ভাই আরিফ আজাদ, কারেকশান প্লিজ। ভুল করা অপরাধ না। ভুলের উপর গোঁ ধরে বসে থাকা অপরাধ। তোমার শুভাকাংখী আমি। অতএব সংশোধন প্লিজ।
এক.
হুদায়বিয়ার সন্ধিপত্রটি প্রিয়নবী নিলেন এবং লিখলেন- মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল্লাহ…।(সহীহ বুখারী:২৬৯৯)
আল্লাহ তায়ালা যদি তাঁকে অক্ষরের জ্ঞান না দিতেন, তবে কিভাবে তিনি আরবি তের অক্ষরবিশিষ্ট নিজের নাম মুবারক লিখলেন?
‘বা’ ‘ছিন’ ‘মীম’ নিঃসন্দেহে আরবি অক্ষর।
একদা প্রিযনবী বলেছিলেন, ” ‘বা’ কে সোজা করে লিখ। ‘ছিন’ কে পৃথক করে লিখ। ‘মীম’ কে অন্ধ করো না।”(ফাতহুল বারী লি শরহিল বুখারী, ৭/৫০৪)
প্রিয়নবীকে যদি আল্লাহ তায়ালা অক্ষরজ্ঞান না দিতেন তবে, কিভাবে তিনি ‘বা’ ‘ছিন’ ‘মীম’ চিনলেন?
যাঁর প্রতি নাযিল হল ‘আলিফ, লাম, মীম’, তিনি বুঝি ‘আলিফ’ ‘লাম’ ‘মীম’ চিনতেন না?
প্রিয়নবী বলেছিলেন, “তোমরা কাগজ আন, আমি একটা লিখা লিখে দেব।”(সহীহ বুখারী:৪৪৩২)
যিনি লিখতেই জানেন না, তিনি বুঝি বলবেন- আমি লিখে দেব? জানেন বলেই তো বলেছেন। তাই না ভাই?
যাঁকে তাবৎ জ্ঞানের আধার কুরআন শিখিয়েছেন প্রভু।
“আপনার প্রতি নাযিল করেছি সবকিছুর স্পষ্ট জ্ঞানসম্বলিত গ্রন্থ।”-(সূরা নাহল:৮৯) আর তাবৎ জ্ঞানের মধ্যে সামান্য অক্ষরজ্ঞান বাদ যাবে বুঝি?
তাই
“তিনি নিরক্ষর ছিলেন। তাঁর অক্ষরজ্ঞান ছিল না” – থিওরী বাদ দাও ভাই। তোমার শুভাকাংখী আমি। অতএব সংশোধন প্লিজ।
দুই.
উক্ববা বিন আবু মুহীতের দাওয়াতের জবাবে রসূলেপাক বলেছিলেন, “মা আনা বি আকিলিন” (খাসাইসুল কুবরা লিস সুয়ূতী, ১/৩৪১)। কই এর অর্থ তো “আমি খেতে জানি না” করা হয় না! করা যায়ও না নিশ্চয়। তাই না? বরং এ অর্থই কর যে, আমি খাব না।
তেমনি হেরা গুহায় প্রিয়নবী যে বলেছিলেন, “মা আনা বিক্বরিইন”, এর অর্থ “আমি পড়তে জানি না” নয় ভাই। বরং আমি পাঠক নই/এখন পড়ব না।
তাছাড়া জিবরীল আ. থেকে শুনে শুনে কিতাবের বাক্য পড়ার সঙ্গে অক্ষর চেনা-না চেনার সম্পর্ক কী, ভাই? ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখ।
তাই একে কেন্দ্র প্রিয়নবী পড়তে জানেন না বা অক্ষর চেনেন না থিওরী বুঝে নিও না। তোমার মঙ্গলের জন্যই বলছি কথাগুলো, ভাই। অতএব সংশোধন প্লিজ।
তিন.
