আয়াত লিখা কাগজের পিছনের অংশ স্পর্শ করার গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
কিতাব বা পত্রিকার মধ্যে যেই জায়গায় আয়াত লিখা রয়েছে, বিশেষ করে ঐ জায়গায় অযু ছাড়া হাতে স্পর্শ করা জায়েয নেই। ঐ দিকে হাত লাগাবেন না, যে দিকে আয়াত লিখা রয়েছে। এমনকি এর পিছনের অংশেও অর্থাৎ লিখিত আয়াতের পিছনে উভয়ই নাজায়েয। আয়াত ও এর পিছনের অংশ ছাড়া অন্যান্য পৃষ্ঠায় স্পর্শ করাতে অসুবিধা নেই। অযু ছাড়া পড়া জায়েয, গোসলের আবশ্যকতা থাকলে তখন পড়াটা হারাম। وَ اللهُ تَعَالٰی اَعْلَمُ (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) , ৪র্থ খন্ড, ৩৬৬ পৃষ্ঠা)
অযুহীন অবস্থায় কোরআন শরীফের কোন জায়গায় স্পর্শ করা যায় না- গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
অযুহীন অবস্থায় কোরআনের আয়াত স্পর্শ করা হারাম যদিও আয়াত অন্য কোন কিতাবে লিখা থাকুক। কিন্তু কোরআন শরীফের সচরাচর পাদটিকা বরং এমনকি ছুলি অর্থাৎ যেটা কাপড় বা চামড়ার মোটা ডাল দ্বারা আটকানো বা সেলাই করা থাকে, সেটাও স্পর্শ করা হারাম। হ্যাঁ! যদি জুযদানের মধ্যে হয়, তবে জুযদান হাতে স্পর্শ করা যাবে। অযুহীন অবস্থায় নিজের বুক দ্বারাও কোরআন শরীফ স্পর্শ করা যাবে না। অযুহীন অবস্থায় ঘাঁড়ের উপর লম্বা চাদরের এক কোণা পড়ে রয়েছে আর সে অন্য কোণায় হাত রেখে কোরআন শরীফ স্পর্শ করতে চাচ্ছে। যদি চাদর এতটুকু লম্বা যে, ঐ ব্যক্তি উঠা বসার দ্বারা অন্য কোণায় নড়াছড়া হয় না, তবে জায়েয অন্যথায় নয়। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) , ৪র্থ খন্ড, ৭২৪-৭২৫ পৃষ্ঠা)
গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
অযুতে পানির অপচয়
আজকাল অযু করার সময় অধিকাংশ লোক বিনা প্রয়োজনে পানির নল ছেড়ে দিয়ে নির্বিঘ্নে পানি প্রবাহিত করতে থাকে। এমন কি কেউ কেউ অযুখানাতে আসার সাথে সাথেই প্রথমে পানির নল খুলে দিয়ে তারপর জামার আস্তিন গুটাতে থাকে। ফলে দীর্ঘক্ষণ আল্লাহ্র পানাহ! পানির অপচয় হতে থাকে। অনুরূপ মাথা মাসেহ করার সময়ও অনেকেই পানির নল খোলা রেখে মাথা মাসেহ করতে থাকে। আমাদের সকলকে আল্লাহ্কে ভয় করে পানির অপচয় থেকে বিরত থাকা উচিত। কিয়ামতের দিন প্রতিটি অণূ ও বিন্দুরই হিসাব নিকাশ হবে। অপচয়ের নিন্দায় বর্ণিত চারটি হাদীস শ্রবণ করুন এবং আল্লাহর ভয়ে কেঁপে উঠুন।
(১) প্রবাহিত নদীতেও পানির অপচয়
একদা আল্লাহর প্রিয় রাসূল, রাসূলে মকবুল, মা আমেনার বাগাানের সুরভিত ফুল, হুযুর صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم হযরত সায়্যিদুনা সা’দ رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ এর নিকট গমন করলেন, তখন তিনি অযু করছিলেন। অযুতে পানির অপচয় হতে দেখে রাসূলুল্লাহ্ صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم তাকে ইরশাদ করলেন: “পানির অপচয় করছ কেন?” উত্তরে তিনি বললেন: অযুতেও কি পানির অপচয় আছে? রাসূলুল্লাহ্ صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم ইরশাদ করলেন: “হ্যাঁ আছে। এমন কি তুমি প্রবাহিত নদীতে অযু করলেও।” (সুনানে ইবনে মাযাহ, ১ম খন্ড, ২৫৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪২৫)
আ’লা হযরতর ফতোয়া
আমার আক্বা আ’লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন: বর্ণিত হাদীসে প্রবাহিত নদীতেও পানির অপচয় আছে বলা হয়েছে। আর অপচয় শরীয়াতের দৃষ্টিতে একটি নিন্দনীয় বিষয় হিসেবে স্বীকৃত। যেমন আল্লাহ্ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:
وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ؕ اِنَّہٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ ﴿۱۴۱﴾ۙ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: এবং অযথা ব্যয় করো না নিশ্চয়ই অযথা ব্যয়কারী তাঁর পছন্দনীয় নয়। (পারা-৮, সূরা-আনআম, আয়াত- ১৪১)
যেহেতু উক্ত আয়াতটি মুতলাক, তাই উক্ত আয়াত দ্বারা পানির অপচয়ও নিন্দনীয় ও নিষিদ্ধ সাব্যস্ত হবে। অধিকন্তু হাদীসেও নিষেধাজ্ঞা সূচক শব্দ দ্বারা সরাসরি অযুতে পানির অপচয়কে নিষেধ করা হয়েছে। আর নিষেধাজ্ঞা প্রকৃতপক্ষে হারামই সাব্যস্ত করে। সুতরাং অযুতে পানির অপচয় হাদীস দ্বারা নিষিদ্ধ বিধায় এবং শরীয়াতের দলীল সমূহে নিষেধাজ্ঞার হুকুম মূলত: হারাম হওয়াকে বুঝায় বিধায় অযুতে পানির অপচয় করাও সম্পূর্ণরূপে হারাম। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) , ১ম খন্ড, ৭৩১ পৃষ্ঠা)
মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ এর তাফসীর
গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ আ’লা হযরত رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ এর ফতোওয়াতে উল্লেখিত সুরা আল আনআমের ১৪১ নং আয়াতের অনুবাদে বর্ণিত অপচয়ের বিস্তারিত বর্ণনা করে বলেন: “নাজায়িয তথা অবৈধ কাজে ব্যয় করাও এক ধরণের অপচয়, নিজ পরিবার পরিজনকে অভুক্ত ও নিঃস্ব করে সমস্ত সম্পদ দান করাও এক ধরণের অপচয়, নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় করাও এক ধরণের অপচয়। এ কারণেই শরীয়াত সম্মত কারণ ব্যতীত অযুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমূহ চারবার ধৌত করাকে অপচয়ের মধ্যে গণ্য করা হয়েছে। (নুরুল ইরফান, ২৩২ পৃষ্ঠা)
গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা জেনে নিন
(২) অপচয় করো না
হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন ওমর رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُمَا বলেন: নবী করীম, হুযুর পুরনূর صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এক ব্যক্তিকে অযু করতে দেখে ইরশাদ করলেন: “অপচয় করো না, অপচয় করো না।” (সুনানে ইবনে মাযাহ, ১ম খন্ড, ২৫৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ৪২৪)
(৩) অপচয় করা শয়তানেরই কাজ
হযরত সায়্যিদুনা আনাস رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: “অযুতে প্রচুর পানি ব্যবহারে কোন কল্যাণ নেই এবং তা শয়তানেরই কাজ।” (কানযুল উম্মাল, ৯ম খন্ড, ১৪৪ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৬২৫৫)
(৪) জান্নাতের সাদা মহল প্রার্থনা করা কেমন?
