সুন্নাতের আক্বীদা
হযরত উসমান (رضي الله عنه) ইসলামের তৃতীয় খলিফা ছিলেন। তার উপরে মুনাফিকরা বিভিন্ন মিথ্যা অভিযোগ তুলেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলো সব তাঁর নামে বানোয়াটি ষড়যন্ত্র ছিল। (ইমাম সুয়ূতী, তারীখুল খোলাফা)
হযরত আলী (رضي الله عنه)‘র ব্যাপারে আহলে সুন্নাতের আক্বীদা
হযরত আলী (رضي الله عنه) একজন ফকীহ সাহাবী। তিনি সর্বপ্রথম অল্প বয়স্কেদের মধ্যে মুসলমান। হযরত আলী (رضي الله عنه) এর মর্যাদা হলো রাসূল (ﷺ)‘র পরে হযরত আবু বকর, উমরের পর এবং এমনকি হযরত উসমান (رضي الله عنه)‘র পরেই তার মর্যাদা। এটাই গ্রহণযোগ্য মত। বর্তমানে শীয়া এবং কিছু ভুয়া নামধারী সুফিরাও এর বিপরীত মত পোষণ করে থাকে। আল্লামা ইবনে কাসির বলেন-
وَكَذَلِكَ عُثْمَانُ كَانَ أَفْضَلَ مِنْ عَلِيٍّ عِنْدَ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ،
-‘‘হযরত উসমান (رضي الله عنه)‘র মর্যাদা হযরত মাওলা আলী (رضي الله عنه)‘র উপরে, এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অভিমত।’’
➤ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮/২০৩ পৃষ্ঠা,
ইমাম খালেদ বিন সালেম নিশাপুরী সুলাইমী (ওফাত.৪১২হি.) বলেন-
أبو الحسنِ يقولُ: عثمانُ بنُ عفَّانَ أفضلُ من عليِّ بنِ أبي طالبٍ باتِّفاقِ جماعةِ أصحابِ رسولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم، هذا قولُ أهلِ السنةِ
-‘‘ইমাম আবুল হাসান আশ‘আরী (رحمة الله) বলেন, হযরত উসমান (رضي الله عنه)‘র মর্যাদা হযরত মাওলা আলী (رضي الله عنه)‘র উপরে, এ বিষয়ে রাসূল (ﷺ)‘র এক জামাত সাহাবিরা একমত পোষণ করেছেন এবং এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অভিমত।’’ ➤সুলামী, সাওয়ালাত লিল দারেকুতনী, ১/২৩৮ পৃষ্ঠা, ক্রমিক:২৫৬
হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) ও হযরত শেরে খোদা মাওলা আলী (رضي الله عنه)‘র মাঝে যুদ্ধ হলো ইজতিহাদি ভূল সিদ্ধান্ত।
আল্লামা ইবনে কাসির (رحمة الله) উল্লেখ করেন, হযরত জারীর (رضي الله عنه) হযরত মুগীরা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, হযরত আলী (رضي الله عنه) এর ওফাতের সংবাদ হযরত আমীরে মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) শুনে (إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ) পড়েছিলেন এবং কেঁদেছিলেন। তার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন যে-
فَقَالَ: وَيْحَكَ إِنَّمَا أَبْكِي لِمَا فَقَدَ النَّاسُ مِنْ حِلْمِهِ وَعِلْمِهِ وَفَضْلِهِ وَسَوَابِقِهِ وَخَيْرِهِ.
-‘‘আফসোস! আমি কাঁদি এজন্যই, মানবজাতি (তাঁর মত) একজন বিচক্ষণ (প্রজ্ঞাবান), জ্ঞানী, মর্যাদাবান, উত্তরসূরী এবং উত্তম ব্যক্তিকে হারালো।’’
➤ ইবনে কাসির, আল-বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮/১৫ পৃষ্ঠা,
পীরানে পীর শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী (رحمة الله) আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বদীদা বর্ণনা করেন এভাবে-
نتولاهم جميعا ولانذكر الصحابة الا بخير
-‘‘আমরা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত সমস্ত সাহাবায়ে কিরামের প্রতি মুহাব্বত পোষণ করি এবং ওনাদেরকে প্রশংসার সাথে স্মরণ করি।’’
➤শায়খ আব্দুল কাদের জিলানী, গুনিয়াতুত ত্বালেবীন, ৮৫ পৃষ্ঠা,
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-
وان صدر من بعضهم بعض ما صدر فى صورة شر فانه كان عن اجتهاد ولم يكن على وجه فساد-
-‘‘যদিওবা কতেক সাহাবা থেকেও সব বিষয়সমূহ প্রকাশ পেয়েছে যেগুলো বাহ্যতঃ দেখতে মন্দ মনে হয়। কিন্তু ওগুলো সব ইজতিহাদের কারণে ছিল ঝগড়া বিবাদের কারণে নয়। (শরহে ফিকহুল আকবার)
সমস্ত সাহাবিরা সত্যের মাপকাঠি বা ন্যায়পরায়ণ ছিলেন
সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি ছিলেন। তারা প্রত্যেকেই আল্লাহ ও তাঁর স্বীয় রাসূলের পূর্ণাঙ্গ অনুসারী ছিলেন। কিছু বিষয়ে ইজতিহাদি ভুল সিদ্ধান্ত হতে পারে। মিশকাত শরীফে বাবে ‘মানাক্বিবে সাহাবা’ অধ্যায়ে রয়েছে,
عن عمر بن الْخطاب قَالَ: وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:أَصْحَابِي كَالنُّجُومِ فَبِأَيِّهِمُ اقْتَدَيْتُمْ اهْتَدَيْتُمْ . رَوَاهُ رزين
-‘‘হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার সাহাবারা হল তারকা সদৃশ। অতএব তোমরা তাদের যে কোন এক জনের হলেও অনুসরণ করবে, তাহলে হেদায়াত লাভ করবে।’’
➤ইমাম আবু রাজীন : তাজরীদ ফিল বাইনাস সিহহাহ : ১/২৮০ পৃষ্ঠা, খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : কিতাবুল মানাকিব : হাদিস : ৬০১৮ এ হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ এর ১ম খন্ডের ২৩৪-২৪১ পৃষ্ঠা, দেখুন।
তাই সাহাবিরাই যদি সুপথপ্রাপ্ত না হন, তাহলে তাদেরকে যারা অনুসরণ করবে তারা কিভাবে সুপথপ্রাপ্ত হবেন? কিতাবের শুরুতে আলোচনা হয়েছে যে উম্মতে মুহাম্মাদীর ৭৩ দলের মধ্যে ৭২ দল জাহান্নামে যাবে শুধু সে দল ছাড়া যে দলের আদর্শ হবে রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবীদের নমুনায়।
সপ্তম অধ্যায়ঃ
অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ আক্বিদার বিবরণ
কবিরাহ গুনাহ এর দরুন কেই কাফের হবে না
সালাফি তথা আহলে হাদিসরা এ বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, বিশেঃষত নামায নিয়ে। অথচ ইমাম যাহাবি (رحمة الله) বলেন- هذا قول أهل السُّنّة والجماعة-‘‘এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা যে কবিরা গুনাহের দরুন (ফাসেক হবে) কেউ কাফির হবে না।’’
➤যাহাবি, তারীখুল ইসলামী, ২৯/১৭২ পৃষ্ঠা, মাকতুবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, কাহেরা, মিশর।
ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) বলেন-
لِأَنَّ مَذْهَبَ أَهْلِ السُّنَّةِ أَنْ لَا يَكْفُرَ أَحَدٌ بِذَنَبٍ
-‘‘আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের মাযহাব হলো কেউ গুনাহে কারণে কাফের হয় না।’’
➤সুয়ূতি, ফাতওয়ায়ে হাদিসয়্যিাহ, ১/৩০২ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
আহলে হাদিসদের মুহাদ্দিস মোবারকপুরী বলেন-
وَقَالَ الْقَاضِي عِيَاضٌ وَهُوَ مَذْهَبُ أَهْلِ السُّنَّةِ وَالْجَمَاعَةِ وَأَمَّا الْكَبَائِرُ فَلَا يُكَفِّرُهَا إِلَّا التَّوْبَةُ
-‘‘ইমাম কাজী আয়ায (رحمة الله) এর এবং আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মাযহাব হল কবিরাহ গুনাহের জন্য কেউ কাফির হবে না; যদিও তা তাওবা ছাড়া মাফ হয় না।’’
➤মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজি, ৩/৩৭৭ পৃষ্ঠা।
তাই নামাযসহ বিভিন্ন ইবাদত কেহ না করলে তাকে কাফির বলা যাবে না; যতক্ষণ না সে এগুলো অস্বীকার না করবে।
আউলিয়ায়ে কেরামের প্রতি বিশ্বাস
নবুওয়াত সমাপ্ত হয়েছে। এরপর কোন নবির সম্ভবনা নেই। কিন্তু বেলায়াত কিয়ামত পর্যন্ত থাকার ফলে হাজার হাজার ওলী হবেন।
১.ওলীদের কারামাত সত্য। আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) বলেন-
كرامات الْأَوْلِيَاء حق عِنْد أهل السّنة وَالْجَمَاعَة خلافًا للمخاذيل الْمُعْتَزلَة والزيدية،
-‘‘ওলীদের কারামাত সত্য, এটাই আহলুস্ সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদা। আর এর বিরোধীগণ বাতিল তথা মুতাযিলা, জায়েদিয়া, মুখাজেল ফিতনার অন্তর্ভুক্ত…।’’ ➤ইবনে হাজার মক্কী, ফাতওয়ায়ে হাদিসিয়্যাহ, ১/৭৮ পৃষ্ঠা, মাকতুবাতুল তাওফিকহিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।
২.বেলায়াতের মূল হলেন নবি। কেননা একজন ব্যক্তি কোন নবির অনুসরণ ব্যতীত ওলী হতে পারেন না। ফলে যাঁর অনুসরণ করা হয়, তিনি অধিক মর্যাবান হবেন এটাই স্বাভাবিক। ইমাম ত্বাহাবী (رحمة الله) বলেন-
وَلَا نُفَضِّلُ أَحَدًا مِنَ الْأَوْلِيَاءِ عَلَى أَحَدٍ مِنَ الْأَنْبِيَاءِ عَلَيْهِمُ السَّلَامُ وَنَقُولُ: نَبِيٌّ وَاحِدٌ أفضل من جميع الأولياء
-‘‘আমরা (আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের অনুসারীরা) কোন ওলীকে নবির উপর ফযিলত তথা মর্যাদা দেইনা। আর আমরা বলি একজন নবি সকল ওলী হতেও অধিক মর্যাদাবান।’’
➤ইমাম তাহাবী, আকিদাতুত তাহাবী, ১/৮৩ পৃষ্ঠা,
সমস্ত বেলায়াত প্রাপ্ত ওলীরা তাদের স্বীয় কবরে জীবিত রয়েছেন
এ বিষয়ে ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) তাঁর লিখিত ‘শরহুস সুদূর’ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোকপাত করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন-
عَن عِكْرِمَة قَالَ قَالَ إِبْنِ عَبَّاس الْمُؤمن يعْطى مُصحفا فِي قَبره يقْرَأ فِيهِ
-‘‘মু‘মিনকে (ওলীদেরকে) তার কবরে কুরআন শরীফ দেয়া হয়। তথায় সে পাঠ করে।’’
➤ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতিঃ শরহুস সুদুরঃ ২৪০পৃ, তিনি ইমাম খাল্লালের “কিতাবুস সুন্নাহ” এর সূত্রে বর্ণনা করেন। এ বিষয়ে তিনি আরও অনেক হাদিস এনেছেন।
তাই বলতে চাই, একজন মু‘মিনের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে ওলীদের অবস্থা কিরূপ হবে? ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি সংকলন করেন-
وَأخرج التِّرْمِذِيّ وَحسنه وَالْحَاكِم وَالْبَيْهَقِيّ عَن إِبْنِ عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا قَالَ ضرب بعض أَصْحَاب النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم خباء على قبر وَهُوَ لَا يحْسب أَنه قبر وَإِذا فِيهِ إِنْسَان يقْرَأ سُورَة الْملك حَتَّى خَتمهَا فَأتى نَبِي الله فَأخْبرهُ فَقَالَ رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم هِيَ المنجية هِيَ الْمَانِعَة تنجيه من عَذَاب الْقَبْر
-‘‘ইমাম তিরিমিযি (رحمة الله) ‘হাসান’ সনদে, ইমাম হাকেম, ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সংকলন করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেনঃ জনৈক সাহাবী এক কবরের উপর তাবু স্থাপন করেন। তিনি জানতেন না এখানে কবর রয়েছে। তিনি শুনতে পেলেন কবর থেকে কোন মানুষ সূরা মুলক তিলাওয়াত করছেন এবং তিনি পূর্ণ সূরাই তিলাওয়াত করলেন। সাহাবী হুযুর (ﷺ) কে এ ঘটনা অবগত করলে তিনি ইরশাদ করেন, এ সূরাটি আযাব প্রতিরোধক ও মুক্তিদাতা।’’
➤(১) ইমাম তিরমিযীঃ আস-সুনানঃ ফাযায়েলে তিলাওয়াতে কুরআনঃ ৫/১৪পৃ, হাদিসঃ ২৮৯০, তিনি বলেন, হাদিসটি হাসান, গরীব। তিনি আরো বলেন, এ বিষয়ে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) এর সূত্রে হাদিস বর্ণিত হয়েছে (২) ইমাম হাকেম নিশাপুরীঃ আল-মুস্তাদরাক, ২/৪৯৮পৃ, (৩) ইমাম বায়হাকীঃ শুয়াবুল ঈমানঃ ৪/১২৫ পৃষ্ঠা, হাদিস : ২২৮০ (৪) সুয়ূতিঃ আল-খাসায়েসুল কোবরাঃ ১/৩৮৯ পৃ, হাদিসঃ ১২১৯, সুয়ূতি বলেন, ইমাম হাকেম সহিহ সনদে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন (৫) ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতীঃ শরহে সুদুরঃ ২৩৯পৃঃ (৬) আলবানীঃ সিলসিলাতুল সহীহাহঃ হাদিস/১১৪০, তিনি বলেন, হাদিসটি সহীহ, হায়সামীঃ মাযমাউদ যাওয়ায়েদঃ ৩/৮৫ পৃষ্ঠা, হাদিস : ৬৭৫৬, বায়হাকী : এছবাতে আযাবিল কুবুর : ১/৯৯ পৃষ্ঠা, হাদিস/১৫০, খতিব তিবরিযী : মিশকাত, ১/৬৬৩ পৃষ্ঠা, হাদিস :২১৫৪
যেহেতু আহলে হাদীসের গুরু আলবানী হাদিসটি সহীহ বলেছেন সেহেতু আহলে হাদিসদের শিক্ষা নেয়া উচিত যারা বলে থাকেন ওলীরা তো দূরের কথা কোন নবীরাও নাকি জীবীত নন। এ বিষয়ে আরও অনেক হাদিসে পাক রয়েছে।
➤ এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (رحمة الله)‘র হাদিস শাস্ত্রের উপর গভেষনামূলক গ্রন্থ শরহে সুদুর এবং আমার লিখা ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’’ ১ম খন্ডের ৫৪৪-৫৫০ পৃষ্ঠা, দেখুন।
চার মাযহাবের ইমামদের প্রতি আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বিদাঃ
এ বিষয়ে আহলে সুন্নাহ এর আক্বিদা হলো চার মাযহাব হক, সকলেই তাদের ইজতিহাদ অনুযায়ী ফাতওয়া প্রদান করেছেন। তাই তাদের দেয়া ইজতিহাদি বিভিন্ন মাসআলা মাসায়েলের সমাধান বা তাদের তাক্বলীদ অনুসরণ করা আমাদের জন্য ওয়াজিব। কিন্তু আকায়েদের ক্ষেত্রে সকল মাযহাব অভিন্ন। এ বিষয়ে আমি কিছুটা কিতাবের শুরুতে ফাতওয়ায়ে শামীর উদ্ধিৃতি দিয়ে আলোকপাত করেছি। চার মাযহাবের উপর ইজমা সংঘটিত হয়েছে। ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী (رحمة الله) বলেন-
لاَ يَكَادُ يُوجَدُ الحَقُّ فِيْمَا اتَّفَقَ أَئِمَّةُ الاجْتِهَادِ الأَرْبَعَةُ عَلَى خِلاَفِه
-‘‘চার ইমাম যে বিষয়ে একমত হয়েছেন, সে বিষয়ের বিপরীত কোনো সত্য খুঁজে পাওয়া যাবে না।’’
➤ যাহাবী, সিয়ারু আলামিন আন্-নুবালা, ৭/১১৭ পৃষ্ঠা, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন।
আহলে হাদিসদের ইমাম ইবনে তাইমিয়া এ প্রসঙ্গে বলেন-
وإن أراد: أني لا أتقيد بها كلها بل أخالفها فهو مخطئ في الغالب قطعا؛ إذ الحق لا يخرج عن هذه الأربعة في عامة الشريعة؛
-‘‘কেউ যদি মনে করে যে, আমি চার মাযহাবের কোনোটিকেই অনুসরণ করব না, সে সুনিশ্চিতভাবে ভ্রান্তিতে নিপতিত রয়েছে। কেননা শরীয়তের অধিকাংশ মাসআলা বিশুদ্ধ ও হক্ব বিষয় এ চার মাযহাবে রয়েছে।’’ ➤ ইবনে তাইমিয়া, আল-মুস্তাদরাক আ‘লা মাজমাউল ফাতওয়া, ২/২৫০ পৃষ্ঠা, (শামিলা), ইবনে তাইমিয়া, ফাতওয়ায়ে মিসরিয়্যাহ লি ইবনে তাইমিয়া, ৮১ পৃষ্ঠা,
আল্লামা যারকাশী (رحمة الله) বলেন-
الدَّلِيلُ يَقْتَضِي الْتِزَامَ مَذْهَبٍ مُعَيَّنٍ بَعْدَ الْأَئِمَّةِ الْأَرْبَعَةِ -‘‘দলিলের দাবি হলো, চার ইমামের পরে তাদের কোনো একটি নির্দিষ্ট মাযহাব অনুসারে চলা জরুরি।’’
➤ যারকুশী, বাহারুল মুহিত ফি উসূলুল ফিকহে, ৮/৩৭৪ পৃষ্ঠা,
ইয়াযিদ সম্পর্কে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অভিমত
ইয়াযিদ কাফির হওয়া সম্পর্কে বিভিন্ন চার মাযহাবের ইমামসহ ও অনেক আকায়েদের ইমামগণের মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) সহ এক জামাত ইমাম তাকে কাফির।
➤ইমাম আলূসী, তাফসীরে রুহুল মা‘য়ানী, সুরা মুহাম্মদ, ১৩/২২৯ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ- ১৪১৫হিজরি।
এবং লা‘নত দেয়ার উপযোগী বলেছেন। ইমাম গায্যালী (رحمة الله) ও তার সাথে কিছু ইমাম তাকে ফাসিক, যালিম বলেছেন। বর্তমান ডা. জাকির নায়েক এবং আহলে হাদিসরা তাকে ঈমানদার হওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। ডা. জাকির নায়েক তার অনেক লেকচারে তাকে ‘রহমাতুল্লাহি আলাইহি’ বলেছেন। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অধিকাংশ ইমাম তাকে কাফির ও লা‘নত দেয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন; আর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ডা. জাকির নায়েকের স্বরূপ উন্মোচন’ এবং প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ২য় খন্ড দেখুন; সেখানে সবিস্তারিতভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।
ইমাম মাহমুদ আলূসী বাগদাদী (رحمة الله) {১২৭০হি.}বলেন-
وأنا أذهب إلى جواز لعن مثله على التعيين ولو لم يتصور أن يكون له مثل من الفاسقين، والظاهر أنه لم يتب، واحتمال توبته أضعف من إيمانه، ويلحق به ابن زياد وابن سعد وجماعة فلعنة الله عز وجل عليهم أجمعين، وعلى أنصارهم وأعوانهم وشيعتهم ومن مال إليهم إلى يوم الدين ما دمعت عين على أبي عبد الله الحسين
-‘‘আমার মতে ইয়াযিদের মত লোককে লা‘নত দেয়া সঠিক, যদিও তার মতো এতো বড় ফাসিকের কথা কল্পনা করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়; আর এটাও স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে সে কখনোই তওবা করেনি; (উপরন্তু) তার তওবা করার সম্ভাবনা তার ঈমান পোষণ করার সম্ভবনার চেয়ে ক্ষীণতর। ইয়াযিদের পাশাপাশি ইবনে যিয়াদ, ইবনে সা‘আদ ও তার দল-বল এতে জড়িত। অবশ্য কেয়ামত দিবস অবধি এবং ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه)-এর জন্যে (মু‘মিনদের) চোখের পানি যতদিন ঝরবে ততোদিন পর্যন্ত আল্লাহর লা‘নত তাদের সবার উপর পতিত হোক; তাদের বন্ধু-বান্ধব, সমর্থক, দলবল এবং ভক্তদের উপরও পতিত হউক!’’
