(১)
যখন রাসুলুল্লাহ (দুরুদ) এর বয়স ২০, তখন আবু বক্কর সিদ্দিকী রাদিঃ এর বয়স ১৮, তখনই তাদের বন্ধুত্বের শুরু হয়। এই সম্পর্ক আজীবন অটুট থেকে, মানব জাতির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ে আবু বক্কর সিদ্দিকী রাদিঃ নিজের নাম সংযুক্ত করেন।
সর্বপ্রথম পুরুষ হিসাবে তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন। তাও আবার বিনা প্রশ্নে, এক বাক্যে নবুওয়ত কে গ্রহণ করে নিলেন বা নবুওয়ত এর মাঝে সমার্পিত হয়ে গেলেন।
(২)
সবাই হিজরত করে ফেলেছে, আবু বক্কর সিদ্দিকী (রাদিঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে অনুমতি চাইলেন কিন্তু রাসূল বললেন, তুমি তাড়াহুড়া করো না, আল্লাহ হয়তো তোমার জন্য একজন সঙ্গী ব্যবস্থা করে দিবেন। সেই থেকে আবু বক্কর ধারণা করলেন রাসূল হয়তো তাকেই নিবেন সঙ্গী হিসেবে। তিনি দুটো উট কিনলেন, খাইয়ে দাইয়ে মোটাতাজা করলেন, আর অপেক্ষায় থাকতেন কবে আসবে সেই ডাক। যেদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাথে আবু বকরকে হিজরতের সঙ্গী হওয়ার সুসংবাদ দিলেন সেদিন আবু বক্কর (রাঃ) ছোট বাচ্চার মত অঝোরে কাঁদছিলেন। আম্মাজ্বান আয়েশা (রাদিঃ) বলেন, এর আগে আমি জানতাম না আনন্দের আতিশয্যে মানুষ এভাবে কাঁদতে পারে। ঐতিহাসিক হিজরতের সফরে ‘সাওর’ গুহার ঘটনা প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা সুরা তাওবার ৪০ নম্বর আয়াতে তাঁকে ‘সাহেবুন্নবী’ বা নবী করিম (দুরুদ) এর সঙ্গী বলেছেন।
(৩)
তাবুক যুদ্ধে যখন সবাই যখন নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী আল্লাহর রাস্তায় দিচ্ছিল ওমর (রাদিঃ ) নিজের সম্পদের অর্ধেক দিয়ে ভাবছিলেন আজকে তিনি আবু বক্কর সিদ্দিকী রাদিঃ কে আল্লাহর সাথে ব্যবসায় পেছনে ফেলতে পারলাম (তাদের মাঝে নেক কাজের উত্তম প্রতিযোগিতা হতো)।
কিন্তু আবু বক্কর সিদ্দিকী রাদিঃ এসে তার সমস্ত সম্পদই আল্লাহর রাসূলের সামনে হাজির করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পরিবারের জন্য কি রেখে এসেছ? জবাবে আবু বকর বলেছিলেন, তাদের জন্য আল্লাহ এবং তার রাসূলই যথেষ্ট।
(৪)
তাবুক যুদ্ধে তিনি তাঁর সম্পূর্ণ সম্পদ দান করার পর আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারার ২৭১ নম্বর আয়াত অবতীর্ণ করেন- ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে দান করো, তবে তা ভালো, আর যদি গোপনে করো এবং অভাবগ্রস্তকে দান করো, তা তোমাদের জন্য আরো ভালো।’ আল্লাহ তাঁর নবীকে পরামর্শ করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘তুমি কাজকর্মে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করো’- (সুরা আলে ইমরান : ১৫৯)। হজরত ইবনে আব্বাস (রাদিঃ)-এর মতে, এখানে ‘তাদের’ বলতে আবু বক্কর সিদ্দিকী রাদিঃ ও উমর (রাদিঃ) উদ্দেশ্য। মেরাজশরিফ পরবর্তী কালে হযরত আবু বক্কর (রাদিঃ)-এর উপাধি হলো ‘সিদ্দিক’ বা অধিক সত্যবাদী।
(৫)
মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বললেন, আল্লাহ তার এক বান্দাকে দুনিয়া দিয়েছেন আর আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ দিয়েছেন। আল্লাহর সেই বান্দা দুনিয়ার বদলে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতকে বেছে নিয়েছে। আবু বক্কর সিদ্দিকী রাদিঃ ছোট বাচ্চার মত অঝোরে কাঁদছিলেন। কেউ কিছু বুঝতে না পারলেও, সামনে বসে থাকা আবু বকর বুঝেছিলেন, সেই আল্লাহর বান্দাটি হলেন রাসুলুল্লাহ সাঃ।
নবম হিজরি তে হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকী রাদিঃ কে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে হজ্বের আমির নিয়োগ করে মক্কায় পাঠান। এরপর হযরত আলি রাদিঃ সহ অনেকেই সেই হজ্বে অংশ নেন। আবার রাসুলুল্লাহ সাঃ এর অন্তিম মুহুর্তে কেন্দ্রীয় মসজিদের শেষ কয়েক ওয়াক্তের নামাজের(যা ইসলামের সব চেয়ে বড় রুকন) ইমামতির দায়িত্ব হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকী রাদিঃ কে অর্পণ করা হয়।
(৬)
রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ইন্তেকাল এর পরে সবাই যখন পাগলপারা অবস্থায় আছেন, হযরত ওমর রাদিঃ যখন নাংগা তলোয়ার ঘুরাচ্ছেন, তখন প্রশান্ত চিত্তে হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকী রাদিঃ কুরআনের কিছু অংশ তেলোয়াত করে শুনিয়ে দিলেন।
“আর মুহাম্মাদ কেবল একজন রাসুল। তাঁর পূর্বেও নিশ্চয় অনেক রাসুল বিগত হয়েছে। যদি সে মারা যায় অথবা তাঁকে হত্যা করা হয়, তবে তোমরা কি তোমাদের পেছনে ফিরে যাবে?? আর যেব্যক্তি পেছনে ফিরে যায়, সে কখনো আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারেনা। আর আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞদের প্রতিদান দেবেন।” [সূরা আলে ইমরানঃ ১৪৪]
(৭)
উসামার বাহিনী মদিনা ত্যাগ করার আগেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইন্তেকাল করেন। এরপর অনেকেই আবু বকর (রাঃ) কে উসামার বাহিনীকে ফেরত আনার পক্ষে মত দেন। হযরত উমার (রাঃ)এর মত বজ্রকঠোর মানুষটি পর্যন্ত বলেন, “হে খলিফাতুল মুসলেমীন! এখন জোর জবরদস্তির সময় নয়, যতদূর সম্ভব নম্রতা দেখিয়ে অন্তর জয় করার সময়”। জবাবে আবু বকর (রাঃ) বলেছিলেন, “ওমর!ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তুমি কঠোর প্রকৃতির ছিলে। ইসলাম গ্রহণের পর এতই নম্র হয়ে গেলে? মনে রেখো, ইসলাম সম্পূর্ন হয়েছে এবং আলাহর ওহী বন্ধ হয়ে গেছে। আমার জীবনে ইসলাম পঙ্গু হয়ে যাবে এটা আমি কোনমতেই সহ্য করব না। আল্লাহর কসম! আমার গোশত যদিপশু পক্ষীরাও খেয়ে ফেলে, তবুও আমি সেই বাহিনীকে নিশ্চয়ই প্রেরণ করব, যাদেরকে রওনা দেওয়ার জন্য স্বয়ং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন”।
(৮)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইন্তেকাল এর পর যখন অনেকেই যাকাত দিতে অস্বীকার করেছিল তখন বলেছিলেন, আল্লাহর রাসূলের সময় যারা একটা বাছুরও যাকাত দিত আজ যদি কেউ সেটাও দিতে অস্বীকার করে আমি আবু বকর তার বিরুদ্ধে জিহাদ করব।
(৯)
আহলে বায়াতের উজ্জ্বল নক্ষত্র আলি বাকির আঃ, ইমামে আজম হযরত আবু হানিফা রহঃ, ইমাম গাজ্জালী রহঃ, গাউসে পাক হযরত আব্দুল কাদির জ্বিলানি রাঃ, মুজাদ্দিদ আলফেসানী রাঃ মহিউদ্দিন ইবন আরাবী রহঃ সহ বিভিন্ন বুজুর্গ হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকী রাদিঃ কে কেমন ভাবে উম্মতের মাঝে তার শ্রেষ্ঠত্ব বর্ননা করেছেন, সেটা নিচে দেয়া হলো। যদিও আবু বক্কর সিদ্দিকী রাদিঃ এর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে হযরত আলি রাদিঃ সহ বেশির ভাগ সাহাবায়ে কেরাম রাদিঃ গনের ইজমা আছে, এবং আবু হানিফা রহঃ সহ বেশির ভাগ তাবেয়ী দের ইজমা আছে। যদিও ভিন্নমত থাকে, এবং আবু বক্কর সিদ্দিকী রাদিঃ সহ অন্যান্য সাহাবায়ে কেরাম গন এবং উম্মুল মোমেনিন গন কে কেউ উত্তম জানে, তাতে ক্ষতির আশংকা দেখি না।
The light of the Ahl al-Bait our master Imām Muḥammad al-Bāqir (d.114H/733) alaihi as-Salām said in this regard:
“Whoever did not recognize the superiority of Abū Bakr and ʿUmar radiyAllāhu anhumā, he is ignorant of the Sunnah.” [Hilyat al-Awliyā]
Imam al-Aazam Abu Hanifa gave one of the pithiest definitions of Sunnism in Islam:
“The doctrine of Ahl al-Sunna wal-Jama’a consists in preferring the Two Shaykhs (tafdil al-shaykhayn) [i.e. Abu Bakr and ‘Umar over the rest], loving the Two Sons-in-law (hubb al-khatanayn) [i.e. ‘Ali and ‘Uthman], and [deeming lawful the] wiping on leather socks [in ablution] (al-mas-h ‘alal-khuffayn) [i.e. all three contrary to Shi’is].” [Khulasat al-Fatawa, Vol. 2, Page 381]
(Narrated by Ibn ‘Abd al-Barr in al-Intiqa’ bi-Manaqib al-A’immat al-Thalathati al-Fuqaha’ through several different chains. The same is also related from Sufyan al-Thawri by al-La’laka’i in his I’tiqad Ahl al-Sunna, Vol. 1, Page 152.)
Imam al-Aazam Abu Hanifah in Fiqh Al-Akbar:
The most superior and the best of all men after prophets – blessings and peace upon them – is Abu Bakr as-Siddiq. And then, Umar ibn al-Khattab al-Faruq. And then Uthman ibn Affan Dhu’n Nurayn. And then ali ibn Abu talib al-Murtada. May Allah be well pleased with them all; they were worshippers and steadfast on Truth and sided with Truth. We love all of them. [Fiqh Al-Akbar]
Imām Ghazālī (d.505H/1111) writes in his magnum opus Iḥyā ʿUlūm ad-Dīn:
“And the best of the people after the Prophet sallAllāhu ʻalaihi waSallam is Abū Bakr, then ʿUmar, then ʿUs̱mān, then ʿAlī (radiyAllāhu ʻanhum).”
The head of the Awliyā, the greatest Ghawth and founder of the Qādirī Order, Sayyidinā Ghawth al-Aʿzam Sayyid ʿAbd al-Qādir al-Jīlānī (d.561H/1166) radiyAllāhu ʻanhu writes:
“The greatest among the four (caliphs) is Abū Bakr, then ʿUmar, then ʿUs̱mān, then ʿAlī radiyAllāhu ʻanhum.” [Ghunyat at-Tālibīn]
Imām Rabbānī also quotes the following through Imām Dhahabī:
“I have been informed that some people consider me greater than these two [Abū-Bakr and ʻUmar]. Thus, however considers me greater than them, he is a liar and his punishment is the same as for a liar.” [Maktūbāt, volume 1, letter 266]
The great Sufi theologian, called The Greatest Shaikh [Shaikh al-Akbar], Muḥy ad-Dīn Ibn ʿArabī (d.638H/1240) quddisa sirruhu writes:
“Know that there is none in the Nation of Muḥammad sallAllāhu ʻalaihi waSallam who is superior than Abū Bakr, save ʿĪsā ʻalaihi as-Salām.” [Futūhāt Ibn ʻArabī]
Khwāja Muhammad Pārsā was one of the renowned deputies of the founder of the Naqshbandi Order Khwāja Muhammad Bahā ad-Dīn Naqshband Bukhārī. He writes in his book Kalimāt Qudsia:
The leader of the Sayyids of Bilgraam, Sayyiduna Meer Abdul Wahid Hussayni Zaidi Wasti Bilgraami has written in his ‘Sabaa Sanabil Sharif’:
“After Hadrat Abu Bakr comes the excellence of Hadrat Umar, then Hadrat Uthmaan and then Hadrat Ali. He who does not accept Hadrat Ali as the Khalifa is from the Kharijees and he who regards him (Hadrat Ali) to be more excellent than Hadrat Abu Bakr and Umar is from the Raafdhis.” [Sabaa Sanabil, Page 10]
[ এই পুরো লেখাটি আমার মৌলিক কোনও লেখা নয়, বরং আমি #কুতুবউদ্দিন এই পুরো লেখাটি কম্পাইল করেছি অসংখ্য যায়গা থেকে – সো এই লেখাটির লেখক স্বত্ত্ব আমার নয়]