একদা হযরত সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ বিন মুগাফ্ফাল رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہُ তাঁর পুত্রকে এভাবে দোয়া করতে শুনলেন। “হে মালিক! আমি তোমার নিকট জান্নাতের ডান দিকে অবস্থিত সেই সাদা মহল প্রার্থনা করছি।” তখন তিনি পুত্রের উদ্দেশ্যে বললেন: হে প্রিয় বৎস! তুমি আল্লাহ্র নিকট জান্নাত প্রার্থনা করো এবং দোযখ হতে মুক্তির দোয়া করো। কেননা, আমি রাসূলুল্লাহ্ صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم কে ইরশাদ করতে শুনেছি: “এই উম্মতের মধ্যে এমন কতিপয় সম্প্রদায়ও থাকবে। যারা অযু ও দোয়াতে সীমা লঙ্ঘন করবে।” (সুনানে আবু দাউদ, ১ম খন্ড, ৬৮ পৃষ্ঠা, হাদীস-৯৬)
গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
প্রসিদ্ধ মুফাসসির, হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নঈমী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ অত্র হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন: দোয়াতে সীমা লঙ্ঘন হলো, অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা দোয়াতে সংযোজন করা। যেমনিভাবে আবদুল্লাহ বিন মুগাফ্ফালের ছেলে করেছিলো।তবে দোয়াতে সর্বোত্তম জান্নাতুল ফিরদৌসের প্রার্থনা করা উত্তম। কেননা, এতে নির্দিষ্ট জান্নাতের দোয়া বুঝা যায় না। বরং সচরাচর জান্নাতেরই দোয়া বুঝা যায়। তাই হাদীসেও জান্নাতুল ফিরদৌসের জন্য দোয়া করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। (মিরাত, ১ম খন্ড, ২৯৩ পৃষ্ঠা)
খারাপই করলো, অত্যাচারই করলো
এক বেদুঈন হুযুর সায়্যিদে আলম صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে অযু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলো। হুযুরে আকদাস صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم নিজে অযু করে দেখিয়ে তাকে অযু শিক্ষা দিলেন। যাতে তিনি প্রত্যেক অঙ্গ তিনবারই ধৌত করেছিলেন। অতঃপর তিনি ইরশাদ করলেন: “আমি যেরূপ অযু করেছি অযু ঠিক সেরূপই। যে এর চেয়ে বেশি করবে কিংবা হ্রাস করবে সে খারাপই করলো এবং অত্যাচারই করলো।” (সুনানে নাসায়ী, ৩১ পৃষ্ঠা, হাদীস-১৪০)
অপচয় শুধুমাত্র দুই ক্ষেত্রে গুনাহ
আমার আক্বা আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ লিখেন: এই ভীতিটা ঐ ক্ষেত্রে যে, যখন এই বিশ্বাস রেখে অতিরিক্ত করে, যে অতিরিক্ত করাটা সুন্নাত এবং যদি তিনবার অযুর অঙ্গ ধৌত স্বীকার করে এবং অযুতে অযুর ইচ্ছায় বা সন্দেহের সময় অন্তরের প্রশান্তির জন্য অথবা শীতলতা অর্জনের জন্য বা পরিস্কারের জন্য অতিরিক্ত ধৌত করলো বা কোন কারণে কম করলো, এতে কোন অসুবিধা নেই। শুধুমাত্র দুই ক্ষেত্রে অপচয় না জায়িয ও গুনাহ;প্রথমত: এটাই কোন গুনাহের মধ্যে খরচ ও ব্যবহার করা। দ্বিতীয়ত: অনর্থক সম্পদ নষ্ট করা। অযু ও গোসলের মধ্যে তিনবারের অধিক পানি ঢালা কখনো অপচয় নয়, যখন বৈধ উদ্দেশ্য থাকে। আর বৈধ উদ্দেশ্যের মধ্যে খরচ করাটা না গুনাহ আর না অযথা নষ্ট করার অন্তর্ভূক্ত। (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) , ১ম খন্ড, ৯৪০-৯৪২ পৃষ্ঠা)
গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
কার্যগতভাবে অযু শিখুন – গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! বর্ণিত হাদীস দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো, নিজে অযু করে দেখিয়ে অপরকে অযু শিক্ষা দেয়া হুযুর পুরনূর صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم এর দ্বারা প্রমাণীত। সুতরাং দা’ওয়াতে ইসলামীর মুবাল্লিগদের উচিত বর্ণিত হাদীসের উপর আমল করতে পানির অপচয় না করে এবং প্রতিটি অঙ্গ তিনবারই ধৌত করে নিজে অযু করে দেখিয়ে ইসলামী ভাইদেরকে অযু শিক্ষা দেয়া। শরয়ী প্রয়োজন ছাড়া কোন অঙ্গ যেন চারবার ধৌত করা না হয় অযু করার সময় সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখবেন। যে অযুর ক্ষেত্রে নিজের ভুল-ত্রুটি সংশোধন করতে চায়, সেও যেন নিজ খুশীতে স্বেচ্ছায় অযু করে নেয়। মুবাল্লিগদেরকে দেখিয়ে নিজের ভুল-ত্রুটি দূর করে নেয়। দা’ওয়াতে ইসলামীর সুন্নাত প্রশিক্ষণের মাদানী কাফিলাতে আশিকানে রাসূলের সংস্পর্শে এ মাদানী কাজ সুন্দর পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। আপনারা সঠিক ও নির্ভূল অযু করা অবশ্যই অবশ্যই শিখে নেবেন। শুধুমাত্র দুই একবার অযুর পদ্ধতি নামক রিসালা পাঠ করে সঠিক ভাবে অযু শিখাটা খুবই কঠিন। বরং অযু শেখার জন্য আপনাকে বারবার অযুর অনুশীলন করতে হবে। অযু শিখার জন্য দা’ওয়াতে ইসলামীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল মদীনাতে পাওয়া V.C.D তে অযুর পদ্ধতি দেখলে খুবই উপকার হবে।
