30 – بَابُ مَا جَاءَ فِي قِرَاءَةِ الْإِمَامِ قِرَاءَةٌ لِـمَنْ خَلْفَهُ
104 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ مُوْسَىٰ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَدَّادٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ: «مَنْ كَانَ لَهُ إِمَامٌ فَقِرَاءَةُ الْإِمَامِ لَهُ قِرَاءَةً».
وَفِيْ رِوَايَةٍ: أَنَّ رَجُلًا قَرَأَ خَلْفَ النَّبِيِّ فِي الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ، وَأَوْمَأَ إِلَيْهِ رَجُلٌ، فَنَهَاهُ، فَلَـمَّا انْصَرَفَ، قَالَ: أَتَنْهَانِيْ أَنْ أَقْرَأَ خَلْفَ النَّبِيِّ ؟ فَتَذَاكَرَا ذَلِكَ حَتَّىٰ سَمِعَ النَّبِيُّ ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «مَنْ صَلَّىٰ خَلْفَ الْإِمَامِ، فَإِنَّ قِرَاءَةَ الْإِمَامِ لَهُ قِرَاءَةٌ».
وَفِيْ رِوَايَةٍ، قَالَ جَابِرٌ: قَرَأَ رَجُلٌ خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ ، فَنَهَاهُ رَسُوْلُ اللهِ .
وَفِيْ رِوَايَةٍ، قَالَ: صَلَّىٰ رَسُوْلُ اللهِ بِالنَّاسِ، فَقَرَأَ رَجُلٌ خَلْفَهُ، فَلَّمَا قَضَى الصَّلَاةَ، قَالَ: «أَيُّكُمْ قَرَأَ خَلْفِيْ»؟ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، فَقَالَ رَجُلٌ: أَنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ! قَالَ: «مَنْ صَلَّىٰ خَلْفَ الْإِمَامِ، فَإِنَّ قِرَاءَةَ الْإِمَامِ لَهُ قِرَاءَةٌ».
وَفِيْ رِوَايَةٍ، قَالَ: انْصَرَفَ النَّبِيُّ مِنْ صَلَاةِ الظُّهْرِ أَوِ الْعَصْرِ، فَقَالَ: «مَنْ قَرَأَ مِنْكُمْ: سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَىٰ»؟ فَسَكَتَ الْقَوْمُ، حَتَّىٰ سَأَلَ عَنْ ذَلِكَ مِرَارًا، فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ: أَنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ ! قَالَ: «لَقَدْ رَأَيْتُكَ تُنَازِعُنِيْ، أَوْ تُخَالِجُنِي الْقُرْآنَ».
বাব নং ৪৫.৩০. ইমামের কিরাতই মুক্তাদীর কিরাত
১০৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মুসা থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ্দাদ থেকে, তিনি হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, যার (নামাযে) ইমাম থাকবে, ইমামের কিরাতই তার জন্য যথেষ্ট।
অপর এক রেওয়ায়েতে আছে- এক ব্যক্তি নবী করিম (ﷺ) ’র পেছনে যোহর অথবা আসর নামাযে কিরাত পাঠ করে, তখন এক ব্যক্তি ইঙ্গিতে তা থেকে নিষেধ করেন। যখন তিনি নামায থেকে অবসর হলেন তখন বললেন, তুমি কি আমাকে রাসূল (ﷺ) ’র পিছনে পড়া থেকে বাঁধা প্রদান করছ? অতঃপর উভয়ে এটা নিয়ে তর্ক করতে লাগল। ফলে এটা রাসূল (ﷺ) শুনে ফেললেন। তখন তিনি বললেন, যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে নামায পড়বে, তখন ইমামের কিরাতই তার কিরাত হবে।
অন্য এক রেওয়াতে আছে, হযরত জাবির (رضي الله عنه) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূল (ﷺ) ’র পিছনে কিরাত পাঠ করে। তখন তিনি তাকে কিরাত পাঠ থেকে নিষেধ করেন।
অপর এক রেওয়ায়েতে আছে- হযরত জাবির (رضي الله عنه) বলেন, একবার রাসূল (ﷺ) লোকদের নামায পড়ান। তখন তাঁর পিছনে এক ব্যক্তি কিরাত পড়েন। নামায শেষে তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে কে আমার পিছনে কিরাত পড়েছ? এটা তিনি তিনবার বললেন। তখন এক ব্যক্তি আরয করল, আমি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন তিনি বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে নামায পড়বে, ইমামের কিরাতই তার কিরাত হিসেবে গণ্য হবে।
অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে নবী (ﷺ) একবার যোহর অথবা আসর নামায শেষ করার পর জিজ্ঞাসা করেন, তোমাদের মধ্যে سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَىٰ পাঠ করেছ কে? (আদবের খাতিরে) সবাই চুপ থাকে। ফলে তিনি একই কথা তিনবার জিজ্ঞাসা করলেন। তখন মুক্তাদীদের মধ্য থেকে একজন আরয করল, আমি, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তখন তিনি বললেন, নিশ্চয়ই আমি দেখছি যে, তোমরা আমার পবিত্র কুরআন নিয়ে ঝগড়া করছ, অথবা কুরআন পড়ার মধ্যে তোমরা আমাকে চিন্তার মধ্যে ফেলে দিচ্ছ। (ইবনে মাজা, ১/২৭৭/৮৫০)
ব্যাখ্যা: ইমামের পিছনে মুক্তাদীর সূরা ফাতিহা পাঠ করা এবং না করা সম্পর্কে আইম্মায়ে কিরামের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মতে উচ্চস্বরের নামায হোক যেমন ফজর, মাগরীব, এশা ও জুমা অথবা নিন্মস্বরের নামায হোক যেমন যোহর ও আসর, কোন অবস্থাতেই ইমামের পিছনে মুকতাদীর সূরা ফাতিহা পড়তে হবে না। হযরত জাবির (رضي الله عنه), হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (رضي الله عنه) হযরত আলী (رضي الله عنه), হযরত ওমর (رضي الله عنه) হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মসউদ (رضي الله عنه) হযরত সুফিয়ান সওরী (رحمة الله), সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা (رحمة الله) ইবনে আবি লায়লা (رضي الله عنه), হাসান ইবনে সালেহ ইবনে হাসান, ইব্রাহীম নখঈ (رحمة الله) সহ আরো অনেকেই এ মত পোষণ করেন। মোটকথা প্রখ্যাত সাহাবী ও তাবেয়ীগণ এই মত পোষণ করতেন। আল্লামা আইনী (رحمة الله) বলেন, প্রথম যুগের মর্যাদা সম্পন্ন ৮০ জন সাহাবী ইমামের পিছনে কিরাত পাঠ না করার পক্ষে সমর্থন করেছেন। কারো কারো মতে এই সংখ্যা আরো বৃদ্ধি হয়ে ইজমা হওয়ার স্থর পর্যন্ত পৌঁছেছে। হেদায়া প্রণেতা বলেন ইমামের পিছনে কিরাত না পড়ার ক্ষেত্রে সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে ইজমা হয়েছে।
দলীল: (১) ইমাম মালেক (رحمة الله) মুয়াত্তা গ্রন্থে ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে হাদিস বর্ণনা করেন, যখন তোমাদের কেউ ইমামের পিছনে নামায পড়বে তখন ইমামের কিরাত তার (মুক্তাদীর জন্য) যথেষ্ট। আর যখন কেউ একাকী নামায পড়বে তখন কিরাত পড়বে। আর ইবনে ওমর (رضي الله عنه) ইমামের পিছনে কিরাত পড়তেন না।
(২) ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) ‘কামেল’ নামক গ্রন্থে আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তির ইমাম থাকবে তবে ইমামের কিরাতই তার কিরাত।
(৩) ইমাম তাহাভী (رحمة الله) ‘শরহে মাআনীউল আসার’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মুকাসিম (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه), যায়েদ ইবনে সাবিত (رضي الله عنه) এবং জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه)’র নিকট এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে উত্তরে তারা বলেন, কোন নামাযেই ইমামের পিছনে কিরাত পড়বে না।
