আহলে বাইতের ভালবাসা ফরয

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

কিতাবঃ মানাকিবে আহলে বাইত

লেখক, অনুবাদক, সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি

অধ্যায়ঃ ২

❏ আহলে বাইতের ভালবাসা ফরয।

✧ আয়াত ১-২

✧ হাদীস ১-১২

❏ আহলে বাইত (عليه السلام)-এর অনুসরণ ব্যতিত কোন আমল কাজে আসবে না।

✧ প্রমাণ ১-৩

❏ আহলে বাইতের সম্মান ও হক্ব।

✧ হাদীস ১-৫

❏ আহলে বাইতে বিদ্বেষ পােষণকারী, তাঁদের পরিত্যাগকারী জাহান্নামী।

✧ হাদীস ১-১২

❏ আহলে বাইত সর্বোত্তম বংশ মর্যাদার অধিকারী।

✧ হাদীস ১-৭

❏ আহলে বাইত নাযাতপ্রাপ্ত।

✧ হাদীস ১-৮

❏ আহলে বাইত (عليه السلام)-ই জান্নাত ও জাহান্নামের বণ্টনকারী।

✧ হাদীস ১-২

❏ আহলে বাইতকে মুহাব্বতকারীদের জন্য শাফায়াত।

✧ হাদীস ১-৯

❏ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও আহলে বাইতের উপর দুরুদ পাঠ।

✧ হাদিস ১-১৯

❏ আহলে বাইতের নামের পরে (عليه السلام) ব্যবহার।

✧ প্রমাণ ১-১৬

আহলে বাইতের ভালবাসা ফরযঃ

আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়ুতী বর্ণনা করেন যে, পবিত্র কোরআন ও নবী (صلى الله عليه و آله و سلم)-এর হাদীস হতে এটা প্রমাণিত হয় যে, আহলে বাইত আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন (عليه السلام)-এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) দ্বীনের ফরায়েজে গণ্য; সুতরাং ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এটার সমর্থনে এরূপ সনদ দিয়েছেন যে, “ইয়া আহলে বাইত-এ রাসূল, আল্লাহ তাঁর নাজিল করা পবিত্র কোরআনে আপনাদের মুয়াদ্দাতকে ফরজ করেছেন, যারা নামাজে আপনাদের উপর দরুদ পড়বে না, তাদের নামাজই কবুল হবে না”। 

[সূত্রঃ ইবনে হাজার মাক্কীর, সাওয়ায়েকুল মুহরেকা, পৃঃ ১০৩]।

পবিত্র কোরআনে, মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর আহলে বাইত-এর ভালবাসা ও অনুসরণ ফরজ করা হয়েছে।

❏ আয়াত ১:

“বলুন, যে পারিশ্রমিকেই আমি তোমাদের কাছ চেয়ে থাকি না কেন, তা তো তোমাদেরই জন্য।” [সূরা-সাবা, আয়াত ৪৭]।

❏ আয়াত ২:

“বলুন, আমি আমার রিসালাতের দায়িত্ব পালনের বিনিময়ে তোমাদের কাছে কিছুই চাই না, কেবল আমার আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা ব্যতিত।” [সূরা-শুরা, আয়াত-২৩]

❏ হাদীস ১:

أخرج سعید بن منصور في سننه عن سعید بن جبیر رضی الله عنه في قوله تعالى: (قل لآ أسئلكم عليه أجرا إلا ألمودة في القربي) قال: قربی رسول الله صلى الله عليه وسلم.

হযরত সাঈদ ইবনে মনসুর তাঁর সুনান এ বর্ণনা করেছেন হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (رضي الله عنه) হতে, তিনি আল্লাহ তা’আলার বাণী ,

 قليلة لآأسئلکم علیه أجراها إلا المودة فی القربی  

অর্থাৎ, হে রাসূল (ﷺ) আপনি বলে দিন, (নবুয়তি দায়িত্ব পালনের) জন্য আমি তােমাদের থেকে কোন বিনিময় চাইনা, শুধু আমার নিকটাত্মীয়দের ভালবাসা ব্যতিত। (সূরা আশ শূরা ২৩) সম্পর্কে মন্তব্য করেন। তিনি (হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (رضي الله عنه) বলেন, القربی বা নৈকট্য প্রাপ্তরা হচ্ছেন, রাসূল (ﷺ) এর নিকট আত্মীয়।

