মাওলিদ-উন-নবী (ﷺ) পরিচিতি, আল-কুরআন, হাদিস ও তফসীরের আলোকে।
🖋লেখক, সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
মিলাদুন্নবী (ﷺ) অর্থ পরিচিতিঃ
মূলত ঈদ অর্থ হচ্ছে খুশি বা আনন্দ প্রকাশ করা। আর ميلاد মীলাদ, مولد মাওলিদ, مولود মাওলূদ শব্দের অর্থ হচ্ছে, স্থান-কালসহ জন্মবৃত্তান্ত/বংশবৃত্তান্ত আলোচনা করা।
আল-কুরআন ও জগৎ বিখ্যাত তফসীরগ্রন্থ থেকেঃ
❏ আয়াত ১ : আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন,
اللهم ربنا انزل علينا ماءدة من السماء تكون لنا عيدا لاولنا واخرنا
অর্থ : হে আমাদের রব আল্লাহ! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে (বেহেশতী খাদ্যের) খাদ্যসহ একটি খাঞ্চা নাযিল করুন। খাঞ্চা নাযিলের উপলক্ষটি অর্থাৎ যেদিন খাঞ্চা নাজিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ স্বরূপ হবে !” (সূরা মায়িদা ১১৪)
ব্যখ্যা : হযরত ঈসা (عليه السلام) এর উম্মতের জন্য আসমান থেকে খাদ্য নাযিল হওয়ার দিনটি যদি ঈদের দিন হয়, তাহলে যার উসীলায় জগৎ সৃষ্টি, যিনি সমগ্র জগৎ এর নিয়ামাত সেই রাসূল (ﷺ) এর আগমন কি ঈদের (আনন্দের) দিন নয়? অন্যদিকে হুজুর পাক (ﷺ) এর আগমনের দিন হল শয়তানের কান্নার দিন আর ইমানদারদের জন্য খুশির দিনঃ
❏ ইমাম ইবনে কাসীর (رحمة الله) লিখেনঃ
حكى السهيلي عن تفسير بقي بن مخلد الحافظ : أن إبليس رن أربع رنات; حين لعن ، وحين أهبط ، وحين ولد رسول الله صلى الله عليه وسلم ، وحين أنزلت الفاتحة
“শয়তান চার বার উচ্চস্বরে কেঁদেছিল,
(১) যখন আল্লাহ তায়ালা তাকে অভিশপ্ত আখ্যা দেন;
(২) যখন তাকে বেহেস্ত থেকে বের করে দেয়া হয়।
(৩) যখন হুজুর (ﷺ) এর বিলাদত/মিলাদ হয়।
(৪) যখন সূরা ফাতেহা নাযেল হয়।”
(ইমাম ইবনে কাসীর: আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া-২য় খণ্ড ২৬৬, ২৬৭,পৃষ্ঠা, প্রকাশনা: মাকতাবাতুল মা’রেফা, বয়রুত লেবানন।)
❏ আয়াত ২ :
পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে-
قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ{يونس-٥٨}…
[হে হাবিব ﷺ]! আপনি বলে দিন, মহান আল্লাহর “ফযল” ও “রহমত” প্রাপ্তির কারণে তাদের উচিত খুশি প্রকাশ করা। এটি তাদের (সমুদয়) সঞ্চয় অপেক্ষা সর্বাপেক্ষা উত্তম। (সুরা ইউনুস ১০:৫৮)
তফসীরঃ
❏ বিশিষ্ট তাবেয়ী হযরত কাতাদা (رضي الله عنه) ও তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (رحمة الله) সহ আর ও অনেকে বর্ণনা করেন যে, আহলে বায়াতের অন্যতম সদস্য হযরত ইমাম আবু জাফর বাকের (رضي الله عنه) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন-
عن قتادة رضى الله تعالى عنه ومجاهد وغيرهما قال ابو جعفر الباقر عليه السلام فضل الله رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم .
-“আল্লাহর (ফদ্বল) বা অনুগ্রহ দ্বারা ও রাসূল (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।”
[ইমাম তিবরিসী, মাজমাউল বায়ান ৪/১৭৭-১৭৮ পৃ.।]
❏ বিশ্ব-বিখ্যাত মুহাদ্দিস ও তাফসিরকারক ইমাম যওজী (رحمة الله) [ওফাত.৫৯৭হি.) উক্ত আয়াতে সম্পর্কে লিখেন,
ফাদ্বল দ্বারা ইলম বা জ্ঞানকে এবং রহমত দ্বারা মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে যেমনটি তাবেয়ী ইমাম দাহ্হাক (رحمة الله) তাঁর শায়খ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন।”
[ইমাম যওজী, যা’দুল মাসীর ফি উলূমূত তাফাসীর, ৪/৪০ পৃ.]
❏ ইমাম হাইয়্যান আন্দুলুসী (رحمة الله) [ওফাত. ৭৪৫হি.] বর্ণনা করেন-
وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فِيمَا رَوَى الضَّحَّاكُ عَنْهُ: الْفَضْلُ الْعِلْمُ وَالرَّحْمَةُ مُحَمَّدٌ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.
“তাবেয়ী ইমাম দাহ্হাক (رحمة الله) সাহাবী হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন- উক্ত আয়াতে (ফদ্বল) দ্বারা ইলমকে এবং (রহমত) দ্বারা মুহাম্মদ (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে।”
[ইমাম হাইয়্যান, তাফসীরে বাহারুল মুহিত, ৫/১৭১ পৃ.]
❏ হাফিজুল হাদিস ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) [ওফাত. ৯১১হি.) লিখেন-
وَأخرج أَبُو الشَّيْخ عَن ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا فِي الْآيَة قَالَ: فضل الله الْعلم وَرَحمته مُحَمَّد صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ الله تَعَالَى وَمَا أَرْسَلْنَاك إِلَّا رَحْمَة للْعَالمين. (১০৭ الْأَنْبِيَاء الْآيَة )
-‘‘ইমাম আবু শায়খ ইস্পাহানী (رحمة الله) তার তাফসীরে উল্লেখ করেন, সাহাবি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে আল্লাহর (ফাদ্বল) বা অনুগ্রহ দ্বারা ইলম বা জ্ঞানকে এবং (রহমত) দ্বারা নবীজী (ﷺ) কে বুঝানো হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন- হে হাবিব আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্ব-জগতের জন্য রহমত স্বরূপ প্ররেণ করেছি। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭)।’’
[ইমাম তিরমিযী-মাজমাউল বায়ান,৫/১৭৭-১৭৮পৃ, তাফসীরে দূররুল মানছুর – ১০ নং সূরা – ১১ পারা- সূরা ইউনূছ ৫৮]
❏ আয়াত ৩ :
সে রহমত সম্পর্কে অনত্র আল্লাহ পাক বলেন,
وماارسلناك الا رحمة للعالمين
অর্থ : হে আমার হাবীব (ﷺ)! আমি আপনাকে সমস্ত কায়িনাতের জন্য রহমত হিসাবে পাঠিয়েছি !”‘ (সূরা আম্বিয়া ১০৭)
❏ তফসীরঃ ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (رحمة الله) বলেন, “আবু শায়খ হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: আল্লাহর ফযল বলতে জ্ঞানকে, আর রহমত বলতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -কে বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ বলেন, (হে রাসূল) আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি জগতসমূহের জন্যে আমার রহমত (করুণা) করে (সূরা আম্বিয়া, ১০৭ আয়াত)।” [আস্ সৈয়ুতী প্রণীত দুররে মনসূর, ৪:৩৩০]
আল্লাহর নিয়ামতকে স্মরণ করার হুকুমঃ