নিরক্ষরতার পক্ষে তুমি নানানজনের ব্যাখ্যা দাও। যেমন-
প্রথমতঃ ইবনে কাসীর র. ‘র। তিনি নাকি সূরা আরাফের ১৫৭ নং আয়াতে উম্মী অর্থ করেছেন, “যিনি লিখতে আর পড়তে জানেন না!”
ভাইরে, হয়ত তুমি তাফসীরে ইবন কাসীরের মূল আরবিটা পড়ে একথা বলনি। বলেছ, হয়তো বঙ্গানুবাদকের বিকৃত অনুবাদ পড়ে। নইলে নিশ্চয় দেখতে, ইবন কাসীর এমনটা কস্মিনকালেও বলেননি। বরং তিনি ১৫৭ নং আয়াত তো বটেই ১৫৮ নং আয়াতেও ‘আন্নাবিয়্যুল উম্মী’ অর্থ ”আন্নাবিয়্যুল উম্মী” ই করেছেন।
হ্যাঁ, মূল আরবি গ্রন্থে এমনটাই আছে। অতএব মূলটা দেখে ভাই, প্লিজ, ফিরে এস। বিরত হও প্রিয়নবীকে নিরক্ষর অভিধা দেয়া থেকে। তোমার মান তাতে বাড়বে বই কমবে না।
দ্বিতীয়তঃ তুমি বলো, ইমাম বাগাভী রহ. তাঁর তাফসীরে এ আয়াতের অর্থে হযরত ইবন আব্বাস রা. হতে এ হাদীসটি এনেছেন।
“তোমাদের নবী ছিলেন উম্মী- তিনি পড়তে লিখতে আর গুণতে জানতেন না।”
অথচ হাদীসে থাকা মূল আরবির প্রকৃত অর্থ হচ্ছে- “তিনি ছিলেন উম্মী- তিনি লিখেন না, পড়েন না, হিসাব-নিকাশ করেন না।” দেখ মূল আরবিটা অার অর্থ কর-
كان اميا لا يكتب ولا يقرأ ولا يحسب
(ইমাম কুরতুবী র. ও এই হাদীসটি এনেছেন বলে তুমি একই কথা বলছো, ভাই। অথচ হাদীসটির অর্থ এমন নয় মোটেও। বরং মূল কিতাব দেখ ভাই। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে দেখলে নিশ্চয় দেখবে, এই অভাজনের উল্লিখিত অর্থটাই প্রকৃত অর্থ। অর্থাৎ লিখেন না, পড়েন না, হিসাব-নিকাশ করেন না। না জানা আর না করা নিশ্চয় এক নয় ভাই। ভেবে দেখ। যেমন- আল্লাহ তায়ালার বাণী- অর্থাৎ “নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা যালিম সম্প্রদায়কে হিদায়াত দেন না।” এখানে কি ‘লা ইয়াহদী’ অর্থ ‘হিদায়াত দিতে পারেন না’ করবে? নিশ্চয় না। বরং জাস্ট এটাই করবে যে, ‘হিদায়াত দেন না।’ ভাইরে, প্রিয়নবীর ব্যাপারে বিভিন্ন তাফসীরে থাকা ‘লা ইয়াক্বরউ, লা ইয়াকতুবু’ ‘র অর্থ তবে ব্যতিক্রম করবে কেন! এটাও তো একই সীগাহ। একই রকমের অর্থ। নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ভেবে দেখ)
তুমি যে বলেছ, তাফসীরে জালালাইনের কথা। কই ভাই, তাফসীরে জালালাইনে কি “আন্নাবিয়্যুল উম্মী” শব্দের ব্যাখ্যায় “নবী লিখতে-পড়তে জানতেন না” বলা হয়েছে? মোটেও তো না। বরং ভালোমত দেখ, এর ব্যাখ্যায় তিনি জাস্ট বলেছেন, মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
তুমি বলেছ, ‘সিয়ারু আলামিন নুবালা’ তে ইমাম যাহাবী র. বলেছেন, “যদি ওইদিন নবিজী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজের হাতে নিজের নাম লিখেছেন ধরেও নিই, তাতেও প্রমাণ হয় না যে, তিনি লিখতে আর পড়তে জানতেন।…”
ভাইরে, আল্লাহকে ভয় কর, প্লিজ। ভয় কর ওই দিনকে, যেদিন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে।
”সিয়ারু আলামীন নুবালা” তন্নতন্ন করে খোঁজো তো! দেখ তো পাও কিনা, ইমাম যাহাবীর অনুরূপ বক্তব্য! কোত্থাও পাবে না। হ্যাঁ, কোত্থাও না। বরং পাবে, জামাআতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা জনাব আবুল আলা মওদুদী সাহেবের মনগড়া তাফসীর গ্রন্থে। অর্থাৎ- “তাফহীমুল কুরআন” এর ৩/৭১৩-৭১৪ নং পৃষ্টায়। ভাইরে, কেন তুমি যাচাই ছাড়া জামাআতীদের প্রতিষ্ঠাতার বই থেকে “প্রিয়নবী লিখতে পড়তে জানতেন না” ‘র দলীল নিয়েছ! কেন? কী এর কারণ?
অতএব ফিরে এস ওহে। প্রিয় ভাই আরিফ আজাদ। ফিরে এস।
চার.
মুসলিম মনীষীদের ব্যাখ্যা দিয়ে দলীল দিয়ে থাকো তুমি। অর্থাৎ মুসলিম মনীষীদের দলচ্যূত হতে চাও না। তা না চাওয়াই উচিত। কারণ প্রকৃত সালাফগণের মানহাজের বাইরে যাওয়া কখখনোই হক্বপন্থী আর বুদ্ধিমানের কাজ নয়। তাই তোমায় প্রিয়নবীর ইলম প্রসঙ্গে মুসলিম মনীষীদের জ্ঞাননির্যাস দিলাম-
-বিখ্যাত মুফাসসির ইসমাঈল হাক্কী র. সূরা আনকাবূতের ৪৮ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন,
كان عليه السلام يعلم الخطوط و يخبر عنها
অর্থাৎ-“তিনি (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লিখতে জানতেন আর অন্যকে জানাতেন।”(তাফসীরে রুহুল বয়ান)
-সহীহ বুখারীর ২৬৯৯ নং হাদীসে যে প্রিয়নবী লিখেছেন বলে প্রমাণিত, সে ব্যাপারে ইমাম কুরতুবী র. বলেন-
فكان ذلك خارقاً للعادة كما أنه عليه الصلوة والسلام علم علم الأولين والآخرين من غير تعلم ولا إكتساب فكان ذلك أبلغ في معجزاته.
অর্থাৎ- আর সেটা(লিখাটা) ছিল তেমন অলৌকিক যেমন তিনি (পার্থিব) শিক্ষাগ্রহণ ও অর্জন ব্যতীতই পূর্বাপরের সমস্ত জ্ঞানলাভ করেছিলেন। আর সেটা তাঁর সর্বোচ্চ পর্যায়েরই মো’জিযা(অলৌকিকতা)।
(তাফসীরে কুরতুবী, সূরা আরাফের ১৫৭ নং আয়াতের ব্যাখ্যা)
-ইমাম ইবন কাসীর র. হুদায়বিয়ার সন্ধিপত্রে প্রিয়নবী কর্তৃক লিখার ব্যাপারে বলেন,
أنه كتب ذلك على وجه المعجزة
অর্থাৎ- তিনি তা লিখেছিলেন মু’জিযাস্বরূপ।
(তাফসীরে ইবন কাসীর, ৬/৬৮)
দেখলে তো ভাই, আল্লামা ইবন কাসীর র. এরও মত, প্রিয়নবীর দুনিয়ার কারো কাছে না শিখেও লিখতে জানাটা তাঁর মু’জিযা। নবীর মু’জিযা অস্বীকার করবে বুঝি?
অতএব ফিরে এসো ভাই। ফিরে এসো প্রকৃত সত্যে। আক্বীদায়ে আহলে সুন্নাহ-তে। তোমায় ভালোবাসব তবে। করব শ্রদ্ধা।
~ ফা লা ক্ব