একমুষ্ঠি বা তার অধিক দাঁড়ি: এক মুষ্ঠির নিচে দাঁড়ি রাখা কি হারাম? দাঁড়ি কাটা, ছাঁটা, ছোট রাখা কি যায়?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

১.
একমুষ্ঠি বা তার অধিক দাঁড়ি:
এক মুষ্ঠির নিচে দাঁড়ি রাখা কি হারাম?
দাঁড়ি কাটা, ছাঁটা, ছোট রাখা কি যায়?
—–

সতর্কতা: এই লেখার সিরিজের বিষয়বস্তু দাঁড়ি কাটা বা ছাঁটাকে উৎসাহিত করা নয়। বরং পোস্টের লেখক দাঁড়ি রাখাকে নিজের ও অন্যর জন্য অত্যন্ত উচ্চ মর্যাদার বিষয় ও অত্যন্ত ভালবাসার বিষয় এবং অত্যন্ত সওয়াবের বিষয় হিসাবেই দেখে।
পোস্টের বিষয় শুধু এটুকু: যুগে যুগে ইসলামের অনেক পথপ্রদর্শক দাঁড়ি ছোট করে রেখেছেন, তাঁদের সম্মান বা গ্রহণযোগ্যতার উপর প্রশ্ন তোলা ইসলামের ধারাবাহিকতার উপর ও ইসলামের অস্তিত্বের উপর প্রশ্ন তোলারই নামান্তর। সীমালংঘন।
আমি সব সময়েই ইসলামে প্রচলিত পারস্পরিক সহনশীলতা ও উদারতা ও প্রচলিত সত্য কিন্তু ভিন্নমতের পক্ষে কথা বলি  এমনকি যদি আমি সে মতের না-ও হই। এ কাজটা আমি এজন্যই করি, যেন আল্লাহ্’র রাসূল দ.’র কোন উম্মত নাহকভাবে অপবাদের শিকার না হন।
সব সময় ভিন্ন কিন্তু যুগে যুগে গৃহীত মতের পক্ষে কন্ঠ উচু করি তার মানে এই নয় যে ব্যক্তিগতভাবে আমি সেসব মত ধারণ করি। বরং যেহেতু সেসব মত যাঁরা ধারণ করেন, তারাও ইসলাম থেকেই সেসব মত পেয়েছেন, তাই তাদের পক্ষ নিয়ে কথা বলা ইসলামের পক্ষ নিয়েই কথা বলা এবং তাদের প্রতি অপবাদ মুখে দেয়া ইসলামের মহান রাসূল দ.’র প্রতি অপবাদ মুছে দেয়ারই নামান্তর।

আমার কথা সব সময় একটাই, যা ইসলামে স্বীকৃত ও গৃহীত, তা যদি আমাদের অতি প্রচলিত মত না-ও হয়, তবু আমাদের সেসব স্বীকৃত ও গৃহীত মতকে উদারভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। কেননা, এটা আল্লাহ্’র আদেশ, তোমরা আল্লাহ্’র রশি শক্ত করে ধরো এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল দ.’র আদেশ, মতভেদ করার বদলে একমত হওয়াই উম্মাহ্’র সেবা।

আমি সারা জীবন ইসলামে স্বীকৃত কিন্তু সাধারণভাবে অপ্রচলিত বিষয়গুলোর পক্ষে কথা বলেছি কারণ ওই স্বীকৃত বিষয়গুলো যারা ফলো করেন, তাদের উপর যুলম হচ্ছে তাদের ‘ভুল পথচারী’ বলার মাধ্যমে। একজন মুসলিম ইসলাম থেকে কিছু পেয়ে সেটা অনুসরণ করবে, আর আমরা তার উপর ভুলের ফতোয়া ছেড়ে দিয়ে ইসলামের ভিতর থেকে পাওয়া কথাকে অনৈসলামিক বলব- এমন যুলমের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সব সময়েই সোচ্চার হতে হবে।

ইসলাম যুলম করার জন্য আসেনি বরং যুলম মেটানোর জন্য এসেছে। ইসলাম মতভেদ তৈরির জন্য আসেনি বরং মতভেদের মধ্যে যত সত্য আছে সব মিলে একসাথে অগ্রহসর হবার জন্য এসেছে।
২.
একমুষ্ঠি বা তার অধিক দাঁড়ি:
এক মুষ্ঠির নিচে দাঁড়ি রাখা কি হারাম?
দাঁড়ি কাটা, ছাঁটা, ছোট রাখা কি যায়?
—–

ইমাম আল খারাশি র. বলেন, দাঁড়ি তা যা থুতনি ও তার আশপাশে থাকে। তিনি এ যুক্তি এনেছেন,  লাহ্-ইয়াইন এ যা বাড়ে: লেহ্-ইয়া বা দাঁড়ি বাড়ে লাহ্-ইয়াইন বা নিম্নচোয়ালের উপর।

এক মুঠ বা তারচে বেশি লম্বা দাঁড়ি রাখার নি:সন্দেহতা:
—–
এক মুষ্ঠি বা তারচে বেশি দাঁড়ি রাখা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র দাঁড়ির সাথে সাদৃশ্য। এটা নি:সন্দেহে সুন্নাহ্ এবং এই সুন্নাহ্ কে যে খারাপ মনে করবে নি:সন্দেহে সে পাপিষ্ঠ। এমনকি রাসূল দ. এভাবে রেখেছেন তা জানার পরও এক মুষ্ঠির বেশি দাঁড়ি রাখাকে যে মন থেকে অপছন্দ করে সে নি:সন্দেহে রাসূল দ.’র পছন্দকে অপছন্দ করলো যা অত্যন্ত গরহিত।

এক কথায়, এক মুষ্ঠির অধিক দাঁড়ি রাখা বা দাঁড়ি ছেড়ে দেয়া ভাল- এ বিষয়ে কোন দ্বিমতের কোন সুযোগ নেই। এটা একটা শ্রদ্ধাস্পদ বিষয়।

এক মুঠ বা তারচে বেশি লম্বা দাঁড়ি রাখার পক্ষে রুলিং (ফতোয়া/মাসআলা) সমূহের প্রতি সমর্থন:
—–
কেউ এক মুঠের বেশি দাঁড়ি রাখাকে ওয়াজিব মনে করেন, কেউ সুন্নাতে মুআক্কাদা মনে করেন, কেউ মুসলিম হিসাবে পুরুষদের এটুকু রাখাকে নৈতিক কর্তব্য মনে করেন, কেউ কেউ এও মনে করেন যে, এক মুঠের কম দাঁড়ি থাকলে গুনাহ্ হয়। এই মতগুলো যারা ধারণ করেন, তাদের এই মত ধারণের পেছনে অবশ্যই শক্তিশালী যুক্তি ও দলিল রয়েছে।

এই মত ও যুক্তিগুলো ইসলাম থেকেই এসেছে।
এই মত ও যুক্তিগুলোকে নিজের জন্য যে কেউ প্রযোজ্য ধরে নিতে পারেন। এখানেও আমাদের কোন দ্বিমত নেই- কেননা যা ইসলামের ক্ল্যাসিকাল ধারাতে প্রচলিত তার সবই শ্রদ্ধার বিষয়।

৩.
একমুষ্ঠি বা তার অধিক দাঁড়ি:
এক মুষ্ঠির নিচে দাঁড়ি রাখা কি হারাম?
দাঁড়ি কাটা, ছাঁটা, ছোট রাখা কি যায়?
—–

দাঁড়ি কাটা, ছাঁটা, ছোট রাখাও ইসলামিক ইতিহাস ও ধারাক্রমের অন্তর্ভুক্ত, এটা দ্বীনের বাইরে নয়:
—–

এই উম্মাহ্’র উলামা ও ফুক্বাহা’র অনেকেই যুগে যুগে এক মুষ্ঠির কম দাঁড়ি রেখেছেন এবং তা কোন ক্ষতিকর বিষয় নয় তা শিক্ষা দিয়েছেন।

সহীহ্ মুসলিমের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত ইমাম আল্লামা ক্বাযী আয়ায র. বলেন, ‘ইউক্বরাহ, ওয়া লা ইউহাররাম’। দাঁড়ি পুরোপুরি শেভ করে ফেলা যাবে, এটা হারাম নয়, তবে দাঁড়ি শেভ করে ফেলাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

ফক্বীহ্গণ বলেছেন, যা নিরুৎসাহিত করা হয়, তা করলে কোন দোষ বা ত্রুটি হয় না, কিন্তু না করাটা ভাল।
অনেক ফক্বীহ্’র কাছে নিরুৎসাহিত করা বিষয়গুলো মুবাহ্ বা স্রেফ অনুমোদিত হিসাবেও বিবেচিত হয়।
ইমাম আল গাজ্জালী র. মুষ্ঠির নিচে দাঁড়ি রাখা বা অতি অল্প রাখাকে মাক্বরুহও বলেননি, বরং মুবাহ্ (চাইলে করা যায়) বলেছেন।

অতীতের সকল মাযহাবের মহামহিম ইমামদের মধ্যে ইমাম আন নাবভী, ইমাম আল গাজ্জালী, আর রাফিয়ি, ইবন হাজর আল হাইতামি, আর রামলি, ইমাম আল যাকারিয়া আল আনসারি, আল খাতিব আল শারবিনি- তাঁরা ও তাঁদের মত অগ্রগণ্য আরো বহু উলামা, বিশেষত ইমাম খুব স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, দাঁড়ি ছাঁটা হারাম নয়।
তবে তাঁদের অনেকেই এটাকে মাকরুহ বলেছেন।

নিকট অতীত ও বর্তমান যুগের বিশ্ববিখ্যাত ইসলামী উলামাদের মধ্যে মুহাম্মাদ তাহির ইবনে আ’শুর, আল ফাদ্বিল ইবনে আ’শুর, মুহাম্মাদ আল আজিজ আল জা’ইয়্যাত, কামাল উদ্দিন জা’ইয়াত তিউনিশ, মুহাম্মাদ আল খাদ্বির হুসাইন, মুহাম্মাদ আন্ নাইফার, সালিম বু’ল হাজ্জি, শাইখুল আজহার আলী জাদ আল হাক্ব, মুহাম্মাদ আস্ শারতুত্ব, ইউসূফ আল কারদ্বাভী, শাইখ আতি আস্ সাক্বর, ডক্টর সাইয়্যিদ আহমাদ আল মাসির, শাইখ আব্দার রাজ্জাক আল কাত্তান,  শাইখ আবু জাহরা (পূর্বতন সময়ে), আলী ইবনুল মুনতাসির আল কাত্তানী, শাইখ হামযা আল কাত্তানী- এঁরা কেউ দাঁড়ি ছাঁটাকে ফিসক বলেননি। বরং মাকরুহ বা মুবাহ বলেছেন।

এঁরা প্রত্যেকে ফতোয়া দিয়েছেন যে দাঁড়ি এক মুষ্ঠির নিচে রাখা অন্যায় বা গুনাহ্ নয়। কারো মতে মাকরুহ আর কারো মতে মুবাহ।

এর বাইরে, গত শত বছরে পৃথিবীর প্রাচীণতম বিশ্ববিদ্যালয় আল আযহার আশ্ শরীফের প্রায় সকল শিক্ষক, যাঁদেরকে বিশ্বের সবচে বেশি তাক্বওয়াসম্পণ্ণ এবং জ্ঞানসম্পণ্ণ উলামাদের মধ্যে অগ্রগণ্য ও নেতৃস্থানীয় ধরা হয়, তাঁদের প্রায় কারোই এক মুষ্ঠির কাছাকাছি দাঁড়ি নেই, ছিল না। খুব পাতলা দাঁড়ি, অথবা ক্লিন শেভ, অথবা খুব সামান্য দেখা যায় এমন দাঁড়ি তাঁদের ছিল ও আছে।

উলামাদের মধ্যে অনেকে বলেন, ‘ এ’ফা উল লেহইয়া’ শব্দের অর্থ দাঁড়ি ছোট করে রাখো। আমরা এ মত অনেককে সচেতনভাবে বলে কয়ে অনুসরণ করতে দেখি।

—-গোলাম দস্তগীর লিসানীর টাইমলাইন হতে

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment