ঈদে মিলাদুন্নবী ﷺ এঁর পক্ষে ওহাবী গুরু ইবনে তাইমিয়া ওইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর  ফতোয়া

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ওহাবী গুরু ইবনে তাইমিয়া ও ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর ঈদে মীলাদুন্নবীর পক্ষে ফতোয়া।

প্রিয় নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

«إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى»

“নিশ্চয় প্রত্যেক কাজ এর লক্ষ্যের সাথে সম্পৃক্ত, আর প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই রয়েছে-যা সে ইচ্ছা করেছে”।

[সূত্রঃ বুখারী, হা/১।]

আভিধানিক অর্থের গন্ডি পেড়িয়ে পারিভাষিক ব্যবহারে মীলাদুন্নবী মুসলিম উম্মাহর বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ।

পারিভাষিক অর্থে মীলাদুন্ননবী বলতে সমগ্র জগতের জন্যে মানবতার চরম ক্রান্তিকালে প্রেরিত দয়াপরবশ আল্লাহ্ পাকের সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত হিসেবে দয়াপরবশ নবীজীর শুভাগমন বা মীলাদ এঁর স্মরণে আল্লাহ্ পাকের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনের নিয়তে নবীজীর জিকির বা আলোচনা করা, জিকির বা আলোচনার ব্যবস্থা করা, আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অভিপ্রায়ে ফজিলতপূর্ণ কাজের মাধ্যমে তাঁর জিকিরকে পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে সমুন্নত করা বুঝায়।

আরবী মাস সমুহের মাঝে রবিউল আউয়াল ও মীলাদুন্নবীর এক ঐতিহাসিক ও অবিস্মরণীয় সংযোগ রয়েছে।

বছর ঘুরে রবিউল আউয়ালের আগমনের আগাম বার্তা মীলাদুন্নবী নামক মহান নেয়ামতের স্মরনকে রবিউল আউয়ালের আগমনে তারই বিশেষত্বের কারনে মুমিনের হৃদয়পটে পুন:পুন:কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তাকিদ সৃষ্টি করে।

মুসলিম উম্মাহ্ সর্বশ্রেষ্ঠ যে নেয়ামতটি মহান আল্লাহ্ পাক থেকে লাভ করেছে তা হচ্ছে মহান আল্লাহ্ পাকের প্রেরিত মানবতার মুক্তির দিশারী নবীর শুভাগমন তথা মীলাদ বা মীলাদুন্নবী।

নেয়ামতের শোকর জ্ঞাপনে সময় কালের কোন বাধ্যবাধকতা নেই, চিরকালীনই করা যায়। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দাবীই তাই। আজীবন কৃতজ্ঞতা জানাতে হয়।

আর অনুগ্রহ করার শুভ দিনকে স্বয়ং আল্লাহ্ তা’আলাই নিজের দিবস বলে ঘোষনা দিয়েছেন। ঘোষনাই কেবল কি দিয়েছেন! বরং আল্লাহর দিবস সমূহকে স্মরন করে কৃতজ্ঞতা জানানোর নির্দেশও তিনিই দিয়েছেন।

তাই যুগে যুগে আল্লাহর বান্দাগণ সমসাময়িক কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ভাবধারায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। ফজিলতপূর্ণ কাজ সম্পাদন করেছে।

বর্তমানে যারা পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারাই স্বীকার করবে তাদের একমাত্র পছন্দনীয় ইমাম হচ্ছে ইবনে তাইমিয়া ও ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী।

ওয়াহাবীরা তাবেয়ী যুগের সেরা ইমাম, ইমামে আযম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি থেকে শুরু করে সকল ইমাম মুস্তাহিদ আওলিয়ায়ে কিরামের বিরোধীতা করলেও ইবনে তাইমিয়া ও আব্দুল ওহাব নজদীর মতাদর্শেরই ধ্বজাধারী, তাদের বিরোধীতা করে না। 

কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে সেই তাদেরই কোন ফতোয়া যদি নিজেদের মন মত না হয় তবে সেটা সযত্নে গোপন করে রাখে। কিন্তু সত্য কি গোপন রাখা যায়?

ওহাবীদের গুরু ইবনে তাইমিয়া (১২৬৩খৃঃ – ১৩২৮খৃঃ) তার কিতাব “ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম” এ লিখেছে,

”যদি মিলাদ মাহফিল নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর প্রতি ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য করা হয়ে থাকে তবে আল্লাহ এ মুহাব্বত ও সম্মান প্রদর্শনের কারণে সওয়াব বা প্রতিদান দেবেন।” 

দলীলঃ 

ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ ৩১৩।

একই কিতাবের অন্যত্র সে লিখেছে, 

“বরং ঐ দিনে (রাসুল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জন্মদিনে) পরিপূর্ণরূপে অনুষ্ঠান করা এবং এ দিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা, উত্তম নিয়ত এবং হুজুরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি মুহাব্বত প্রদর্শন বড় প্রতিদানের কারন হবে।” 

দলীলঃ 

ইক্তিদায়ে সিরাতে মুস্তাকীম পৃঃ ৩১৫।

মাজমা’ ফাতাওয়ী : ইবনে তাঈমিয়া, খন্ড ২৩, পৃঃ ১৬৩।

ইবনে তাঈমিয়া আরও বলেছেন, 

“মীলাদুন্নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) এঁর দিনে মীলাদুন্নাবী (صلى الله عليه و آله و سلم) উদযাপনকারীরা তাদের বিশুদ্ধ কাজগুলোর জন্যে পুরষ্কৃত হবে, যেমন- ঈদে মীলাদুন্নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) উপলক্ষে তাদের সম্পাদিত আল্লাহর সে সকল ইবাদাতগুলো যা তারা করে থাকে”।

সূত্রঃ ঈক্তিদা সীরাত আল মুস্তাকিম।

তিনি আরো বলেছেন,

“….মুস্তাহীদই হোক, কিংবা মুস্তাহীদের মুকাল্লিদই হোক, যে মীলাদুন্নবীর আলোচনার চর্চা করবে তার জন্যে পুরষ্কার রয়েছে…এ চর্চায় সম্পাদিত কাজগুলো অবশ্যই শরীয়ত বিরোধী হবে না”।

সূত্রঃ ঈক্তিদা সীরাত আল মুস্তাকিম।

ইবনে তাইমিয়া নিজের সেই একই কিতাব ’আল-সীরাত আল-মুস্তাকীম’ (২৬৬ পৃষ্ঠা) পুস্তকে বলেছে: “অনুরূপভাবে, খৃষ্টানদের যীশু খৃষ্টের (হযরত ঈসা আ:) জন্মদিন পালনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা স্বরুপ হোক কিংবা মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এঁর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপই হোক, মুসলমান সমাজ মীলাদ অনুষ্ঠানে যা আমল করেন তাঁদের এই ধরনের এজতেহাদের জন্যে আল্লাহ পাক অবশ্যই তাঁদেরকে পুরস্কৃত করবেন।” 

ইবনে তাইমিয়া অতঃপর লিখেছে, 

“মীলাদ যদিওবা সালাফ (প্রাথমিক যুগের পুণ্যাত্মাগণ) কর্তৃক আচরিত হয় নি, তথাপি তাঁদের তা অনুশীলন করা উচিত ছিল। কেননা, শরীয়তের দৃষ্টিতে এর বিরুদ্ধে কোনো আপত্তি ছিল না।” এখানে ইবনে তাইমিয়া ধর্মীয় গোঁড়ামি বাদ দিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم)-এঁর রেযামন্দি হাসিলের কথা বলেছে। 

[ঈক্তিদা]

ইবনে তাইমিয়া যা বলেছে ওই উদ্দেশ্যেই, অর্থাৎ “মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এঁর প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার নিদর্শনস্বরূপ”- ই এই ভালোবাসা ও নেক উদ্যোগের জন্যে আল্লাহতা’লা আমাদের পুরস্কৃত করুন, আমীন! আল্লাহ্ তাকেও পুরস্কৃত করুন যে ব্যক্তি বলেছিল – “খৃষ্টানরা তাদের নবী সম্পর্কে যা দাবি করে তা বাদই দিন, আপনারা যেভাবে চান মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এঁর প্রশংসা করতে পারেন এবং তাঁর সত্তা মোবারকের প্রতি সকল গুণ/বৈশিষ্ট্য ও তাঁর মর্যাদার প্রতি সকল মাহাত্ম্য আরোপ করতে পারেন; কেননা তাঁর অসীম গুণাবলী ভাষায় ব্যক্ত করা যে কোনো বক্তার পক্ষেই সাধ্যাতীত।”

ইবনু তাইমিয়ার আরেকটি কথাতো এরুপ যে, তা কোন কোন ক্ষেত্রে শরীয়তসম্মত না হলেও সওয়াব পাওয়া যাবে; সেটি হলো, 

من كان له نية صالحة اثيب علي نيته وان كان الفعل الذي فعله ليس بمشروع- اذا لم يتعمد مخالفة الشرع-

অর্থাৎ নিয়ত ঠিক থাকলে আর শরীয়তের বিরোধিতা করার ইচ্ছা না থাকলে সে যে কাজ করছে, তা যদি শরীয়ত সম্মত নাও হয়, তবুও সে ছওয়াব পাবে। 

(ঈক্তিদা)

এখন বলুন, ইবনু তাইমিয়ার এ কথা দ্বারা আমাদের সমাজে প্রচলিত কী কী শরীয়তবিরোধী কাজে উৎসাহ দেয়া হল?

ওহাবীদের অপর নেতা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী’র (১৭০৩খৃঃ-১৭৯২খৃঃ) তার কিতাব “মুখতাসার সিরাতে রাসুল” এ লিখেছেন, “কট্টর কাফির আবু লাহাব রাসুলে কারিমে ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পবিত্র জন্মের সুসংবাদ শুনে মনের খুশীতে নিজ দাসী সুয়ায়বাহকে (রদ্বিয়াল্লাহু আনহা) মুক্তি দেয়ার কারনে সে প্রতি সোমবার (নবীজীর বেলাদত শরীফের দিন) দোযখে থেকেও শান্তিদায়ক পানীয় পেয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, আব্দুল ওহাব নজদী আবু লাহাবের শাস্তি হ্রাসের বিষয় উল্লেখ করে মিলাদুন্ননবী (صلى الله عليه و آله و سلم) পালনের গুরুত্বের কথা স্বীকার করে।

এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, তিনি শামসুদ্দীন নাসের দামিস্কির কিতাব ‘মওরদুস সাদী ফি মওলদিল হাদী’ থেকে এ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে এবং সেখানে দামিস্কির রহমতুল্লাহি আলাইহি রচিত শেরটিও হুবহু উদ্ধৃত করেছে।

বিরোধিতাকারীরা কুরআন শরীফের দলীল মানে না… তাফসিরের দলীল মানে না… হাদীস শরীফ এর দলীল মানে না … ইমাম মুস্তাহিদের ঐক্যমত্যের দলীল মানে না…. মানবেন না এটাই স্বাভাবিক। কারন অস্বীকারকারী দুনিয়াতে সব সময়ই ছিলো, কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। 

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment