নুরনবী (ﷺ) এর ছায়াবিহীন কায়া
সংকলক : মাসুম বিল্লাহ সানি
আজকাল ওহাবি ও আহলে হাদিসের দল রাসুলাল্লাহ (ﷺ) এর ছায়া ছিল বলে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এখানে নির্ভরযোগ্য হাদিস ও লক্ষ লক্ষ হাদিসের হাফিজ যারা ছিলেন তাদের আকিদা থেকে প্রমান করব রাসুল (ﷺ) এর ছায়া ছিল না।
হাদিস ১ :
🕋 ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমাম (رحمة الله) : হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্নিত হাদিসের ১ম সনদঃ
ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর দাদা ও উস্তাদ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমাম (رحمة الله) তিনি ➡ ইবনে যুরাইয (رحمة الله) হতে তিনি ➡ হযরত নাফে (رحمة الله) হতে তিনি
➡ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন,
“রাসুলাল্লাহ (ﷺ) এর ছায়া ছিল না। তাঁর ছায়া সুর্যের আলোতে পড়তো না এবং তাঁর নুরের আলো সুর্যের আলোর উপর প্রাধান্য বিস্তাঁর করত এবং তিনি (রাতে) বাতির আলোর সামনে দাঁড়ালেও বাতির আলোর উপর তাঁর নুরের আলো প্রাধান্য বিস্তাঁর করত।
(ইমাম আব্দুর রাজ্জাক : জদউল মুফকুদ মিন মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক ১/৫৬ পৃ : হাদিস ২৫)
সনদ পর্যালোচনা :
১ম রাবী : ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ইবনে হুমাম (رحمة الله) :
১. আহমাদ ইবন সালীহ (رحمة الله) বলেন, “আমি একবার আহমাদ বিন হাম্বল (رحمة الله) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি হাদীস শাস্ত্রে আব্দুর রাজ্জাকের থেকে আর কাউকে পেয়েছেন? আহমাদ বিন হাম্বল (رحمة الله) বলেন, না”। [আসকলানী, তাহজিবুত তাহজিব ২/৩৩১]
২. আব্দুর রাজ্জাক (رحمة الله) হলে মুসলিম উম্মাহের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দীস ইমাম বুখারী (رحمة الله) এর দাদা উস্তাদ।
২য় রাবী : হযরত ইবনে যুরাইয (رحمة الله)
তাঁর সম্পর্কে রিজালশাস্ত্রের ইমামগন বলেন,
তিনি সিকাহ (বিশ্বস্ত/নির্ভরযোগ্য) ছিলেন। তিনি একজন মর্যাদাবান বর্ননাকারী ছিলেন। তবে তিনি তাদলিস করতেন ও মুরসাল করতেন।
● ইবনে হাজর আসকালানী : তাকরিবু-তাহযীব : ১/১৪২ রাবী নং ৪১৯৩
● ইবনে হাজর আসকালানী : তাহযীবুত-তাহযীব : ২/৬১৬
● ইবনে মিযযি : তাহযীবুত – কামাল : ১৮/৩৩৮
৩য় রাবী : হযরত নাফে (رحمة الله) [ওফাত ১১৭ হি]
“তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে উমরের আজাদকৃত গোলাম।
তিনি একজন উচ্চস্তরের ফকিহ ছিলেন, সিকাহ তথা বিশ্বাস্ত এবং দৃঢ় বা শক্তিশালী রাবী ছিলেন।”
● ইবনে হাজর আসকালানী : তাকরিবু-তাহযীব : ২/১৮৮ রাবী নং ৭০৮৬
● ইবনে হাজর আসকালানী : তাহযীবুত-তাহযীব : ২৯/২৯ পৃ
● ইবনে মিযযি : তাহযীবুত – কামাল : ৪/২১০
৪র্থ রাবী : হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)
তিনি একজন প্রসিদ্ধ সাহাবী কারো জানার বাকি রাখে না।
হাদিস ২ :
🕋 ইমাম আহমদ ইবনে আলী মাকরিজী (رحمة الله) : হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্নিত হাদিসের ২য় সনদ :
উপরোক্ত হাদিসের মতন ও সনদের সমর্থনে অন্য একটি হাদিস রয়েছে : এ হাদিসটি ইমাম তকিউদ্দিন আহমদ ইবনে আলী মাকরীযী (رحمة الله) [ওফাত ৮৪৫ হি] তিনি উক্ত সনদটি বর্ননা করেন এভাবে,
আহমদ ইবনে আব্দুল্লাহ গাদ্দাফী (رحمة الله) বলেন আমাদেরকে➡(তাবেয়ী) আমর ইবনে আবি আমর (رحمة الله) [ওফাত ১৫০ হি] তিনি বলেন আমাকে➡মুহাম্মদ ইবনুস সায়িব (رحمة الله) [ওফাত ১৪৬ হি] তিনি বলেন আমাকে ➡(তাবেয়ী) আবু সালেহ বাযাম (رحمة الله) তিনি বলেন➡ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি (رضي الله عنه) বলেন,
“রাসুলাল্লাহ (ﷺ) এর কোন ছায়া ছিল না……..।”
● আল্লামা ইমাম মাকরিযী : ইমতাউল আসমা’আ বিমা লিন্নাবিয়্যি মিনাল আহওয়াল : ২/১৭০ পৃ : দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, লেবানন।
হাদিস ৩ :
● যুগবরন্যে ইমাম হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله) ও
● ইমাম হাফেজ ইবনে জাওজী (رحمة الله) হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে সহিহ সনদে বর্ননা করেন,
“রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর ছায়া ছিল না। তিনি যখনই সুর্যের মুখোমুখি দন্ডায়মান হতেন তাঁর নুর সুর্যের আলোর উপর প্রবল থাকত এবং তিনি (রাতে) প্রদীপের আলোতে দন্ডায়মান হলে তাঁর নুরের দ্যুতি ওটার দীপ্তিকে ম্লান করে দিত।”
● মোল্লা আলী কারী : জামেউল ওয়াসায়িল : ১/২১৭ পৃ :
● ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ৪/২২০
● ইমাম মুনাদী : শরহে শামায়েল : ১/৪৭
● আল্লামা শফী উকাড়বী : জিকরে জামিল : ৩২৪ পৃ:
● ইমাম ইবনে জাওজী : কিতাবুল ওয়াফা
হাদিস ৪ :
● ইমাম আন-নাসাফী (رحمة الله) বিশ্ববিখ্যাত উসুলবিদ ইমাম আবুল বারাকাত নাসাফী (رحمة الله) তিনি তাঁর বিখ্যাত তফসীর গ্রন্থে একটি হাদিস উল্লেখ করেন : আমিরুল মুমেনীন হযরত উসমান ইবনে আফফান (رضي الله عنه) বলেন,
“রাসুলাল্লাহ (ﷺ) এর ছায়া জমীনে আল্লাহ ফেলেন নি কারণ যাতে কোন মানুষ ওনার ছায়ার উপর পা রাখতে না পারে।”
● নাসাফী : তফসীরে মাদারিক : ২/৪৯২ পৃ : সুরা নুর এর ব্যাখ্যায়
● আল্লামা শফী উকারবী : শামে কারবালা : ৩২৪ পৃ:
● আল্লামা শফী উকারবী : জিকরে জামিল
● আল্লামা গোলাম রাসুল সাঈদী : তাওজিহুল বয়ান : ২৪২ পৃ
● আহমদ ইয়ার খান নঈমী : রিসালায়ে নুর : ২৫ পৃ:
হাদিস ৫ :
● ইমাম হাকিম তিরমিজী (رحمة الله) ® তাবেয়ী হযরত যাকওয়ান (رضي الله عنه) বলেন,
انًّ رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرى له ظل فى شمس ولا قمر
অনুবাদঃ হুজুর (ﷺ)-এর ছায়া না সূর্যালোকে দেখা যেত না চন্দ্রালোকে।
● ইমাম হাকিম তিরমিযী : নাওয়াদিরিল উসূল : ১/২৯৮ পৃ:
● ইমাম সুয়ুতী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/১২২ : হাদিস ৩২৮
● ইমাম কুস্তালানী : মাওয়াহিবে লাদুন্নীয়া : ২/১২০ পৃ:
● ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ৪/২২০ পৃ:
● শায়খ সুলায়মান জুমাল : ফতোয়ায়ে আহমদিয়া পৃ ১৪৮।
● শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী : মাদারেজুন নবুওয়াত : ১/১৪২ পৃ:
● ইমাম ইউসুফ নাবহানী : যাওয়াহিরুল বিহার : ৩/১৪২ পৃ :।
● ইমাম ইউসুফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন : ৬৬৮ পৃ:।
● ইমাম মাহদী আল-ফার্সী : মাতালিউল মুসাররাত : পৃ ৩৬৫।
● আল্লামা ইবনে সালেহ : সুবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ : ২/৯০ পৃ :।
● আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খান : নুরুল মোস্তফা : ৮২ পৃ:।
● আল্লামা ইমাম মুকরিযী : আল ইমতাউল আসমা : ১০/৩০৮ পৃ:।
● আল্লামা ইমাম মুকরিযী : মাকারুম বিখাসায়েসুন্নবী : ২/২৩৫ পৃ:।
● আল্লামা ইমাম শফী উকাড়বী : জিকরে জামিল : ৩২৪ পৃ:।
● আল্লামা ওমর বিন আব্দুল্লাহ সিরাজুদ্দিন : ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া : ১/২৯৭ পৃ:
হাদিস ৬ :
® ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (رحمة الله) তাঁর কিতাব ‘খাসায়েসে কোবরায়’ হুজুর (ﷺ)-এর ছায়া ছিল না এই বিষয়ে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন এবং তাবেয়ী হযরত যাকওয়ান (رضي الله عنه) এর হাদীস বর্ণনা করে বলেন,
قال ابن سبع من خصائصه صلى الله عليه وسلم انّ ظله كان لا يقع على الارض وانه كان نورا فكان اذا مضى فى الشمس او القمر لاينظر له ظل
অনুবাদঃ ইবনে সাবা (رحمة الله) বলেছেন, এটা হুজুর (ﷺ)-এর বৈশিষ্ট্যাবলীর অন্তর্গত যে, হুজুর (ﷺ)-এর ছায়া যমীনে পড়তো না এবং তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ নূর। তিনি যখন সূর্যালোক কিংবা চন্দ্রালোকে চলতেন, তাঁর ছায়া দেখা যেতো না।
● ইমাম যুরকানী : শরহে মাওয়াহিব : ৪/২০২ পৃ :
● ইমাম সুয়ুতী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/১২২ : হাদিস ৩২৮
● শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী : মাদারেজুন নবুওয়াত : ১/১৪২ পৃ:
● ইমাম ইউসুফ নাবহানী : হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন : ৬৬৮ পৃ:
● ইমাম মাহদী আল-ফার্সী : মাতালিউল মুসাররাত : পৃ ৩৬৫
● আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রেজা : নুরুল মোস্তফা : ৮২ পৃ:
● শিফাউস সুদুর
মুহাদ্দিসগনের আকিদাঃ
১-৬ নাম্বার হাদিস সহ ইমামগনের আকিদা একই তাই পুনরায় উল্লেখ করলাম না।
৭) ইমাম কাজী আয়াজ (رحمة الله) :
“রাসুলাল্লাহ (ﷺ) এর নবুওয়াত ও রিসালাতের প্রমানাদির মধ্যে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে তাঁর শরীর মোবারকের সুর্যালোক ও চন্দ্রালোকে কোন ছায়া হতো না কারন ছিলেন নুর। তাঁর শরীর ও পোষাকে মাছি পর্যন্ত বসত না।
● ইমাম কাজী আয়াজ : শিফা শরীফ : ১/৪৬২ পৃ:
● ইমাম সাখাভী : মাকাসিদুল হাসানা : ৮৫ পৃ: হাদিস ১২৬