এক.
যাবে। একশ বার, হাজার বার যাবে। কারণ সমস্ত সাহাবী সিদ্দীক হলেও তিনিই সব সাহাবীর শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ সিদ্দীকশ্রেষ্ঠ(সিদ্দীকে আকবার)।
ক. হযরত খাজা ফারেসা নক্সবন্দী রহ.(ও. ৮২৫ হি.) বলেন,-“বরং তিনি সমস্ত সিদ্দীকদের মধ্যে সর্বাধিক পূর্ণ।”(ইকবাল আহমদ ফারুকী কৃত ‘রসায়েলে নক্সবন্দীয়া’; রিসালায়ে কুদসিয়্যা, পৃ.-৩০)
খ. মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহ. এর খলীফা খাজা বদরুদ্দীন সিরহিন্দী রহ. বলেন,-“হযরত আবু বাকার সিদ্দীক রা. নবীদের পর সমস্ত সিদ্দীকদের মধ্যে সবচে কামিল এবং সিদ্দীকে আকবার ছিলেন।”(বদরুদ্দীন সিরহিন্দী কৃত ‘হাযরাতুল কুদস’, খ.-১, পৃ.-৩৮)
গ. সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হুসাইনী চিশতী, যিনি বান্দা নাওয়াজ গেছুদারাজ রহ.(ও. ৮০৩হি.) নামে পরিচিত। তিনি বলেন,-“সঠিক মত এটাই যে, আমীরুল মু’মিনীন হযরত আবু বাকার সিদ্দিক রা. সমস্ত সাহাবীদের চাইতে সর্বাধিক মর্যাদাবান।”(বান্দা নাওয়াজ গেছুদারাজ রহ. কৃত ‘শারহু জাওয়ামিউল কালিম’, পৃ.-১৯)
ঘ. ইমাম আযমের অভিমত দেখুন-
“আমরা মানি, নিশ্চয় আমাদের নবী মুহাম্মাদ (দ.) এর পরে এই উম্মতের সবচে মর্যাদাবান হচ্ছেন হযরত আবু বাকার সিদ্দীক রা.। তারপর ওমর রা., তারপর ওসমান রা. এবং তারপর হযরত আলী রা.।”(আবু মুঅাজ উয়াইনাহ কৃত ‘আল ওয়াছিয়্যাতুল ইমাম আবি হানীফাহ’, পৃ.-৪৩)
অতএব
শ্রেষ্ঠ সাহাবী বা শ্রেষ্ঠ সিদ্দীককে সিদ্দীকে আকবার বলা যাবে না তো, কাকে যাবে!
দুই.
সিদ্দীক হলো আউলিয়ায়ে কেরামদের স্তর। আর তিনি তো এ স্তরের অলিকুলেরও শ্রেষ্ঠ। যেমনটা বলছেন ত্বরীকতের বড় বড় মনীষীগণ-
ক. হযরত মাখদূম শিহাবুদ্দীন রহ. বলেছেন, “আমীরুল মু’মিনীন হযরত আবু বাকার রা. নবীদের পর সমস্ত অলিদের চাইতে শ্রেষ্ঠ।”(হযরত শিহাবুদ্দীন রহ. কৃত ‘তাইসীরুল আহকাম’, সাবআ সানাবিলের সূত্রে, পৃ.-৬২)
খ. হযরত খাজা বাহাউদ্দীন নক্সবন্দ রহ. বলেন, “আকাবেরে আউলিয়াদের ইজমা যে, মা’রিফাত ও বেলায়ােতের দিক দিয়ে আবু বাকার সিদ্দীক রা. ‘র পর্যায়ে কেউ(কোনো উম্মত) পৌঁছেনি।”(‘আফদ্বালিয়্যাতে সিদ্দীকে আকবার’ গ্রন্থে ‘আর রাঈহাতুল আনবরিয়্যাহ’ এর পৃ.-২৫ সূত্রে)
গ. বদরুদ্দীন সিরহিন্দী রহ. বলেন,-“হযরত আবু বাকার সিদ্দীক রা. নবীদের পর সমস্ত সিদ্দীকদের মধ্যে সবচে কামিল এবং সিদ্দীকে আকবার ছিলেন।”(বদরুদ্দীন সিরহিন্দী কৃত ‘হাযরাতুল কুদস’, খ.-১, পৃ.-৩৮)
সিদ্দীক স্তরের অলীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ যিনি, তাঁকে সিদ্দীকে আকবার বলা যাবে না তো কাকে যাবে!
তিন.
তিনি ছিলেন, প্রিয়নবীর প্রতি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের মধ্যে সর্বপ্রথম তাসদীককারী। এছাড়া আর সবার চাইতে তাঁর তাসদীকই ছিল শ্রেষ্ঠ। যেমন-
ক. একমাত্র তিনিই কোনো রকম দ্বিধা ব্যতীত তাসদীক তথা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।(সীরাতে ইবন হিশাম-১/২৩২, উয়ূনুল আছার-১/৯৫)
খ. এছাড়া পঞ্চম শতকের সুবিখ্যাত মুহাদ্দিস আবু নুয়াইম ইস্ফাহানী র. বলেন, “আবু বাকার সিদ্দীক, তাসদীকে অগ্রবর্তী…”
(আবু নুয়াইম র. কৃত ‘হিলইয়াতুল আউলিয়া ওয়া তবক্বাতুল আছফিয়া’,১/২৮)
শ্রেষ্ঠতম তাসদীককারী(সিদ্দীক) হওয়ার পরও তাঁকে সিদ্দীকে আকবার বলা যাবে না তো কাকে যাবে!
চার.
প্রিয়নবী জাস্ট একজনকেই সিদ্দীক লক্বব দিয়েছেন। আর কাউকেই সরাসরি এই উপাধি দেননি। তো স্বয়ং প্রিয়নবীই যাকে সিদ্দীক বললেন(সূত্র: সহীহ বুখারী:৩৬৭৫) , তাঁকে ‘সবচে বড় সিদ্দীক’ বা ‘সিদ্দীকে আকবার’ বলা যাবে না তো কাকে যাবে!
পাঁচ.
আর রব তায়ালা তো বলেছেন,-“আমার প্রতি মনোনিবেশকারীদের ত্বরীকা অনুসরণ কর”-(সূরা লুক্বমান:১৫)।
তাদের অর্থাৎ ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের ত্বরীকা হচ্ছে, হযরত আবু বাকার সিদ্দীক রা. কে সিদ্দীকে আকবার মানা। যেমন-
ক. ইমাম যাহাবী রহ. বলেন,
“উম্মতের মধ্যে সর্বাধিক মর্যাদাবান, রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খলীফা ও গুহায় তাঁর সঙ্গী সিদ্দীকুহুল আকবার…”
(ইমাম যাহাবী কৃত ‘তাযকিরাতুল হুফ্ফাজ’, ১/২)
খ. ইমাম শিহাবুদ্দীন খফফাজি রহ.(ও. ১০৬৯ হি.) বলেন,-
‘আর আবু বাকার রা. ‘র বিশেষত্ব এজন্যেই যে, তিনি “সিদ্দীকে আকবার”। যিনি প্রিয়নবীকে সত্যায়ন করার দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন।'(ইমাম খফ্ফাজি র. কৃত ‘নসীমুর রিয়াদ্ব’, খ.-১, পৃ.-১৪২)
গ. কালজয়ী ফতোয়ার কিতাব “বাহারে শরীয়ত” প্রণেতা বিখ্যাত মুফতী আমজাদ আলী রহ. বলেন,-
‘নবী-রসূলগনের পর আল্লাহ তায়ালার সমস্ত সৃষ্টি, জ্বীন-ইনসান-ফেরেশতা সবার চাইতে মর্যাদাবান “সিদ্দীকে আকবার”।’ তারপর ফারূকে আ’জম, তারপর ওসমান গণী তারপর মাওলা আলী রা.।’ (মুফতী আমজাদ আলী র. কৃত ‘বাহারে শরীয়ত’,১/২৪১)
ঘ. অবশেষে দিচ্ছি এমন একজনের উক্তি, এ ব্যাপারে যিনি একজনের কথাই আমাদের যথেষ্ট। চতুর্দশ শতাব্দির মুজাদ্দিদ, ইমামে আহলে সুন্নাহ(ইমাম যে পথে, আমরা মুক্তাদিও সে পথে), ইমামে ইশক ও মহব্বত, আমার প্রাণপ্রিয় আ’লা হযরত, আব্দুল মুস্তফা আহমাদ রেযা খান ফাযেলে বেরলভী রহ.। তিনি বলেছেন,-
‘(নবীদের পর) সবার চাইতে মর্যাদাবান “সিদ্দীকে আকবার।” তারপর ফারুকে আ’যম, তারপর ওসমান গনী এবং তারপর মাওলা আলী সল্লাল্লাহু তায়ালা ‘আলা সাইয়্যিদিহিম ওয়া মাওলাহুম ওয়া আলিহি ওয়া আলাইহিম ওয়া বারাকা ওয়া সাল্লাম।’
(ইমাম আ’লা হযরত র. কৃত ‘ফতোয়ায়ে রযভিয়্যাহ’, ২৮/৪৭৮)
একই পৃষ্ঠায় কয়েক লাইন পরে ইমাম আ’লা হযরত অারো একবার হযরত আবু বাকার সিদ্দীক রা. কে “সিদ্দীকে আকবার” বলেছেন।
ইমাম যাহাবী, ইমাম খফ্ফাজি, ইমাম আ’লা হযরত ও আমজাদ আলী রযভী রহ. এর মত মনীষীগণ যাঁকে সিদ্দীকে আকবার বললেন, তাঁকে সিদ্দীকে আকবার বলা যাবে না তো কাকে যাবে!
~ফা লা ক্ব