ইয়াজিদ কি কি কু-কর্ম করেছিল
===================
ইয়াজিদ তার তিন বছর নয় মাসের অবৈধ শাসনামলে যে তিনটি মহাপাপ ও অপরাধযজ্ঞের জন্য ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে কুখ্যাত ও ঘৃণিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছে।
এই তিনটি মহাপাপের মধ্যে প্রথমটি হল ৬১ হিজরিতে কারবালায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দৌহিত্র সায়্যেদ ইমাম হুসাইন বিন আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও তাঁর ছয় মাসের শিশুপুত্র হযরত আলী আসগরসহ নবী বংশের ১৮/২৭ জন সদস্যকে নৃশংসভাবে পিপাসার্ত অবস্থায় শহীদ করা। কারবালায় ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর আরো প্রায় ৬০ জন সমর্থকও বীরের মত লড়াই করে শহীদ হয়েছিলেন।
ইয়াজিদ বাহিনী ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর পবিত্র লাশসহ নবী-পরিবারের সদস্যদের লাশের উপর ঘোড়া ছুটিয়ে লাশগুলো দলিত-মথিত করেছিল এবং তাঁদের মস্তক ছিন্ন করে বর্শার আগায় বিদ্ধ করেছিল। তারা কারবালায় ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর শিবিরের তাঁবুগুলোতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে লুটপাট চালিয়েছিল। এ ছাড়াও নবী-বংশের নারী ও শিশুদেরকেও টেনে হিঁচড়ে শিকল পরিয়ে বন্দী অবস্থায় কুফার গভর্নরের দরবারে ও দামেস্কে ইয়াজিদের দরবারে নিয়ে গিয়েছিল খোদাদ্রোহী ইয়াজিদ বাহিনী। অভিশপ্ত ইয়াজিদের সামনে যখন ইমাম হুসাইন ইমাম বিন আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর পবিত্র শির মুবারক আনা হয় তখন সে বলেছিল, আহা! আমার পূর্বপুরুষরা যদি আজ বেঁচে থাকত তাহলে তারা দেখতে পেতেন যে কিভাবে আমি বদর এবং ওহুদ যুদ্ধে (মুসলমানদের হাতে) নিহত আমার (দাদা আবু সুফিয়ানের) আত্মীয়-স্বজনদের রক্তের বদলা নিয়েছি মুহাম্মদের কাছ থেকে!
ইয়াজিদের দ্বিতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মদীনা শহরে হামলা এবং মসজিদে নববীর অবমাননা ও তিন দিন ধরে ইয়াজিদ বাহিনীর হাতে মদীনায় লুট-পাট আর গণহত্যা চালানোসহ গণ-ধর্ষণের অনুমতি দেয়া।
ইয়াজিদের তৃতীয় মহাপাপটি ছিল পবিত্র মক্কার কাবা ঘরে হামলা চালিয়ে তা ধ্বংস করে দেয়া। পাষণ্ড ইয়াজিদের বর্বর সেনারা (কারবালার মহাঅপরাধযজ্ঞ সম্পাদনের তিন বছর পর) পবিত্র মক্কা অবরোধ করে। তারা মহান আল্লাহর ঘরে তথা পবিত্র কাবায় জ্বলন্ত ন্যাপথালিনযুক্ত অগ্নি-গোলা নিক্ষেপ করে কাবা ঘর জ্বালিয়ে দেয়। ফলে মক্কার বিশিষ্ট সাহাবীদের কাছে ইয়াজিদের খোদাদ্রোহী চরিত্রের বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়পবিত্র কাবাঘরে হামলার পরই খবর আসে যে কুখ্যাত জালিম ও অভিশপ্ত ইয়াজিদ মারা গেছে। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ৩৭ বছর । তাকে দামেস্কের বাব আস সাগিরে দাফন করা হয়।
অবশ্য মহাপাপী ও অভিশপ্ত ইয়াজিদের মৃত্যু সম্পর্কে কয়েকটি বর্ণনা রয়েছে।ইয়াজিদ “তার প্রাপ্যই তার প্রতি” এর জঘন্যতা।
তাফসীর, হাদীস, আকীদা, এবং ইতিহাস ও জীবনীর কিতাবগুলো থেকে যতদূর যানা যায়, তাতে দেখা যায় সালফে সালেহীনের নিকট গ্রহণযোগ্য এবং অনুকরণীয় কোন ইমামের কিতাবে ইয়াজিদের জন্য দোয়া করা বৈধ হওয়ার কথা আজ পর্যন্ত খুঁজে পাই নাই। কেউ তার নামের শেষে রাহিমাহুল্লাহ এ বাক্যেটি উল্লেখ করেন নি‼️
আল্লামা আলূসী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ইমাম বারযাঞ্জী তার ইশা’আহ গ্রন্থে, ইমাম হাইসামী তার সাওয়াইক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, ইমাম আহমাদকে তার ছেলে আব্দুল্লাহ জিজ্ঞাসা করেছিলেন ইয়াজিদের উপর লা’নত দেয়া যাবে কি না? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, কেন তাকে লা’নত দেয়া যাবেনা যাকে স্বয়ং আল্লাহ কুরআনে কারীমে লা’নত দিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ বললেন, আমি তো কুরআন শরীফ অধ্যয়ন করেছি, কিন্তু ইয়াজিদের লা’নতের বিষয়টি পাইনি। তখন ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ বললেন, আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,,
فَهَلْ عَسَيْتُمْ إِنْ تَوَلَّيْتُمْ أَنْ تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَتُقَطِّعُوا أَرْحَامَكُمْ
ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্নীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে।
أُولَٰئِكَ الَّذِينَ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فَأَصَمَّهُمْ وَأَعْمَىٰ أَبْصَارَهُمْ
এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন।
– সূরা মুহাম্মাদঃ ২২-২৩
এরপর ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন এযিদ যা করেছে তা থেকে অধিক ফাসাদ ও আত্মীয়তার বন্ধন বিনষ্ট করা আর কী হতে পারে?- রুহুল মা’আনী, ২৬ তম খন্ড, পেইজ নাম্বারঃ ৭২-৭৩
আল্লামা তাফতাযানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, সঠিক কথা হচ্ছে, ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করার ব্যাপারে ইয়াজিদের সম্মতি ছিল। তার উপর আল্লাহর লা’নত পড়ুক। লা’নত পড়ুক তাদের উপর যারা তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে।- ফায়দুল কাদীরঃ ৩/১০৯ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ
ইমাম যাহাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, لانسبه ولانحبه
ইয়াজিদ মদীনাবাসীদের সাথে যা করার তা করেছিল এবং ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে, তার ভাইদেরকে এবং পরিবারকে শহীদ করেছিল। সে মাতাল ছিল।
– তারিখুল ইসলামঃ ৫/৩০
– সিয়ারু আ’লামিন নুবালাঃ ৪/৩৭-৩৮
ইমাম হালাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন : হে আল্লাহ, যে ব্যক্তি মদীনা বাসীর উপর অত্যাচার করে এবং তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করে, তুমি তাকে ভয় প্রদর্শন কর। এমন ব্যক্তির উপর আল্লাহ, ফেরেশতাগণ এবং সকল মানুষের লা’নত বর্ষিত হোক।
” তবে কী বুঝা গেলো, বুঝা গেলো যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনা আক্রমণকারীর উপর লা’নত দিয়েছেন। সহীহ হাদীস তার প্রমাণ। ইতিহাসবীদ্গণ ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রমাণ করেছেন, ইয়াযিদের নির্দেশে মদীনা শরীফে হত্যা, লুঠ, ধর্ষণ হয়েছে। তাই এই পাপিষ্ঠ লা’নত পাবার উপযুক্ত।”
– মু’জামুল আওসাত লিত তাবারানীঃ ২/১২৫/১
– আস সিলসিলাতুস সাহীহাহ লিল আলবানীঃ ১/৬২০, ১/৩৫১
– আলা মাজমা’ লিল হাইসামীঃ ৩/৩০৬
– আসসীরাতুল হালাবিয়্যাহঃ ২/২৮৭
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ইয়াজিদ ও ইবনে যিয়াদ সহ ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হত্যাকারীদের উপর আল্লাহর লা’নত পড়ুক।
– তারীখুল খুলাফাঃ ২০৭
ইবনুল ইমাদ হাম্বালী রাহিমাহুল্লাহ ও আল্লামা ইয়াফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করেছে অথবা তার নির্দেশ দিয়েছে সে কাফের।
– শাযারাতুয যাহাবিঃ১/৬৮
কোন মু’মিন ইয়াজিদের মুহাব্বাত করতে পারে না; তাকে মুহাব্বাতকারী মু’মিন থাকতে পারে না।
উপর উক্ত আয়াত শরীফ, হাদীস শরীফ ও ইমামগনের ভাষ্য দ্বারা ইয়াজিদের উপর লা’নত দেয়া জায়েয।