কাউছারের মালিক নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। হাউজের ব্যাপারে কিছুটা মতপার্থক্য পরিলতি হয়।
অধিকাংশ উলামায়ে কেরামদের মতে হাউজও নবীজির জন্য খাস বা নির্ধারিত। তবে ইমাম তিরমিজি কর্তৃক বর্ণিত একটি হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে, অন্যান্য নবীদেরও হাউজ থাকবে।
এ ব্যাপারে ইমাম আসকালানী রহমতুল্লাহ আলাইহি ‘ফতহুল বারী’ গ্রন্থে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। নিম্নে সেখান থেকে কিছুটা তুলে ধরা হল। তিনি বলেন-
وقد اشتهر اختصاص نبينا صلى الله عليه وسلم بالحوض- لكن اخرج الترمذى من حديث سمرة رفعه (ان لكل نبى حوضا)
অর্থ: হাউজ শুধুমাত্র আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য খাস বা নির্ধারিত। ইহাই মশহুর বা প্রসিদ্ধ। তবে ইমাম তিরমিজি হযরত ছামুরা থেকে একটি মরফু হাদিস বর্ণনা করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে (নিশ্চয় সমস্ত নবীদের জন্য হাউজ থাকবে।) তবে এ হাদিসটি মরফু নাকি মুরসাল এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে। বিশুদ্ধ মতে ইহা মুরসাল হাদিস।
আসকালানী বলেন- আমার মতে ইহা মুরসাল হাদিস। এ হাদিসটি ইবনে আবিদ দুনিয়া সহিহ সনদে হযরত হাসান থেকে বর্ণনা করেছেন এভাবে-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان لكل نبى حوضا- وهو قائم على حوضه بيده عصا يدعو من عرف من امته الاانهم يتباهون ايهم اكثر تبعا وانى لارجو ان اكون اكثر هم تبعا-
অর্থ: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন সকল নবীদের হাউজ রয়েছে। তারা প্রত্যেকেই হাতে একটি লাঠি নিয়ে হাউজের পাশে দণ্ডায়মান থাকবেন। উম্মতের মধ্যে যাদেরকে চিনতে পারবেন তাদেরকে তারা আহব্বান করবেন। তারা প্রত্যেকেই গর্ব করতে থাকবেন যে, কার উম্মতের সংখ্যা বেশি। আমি আশা করি আমার উম্মতের সংখ্যা হবে সর্বাধিক।
এ হাদিসটি ইমাম তাবরানী অন্য সূত্রে হযরত ছামুরা থেকে মরফুভাবে বর্ণনা করেছেন। তবে সে সনদে দুর্বলতা রয়েছে।
এমনিভাবে ইবনে আবিদ দুনিয়া হযরত আবু সাঈদ থেকে আরেকটি মরফু হাদিস বর্ণনা করেছেন-
وكل نبى يدعو امته ولكل نبى حوضا فمنهم من يأتيه الفئام ومنهم من يأتيه العصبة ومنهم من يأتيه الواحد ومنهم من يأتيه الاثنان- ومنهم من لا يأتيه احد وانى لاكثر الانبياء تبعا يوم القيامة
অর্থ: সকল নবীগণ তাদের উম্মতদেরকে আহ্বান করবেন এবং তাদের প্রত্যেকের একটি হাউজ থাকবে। তাদের মধ্যে কেউ বড় একটি দল নিয়ে আসবেন। আবার কেউ আসবেন ছোট একটি দল নিয়ে। কারো সাথে থাকবে দু’জন লোক, কারো সাথে একজন, আবার কারো সাথে কেউই থাকবে না। নিশ্চয় কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের সংখ্যা হবে সর্বাধিক। (এ হাদিসের সনদের মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে)
অতঃপর ইমাম আসকালানী বলেন-
وان ثبت فالمختص بنبينا صلى الله عليه وسلم الكوثر الذى يصب من مائه فى حوضه فانه لم ينقل نظيره لغيره-
অর্থ: অন্যান্য নবীদের হাউজ থাকাটা যদি প্রমাণিত হয়েই যায় তথাপি একথা সুস্পষ্ট যে, কাউছার শুধুমাত্র আমাদের নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত। সে কাউছার থেকেই হাউজসমূহে পানি সরবরাহ করা হবে।
অতঃপর অন্য কোন নবীর কাউছার থাকার ব্যাপারে কোন নযির বা দলিল নেই।
ইমাম কুরতুবি ‘আল মুফহিম’ গ্রন্থে কাজি আয়াজের অনুকরণে বলেছেন-
مما يجب على كل مكلف ان يعلمه ويصدق به ان الله تعالى قدخص نبيه محمدا صلى الله عليه وسلم بالحوض المصرح باسمه وصفته وشرابه فى الاحاديث الصحيحة الشهيرة التى يحصل بمجموعها العلم القطعى-
অর্থ: প্রত্যেক মুমিন ব্যক্তির উপর ওয়াজিব যে, তারা যেন এ ব্যাপারে জ্ঞান রাখে ও বিশ্বাস স্থাপন করে যে, আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবীর জন্য হাউজকে নির্দিষ্ট করেছেন। যা সহিহ হাদিস দ্বারা নাম, গুণাবলী ও পানীয় ইত্যাদি স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। যার মাধ্যমে অকাট্য জ্ঞান অর্জিত হয়।