কালো জাদু, জাদুবিদ্যা। বিতর্কিত বিষয়টিতে অনেকেই বিশ্বাস রাখেন। সেই বিশ্বাস থেকে অনেকেই যান কথিত জাদুকরদের কাছে। ভণ্ড জাদুকররা সরল মানুষের কাছ থেকেই হাতিয়ে নেয় সর্বস্ব। প্রতারিত হওয়ার পর বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই বিচার চাইতে যান না। দোষ দেন নিজের ভাগ্যকেই। তবে আরব আমিরাতের এক নারী এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। নিজেকে তিনি রক্ষা করেছেন বড় বিপদ থেকে।
এমনই এক ঘটনা তুলে ধরেছে আরব আমিরাতের সংবাদমাধ্যম খালিজ টাইমস।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই দশক আগে ত্রিশোর্ধ ওই নারী কালো জাদুর ফাঁদে পড়েন। এভাবে তিনি কথিত জাদুকরকে চার কোটি দিরহাম দেন। একপর্যায়ে তাকে ফাঁসিয়ে আরও আট কোটি দিরহামের চেক লিখে নেওয়া হয়। এরপর সেই চেকের বিপরীতে অর্থ দাবি করে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন ওই জাদুকর। মামলায় তার জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অবশেষে আদালতের হস্তক্ষেপে তিনি মুক্তি পান।
আলিয়া (ছদ্মনাম) নামে ওই নারী খালিজ টাইমসকে পুরো ঘটনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমি ওই জাদুকরের কথা জানতে পারি। তার সঙ্গে দেখা করি। তিনি যা বলেন সেসব বিশ্বাস করতে শুরু করি। একসময় তার কথামতোই চলতে থাকি।”
তিনি বলেন, “ওই সময় আমি তার সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ করতাম। তিনি নিজেকে অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবি করতেন। অনেক ভবিষ্যদ্বাণী করতেন। অনেক কিছুই মিলে যেত। আমি অবাক হতাম।”
“একপর্যায়ে তিনি আমার কাছ থেকে অর্থ চাওয়া শুরু করেন। আমি তাকে যাতায়াত, হাত খরচ ইত্যাদি দিতে থাকি। তারও চাহিদা বাড়তে থাকে। কখনও নগদ, আবার কখনও চেক দিতাম। এমনকি স্বামীর অ্যাকাউন্টের টাকাও তাকে দিয়েছি। একবারে চার কোটি টাকাও তাকে দিয়েছি।”
“২০১৪ সালে যখন জঙ্গিরা হামলা করে তখন আমার স্বামী বাইরে ছিলেন। জাদুকর জানান, ‘জঙ্গিরা আমার স্বামীকে অপহরণ করেছে। এজন্য আমার কাছ থেকে ২ কোটি ৭০ লাখ দিরহামের চেক ও আট কোটি দিরহামের ঋণপত্র লিখে নেন।’ তিনি জানান, ‘এই অর্থের বিনিময়ে আমার স্বামীকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আমাকে তারা যা বলেছে, আমি তাই করেছি’।”
আরব এই নারী তখনও বুঝতে পারেননি তিনি বড় এক প্রতারণার ফাঁদে পড়তে যাচ্ছেন। ঋণপত্রের কাগজ দিয়ে আলিয়ার কাছে আরও আট কোটি টাকা দাবি করেন ওই জাদুকর। এমনকি পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে মামলাও করেন।
২০১৮ সালের ২১ মার্চ আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন আলিয়া। ১৮ দিন কারাবাসের পর তিনি মুক্তি পান।
আলিয়া বলেন, “ওই জাদুকর আমাকে সোনার ডিম পাড়া হাঁস মনে করে আমাকে ব্যবহার করছিল। তবে তার সবশেষ প্রতারণায় আমি হুঁশ ফিরে পাই।”
এদিকে ঋণগ্রস্ত আলিয়া এরইমধ্যে বিষণ্ণতায় ডুবে যান। তার কাছে ঋণ পরিশোধের অর্থ ছিল না। এমনকি আদালতের ফিও দিতে পারেননি তিনি।
একপর্যায়ে তার পাশে দাঁড়ান হাসান আলী নামে এক আইনজীবী। তিনি মামলাটি ফের তদন্তের দাবি করেন। এরপর বেরিয়ে আসে মূল তথ্য। ওই জাদুকর আলিয়াকে ফাঁসিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেন। আরও অর্থ হাতিয়ে নিতে তিনি আলিয়ার কাছ থেকে কাগজে সাক্ষর নেন। সেটি দিয়েই আলিয়াকে ফাঁসান।
তদন্ত শেষে আলিয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ বাতিল হয়।
হাসান আলী বলেন, “জাদুকর আরেকটি আবেদন করে। তবে সেটি বাতিল হয়। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সুপ্রিম কোর্ট আলিয়ার পক্ষে রায় দেন। তাকে সব অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।”
তিনি বলেন, “সমাজে এমন অনেক প্রতারক রয়েছে। তারা সরল মানুষদের ফাঁসিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এজন্য সবাইকে সচেতন হতে হবে। আর যদি কেউ ফেঁসে যান, তাহলে আইনের আশ্রয় নিতে হবে। উদাহরণ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে তারা আর প্রতারণা না করতে পারে।”
এর আগে, গত সপ্তাহে ৪০০ বছর বয়সী জিন পরিচয় দিয়ে জাদুবিদ্যা অনুশীলনে প্রতারণা করার অভিযোগে সাতজনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫০,০০০ দিরহাম জরিমানা করেন দেশটির একটি আদালত।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের ২০২১ সালের ফেডারেল ডিক্রি-আইন ৩১ অনুযায়ী এমন কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।