ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী
……………………………..
মুসলমানের উপর যেভাবে لا اله الا الله (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ) স্বীকার করা, আল্লাহ সুবহানাহু ওতায়ালাকে احد صمد لا شريك له (আহাদ-সামাদ-লা শরীকালাহু) জানা সর্বপ্রথম ফরয এবং ঈমানের উৎস, তেমনি محمد رسول الله (মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ) সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে খাতামুন্নবীয়্যিন মানা, তার যুগে বা তার পরে কোন নতুন নবী প্রেরণকে নিশ্চিত-অকাট্যভাবে অসম্ভব এবং বাতিল-ভ্রান্ত জানা ফরযে আজল এবং জুযয়ে ইয়াকীন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
﴿مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا ﴾
(মুহাম্মদ দ. তোমাদের পুরুষদের মধ্যে কারো পিতা নন, তবে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং সর্বশেষ নবী) [আল কুরআন, আহযাব ৩৩: ৪০]
এ আয়াতে সুস্পষ্ট যে, নিঃসন্দেহে আমাদের প্রিয় নবী দ. সর্বশেষ নবী।নবীগণের শেষ। তাঁর পরে কোন নবী আসবে না। সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল হিসেবে নবীজির আগমনের পর নবুয়ত ও রেসালতের এ ধারা বন্ধ হয়ে গেছে। এটা নসসে কতয়ী দ্বারা প্রমাণিত। হাদিসে মুতাওয়াতির দ্বারা প্রমাণিত। সাহাবোয়ে কেরাম থেকে এ পর্যন্ত যত মুহাদ্দিস, মুফাস্সির, মুজতাহিদ ফকিহ ও ইমাম সকল ইমাম ও মুসলিম উম্মাহর ইজমা বা ঐক্যমত।
এর অস্বীকারকারী বরং এতে সন্দেহ পোষণকারী, সামান্য সন্দেহ পোষণ দ্বারা সন্দেহের বিরুদ্ধচারী অকাট্য নিশ্চিতরূপে সকলের ঐক্যমত্যে কাফের, মালউন এবং চিরস্থায়ী জাহান্নামী। সে কেবল কাফেরই নয়; বরং তার এ মালউন আকীদা সম্পর্কে অবগত হয়ে তাকে যে কাফের স্বীকার করবে না সেও কাফের। যে তার কাফের হওয়া সম্পর্কে সন্দেহ ও সংশয়কে প্রশ্রয় দেবে সেও কাফির বায়নাল কাফির জালিউল কুফরান।
আসলে এ আয়াতে এমন কোন বিষয় নেই যাতে অস্পষ্ট এবং সেটাকে স্পষ্ট করতে হবে। কিন্তু এমন সুসম্পষ্ট অকাট্য বিষয়কেও সন্দেহজনক বানানো হচ্ছে। আজ কোরআনের বাণীতে উল্লেখিত ‘খাতামুন নবীয়্যিন’ শব্দটিকে অপ্রয়োজনীয় আলোচনার খুঁটিতে ফাসিতে ঝুলানো হচ্ছে। এ কথা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, নবী তো খাতমুল নাবীয়্যিন ঠিকই কিন্তু খাতেম অর্থ সে সেটা নয় যা আজ পর্যন্ত উম্মাহ বুঝে এসেছেন। উম্মতের সর্বসম্মত রায় হলো, খাতামুন্নবীয়্যিন অর্থ সর্বশেষ নবী। তাঁর যুগে বা তাঁর পরে কোন নবী আসবেনা। তাঁর মাধ্যমে নবুয়তের ধারাবাহিতা শেষ হয়েছে গেছে। কিন্তু উম্মতের এ আকিদা নাকি ভুল। বরং এর সঠিক অর্থ নাকি সেটাই যার ভিত্তিতে যদি নবীর যুগেও কোনো নবী আগমন করে তাতেও সমস্যা নেই (আসতে পারবে) তবুও হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খাতামিয়ত বাকী থাকবে। এমন কি তাঁর যুগে আরেকজন নবী আসলেও নবীর খাতামিয়াতে কোন ব্যথ্যয় ঘটবে না। এ নতুন তত্ত্ব হাজির করেছেন দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মৌলভী কামেস নানুতবী।
দেওবন্দী-ওহাবীদের নামসর্বস্ব বুযুর্গ, মৌলভী কাসেম নানুতভী ‘খতমে নুবূয়ত কে অস্বীকার করে লিখেছেন-
بلكہ با لفرض آپ کے زمانہ میں بھی کہيں اور نبی ہو جب بھی آپ کا خاتم ہونا بدستور باقی رہتا ہے،
বরং যদি ধরে নেয়া হয় রাসূল সাঃ এর জমানায়ও অন্য কোন নবী পয়দা হন, তাহলেও রাসূল সাঃ এর সর্বশেষ হওয়া বাকি থাকে। [তাহযীরুন নাস, পৃ. 23, দেওবন্দে মুদ্রিত]
با لفرض بعد زمانۂ نبوی بھی کوئ نبی پيدا ہو تو بھی خاتمیت محمدی میں کچہ فرق نہ آۓگا
“বরং যদি একথা ধরে নেওয়া হয় যে, নবী পাক (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম)-এর যুগের পর কোন নবী পয়দা হন তবুও হযরত মুহাম্মদ মোস্তফার ‘শেষ নবী’ হবার মধ্যে কোন অসুবিধা হবে না। [তাহযীরুন নাস, পৃ. 23, দেওবন্দে মুদ্রিত]
দেখলেন তো কী সুক্ষ কৌশলে নানূতভী সাহেব খতমে নবুয়তকে অস্বীকার করলো এবং মীর্যা কাদিয়ানীকে নুবূয়তের দাবী করার প্রতি উৎসাহিত করলো। এ কারণেই মীর্যায়ীরা মৌলভী কাসেম নানুতভীকে সুন্দর সুন্দর শব্দে স্মরণ করে।
বস্তুতঃ যদি, অসম্ভব ধারণায়, নবী পাকের যুগের পর কোন নবী পয়দা হয়, তবুও হযরত মুহাম্মদ মোস্তফার শেষ নবী হবার মধ্যে অসুবিধা সৃষ্টি অবশ্যই হবে। যে ব্যক্তি এ অসুবিধার কথা অস্বীকার করে, সে না আল্লাহ্ তা’আলার তাওহীদ (একত্ব)কে বুঝেছে, না ‘খতমে নুবুয়ত’ (নবী করীম শেষ নবী হওয়া)’র উপর ঈমান এনেছে।বরং সে প্রকাশ্য কাফের ও মুরতাদ।
এ কারণে কবি বলেছেন:
نجد یا سخت ہی گندی ہے طبیعت تیری* کفر کیا شرک کا فضلہ ہے نجاست تیری
অর্থাৎ : হে নজদী! অতিমাত্রায় অপবিত্র তোর স্বভাব। কুফর কি জিনষ? বরং শির্কের অবশিষ্টাংশ হচ্ছে তোর আবর্জনা।
(চলবে)