আযানের পূর্বে দরুদ ও সালাম

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আযানের পূর্বাপর দরূদশরীফ পাঠ করার বিধান

প্রত্যেক আযানের পূর্বে দরূদশরীফ পাঠ করা মুস্তাহাব। (এয়ানাতুত   তালেবীন    ১/২৪২   পৃষ্ঠা)    আর   প্রত্যেক   আযানের     পর    দরূদশরীফ  পাঠ  করা  সুন্নত।  (ফিকহ আলা  মাযাহিবিল  আরবা)   তবে   খুতবার   পূর্বে   ইমাম   সাহেব   মিম্বরে   বসার  পর   যে  আযান   দেওয়া  হয়,  এ আযানের  জওয়াব এবং  দোয়া যদি  শুধুমাত্র  দিল  দ্বারা করে  মুখ দ্বারা উচ্চারণ   না  করে  এতে   কোন অসুবিধা নেই।

অপরদিকে  খতিব   বা  ইমাম  সাহেব  যদি   জবান   দ্বারা আযানের   জওয়াব     ও    দোয়া    পাঠ   করে   নিঃসন্দেহে জায়েয। (ফাতাওয়ায়ে রেজভীয়া ২/৪৬৩ পৃষ্ঠা।)

দলিল
===
الطحطاوى    على   مراقى    الفلاح     নামক   কিতাবের    ২০৫ পৃষ্ঠায়   আল্লামা   তাহতাবী   হানাফি   আলাইহির   রহমত  হযরত   ইবনে উমর  রাদিয়াল্লাহু আনহু     থেকে নূর নবী সাল্লাল্লাহু         আলাইহি         ওয়াসাল্লাম         এর        একখানা হাদিসশরীফ উল্লেখ করেন,
اذا سمعتم المؤذن فقولوا مثل ما يقول ثم صلوا على صلاة فانه من صلى على صلوة صلى الله عليه بها عشرا الخ-

অর্থাৎ  ‘হাবিবে  খোদা  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়াসাল্লাম  এরশাদ   করেন,    যখন   তোমরা    মুয়াজ্জিনের     আজান শুনতে     পাও     তখন   মুয়াজ্জিন     যে   শব্দাবলী   উচ্চারণ করেন তাঁর  সাথে  সাথে তোমরাও সে শব্দাবলী বলতে থাক।  অতঃপর তোমরা আমার উপর দরূদশরীফ পাঠ কর।      কেননা      যে      ব্যক্তি      একবার      আমার      উপর  দরূদশরীফ     পাঠ   করবে    আল্লাহতা’য়ালা   তার    উপর দশটি   রহমত    অবতীর্ণ   করবেন।   অন্য    রেওয়ায়েতে  রয়েছে   আল্লাহ  আজ্জা  ওয়াজাল্লা   তার    দশটা   গোনাহ মাফ  করে  দিবেন   এবং  দশটা  দরজা   তার  বৃদ্ধি  করে দিবেন।’

দরূদশরীফ পাঠ করার স্থানসমূহ  থেকে  একটি বিশেষ  স্থান    হলো,   আযানে    হুজুরেপাক    সাল্লাল্লাহু   আলাইহি ওয়াসাল্লামের      নাম      মোবারক     শ্রবণ      করার       সময় দরূদশরীফ   পাঠ     করা    এবং   বৃদ্ধাঙুলদ্বয়    চুম্বন   দিয়ে চক্ষুদ্বয়ে      মাসেহ      করা      মুস্তাহাব।      যেমন,      আল্লামা  কাহাস্তানী ‘কানযুল  এবাদ’ থেকে  তাঁর স্বরচিত  কিতাব ‘শরহে কবির’ এর মধ্যে   বর্ণনা করেছেন যে, আযানের দ্বিতীয়   শাহাদাত   অর্থাৎ   ‘আশহাদু  আন্না  মোহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’   যখন  প্রথমবারে   পড়া  হয়  তখন   বলবে,   صلى الله    عليك   يا رسول  الله ‘সাল্লাল্লাহু  আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ’  এবং  দ্বিতীয়  বারে  قرة  عينى  بك  يا  رسول  الله   ‘কুররাতু  আইনীবিকা  ইয়া  রাসূলাল্লাহ’    পাঠ  করে হাতে    বৃদ্ধাঙুলীদ্বয়ে    চুমু   দিয়ে    চক্ষুদ্বয়ে   মাসেহ    করে বলবে-   اللهم   متعنى   بالسمع   والبصر   ‘আল্লাহুম্মাত্তিয়নী  বিসসাময়ে    ওয়াল    বাছার’   ইহা   পাঠ   করা    মুস্তাহাব। এরূপ    আমলকারীকে   রাসূলুল্লাহ   সাল্লাল্লাহু    আলাইহি ওয়াসাল্লাম   স্বীয়    তত্ত্বাবধানে   বেহেশ্তে   নিয়ে   যাবেন।  (তাফসিরে রুহুল বয়ান ৭ম জিলদের ২২৮ পৃষ্ঠা)

মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়াকালীন দরূদ ও সালাম
=========
মসজিদে   প্রবেশকালে সর্বপ্রথম  ডান  পা  দিয়ে  প্রবেশ করবেন এবং বলবেন,
السلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته-

অতঃপর বলবেন,
اللهم افتح لى ابواب رحمتك

যখন মসজিদ থেকে বের হবেন সর্বপ্রথম বাম পা দিয়ে বের হবেন এবং বলবেন,
السلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته-

এর পরক্ষণেই বলবেন,
اللهم انى اسألك من فضلك-

মুসলমানদের       খালিঘরে       প্রবেশকালীন       দরূদ       ও  সালাম
=========
কোন  ঈমানদার মুসলমান তার খালি ঘরে প্রবেশকালে আল্লাহর হাবিবকে সালাম দিতে গিয়ে বলবেন,
السلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته-

এজন্য   যে,  মুসলমানের   খালি  ঘরে  নূরনবী  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  এর  নূরানী রূহ  মোবারক হাজির থাকেন।

لان روحه عليه السلام حاضرة فى بيوت اهل الاسلام-
কেননা আল্লাহর হাবিবের রূহ  মোবারক  মুসলমানদের ঘরে হাজির রয়েছেন।  (শরহে শিফা  মুল্লা  আলী  ক্বারী   ৩/৪৬৪ পৃ: দ্র:)

দলিল

ইমাম   জালালউদ্দিন   সুয়ুতি   আলাইহির  রহমত  তদীয় جمع    الجوامع    ‘জমউল     জাওয়ামী’     নামক      কিতাবের ১/১৮৯ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,
(۱۳۰٤)  قال  النبى  صلى   الله  عليه  وسلم  اذا   دخل  احدكم المسجد  فليسلم  على  النبى   وليقل:  اللهم  افتح  لى  ابواب  رحمتك  واذا  خرج  فليسلم  على  النبى  وليقل:  اللهم  انى  اسألك من فضلك-

আল্লামা কাজী আয়াজ আলাইহির রহমত الشفاء ‘শিফা’ নামক  কিতাবের   দ্বিতীয়  জিলদের   ৬৮  পৃষ্ঠায়   উল্লেখ  করেন,
عن  علقمة  اذا  دخلت  المسجد  اقول  السلام  عليك  ايها  النبى ورحمة الله وبركاته-
হযরত    আলকামা     রাদিয়াল্লাহু     আনহু     বলেন,    আমি মসজিদে    প্রবেশকালে  নূরনবীকে  সালাম   দিতে  গিয়ে বলতাম    ‘আসসালামু    আলাইকা   আইয়ুহান্নাবীউ   ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।’

জুমুয়ার দিনে দরূদশরীফ ও
=============
সূরায়ে কাহাফ পাঠ করার ফজিলত

আমল ১
জুমুয়ার   দিন   ও    রাতে   ১০০     বার   দরূদশরীফ   পাঠ  করলে  আল্লাহপাক   তাঁর  একশত   হাজত  বা  প্রয়োজন মিটিয়ে    দিবেন।    সত্তরটি    আখেরাতের    হাজত    এবং  ত্রিশটি দুনিয়ার হাজত।

দলিল

নবম    শতকের   মুজাদ্দিদ   ইমাম   জালালউদ্দিন    সুয়ুতি আলাইহির   রহমত   الحاوى   للفتاوى   ‘আল   হাভী   লিল  ফাতাওয়া’    নামক   কিতাবের   দ্বিতীয়    জিলদের    ১৭৮  পৃষ্ঠায় একখানা সহিহ হাদিস বর্ণনা করেন,

واخرج     البيهقى     فى     حياة    الانبياء      والاصبهانى     فى الترغيب عن انس  قال  :  قال   رسول الله  صلى الله عليه وسلم من   صلى على   مائة  فى  يوم الجمعة   وليلة  الجمعة قضى الله له مائة حاجة سبعين من حوائج الاخرة وثلاثين من حوائج الدنيا-

ভাবার্থ: ‘হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু  থেকে বর্ণিত নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমুয়ার  দিনে ও রাতে আমার উপর একশত মর্তবা   দরূদশরীফ    পাঠ   করবে    আল্লাহতা’য়ালা   তার একশত হাজত    বা প্রয়োজন   মিটিয়ে দেবেন।  সত্তরটি আখেরাতের হাজত এবং ত্রিশটি দুনিয়ার হাজত।’

আমল ২
প্রতি   সপ্তাহে   জুমুয়ার   দিনে   একবার   সূরায়ে   কাহাফ  (পনেরো      পারা)    তিলাওয়াত    করবেন,    যাতে    কোন একটি জুমুয়া এ সূরা তেলাওয়াত বাদ না পড়ে।

দলিল

ইমাম  জালালউদ্দিন    সূয়ুতি  আলাইহির   রহমত  তদীয় ‘তাফসিরে    দুররে    মনসুর’     নামক    কিতাবের     পঞ্চম  জিলদের ৩৫৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

اخرج ابن  مردويه عن عمر رضى الله تعالى عنه   قال: قال رسول الله صلى  الله عليه وسلم: من  قراء سورة الكهف فى   يوم  الجمعة  سطع  له   نور   من  تحت  قدمه  الى     عنان السماء يضئ له يوم القيامة وغفرله ما بين الجمعتين-

হযরত    উমর   রাদিয়াল্লাহু   আনহু     থেকে    বর্ণিত   তিনি বলেন,     রাসূলুল্লাহ      সাল্লাল্লাহু      আলাইহি     ওয়াসাল্লাম এরশাদ    করেছেন,    যে    ব্যক্তি    জুমুয়ার   দিন    সূরায়ে  কাহাফ     তিলাওয়াত    করবে,    কিয়ামতের     দিন    তার  আপাদমস্তক এমনকি আসমান জমিন পর্যন্ত আলোকিত হবে এবং দুই জুমুয়ার মধ্যবর্তী সময়ের  সকল গোনাহ মাফ হয়ে যাবে।

অন্যান্য     রেওয়ায়েতে    রয়েছে    সমস্ত    ফিতনা    থেকে  নিরাপদ  থাকবে  এমনকি  দাজ্জালের   ফিতনা   থেকেও  মাহফুজ বা বেঁচে থাকতে সক্ষম হবে।

নবীকে  স্বপ্নে    দেখার  আশায়   জুমুয়ার    দিন  বা   রাতে  দরূদশরীফ পাঠ
=======================
আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী আলাইহির রহমত তদীয়  جذب  القلوب ‘জজবুল কুলুব’ ২৮১  পৃষ্ঠা (উর্দু)     উল্লেখ     করেন,     নূরনবী     সাল্লাল্লাহু     আলাইহি  ওয়াসাল্লাম     এর     জিয়ারতের     আশায়     যারা     নিম্নের  দরূদশরীফ পবিত্র অবস্থায় পাঠ করতে থাকবেন নবীর জিয়ারতে তারা ধন্য হবেন,

۱) اللهم صل على محمد واله وسلم كما تحب وترضى له-
۲)   اللهم  صل  على   روح  محمد  فى  الارواح  اللهم  صل  على جسده فى الاجساد اللهم صل على قبره فى القبور-
مفاخر   الاسلام    ‘মাফাখিরুল   ইসলাম’    এ    রয়েছে   যে ব্যক্তি জুমুয়ার দিন নিম্নের দরূদশরীফ  একহাজার বার পাঠ করবে,
اللهم صل على محمدن النبى الامى صل الله عليه وسلم-

এ   আমল  করার   দরুন   সে  আল্লাহর   হাবিব  সাল্লাল্লাহু  আলাইহি  ওয়াসাল্লামকে স্বপ্নে দেখতে পাবে অথবা সে ব্যক্তি  বেহেশতে  তার  জায়গা  দেখবে।  যদি  না  দেখে  পাঁচ জুমুয়া পর্যন্ত পাঠ করতে থাকবে। আল্লাহতা’য়ালার ফজল       ও      করমে      নূরনবীকে       দেখে      ধন্য      হবে। (ইনশায়াল্লাহ  শেষ  পর্যন্ত  মরণকালে  নবী    দেখে    ধন্য  হবেন।)

জুমুয়ার  রাতে পাঠ   করলে তার জন্য অতিব প্রয়োজন, দুই    রাকায়াত     নামায   পড়বে,    প্রত্যেক    রাকাআতে সূরায়ে  ফাতেহার   পর  আয়াতুল  কুরছি  ১১  বার,   সূরা এখলাস   ১১বার।   সালামের  পরে   নিম্নের  দরূদশরীফ পাঠ করবেন একশত মর্তবা,
اللهم صل على محمدن النبى الامى واله وسلم-

(উপরোক্ত    আ’মল  নিয়মিত  করতে  থাকলে   নূরনবীর  জিয়ারত দ্বারা ধন্য হবেন)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment