মূল: মাহাজ্জা-ডট-কম
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
[Bengali translation of Mahajjah’s article “Unmasking the other villains of Karbala;” translator: Kazi Saifuddin Hossain]
কারবালার ঘটনা রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه وسلم)’এর আহলে বায়ত (রা:) তথা বংশধরবৃন্দের সাথে শী’আহদের বিশ্বাসঘাতকতার সবশেষ দৃষ্টান্ত ছিলো না। ষাট বছর পরে ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)’এর পৌত্র হযরত যায়দ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন (رحمة اللّٰه عليه) উমাইয়া শাসক হিশাম ইবনে আবদিল মালিকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি ৪০,০০০ লোকের কাছ থেকে আনুগত্যের অঙ্গীকার পেয়েছিলেন, যার মধ্যে ১৫০০০ লোকই ছিলো ওই একই কুফাবাসী যারা তাঁর পিতামহের পক্ষত্যাগ (গাদ্দারি) করেছিলো। এই দফায় যুদ্ধ আরম্ভ হবার প্রাক্কালে তারা খামখেয়ালির বশবর্তী হয়ে হযরত যায়দ (رحمة اللّٰه عليه)’এর কাছে সর্ব-হযরত খলীফা আবূ বকর সিদ্দীক্ব ও খলীফা উমর ফারূক্ব (رضي الله عنهما) সম্পর্কে তাঁর মতামত জানতে চায়। তিনি উত্তর দেন: “আমি কখনো শুনি নি আমার পরিবার-সদস্যবৃন্দের কেউ (মানে উর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ কেউ) তাঁদের দু জনের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন; আর তাঁদের সম্পর্কে ভালো ছাড়া কিছু আমি বলি না।” এই উত্তরে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁকে তারা দল বেঁধে পরিত্যাগ করে এ সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে যে, প্রকৃত ইমাম হতে পারেন একমাত্র তাঁরই ভাতিজা হযরত জা’ফর আল-সা’দিক্ব (رحمة اللّٰه عليه)। চল্লিশ হাজার সৈনিকের মধ্য হতে হযরত যায়দ (رحمة اللّٰه عليه)’এর কাছে অবশিষ্ট থাকে মাত্র কয়েক শত। দলত্যাগকারীদের প্রস্থানের সময় তিনি মন্তব্য করেন: “আমি শঙ্কিত যে তারা আমার সাথে তা-ই করেছে, যা তারা ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’এর সাথে করেছিলো।” হযরত যায়দ (رحمة اللّٰه عليه) ও তাঁর ক্ষুদ্র সেনাবাহিনী অসীম সাহসিকতার সাথে যুদ্ধ করেন এবং শাহাদাৎ বরণ করেন। ফলে ১২২ হিজরী সালের ১লা সফর, বুধবার, আহলে বায়ত (রা:)’এর আরেকজন সদস্য কুফাবাসী শী’আহ চক্রের বিশ্বাসঘাতকতার শিকারে পরিণত হন [মুহাম্মদ আবূ যাহরা’, ‘তারীখুল মাযা’হিবিল-ইসলা’মিয়্যাহ’, ৬১৩ পৃষ্ঠা; দারুল ফিকর্ আল-আরবী, কায়রো, এন.ডি.]। এক্ষণে আর কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না তাঁকে পরিত্যাগকারীরা কুফাবাসী শী’আহ ছিলো কী ছিলো না।
সহস্র সহস্র শী’আহ যারা হযরত যায়দ (رحمة اللّٰه عليه)’কে পরিত্যাগ করেছিলো, তাদের দ্বারা হযরত জা’ফর সাদিক্ব (رحمة اللّٰه عليه)’কে নিজেদের প্রকৃত ইমাম বিবেচনা করার বাস্তবতা পরিস্ফুট করে যে, তারা মোটামুটি ইসনা’ আশারী গোষ্ঠী কিংবা বর্তমানকালের ইমামী বা জা’ফরী শিয়া সম্প্রদায়ের মতোই একটি দল ছিলো। ইমাম জা’ফর সাদিক্ব (رحمة اللّٰه عليه)’এর এতো এতো ভক্ত-অনুসারী থাকা সত্ত্বেও কেন তাহলে তিনি উমাইয়া বা আব্বাসীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন নি? এই প্রশ্নের উত্তর একটি বর্ণনায় প্রদান করা হয়েছে, যা লিপিবদ্ধ আছে আবূ জা’ফর আল-কুলাইনী’র বিশাল ‘আল-কা’ফী’ পুস্তকে। এ বইটি শিয়াদের হাদীস সংকলনগুলোর মাঝে অদ্বিতীয় মর্যাদা ভোগ করে থাকে। বর্ণিত আছে:
সুদাইর আল-সায়রাফী বলেন: আমি আবূ আবদিল্লাহ (মানে ইমাম জা’ফর সাদিক্ব- رحمة اللّٰه عليه)’এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁকে বলি, “আল্লাহর কসম, আপনি অস্ত্র সংবরণ করে থাকতে পারেন না।” তিনি প্রশ্ন করেন, “কেন?” আমি উত্তর দেই, “কারণ আপনার এতো এতো সমর্থক ও সাহায্যকারী (শী’আহ)। আল্লাহর শপথ, যদি আমীরুল মো’মেনীন হযরত আলী (كرم اللّٰه وجهه) আপনার মতো এতো বিশাল সংখ্যক শী’আহ ও সমর্থক পেতেন, তাহলে তাইম (হযরত আবূ বকরের গোত্র) ও আদী (হযরত উমরের গোত্র) ও রকম পরিকল্পনা দ্বারা কখনোই তাঁর ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারতেন না।” তিনি জিজ্ঞেস করেন, “আর তাদের সংখ্যা কতো হতে পারে, ওহে সুদাইর?” আমি বলি, “এক শ হাজার (মানে এক লাখ)।” তিনি প্রশ্ন করেন, “এক শ হাজার?” আমি উত্তর দেই, “জি, এবং দুই শ হাজার (মানে দু লাখ)।” তিনি আবার প্রশ্ন করেন, “দুই শ হাজার?” আমি উত্তর করি, “জি, এবং দুনিয়ার অর্ধেক।” ইমাম জা’ফর সাদিক (رحمة اللّٰه عليه) নিশ্চুপ থাকেন। এরপর তিনি বলেন, “তুমি কি আমাদের সাথে এয়ানবু বন্দরে আসবে?” আমি হ্যাঁ-সূচক জবাব দেই। তিনি একটি খচ্চর ও একটি গাধাকে জিন পরাতে আদেশ করেন। আমি দ্রুত গাধার পিঠে চড়ে বসি, কিন্তু তিনি বলেন, “সুদাইর, তুমি বরং আমাকে গাধার পিঠে চড়তে দেবে কি?” আমি বলি, “খচ্চর অনেক শোভনীয় এবং অভিজাতও।” কিন্তু তিনি বলেন, “গাধা আমার কাছে বেশি আরামদায়ক।” এরপর আমি সওয়ার থেকে নেমে যাই। তিনি তাতে চড়েন, আর আমি খচ্চরে উঠে বসলে আমরা চলা শুরু করি। নামাযের সময় আগমন করলে তিনি বলেন, “সুদাইর, নামো। চলো আমরা নামায আদায় করি।” এরপর তিনি মন্তব্য করেন, “এই মাটি শেওলা আবৃত; এখানে নামায আদায় করা জায়েয নেই।” এমতাবস্থায় আমরা সওয়ারে চড়ে এগোতে থাকি যতোক্ষণ না আমরা এমন স্থানে পৌঁছুই যেখানকার মাটি লাল। তিনি (সেখানকার) মেষচারক বালকটির দিকে তাকিয়ে বলেন, “সুদাইর, আল্লাহর কসম, এখানে যে পরিমাণ ভেড়া আছে, আমার যদি সে সংখ্যক শী’আহ থাকতো, তাহলে অস্ত্র সংবরণ করা আমার জন্যে গ্রহণযোগ্য হতো না।” অতঃপর আমরা সওয়ার থেকে নেমে নামায আদায় করি। আমাদের নামায শেষ হলে আমি মেষ গণনার উদ্দেশ্যে ফিরে তাকাই। সেখানে (মাত্র) সতেরোটি ভেড়া ছিলো। [আল-কুলাইনী, ‘আল-কা’ফী’ (উসূল), ২য় খণ্ড, ২৫০-২৫১ পৃষ্ঠা (দারুল্ আদওয়া, বৈরুত, ১৯৯২]
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা ইমাম জা’ফর সাদিক্ব (رحمة اللّٰه عليه)’কে তাঁর অনুসারী দাবিদারদের সম্পর্কে এমন কিছু শিক্ষা দিয়েছিলো, যা বর্তমানকালের শিয়া গোষ্ঠী আজো অস্বীকার করে চলেছে: আর তা হলো, রাসূলুল্লাহ (صلى اللّٰه عليه وسلم)’এর আহলে বায়ত তথা পরিবার-সদস্যদের কষ্টভোগ ও দুর্ভাগ্যের পেছনে শী’আহ চক্রের ভূমিকা তাঁদের বহিঃশত্রুদের চেয়ে কোনো অংশে কম ছিলো না, যদি বেশি না হয়ে থাকে। অতএব, এটা আশ্চর্যের কোনো বিষয় নয় যে, ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’এর পরে (শিয়াদের) ধারণাকৃত ইমামদের কেউই তাঁদের সময়কার শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের চেষ্টা করেন নি। কারবালা তাঁদেরকে শিক্ষা দিয়েছিলো ওই সব লোকের চপলতা (গাদ্দারি) ও বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে, যারা তাঁদের শী’আহ (সাহায্যকারী) দাবি করেছিলো। তাদেরই সম্পর্কে ইমাম জা’ফর সাদিক্ব (رحمة اللّٰه عليه) হতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: “কেউই আমাদের প্রতি এতোখানি ঘৃণা পোষণ করে না, যেমনটি করে থাকে আমাদের প্রতি প্রেম-ভক্তির দাবিদার-বর্গ” [আবদুল্লাহ আল-মা’মাক্বা’নী, ‘মিক্ববা’স আল-হিদা’য়া’, ২য় খণ্ড, ৪১৪ পৃষ্ঠা (মু’আস-সাসাত আ’লে আল-বায়ত লি-ইহইয়া আত তুরা’স্, বৈরুত, ১৯৯১); ‘রিজা’ল আল-কাশশী’ হতে উদ্ধৃত]। বর্ণিত আছে যে ইমাম জা’ফর সাদিক্ব (رحمة اللّٰه عليه) আরো বলেন: “মোনা’ফিকূন-বর্গের প্রতি আয়াত আল্লাহতা’লা অবতীর্ণ করেন নি, শুধু শী’আহ-তন্ত্র প্রচারকবর্গ ছাড়া” (মানে তাদেরই উদ্দেশ্যে আয়াতগুলো নাযেলকৃত) [প্রাগুক্ত ২য় খণ্ড, ৪০৭ পৃষ্ঠা]।
ইমাম হুসাইন (رضي اللّٰه عنه)’এর বড় ভাই ইমাম হাসান (رضي اللّٰه عنه)-ও ইতিপূর্বে কুফাবাসীদের বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছিলেন। বিখ্যাত শিয়াপন্থী লেখক আবূ মানসূর আত্ তাবারসী নিজ ‘আল-এহতেজা’জ’ পুস্তকে সাইয়্যেদুনা ইমাম হাসান (رضي اللّٰه عنه)’এর নিম্নোক্ত মন্তব্যটি সংরক্ষণ করেন: “আল্লাহর কসম, আমি মনে করি আমার শী’আহ (সাহায্যকারী) দাবিদার এসব লোক থেকে আমীরে মু’আবিয়া (رضي الله عنه) আমার জন্যে অধিকতর শ্রেয়।” [আবূ মানসূর তাবারসী, ‘আল-এহতেজা’জ’, ২য় খণ্ড, ২৯০-২৯১ পৃষ্ঠা (মু’আস-সাসাত আল-আ’লামী, বৈরুত, ১৯৮৯]
সাইয়্যেদুনা ইমাম হাসান (رضي اللّٰه عنه) যখন তাঁর তথাকথিত শী’আহ গোষ্ঠীর চপলতায় অতিশয় ক্রুদ্ধ হন, তখন তিনি আমীরে মু’আবিয়া (رضي اللّٰه عنه)’এর সাথে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করার সিদ্ধান্ত নেন। কেউ একজন আমীরে মু’অবিয়া (رضي الله عنه)’এর সাথে শান্তি স্থাপনের ফলে শী’আহ চক্রকে অপমানিত করা হয়েছে মর্মে প্রতিবাদ করলে ইমাম হাসান (رضي اللّٰه عنه) জবাব দেন:
