ইয়াযিদ কাফির হওয়া সম্পর্কে বিভিন্ন চার মাযহাবের ইমামসহ ও অনেক আকায়েদের ইমামগণের মধ্যে মতপার্থক্য বিদ্যমান। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) সহ এক জামাত ইমাম তাকে কাফির।
➤ইমাম আলূসী, তাফসীরে রুহুল মা‘য়ানী, সুরা মুহাম্মদ, ১৩/২২৯ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ- ১৪১৫হিজরি।
এবং লা‘নত দেয়ার উপযোগী বলেছেন। ইমাম গায্যালী (رحمة الله) ও তার সাথে কিছু ইমাম তাকে ফাসিক, যালিম বলেছেন। বর্তমান ডা. জাকির নায়েক এবং আহলে হাদিসরা তাকে ঈমানদার হওয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেন। ডা. জাকির নায়েক তার অনেক লেকচারে তাকে ‘রহমাতুল্লাহি আলাইহি’ বলেছেন। আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের অধিকাংশ ইমাম তাকে কাফির ও লা‘নত দেয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন; আর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ডা. জাকির নায়েকের স্বরূপ উন্মোচন’ এবং প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ২য় খন্ড দেখুন; সেখানে সবিস্তারিতভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।
ইমাম মাহমুদ আলূসী বাগদাদী (رحمة الله) {১২৭০হি.}বলেন-
وأنا أذهب إلى جواز لعن مثله على التعيين ولو لم يتصور أن يكون له مثل من الفاسقين، والظاهر أنه لم يتب، واحتمال توبته أضعف من إيمانه، ويلحق به ابن زياد وابن سعد وجماعة فلعنة الله عز وجل عليهم أجمعين، وعلى أنصارهم وأعوانهم وشيعتهم ومن مال إليهم إلى يوم الدين ما دمعت عين على أبي عبد الله الحسين
-‘‘আমার মতে ইয়াযিদের মত লোককে লা‘নত দেয়া সঠিক, যদিও তার মতো এতো বড় ফাসিকের কথা কল্পনা করা কারো পক্ষে সম্ভব নয়; আর এটাও স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে সে কখনোই তওবা করেনি; (উপরন্তু) তার তওবা করার সম্ভাবনা তার ঈমান পোষণ করার সম্ভবনার চেয়ে ক্ষীণতর। ইয়াযিদের পাশাপাশি ইবনে যিয়াদ, ইবনে সা‘আদ ও তার দল-বল এতে জড়িত। অবশ্য কেয়ামত দিবস অবধি এবং ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه)-এর জন্যে (মু‘মিনদের) চোখের পানি যতদিন ঝরবে ততোদিন পর্যন্ত আল্লাহর লা‘নত তাদের সবার উপর পতিত হোক; তাদের বন্ধু-বান্ধব, সমর্থক, দলবল এবং ভক্তদের উপরও পতিত হউক!’’
➤ইমাম আলূসী, তাফসীরে রুহুল মা‘য়ানী, সুরা মুহাম্মদ, ১৩/২২৯ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ- ১৪১৫হিজরি।
হাফেজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (ওফাত.৯১১হি.) বলেন-
فأبوا إلا قتله، فقتل وجيء برأسه في طست حتى وضع بين يدي ابن زياد، لعن الله قاتله وابن زياد معه ويزيد أيضًا.
-‘‘তারা (ইয়াযিদ বাহিনী) ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) কে শাহাদাত বরণ বা হত্যা ছাড়া অন্যকিছু মানলো না। তাকে শহীদ করে তাঁর শির মোবারক ইবনে যিয়াদের সামনে একটি থালায় করে আনা হয়। করেন এবং আপনার কর্তিত শির ইবনে যিয়াদের সামনে একটি থালায় করে আনা হয়। আপনাকে যে ব্যক্তি হত্যা করেছে তার উপর আল্লাহর লা‘নত (অভিসম্পাত); আরও লা‘নত ইবনে যিয়াদ ও ইয়াযিদের উপর।’’
➤ইমাম সুয়ূতী, তারীখুল খোলাফা, সুরা মুহাম্মদ, ১৬৭ পৃষ্ঠা, দারু ইবনে হাযম, বয়রুত, লেবানন, প্রথম প্রকাশ- ১৪১৫হিজরি।
অনুরূপ ইমাম আসকালানী, যাহাবী, ইবনে আসির, ইবনে কাসির, আব্দুল হক মুহাদ্দিস, মোল্লা আলী ক্বারী প্রমুখ তাকে কাফির ও লা‘নত দেয়ার উপযোগী বলেছেন।
➤ যাহাবী, তারিখুল ইসলামী, ৫/৩০ পৃষ্ঠা, ও সিয়ারু আলামিন আন-নুবালা, ৪/৩৭-৩৮ পৃষ্ঠা, ইবনে কাসির, বেদায়া ওয়ান নেহায়া, ৮/২৮৩ পৃষ্ঠা, আসকালানী, আল-ইমতা বিল আরবাঈন, ৯৬ পৃষ্ঠা, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ- ১৯৯৭ইং ও তাহযীবুত-তাহযীব, ৬/৩১৩ পৃষ্ঠা, তাফসীরে মাযহারী, ৫/২১১-২১২ পৃষ্ঠা, ইবনে আসির, তারীখে আল-কামিল, ৩/৪৫০ পৃষ্ঠা, তারীখে তবারী, ৫/২১২ পৃষ্ঠা,
ইয়াযিদের আলোচনা এখানে সংক্ষিপ্ত করা হলো; বিস্তারিত আমার লিখিত উপরে উল্লেখিত কিতাবে পাবেন।
(১ম খন্ড) সমাপ্ত
বি. দ্র. এ প্রথম খন্ডে মাত্র আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের সংক্ষিপ্ত আকায়েদের পরিচিতি উল্লেখ করা হল। দ্বিতীয় খন্ডে বাকী বিস্তারিত আকীদার আলোকপাত পাবেন ইনশাআল্লাহ।