বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
প্রিয় সুহৃদ
আসসালামু আলাইকুম
ইলমে গায়ব বিষয়ে আনেক তর্ক বিতর্ক হয়েছে , সে কারনে এই বিষয়ে কোরআন শরীফ থেকে ও সহীহ বুখারী শরিফ ও ( মুত্তাফাকুল আলাই )হাদিস নি্যে মুল পোস্ট টি সাজানো হয়েছে । যারা জানতে চান কেবল তাদের জন্য । আর যারা সত্য জানবেন কিন্তূ কশ্চিম কালেও মেনে নিবেন না কোরআন হোক আর সহীহ হাদিস হোক নবীজি কে ছোট করা যাদের ধর্মে পরিনত হয়েছে কোরআন বা হাদীস কোন বিষয় নয় তাদের ব্যাপারে আমার কিছু বলার নাই । আল্লাহই তাদের জন্য যথেষ্ট ।
হযরত আমর ইবনে আখতাব (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) হতে বর্নিত , তিনি বলেন , আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) একদিন আমাদেরকে নিয়ে ফজরের নামাজ পড়লেন । অতঃপর মিম্বরে আরোহন করলেন এবং আমাদের উদ্দেশে দীর্ঘ বক্তব্য প্রদান করলেন ; এমন কি যোহরের নামায পড়ালেন ।অতঃপর আবারো আরোহন করলেন মিম্বরে , আর বক্তব্য দেওয়া শুরু করলেন ,এমন কি আসরের নামাযের সময় উপস্থিত হল । অতঃপর মিম্বরে হতে নেমে আসরও পড়লেন । পুনরায় মিম্বরে আরোহন করে বক্তব্য দিতে দিতএ সুর্য অস্তমিত হয়ে গেল । সে দিন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) অতীতে যা কিছু এবং ভবিষ্যতে যা কিছু হবে সকল বিষয়ে আমাদেরকে সংবাদ দিয়েছেন । আমাদের মধ্যে যাঁদের স্মরণশক্তি অধিক তাঁরা সেসব (অদৃশ্য) সংবাদ বেশী মনে রাখতে পেরেছেন ।
( সুত্র : বুখারী শরীফ হাদিস নম্বর ৬২৩০ কিতাবুল কদর , মুসলিম শরিফ হাদিস নম্বর ২৮৯১ কিতাবুল ফিতান , তোরমিযী শরীফ হাদিস নম্বর ২১৯১ কিতাবুল ফিতান , আবু দাউদ শরীফ হাদিস নম্বর ৪২৮ কিতাবুল ফিতাম , মিসকাতুল মাসাবিহ : কিটাবুল ফিটাম ৪৬১ পৃষ্ঠা )
প্রসঙ্গিক আলোচনা
মহান রাব্বুল আলামীন পৃথিবীর বুকে মানবজাতির হিদায়াতের জন্য যত নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন সবাইকে তাঁদের নুবুয়তের দলিল হিসাবে কতিপয় মু’জিযাও দান করেছেন ।
অন্যান্য নবীগনের ক্ষেত্রে ঐসব মু’জিযার সীমিত থাকলেও আমাদের প্রিয় রাসূল সাইয়্যিদুল মুরসালীন(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)-এর ব্যাপার ছিল সম্পুর্ন ভিন্ন । অন্য নবীগনের যাবতীয় মু’জিযা একত্রিত করলে যা হয় তাঁর সবক’টি তো বটে; বরং এরপরেও আরো কত মু’জিযা দান করেছেন তা গণনা করা যাবে এমন হিসেবের খাতা নীল আকাশের নিচে খুজে পাওয়া যাবে না ,গণনা বাইরে যে সব মু’জিযা রয়েছে এর একটি হল ইলমে গায়েব বা “অদৃশ্যজ্ঞান “। এই ইল্মে গায়েব মহানবীর অতুলনীয় বৈশিষ্টাবলীর অন্যতম অনুগ্রহ। যেমন কোরআনে পাকে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন।
undefined
এই আয়াতের শেষ অংশে ” ওয়া আল্লামাকা মালাম তাকুন তায়’লামু ওয়া কানা ফাদ’লুল্লাহি আলাইকা আযিমা ‘
অর্থাৎ আপনাকে যা জানা ছিল না তিনি(আল্লাহ) আপনাকে সবই শিক্ষা দিয়েছেন এবং তা ছিল আপনার উপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ ।
পবিত্র ক্বোরআনের ভাষায় বলা যায় – নবীপাক(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)এর জন্য মহান আল্লাহ অজানা কিছুই রাখেন নি ; হোক না তা অতীত কিংবা ভবিষ্যত । কিয়ামত পরবর্তি বেহেশত-দোযখের সংবাদ পর্যন্ত যেখানে লুকায়ে থাকতে পারেনি ।তাই তো তিনি উপস্থিত আনেক লোকের মনের খবর বলে দিয়েছেন , মুনাফিক্বেদের অন্তরে আবৃত অন্ধকার কুঠুরিতে লালিত কপটতা প্রকাশ করে মসজিদ থেকে তাদের অনেককে বের করে দিয়েছেন । এমন কি অনেক সাহাবীর আবেদন পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বংশ তালিকা নিখুঁত ভাবে বলে দিয়েছেন এ গুলো কি প্রমান করে না নবীপাকের ইলমে গায়েব বিতর্কের উর্ধ্ধে একটি স্বীকৃত বিষয় ?
