আরাফাতের দিবস,ঈদুল আযহার ফযীলত ও আমল
জুমার খুতবা
********************************************
২য় জুমা’ যুল হাজ্জাহ ১৪৩৮, ০১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
আরাফাহ দিবস এবং ঈদুল আযহার ফযিলত ও আমল
************************************************
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আয্হারী
খতিব, মুসাফিরখানা জামে মসজিদ, নন্দনকানন, চট্টগ্রাম। সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম। #
بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাদের জন্য এমন কিছু দিন বা স্থানকে বিশেষভাবে ফযিলতপূর্ণ করেছেন যাতে বান্দারা নিজেদেরকে গুনাহমুক্ত করে পাক-পবিত্র করে নিতে পারে। এ রকম একটি দিন হলো যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ ইয়াউমে আরাফা বা আরাফার দিন। এ দিনটিকে সৃষ্টির সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হিসেবে হাদীস শরীফে আখ্যায়িত করা হয়েছে। যে দিনে বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত হাজী সাহেবানরা এমন একটি স্থানে অবস্থান করেন যার নাম আরাফার ময়দান। আর আরাফার ময়দানে অবস্থান করাটা হজ্জ পালনকারীদের জন্য অবশ্য পালনীয় বিষয়গুলোর মধ্যে একটি। আরাফার ময়দান ক্ষমা পাওয়ার ময়দান হিসেবেও পরিচিত। যেখানে পনেরশ’ বছর আগে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ উপলক্ষে তাঁর শেষ ভাষণ দিয়েছিলেন [সহীহ মুসলিম: ২১৩৭]।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَا مِنْ أَيَّامٍ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ أَنْ يُتَعَبَّدَ لَهُ فِيهَا مِنْ عَشْرِ ذِي الْحِجَّةِ ، يَعْدِلُ صِيَامُ كُلِّ يَوْمٍ مِنْهَا بِصِيَامِ سَنَةٍ وَقِيَامُ كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْهَا بِقِيَامِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ ) رواه الترمذي (رقم/৭৫৮)، والبزار (رقم/৭৮১৬)، وابن ماجه (رقم/১৭২৮)
হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহর ইবাদতের জন্য যিলহজ্বের প্রথম দশ দিনের চেয়ে উত্তম কোন দিন নেই, এর একদিনের রোযা এক বছরের রোযার সমতুল্য এবং এক রাতের ইবাদত ক্বদরের রাত্রের ইবাদতের সমতুল্য। (তিরমিযী-৭৫৮, ইবনে মাজা-১৭২৮) অন্য বর্ণনায় হযরত জাবির রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে: যিলহজ্বের দশ দিনের চেয়ে কোনো দিনই আল্লাহর নিকট উত্তম নয়।-(সহীহ ইবনে হিববান, হাদীস : ২৮৪২)
তাই আরাফা দিবসের কিছু ফযিলত ও আমল নিম্নে আলোচনা করা হলো।
============================================
এক: আরাফার দিনটি মূলত হজ্জের মূল দিন:
**********************************************
ইসলামের মূল স্তম্ভসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো হজ্জ। আর আরাফার ময়দানে অবস্থান করাই হজ্জ। এদিনের গুরুত্ব ও ফযিলত সম্পর্কে সহীহ হাদীসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
الحج عرفة ) المسند৪/৩১০،৩০৯، سنن الترمذي كتاب الحج باب ما جاء فيمن أدرك الإمام بجمع فقد أدرك الحج ৩/২৩৭ (৮৮৯)، سنن أبي داود كتاب المناسك بَاب مَنْ لَمْ يُدْرِكْ عَرَفَة ২/৪৮৫ (১৯৪৯)، سنن النسائي كتاب المناسك باب َفَرْضُ الْوُقُوفِ بِعَرَفَةَ ৫/২৫৬، سنن ابن ماجه كتاب المناسك بَاب مَنْ أَتَى عَرَفَةَ قَبْلَ الْفَجْرِ لَيْلَةَ جَمْعٍ ২/১০০৩ (৩০১৫(
“আরাফাতে অবস্থান করাই হলো হজ্জ।” [সুনান নাসাঈ: ৩০৪৪, তিরমিযী, ৮৮৯, আবু দাউদ-১৯৪৯, ইবনু মাযা-৩০১৫]
দুই: এ দিন হ’ল ঈদের দিন সমূহের একটি দিন:
*******************************************
আরাফার দিনটি ইসলামে এতো মর্যাদাপূর্ণ যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এটাকে ঈদের দিন হিসাবে উল্লেখ করেছেন। উকবাহ বিন আমের রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ” إِنَّ يَوْمَ عَرَفَةَ ، وَيَوْمَ النَّحْرِ ، وَأَيَّامَ التَّشْرِيقِ ، عِيدُنَا أَهْلَ الإِسْلامِ ، وَهِيَ أَيَّامُ أَكْلٍ وَشُرْبٍ) ” .سنن الترمذي গ্ধ كتاب الصوم عن رسول الله صلى الله عليه وسلم গ্ধ باب ما جاء في كراهية الصوم في أيام التشريق,باب ما جاء في كراهية الصوم في أيام التشريق৭৭৩سنن أبي داود – الصفحة أو الرقم: ২৪১৯(
“আরাফাতের দিন, কুরবানীর দিন এবং তাশরীকের দিনসমূহ (কুরবানী পরবর্তী তিন দিন) হচ্ছে ইসলামে আমাদের ঈদের দিন। এদিনগুলো হচ্ছে পানাহারের দিন।” [সুনান আবু দাউদ: ২৪২১]
তিন: আরাফার দিনে আল্লাহতায়ালা তাঁর নিয়ামত ও দ্বীনকে পূর্ণতা দান করেছেন:
*****************************************************
মহান আল্লাহ এরশাদ করেন:
قال الله تعالى : ( الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ) المائدة/৩ .
“আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।” [মায়েদা-০৩]
সহীহ বুখারীতে এক বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে:
عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ ، قَالَ : جَاءَ رَجُلٌ مِنَ الْيَهُودِ إِلَى عُمَرَ ، فَقَالَ : يَا أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ آيَةٌ فِي كِتَابِكُمْ تَقْرَءُونَهَا ، لَوْ كَانَ عَلَيْنَا مَعْشَرَ الْيَهُودِ نَزَلَتْ لاتَّخَذْنَا ذَلِكَ الْيَوْمَ عِيدًا . قَالَ : ” وَأَيَّةُ آيَةٍ ؟ ” قَالَ : الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلامَ دِينًا سورة المائدة آية ৩ . فَقَالَ عُمَرُ : ” إِنِّي لأَعْلَمُ الْمَكَانَ الَّذِي نَزَلَتْ فِيهِ ، وَالْيَوْمَ الَّذِي أُنْزِلَتْ ، نَزَلَتْ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَرَفَاتٍ يَوْمَ جُمُعَةٍ ) صحيح البخاري গ্ধ كتاب الإيمان, ৪৫
ইহুদীরা হযরত ওমর রাদিআল্লাহু আনহুকে বললো, তোমরা কুরআনের এমন একটা আয়াত তেলাওয়াত করো যদি সে আয়াতটা আমাদের মাঝে নাযিল হতো তাহলে আমরা সেদিনকে ঈদের দিন হিসেবে উদযাপন করতাম। হযরত ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, নিশ্চয়ই আমি জানি সে আয়াত কোনটি এবং তা কখন, কোথায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াম সাল্লামের উপর নাযিল হয়েছে। সেদিন হচ্ছে আরাফাতের দিন, সে দিনটি ছিল জুম‘আর দিন। আল্লাহর শপথ আমরা তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আরাফাতেই ছিলাম।(বুখারী হা/৪৫, ৪৬০৬)
সে আয়াত হচ্ছে: আজ আমি তোমাদের জন্য আমার দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নিয়ামত পূর্ণ করলাম এবং আমি তোমাদের জন্য ইসলামকে জীবন বিধান হিসেবে মনোনীত করলাম।’’ [সূরা আল মায়িদাহ: ০৩]
হযরত ওমর রাদিআল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইবনে আববাস রাদিআল্লাহু আনহুমা বলেন, সূরা মায়েদার এ আয়াতটি নাযিল হয়েছে দু’টো ঈদের দিনে। তা হ’ল জুম‘আর দিন ও আরাফাহর দিন।[ছহীহ জামি‘ তিরমিযী, হা/২৪৩৮]
চার: আরাফাহ দিবসের ছিয়াম (রোযা) দু’বছরের গোনাহের কাফফারা:
*****************************************************************
আরাফার দিনটি এত ফযিলতপূর্ণ যে, এই দিনের সিয়াম পালনকারীর দুই বছরের গুনাহ মাফ করা হয়। আবু কাতাদা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো, আরাফাতের দিবসের সিয়াম পালনের ফযিলত কী: উত্তরে তিনি বলেন:
صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ، وَصِيَامُ يَوْمِ عَاشُورَاءَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُগ্ধ )أخرجه مسلمٌ في ্রالصيامগ্ধ (١١٦٢) مِنْ حديثِ أبي قتادة الأنصاريِّ رضي الله عنه.
‘‘যে ব্যক্তি আরাফার দিনে (একটি) সিয়াম পালন করলো, আমি আশা রাখি আল্লাহতায়ালা তার পেছনের এক বছরের ও আগামী এক বছরের গুনাহ মাফ করে দিবেন।’’ [সহীহ মুসলিম: ২৮০৩] তবে এই দিনে হাজী সাহেবরা সিয়াম পালন করবেন না। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাজীদেরকে এই দিনে সিয়াম পালন করতে নিষেধ করেছেন।
পাঁচ: আরাফার দিন গুনাহ মাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের দিন:
**************************************************************
এদিন হচ্ছে জাহান্নাম থেকে মুক্তির দিন। উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন:
عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ ، قَالَ : قَالَتْ عَائِشَةُ : إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : ” مَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ أَنْ يُعْتِقَ اللَّهُ فِيهِ عَبْدًا مِنَ النَّارِ مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ ، وَإِنَّهُ لَيَدْنُو ، ثُمَّ يُبَاهِي بِهِمُ الْمَلائِكَةَ “) صحيح مسلم গ্ধ كتاب الحج গ্ধ باب في فضل الحج والعمرة ويوم عرفة ১৩৪৮
“আরাফাতের দিনে এত অধিক সংখ্যক বান্দাকে আল্লাহতায়ালা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন, যা অন্য কোন দিন দেয়া হয় না। সেদিন তিনি বান্দার অত্যন্ত নিকটবর্তী হয়ে যান ( এখানে নিকটবর্তী হয়ে যাওয়া মানে হলো, আল্লাহ তাআলা স্বীয় বান্দাদের দিকে বিশেষ কৃপা ও দয়ার দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন) এবং ফেরেশতাদের সাথে গর্ব করে বলেন, তোমরা কি বলতে পার আমার এ বান্দারা আমার কাছে কি চায়?” [মুসলিম হা/১৩৪৮]
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِذَا كَانَ يَوْمُ عَرَفَةَ يَنْزِلُ اللَّهُ تَبَارَكَ وتَعَالَى إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيُبَاهِي بِهِمُ الْمَلائِكَةَ فَيَقُولُ: انْظُرُوا إِلَى عِبَادِي أَتَوْنِي شُعْثًا غُبْرًا مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ، أُشْهِدُكُمْ أَنِّي قَدْ غَفَرْتُ لَهُمْ. فَقَالَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَا مِنْ يَوْمٍ أَكْثَرَ عَتِيقًا مِنْ يَوْمِ عَرَفَةَ “.
عَنْ أَيُّوبَ عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” إِنَّ عَشِيَّةَ عَرَفَةَ يَنْزِلُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِيهِ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا فَيَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى لِلْمَلائِكَةِ: انْظُرُوا إِلَى عِبَادِي هَؤُلاءِ شُعْثًا غُبْرًا جَاءُونِي مِنْ كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٍ ضَاجِّينَ يَسْأَلُونِي رَحْمَتِي وَلَمْ يَرَوْنِي وَيَتَعَوَّذُونَ بِي مِنْ عَذَابِي وَلَمْ يَرَوْنِي. فَلَمْ يُرَ يَوْمٌ أَكْثَرُ عَتِيقًا وَلا عَتِيقَةً مِنْهُ، وَلا يَغْفِرُ اللَّهُ فِيهِ لِمُخْتَالٍ “.
“যখন আরাফার দিন হয়, তখন আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন (এখানে নেমে আসা মানেও হল, বান্দাদের দিকে বিশেষ কৃপা ও দয়ার দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন), অতঃপর তিনি আরাফায় অবস্থানকারীদের নিয়ে ফেরেশতাদের নিকট গর্ব করেন। আল্লাহ বলেন, আমার এ সকল বান্দাদের দিকে চেয়ে দেখ। তারা এলোমেলো কেশ ও ধূলায় ধূসরিত হয়ে আমার কাছে এসেছে।” [আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/৮১; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৬৬১; মিশকাত হা/২৬০১]
ছয়: আরাফার দিন হলো দোয়া করার উত্তম দিন:
*********************************************
আমর বিন শুয়াইব তার বাবা থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” خَيْرُ الدُّعَاءِ دُعَاءُ يَوْمِ عَرَفَةَ، وَخَيْرُ مَا قُلْتُ أَنَا وَالنَّبِيُّونَ مِنْ قَبْلِي: لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ المُلْكُ وَلَهُ الحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ ) “سنن الترمذي – الدعوات (৩৫৮৫) مسند أحمد – مسند المكثرين من الصحابة (২/২১০)
“সর্বোত্তম দোয়া হচ্ছে আরাফাতের দিনের দোয়া। আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ এদিনে উত্তম যে দোয়াটি পড়তাম তা হচ্ছে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর।’’ [সুনান আত তিরমিযী: ৩৫৮৫, হাসান]
সাত: আরাফার দিনসহ যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন বেশি বেশি যিকির করার বিষয়ে হাদীসে বিশেষ তাকিদ দেয়া হয়েছে:
************************************
হযরত আবদুল্লাহ ইবন ওমার রাদিআল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
عن ابن عباس مرفوعا بلفظ : ” مَا مِنْ أَيَّامٍ أَعْظَمُ عِنْدَ اللَّهِ وَلَا أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنَ الْعَمَلِ فِيهِنَّ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ الْعَشْرِ فَأَكْثِرُوا فِيهِنَّ مِنَ التَّهْلِيلِ وَالتَّكْبِيرِ وَالتَّحْمِيدِ ” . أخرجه الطبراني في ” المعجم الكبير ” ( ৩ / ১১০ / ১ ) وأبو طاهر الأنباري في ” المشيخة ” ( ق ১৬০ / ২ و ১৬১ / ১ ) وقال المنذري : ( ২ / ১২৪ ) : ( وإسناده جيد ” .
“যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিনের অধিক মর্যাদাবান আর কোন দিন নেই এবং নেক আমল করার জন্য এ দিনগুলোর চেয়ে বেশি প্রিয় দিন আর নেই। অতএব তোমরা এদিনগুলোতে বেশি বেশি “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার ও আলহামদু লিল্লাহ’’ পাঠ কর।’’ [মুসনাদ আহমাদ: ৬১৫৪]
আট: এদিনকে কুরআন মাজীদে বিতর বা বেজোড় দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে:
************************************************
মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআনের সূরা আল ফাজরে এ দিনের কসম করেছেন। এ বিষয়ে আবদুল্লাহ ইবন আববাস রাদিআল্লাহু আনহুমা বলেন, ‘‘জোড় দ্বারা কুরবানীর দিন, বেজোড় দ্বারা আরাফার দিবসকে বুঝানো হয়েছে।’’ [ফাতহুল ক্বাদীর-শাওকানী, খ-৭ পৃষ্ঠা: ৪৮৯]
নয়: এদিনটি যিলহজ্জের মাহিমান্বিত দশ দিবসের মধ্যে অন্যতম:
********************************************
এ দিনে নেক আমলের বিষয়ে উৎসাহ প্রদান করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম বলেছেন, হযরত ইবন আববাস রাদিআল্লাহু আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيهِنَّ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ الْعَشْرِ فَقَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهم عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْءٍ
“এ দিনগুলোর নেক আমলের চেয়ে আল্লাহতায়ালার কাছে বেশি প্রিয় কোন আমল নেই, অর্থাৎ যিলহজ্জের দশ দিবসের নেক আমল” সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহও কি নয়? তিনি বলেন, জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহও এ দিনগুলোর নেক আমলের চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় নয়, কেবল সে ব্যক্তির আমল ব্যতীত, যে স্বীয় জীবন ও সম্পদ নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে আর কিছু নিয়ে প্রত্যাবর্তন করেনি।” [সুনান আবু দাউদ: ২৪০০]
জরুরী বিষয়:
————-
তাকবীরে তাশরীকঃ জিলহজ্ব মাসের ৯ তারিখ ফজর নামায হতে ১৩ জিলহজ্ব আছর পর্যন্ত প্রতি ফরয নামাযের পর নিম্নের তাকবীর পাঠ করতে হবে, পাঠ করা ওয়াজিব এবং ভুলে গেলে স্মরণ হওয়া মাত্র পাঠ করে নিবে। আর এ তাকবীর হলো: “আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর আল্লাহু আকবর, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।” (অর্থ: আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান এবং প্রশংসা কেবল আল্লাহরই) এ তাকবীর একবার করে পাঠ করা ওয়াজিব।
বিঃদ্রঃ
আমাদের দেশে আর সউদী আরবে যেখানে আরাফার মাঠ সেখানকার আরাফার দিন একই দিনে হয়না বা নাও হতে পারে, তাই যে ব্যক্তি পৃথিবীর যেইখানে আছে বা অবস্থান করছে, সে ঐ স্থানের ০৯ই যিলহজ্জ (অর্থাৎ, কুরবানীর ঈদের আগের দিন আরাফার রোযা রাখবে)। ‘ইয়াওমে আরাফা’ অর্থ নয়ই জিলহজ্ব। এটিই সঠিক ব্যাখ্যা। ইয়াওমে আরাফা’ হচ্ছে ঐ তারিখের (নয় যিলহজ্বের) পারিভাষিক নাম। এ কারণে যেসব আমল আরাফা বা উকূফে আরাফার সাথে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট নয়; বরং যিলহজ্বের নয় তারিখের সাথে সংশ্লিষ্ট সেগুলোকেও ‘ইয়াওমে আরাফা’র আমল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য, নয় তারিখে বা ঈদের আগের দিন আমলটি করতে হবে।
হাজী সাহেবগন ছাড়া অন্যদের জন্য আরাফার দিনের রোযাটি প্রকৃতপক্ষে ঐ দিনের ঐসব রহমত ও বরকতে অংশ গ্রহণ করার জন্য হয়ে থাকে, যা আরাফার ময়দানে হাজীদের উপর অবতীর্ণ হয়।
তাই দুয়া কবুলের সবচাইতে উপযোগী সময় হলো আরাফার দুয়া। যারা হজ্জ করতে আরাফার ময়দানে উপস্থিত হবেন তারা সারাদিন সেখানে অবস্থান করে নামায, তাসবীহ, তাহলীল, ও তালবিয়া পাঠ করবেন ও বেশি বেশি দুয়া করবেন। আর যারা এইদিনে সেখানে উপস্থিত থাকবেন না তারা ঐ দিনে রোযা রাখবেন, নামায, তাসবীহ, তাহলীল, ও তাকবীর পাঠ করবেন ও বেশি বেশি দুয়া করবেন।
ঈদুল আজহা মুসলমানদের সবচেয়ে বড় দু’টো ধর্মীয় উৎসবের একটি। বাংলাদেশে এই উৎসবটি কুরবানির ঈদ এবং বকরা ঈদ নামেও পরিচিত। ঈদুল আযহা, মূলত আরবী বাক্যাংশ। এর অর্থ হলো ত্যাগের উৎসব। আসলে এটির মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ত্যাগ করা। এ দিনটিতে মুসলমানেরা তাদের সাধ্যমত ধর্মীয় নিয়মানুযায়ী উট, গরু, দুম্বা কিংবা ছাগল কোরবানি বা জবাই দেয়। ইসলামের সকল ইবাদতের মতো ঈদও আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে নির্দেশিত ইবাদত। ঈদুল আযহা সম্পর্কে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাদিআল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ্রশা; করেন, ‘আমাকে কুরবানীর দিবসে ঈদ (উদযাপনের) আদেশ করা হয়েছে। আল্লাহ তা এ উম্মতের জন্য নির্ধারণ করেছেন।’
ঈদুল আযহার রাত জাগা: বছরের দোয়া কবুলের ৫টি রাতের মধ্যে ঈদুল আযহার রাত অন্যতম। অতএব, আরাফাহ দিবসের গুরুত্ব ও ফযীলত অনুধাবন করতঃ এ দিবসে ছিয়াম পালনে সবাইকে সচেষ্ট হ’তে হবে। তাছাড়া যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকে ইবাদতের ফযীলতও অত্যধিক। সে ব্যাপারেও আমাদেরকে যতœবান হ’তে হবে। আল্লাহতায়ালা আমাদের আরাফা দিবসের ফযিলত হাসিল করার তাওফিক দান করুন-আমীন!
وصلى الله وسلم على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه اجمعين