❏ হাদিসঃ
নবীজি রাসুলে পাক (ﷺ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মধ্যে যারা আবদাল শ্রেণীর অলিআল্লাহ, তারা নামাজ-রোজার বিনিময়ে বেহেশতে প্রবেশ করবে না। তবে তারা বদান্যতা, হৃদয়ের পবিত্রতা এবং মানুষকে হেদায়েতের বিনিময়ে বেহেশতে প্রবেশ করবে।’
তথ্যসূত্রঃ
● [ইয়াহ্উল উলুম, হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী]
❏ হাদিসঃ
হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) নবী করীম (ﷺ)-এর কাছে এসে একটি ঘটনা বর্ণনা করেন। এক ব্যক্তি পাহাড়ের উচ্চ চূড়ায় পাঁচশ বছর ধরে আল্লাহ পাকের ইবাদতে মশগুল ছিল। ঐ পাহাড়ের চারদিক লবণাক্ত পানি দ্বারা বেষ্টিত ছিল। আল্লাহ তা’আলা তার জন্য পাহাড়ের অভ্যন্তরে সুপেয় পানির ঝর্ণা এবং একটি আনার গাছের সৃষ্টি করেন।
প্রতিদিন সেই ব্যক্তি আনার ফল খেত এবং পানি পান করত। আর পানি দিয়ে অযূ করত। সে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার কাছে এই দু’আ করল- হে আল্লাহ্! আমার দেহ থেকে রূহ যেন সেজদারত অবস্থায় কবয করার ব্যবস্থা করা হয়।
আল্লাহ্ তা’আলা তার এই দু’আ কবুল করেন। হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) বলেন- আমি আসমানে আসা যাওয়ার সময় তাকে সেজদারত দেখতাম। কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা’আলা তার সম্পর্কে বলবেনঃ আমার এই বান্দাকে আমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করাও। ঐ ব্যক্তি বলবে না, বরং আমার আমলের বরকতে।
তখন নির্দেশ আসবে- আমার নিয়ামতের বিপরীতে তার কৃতামল পরিমাপ কর। পরিমাপ করে দেখা যাবে, পাঁচশ বছরের ইবাদাত খতম হয়ে গেছে একটি চোখের নিয়ামতের বিনিময়ে।
তখন আল্লাহ্ পাক নির্দেশ দিবেনঃ আমার বান্দাকে জাহান্নামে নিয়ে যাও। ফেরেশতারা তখন তাকে নিয়ে রওয়ানা হবে। কিছুদূর যাওয়ার পর ঐ ব্যক্তি আরয করবে হে আল্লাহ্! আমাকে তোমার রহমতে জান্নাতে প্রবেশ করাও। নির্দেশ আসবে তাকে ফিরত নিয়ে আস।
আল্লাহ্ পাকের নিকট ফিরিয়ে আনার পর তাকে নিচের প্রশ্নগুলো করা হবে আর সে বলবেঃ-
– তোমাকে কে সৃষ্টি করেছেন?
– আল্লাহ, আপনি।
– এই কাজটা তোমার আমল না আমার রহমতের বরকতে হয়েছে?
– আপনার রহমতে।
– তোমাকে পাঁচশ বছর ইবাদাত করার শক্তি ও তাওফীক কে দিয়েছে?
– হে আল্লাহ্! আপনি।
– সমুদ্রের মাঝে পাহাড়ের উপর তোমাকে কে পৌঁছিয়েছে? লবণাক্ত পানির মাঝে সুপেয় পানির ব্যবস্থা কে করেছে? আনার গাছ কে সৃষ্টি করেছে? তোমার দরখাস্ত মুতাবেক সেজদার মাঝে কে তোমার রূহ কবয করার ব্যবস্থা করেছে?
-হে পরওয়ারদিগার! আপনি।
তখন ইরশাদ হবেঃ এই সব কিছু আমার রহমতে হয়েছে এবং আমার রহমতেই তোমাকে জান্নাতে দাখিল করছি।
তথ্যসূত্রঃ
● ইমাম নববী : রিয়াযুস স্বালেহীনঃ ২/৫৩,৫৪
❏ হাদিসঃ
عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ عَنْ مُوسَى بْنِ عُقْبَةَ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم قَالَ سَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَاعْلَمُوا أَنْ لَنْ يُدْخِلَ أَحَدَكُمْ عَمَلُهُ الْجَنَّةَ وَأَنَّ أَحَبَّ الأَعْمَالِ إِلَى اللهِ أَدْوَمُهَا وَإِنْ قَلَّ.