তথ্যসূত্রঃ

১. জামেউল বয়ান- তাবারী -১১:১৪৪।

২. যাখায়েরুল উকবা, মুহীব্বুত তাবারী- পৃষ্ঠা: ৩

৩. অনুরূপ দাবি করেছেন- ইবনুসসির।

৪. আদদুররুল মনছুর, লিখক- জালালুদ্দীন সুয়ুতী, ৫: ৭০১। 

৫. বুখারীতেও অনুরূপ রয়েছে।

❏ হাদীস ২:

أخرج ابن المنذر، وابن ابی حاتم وابن مردويه في تفاسيرهم، والطبراني في المعجم الكبير عن ابن عباس رضي الله عنهما، لما نزلت هذه الآية: (قل لآ أسئلكم عليه أجرا إلا المودة فی القربی) قالوا: يا رسول الله من قرابتك هؤلاء الذين وجبت مودتهم؟ قال صلى الله عليه وسلم: علی، وفاطمة، وولداهما؛

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যখন 

 قل لآ أسئلکم علیه أجراإلا المودةفی القربی; 

হে রাসূল (ﷺ) আপনি বলে দিন, (নবুয়তি দায়িত্ব পালনের) জন্য আমি তােমাদের থেকে কোন বিনিময় চাইনা, শুধু আমার নিকটাত্মীয়দের ভালবাসা ব্যতিত। (সূরা আশ শূরা ২৩) আয়াতটি নাযিল হয় তখন সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনার ঐসব নিকটত্মীয় কারা, যাদেরকে ভালবাসা আমাদের ওপর আবশ্যক? তিনি [রাসূলুল্লাহ (ﷺ)] উত্তরে ইরশাদ করলেন, (তারা হল) আলী, ফাতিমা এবং তাদের দু’সন্তান।

তথ্যসূত্রঃ

১. আল জামে’ লি আহকামিল কুরআন (তাফসীরে কুরতবী)- ইমাম কুরতুবী – ৮:২১। 

২. তাফসীরে কাবীর- ফকরুদ্দীন রাজী ২৭:১৬৬। 

৩. আল মু’জামুল কাবীর- ইমাম তাবরানী-৩: ৪৭ (২৬৪১)/১১: ৩৫১ (১২২৫৯)।

৪. মাজমাউজ জাওয়ায়েদ আল হায়ছামী ৯:১৬৮/৭:১০৩।

৫. আদ দুররুল মনছুর- লিখক (জালালুদ্দীন সুয়ূতী) – ৫:৭০১।

৬.ইবনুল মুনযির, 

৭.ইবনে আবি হাতিম 

৮.ইবনে মারদাওইয়্যাহ প্রমূখ তাফসীর কারকগণ।

❏ হাদিস ৩:

হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেছেন যে, যখন এই আয়াত নাযিল হলো তখন সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) কাঁরা আপনার নিকট আত্মীয়? যাদের মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) পবিত্র কোরআনে উম্মতের উপর ফরজ করা হয়েছে। উত্তরে নবী (ﷺ) বললেন-আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্য)।”