(৪) ইমাম মুহাম্মদ বিন হাসান (رحمة الله) স্বীয় সনদে স্বীয় মুয়াত্তা গ্রন্থে হযরত আবু ওয়ায়েল (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি ইবনে মসউদ (رضي الله عنه)’র কাছে ইমামের পিছনে কিরাত পড়া প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন- চুপ থাকবে। কেননা নামায শুধু একটি কাজ আর তোমাদের জন্য ইমামই যথেষ্ট। উক্ত কিতাবে হযরত সা’দ (رضي الله عنه)’র কোন সন্তান থেকে বর্ণিত আছে যে, হযরত সা’দ (رضي الله عنه) বলেছিলেন, যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে কিরাত পড়ে আমার ইচ্ছে হয় যে, তার মুখে আগুনের কয়লা ঢেলে দিতে।
(৫) ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله) স্বীয় ‘মুযাত্তা’ গ্রন্থে স্বীয় সূত্রে হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যে ইমামের পিছনে কিরাত পড়ে তার মুখে যদি পাথর হত।
(৬) ইমাম তাহাভী (رحمة الله) স্বীয় সনদে আবু জামরাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে, ইমামের পিছনে কিরাত পড়বো? তিনি বললেন না।
(৭) ইমাম ইবনে আবি শায়বা (رحمة الله) স্বীয় ‘মুসান্নিফ’ গ্রন্থে হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমরা ইমামের পিছনে কিরাত পড়না। চাই উচ্চস্বর বিশিষ্ট নামায হোক কিংবা নিন্মস্বর বিশিষ্ট নামায হোক।
(৮) ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله) বলেন, হযরত আলী (رضي الله عنه) এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইমামের পিছনে কিরাত পড়ছে সে স্বভাব-চরিত্রে ভুল করেছে।
➥ গোলাম রাসূল (ﷺ)সাইদী, শরহে মুসলিম, উর্দু, গুজরাট, খন্ড ১, পৃষ্ঠাঃ ১১৩৪
উল্লেখ্য যে, ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মাযহাব অত্যন্ত শক্তিশালী দলীলের উপর প্রতিষ্ঠিত। কেননা কুরআন-হাদিসে এর স্বপক্ষে দলীল-প্রমাণ তো আছেই, তাছাড়া কিয়াস ও এর সমর্থন করে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে واذا قرى القران فاستمعوا له وانصتوا “যখন পবিত্র কুরআন পাঠ করা হয়, তা শ্রবণ কর এবং চুপ থাক।” (সূরা আ’রাফ, আয়াত, ২০৪) এ ব্যাপারে প্রায় সবাই একমত যে, এই আয়াত ইমামের পিছনে সূরা ফাতিহা পাঠ সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। রাসূল (ﷺ) ’র পিছনে একজন মুকতাদী সূরা ফাতিহা পাঠ করলে এই আয়াত নাযিল হয়। ইমাম আহমদ (رحمة الله) থেকে ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) বর্ণনা করেন- اجمع الناس على ان هذه الاية فى الصلوة “ফোকাহাগণ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, এই আয়াত নামায সম্পর্কে নাযিল হয়েছে।” ➥ শরহে সহীহ মুসলিম, উর্দূ, খন্ড ১ম, পৃষ্ঠাঃ ১২৩৭
মুজাহিদ থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (ﷺ) নামাযে কিরাত পাঠ করছিলেন, এ সময় তিনি পিছন থেকে একজন আনসারীর কিরাতের শব্দ শুনতে পেলেন। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। এই মাসয়ালায় ইমামগণের মাযহাব: হানাফী মাযহাব মতে ইমামের পিছনে মুকতাদীর কিরাত পড়া মাকরূহে তাহরীমা। ইমাম শাফেঈ (رحمة الله)’র মতে উচ্চস্বরের নামায হোক কিংবা নিন্মস্বরের নামায হোক ইমামের পিছনে কিরাত পড়া ওয়াজিব। ইমাম মালিক ও ইমাম আহমদ (رحمة الله)’র মতে উচ্চস্বরের নামাযে ইমামের পিছনে মুক্তাদীর কিরাত ওয়াজিব নয়। তবে কুরআন হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের দৃষ্টিকোণ থেকে ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মাযহাব অধিক সঠিক বলে মনে হয়।