মসজিদ ও মাদরাসার পানির অপচয়
মসজিদ ও মাদরাসার অযুখানা সমূহতে যে পানি আছে, তা ওয়াকফের হুকুমের অন্তর্ভূক্ত। সে পানি এবং নিজ ঘরের পানির হুকুমের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। যে সমস্ত লোক নির্দয়তার সাথে মসজিদের অযুখানার পানি ব্যবহার করে থাকে এবং অজ্ঞতা ও অলসতার বশীভূত হয়ে বিনা প্রয়োজনে তিনবারের অধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সমূহ ধৌত করে থাকে, তারা এ মোবারক ফতোয়াটির প্রতি ভালভাবে লক্ষ্য করুন এবং আল্লাহ্ তাআলার ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ভবিষ্যতে আর কখনো এরূপ না করার জন্য তাওবা করে নিন।
আমার আক্বা আ’লা হযরত, ইমামে আহলে সুন্নাত, অলিয়ে নে’মত, আজিমুল বারাকাত, আজিমুল মারতাবাত, পরওয়ানায়ে শময়ে রিসালাত, মুজাদ্দিদে দ্বীনো মিল্লাত, হামীয়ে সুন্নাত, মাহীয়ে বিদআত, আলিমে শরীয়াত, পীরে তরীকত, বা-ইসেখাইরো বারাকাত হযরত আল্লামা মাওলানা আলহাজ্ব, আল হাফিজ, আল ক্বারী, শাহ ইমাম আহমদ রযা খাঁন رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ বর্ণনা করেন: “ওয়াকফের পানি দ্বারা অযু করলে তাতে অযথা অতিরিক্ত খরচ করা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম। কেননা, এতে অতিরিক্ত খরচের অনুমতি দেয়া হয়নি। অনুরূপ মাদ্রাসার পানিও মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার করা হারাম। কেননা, তা শুধুমাত্র সে সমস্ত ব্যক্তিদের জন্যই ওয়াকফ করা হয়েছে যারা শরীয়াত সম্মতভাবে অযু করে।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) , ১ম খন্ড, ৬৫৮ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ইসলামী ভাইয়েরা! যারা নিজেদেরকে পানির অপচয় হতে বাঁচাতে পারে না, তাদের উচিত নিজেদের মালিকানাধীন পানি তথা ঘরের পানি দ্বারাই অযু করা। আল্লাহর পানাহ! এর দ্বারা উদ্দেশ্য এটা নয় যে, নিজ মালিকানাধীন পানি যথেচ্ছা ব্যবহারের অবাধ স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। বরং এর অর্থ এই যে, ঘরে ভালভাবে অনুশীলন করে শরয়ী অযু শিখে নেয়া, যাতে মসজিদের পানি দ্বারা অযু করতে হলে তা অপচয় করে হারামে লিপ্ত হতে না হয়।
গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
পানির অপচয় থেকে বাঁচার ৭টি উপায়
(১) কতিপয় লোক অঞ্জলি বা হাতের কোষে এমনিভাবে পানি ঢালে যাতে উপচে পড়ে। অথচ যে পানি পড়ে গেলো তা অনর্থক নষ্ট হয়ে গেলো। তাই পানি ঢালার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত।
(২) প্রত্যেকবার অঞ্জলি পূর্ণ পানি নেয়ার প্রয়োজন নেই। বরং যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই নেয়া উচিত। যেমন-নাকে পানি দেয়ার জন্য অঞ্জলি পূর্ণ পানি নেয়ার প্রয়োজন নেই। অর্ধাঞ্জলিই যথেষ্ট। এমনকি কুলি করার জন্যও অঞ্জলিপূর্ণ পানি প্রয়োজন নেই।
(৩) লোটার (বদনা) নল মধ্যম ধরণের হওয়া উচিত। পানি দেরীতে পড়ে এরূপ সংকীর্ণও নয়, আবার প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি পড়ে এরূপ প্রশস্থও নয়। নল সংকীর্ণ ও প্রশস্থ হওয়ার মাঝে তারতম্য এভাবে নির্ণয় করা যায় যেমন পাত্রে পানি নিয়ে অযু করলে যেরূপ বেশি পানির প্রয়োজন হয়। প্রশস্থ নল বিশিষ্ট লোটা দ্বারা অযু করলেও যদি সেরূপ বেশি পানির প্রয়োজন হয়, তাহলে এটা প্রশস্থ নল হিসেবে বিবেচিত হবে। প্রশস্থ নল বিশিষ্ট লোটা (বদনা) ছাড়া অন্য কোন লোটা (বদনা) যদি পাওয়া না যায়, তাহলে সাবধানতার সাথে অযু করতে হবে এবং পানির ধারা প্রবল বেগে প্রবাহিত না করে হালকাভাবে প্রবাহিত করতে হবে। পাইপের পানি দ্বারা অযু করার সময় নল চালু করার ক্ষেত্রেও অনুরূপ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
