নবী-অলির স্মৃতিচিহ্ন থেকে বরকত অর্জন করা কি জায়েজ ?
🖋মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ রিজভী
সম্মানিত নবী-রাসূল, অলি-আউলিয়াদের স্মৃতিচিহ্ন যেমন- তাঁদের রেখে যাওয়া পান-পাত্র, টুপি, জামা, চুল, দাড়ি, ব্যবহৃত লাঠি, নামাজের মুসল্লা ইত্যাদি দ্বারা বরকত অর্জন করার নিয়ম সেই সাহাবায়ে কেরামগণের আমল থেকে চলে আসছে। কিন্তু এখন শির্কের ফতোয়া দিয়ে সাধারণ সরলমনা মুসলমানদেরকে এসব পবিত্র বস্তু থেকে বরকত অর্জন করতে বাধা দিচ্ছে একদল সহীহ ধোঁকাবাজ গোষ্ঠী।
তাদের দাবি যে সম্পূর্ণ কোরআন-হাদিস বিরোধী তা আজ দলিল প্রমাণ দিয়ে প্রমাণ করবো ইনশাআল্লাহ।
দলিল নং ১
হযরত ইউসুফ (আঃ)-এর জামার বরকতে অন্ধ পিতা হযরত ইয়াকুব (আঃ)-এর দৃষ্টি ফিরে এসেছিল। ইরশাদ হচ্ছে, তোমরা আমার এ জামাটি নিয়ে যাও এবং এটি আমার পিতার চেহারার উপরে রেখে দাও। এতে তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবেন।
{রেফারেন্স: সূরা ইউসুফ, আয়াত ৯৩}
দলিল নং ২
তাবাকাতে ইবন সা’দে রয়েছে: হযরত ইবন উমর (রাঃ) নবী (ﷺ)-এর মিম্বরে হাত রাখলেন। অতঃপর তিনি তাঁর হাতকে নিজের মুখমণ্ডলের উপরে রাখলেন। এটি কেবল বরকত অর্জনের জন্য।
{রেফারেন্স: আল-উসূলুল আরবায়া, পৃ: ২৪}
দলিল নং ৩
আল্লামা মাহমুদী লিখেছেন, গারফী কিতাবুল ইলালে ওয়াস সুয়ালাতে লিখেছেন- হযরত আব্দুল্লাহ তাঁর পিতাকে প্রশ্ন করে ছিলেন যে, কোন ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)-এর মিম্বর স্পর্শ করেছে তার থেকে বরকত নেয়ার জন্য অথবা চুমু দিল এবং সে এভাবে রাসূল (ﷺ)-এর রওজায়ও করলো, তাঁর উদ্দেশ্য আল্লাহর সওয়াব অর্জন করা। এমন করা জায়েজ কি না ? তিনি বললেন, এতে কোন অসুবিধা বা আপত্তি নেই।
{রেফারেন্স: ওয়াফাউল ওয়াফা, পৃ: ৪৪৩}
দলিল নং ৪
৪ মাযহাবের ইমামগণের প্রত্যেকেই এই ধরনের বরকত নেয়াকে মুস্তাহাব বলেছেন।
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রহঃ) লিখেছেন, হযরত হাফিজ মাইনুল আবেদীন (রহঃ) বলেন, আমার নিকট হাদিস বর্ণনা করেছেন হযরত আবূ সাঈদ আলায়ী (রহঃ) তিনি বলেন, আমি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রাঃ)-এর পুরনো একটি কিতাবের অংশে ইবন নাসের এবং অন্যান্য হাফিজে হাদিসের লিখিত একটি বাণী দেখেছি, তাতে লেখা আছে যে, ইমাম আহমদ (রাঃ)-কে প্রিয় রাসূল (ﷺ)-এর রওজা ও মিম্বর চুম্বন করা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেছেন, এতে কোন অসুবিধা নেই।
{রেফারেন্স: উমদাতুল কারী, খন্ড ৪, পৃ: ৬০৭}
সাহাবীগণ বরকত অর্জনের জন্য তাঁদের নিকট রাসূল (ﷺ)-এর স্মৃতিচিহ্ন-গুলো সংরক্ষণ করতেন এবং মানুষ তার দ্বারা উপকৃত হতো। যেমন- হযরত মা আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট রাসূল (ﷺ)-এর একটি পশমের কম্বল ছিল। তিনি কখনো কখনো জিয়ারত ও বরকতের জন্য তা বের করতেন।
দলিল নং ৫
সহীহ বুখারীতে এসেছে,
হযরত আবু বুরদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। মা আয়েশা (রাঃ) আমাদের সামনে রাসূল (ﷺ)-এর পশম বা জিনের কম্বল বের করতেন।
