অবৈধ সম্পদের যাকাত ও নফল দান খয়রাতের উপকার

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

অবৈধ সম্পদের যাকাত আছে কি? এর হুকুম কি?

অবৈধ সম্পদের যাকাত :

সম্পদ ব্যয়ের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেন- يٰاَ يُّهاَ الَّذِ يْنَ اٰمَنُوْا اَنْفِقُوْا مِنْ طَيِّبٰتِ مَاكَسَبْتُمْ وَمِمَّااَخْرَجْنَا لَكُمْ مِنَ الْاَرْضِ – وَلَاَ تَيَمَّمُوا الْخَبِيْثَ مِنْهُ تُنْفِقُوْنَ

[হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের পবিত্র উপার্জন থেকে এবং আমি তোমাদের জন্য ভূমি থেকে যা বের করেছি তা থেকে তোমরা খরচ কর। আর তোমরা নিকৃষ্ট বস্তু হতে দান করতে ইচ্ছা করিও না। (সূরা বাকারা, আয়াত নং২৬৭)]

হাদীস শরীফে আছে- عِنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ لاَ يَقْبَلُ اللّٰهُ صَدَ قَةً مِنْ غُلُوْلٍ وَلاَ صَلٰوةً بِغَيْرِ طُهُوْرٍ

[নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত। তিনি ইরশাদ করেছেন- অবৈধ পন্থায় অর্জিত দান আল্লাহ গ্রহণ করেন না এবং পবিত্রতা ব্যতীত নামাজ কবুল করেন না। (সুনানে আবু দাউদ, পৃষ্ঠা নং-৯, হাদীস নং-৫৯)]

দোররে মোখতার কিতাবে আছে- اِنَّ التَّصَدُّقَ بِالْمُالِ الْحَرَامِ ثُمَّ رٍجَاءَ الثَّوَا بِ صِنْهُ حَرَامٌ وَكُفْرٌ

[নিশ্চয়ই হারাম সম্পদের দ্বারা দান করা অতঃপর তা হতে ছাওয়াবের আশা করা হারাম ও কুফরী।]

হযরত মহিউদ্দিন ইবনে আরাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন- قَالَ اِبْنُ الْعَرَبِيِّ فَالصَّدَ قَةُ مِنْ مَالٍ حَرَامٍ فِيْ عَدَمِ الْقَبُوْلِ وَاِسْتِحْقَاقِ الثَّوَابِ كَالصَّلٰوةِ بِعُيْرِ طُهُوْرٍ (حاشية ابي داود صفحة ۵۹

[ইবনে আরাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন- হারাম সম্পদের দান কবুল না হওয়া ও ছাওয়াব না পাওয়াটা পবিত্রতা বিহীন নামাজের ন্যায়।]

তাই অবৈধ পন্থায় অর্জিত সম্পদ দানের উপযোগী নয়। অতএব, ব্যাংকে জমা বা সিকিউরিটির (ঋণপত্র বা ডিবেঞ্চার, বন্ড, সঞ্চয়পত্র ইত্যাদি) উপর অর্জিত সুদ ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ উপার্জন নয় বিধায় যাকাতযোগ্য সম্পদের সঙ্গে যোগ করা যাবে না। অর্জিত সুদ বা অবৈধ সম্পদ ছাওয়াবের নিয়্যত ব্যতিত গরিব মিসকিনকে দিয়ে দিতে হবে। তবে মূল জমাকৃত অর্থের বা সিকিউরিটির ক্রয় মূল্যের উপর যাকাত প্রদান করতে হবে। ব্যাংক জমার উপর বৈধ মুনাফা প্রদান করা হলে ঐ মুনাফা মূল জমার সঙ্গে যুক্ত করে যাকাতযোগ্য অন্যান্য সম্পত্তির সাথে যোগ করতে হবে।

ফরজ যাকাত ব্যতিত নফল দান খয়রাত করার উপকার কি?

সম্পদ উপার্জনের লক্ষ্য দুনিয়ার ও আখিরাতের শান্তি লাভ করা। উপার্জনকারী নিজের প্রয়োজন পূরণের পর তার নিকট যে সম্পদ অবশিষ্ট থাকে, তা সমাজের অসহায় মানুষের কল্যাণে ব্যয় করার বিধান রয়েছে। তাই যাকাত ছাড়াও সম্পদ হতে স্বীয় আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, এতিম, মিসকিন ও সাহায্য প্রার্থীদের এবং আল্লাহর রাস্তায় দান করতে হয়। আল্লাহ তায়ালা দানকে বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধ করেন।

ফরজ যাকাতের পাশাপাশি নফল দান খয়রাতের প্রতি উৎসাহ প্রদান করতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন- مَثَلُ الَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَہُمْ فِیْ سَبِیْلِ اللہِ کَمَثَلِ حَبَّۃٍ اَنْبَتَتْ سُبْعَ سَنَابِلَ فِیۡ كُلِّ سُنْبُلَۃٍ مِّائَۃَ حَبَّۃٍ ؕ وَاللہُ یُضٰعِفُ لِمَنْ یَّشَآءُ ؕ وَاللہُ وَاسِعٌ عَلِیْمٌ

[যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে খরচ করে, তাদের খরচের দৃষ্টান্ত এই, যেমন একটি বীজ বপন করা হল এবং তা হতে সাতটি ছড়া বের হল আর প্রত্যেকটি ছড়ায় একশটি দানা হয়েছে। আল্লাহ যাকে চান তাকে আরো বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা বাক্বারা, আয়াত-২৬১)]

কুরআন পাকে আরো ইরশাদ হচ্ছে- وَ ابْتَغِ فِیْمَاۤ اٰتٰکَ اللہُ الدَّارَ الْاٰخِرَۃَ وَ لَا تَنْسَ نَصِیْبَکَ مِنَ الدُّنْیَا وَ اَحْسِنْ کَمَاۤ اَحْسَنَ اللہُ اِلَیْکَ

[আল্লাহ তোমাকে যে ধন-সম্পদ দিয়েছেন, তার মাধ্যমে তুমি পরকালের ঘর তৈরীতে সচেষ্ট থাক। পৃথিবীতে তোমার অংশগ্রহণ করতে ভুল কর না। তুমি অনুগ্রহ কর, যেমনি আল্লাহ তোমাকে অনুগ্রহ করেছেন। (সূরা কাসাস, আয়াত-৭৭)]

তাই ফরজ যাকাত আদায় করার পর একজন ব্যক্তি তার সাধ্য মত নফল দান সদকা করলে এরও অনেক ছাওয়াব রয়েছে। এখানে একটি কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, ফরজ যাকাত অনাদায় রাখিয়া নফল দান সদকা করলে তা কবুল হয় না।

ইসলামী গবেষণা বিভাগ

বাগদাদী ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা- ৩৫০০, বাংলাদেশ।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a reply

  • Default Comments (0)
  • Facebook Comments