[সূত্রঃ কোরআন শরীফ (শুরা,২৩) (আশরাফ আলী থানভী), পৃঃ-৬৯২;তাফসীরে মাজহারী, খঃ-১১, পৃঃ-৬৩ (ই,ফাঃ); তাফসীরে নুরুল কোরআন (মাওলানা আমিনুল ইসলাম),খঃ-২৫, পৃঃ-৬৭; মাদারেজুন নাবুয়াত, খঃ-৩, পৃঃ-১১৭, শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী তাফসীরে দূররে মানসুর, খঃ-৬, পৃঃ-৭ (মিশর); তাফসীরে যামাখশারী, খঃ-২, পৃঃ-৩৯৯, (মিশর); তাফসীরে তাবারী, খঃ-২৫, পৃঃ-২৫ (মিশর); তাফসীরে কাশশাফ, খঃ-৩, পৃঃ-৪০২; খঃ-৪, পৃঃ-২২০ (মিশর); তাফসীরে কাবীর, খঃ-২৭, পৃঃ-১৬৬ (মিশর); তাফসীরে বায়যাভী, খঃ-৪, পৃঃ-১২৩ (মিশর); তাফসীরে ইবনে কাসির, খঃ-৪, পৃঃ-১১২ (মিশর); তাফসীরে কুরতুবি, খঃ-১৬, পৃঃ-২২ (মিশর); তাফসীরে নাসাফী, খঃ-৪, পৃঃ-১০৫ (মিশর); তাফসীরে আবু সাউদ, খঃ-১, পৃঃ-৬৬৫; তাফসীরে জামে উল বায়ান, (তাবারী), খঃ-২৫, পৃঃ-৩৩; তাফসীরে আল আকাম, খঃ-২, পৃঃ-১২১; তাফসীরে বাহরুল মুহিয়াত (ইবনে হাইয়্যান), খঃ-৯, পৃঃ- ৪৭৬; তাফসীরে বিহার আল মাদিদ (ইবনে আজি), খঃ-৫, পৃঃ-৪৩১; তাফসীরে আবু সাউদ, খঃ-৬, পৃঃ-৮০; তাফসীরে কাবীর, খঃ-১৩, পৃঃ-৪৩২; তাফসীরে বাইদাবী, খঃ-৫, পৃঃ-১৫৩; তাফসীরে আল নাসাফী, খঃ-৩, পৃঃ-২৮০; তাফসীরে আল নিশাবুরি, খঃ-৬,পৃঃ-৪৬৭; ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-১৭৩, (উর্দ্দু); আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-১০২, ৫৮৭, (উর্দ্দু)]।

❏ হাদীস ৪:

ইমাম আহমদ, ইমাম তিরমিজী (তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন) ইমাম নাসায়ী এবং হাকেম প্রমূখ হযরত মুত্তালিব ইবনে রাবীয়াহ্ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন,

أخرج أحمد، والترمذي وصححه، والنسائی، والحاکم عن المطلب بن ربيعة رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: (والله لا يدخل قلب امریء مسلم إيمان، حتى يحبكم للهولقرابتی)

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আল্লাহর শপথ! ততক্ষণ পর্যন্ত কোন মুসলিমের ক্বলবে ঈমান প্রবেশ করবেনা, যতক্ষন সে তােমাদেরকে আল্লাহ ও আমার নিকটাত্মীয়দের কারণে (ওয়াস্তে) ভালবাসবেনা।

তথ্যসূত্রঃ

১. মুসনাদ এ ইমাম আহমদ ১:৩৪২ (১৭৮০)/৫:১৭২ (১৭০৬১)।

২. তিরমীজি- ৫: ৬১০ (৩৭৫৮)।

৩. নাসায়ী-৫:৫১ (৮১৭৫)।

৪. আল মুসতাদরিক- ৪:৮৫:৬৯৬০।

৫. তিবরিযিঃ মিশকাত পৃঃ ৫৭০।

❏ হাদীস ৫:

أخرج الطبراني في الأوسط عن عبد الله بن جعفر رضي الله عنهما قال سمعت رسول اللهﷺ يقول: يابنی هاشم، إني قد  سألت الله أن يجعلكم نجداء رحماء. وسألته أن يهدي ضالكم، ويؤمن خائفكم، ويشبع جائعكم. والذي نفسي بيده، لا يؤمن أحد حتى يحبكم بحبي. أترجون أن تدخلوا الجنة بشفاعتی، ولا يرجوها بنوعبد المطلب؟

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জা’ফর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, কোন ব্যক্তি ততক্ষণ ঈমানদার হবেনা, যতক্ষণ না সে তােমাদেরকে আমার কারণে ভাল বাসবে।”

তথ্যসূত্রঃ

আল্ মু’জামুল আওসাত, ৮:৩৭৩ (৭৭৫৭)।

❏ হাদীস ৬:

أخرج ابن النجار في تاريخه عن الحسن بن علی رضی الله عنهما قال: قال رسول الله ﷺ لكل شيء أساس، وأساس الإسلام حب أصحاب رسول اللهﷺ وحب أهل بيته؛

ইবনে নাজ্জার তার ‘তারীখ’-এ হযরত হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “প্রত্যেক কিছুর একটি মূল আছে। আর ইসলামের মূল হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাহাবাদের এবং তার পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)’কে ভালবাসা”।