{রেফারেন্স: সহীহ বুখারী, পৃ: ৪৩৮}
দলিল নং ৬
হযরত আনাস (রাঃ)-এর নিকট রাসূল (ﷺ)-এর না’লাইন-জুতা মোবারকদ্বয় রক্ষিত ছিল। তিনি জিয়ারত ও বরকতের উদ্দেশ্য তা বের করতেন।
হযরত আনাস (রাঃ) আমাদের সামনে রাসূল (ﷺ)-এর খাল জড়ানো সেন্ডেল মোবারক বের করতেন।
{রেফারেন্স: সহীহ বুখারী, পৃ: ৪৩৮}
দলিল নং ৭
হযরত আব্দুল্লাহ ইবন সালাম (রাঃ)-এর নিকট রাসূল (ﷺ)-এর পেয়ালা মোবারক সংরক্ষিত ছিল। তিনি এই পেয়ালা দ্বারা বরকত লাভের জন্য পানি পান করাতেন।
সহীহ বুখারীতে এসেছে,
হযরত আবূ বুরদা (রাঃ) বলেন, আমাকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবন সালাম বলেন, আমি কি আপনাকে সেই পাত্রে পানি পান করাবো না, যাতে করে রাসূল (ﷺ) পানি পান করতেন।
{রেফারেন্স: সহীহ বুখারী, পৃ: ৮৪২}
পরবর্তীতে এই পবিত্র পেয়ালাটি উমাইয়া খলীফা দ্বিতীয় উমর হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীযের হাতে আসে। তিনি বরকতের জন্য এটি বের করে দেখাতেন।
দলিল নং ৮
হযরত উম্মে সালমা (রাঃ)-এর নিকট রাসূল (ﷺ)-এর পবিত্র দাড়ি মোবারক সংরক্ষিত ছিল। রোগ থেকে মুক্তির জন্য এই দাড়ি মোবারকের ভেজা পানি পান করানো হতো।
{রেফারেন্স: সহীহ বুখারী, খন্ড ২, পৃ: ৮৪৫}
দলিল নং ৯
হাদিসের সম্রাট ইমাম বুখারী (রাঃ) ইন্তেকালের পর তাঁর দেহ মোবারক কবরে রাখার সাথে সাথে কবরের মাটি মেশক আম্বরের সুগন্ধিতে সুগন্ধ হয়ে গেল। মানুষ বরকত লাভের আশায় কবরের মাটি নিজ নিজ ঘরে নিয়ে যেতে শুরু করল।
ইমাম বুখারী (রাঃ) ২৫৬ হিজরী সনে ইন্তেকাল করেছেন। তখন আব্বাসীদের শাসনামল চলছিল, চতুর্দিকে ব্যাপক জ্ঞানের প্রসার ছিল। এবং অসংখ্য মুহাদ্দিস আলেম উপস্থিত ছিলেন কিন্তু কেউ ইমাম বুখারীর মাজার থেকে বরকতের জন্য মাটি নেয়াকে না জায়েজ বলেননি এবং বেদাতও বলেননি।
ইমাম বুখারী (রাঃ)-এর মাজার থেকে বরকতের জন্য মাটি নেয়া এবং প্রিয় রাসূল (ﷺ)-এর ব্যবহৃত স্মৃতিচিহ্ন থেকে বরকত অর্জন করা শির্ক নয়, বরং শরীয়ত সম্মত এবং বরকতের আমল।
{রেফারেন্স: আল-উসুলুল আরবায়া ফী তারদীদিল ওহাবিয়া, পৃ: ২৪-২৬}
উল্লেখিত দলিলাদি দ্বারা প্রমাণ হলো যে, নবী-রাসূল এবং অলি-আউলিয়াদের স্মৃতিচিহ্ন দ্বারা বরকত অর্জন করা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ জায়েজ এবং তা শুধুমাত্র জায়েজই নয় বরং তা হচ্ছে সুন্নাতে সাহাবা।
সহীহ ধোঁকাবাজরা সহীহ বুখারীর মুরিদ কিন্তু যখন বুখারী শরীফের কোন দলিল তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায় তখন তারা আর বুখারীর মুরিদ থাকে না।
তখন পারলে তারা বুখারীকেও ৩ তালাক দেয়।
সহীহ ধোঁকাবাজরা মূলত মুসলমানদেরকে নবী-অলিদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। কারণ তারা ইহুদীদের এজেন্ট। ইহুদীদের নীল-নকশা বাস্তবায়ন করতেই তারা বেদাত, শির্কের ভোতা অজুহাত দিয়ে সহজ সরল ধর্ম-প্রাণ মুসলমানদেরকে পথভ্রষ্ট করছে।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহীহ ধোঁকাবাজদের সহীহ ধোঁকা থেকে রক্ষা করুন।
#_আমিন!