আল্লাহর রাসুলের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) বাল্যবন্ধু নয় কেবল সারাজীবনের একান্ত সঙ্গী ইসলামের প্রথম খলিফা এবং নবীগনের পর যিনি শ্রেষ্ট মানুষ , সিদ্দিকে আকবর হযরত আবু বকর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ইসলাম গ্রহনের প্রাক্কালে নবী করীমের(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) কাছে তাঁর নুবুয়তের পক্ষে দলিল কি আছে ? জানতে চাইলে নবী করীম উত্তর দিতে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে ফেলেন নি বরং দু’শ ভাগ দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে বলে দিয়েছিলেন কেন গত রাতে তুমি যে স্বপ্ন দেখেছ , আকাশের চন্দ্র-সুর্য তোমার কোলে এসে হাজির । আর সিরিয়া যাত্রাপথে সেই স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারী তোমাকে যা কিছু বলেছে তাইতো আমার নবুয়তের পক্ষে দলিল ।
এমন আশ্চর্যজনক তথ্যপ্রদানের অবস্থা হচ্ছে সিদ্দিক-ই-আকবরের স্তম্ভিত ! তিনি শতভাগ নিশ্চিত হলেন যে , এই অদৃশ্যজ্ঞানের সংবাদদাতা (নবী) কষ্মিণকালেও মিথ্যুক হতে পরেন না ।তিনিই মহান আল্লাহর সত্য নবী । সন্দেহাতীত ভাবে তাঁর নবুয়ত প্রমানিত ।তদ্রুপ হযরত আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)এর কথা শোনা যাক । বদরের যুদ্ধের বন্দিদের কে মুক্তিপণ নিয়ে ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ হলে অন্য বন্দীরা যথারীতি মুক্তিপণ আদায়ে ব্যস্ত । এ দিকে চাচা হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও ঐ যুদ্ধবন্দীদের একজন । তিনি ভাতিজার কাছে এসে আবেদন করলেন বাবা ! আমি তো গরিব মানুষ ! মুক্তিপন দেয়ার মত আমার কাছে কোন সম্পদ নেই ।উত্তরে নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)বললেন ” কেন চাচা ! আপনি যুদ্ধে আসার পুর্বে আমার চাচীর কাছে যে স্বর্নালন্কার লুকিয়ে রেখে এসেছেন সে গুলো কোথায় ? হযরত আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)র সে গোপন সংবাদ তো দুনিয়ার বুকে অন্য কেউ জানার কথা নয় ! কিন্তূ তাঁর ভাতিজা কিভাবে সুস্পস্টভাবে বলে দিলেন । তা রীতিমত বিষ্ময়ের ! না! এ ধরনের অদৃশ্য সংবাদদাতা কোনদিন মিথ্যুক হতে পারেন না । তাঁর কপালও চমকে উঠল । নবীজীর হাতে নিজেকে সঁ’পে দিয়ে বলে উঠলেন হে আল্লাহর রাসুল ! আমাকে ইসলামের কালেমা শরীফ পড়িয়ে মুসলমান বানীয়ে দিন । আমি এতদিন ছিলাম গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত। এবার আলোতে আসতে চাই । নবীজি তাঁকে কালেমা পড়িয়ে নিজ হাতে বায়াত করে মুসলমান বানালেন । এ ভাবে একজন জাহান্নামী মুহুর্তে বেহেশতী হয়ে গেলেন । শুধু কি তাই ? নবীর পরশে শ্রেষ্ট সোনার মানুষে রুপান্তরিত হলেন ।
এ ভাবে হাজারো দৃষ্টান্ত রয়েছে যদ্বারা স্পস্ট প্রমাণিত হয় -মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় হাবীবকে ইলমে গায়েব দান করেছেন ।
এখন আরো কয়েকটি সহীহ হাদীসের উদ্ধৃতি পেশ করব যাতে সহীহ হাদীস ছাড়া অন্য কিছূ মানিনা বলে যারা গলার পানি শুকিয়ে ফেলে তারা বিষয়েটি সহজে বুঝতে পেরে হিদায়াত লাভ করে ।
হযরত ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত , তিনি বলেন একদা হুজুর নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) আমাদের সামনে দন্ডায়মান হলেন অতঃপর সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তথা বেহেশত বাসীরা বেহেশতে এবং দোযখনাসীরা দোযখে প্রবেশ করা পর্যন্ত সবকিছু আমাদের সামনে বলে দিলেন । আমাদের মধ্যে যারা মুখস্ত রাখতে পেরেছে তারা মুখস্ত রেখেছে ; আর যারা ভুলে যাবার তারা ভুলে গেছে ।
[ বুখারী : হাদীস নং ৩০২০ : কিতাবু বাডয়িল খালক্ব ]
হযরত হুযাইফা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্নিত । তিনি বলেন রাসুলে পাক(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) আমাদের সামনে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করলেন- সে দিন থেকে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে তার কোন বিষয়েই তাঁর বক্তব্যে বাদ দেননি । শ্রোতাদের মধ্যে যে মুখস্থ রাখার সে মুখস্ত রেখেছে আর যে ভুলে যাবা সে ভুলে গেছে ।
( বুখারী শরীফ হাদীস নং ৬২৩০ কিতাবুল কদর । মুসলিম শরীফ হা:নং২৮৯১ কিতাবুল ফিতন )
হযরত আনাস বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে াপর এক হাদীস শরিফে দেখা যায় । তিনি বলেন একদা নবীপাক(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) আমাদের মাঝে তাশরীফ আনলেন তখন সূর্য পশ্চিমাকাশে দিকে ঝুঁকে পড়েছিল ( অর্থাৎ যোহরের নামাযের সময় হয়ে গিয়েছিল ) অতঃপর নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) যোহরের নামায পড়লেন আর সালাম ফিরানোর পর মিম্বরে আরোহন করে ক্বিয়ামতের আলোচনা রাখলেন এবং ক্বিয়ামতের পুর্বেকার কতিপয় বড় বড় ঘটনা বর্ননা দিলেন আর উপস্থিত সাহাবীদেরকে সম্বোধন করে বললেন , খোদার কসম তোমরা আমার কাছে যা কিছু জানতে চাইবে আমি এই মজলিসেই সব প্রশ্নের উত্তর দেব ।
হযরত আনাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) বলেন হুজুরের বানীর এমন দৃঢ়তা দেখে আনসারী সাহাবাদের মধ্যে আনন্দের কান্নার রোল বয়ে গেলো । আর নবীপাক(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা)বারবার বলে যাচ্ছেন – তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর , প্রশ্ন কর । অতঃপর এক ব্যক্তি দাড়িয়ে প্রশ্ন করল – হে আল্লাহর রাসুল ! পরকালে আমার ঠিকানা কোথায় হবে ? নবীপাকে বললেন জাহান্নাম । অথপর আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা বললেন -ইয়া রাসুল লাল্লাহ ! আমার পিতা কে ? নবী করীম বললেন – তোমার পিতা হুযাফা । নবীপাক(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) আবার ও জোর তাগিদ দিয়ে বললেন , তোমরা প্রশ্ন কর , প্রশ্ন কর ।
অত:পর,ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) বরাবর সামনে গিয়ে বসলেন আর বললেন -আমরা সন্তস্ট যে আল্লাহ কে রব হিসাবে পেয়ে , ইসলাম কে দ্বীন হিসাবে আর মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) কে রাসুল হিসেবে পেয়েছি । তিনি এসব কথা বলার সময় নবী করীম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) চুপ রইলেন । অতঃপর বললেন -সেই সত্তার কসম ! যার হাতে আমার প্রাণ , আমার এ দেয়ালের সামনে এই মাত্র বেহেসত ও দোযখ হাজির করা হয়েছে , যখন আমি নামায পড়ছিলাম , আজকের মত কোন ভাল-মন্দকেও দেখিনি ।
(সুত্র বুখারী শরীফ হাদীস নং৬৮৬৪ কিতাবুল ই’তিসাম , বিল কিতাবে ওয়াস সুন্নাহ :, মুসলিম শরীফ হাদিস নং ২৩৫৯ )
এ ভাবে অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় রাসুলে আকরাম(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) ইলমে গায়েবের অধিকারী ছিলেন । অবশ্যই তা আল্লাহ প্রদত্ত ।
আর সত্তাগত আলিমুল গায়েব হলেন একমাত্র আল্লাহ । আর আল্লাহর রাসুলের ইলমে গায়েব আল্লাহ্ প্রদত্ত । যেমন এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে –
” মা কানাল্লাহু লি উতলিয়াকুম আলাল গাইবে ওয়ালাকিন নাল্লাহা ইজতাবিয়ু মির রুসুলিহু মাইয়া শায়ু ”
অর্থাৎ হে সাধারাণ লোকগন ! আল্লাহ তা’আলার শান নয় যে , তিনি তোমাদেরকে ইলমে গায়েব দান করবেন , তবে হ্যাঁ রাসুলগনের মধ্য হতে তিনি যাকে চান তাকে অদৃশ্যজ্ঞানের জন্য মনোনীত করেন ।( সুরা আলইমরান ১৭৯)
রসুলগণের মধ্য হতে যদি আল্লাহ পাক কাউকে নির্বাচিত করেন। তাহলে সর্বপ্রথমে কাকে নির্বাচিত করবেন তা সহজেই অনুমেয় ।
আরেক জায়গায় ইরশাদ হয়েছে ;
undefined
undefined
(আল্লাহ)স্বীয় গায়েবের বিষয়ে কাউকে ক্ষমতাবান করেন না । কিন্তূ রাসুলদের মধ্য যার উপর তিনি সন্তষ্ট হন( তাকেই ক্ষমতাবান করেন )
(সুরা জিন- আয়াত ২৬-২৭ )
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন ‘ আল্লামাকা মা লাম তাকুন তা’লাম ” আর্থাৎ, তিনি আপনাকে এমন জিনিস শিক্ষা দিয়েছেন যা আপনি জানতেন না “
( সুরা নিসা আয়াত ১১৩)
এ আয়াতে ব্যাখা করতে গিয়ে প্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ “জালালাইন শরীফে” বলা হয়েছে ” আউযয়ু মিনাল আহকামে ওয়াল গাইব ” অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) কে শরীয়তের যাবতীয় হূকুম ও গায়েব সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছেন ।
উপরে বর্নিত আয়াত এবনহ জালালাইন শরীফের ব্যাখ্যা দ্বারা বুঝা গেল,
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর হাবীব(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) কে ইলমে গায়েব জানাইয়াছেন । তাই আমরা বলি(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) ইলমে গায়েব জানেন । অসংখ্য হাদিসে মাধ্যমে জানা যায় যে রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) স্পস্ট বলে দিয়েছেন -কে কখন মৃত্যুবরন করবে ? কোন জায়গায় কে মারা যাবে এবং কার গর্ভে ছেলে সন্তান অথবা মেয়ে সন্তান রয়েছে ইত্যাদি।
যদি রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এ সব বিষয়ে গায়েব না জানতেন , তাহলে সম্স্ত গয়েবের সংবাদ কি ভাবে দিলেন ?
undefined
তাফসীরে সাভার ৪র্থ খন্ডে ২৭৫ পৃষ্টা রয়েছে,
“ইনণাহু(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) লাম ইয়াখ রুজু মিনাদ দুনিয়া হাত্বা আ’লামাহু ল্লাহু বি জামইহি মুগি বাতিদ দুনিয়া ওয়াল আখেরাহ “
অর্থাৎ, আল্লাহর দুনিয়া এবং আখেরাতের সমস্ত গায়েব না জানানো পর্যন্ত রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) দুনিয়া থেকে ইন্তেকাল করেন নি ।
তাফসিরে খায়েন ৪র্থ পারায় রয়েছে ;
” মা কানাল্লাহু লি ইয়াজ রাল মু’মিনিনা আলা মা ানতুম আলাইকুম “
উক্ত আয়াতের ব্যখ্যাু উল্লেখ করা হয়েছে – রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এরশাদ করেন , আমার কাছে আমর উম্মতকে তাদের নিজ নিজ মাটির আকৃতিতে পেশ করা হয়েছে যেমন ভাবে আদম (আলাহিস সালাম) এর কাছে পেশ করা হয়েছিল । আমাকে জানানো হয়েছে , কে আমার উপর ঈমান আনবে ? কে আমাকে অস্বিকার করবে ? যখন এ খবর মুনাফিকদের কাছে পোছলো তখন তারা ঠাট্টা করে বললো -কে তাঁর উপর ঈমান আনবে আর কে তাকে অস্বিকার করবে তাদের কে তাদের জন্মের পুর্বেই মুহাম্মদ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) জানতেন বলে বলেন । অথচ আমরা তাঁর সাথেই আছি – কিন্তু আমাদেরকে চিন্তে পারেন নি । এ খবর যখন রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এর নিকট পৌছলো । তখন তিনি মিম্বরের উপরে দাড়ালেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করে ইরশাদ করলেন,
“( কালা মা বালআকওয়ামে তায়ানু ফি ইলমি লা তাসআলু নি আন শাঈন ফিমা বাইনাকুম ওয়া বাইনাস সাআতি ইল্লা আনবাইতুকুম বিহ্)
অর্থাৎ, এসব লোকেদের ( মুনাফিকদের) কি যে হলো আমার জ্ঞান নি্যে তারা বিরূপ সমালোচনা করছে । তোমরা এখন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যে কোন বিষয় সম্পর্কে আমাকে জিজ্ঞাসা করো আমি অবশ্যই উহা তোমাদের কে বলে দিবো”
(তাফসীরে খায়েন )
বুখারী শরীফের ‘ বাদ্য়ু খালকে ” শীর্ষক আলোচনায় ও মিশকাত শরীফের “বাদয়ু খলকে ওয়া জিকরুল আমবিয়া” শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত উমর ফারূক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহূ) থেকে বর্নিত অর্থাৎ হযরত ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন — ” রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) এক জায়গায় আমাদের সাথে অবস্থান করছিলেন । সে খানে তিনি আমাদের সৃষ্টির সূচনা থেকে সংবাদ দিচ্ছিলেন – এমন কি বেহেস্তবাসী দোযখবাসী নিজ নিজ ঠিকানায় যাওয়ার অবধি পরিব্যাপ্ত যাবতীয় আবস্থা ও ঘটনা বলী প্রদান করেন ,যিনি ওসব স্মরণ রাখতে পেরেছেন তিনিতো স্মরণ রেখেছেন ; আর যিনি রাখতে পারেন নি তিনি ভুলে গেছেন । ( মেশকাত শরীফ ৫০৬)
মেশকাত শরিফের “আল-ফিতনা” অধ্যায়ে বুখারী ও মুসলিম শরীফ বরাত দিয়ে হযরত হুযাইফা (রাদিয়াল্লাহ আনহু) থেকে বর্নিত হয়েছে
অনুবাদ : রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) সে স্থানে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সব কিছুর খবর দিয়েছেন । কোন কিছুই বাদ দেন নাই । যারা মনে রাখার তারা মনে রেখেছেন, আর যারা ভুলে যাওয়ার তারা ভুলে গেছেন ।( মিশকাত শরীফ)
এ সমস্ত হাদীস শরীফের মাধ্যমে জানা গেল রাসুল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামা) সৃষ্টির শুরু থেকে কেয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে উহা জানতেন এবং উহার সংবাদ সাহাবাদেরকে দিয়েছেন ।
মুলত গবেষণা করলে দেখা যায় , নবীজীর বরকতময় জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে রয়েছে বিশ্বমানবতার জন্য শিক্ষনীয় বিষয় । আর অধিকাংশ গুরুত্বপুর্ণ কর্মসুচিতে দেখা যায় , ইলমে গায়েবের প্রভাব । পবিত্র ক্বোরআন-হাদীসের আলোকে সংক্ষেপে এতটুকু আলোচনা করলাম ।
আল্লাহ আমাদের উক্ত আলোচনা থেকে প্রকৃত ইলম জানার ও বোঝার তৌফিক দান করূন – আ-মিন ।
( বিস্তারিত জানার জন্য দেখতে পারেন “জা-আল-হক্ব” : প্রথম খন্ড )




Users Today : 234
Users Yesterday : 767
This Month : 14656
This Year : 186527
Total Users : 302390
Views Today : 14429
Total views : 3591172