মহান আল্লাহর প্রত্যেক কিছুই সুন্দর ও কামালিয়াতের প্রাণকেন্দ্র। তিনি দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত অর্থাৎ তাঁর মধ্যে দোষ ত্রুটি পাওয়া যাওয়াটা অসম্ভব। এমনি ‘পরিপূর্ণও নয়, ত্রুটিপূর্ণও নয়’-এ রকমের হওয়াটা অসম্ভব। যেমন মিথ্যা, ধোঁকাবাজী, ওয়াদাভঙ্গ, অত্যাচার, অজ্ঞতা, নির্লজ্জতা ইত্যাদি দোষ তাঁর থেকে প্রকাশ পাওয়া অসম্ভব। দেওবন্দীদের মত ‘আল্লাহ মিথ্যা বলার ক্ষমতা রাখে’- এ রকম বলা মানে কুদরতের দুর্বলতা মানে বাতুলতা মাত্র। আর এ ধরনের কেউ বিশ্বাস পোষণ করলে সে কাফির হয়ে যাবে। ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী (رحمة الله) বলেন-
مِنْ صِفَاتِ كَلِمَةِ اللَّهِ كَوْنُهَا صِدْقًا وَالدَّلِيلُ عَلَيْهِ أَنَّ الْكَذِبَ نَقْصٌ وَالنَّقْصُ عَلَى اللَّهِ مُحَالٌ وَلَا يَجُوزُ إِثْبَاتُ أَنَّ الْكَذِبَ عَلَى اللَّهِ مُحَالٌ –
-‘‘সত্য বলা আল্লাহ তা‘য়ালার অন্যতম গুণ। এর পক্ষে দলীল হচ্ছে- মিথ্যা বলা দোষ। আর আল্লাহ তায়ালার মধ্যে কোন দোষ-ত্রুটি থাকা অসম্ভব।’’
➤ ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী : তাফসীরে কাবীর : ১৩/১২৫পৃষ্ঠা, দারু ইহইয়াউত্-তুরাসিল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ-১৪২০হিজরি।
ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী (رحمة الله) তো সুস্পষ্ট ভাষায় ফতোয়া আরোপ করেছেন-
لِأَنَّ الْمُؤْمِنَ لَا يَجُوزُ أَنْ يَظُنَّ باللَّه الْكَذِبَ، بَلْ يَخْرُجُ بِذَلِكَ عَنِ الْإِيمَانِ فَكَيْفَ يَجُوزُ مِثْلُهُ عَلَى الرُّسُلِ –
-‘‘কোন মুসলমানের জন্য এটা জায়েয নয় যে, সে আল্লাহ তা‘য়ালার পক্ষে মিথ্যা বলার ধারণা করবে; বরং এ ধরনের ধারণার কারণে সে ঈমান হতে বের হযে যাবে (অর্থাৎ-সে কাফির হয়ে যাবে)।’’
➤ ইমাম রাজী, তাফসীরে কাবির : ১৮/৫২১পৃষ্ঠা, দারু ইহইয়াউত্-তুরাসিল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ-১৪২০হিজরি।
আল্লামা নাসিরুদ্দিন বায়যাভী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসীরে বলেন-
وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثاً إنكار أن يكون أحد أكثر صدقاً منه، فإنه لا يتطرق الكذب إلى خبره بوجه لأنه نقص وهو على الله محال.
-‘‘আল্লাহ অপেক্ষা কার কথা বেশি সত্য?