আল্লাহর কসম, আমি তাঁর (আমীরে মু’আবিয়া – رضي الله عنه)’এর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি অন্য কোনো কারণে নয়, বরং এ কারণে যে আমি কোনো সমর্থক খুঁজে পাইনি। আমি যদি সমর্থক খুঁজে পেতাম, তাহলে তাঁর সাথে রাত-দিন লড়তাম যতোক্ষণ না আল্লাহ আমাদের মাঝে (কারো পক্ষে) সিদ্ধান্ত নিতেন। কিন্তু আমি কুফাবাসীদের জানি এবং চিনি। তাদের ব্যাপারে আমার অভিজ্ঞতা আছে। তাদের মধ্যে মন্দ লোকেরা আমার জন্যে উত্তম নয়। তাদের নেই কোনো বিশ্বস্ততা/আনুগত্য; নেই কথা ও কাজে কোনো সততা বা ন্যায়পরায়ণতা। তাদের মধ্যে রয়েছে মতপার্থক্য। তারা দাবি করে তাদের অন্তর আমাদের (মানে আহলে বায়তের) প্রতি নিবেদিত, অথচ তাদের তরবারি আমাদের বিরুদ্ধে রয়েছে উন্মুক্ত, কোষমুক্ত। [আল-কুলাইনী, ‘রওদা’তুল কা’ফী’, ৮ম খণ্ড, ২৮৮ পৃষ্ঠা]
ইমাম মূসা কা’যিম (رحمة الله عليه), যিনি ইমাম জা’ফর সাদিক্ব (رحمة الله عليه)’এর পুত্র ও শিয়াদের ধারণাকৃত সপ্তম ইমাম, তিনি শী’আহ গোষ্ঠী সম্পর্কে নিচের বর্ণনাটি প্রদান করেন:
আমার শী’আহ (সাহায্যকারীদের) সম্পর্কে যদি সত্যি আমাকে মূল্যায়ন করতে হয়, তাহলে আমি তাদেরকে পেয়েছি ভণ্ড বা ভানকারী হিসেবে। আমি তাদেরকে পরীক্ষায় ফেল্লে কেবল ধর্মত্যাগী (মুরতাদ্দ) হিসেবেই পাবো। আমি তাদেরকে যাচাই-বাছাই করলে হাজারে কেবল একজনকে (খাঁটি হিসেবে) পাবো। আর আমি তাদেরকে তুষ বাছাই করলে স্রেফ মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে পাবো যারা সত্যি আমার (অনুসারী)। তারা বরাবরই গদির ওপর বসে এ কথা বলে আসছে – “আমরা ইমামে আলী (كرم الله وجهه)’এর শী’আহ/সাহায্যকারী।”
আজকে আশূরা’কে (১০ই মহর্রমকে) যদি (ন্যায়ের) সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার দিবস হিসেবে স্মরণ করতে হয়, তাহলে এ দিনটিকে আমাদের বিশ্বাসঘাতকতা ও দলত্যাগের দিবস হিসেবেও স্মরণ করতে হবে। যখন এয়াযীদ, উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ, উমর বিন সা’আদ ও শিমর ইবনে যিল জওশানের নামগুলো উচ্চারিত হবে এবং তাদের স্মৃতির প্রতি অভিসম্পাত দেয়া হবে, তখন যেনো কুফাবাসী শী’আহদের বিশ্বাসঘাতকতার কথাও আমরা ভুলে না যাই। শিয়া গোষ্ঠী কর্তৃক তাদের আশূরা অনুষ্ঠানে একটি বিষয়ের পুনঃপ্রবর্তন দীর্ঘকাল বাকি পড়েছে, আর তা হলো তওওয়াবূনের প্রথম স্মারক অনুষ্ঠানের অংশটি। সেই হারানো অংশটি হচ্ছে সাইয়্যেদুনা ইমাম হুসাইন ইবনে আলী (رضي الله عنه)’এর পবিত্র রক্ত ঝরানোতে ইবনে যিয়াদ, এয়াযীদ ও অন্যান্যদের পাশাপাশি শী’আহ’দের নিজেদেরও অপরাধ স্বীকার করা।
*সমাপ্ত*
[রেফারেন্স: এই ইতিহাসভিত্তিক গবেষণার অধিকাংশ তথ্য-উপাত্ত ইবনে কাসীরের ‘আল-বেদায়াহ ওয়ান্ নেহায়াহ’ পুস্তক হতে গ্রহণ করা হয়েছে। আবদুর রাযযাক্ব আল-মূসাভী আল-মুক্বার্রম রচিত ‘মাক্বতাল আল-হুসাইন’ (৫ম সংস্করণ, প্রকাশক- মাকতাবাহ বাসীরাতী, ক্বুম, ১৩৮২ হিজরী) শীর্ষক শিয়া ইতিহাসগ্রন্থেরও সহায়তা নেয়া হয়েছে]