আল্লাহ তায়ালা ফরমানঃ-
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَکۡفُرُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ رُسُلِہٖ وَ یُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ یُّفَرِّقُوۡا بَیۡنَ اللّٰہِ وَ رُسُلِہٖ وَ یَقُوۡلُوۡنَ نُؤۡمِنُ بِبَعۡضٍ وَّ نَکۡفُرُ بِبَعۡضٍ ۙ وَّ یُرِیۡدُوۡنَ اَنۡ یَّتَّخِذُوۡا بَیۡنَ ذٰلِکَ سَبِیۡلًا ﴿۱۵۰﴾ۙ
অনুবাদ কানযুল ঈমানঃ- এবং (নিশ্চয়) যারা আল্লাহ্ ও তার রসূলগণকে অমান্য করে এবং চায় যে, আল্লাহ্ থেকে তার রসূলগণকে পৃথক করে নেবে, এবং বলে, ‘আমরা কতেকের উপর ঈমান আনি এবং কতেককে অস্বীকার করি’, আর এটা চায় যে, ঈমান ও কুফরের মাঝখানে অন্য একটা পথ বের করে নেবে; (সূরা নিসা-৫০)
اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡکٰفِرُوۡنَ حَقًّا ۚ وَ اَعۡتَدۡنَا لِلۡکٰفِرِیۡنَ عَذَابًا مُّہِیۡنًا ﴿۱۵۱﴾
অনুবাদ কানযুল ঈমানঃ- এরাই হচ্ছে সত্যি সত্যি কাফির; এবং আমি কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনার শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি। (সূরা নিসা-৫১)
وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِاللّٰہِ وَ رُسُلِہٖ وَ لَمۡ یُفَرِّقُوۡا بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡہُمۡ اُولٰٓئِکَ سَوۡفَ یُؤۡتِیۡہِمۡ اُجُوۡرَہُمۡ ؕ وَ کَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا ﴿۱۵۲﴾
অনুবাদ কানযুল ঈমানঃ- এবং ওই সব লোক, যারা আল্লাহ্ ও তার রসূলগণের উপর ঈমান এনেছে আর তাদের মধ্যে কারো উপর ঈমান আনার ক্ষেত্রে পার্থক্য করে না, অবিলম্বে আল্লাহ্ তাদেরকে তাদের প্রতিদান দেবেন; এবং আল্লাহ্ ক্ষমাশীল দয়ালু। (সূরা নিসা- ৫২)
✔ আল্লাহ তায়ালা আরো বলেনঃ-
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا بِاللّٰهِ وَرَسُوۡلِهٖ
“প্রকৃত মুমিনতো তারাই- যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছে।“ (নূর-৬২)।
☑ উপরের আয়াতগুলো থেকে একথা প্রমাণ হয় যে, ঈমান আনতে হলে এবং ঈমান গ্রহন করে মুমিন হতে হলে আল্লাহ ও রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উভয়ের উপর ঈমান আনতে হবে। আল্লাহ’র একাত্ববাদের স্বীকৃতি দেওয়ার সাথে সাথে রাসুলে আরাবীর রিসালাতের স্বীকৃতি দিতে হবে। এজন্যই মুমিন মুসলমানগণ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ার সাথে সাথেই মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ পড়তে হয়। এবং এ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ একসাথে পড়া এবং লিখা হাদীস দ্বারাও প্রমাণিত।
✔ হাদীসঃ-
نُعَيْمُ الْغِفَارِيُّ بْنُ عَمِّ أبِيْ ذَرٍّ لَه صُحْبَةٌ ذَكَرَه يُوْنُسُ بْنُ بُكَيْرٍ فِيْ زِيَادَاتِ الْمَغَازِيْ وَأخْرَجَه الْحَاكِمُ مِنْ طَرِيْقِ يُوْنُسَ عَنْ يُوْسُفَ بْنِ صُهَيْبٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ عَنْ أبِيْهِ قَالَ إنْطَلَقَ أبُوْ ذَرٍّ وَنُعَيْمُ بْنُ عَمِّ أبِيْ ذَرٍّ وَأنَا مَعَهُمْ يَطْلُبُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ مُسْتَتِرٌ بِالْجَبَلِ فَقَالَ بِه أبُوْ ذَرٍّ يَا مُحَمَّدُ أتَيْنَاكَ لِنَسْمَعَ مَا تَقُوْلُ قَالَ أقُوْلُ لَا إلهَ إلَّا اللهُ مُحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ فَآمَنَ بِه أبُوْ ذَرٍّ وَصَاحبُه- الاصابة ٦/٤٦۳
অনুবাদ: হযরত বুরাইদা বিন হুসাইব (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত, হযরত আবু জার (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) ও তার চাচাতো ভাই নুআইম (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া আলীহি ওয়া সাল্লাম) কে তালাশ করছিলেন আর আমি তাদের সাথে ছিলাম। নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া আলীহি ওয়া সাল্লাম) তখন পাহাড়ে লুকিয়েছিলেন। হযরত আবু জার (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) বললেন: হে মুহাম্মাদ! (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া আলীহি ওয়া সাল্লাম) আমরা আপনার কাছে আপনার কথা শুনতে এসেছি। তখন নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া আলীহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করলেন: আমি তোমাদেরকে لَا إلهَ إلَّا اللهُ مُحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ বলি অর্র্থাৎ, আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া আলীহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তাআলার রসূল। অতঃপর আবু জার (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) ও তার সাথী এ কথার ওপর ঈমান আনলেন। (আল ইসাবা: ৬/৪৬৩, সাহাবী নম্বর- ৮৭৯২)
☑ হাদীসটির স্তর : সহীহ। ইউসুফ বিন সুহাইব ব্যতীত এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই বুখারী/মুসলিমের রাবী। আর ইউসুফ বিন সুহাইব ثقة “নির্ভরযোগ্য”। (তাকরীব: ৮৮৭৬)
✔ হাদীসঃ-
عَنْ أنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلْتُ الجَنَّةَ فَرَأيْتُ في عارِضَتِي الجَنَّةِ مَكْتُوباً ثَلاَثَةَ أسْطُرٍ بالذَّهَبِ السَّطْرُ الأوَّل لاَإلهَ إلا الله محمَّدٌ رَسوُلُ الله والسَّطرُ الثَّانِي ماقَدَّمْنا وَجَدْنا وما أكَلْنا رَبِحْنا وما خَلَّفْنا خَسِرْنا والسَّطْرُ الثَّالِثُ أُمَّةٌ مُذْنِبَةٌ وَرَبٌّ غَفُورٌ. ( رواه ابن النجار في تاريخ بغداد والرافعي في تاريخ قزوين)
অনুবাদঃ- হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া আলীহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন: আমি জান্নাতে প্রবেশ করে জান্নাতের উভয় পাশে স্বর্ণাক্ষরে ৩টি লাইন লেখা দেখলাম।
১ম লাইন : لَا إلهَ إلَّا اللهُ مُحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত কোন মা’বুদ নেই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া আলীহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তাআলার রসূল। ২য় লাইন : যা আমরা আগে পাঠিয়েছি তার প্রতিদান পেয়েছি, যা দুনিয়াতে পানাহার করেছি তা দ্বারা লাভবান হয়েছি। আর যা দুনিয়াতে ছেড়ে এসেছি তাতে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। ৩য় লাইন : উম্মাত গুনাহগার এবং রব ক্ষমাকারী। (জামে’ সগীর: হাদীস নম্বর- ৪১৮৬)
☑ হাদীসটির স্তর : হাসান লিগইরিহী। আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ এবং রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া আলীহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়াতের প্রতি বিশ্বাস প্রকাশের একটি বাক্য হলো لَا إلهَ إلَّا اللهُ مُحَمَّدُ رَّسُوْلُ اللهِ উক্ত বিশ্বাস প্রকাশের আরও অনেক বাক্য রয়েছে। তন্মধ্যে এ বাক্যটি বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত হওয়ার সাথে সাথে উম্মাতের মধ্যে এর ব্যাপক প্রসিদ্ধিও রয়েছে। তাই আমরা এটাকে ঈমানের কালিমা হিসেবে পড়ে থাকি। পূর্ববর্ণিত সহীহ হাদীস ছাড়াও এ কালিমা বর্ণিত হয়েছে:
✔ হযরত হারেস বিন খঝরায (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে #রেফারেন্সঃ-
১) মু’জামে কাবীর লিত তবারানী:৪১৮৮,
২) মু’জামে আওসাত লিত তবারানী:২১৯,
৩) মু’জামে ছগীর লিত তবারানী:৯৪৮,৯৯২)
✔ হযরত উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে- #রেফারেন্সঃ- মু’জামে আওসাত লিত তবারানী:৫৯৯৬ ও ৬৫০২।
✔ হযরত আবু যর (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে #রেফারেন্সঃ- মুসনাদে বাযযার:৪০৬৫ নং হাদীসে। এবং
✔ হযরত ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে #রেফারেন্সঃ- মু’জামে কাবীর-১১০৯৩ নং হাদীসে।
✔ হযরত আনাস বিন মালেক (রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু) থেকে- #রেফারেন্সঃ- জামে’ সগীর: হাদীস নম্বর- ৪১৮৬।
তারপরেও যদি কেউ কালেমায় আল্লাহ রাসুলের নাম পাশাপাশি পড়া যাবেনা লিখা যাবেনা বলে ফাতাওয়া দেয় তারা কোরআন হাদীস অস্বীকারকারী কাফের হয়ে যাবে। কারন, সূরা নিসার-৫০ ও ৫১ নং আয়াতে আল্লাহ নিজে তাদেরকে কাফের বলেছেন যারা আল্লাহ থেকে রাসুলগণকে আলাদা করতে চায়।
আল্লাহ পাক মুসলিম উম্মাহকে বুঝার তাওফিক দান করুক।(আমিন)