তথ্যসূত্রঃ

‘আদ-দুররুল মনসুর জালালুদ্দীন সুয়ুতী, ৬:৭।

❏ হাদীস ৭:

ইমাম তিরমিজী (তিনি হাদীছটিকে হাসান বলেছেন) ও ইমাম তাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

أخرج الترمذي وحسنه، والطبراني عن ابن عباس رضی الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: أحبوا الله لما يغذوكم به من نعمه، وأحبونی لحب الله، وأحبوا أهل بیتی لحبی۔

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ তা’আলা তার নেয়ামতরাজি দ্বারা তােমাদেরকে যেভাবে পানাহার করান তার জন্য তাকে ভালবাস। আর আল্লাহর ভালবাসা পেতে আমাকে ভালবাস, আর আমার ভালবাসা পেতে আমার পরিবার-পরিজনকে ভালবাস।

তথ্যসূত্রঃ

১. তিরমীজি- ৫:৬৩৩ (৩৭৮৯), আর তিনি বলেছেন, হাদীছটি হাসান গরীব।

২. আল মুজামুল কবীর-ইমাম তাবরানী-৩:৪৬ (২৬৩৮)।

৩. আল মুসতাদরিক- ইমাম হাকেম- ৩: ১৬২ (৪৭১৬), আর তিনি বলেছেন, হাদীছটি সনদের দিক দিয়ে সহীহ, তবে তারা হাদীছটি বর্ণনা করেননি।

অনুরূপ বলেছেন, ইমাম যাহাবী এবং ইমাম বায়হাকী তার শুয়াবুল ঈমানে (২:১৩০/১৩৭৮)।

❏ হাদীস ৮:

أخرج الطبراني في الأوسط عن الحسن بن علی رضي الله عنهما أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: الزموا مودتنا أهل البيت، فإنه من  القى الله وهو يودنا، دخل الجنة بشفاعتنا. والذي نفسي بيده، لا ينفع عبدا عمل عمله، إلا بمعرفته حقنا؛

ইমাম তাবরানী ‘আল আওসাত’ এ হযরত হাসান ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, আমার আহলে বাইত বা পরিবারবর্গের সাথে ভালবাসাকে আবশ্যক করে নাও। কেননা, যে ব্যক্তিই আল্লাহর সাথে এ অবস্থায় সাক্ষাত করবে যে, সে আমাদেরকে ভালবাসে, সে আমাদের শাফায়াত বা সুপারিশের দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আল্লাহর কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, কোন বান্দার আমল ততক্ষন কাজে আসবে না, যতক্ষন না সে আমাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হবে (রক্ষা করবে)।

তথ্যসূত্রঃ

১. আর মু’জামুল আওসাত, ৩:২২ (২২৫১)। 

২. কাজী আয়াজ (রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি) তাঁর শেফা -(৩:৪৮) কিতাবে বলেছেন, কোন কোন আলেম বলেন, معرفتهم অর্থ হচ্ছে নবী করীম (ﷺ) এর মর্যাদা সম্পর্কে জানা। আর যখন তারা (উম্মত) এ সম্পর্কে জানবে তখন তারা তার [নবী করীম (ﷺ)] কারণে তাদের (আহলে বাইতে) অধিকার ও সম্মান সম্পর্কে জানবে।

❏ হাদীস ৯:

أخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ أثبتكم على الصراط، أشدكم حبا لأهل بیتی وأصحابی؛

ইমাম দায়লামী হযরত আলী (رضي الله عنه) এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, “তােমাদের মধ্যে সিরাতের ওপর ঐ ব্যক্তিই সবচেয়ে বেশি অটল থাকবে, যে আমার বংশধরগণ ও আমার সাহাবাগণকে বেশি বেশি ভালবাসবে”।

তথ্যসূত্রঃ

১. আল কামেল, ইবনু আদী, ৬:২৩০৪।

২. কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাফিউল হিন্দ, ১২:৯৬ (৩৪১৫৭)।

“সিরাত” সিরাত হচ্ছে জাহান্নামের ওপরে স্থাপিত একটি চুলের চেয়ে সুক্ষ্ম, তরবারীর চেয়ে ধারালাে, অসংখ্য কাটাযুক্ত, অন্ধকার ও বিকট শব্দপূর্ণ দীর্ঘ সেতু বা পুল।

