ইয়াজিদ সম্পর্কে ইমাম বুখারী (রহ) এর নামে মিথ্যাচারকারী ড জাকির নায়েকের জবাব :

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

জাকির নায়েক তার কাজকে সঠিক প্রমান করার জন্য যুক্তি প্রদান করে যে,

“ সহীহ বুখারীতে একটি হাদীস আছে যেখানে বলা হয়েছে যে যারা কনস্টান্টিনোপল (কুসতুনতুনিয়া) জয় করবেন তাঁরা জান্নাত পাবেন এবং ইয়াজিদ ছিল ঐ বাহিনীর কমান্ডার” 

www.youtube.com/watch?v=R1qgyHCb0Jw

________________________________

এই ব্যক্তি সহীহ বুখারীর নামে সম্পূর্ন মিথ্যা কথা বলেছে।

________________________________

সহীহ বুখারীতে এমন কোন হাদীস নেই যেখানে বলা হয়েছে যে,

“যারা কনস্টান্টিনোপল (কুসতুনতুনিয়া) জয় করবেন তাঁরা জান্নাত পাবেন এবং ইয়াজিদ ছিল ঐ বাহিনীর কমান্ডার”।

ইহা সহীহ বুখারীর নামে সরলপ্রান মুসলিমগনকে বিভ্রান্ত করার একটি ঘৃন্য প্রচেষ্টা । হাদীসের নামে যারা মিথ্যা কথা বলে তাদের ইসলাম নিয়ে কথা বলার কোন অধিকার থাকতে পারে না।

হাদীসের নামে জেনেশুনে মিথ্যা কথা বলা রসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম’র সঙ্গে ও ইসলামের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।

★ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

“ যে ব্যক্তি আমার সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে তার ঠিকানা জাহান্নাম”

[তথ্যসূত্র ; সহীহ বুখারী, খন্ড ০১, পৃ. ৪১, হাদীস ১০৬]

উক্ত ইয়াজিদ’র প্রেমে আসক্ত ব্যাক্তি তার কাজকে সঠিক প্রমান করার জন্য সহীহ বুখারীর সুবিখ্যাত তফসীরকার ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) এর নামেও সম্পূর্ন মিথ্যা কথা বলেছেন।

তিনি বলেছেন, “ ইবনে হাজার যেখানে বুখারীর তফসীরে তাকে (ইয়াজিদকে) জান্নাতী বলেছেন, সেখানে আমি কিভাবে তাকে (ইয়াজিদকে) অভিশাপ দিতে পারি”?

[www.youtube.com/watch?v=R1qgyHCb0Jw]।

________________________________

এটিও সম্পূর্ন মিথ্যা এবং বানোয়াট কথা ।

________________________________

উক্ত ইয়াজিদ আসক্ত ব্যাক্তি ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) এর নামে সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বানিয়ে  ফেললেন।

আসুন, দেখে নিই, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)ইয়াযিদ সম্পর্কে ঠিক কি বলেছেন :

১.

ইমাম ইবনে হাজার ইয়াজিদের ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে ধূলিসাৎ করেছেন :

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) তাঁর তফসীরে, ইয়াজিদের ‘মাগফুর’ বা ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে ধূলিসাৎ করেছেন এভাবে , “

ইবনে মুহলাব বলেছেন যে, এই হাদীসে আমীর মুয়াবিয়ার কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে কারন তিনি প্রথম নৌ অভিযান করেছিলেন এবং এই হাদীসে ইয়াযিদের কথাও ইঙ্গিত করা হয়েছে কারন সে প্রথম কাইসারের নগরী আক্রমন করেছিল (এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা কারন ইয়াযিদ প্রথম যুদ্ধে অংশগ্রহন করে নি সে অনেক পরের একটি অভিযানে তার পিতা কর্তৃক শাস্তিস্বরুপ প্রেরিত হয়েছিল- লেখক)

কিন্তু, ইবনে আল তীন এবং ইবনে আল্ মূনীর এর উত্তর দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, ইহা অপরিহার্য নয় যে, ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে সকলেই এই ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত কারন উলামায়ে ক্বিরাম তথা জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ সকলেই একমত যে, তারাই এই ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত হবে যারা প্রকৃতই তার উপযুক্ত হবে কারন আক্রমনকারীদের মধ্যে যদি কেউ পরে মুরতাদ হয়ে যায় তাহলে সে আর ক্ষমাপ্রাপ্তগনের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে না এবং এটা প্রমান যে উক্ত হাদীসে উল্লেখিত ক্ষমাপ্রাপ্তির বিষয়টি শর্তাধীন।

[ তথ্যসূত্র : ফাতহুল বারী শারাহ সাহীহ বুখারী – ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী – খন্ড নং ৬ – পৃ নং ২০০-২০১ ]

________________________________

দেখা যাচ্ছে যে, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) যে ধারণাটিকে খন্ডন করলেন উক্ত ইয়াজিদ আসক্ত ব্যাক্তি ঐ ধারণাটিকেই তাঁর নামে চালিয়ে দিলেন।

________________________________

২.

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) তাঁর ‘আল ইমতা বিল আরবাঈন’ গ্রন্থের শিরোনামই দিয়েছেন

              “`’ইয়াযীদের প্রতি লা’নত““

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) লিখেছেন,

“ইয়াযীদকে ভক্তি ও তার প্রশংসা ’পথভ্রষ্ট, গোমরাহ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই করে না; আর তার ইমান তথা বিশ্বাস একেবারেই শূন্য। কেননা, ইয়াযীদের এমন সব বৈশিষ্ট্য ছিল যার ভক্ত, অনুরক্ত হলে কুফর তথা কুফরির তথা অবিশ্বাসের যোগ্য হতে হয; কারন, কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা এবং কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করাই হল ঈমানের লক্ষণ।”

[ তথ্যসূত্র : ‘আল-’এমতা বিল্ আরবাঈন আল-মাতবাইনাত আস্ সামা’আ’- ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী; পৃষ্ঠা নং ৯৬, দার আল-কুতুব আল-’এলমিয়্যা, বৈরুত, লেবানন হতে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত]

৩.

ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ)এর মতে, ইয়াযীদের প্রশংসা কারীকে কুড়িবার দোর্রা মারতে হবে : ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) লিখেছেন, “এয়াহইয়া ইবনে আব্দিল মুলক্ বিন আবি গানিয়্যা যিনি ’নির্ভরযোগ্য’ বর্ণনাকারীদের একজন’, তিনি ’নির্ভরযোগ্য’ বর্ণনাকারী নওফল বিন আবি আকরাব থেকে শুনেছেন: একবার খলীফা উমর ইবনে আবদিল আযীয (২য় উমর) এর দরবারে মানুষেরা ইয়াযীদ ইবনে মু’আবিয়া সম্পর্কে আলাপ করছিলেন। ওই সময় একজন লোক ইয়াযীদকে ‘আমীরুল মুমিনিন (ঈমানদারদের শাসক) খেতাবে সম্বোধন করে। এটি শুনে খলীফা ২য় উমর (রাগান্বিত হয়ে) তাকে বলেন, “তুমি ইয়াযীদকে আমীরুল মো’মেনীন ডেকেছ?” অতঃপর তিনি ওই লোকটিকে ২০টি দোর্রা মারার হুকুম দেন।

[ ‘তাহযিবুত্ তাহযিব’- ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী; খন্ড নং ৬, পৃষ্ঠা নং ৩১৩ ]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment