একবার রাসূলুল্লাহ ﷺ মিম্বরে আরোহন করলেন এবং উচ্চস্বরে ডেকে বললেনঃ হে ঐ সম্প্রদায় যারা মুখে ঈমান এনেছ কিন্তু হৃদয়ে ঈমান প্রবেশ করেনি/ মজবুত হয়নি! শোন, তোমরা মু’মিনদের কষ্ট দিবে না, তাদের লজ্জা দিবে না, তাদের গোপন দোষ তালাশ করে ফিরবেনা। কেননা, যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন দোষ তালাশ করবে আল্লাহ তার গোপন দোষ উদঘাটিত করে দিবেন। আর আল্লাহ যার দোষ বের করে দিবেন তাকে তিনি লাঞ্চিত করবেন যদিও সে তার হাওদার অভ্যন্তরে অবস্থান গ্রহণ করে।
রাবী বলেন যে, ইবনে উমার রাঃ একবার বায়তুল্লাহ বা কা‘বার দিকে তাকালেন এবং বললেনঃ কত মর্যাদা তোমার, কত বিরাট তোমার সম্মান! কিন্তু আল্লাহর নিকট মু’মিনের মর্যাদা তোমার চেয়েও বড়। (সুবহান আল্লাহ)
[সূনান আত তিরমিজী ২০৩২, ইফাঃ ২০৩৮, মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত) ৫০৪৪]
আচ্ছা, অন্তরে ঈমান কখন প্রবেশ করতে পারে না!!
হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) বলেন, আমরা কুরায়শ গোত্রের লোকদের সমাবেশে তাদের পারস্পরিক আলোচনাকালে তাদের সাথে সাক্ষাৎ করলে তারা তাদের আলোচনা বন্ধ করে দিত। আমরা বিষয়টি রাসূলুল্লাহ ﷺ -এঁর নিকট উল্লেখ করলে তিনি বলেনঃ লোকেদের কী হল যে, তাদের পারস্পরিক আলোচনাকালে আমার আহলে বাইতের কোন লোককে দেখলে তারা তাদের কথাবার্তা বন্ধ করে দেয়? আল্লাহ্র কসম! কোন ব্যক্তির অন্তরে ঈমান প্রবেশ করতে পারে না যতক্ষণ সে আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য এবং আমার সাথে তাদের আত্মীয় সম্পর্কের কারণে তাঁদেরকে (আহলে বাইতকে) ভালোবাসবে না।
(সুনানে ইবনে মাজাহ ১৪০, মুসনাদে আহমাদ ১৭৭৫)
উক্ত প্রসঙ্গে এভাবেও এসেছে,
হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) রাগান্বিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর নিকটে যান। তিনি ﷺ প্রশ্ন করেনঃ কিসে আপনাকে রাগান্বিত করেছে?
তিনি বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! আমাদের সাথে কুরাইশদের কি হল? তারা নিজেরা যখন পরস্পর মিলিত হয় তখন উজ্জ্বল চেহারায় মিলিত হয়। কিন্তু তারা আমাদের (হাশিমীদের) সাথে এর বিপরীত অবস্থায় মিলিত হয়। রাবী বলেন, (এ বক্তব্য) রাসূলুল্লাহ ﷺ এতই রাগান্বিত হন যে, তাঁর মুখমণ্ডল রক্তিম রর্ণ ধারণ করে।
তারপর তিনি ﷺ বলেনঃ সেই মহান সত্তার শপথ, যার কাছে আমার জীবন! কোন ব্যক্তির অন্তরে ঈমান প্রবেশ করতে পারে না, যতক্ষণ না সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সন্তুষ্টির) জন্য আপনাদেরকে ভালোবাসে। এরপর তিনি বললেনঃ হে লোকেরা! যে কেউ আমার চাচাকে দুঃখ দিল সে যেন আমাকেই দুঃখ দিল। কেননা কোন লোকের চাচা তার পিতার মত (সম্মানীয়)।
(সূনান আত তিরমিজী ৩৭৫৮, মিশকাত ৬১৪৭)
অবশ্যই আহলে বাইতের ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ। স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা পবিত্র কুরআনের সূরা শূরাতে তাদের প্রতি ভালবাসা রাখার আবশ্যকতার বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু বরাবরই একদল নকল বা মেকি আহলে বাইত প্রেমিক দেখা যায়, যারা আহলে বাইতের ভালবাসার দোহাই দিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ কর্তৃক ক্ষমাপ্রাপ্ত সাহাবীদের দোষত্রুটি তালাশ করে, সমালোচনা করে, অথচ প্রিয় নবীজি ﷺ একজন মুমিনের দোষত্রুটিও তালাশ করতে নিষেধ করেছেন (হ্যা, মুনাফিকদের ভন্ডামী জাতির নিকট তুলে ধরতে হবে, যাতে অন্যরা তাদের থেকে সাবধানে থাকে, ঈমান আমলের হেফাজত করে)। আর তারা দোষ ত্রুটি তালাশ করছে তাদের, যাদের কারো এক মুহূর্তের সৎকাজ আমদের কারো সারা জীবনের সৎকাজের চেয়েও উত্তম, উহুদ পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণ (দান) ব্যয় করেও যাদের কোনো একজনের এক মুদ্দ বা অর্ধ মুদ্দ ব্যয়ের সমানও (সাওয়াব) হবে না। যাদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ ﷺ আরো বলেন, জাহান্নামের আগুন এমন মুসলিমকে স্পর্শ করবে না যে আমাকে দেখেছে অথবা আমার দর্শনলাভকারীকে দেখেছে।
আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ হুঁশিয়ার (সাবধান)! আমার সাহাবীদের বিষয়ে আল্লাহ্ তা’আলাকে ভয় কর। আমার পরে তোমরা তাদেরকে (গালি, বিদ্রুপ, সমালোচনার) লক্ষ্যবস্তু বানিও না। যেহেতু যে ব্যক্তি তাদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করল, সে আমার প্রতি ভালোবাসার খাতিরেই তাদেরকে ভালোবাসল। আর যে ব্যক্তি তাদের প্রতি শক্রতা ও হিংসা পোষণ করল, সে আমার প্রতি শক্রতা ও হিংসাবশেই তাদের প্রতি শক্ৰতা ও হিংসা পোষণ করল। যে ব্যক্তি তাদেরকে কষ্ট দিল, সে আমাকেই কষ্ট দিল। যে আমাকে কষ্ট দিল, সে আল্লাহ তা’আলাকেই কষ্ট দিল। আর যে আল্লাহ তা’আলাকে কষ্ট দিল, শীঘ্রই আল্লাহ তা’আলা তাকে পাকড়াও করবেন।
(সূনান আত তিরমিজী ৩৮৬২)
ইমাম জালালুদ্দিন সূয়ুতী রহঃ বর্ণনা করেন,
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “প্রত্যেক কিছুর একটি মূল আছে। আর ইসলামের মূল হচ্ছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবাদের এবং তাঁর পরিবারবর্গ (আহলে বাইত)’কে ভালবাসা”। (‘আদ-দুররুল মনসুর: ৬/৭)