উপকারী সম্পদ কোনটি? সঠিক খাতে অর্থ ব্যয়
🖋লেখকঃ সৈয়দ মিফতাহুন নূর আল-মাইজভান্ডারী
অর্থ বা টাকা, যে নামেই একে অভিহিত করেন না কেন, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ধনীদের আমরা বেশিরভাগই পছন্দ করি না। এটি এমন একটি শ্রেণি যাদের সম্ভবত নিজেরাই অন্য আরেকজনকে পছন্দ করে না।
সুন্নীদের আজ যে অবস্থা চারিদিকে, উপযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব তার জন্য অনেকটাই দায়ী। একটু দাঁড়ান। এক-দুটা উপযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুরো বিশ্ব দূরে থাক, বাংলাদেশের জন্যই যথেষ্ট নয়। যারাই মোটামুটি রকম পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাস করে এসেছেন, আশা করি সবারই অন্তত সামাজিক বিজ্ঞান পড়ার মাধ্যমে জানা হয়ে গেছে যে এই উপমহাদেশে মুসলমানরা কেন পিছিয়ে পড়েছিল এবং কিভাবে আবার ফিরে এসেছিলো।
যাহোক, আমাদের প্রতিষ্ঠান স্বল্পতার কারণ? প্রধান কারণ হল, যাদের কাছে পয়সা আছে, তারা প্রতিষ্ঠানের প্রতি নজর দেন নি। যাদের ছিল না বা অপর্যাপ্ত ছিল তারা চেষ্টা করলেও তা দাঁড় করাতে পারেন নি। একটা প্রতিষ্ঠান চালানো মানে একটা গরু চরানো নয় যে কিনে পাশের মাঠে ছেড়ে দিলেন, এ নিজের মতই চরতে থাকবে।
আমারও ইচ্ছা ছিলো তাই “লাখ দু লাখ তিন লাখ টাকা নিয়ে একটা বেড়ার ঘর তুলে দাঁড় করিয়ে দিলাম একটা প্রতিষ্ঠান আর এর ওর সাহায্য নিয়ে চলতে থাকলো” এই ইচ্ছাটা পূরণ করা খুবই সম্ভব কিন্তু আপনার ইচ্ছা পূরণ দিয়ে সমাজের প্রয়োজন পূরণ হবে না।
আবার দেখা যায়, যখন আমরা যেকোন একজন ধনীকে পাই যিনি কিছু কাজ করেন, আমরা সবাই তাকে সাহায্যের জন্য চেপে ধরি। আর সাহায্য বলতে – উরস,মাহফিল, ফাতেহা, মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, পোস্টার, ক্যালেন্ডার একেবারে কিছুই বাদ যায় না। অমুকের জন্য করেছেন, আমার জন্য করবেন না কেন? আমরা চিন্তা করি না, তার নিজেরও কিছু কাজ আছে, তাকেও একটা বাজেট নিয়ে চলতে হয়।
তো আপনি একটা প্রতিষ্ঠান করবেন? একটা এতিমখানা চালাবেন? একটা সেমিনার করবেন? একটা গবেষণামূলক ম্যাগাজিন করবেন? বই বের করবেন? ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করবেন? কারো পড়াশুনার ভার নেবেন? কারো বিয়ের খরচ পুষিয়ে দিবেন? কারো চিকিৎসার ভার নেবেন?
সমাধান একটাই- টাকা,টাকা, টাকা এবং টাকা। সদিচ্ছা? আপনি উপরের লিস্টগুলোর সবগুলো বা কিছু কিছু অথবা যেকোন একটি করার তাগিদ যেই মাত্র অনুভব করেছেন, সদিচ্ছা তো তখনই কভার হয়ে গেছে। দরকার শুধু টাকা।
উপকারী সম্পদ সেটিই যেটি নিজের পরিবারের জন্য ব্যয় করা হয় বা অন্যকে দান করা, দরকারী জ্ঞান অর্জন করা, কারও কাজ সহজ করে দেওয়া, শিশুদের পড়াশোনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ নির্মাণ, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির জন্য সঞ্চয় করা, উলামায়ে কেরাম বা অন্যান্য ইসলামী বাধ্যবাধকতা পূরণ – এ সবই অর্থোপার্জন ও সঞ্চয় করার যথাযথ কারণ।
আল্লাহর রাসূল (দঃ) বলেন নি যে ধনের মালিক হবে না। ধনী হওয়াটা (সৎভাবে উপার্জন করে) তাই অন্যায় নয়, কিন্তু ধনী হয়ে যদি ধন সম্পদ নিজের ভোগ বিলাসের চাহিদা পূরণ ছাড়া আর কিছুই না করে, সেটি অন্যায়।