➤ইমাম আলূসী, তাফসীরে রুহুল মা‘য়ানী, সুরা মুহাম্মদ, ১৩/২২৯ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ- ১৪১৫হিজরি।
হাফেজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (ওফাত.৯১১হি.) বলেন-
فأبوا إلا قتله، فقتل وجيء برأسه في طست حتى وضع بين يدي ابن زياد، لعن الله قاتله وابن زياد معه ويزيد أيضًا.
-‘‘তারা (ইয়াযিদ বাহিনী) ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) কে শাহাদাত বরণ বা হত্যা ছাড়া অন্যকিছু মানলো না। তাকে শহীদ করে তাঁর শির মোবারক ইবনে যিয়াদের সামনে একটি থালায় করে আনা হয়। করেন এবং আপনার কর্তিত শির ইবনে যিয়াদের সামনে একটি থালায় করে আনা হয়। আপনাকে যে ব্যক্তি হত্যা করেছে তার উপর আল্লাহর লা‘নত (অভিসম্পাত); আরও লা‘নত ইবনে যিয়াদ ও ইয়াযিদের উপর।’’
➤ইমাম সুয়ূতী, তারীখুল খোলাফা, সুরা মুহাম্মদ, ১৬৭ পৃষ্ঠা, দারু ইবনে হাযম, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ- ১৪১৫হিজরি।
অনুরূপ ইমাম আসকালানী, যাহাবী, ইবনে আসির, ইবনে কাসির, আব্দুল হক মুহাদ্দিস, মোল্লা আলী ক্বারী প্রমুখ তাকে কাফির ও লা‘নত দেয়ার উপযোগী বলেছেন।
➤ যাহাবী, তারিখুল ইসলামী, ৫/৩০ পৃষ্ঠা, ও সিয়ারু আলামিন আন-নুবালা, ৪/৩৭-৩৮ পৃষ্ঠা, ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৮/২৮৩ পৃষ্ঠা, আসকালানী, আল-ইমতা বিল আরবাঈন, ৯৬ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- ১৯৯৭ইং ও তাহযীবুত-তাহযীব, ৬/৩১৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাযহারী, ৫/২১১-২১২ পৃষ্ঠা, ইবনে আসির, তারীখে আল-কামিল, ৩/৪৫০ পৃষ্ঠা, তারীখে তবারী, ৫/২১২ পৃষ্ঠা,
ইয়াযিদের আলোচনা এখানে সংক্ষিপ্ত করা হলো; বিস্তারিত আমার লিখিত উপরে উল্লেখিত কিতাবে পাবেন।
(১ম খন্ড) সমাপ্ত
বি. দ্র. এ প্রথম খন্ডে মাত্র আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সংক্ষিপ্ত আকায়েদের পরিচিতি উল্লেখ করা হল। দ্বিতীয় খন্ডে বাকী বিস্তারিত আকীদার আলোকপাত পাবেন ইনশাআল্লাহ।