➤ সূরা নিসা, আয়াত/৮৭
-‘‘এ মহান বাণী এ কথার প্রমাণ যে, তাঁর চেয়ে বেশি সত্যবাদী কেউ নেই। কেননা, তাঁর খবর প্রদানে মিথ্যা কোনভাবেই প্রবেশ করতে পারে না। কারণ, সেটা (মিথ্যা) হচ্ছে একটি জঘন্য দোষ, এটা আল্লাহর জন্য সম্পূর্ণ অসম্ভব।’’
➤ ইমাম বায়যাভী, তাফসীরে বায়যাভী, ২/৮৮পৃষ্ঠা,
আল্লামা শরবীনী (رحمة الله) বলেন-
قَوْلُه تعالى فلن يخلف الله عهده فيه دليل على ان الخلف فى خبر الله محال
-‘‘আল্লাহ তাআলার বাণী, ‘অতঃপর আল্লাহ কখনো অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না’-এর মধ্যে এ কথার পক্ষে অকাট্য প্রমাণ রয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলার পক্ষে মিথ্যা খবর দেওয়া অসম্ভব।’’
➤ আল্লামা শরবীনী, তাফসীরে সিরাজুম মুনীর: পৃষ্ঠা, ৭০
ইমাম আলী ইবনে মোহাম্মদ আল-খাযিন (رحمة الله) বলেছেন,
لا أحد أصدق من الله فإنه لا يخلف الميعاد ولا يجوز عليه الكذب
-‘‘আল্লাহ তা‘য়ালার চেয়ে বড় সত্যবাদী কেউ নেই। তিনি ওয়াদা ভঙ্গ করেন না এবং তাঁর পক্ষে মিথ্যা বলা সম্ভবই নয়।’’
➤ ইমাম খাযিন : তাফসীরে লুবাবুত তা’ভীল: ১/৪২১পৃষ্ঠা,
ইমাম আবুস সাউদ (رحمة الله) বলেন-
والكذِبُ مُحالٌ عليه سبحانه دون غيرِه
-‘‘মিথ্যা বলা আল্লাহ তাআলার পক্ষে অসম্ভব।’’
➤ ইমাম আবুস সাউদ: তাফসীরে আবিস সাউদ: ২/২১২পৃষ্ঠা,
আল্লামা মুঈনুদ্দিন কাশেফী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন,
ومن اصدق من الله حديثا از خدا ۓ تعالى يعنى نيست از وے راست گوۓ تراز جہت قولى ووعده يعنى كذب رادر سخن ووعده حق راه نيست زيرا كہ آں نقص ست وخداۓ از نقص مبراست-
-‘‘আল্লাহ তাআলার চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে আছে? অর্থাৎ তাঁর চেয়ে বেশি সত্যবাদী আর কেউ নেই। অর্থাৎ আল্লাহর কথা ও প্রতিশ্রুতিতে মিথ্যার কোন অবকাশ নেই। কেননা, সেটা (মিথ্যা) একটা জঘন্য দোষ। আর আল্লাহ তাআলা দোষ-ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।’’ ➤ মোল্লা মুঈন উদ্দিন কাশেফী : তাফসীরে হুসাইনী: ১/পৃষ্ঠা,১২৭
ইমাম নাসাফী (رحمة الله) বলেন-
لا أحد أصدق منه في إخباره ووعده ووعيده لاستحالة الكذب عليه لقبحه
-‘‘খবর প্রদান, প্রতিশ্রুতি পূরণ ও শাস্তি প্রদানের হুমকি (যদি ক্ষমা না করেন) পূরণে তাঁর চেয়ে বেশি সত্যবাদী আর কেউ নেই। কারণ, মিথ্যা তাঁর জন্য অসম্ভব- যেহেতু সেটা জঘন্য দোষ।’’
➤ইমাম নাসাফী : তাফসীরে মাদারিক: সূরা নিসা, আয়াত ৮৭
গায়রে মুকাল্লিদদের ইমাম নাওয়াব সিদ্দিক হাসান ভূপালভীও মিথ্যা এবং ওয়াদা খেলাফকে দোষগুলোর মধ্যে গণ্য করেছেন। সুতরাং তিনি লিখেছেন,
وعده كى سچائى صفات حميدة ميں سے ہے جيسے خلف وعد اوصاف ذميمہ ميں سے ہے –
-‘‘প্রতিশ্রুতিতে সত্যবাদিতা প্রশংসিত গুণাবলীর অন্যতম, যেমনিভাবে ওয়াদা ভঙ্গ করা মন্দ গুণাবলীর মধ্যে গণ্য।’’ ➤ তরজুমানে কুরআন: পৃষ্ঠা, ৩৫৯, পারা – ১৬ , সূরা মরিয়াম
৪. হায়াত, কুদরত, শোনা, দেখা . বাকশক্তি, ইলম ও ইচ্ছা হচ্ছে তাঁর নিজস্ব সিফাত বা গুণবলী। কিন্তু কান, চোখ ও মুখ দিয়ে শোনা, দেখা ও কথা বলা নয়। কেননা এগুলো হচ্ছে সাকার। কিন্তু আল্লাহ সাকার থেকে পবিত্র। অথচ তিনি ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর আওয়াজ শোনেন এবং ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর বস্তু, যা অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দ্বারাও দেখা যায় না, তিনি তা দেখেন। তাঁর দেখার জন্য ওসব কিছুর প্রয়োজন হয়না। তিনি প্রত্যেক কিছু দেখেন ও শোনেন। (শরহে আকায়েদে নাসাফী, ৩৮পৃ.)
৫.তাঁর জ্ঞানের বাইরে কোন বস্তু নেই। অর্থাৎ আংশিক-সামগ্রিক, বর্তমান-অবর্তমান , সম্ভব-অসম্ভব সবকিছু অনাদিকাল থেকে জানেন এবং অনন্তকাল পর্যন্ত জানবেন। প্রতিটি জিনিস পরিবর্তন হয় কিন্তু তাঁর জ্ঞান পরিবর্তন হয় না। তিনি মনের ধ্যান-ধারণা সম্পর্কেও জ্ঞাত । তাঁর জ্ঞানের কোন শেষ নেই। (মুসামেরা, ৬২পৃ. শরহে আকায়েদ, ৪২পৃ. ,মাওয়াকেফ, ৮পৃ.)