নাম ও নসবনামা: তাঁর নাম আব্দুর রহমান। উপনাম আবুল ফদল। পিতার নাম কামাল উদ্দিন। কিন্তু তিনি সারাবিশ্বে জালাল উদ্দিন সুয়ুতি নামে পরিচিত। তাঁর নসবনামা হল ‘আবুল ফদল জালাল উদ্দিন আব্দুর রহমান বিন কামাল উদ্দিন আবি বকর বিন মুহাম্মদ বিন সাবিক উদ্দিন বিন উসমান আস সুয়ুতি আশ শাফেয়ী।’
বেলাদতশরীফ: ইমাম সুয়ুতি ৮৪৯ হিজরি পহেলা রজব মিশরের নীল নদীর পশ্চিম তীঁরে অবস্থিত সুয়ুত নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র পাঁচবছর বয়সেই তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন।
ইলম অর্জন: বাল্যকাল থেকেই ইমাম সুয়ুতি অত্যন্ত মেধাবী ও চমৎকার স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছিলেন। মাত্র আটবছর বয়সে তিনি কুরআনুল কারীম হিফ্জ করেন। যেমন তিনি নিজেই বলেছেন-
قال ونشأت يتيما- فحفظت القران ولى دون ثمانى حسنين ثم حفظت العمدة ومنهاج الفقه والاصول والفية ابن مالك
অর্থ: আমি এতিম হিসেবে জীবন শুরু করি। প্রথমে আমি আটবছর বয়সে কুরআনুল কারীম হিফ্জ করি। অতঃপর উমদাহ ‘মিনহাজুল ফিক্হ’ ‘আল উসূল’ এবং ‘আল ফিয়াতু ইবনে মালিক’ মুখস্ত করি।
ইমাম সুয়ুতি জগতবিখ্যাত উলামায়ে কেরামদের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন- ورزقت التبحر فى سبعة علوم অর্থ: আমি সাতটি বিষয়ে পারদর্শীতা অর্জন করি। তা হলো- তাফসির, হাদিস, ফিক্হ, নাহু, মায়ানী, বায়ান এবং মানতিক। এছাড়াও তিনি ফারাইয ও আরবি ভাষাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর ইলম অর্জন করেন। তিনি দুইল হাদিসের হাফিজ ছিলেন।
আসাতিযায়ে কেরামগণ: ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ুতি কুরআন হাদিসের ইলম অর্জনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করেছেন। তিনি শ্যাম, হিজাজ, ইয়ামন, হিন্দ, মাগরিব তাকরুরসহ বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করেন। তিনি কামালউদ্দিন ইবনে হুমাম, জালাল উদ্দিন মহল্লী, ইলমুদ্দিন বুলকিনী, শিহাবউদ্দিন আশ শারমাসাহী, ইমাম মানাভী, ইমাম শামনী, ইমাম আল কাফিজীসহ অসংখ্য উলামায়ে কিরামদের কাছ থেকে ইলম অর্জন করেন। তাঁর ছাত্র শা’রানী বলেছেন- ইমাম সুয়ুতি ছয় শতাধিক শায়খের কাছ থেকে ইলম অর্জন করেছেন।
আখলাক: ইমাম সুয়ুতি অত্যন্ত খোদাভীরু, তাকওয়াবান ও পরহেজগার লোক ছিলেন। জীবনের বেশিরভাগ সময় তিনি দ্বীনি খেদমতে কাটিয়েছেন। নাজমুদ্দিন আল কুরী الكوكب السائرة باعيان المائة العاشر গ্রন্থে বলেছেন- চল্লিশ বছর বয়স হবার পর থেকে তিনি দুনিয়ার আরাম-আয়েশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকতেন। তিনি একাকী ও নির্জনতাকে পছন্দ করতেন। এমনকি পরিবার-পরিজন থেকেও মুখ ফিরিয়ে নেন, যেন তিনি কাউকে চিনেন না। সদা-সর্বদা কিতাবাদী গবেষণাতে মশগুল থাকতেন। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি ‘রওদাতুল মিকয়াছ’ নামক স্থানে অবস্থান করেন। ঘরের দরজা জানালা পর্যন্ত খুলতেন না। বিভিন্ন বিত্তশালী আমিরগণ মূল্যবান উপঢৌকন নিয়ে তাঁর জিয়ারতে আসতেন। কিন্তু তিনি তা ফিরিয়ে দিতেন।
কিতাবাদী: ইমাম সুয়ুতি বিভিন্ন বিষয়ের উপর অসংখ্য কিতাবাদী রচনা করেছেন। আল ইদরূসী النور السافرة গ্রন্থে বলেছেন-
ووصلت مصنفاته نحو الستمائة مصنفا-
অর্থ: তাঁর রচনাবলী ছয়শত পর্যন্ত পৌঁছেছে। নিম্নে তাঁর বিখ্যাত কয়েকটি কিতাবের নাম প্রদত্ত হলো-
১. আল ইতকান ফি উলুমিল কুরআন।
২. আদ দুররুল মানসুর ফি তাফসিরি বিল মা’ছুর।
৩. লুবানুন নুকুল ফি আসবাবিন নুজুল।
৪. তাফসিরে জালালাইন।
৫. হাশিয়াতু আলা তাফসিরে বায়জাবী।
৬. শরহু ইবনে মাজাহ।
৭. তাদরীবুর রাওয়ী।
৮. শরহুস সুদুর বি শরহে হালিল মাওতা ওয়াল কুবুর।
৯. আল বুদুরুস সাফিরাহ আন উমুরিল আখিরাহ।
১০. আত তিব্বুন নাবাওয়ী।
১১. আল আশবাহু ওয়ান নাজাইর।
১২. আল হাবী লিল ফাতাওয়া।
১৩. তারিখুল খুলাফা।
ওফাত শরীফ: ইসলামের এই মহান খাদিম, মুজাদ্দিদে দ্বীন ইমাম সুয়ুতি ৯১১ হিজরি সনের ১৯ জামাদিউল উলা, শুক্রবার রাতে ‘রওদাতুল মিকয়াস’ নামক স্থানে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বৎসর ১০ মাস ১৮ দিন।
আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন। আমিন।