ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী
………………………………..
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ঐকমত্য সিদ্ধান্ত হচ্ছে- হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) হলেন اَفْضَلُ البَشَرَ بَعْدَ الانْبِيَاءِ অর্থাৎ আম্বিয়ায়ে কিরামের পর সর্বোত্তম ব্যক্তি হযরত আবু বকর (রা.)।
ইমাম বুখারী (রা.) বুখারী শরীফে بَاب فَضْلِ اَبي بَكْرٍ بَعْدَ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ তথা ‘নবী করিম (দ.) ’র পরে হযরত আবু বকর (রা.)’র মর্যাদা নামক একটি পরিচ্ছেদ লিখেছেন। তাতে তিনি হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন-
كُنَّا نُخَيِّرُ بَيْنَ النَّاسِ فِي زَمَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَنُخَيِّرُ أَبَا بَكْرٍ، ثُمَّ عُمَرَ بْنَ الخَطَّابِ، ثُمَّ عُثْمَانَ بْنَ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ
আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম)’র যামানায় সাহাবীদের পরস্পরের মধ্যে মর্যাদা নিরূপণ করতাম। আমরা সর্বাপেক্ষা মর্যাদা দিতাম আবু বকর (রা.)-কে তারপর ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.)-কে, তারপর ওসমান ইবনে আফফান (রা.)-কে। [ বুখারী, ২: ৫১৬; হাদিস নং ৩৩৯৩]
রাসূলে আকরাম (দ.) এরশাদ করেন,
مَا طَلَعَتِ الشَّمْشُ وَلَا غَرَبَتْ عَلى اَحَدٍ اَفْضِلَ مِنْ اَبى بَكْرٍ اِلاَّ اَنْ يَكُوْنَ نَبِيًّا
পৃথিবীতে নবীগণ ব্যতীত হযরত আবু বকর (রা.)’র চেয়ে উত্তম কেউ নেই। [ খুৎবাতে মহররম, পৃ. ৭৫]
হযরত মুহাম্মদ ইবনে হানাফিয়্যা (রা.) বলেন,
, قُلْتُ لِأَبِي أَيُّ النَّاسِ خَيْرٌ بَعْدَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: «أَبُو بَكْرٍ»، قُلْتُ: ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ: «ثُمَّ عُمَرُ»، وَخَشِيتُ أَنْ يَقُولَ عُثْمَانُ، قُلْتُ: ثُمَّ أَنْتَ؟ قَالَ: «مَا أَنَا إِلَّا رَجُلٌ مِنَ المُسْلِمِينَ»
আমি আমার পিতা হযরত আলী (রা.) কে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ কে? তিনি বললেন, আবু বকর (রা.)। আমি বললাম এরপর কে? তিনি বললেন, ওমর (রা.)। আমার আশংকা হল যে, এরপর তিনি ওসমান (রা.)’র নাম বলবেন, তাই আমি বললাম, এরপর আপনি? তিনি বললেন, না, আমি তো মুসলমানদের একজন। [বুখারী, ২: ৫১৮, হাদিস নং ৩৪০৬]
একদিন হযরত ওমর (রা.) মিম্বরে আরোহণ করে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের পর হযরত আবু বকর (রা.) সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। যদি কেউ এর বিরোধিতা করে তাহলে সে মিথ্যুক, তাকে মিথ্যা অপবাদের শরয়ী শাস্তি প্রদান করা হবে। [প্রাগুক্ত, পৃ. ৭৫-৭৬]
হযরত আলী (রা.) বলেন-
خَيْرُ هذِه الاُمَّةِ بَعْدَ نَبِيِّهَا اَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرَ
এই উম্মতের মধ্যে নবীর পর সর্বত্তোম ব্যক্তি হলেন হযরত আবু বকর ও ওমর (রা.)। ইমাম যাহবী (র.) বলেন, হযরত আলী (রা.)’র এই মন্তব্যটি তাঁর থেকে মুতাওয়াতিরভাবে বর্ণিত হয়েছে। [সুয়ূতী, তারীখুল খোলাফা, পৃ. ৩১, ]
হযরত ইমাম আবুল মনসুর বাগদাদী (র.) বলেন, সমস্ত উম্মত একমত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামের পর হযরত আবু বকর (রা.), এরপর হযরত ওমর (রা.), অতঃপর হযরত ওসমান (রা.) এদের পর হযরত আলী (রা.), তারপর জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত দশজন সাহাবী অন্যান্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। তাঁদের পর বদর যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারীগণ, এরপর উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীগণ। অতঃপর বাইয়াতে রিদওয়ানে উপস্থিত সাহাবীগণ, তারপর অন্যান্য সাহাবীগণ মানুষের মধ্যে উত্তম। [তারীখুল খোলাফা, পৃ. ৩০,]
عنِ أَبِي بَكْرَةَ، أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَأيْتُ كَأَنَّ مِيزَانًا نَزَلَ مِنَ السَّمَاءِ فَوُزِنْتَ أَنْتَ وَأَبُو بَكْرٍ فَرَجَحْتَ أَنْتَ وَوُزِنَ اَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ فَرَجَحَ أَبُو بَكْرٍ وَوُزِنَ عُمَرُ وَعُثْمَانُ فَرَجَحَ عُمَرُ ثُمَّ رُفِعَ الْميزَانُ فَاسْتاءَ لَهَا رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَعْنِى فَسَائَهُ ذَالِكَ فَقَالَ: خِلَافَةُ نُبُوَّةِ ثُمَّ يُؤتي اللَّهُ الْمُلْكَ مَنْ يَشَاءُ
হযরত আবু বুকরা (রা.) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আমি স্বপ্নে দেখেছি, আকাশ থেকে যেন একটি পাল্লা অবতীর্ণ হল। তাতে আপনাকে ও আবু বকর-কে ওযন করা হল। তাতে আপনার দিক ভারী হল। পরে আবু বকর ও ওমরকে ওযন করা হল। তাতে আবু বকর (রা.)’র দিক ভারী হল। এরপর ওমর (রা.) ও ওসমান (রা)-কে ওযন করা হল। এতে ওমর (রা)’র দিক ভারী হল। অতঃপর পাল্লাটি উঠিয়ে নেয়া হল। এই স্বপ্ন শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিষন্ন হয়ে পড়লেন। অতঃপর বললেন, এটা খেলাফতে নবুয়ত, (অর্থাৎ নবুয়ত প্রকৃতির খেলাফতের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে), এরপর যাকে ইচ্ছে তাকে রাজত্ব দান করবেন। [মিশকাত, পৃ. ৫৬০, হাদিস নং ৫৬৮৫।]
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُرِجَ بِى الى السَّمآءِ فَمَا مَرَرْتُ بِسَمآءٍ اِلاَّ وَجَدْتُ اِسْمِى وَاَبُوَ بِكْرٍ الصِّدِّيقُ خَلْفِي
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, মি’রাজ রাতে যখন আমাকে আসমানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন প্রতি আসমান অতিক্রম করার সময় আমি আমার নাম দেখতে পেয়েছি আর আমার পেছনে আবু বকর সিদ্দীককে। [আবু নুআঈম, ফাযায়েলুল খোলাফায়ির রাশেদীন, ১: ৪২]।
…………………………………………
ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী, ঢাকা।