সুরা বায়্যিনাহ মুসলমানদের কোরআনের ৯৮তম সুরা, মদিনায় অবতীর্ণ এ সুরাটির আয়াত সংখ্যা ৮টি এবং রুকু ১টি। সুরাটিতে আল্লাহ বলেছেন, তার প্রেরিত সব ধর্মের মূল বাণী একই। প্রতিটি আসমানি ধর্মই একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত, নামাজ কায়েম ও জাকাত প্রদানের নির্দেশ দেয়।
সুরাটিতে আরও বলা হয়েছে, রাসুলের (সা.) নবুয়্যত লাভের আগে তার নবুয়্যতের ব্যাপারে আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের মধ্যে কোনো মতবিরোধ ছিল না। তারা সবাই শেষ নবির নবুয়্যতের ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করতো এবং তার আগমনের অপেক্ষায় ছিল। কারণ তাদের কিতাব তাওরাত ও ইনজিলে রসুলের (সা.) নবুয়্যত, তার বিশেষ গুণাবলী ও তার ওপর কোরআন নাজিল সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিবরণ ছিল।
সুরা বায়্যিনাহ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِيمِ
পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি
(১)
لَمۡ یَکُنِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ اَہۡلِ الۡکِتٰبِ وَالۡمُشۡرِکِیۡنَ مُنۡفَکِّیۡنَ حَتّٰی تَاۡتِیَہُمُ الۡبَیِّنَۃُ
লাম ইয়াকুনিল্লাযীনা কাফারূ মিন আহলিল কিতাবি ওয়াল মুশরিকীনা মুনফাক্কীনা হাত্তাতা’তিয়াহুমুল বাইয়িনাহ।
আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কুফরি করেছিল তারা এবং মুশরিকরা আপন মতে অবিচলিত ছিল যে পর্যন্ত না তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ এলো-
(২)
رَسُوۡلٌ مِّنَ اللّٰہِ یَتۡلُوۡا صُحُفًا مُّطَہَّرَۃً
রাসূলুম মিনাল্লাহি ইয়াতলূসুহুফাম মুতাহহারাহ।
আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন রাসুল, যে তেলাওয়াত করে পবিত্র গ্রন্থ,
(৩)
فِیۡہَا کُتُبٌ قَیِّمَۃٌ
ফীহা কুতুবুন কাইয়িমাহ।
যাতে আছে সঠিক বিধান।
(৪)
وَمَا تَفَرَّقَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡہُمُ الۡبَیِّنَۃُ
ওয়ামা তাফাররাকাল্লাযীনা ঊতুলকিতাবা ইল্লা মিম বা‘দি মা জাআতহুমুল-বায়্যিনাহ।
যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল তারা তো বিভক্ত হল তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর।
(৫)
وَمَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰہَ مُخۡلِصِیۡنَ لَہُ الدِّیۡنَ ۬ۙ حُنَفَآءَ وَیُقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَیُؤۡتُوا الزَّکٰوۃَ وَذٰلِکَ دِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ
ওয়ামা উমিরূ ইল্লা লিয়া‘বুদুল্লাহা মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা হুনাফাআ ওয়া ইউকীমুসসালাতা ওয়া ইউ’তুঝঝাকাতা ওয়া যালিকা দীনুল কাইয়িমাহ।
তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তার ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও জাকাত দিতে, এটাই সঠিক দ্বীন।
(৬)
اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا مِنۡ اَہۡلِ الۡکِتٰبِ وَالۡمُشۡرِکِیۡنَ فِیۡ نَارِ جَہَنَّمَ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا اُولٰٓئِکَ ہُمۡ شَرُّ الۡبَرِیَّۃِ
ইন্নাল্লাযীনা কাফারূ মিন আহলিল কিতাবি ওয়াল মুশরিকীনা ফী নারি জাহান্নামা খালিদীনা ফীহা উলাইকা হুম শাররুল বারিয়্যাহ।
আহলে কিতাবদের মধ্যে যারা কুফরি করে তারা এবং মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; এরাই সৃষ্টির অধম।
(৭)
اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ اُولٰٓئِکَ ہُمۡ خَیۡرُ الۡبَرِیَّۃِ
ইন্নাল্লাযীনা আমানূ ওয়া আমিলুসসালিহাতি উলাইকা হুম খাইরুল বারিয়্যাহ।
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তারাই সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ।
(৮)
جَزَآؤُہُمۡ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ جَنّٰتُ عَدۡنٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا رَضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَرَضُوۡا عَنۡہُ ذٰلِکَ لِمَنۡ خَشِیَ رَبَّہٗ
জাঝাউহুম ইনদা রাব্বিহিম জান্নাতু আদনিন তাজরী মিন তাহতিহাল আনহারু খালিদীনা ফীহা আবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া রাদূ আনহু যালিকা লিমান খাশিয়া রাব্বাহ।
তাদের রবের কাছে রয়েছে তাদের প্রতিদান চিরকাল বসবাসের জান্নাত, যার নিচ দিয়ে বয়ে চলেছে ঝরনারাজি, সেখানে তারা অবস্থান করবে চিরকাল। আল্লাহ তাদের উপরে সন্তষ্ট আর তারাও সন্তষ্ট তার প্রতি। এটি তার জন্য যে তার রবকে ভয় করে।
শিক্ষা ও নির্দেশনা
১. ইসলামের আবির্ভাবের সময় বিদ্যমান সবগুলো ধর্মই বিকৃত হয়ে গিয়েছিলো। কোনো ধর্মই মানুষকে সঠিক পথের দিশা দিতে পারছিল না।
২. ইসলামের আবির্ভাবের আগে আহলে কিতাব অর্থাৎ ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা শেষ নবির আগমণের অপেক্ষায় ছিলো। তারা জানতো তাদের ধর্ম বিকৃত হয়ে গেছে। কিন্তু যখন রাসুল (সা.) নবুয়্যত লাভ করলেন, তখন তাদের মধ্যে বিভক্তি দেখা গেলো; একটি দল মুসলমান হলো, একটি দল কুফরি করলো।
৩. ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের কিতাবে তাদেরকে আল্লাহর ইবাদত করতে, কুফর ও শিরক থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। তাদেরকেও মুসলমানদের মতোই নামাজ আদায় ও জাকাত প্রদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো। কিন্তু তাদের ধর্ম বিকৃত হয়ে তাতে ঢুকে পড়েছিল শিরক ও নানা বিভ্রান্তি। তাই আল্লাহর একই বিধান নিয়ে নবিজি (সা.) যখন এলেন, তারা কুফরি করলো এবং তার সাথে শত্রুতা করতে লাগলো।
৪. আল্লাহর প্রেরিত সব ধর্মের মূল কথা একই। তা হলো, একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর আনুগত্য করা, নামাজ কায়েম করা ও জাকাত প্রদান করা।
৫. যারা ইসলাম গ্রহণ না করে কুফরি করবে, পরকালে তারা চিরজাহান্নামি হবে।
৬. যারা ইমান আনবে, যথাযথভাবে ইসলাম গ্রহণ করবে, ইসলামের বিধানাবলি অনুসরণ করবে, তারা পরকালে চিরসুখের জীবন লাভ করবে।
৭. মুমিনের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, মুমিন আল্লাহকে ভয় করে। এই ভয় তাকে আল্লাহর আনুগত্য করতে উদ্বুদ্ধ করে এবং সব ধরনের পাপাচার থেকে দূরে রাখে।