‘আয়িশাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ তোমরা ঠিকভাবে নিষ্ঠাসহ কাজ করে নৈকট্য লাভ কর। জেনে রেখ, তোমাদের কাউকে তার ‘আমাল জান্নাতে প্রবেশ করাবে না এবং আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় ‘আমাল হলো, যা সদাসর্বদা নিয়মিত করা হয় যদিও তা অল্প হয়।
তথ্যসূত্রঃ
● সহীহ বুখারী (তাওহীদ), অধ্যায়ঃ ৮১/ সদয় হওয়া। হাদিস নাম্বার:৬৪৬৪ | 6464 | ٦٤٦٤
● বুখারী ৬৪৬৪, ৬৪৬৭;
● মুসলিম ৫০/১৭, হাঃ ২৮১৮,
● মুসনাদে আহমাদ ২৪৯৯৫,
● বুখারী : আধুনিক প্রকাশনী- ৬০১৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০২০
❏ হাদিসঃ
آدَمُ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم لَنْ يُنَجِّيَ أَحَدًا مِنْكُمْ عَمَلُهُ قَالُوا وَلاَ أَنْتَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَلاَ أَنَا إِلاَّ أَنْ يَتَغَمَّدَنِي اللهُ بِرَحْمَةٍ سَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَاغْدُوا وَرُوحُوا وَشَيْءٌ مِنْ الدُّلْجَةِ وَالْقَصْدَ الْقَصْدُ تَبْلُغُوا.
আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেছেনঃ কস্মিনকালেও তোমাদের কাউকে তার নিজের ‘আমাল কক্ষনো নাজাত দিবে না। তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনাকেও না? তিনি বললেনঃ আমাকেও না। তবে আল্লাহ্ আমাকে তাঁর রহমত দিয়ে আবৃত রেখেছেন। তোমরা যথারীতি ‘আমাল করে নৈকট্য লাভ কর। তোমরা সকালে, বিকালে এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহর ইবাদাত কর। মধ্য পন্থা অবলম্বন কর। মধ্য পন্থা তোমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাবে।
তথ্যসূত্র :
●তাওহীদ পাবলিকেশন। গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (তাওহীদ)
অধ্যায়ঃ ৮১/ সদয় হওয়া। হাদিস নাম্বার:৬৪৬৩,| 6463 | ٦٤٦۳
● আল আদাবুল মুফরাদ: ইমাম বুখারী, হাদিস নং-৪৬৩
● মুসলিম ৫০/১৭, হাঃ ২৮১৬
● বুখারী : আধুনিক প্রকাশনী- ৬০১৩, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০১৯
❏ হাদিসঃ
আবূল ইয়ামান (رحمة الله) আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি তোমাদের কাউকে তার নেক আমল জান্নাতে প্রবেশ করাতে সক্ষম হবে না। লোকজন প্রশ্ন করল: ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনাকেও নয়? তিনি বললেনঃ আমাকেও নয়, ততক্ষন পর্যন্ত আল্লাহ আমাকে তার করুণা ও মেহেরবানীর দ্বারা ঢেকে না দেন। কাজেই মধ্যপন্থী অবলম্বন কর এবং নৈকট্য লাভের চেষ্টা করে যাও। আর তোমাদের মধ্যে কেউ যেন মৃত্যু কামনা না করে। কেননা, সে ভাল লোক হলে (বেশী বয়স পাওয়ার দরুন) তার নেক আমল বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ পাবে। পক্ষান্তরে মন্দ লোক হলে সে লজ্জিত হয়ে তওবা করার সুযোগ লাভ করতে পারবে।
তথ্যসূত্রঃ
● ইসলামিক ফাউন্ডেশন। গ্রন্থঃ সহীহ বুখারী (ইফাঃ), অধ্যায়ঃ ৬২/ রোগীদের বর্ণনা। হাদিস নাম্বার:৫২৭২