(৪) অযুর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সমূহ ধৌত করার পূর্বে এতে ভিজা হাত বুলিয়ে দিবেন যাতে পানি তাড়াতাড়ি সঞ্চালিত হয় এবং অল্প পানি অধিক পানির কাজ দেয়। বিশেষ করে শীতকালে মানুষের শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ শুকিয়ে যাওয়ার ফলে পানি ঢালার পরও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমূহের মাঝখানে কিছু কিছু জায়গা শুষ্ক থেকে যায়। যা প্রতি নিয়ত আমাদের চোখে ধরা পড়ছে।
গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
(৫) হাতের কব্জিতে লোম থাকলে তা মুন্ডন করে নেবেন। কেননা, লোমের কারণে বেশি পানির প্রয়োজন হয়ে থাকে। লোম ছাটলে তা শক্ত হয়ে যায়। তাই মুন্ডন করাই ভাল। তবে মেশিন দ্বারা মুন্ডন করবেন যাতে ভালভাবে পরিস্কার হয়ে যায়। আর সর্বোত্তম হলো, “নওরা” তথা লোমনাশক ঔষধ ব্যবহার করা। কেননা, অঙ্গ প্রত্যঙ্গে নওরা ব্যবহার করা সুন্নাত দ্বারা সাব্যস্ত। যেমন উম্মুল মুমিনীন সায়্যিদাতুনা উম্মে সালমা رَضِیَ اللہُ تَعَالٰی عَنۡہَا হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল্লাহ্র রাসূল صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم যখন নওরা ব্যবহার করতেন, তিনি আপন পবিত্র হাত দ্বারা তাঁর পবিত্র সতরে নওরা লাগাতেন এবং শরীরে অন্যান্য অঙ্গ সমূহে তাঁর পূত পবিত্র রমনীদের দ্বারা লাগাতেন। (ইবনে মাযাহ, ৪র্থ খন্ড, ২২৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং-৩৭৫১) আর শরীরের লোম মুন্ডন না করলে ধৌত করার পূর্বে পানি দ্বারা তা ভালভাবে ভিজিয়ে নিবেন যাতে লোম সমূহ খাড়া হয়ে না থাকে। অন্যথা খাঁড়া লোমের গোঁড়ায় পানি পৌঁছার পর সূঁচ পরিমাণ জায়গা শুষ্ক থাকলেও অযু হবে না।
(৬) হাত ও পায়ে পানি ঢালার সময় হাতের নখ হতে কনুই পর্যন্ত এবং পায়ের নখ হতে গোড়ালীর উপরিভাগ পর্যন্ত লাগাতার পানি ঢালতে থাকবেন, যাতে একবারে হাত-পায়ের প্রতিটি স্থানে একবারই পানি পতিত হয়। পানি ঢালার সময় হাত পরিচালনাতে দেরী করলে এক স্থানে বারবার পানি পড়তে থাকবে। ফলে পানির অপচয় হবে।
(৭) অনেক লোক হাতের নখ হতে কনুই পর্যন্ত এবং পায়ের নখ হতে গোড়ালী পর্যন্ত প্রথমে একবার পানি ঢেলে ধৌত করে থাকে। এরপর পানির প্রবাহ চালু রেখে দ্বিতীয়বার ও তৃতীয়বার ধৌত করার জন্য লোটার (বদনা) নল নখের দিকে নিয়ে যায়, এরূপ করা উচিত নয়। কেননা, এতে তিনবারের পরিবর্তে পাঁচবার ধৌত করা হয়ে যাবে। বরং প্রত্যেকবার নখ হতে কনুই বা গোড়ালী পর্যন্ত লোটার নল নিয়ে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দিতে হবে এবং বন্ধ অবস্থায় পুনরায় নখের দিকে নিয়ে দ্বিতীয়বার ও তৃতীয়বার ধৌত করতে হবে।
আর হাত পা ধৌত করার সময় হাতের নখ হতে কনুই পর্যন্ত এবং পায়ের নখ হতে গোড়ালী পর্যন্ত ধৌত করাই সুন্নাত। বিপরীত দিক থেকে অর্থাৎ কনুই বা গোড়ালী হতে শুরু করে নখ পর্যন্ত ধৌত করা সুন্নাত নয়। সারকথা হলো; কৌশলের সাথে কাজ করবেন। ইমাম শাফেয়ী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِتَعَالٰی عَلَیہِ সুন্দরই বলেছেন: “কৌশলে কাজ করলে অল্পেই যথেষ্ট হয়। অকৌশলে করলে প্রচুরেও সংকুলান হয় না।” (ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) , ১ম খন্ড, ৭৬৫-৭৭০ পৃষ্ঠা)
অপচয় থেকে বাঁচার ১৪টি মাদানী ফুল
(১) আজ পর্যন্ত যতধরণের অবৈধ অপচয় করেছেন তা থেকে তাওবা করে ভবিষ্যতে আর কখনও কোন ধরণের অপচয় না করার প্রতিজ্ঞা করে নিন।
(২) অযু গোসলও যাতে সুন্নাত মোতাবেক হয় এবং পানিও যাতে কম খরচ হয় সেরূপ নিয়ম নীতি গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করুন এবং কিয়ামতের দিন প্রতিটি অণু ও বিন্দুরই যে হিসাব নিকাশ হবে তা ভয় করুন। আল্লাহ্ তাআলা পারা ৩০ সূরা যিলযালের ৭ ও ৮ নং আয়াতের মধ্যে ইরশাদ করেন:
فَمَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ خَیۡرًا یَّرَہٗ ؕ﴿۷﴾
وَ مَنۡ یَّعۡمَلۡ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ شَرًّا یَّرَہٗ﴿۸﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: সুতরাং যে অনু পরিমাণ সৎকাজ করবে সে তা দেখতে পাবে এবং যে অনু পরিমাণ মন্দ কাজ করবে, সে তাও দেখতে পাবে।
(৩) অযু করার সময় সাবধানতার সাথে পানির নল চালু করুন। অযুকালীন সময়ে সম্ভব হলে এক হাত নলের ছিপিতে রাখুন এবং প্রয়োজন সেরে বারবার নল বন্ধ করতে থাকুন।
(৪) নলের পরিবর্তে লোটা (বদনা) দ্বারা অযু করলে অপেক্ষাকৃত পানি কম খরচ হয়। তাই যাদের জন্য লোটা (বদনা) দ্বারা অযু করা সম্ভব তারা লোটা (বদনা) দ্বারাই অযু করুন। আর যদি নলে অযু করা ছাড়া উপায় না থাকে তাহলে যে সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ লোটা দ্বারা ধৌত করা সহজ তা লোটা (বদনা) দ্বারা ধৌত করে অপরাপর অঙ্গ নল দ্বারা ধৌত করুন। যাতে অপচয় হতে কোনরূপ বাঁচা যায়।
(৫) মিসওয়াক, কুলি, গরগরা, নাক পরিস্কার, দাঁড়ি ও হাত পায়ের আঙ্গুল খিলাল, মাথা মাসেহ ইত্যাদি করার সময় পানির নল ভালভাবে বন্ধ রাখুন, যাতে এক ফোঁটা পানিও অযথা নষ্ট না হয়। এভাবে ভালভাবে নল বন্ধ করার অভ্যাস গড়ুন।
(৬) বিশেষ করে শীতকালে অযু গোসল করার জন্য, বাসনকোসন, কাপড়-চোপড় ইত্যাদি ধোয়ার জন্য গরম পানি লাভের আশায় পাইপের জমা ঠান্ডা পানি অনর্থক ছেড়ে না দিয়ে কোন পাত্রে নেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
(৭) সাবান দ্বারা হাত-মুখ ধোয়ার জন্য হাতের তালুতে সাবান ফেনায়িত করার সময়ও সাবধানতার সাথে সামান্য পানি নিয়ে তারপর সেখানে সাবান রেখে সাবান ফেনায়িত করুন। যদি প্রথম থেকেই হাতে সাবান রেখে পানি ঢালতে থাকেন, তাহলে পানি বেশি খরচ হবে।
(৮) ব্যবহারের পর পানি নাই এমন দানিতেই সাবান রাখুন। জেনে শুনে পানি বিশিষ্ট দানিতে সাবান রাখলে তা গলে নষ্ট হয়ে যাবে। হাত ধোয়ার বেসিনের কিনারাতে সাবান রাখলেও তা তাড়াতাড়ি পানিতে গলে যাবে।
(৯) পান করার পর গ্লাসের অবশিষ্ট পানি এবং আহার করার পর জগের অবশিষ্ট পানি ফেলে না দিয়ে অন্যকে পান করিয়ে দিন, অন্য কোন কিছুতে ব্যবহার করুন।
(১০) ফল-মূল, তরি-তরকারি, কাপড়-চোপড়, বাসন-কোসন, বিছানাপত্র ইত্যাদি ধোয়ার সময় এমনকি একটি চায়ের কাপ বা চামচ ধোয়ার সময়ও বর্তমানে যে ব্যাপক হারে পানির অপচয় করতে দেখা যায় এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি ব্যবহারের ছড়াছড়ি দেখা যায় তা কোন বিবেকবান সুহৃদয় পুরুষের সহ্য হওয়ার মত নয়। হায়! যদি তাদের অন্তরে আমার কথাগুলো গেঁতে যেত।
(১১) অধিকাংশ মসজিদ, ঘর, অফিস, দোকান ইত্যাদিতে দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা অনর্থক বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলতে থাকে এবং অনর্থক বাতি A.C, বৈদ্যুতিক পাখা চলতে থাকে। তাই প্রয়োজন সেরে ঘরের বাতি, পাখা এবং A.C ও কম্পিউটার ইত্যাদি বন্ধ করে দেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। আমাদের সকলকে পরকালীন হিসাব নিকাশকে ভয় করা এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে অপচয় রোধ করা উচিত।
(১২) ইস্তিঞ্জাখানাতে লোটা ব্যবহার করুন। ফোয়ারা দ্বারা শৌচ কর্ম করলে পানিও অপচয় হয় এবং পাও প্রায় নাপাক হয়ে যায়। প্রত্যেকের উচিত প্রতিবার প্রস্রাব করার পর এক লোটা (বদনা) পানি নিয়ে ড.ঈ এর কিনারাতে কিছু পানি এবং ছিটা না পড়ে মত সামান্য উপর থেকে কমোডে অবশিষ্ট পানি ঢেলে দেয়া। اِنۡ شَآءَ اللّٰہ عَزَّوَجَلَّ এতে দুর্গন্ধ ও জীবানু উভয়ই হ্রাস পাবে। ফ্ল্যাশ ট্যাংক দ্বারা কমোড পরিস্কার করতে গেলে প্রচুর পানি খরচ হয়ে থাকে।
(১৩) নল হতে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়তে দেখলে তাড়াতাড়ি তা মেরামত করে নিন। অন্যথা পানি নষ্ট হতে থাকবে। মাঝেমধ্যে মসজিদ মাদ্রাসার পাইপের নল দিয়েও এরূপ ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়তে দেখা যায়। কিন্তু তা দেখাশুনা করার কেউ থাকে না এবং এর যাবতীয় দায়-দায়িত্ব মসজিদ মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিরই মনে করে থাকে। তাই এরূপ পানি পড়তে দেখলে নিজ দায়িত্ব মনে করে তাড়াতাড়ি তা মেরামত করে নিয়ে নিজের পরকালীন কল্যাণের পথ সুগম করুন।
(১৪) আহার করার সময় অন্য কোন পানীয় পান করার সময়, ফলমূল কাটার সময় কোন দানা, খাদ্যকনা ও পানীয়ের ফোঁটা যাতে নষ্ট ও অব্যবহৃত না হয়, সেটার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখবেন।
৪০টি মাদানী ফুলের রযবী পুষ্পধারা
সমস্ত মাদানী ফুল ফতোওয়ায়ে রযবীয়া (সংকলিত) ৪র্থ খন্ডের শেষে প্রদত্ত “ফাওয়াইদে জলিলা”এর ৬১৩ থেকে ৭৪৬ পৃষ্ঠা থেকে নেওয়া হয়েছে;
❁ অযুতে চোখ দৃঢ়ভাবে বন্ধ করবে না, কিন্তু অযু হয়ে যাবে।
❁ যদি ঠোঁট খুব দৃঢ়ভাবে বন্ধ করে অযু করলো কিন্তু কুলি করলো না, তাহলে অযু হবে না।
❁অযুর পানি কিয়ামতের দিন নেকীর পাল্লায় রাখা হবে। (কিন্তু স্মরণ রাখবেন! প্রয়োজনের চেয়ে অধিক পানি খরচ করাটা অপচয়)
❁ মিসওয়াক থাকলে আঙ্গুল দ্বারা দাঁত মাজা সুন্নাত আদায় ও সাওয়াব অর্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। হ্যাঁ! মিসওয়াক না থাকলে তখন আঙ্গুল বা খসখসে কাপড় দ্বারা সুন্নাত আদায় হয়ে যাবে এবং মহিলাদের জন্য মিসওয়াক থাকলেও দাঁতের মাজন যথেষ্ট।
❁আংটি ঢিলা হলে তখন অযুতে সেটাকে নড়াচড়া করিয়ে পানি ঢালা সুন্নাত, আর যদি আঙ্গুলের সাথে দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত থাকে তাহলে আংটি নেড়ে পানি পৌঁছানো ফরয। এই হুকুম কানের দুল ইত্যাদির ক্ষেত্রেও।
❁অযুর অঙ্গ সমূহ ভালভাবে ধৌত করা অযু ও গোসল উভয় ক্ষেত্রে সুন্নাত।
❁অযুর অঙ্গ সমূহ ধৌত করার ক্ষেত্রে শরয়ী সীমার চতুর্পার্শ্বের এতটুকু পর্যন্ত বাড়ানো যার দ্বারা শরয়ী সীমারেখা পরিপূর্ণ হতে যেন সন্দেহ না হয়, তা ওয়াজীব।
❁ অযুর মধ্যে কুলি ও নাকে পানি না দেওয়া মাকরূহ এবং এর অভ্যস্থ ব্যক্তি গুনাহগার হবে। এই মাসয়ালাটি ঐসব লোকেরা খুব স্মরণ রাখবেন, যাদের কণ্ঠনালী পর্যন্ত ধৌত হয়ে যায়। এমনভাবে কুলি করেন না এবং তারা নাক পর্যন্ত পানি ছুঁয়ে দেন। নিঃশ্বাস দিয়ে উপরে নিয়ে যান না। এরা সবাই গুনাহগার। আর গোসলের মধ্যে এমনটি না করলে গোসল হবে না, নামাযও হবে না।
❁অযুতে প্রতিটি অঙ্গ সম্পূর্ণ তিনবার ধৌত করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। ছেড়ে দেওয়ায় অভ্যস্থ ব্যক্তি গুনাহগার হবে।
❁অযুতে তাড়াতাড়ি না করা উচিত, বরং ধীরস্থির ও সতর্কতার সাথে করবে, সাধারণ মানুষের কাছে প্রসিদ্ধ যে, অযু যুবকদের মতো। নামায বৃদ্ধদের মতো এটা অযুর ব্যাপারে একেবারেই ভুল।
❁ মুখ ধোয়ার সময় না গালে পানি দিবে, না নাকে আর প্রবল জোরে কপালের উপর, এই সব মূর্খদের কাজ। বরং ধীরস্থির ভাবে কপালের উপর থেকে থুথুনির নিচ পর্যন্ত পানি প্রবাহিত করবে।
❁ অযুতে মুখ থেকে টপকে পড়া পানি উদাহরণ স্বরূপ- হাতের বাহুতে পড়লো এবং বাহুতে প্রবাহিত করে দিলো অর্থাৎ মুখ থেকে ঝরে পড়া পানির দ্বারা বাহু ধৌত করা যাবে না। এর দ্বারা অযু হবে না এবং গোসলের ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ- মাথার পানি পা পর্যন্ত যেখানে যেখানে অতিবাহিত হবে পবিত্র হয়ে যাবে। সেখানে নতুন পানির প্রয়োজন নেই।
❁ব্যক্তি অযু করতে বসলো। তারপর কোন প্রতিবন্ধকতার কারণে সব কিছু পরিপূর্ণ ভাবে করতে পারেনি, তবে যতটুকু করেছে এর উপর সাওয়াব পাবে, যদিও অযু হয়নি।
❁যে ব্যক্তি নিজেই এই ইচ্ছা করবে যে, অর্ধেক অযু করবে, তবে সে ঐ অর্ধাংশের সাওয়াব পাবে না। এমনিভাবে যে অযু করতে বসলো এবং কোন কারণ ছাড়া অযু অর্ধেক করে ছেড়ে দিল সেও যতটুকু অযু করেছে সেটার সাওয়াব পাবে না।
গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা জেনে নিন
❁ যদি মাথার উপর বৃষ্টির এতটুকু ফোটা পড়লো যে, মাথা এক চতুর্থাংশ ভিজে গেলো, মাসেহ হয়ে গেলো। যদিও ঐ ব্যক্তি হাত না লাগায়।
❁ কুয়াশার মধ্যে খালি মাথায় বসলো এবং তার মাথা এক চতুর্থাংশ ভিজে গেলো, মাসেহ হয়ে গেলো।
❁এতটুকু গরম ও ঠান্ডা পানি দ্বারা অযু করা মাকরূহ, যা শরীরে ভালভাবে ঢালা যায় না। সুন্নাত পরিপূর্ণ করতে দেয় না। আর যদি ফরয পূর্ণ করতে প্রতিবন্ধকতা হয়, তাহলে অযু হবে না।
❁পানি অযথা খরচ করা, নিক্ষেপ করাটা হারাম। (নিজে বা অন্য জন পানি পান করার পর গ্লাস বা জগের বেঁচে যাওয়া পানি ইচ্ছাকৃত নিক্ষেপ কারীরা তাওবা করুন এবং আগামীতে এর থেকে বেঁচে থাকুন)
❁নাভী থেকে হলদে পানি বের হলে অযু ভেঙ্গে যায়।
❁রক্ত বা পূঁজ চোখে প্রবাহিত হলো, কিন্তু চোখ থেকে বাইরে বের হয়নি। তাহলে অযু ভাঙ্গবে না। সেটা কাপড় দ্বারা মুছে পানিতে ফেললেও পানি নাপাক হবে না।
❁ আঘাতের উপর পট্টি বাঁধা, সেটাতে রক্ত ইত্যাদি লেগে গেলো। যদি সম্ভাবনা থাকে যে, ব্যান্ডিজ না হলে রক্ত প্রবাহিত হবে, তাহলে অযু ভঙ্গ হয়ে গেলো অন্যথায় নয়। আর না পট্টি নাপাক।
❁ প্রস্রাবের ফোটা বা রক্ত ইত্যাদি লিঙ্গের ভিতর প্রবাহিত হলো। কিন্তু লিঙ্গের মাথার বাইরে বের হয়নি, তবে অযু ভঙ্গ হবে না এবং প্র¯্রাবের ফোটা লিঙ্গের মাথায় বের হলো তবে অযু ভঙ্গ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট।
❁নাবালিগ কখনো অযুহীন হয় না, আর নাপাকী অর্থাৎ গোসলহীন হয় না। অর্থাৎ নাবালিগদের অযু ও গোসলের হুকুমের অভ্যাস করাতে এবং আদব শিখানোর জন্যই। অন্যথায় অন্য কোন অযু ভঙ্গকারী কাজের দ্বারা তাদের অযু ভঙ্গ হয় না। আর না সহবাসের দ্বারা তাদের উপর গোসল ফরয হয়।
❁অযু সহকারে থাকা ব্যক্তি মা-বাবার কাপড় বা তাদের খাওয়ার জন্য ফল অথবা মসজিদের ফ্লোর সাওয়াবের জন্য ধৌত করলো, তাহলে পানি ব্যবহৃত হবে না। যদিও এই কাজ আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য হয়।
❁ নাবালিগের পবিত্র হাত বা শরীরের কোন অংশ যদি সে অযুহীন হয়। পানিতে হাত প্রবেশ করাতে পানি অযু করার যোগ্য থেকে গেলো।
❁ শরীর পরিস্কার রাখা, ময়লা দূর করা শরীয়াতের চাহিদা। কেননা, ইসলামের ভিত্তি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার উপর। এই নিয়্যতে অযু সহকারে থাকা ব্যক্তি শরীর ধৌত করলো, নিঃসন্দেহে সাওয়াবের অধিকারী হলো। কিন্তু পানি ব্যবহৃত হলো না।
❁ব্যবহৃত পানি পবিত্র, এর দ্বারা কাপড় ধৌত করা যায়, কিন্তু এর দ্বারা অযু হয় না এবং এটা পান করা ও আটা মাকানো মাকরূহে তানযীহি।
❁ পূর্ণ করা পানি অনুমতি ছাড়া নিয়ে গেলো, যদিও জোরপূর্বক অথবা চুরি করে নিয়ে গেলো, এর দ্বারা অযু হয়ে যাবে। কিন্তু হারাম। অবশ্য কারো মালিকানাধীন কূপ থেকে তার নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও পানি পূর্ণ করে নিলো, এটা ব্যবহার করা জায়েয।
❁ যেই পানির মধ্যে ব্যবহৃত পানির ছিটা বা স্পষ্ট ফোটা পড়লো, এর দ্বারা অযু না করা উত্তম।
❁ শীতকালে অযু করার দ্বারা ঠান্ডা বেশি অনুভূত হবে, তার কষ্ট হবে। কিন্তু যদি কোন রোগের সম্ভাবনা না থাকে তবে তায়াম্মুমের অনুমতি নেই।
❁ শয়তানের থুথু বা ফুক দেওয়ার দ্বারা নামাযের মধ্যে প্রস্রাবের ফোটা বা বায়ূ বের হওয়ার সন্দেহ হয়, তবে হুকুম হলো যতক্ষন পর্যন্ত এমন দৃঢ় বিশ্বাস হবে না যে, যেটার উপর শপথ করতে পারবে। ঐ কুমন্ত্রণার প্রতি মনযোগ দিবে না। শয়তান বলে যে, তোমার অযু ভেঙ্গে গেছে, তখন অন্তরে জাওয়াব দিবে যে, হে অভিশপ্ত! তুই মিথ্যুক এবং নিজের নামাযের মধ্যে ব্যস্ত থাকবে।
❁ মসজিদকে প্রত্যেক দূর্গন্ধ জিনিস থেকে বাঁচানো ওয়াজীব। যদিও সেটা পাক হোক। উদাহরণ স্বরূপ- থুথু, কফ, লালা। যেমন- শ্লেশ্মা, নাক থেকে প্রবাহিত পানি, অযুর পানি।
❁সতকর্তা: অনেক লোক অযুর পরে নিজের মুখ হাতের পানি মুছে মসজিদে হাত ঝাড়তে থাকে। এটা হারাম ও নাজায়িয।
❁ পানিতে প্রস্রাব করাটা মাকরূহ যদি নদীতেও হয়।
❁ যেখানে কোন নাপাকী পড়ে রয়েছে, সেখানে তিলাওয়াত করাটা মাকরূহ।
❁ পানি নষ্ট করা হারাম।
❁ সম্পদ নষ্ট করা হারাম।
❁ যমযমের পানি দ্বারা গোসল ও অযু মাকরূহ ছাড়া জায়েয এবং প্রস্রাব ইত্যাদি করে ঢিলে দ্বারা শুষ্ক করে নেওয়ার পর যমযমের পানি দ্বারা ইস্তিন্জা করা মাকরূহ এবং নাপাকি ধৌত করা (উদাহরণ স্বরূপ- প্রস্রাবের পর টিসু পেপার ইত্যাদি দ্বারা না শুকিয়ে) গুনাহ।
❁ ঐ অপচয় যেটা না জায়িয ও গুনাহ সেটা শুধু মাত্র ঐ দুই ক্ষেত্রে হয়, এক: কোন গুনাহের কাজে খরচ ও ব্যবহার করা, দুই: অনর্থক সম্পদ নষ্ট করা।
❁ মৃত ব্যক্তির গোসল শিখানোর জন্য মৃত ব্যক্তিকে গোসল করালো এবং তাকে গোসল দেওয়ার নিয়্যত করেনি, মৃত ব্যক্তি পাক হয়ে গেলো। জীবিতদের মধ্যে থেকে ফরয আদায় হয়ে গেলো। কাজের ইচ্ছাই যথেষ্ট। হ্যাঁ! নিয়্যত ছাড়া সাওয়াব পাবে না।
হে রব্বে মুস্তফা! আমাদেরকে অপচয় থেকে বাঁচিয়ে শরয়ী ভাবে অযু করার পাশাপাশি সব সময় অযু সহকারে থাকার সৌভাগ্য দান করো।
اٰمِين بِجا هِ النَّبِيِّ الْاَمين صَلَّی اللہُ تَعَالٰی عَلَیْہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم
অযু সহকারে মৃত্যু বরণকারী শহীদ
ফরমানে মুস্তফা صَلَّی اللهُ تَعَالٰی عَلَیۡہِ وَاٰلِہٖ وَسَلَّم: “যদি তোমরা সব সময় অযু সহকারে থাকার ক্ষমতা রাখো, তবে এমনটাই করো। কেননা, মালাকুল মউত যে বান্দার রূহ অযু অবস্থায় বের করেন, তার জন্য শাহাদাতের (মর্যাদা) লিখে দেওয়া হয়।” (শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ২৯ পৃষ্ঠা, হাদীস- ২৭৮৩)
সন্তান জন্মের সময় সহজতার ব্যবস্থাপত্র (মরিয়ম বিবির ফুল)
মরিয়ম বিবির ফুল: কোন বাচ্চা জন্মের সময় ব্যথা শুরু হলে কোন খোলা বাসন বা বোতলের পানিতে ঢেলে দেওয়া হয়, তবে যতই ভিজতে থাকবে ও প্রষ্ফুটিত হতে থাকবে আল্লাহ্ তাআলার দয়ায় মরিয়ম বিবির ফুলের বরকতে বাচ্চার জন্ম খুব সহজ ভাবেই হবে।অপারেশন ছাড়াই জন্ম হয়ে গেলো (মরিয়ম বিবির ফুলের উপকারীতা)
এক শিক্ষক ইসলামী ভাইয়ের বর্ণনা: আমার দ্বিতীয় বাচ্চার জন্মের দিন ছিলো। আমার বাচ্চার মা হাসপাতালের নির্দিষ্ট কক্ষে (লেবার রুমে) ভর্তি ছিলো। কিছু সময় পর আমি এক মাদানী মুন্নার জন্মের সুসংবাদ পেলাম। হাসপাতালের অপেক্ষমান রুমে এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত হলো।
তখন তিনি কথায় কথায় মরিয়ম বিবির ফুলের কথা আলোচনা করলেন, তখন আমি জিজ্ঞাসা করার পর সে বললো: যদি বাচ্চার জন্মের পর ব্যথা শুরু হয়, তবে এই শুষ্ক ফুল কোন খোলা বাসন বা বোতলের পানিতে যদি ঢেলে দেওয়া হয়, তবে যতক্ষণ পর্যন্ত তাজা থাকবে এবং ফুটতে থাকবে।
সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে সহজ পদ্ধতিতে আরবি শিক্ষা | সহজ পদ্ধতিতে শিক্ষক ছাড়া কুরআন শিক্ষা
আর এর উপকারীতা হলো এটাই যে, বাচ্চার জন্মের সময় সহজতা হয়। তারপর কম ও বেশি দুই বছর পর যখন তৃতীয় বাচ্চার জন্মের পর্যায়ে আসলো। তখন মহিলা ডাক্তার আমার বাচ্চার মাকে অপারেশনের মাধ্যমে বাচ্চা জন্মের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকতে বললেন। আমি মরিয়ম বিবির ফুলের কথা স্মরণ করলাম, তখন আমি দেশীয় ঔষধের দোকান থেকে মরিয়ম বিবির ফুল সংগ্রহ করলাম। আর যখন বাচ্চা জন্মের সময় আসলো, তখন আমি সেটা পানির মধ্যে ঢেলে দিলাম। আল্লাহ্ তআলার দয়ায় অপারেশন ছাড়াই মাদানী মুন্নীর জন্ম হয়ে গেলো।
এক বছর পর চতুর্থ বাচ্চার জন্যও ডাক্তার অপারেশনের জন্য নির্দিষ্ট করে দিলেন, কিন্তু আমি অন্যান্য ওযীফার পাশাপাশি (যেটা মাকতাবাতুল মদীনা কর্তৃক প্রকাশিত কিতাব “ঘরোয়া চিকিৎসা” এর মধ্যে রয়েছে) মরিয়ম বিবির ফুল ব্যবহার করি। এভাবে ও অপারেশন ছাড়াই মাদানী মুন্নীর জন্ম হয়ে গেলো। এর কমপক্ষে দুই বছর পর যখন পঞ্চম বাচ্চার জন্মের পর্যায় আসলো, তখন আমি আমার ঘরের পাশ্ববর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। সেখানেও ডাক্তাররা মেডিকেল রিপোর্ট ও তাদের গবেষণার দৃষ্টিতে অপারেশন করতে বলেন।
আমি চেষ্টা করে টাকার ব্যবস্থাও প্রস্তুত রেখেছিলাম এবং ওযীফা আদায়ের পাশাপাশি যখন জন্মের সময় হলো, তখন মরিয়ম বিবির ফুল খোলা বোতলের পানিতে ঢেলে দিলাম, ডাক্তার অপারেশন ছাড়া জন্মানোর জন্য অনেক চেষ্টা করার পর অপারেশনের জন্য টাকা জমা করানোর জন্য বললেন।
এখন অপারেশন ছাড়া উপায় নেই এবং অপারেশনের ব্যবস্থাও শুরু করে দেন। টাকা ব্যাংকে ছিলো, হাসপাতালের পাশে এটিএম বুথ থেকে টাকা বের করলাম এবং কাউন্টারের কাছে জমা করে দিলাম। কিন্তু অপারেশনের পূর্বেই আল্লাহ্ তাআলার দয়ায় নিরাপদে মাদানী মুন্নার জন্মের সংবাদ পেলাম। মরিয়ম বুটির ব্যবহারের জন্য চার ও পাঁচ ইসলামী ভাইকে পরামর্শ দিলাম। তাদের মধ্য থেকে একজনকে ডাক্তার অপারেশনের জন্য বলে রেখেছিলো اَلْحَمْدُ لِلّٰہِ عَزَّوَجَلَّ তার ঘরে অপারেশন ছাড়াই জন্ম হয়ে গেলো।