❏ হাদীস ১০:

أخرج الديلمي عن علي رضي الله عنه قال: قال رسول اللهﷺ أدبوا أولادكم على ثلاث خصال: حب نبيكم، وحب  أهل بيته، وعلى قرأة القرآن. فإن حملة القرآن في ظل الله يوم لا ظل إلا ظله، مع أنبيائه وأصفيائه؛

ইমাম দায়লামী হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, তোমার সন্তানদেরকে তিনটি বিষয়ে শিষ্টাচার শিক্ষা দাও। তা হচ্ছে, 

১. তোমাদের নবীর (ﷺ) ভালবাসা, 

২. তাঁর (ﷺ) পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) ভালবাসা 

৩. এবং কুরআন পড়ার শিক্ষা, কেননা কুরআন বহনকারী সেদিন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর (আরশের) ছায়ার নিচে তার নবীগণ এবং তার পবিত্র বান্দাদের সাথে থাকবে, যেদিন তার ছায়া (আরশের) ব্যতিত আর কোন ছায়া থাকবেনা”।

তথ্যসূত্রঃ

১. কানযুল উম্মাল, আল মুত্তাক্বী আল হিন্দ ১৬:৪৫৬ (৪৫৪০৯)।

২. কাশফুল খাফা, আল আজলূনী, ১:৭৪ (১৭৪)। 

❏ হাদীস ১১:

أخرج الطبراني عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول اللهﷺ لا تزول قدما عبد حتى يسأل عن أربع: عن عمره  فيما أفناه، وعن جسده فيما أبلاه، وعن ماله فيما أنفقه ومن أين اكتسبه وعن محبتنا أهل البيت؛

ইমাম ত্বাবরানী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, কোন বান্দাহ ততক্ষণ অগ্রসর হতে পারবেনা, যতক্ষণ না তাকে চারটি প্রশ্ন করা হবে। (তা হচ্ছে) 

১. তার বয়সের ব্যাপারে যে, সে তা কীভাবে ব্যয় করেছে, 

২. তার শরীরের ব্যাপারে যে, তা সে কীভাবে ক্ষয় করেছে। 

৩. তার সম্পদের ব্যাপারে যে, সে তা কীভাবে খরচ করেছে এবং কোথায় হতে আয় করেছে। 

৪. এবং আমার পরিবারবর্গের (আহলে বাইত) ভালবাসার ব্যাপারে।

তথ্যসূত্রঃ 

১. আল মু’জামুল কাবীর, ১১:৮৩ (১১১৭৭)।

২. আল মু’জামুল আওসাত, ১০:১৮৫ (৯৪০২)।

৩. মাজমাউয যাওয়ায়েদ, হাইছামী ১০:৩৪৬ হযরত আবু বরযা’র বর্ণনায় অনুরূপ রয়েছে। 

❏ হাদিস ১২ :

হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) বলেন, “মহানবী (صلى الله عليه و آله و سلم) -এর সন্তুষ্টি তাঁর আহলে বাইতের ভালবাসার মধ্যে নিহিত।”

[সূত্রঃ সহীহ্ বোখারী, খঃ-৬, হাঃ-৩৪৪৭, ৩৪৭৯, (ই. ফাঃ); তাফসীরে ইবনে কাসির, খঃ-১৬, পৃঃ-৫২৬; (হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী, আহলে হাদীস)]।

“আল্লামা যামাখশারী ও আল্লামা ফাখরে রাজী প্রখ্যাত দুজন তাফসীরকারক” ও বিজ্ঞ আলেম, তারা তাদের সুবিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থদ্বয় “আল কাশশাফ ও আল কাবীর” তাফসিরদ্বয়ে এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন যখন উক্ত আয়াত নাযিল হলো (সূরা-শুরা-আয়াত-২৩) তখন রাসূল (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেন:- 

(১) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে শহিদী মর্যাদা পায়।

(২) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে নাজাত প্রাপ্ত হয় ইহজগৎ ত্যাগ করে ।

(৩) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে তওবাকারী হিসাবে ইহজগৎ ত্যাগ করে।

(৪) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে পূর্ণ ঈমানের সঙ্গে ইহজগৎ ত্যাগ করে।

(৫) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, তাকে মালোকুল মউত, মুনকীর ও নকীর ফেরেশতারা সুসংবাদ দেয়। 

(৬) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, তাকে এমন ভাবে বেহেশতে নিয়ে যাওয়া হবে যেমন বিবাহের দিন কন্যা তার শ্বশুরালয়ে যায়।

(৭) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, তার কবরে জান্নাত মুখী দু‘টি দরজা খুলে দেয়া হবে। 

(৮) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, আল্লাহ তার কবরকে রহমতের ফেরেশতাদের জিয়ারতের স্থানের মর্যাদা দেন।

(৯) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে নবীর সুন্নত ও খাঁটি-মুসলমানদের দলভুক্ত হয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করলো। 

(*) সাবধান যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, কিয়ামতের দিনে তার কপালে লেখা থাকবে সে আল্লাহ পাকের রহমত হতে বঞ্চিত। 

(*) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে কাফের হয়ে মারা যায়। 

(*) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মৃত্যুবরণ করে, সে বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না। 

সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (صلى الله عليه و آله و سلم) আপনার “আ’ল” আহলে বাইত, কারা? “নবীজি (صلى الله عليه و آله و سلم) বললেন, আলী, ফাতেমা, হাসান, ও হোসেইন, তিনি আরো বলেন, আল্লাহর কসম যার হস্তে আমার জীবন, যে ব্যক্তি আমার আহলে বাইতকে শত্রু মনে করবে, সে জাহান্নামী।”

[সূত্রঃ তাফসীরে কাবির, খঃ-২৭, পৃঃ-১৬৫, (মিশর); তাফসীরে আল কাশশাফ ওয়াল বায়ান, খঃ-৩, পৃঃ-৬৭, (মিশর); তাফসীরে কুরতুবি, খঃ-১৬, পৃঃ-২২, (মিশর); এহইয়াউল মাইয়াত, পৃঃ-৬; আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪১৮; সাওয়ায়েক মোহরিরকা, পৃঃ-১০৪; ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৫৫, ৫৯৯]।

আহলে বাইত (عليه السلام)-এর অনুসরণ ব্যতিত কোন আমল কাজে আসবে নাঃ

❏ প্রমাণ ১:

ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি লিখেছেন যে, রাসুল (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেছেন যে, “দেখো! আমার আহলে বাইত-এর অনুসরণকে নিজেদের জন্য অতি আবশ্যকীয় কর্তব্য বলে মনে করবে, কারণ যে ব্যক্তি অন্তরে তাঁদের মহব্বতসহ আল্লাহর নিকট কিয়ামতে উপস্থিত হবে, সে আমার শাফায়াতে জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং আল্লাহর কসম আমার আহলে বাইত-এর অনুসরণ ব্যতিত কোন ব্যক্তির কোন আমল (নামায, রোজা, যাকাত, হজ্জ সকল ইবাদাত) উপকারে আসবে না”।

[সূত্রঃ আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়ূতীর এহইয়াউল মাইয়াত, পৃঃ-৩; আল্লামা ইবনে হাজার মাক্কী, সাওয়ায়েকুল মুহরেকা, পৃঃ-১১২]।

❏ প্রমাণ ২:

রাসুল (صلى الله عليه و آله و سلم) আরও এরশাদ করেছেন, “আল্লাহর কসম কোন মুসলমানের অন্তরে ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে না, যতক্ষণ না আমার আহলে বাইতকে আল্লাহর নির্দেশনানুযায়ী ও আমার আত্মীয়তার কারণে অনুসরণ (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) না করবে”।

[সূত্রঃ আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ূতীর এহইয়াউল মাইয়াত, পৃঃ-৩; আল্লামা ইবনে হাজার মাক্কী, সাওয়ায়েকুল মুহরিকা, পৃঃ-১১২]।

❏ প্রমাণ ৩:

আল্লামা ইবনে হাজার মাক্কী বর্ণনা করেন যে, নবী (صلى الله عليه و آله و سلم) বলেছেন, “আমার আহলে বাইতের শত্রুতাকারীগণ হাউজে কাউসারের নিকট পৌছিলে তাদেরকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় বিতাড়িত করে দয়া হবে”।

[সূত্রঃ ইবনে হাজার মাক্কীর, সাওয়ায়েকুল মোহরিকা, পৃঃ ১০৪]।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment