হাফিযে কুরআনের সুপারিশ-
❏ সাইয়্যিদুনা হযরত ‘আলী মুরতাদ্বা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- আল্লাহর প্রিয় রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
مَنْ قَرَأَ الْقُرْآنَ وَحَفِظَهٌ، أَدْخَلَهُ اللَّهُ الْجَنَّةَ، وَشَفَّعَهُ فِي عَشَرَةٍ مِنْ أَهْلِ بَيْتِه، كُلُّهُمْ قَدِ اسْتوْجَبَ النَّارُ
-“যে ব্যক্তি পবিত্র কুর‘আনের তিলাওয়াত করে এবং মুখস্ত রাখে, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবেন এবং তার পরিবার বর্গ হতে এমন দশজনের পক্ষে তার সুপারিশ গ্রহণ করবেন, যারা জাহান্নামের সম্পূর্ণ উপযুক্ত হয়েছিল।” ৪৭
{৪৭ . ইমাম ইবনে মাজাহ, আস-সুনান, ১/৭৮ পৃ. হা/২১৬, ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ২৪/১১১ পৃ. ক্রমিক. ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত, ২/২৩১ পৃ. হা/২২১২, এ হাদিসটি ‘হাসান’ পর্যায়ের; কিন্তু আলবানী এটিকে অত্যন্ত যঈফ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছেন। আমি অধম এর জবাব আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ তৃতীয় খণ্ডে এ উল্লেখ করেছি।}
‘আক্বিদা
মহান আল্লাহ হাফিযে কুর‘আনকে অনুমতি দেবেন যে, সে ঐসব ব্যক্তিকে বেহেশতে নিয়ে যাওয়ার, যারাই জাহান্নামি হবে। একজন হাফিযে কুর‘আনের যদি এ মর্যাদা, তাহলে সাহিবে কুরআন (কুর‘আন যাঁর উপর অবতারিত) নাবীয়ে দোজাহাঁ আক্বা হযরত মুহাম্মাদ (ﷺ) এর কী মর্যাদা এবং উচ্চতা; তা লিপিবদ্ধ করে ইতি টানার মত না।
❏ ইমামে আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত মাওলানা শাহ আহমদ রেযা খাঁন ফাযিলে বেরলভী (رحمة الله) বলেনঃ
غمزدوں كو رضا مثرده ديبئ كے ہے
بيكسوں كا سهارا همارا نبى (ﷺ)
‘হে রেযা, অভাগা-দুর্ভাগারে দাওতো বলি
নিঃস্ব অভাবীর সহায় মোদের নবী (ﷺ)।’
শবে বরাতের রোযা-
❏ হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
إِذَا كَانَتْ لَيْلَةُ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ، فَقُومُوا لَيْلَهَا وَصُومُوا نَهَارَهَا، فَإِنَّ اللَّهَ يَنْزِلُ فِيهَا لِغُرُوبِ الشَّمْسِ إِلَى سَمَاءِ الدُّنْيَا، فَيَقُولُ: أَلَا مِنْ مُسْتَغْفِرٍ لِي فَأَغْفِرَ لَهُ أَلَا مُسْتَرْزِقٌ فَأَرْزُقَهُ أَلَا مُبْتَلًى فَأُعَافِيَهُ أَلَا كَذَا أَلَا كَذَا، حَتَّى يَطْلُعَ الْفَجْرُ
-‘‘যখন শাবানের ১৫ তারিখ আসবে তখন রাতে তোমরা সালাত আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। আল্লাহর রহমত এ রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বলতে থাকেন কেউ আছ কি? ক্ষমা চাইলে আমি গুনাহ ক্ষমা করে দেব। কেউ রোগাগ্রস্ত আছ কি? (রোগ মুক্তি প্রার্থনা করলে) আমি আরোগ্য দান করবো। কেউ রিযিক চাওয়ার আছ কি? আমি তোমাদেরকে রিযিক (জীবন উপকরণ) দেব। কেউ আছ কি? কেউ আছ কি? এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা আসতে থাকে।’’ ৪৮
{৪৮. সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/৪৪৪ পৃ. হা/১৩৮৮, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৪০৯ পৃ. হা/১৩০৮, ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৭৪ পৃ. হা/১৫৫০, এ হাদিস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ড দেখুন।}
আক্বিদা
এ হাদিস থেকে বুঝতে পারলাম শবে বরাতে রোজা রাখা প্রিয় নবীর আদেশ, আর এটি বর্ণনা করেছেন খুলাফায়ে রাশেদীনের একজন। এ হাদিস থেকে বুঝা গেল ঐ সময়ে আল্লাহর এক বিশেষ রহমতের দৃষ্টি বান্দার উপরে দান করা হয়। ৪৯
{৪৯. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}
শরীয়ত প্রণেতা এবং উম্মতের দরদি-
❏ ইমাম বুখারী, তাবরানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنْ عَلِيٍّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ وُضُوءٍ
-‘‘হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমি যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টের খেয়াল না করতাম, তাহলে আমি তাদের প্রত্যেক ওযূর সাথে মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’’ ৫০
{৫০ . ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ২/৫৭ পৃ. হা/১২৩৮, ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/১০০ পৃ. হা/৩২০, তিনি বলেন- بِإِسْنَاد حسن -‘‘এ সনদটি ‘হাসান’।}
আক্বিদা
এ হাদিস থেকে বুঝা গেল শরিয়তের যে কোন ফরজ, ওয়াজিব, হালাল, হারাম ইত্যাদি বিষয়ের আদেশ দেওয়ার ইখতিয়ার রাসূল (ﷺ)-এর রয়েছে, আর এ কারনেই তিনি উম্মতের জন্য কঠিন হবে বলে প্রত্যেক ওযূর সাথে মিসওয়াককে আবশ্যক করেননি। ৫১
{৫১ . সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}
জানাযার নামাযের পর দোয়া করা-
❏ ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) সংকলন করেন-
عَنِ الْمُسْتَظِلِّ، أَنَّ عَلِيًّا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ: صَلَّى عَلَى جِنَازَةٍ بَعْدَ مَا صُلِّيَ عَلَيْهَا
-‘‘হযরত মুসতাযিল ইবনে হুসাইন (رحمة الله) বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আলী (رضي الله عنه) এক জানাযার নামায আদায় করেন অতঃপর আবার তার জন্যে দোয়া করেন।’’ ৫২
{৫২. ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানিল কোবরা, ৪/৭৪ পৃ. হা/৬৯৯৬।}
আক্বিদা
এ হাদিস থেকে বুঝা গেল খুলাফায়ে রাশেদীনগণ জানাযার পর দোয়া করতেন ও এটাকে উত্তম মনে করতেন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য উপকারি মনে করতেন। ৫৩
{৫৩ . সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}
গায়বে সংবাদের মাধ্যমে মুনাফিক মহিলার পরিচয় প্রদান-
❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-
عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: بَعَثَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَا مَرْثَدٍ الغَنَوِيَّ، وَالزُّبَيْرَ بْنَ العَوَّامِ، وَكُلُّنَا فَارِسٌ، قَالَ: انْطَلِقُوا حَتَّى تَأْتُوا رَوْضَةَ خَاخٍ، فَإِنَّ بِهَا امْرَأَةً مِنَ المُشْرِكِينَ، مَعَهَا كِتَابٌ مِنْ حَاطِبِ بْنِ أَبِي بَلْتَعَةَ إِلَى المُشْرِكِينَ فَأَدْرَكْنَاهَا تَسِيرُ عَلَى بَعِيرٍ لَهَا، حَيْثُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقُلْنَا: الكِتَابُ، فَقَالَتْ: مَا مَعَنَا كِتَابٌ، فَأَنَخْنَاهَا فَالْتَمَسْنَا فَلَمْ نَرَ كِتَابًا، فَقُلْنَا: مَا كَذَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لَتُخْرِجِنَّ الكِتَابَ أَوْ لَنُجَرِّدَنَّكِ، فَلَمَّا رَأَتِ الجِدَّ أَهْوَتِ الى حُجْزَتِهَا، وَهِيَ مُحْتَجِزَةٌ بِكِسَاءٍ، فَأَخْرَجَتْهُ
-“হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাকে ও যুবায়ের ইবনে আওয়াম এবং মিকদাদ (رضي الله عنه) কে কোথাও পাঠয়েছিলেন এবং আমরা সকলেই ছিলাম অশ্বারোহী। তিনি আমাদেরকে বললেন, তোমরা যাও। তোমরা যেতে যেতে ‘রওজায়ে খাখ’ নামক স্থানে পৌঁছে একজন মহিলাকে দেখতে পাবে। তার নিকট (মক্কায়) মুশরিকদের কাছে লিখিত হাতিব ইবন আবূ বালতার একটি পত্র আছে (সে পত্রখানা ছিনিয়ে আনবে)। হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নির্দেশিত স্থানে গিয়ে তাকে ধরে ফেললাম। তখন সে একটি উটের উপর আরোহন করে পথ অতিক্রম করছিল। আমরা বললাম, পত্রখানা আমাদের নিকট অর্পন কর। সে বলল, আমার কাছে কোন পত্র নেই। আমরা তখন তার উটটিকে বসিয়ে তার তল্লাশী নিলাম। কিন্তু পত্রখানা উদ্ধার করতে পারলাম না। আমরা বললাম, রাসূল (ﷺ) মিথ্যা বলেননি। তোমাকে পত্রখানা বের করতেই হবে। নতুবা আমরা তোমাকে উলঙ্গ করে ছাড়বো। যখন আমাদের কঠোর মনোভাব লক্ষ্য করলো তখন স্ত্রীলোকটি তার কোমরের পরিধেয় বস্ত্রের গিঁটে কাপড়ের পুঁটলির মধ্য থেকে পত্রখানা বের করে দিল।” ৫৪
{৫৪. সহীহ বুখারী, ৫/৭৭ পৃ. হা/৩৯৮৩, পরিচ্ছেদ: بَابُ فَضْلِ مَنْ شَهِدَ بَدْرًا এবং হা/৬২৫৯, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/১৯৯২ পৃ. হা/২৪৯৪, ইমাম বায়হাকী, মা‘রিফাতুল সুনানি ওয়াল আছার, ১৩/৩৪৭ পৃ. হা/১৮৪৪৭ এবং আস-সুনানুল কোবরা, ৯/২৪৬ পৃ. হা/১৮৪৩৪, ইমাম তাহাভী, শরহে মুশকিলুল আছার, হা/৪৪৩৭, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২/৩৭ পৃ. হা/৬০০, ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, হা/১১৫২১, ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/২৬৪ পৃ. হা/৩৩০৫, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, হা/৩৯৪, মুসনাদে বায্যার, হা/৫৩০, সুনানি আবি দাউদ, ৩/৪৭ পৃ. হা/২৬৫০}
আক্বিদা
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, রাসূল (ﷺ) মহিলাটিকে কোথায় পাওয়া যাবে, কিসের উপর পাওয়া যাবে, তার কাছে পত্র আছে, সেটা কার লিখিত পত্র এবং এটা কাদের উদ্দেশ্যে লিখিত তা সব বিস্তারিত বলে দিলেন। মহিলাটি অস্বীকার করার পর সাহাবায়ে কিরামের মজবুত ঈমানী কন্ঠে বললেন-
فَقُلْنَا: مَا كَذَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-‘‘রাসূল (ﷺ) মিথ্যা বলেননি।’’ পঞ্চ ইন্দিয়ের বাহিরে থাকা স্বত্তে¡ও সমস্ত সাহাবায়ে কিরাম বলেননি যে, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটিতো ইলমে গায়ব আপনি বলছেন কিভাবে! এটাই ছিল সাহাবায়ে কিরামের আক্বিদা। ৫৫
{৫৫ . সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}