❏ আয়াত ৪ : আল্লাহ পাক বলেন,
اذكروا نعمة الله عليكم
অর্থ : তোমাদেরকে যে নিয়ামত দেয়া হয়েছে, তোমরা সে নিয়ামতকে স্মরন করো!” (সূরা আল ইমরান ১০৩)
রসূলুল্লাহ (ﷺ) এর শান-সিফাত ও মাহাত্ম্য বর্ণনার নির্দেশঃ
❏ আয়াত ৫ :
إنا أرسلناك شاهدا ومبشر ونذير لتؤمنوا بالله و رسوله و تعزروه وتوقروه وتسبحوه بكرة وأصيلا
৪৮:৮ – নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি হাযির (উপস্থিত) নাযির (প্রত্যক্ষ সাক্ষীস্বরূপ), সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী করে;
৪৮:৯ – যাতে হে লোকেরা! তোমরা আল্লাহ্ ও তার রসূলের উপর ঈমান আনো এবং রসূলের মহত্ব বর্ণনা ও (তাঁর প্রতি) সম্মান প্রদর্শন করো আর সকাল-সন্ধ্যা আল্লাহ্র পবিত্রতা ঘোষণা করো। (সূরা ফাতাহ ৮,৯)
❏ আয়াত ৬ :
পৃথিবী সৃষ্টির পূর্বে নবীগণের মজলিশে সর্বপ্রথম মিলাদুন্নবীর (ﷺ)-এর আলোচনা (শানে নুযুল দেখতে পারেন)
وإذ أخذ الله ميثاق النبيين لما اتيتكم من كتاب و حكمة ثم جاءكم رسول مصدق لما معكم لتؤمنن به ولتنصرنه قال أأقررتم وأخذتم علي ذلكك إصري قالوا أقررنا قال فاشهدوا وأنا معكم من الشاهدين
অর্থ: স্মরণ করুণ! যখন আল্লাহ পাক নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, আমি আপনাদেরকে যে কিতাব ও হিকমত প্রদান করবো। অতঃপর তশরীফ আনবেন একজন রসূল [মুহাম্মদ (ﷺ)] ! তিনি আপনাদের প্রদত্ত কিতাবগুলোর সত্যায়ন করবেন। তখন আপনারা নিশ্চই উনার প্রতি ঈমান আনবেন এবং উনাকে (পেলে) সহযোগিতা করবেন ! মহান আল্লাহ বললেন, আপনারা কি এ অঙ্গীকার স্বীকার ও গ্রহণ করলেন? উনারা বললেন, হ্যাঁ, আমরা স্বীকার করে নিলাম। তখন আল্লাহ পাক বললেন, তাহলে আপনারা সাক্ষী থাকুন এবং আমিও আপনাদের সাথে সাক্ষী রইলাম !”
(সূরা আল ইমরান ৮১)
❏ আয়াত ৭ :
আল্লাহ বলেন,
قال عيسي ابن مريم يبني اسراءيا اني رسول الله اليكم مصدقا لما بين يدي من التورة و مبشرا برسول ياتي من بعدي اسمه احمد
অর্থ :হযরত ঈসা (عليه السلام) বলেন, হে বনী ইসরাঈল ! নিশ্চয়ই আমি তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ পাক উনার রসূল হিসাবে প্রেরিত হয়েছি ! আমার পূর্ববর্তী তাওরাত শরীফের আমি সত্যায়নকারী এবং আমি এমন একজন রসূলের সুসংবাদ দানকারী। যিনি আমার পরে আগমন করবেন, উনার নাম মুবারক হচ্ছে আহমদ (ﷺ) !”
(সূরা আস সাফ ৬)
❏ তফসীরঃ
উক্ত আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিজেই নিজের মীলাদ শরীফ বর্ননা করেন।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম হাকিম, ইমাম আত-তাবারানী, ইমাম আল-বাজ্জার, ইমাম আল-বায়হাকী (রহিমাহুল্লাহ) বর্ননা করেন, হযরত ইরবায ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন,
“আমি আল্লাহর বান্দা ও শেষ নবী। আমি তখনো নবী ছিলাম যখন আদম (عليه السلام) মাটির অন্তর্গত ছিলেন। খুব শীঘ্রই আমি তোমাদেরকে এসব বিষয়ে অবগত করব।
আমি আমার পিতা হযরত ইব্রাহীম (عليه السلام) এর দোয়া,
হযরত ঈসা (عليه السلام) এর [তার জাতিকে দেয়া ভবিষ্যৎবানী] সুসংবাদ এবং “আমার আন্মাজানের (স্বপ্নে) দেখা সেই নূর যা ওনার দেহ থেকে বের হয়ে শাম দেশের প্রাসাদ সমুহকে আলোকিত করেছিল।”
তথ্যসূত্রঃ
১.ইমাম তাবারী : তফসীরে তাবারী : খ ১ : প ৫৫৬
২.ইমাম তাবারী : তারিখুল উমাম ওয়াল মুলুক : খ ১ : প ৪৫৮
৩.ইমাম কুরতুবী : তফসীরে কুরতুবী : খ ২ : প ১৩১
৪.ইমাম ইবনে কাসীর : তফসীরে ইবনে কাসীর : খ ৪ : প ৩৬০
৫.ইমাম আবু লাইস সমরকানী : তফসীরে সমরকানী : খ ৩ : প ৪২১
৬.ইমাম সূয়ূতী : তফসীরে দুররে মনসূর : খ ১ : প ৩৩৪
৭.ইমাম আহমদ : মুসনাদে আহমদ খ ৪ : প ১২৭ : হাদিস ১৬৭০১
৮.ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুন নবুওয়াত : খন্ড ১ : পৃ ৮৩, প ১১০
৯.ইমাম ইবনে ইসহাক : সিরাতুন নবী : খ ১ : প ২৮
১০.ইমাম ইবনে হিশাম : সিরাতুন নবী : খ ১ : প ১৫৬
১১.ইমাম ইবনে সা’দ : তাবাকাত আল কুবরা : খ ১ : প ১৫০
১২.ইমাম ইবনে হিব্বান : সহীহ ইবনে হিব্বান : খ ৯ : প ১০৬
১৩.ইমাম বাগবী : মিশকাতুল মাসাবিহ : প ৫১৩
১৪.ইমাম হাকিম : মুস্তাদরেক আল হাকিম : খন্ড ২ : পৃ ৬০০ : হাদিস ৪১৭৫
১৫.ইমাম ইবনে জাওজী : আল ওয়াফা : প ৯১
১৬.ইমাম ইবনে হাজর হায়সামী : মাজমাউল যাওয়াইদ : (৮:২২১/৪০৯)
১৭.ইমাম ইমাম হিন্দি : কাঞ্জুল উম্মাল : খ ১১ : প ১৭৩
১৮.ইমাম হালাভী : সিরাতে হালাভিয়্যাহ : খ ১ : প ৭৭
এই হাদিসটির বিভিন্ন রেওয়াতে বর্ণিত সুত্রঃ
১. হযরত কা’ব আল আহবার (رضي الله عنه)
২. হযরত আব্দুর রহমান বিন আউফ (رضي الله عنه) এর মাতা শিফা বিনতে আমর ইবনে আউফ (رضي الله عنه)
৩. হযরত ইরবাদ ইবনে সারিয়া (رضي الله عنه)
৪. হযরত মু’য়াজ বিন জাবাল (رضي الله عنه)
৫. হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه)
৬. হযরত উসমান ইবনে আবিল আস (رضي الله عنه)
৭. হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)
৮. হযরত আব্বাস ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (رضي الله عنه) [ইমাম হাকিম : আল-মুস্তাদরাক : পৃ ৩৬৯, হাদিস ৫৪১৭; মুহাদ্দিসে দেহলভী : মা সাবাতা বিস সুন্নাহ : রবিউল আওয়াল অধ্যায় : ১১৪ পৃ]
৯. হযরত ইকরামা (رضي الله عنه)
❏ মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে রোজা রাখা
🕋হাদিসঃ হযরত আবু কাতাদা আনসারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
– أَخْبَرَنَا أَبُو الْحُسَيْنِ بْنُ الْفَضْلِ الْقَطَّانُ، أَخْبَرَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ سُفْيَانَ، حَدَّثَنَا أَبُو النُّعْمَانِ مُحَمَّدُ بْنُ الْفَضْلِ، وَالْحَجَّاجُ، قَالَا: حَدَّثَنَا مَهْدِيُّ بْنُ مَيْمُونٍ، حَدَّثَنَا غَيْلَانُ بْنُ جَرِيرٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَعْبَدٍ الزِّمَّانِيِّ، عَنْ أَبِي قَتَادَةَ الْأَنْصَارِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ صَوْمُ يَوْمِ الِاثْنَيْنِ ؟ قَالَ: ” فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَيَّ الْقُرْآنُ ” أَخْرَجَهُ مُسْلِمٌ فِي الصَّحِي
অর্থঃ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে সোমবারে রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো, তিঁনি ইরশাদ করেন-“সোমবারে আমি জন্মগ্রহণ করেছি এবং সোমবারই আমার প্রতি ওহী নাজিল করা হয়েছে।”
তথ্যসূত্রঃ
●মোসান্নাফে আবদ্ আল-রাযযাক, ৪র্থ খণ্ড, ২৯৬ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৭৮৬৫
●সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৬০৬; ২৬০৩ হাদীসেও বিদ্যমান।
●মুসনাদে ইমাম আহমদ, খন্ড-৫ম, পৃ-২৮৭ হা.নং২১৫০৮,
●সুনানে আবি দাউদ, ৭ম খণ্ড, ২৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২৪২৮
●মিশকাত পৃঃ১৭৯,
●ইমাম বায়হাকী কৃত সুনানে কুবরা, ৪র্থ খণ্ড, ৩০০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ৮১৮২ ও ৮২৫৯
●ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানীঃ হিলিয়াতুল আউলিয়া ৯ম খন্ড ৫২ পৃ:
͏●ইমাম মোল্লা আলী কারীঃ মিরকাত শরহে মিশকাত, খন্ড-৪র্থ, পৃ-২৯১,
●আসাদ আল-গাবা ফী মা’আরফাতেস্ সাহাবা, ১ম খণ্ড, ২১-২২ পৃষ্ঠা; ১৯৮৭ সালে লাহোর, পাকিস্তানে প্রকাশিত
❏ মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর বংশ-বৃত্তান্ত আলোচনা
🕋 হাদিস :
হুজুর করিম (ﷺ) এর চাচা হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন,
عَن الْعَبَّاس أَنَّهُ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَكَأَنَّهُ سَمِعَ شَيْئًا فَقَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ:مَنْ أَنَا؟ فَقَالُوا: أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ. فَقَالَ:أَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ الْخَلْقَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ ثمَّ جعلهم فرقتَيْن فجعلني فِي خير فِرْقَةً ثُمَّ جَعَلَهُمْ قَبَائِلَ فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ قَبيلَة ثمَّ جعله بُيُوتًا فَجَعَلَنِي فِي خَيْرِهِمْ بَيْتًا فَأَنَا خَيْرُهُمْ نفسا وَخَيرهمْ بَيْتا . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ-
-‘‘একদা তিনি হুযুর (ﷺ) এর নিকট ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আসলেন। কারণ তিনি যেন হুযুর করিম (ﷺ) এর বংশ বুনিয়াদ সম্পর্কে বিরূপ কিছু মন্তব্য শুনেছেন। [তা হুযুর করিম (ﷺ) কে অবহিত করলেন।] তখন হুজুর (ﷺ) মিম্বর শরীফের উপর আরোহন করলেন। অতঃপর তিনি সাহাবা কেরামগণের উদ্দেশ্যে বললেন “আমি কে?”
উত্তরে তাঁরা বললেন “আপনি আল্লাহর রাসূল”। তখন হুজুর আকরাম (ﷺ) এরশাদ করলেন “আমি আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিবের পুত্র মুহাম্মদ (ﷺ)। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা মানব-দানব সবই সৃষ্টি করেছেন। এতেও আমাকে উত্তম পক্ষের [অর্থাৎ মানবজাতি] মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তাদেরকে [মানব জাতিকে] দু ভাগে বিভক্ত করেন [আরবীয় ও অনারবীয়]। এতেও আমাকে উত্তম ‘সম্প্রদায় [আরবীয়তে] প্রেরণ করেছেন। অতঃপর আরব জাতিকে বহু গোত্রে বিভক্ত করেন। আর আমাকে গোত্রের দিক দিয়ে উত্তম গোত্র [কুরাইশে] রেখেছেন করেছেন। তারপর তাদেরকে [কুরাইশকে] পুনরায় বিভিন্ন উপগোত্রে ভাগ করেছেন। আর আমাকে উপগোত্রের দিক থেকে শ্রেষ্ঠ উপগোত্র [বনি হাশেমে] প্রেরণ করেছেন। সুতরাং আমি তোমাদের [তামাম সৃষ্টিজগতের] মধ্যে সত্ত্বাগত, বংশগত ও গোত্রগত দিক থেকে সর্বশ্রেষ্ঠ।’’
তথ্যসূত্রঃ
→ইমাম তিরমিযি এ সনদটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।
→আবূ হাসান এই হাদীসকে হাসান বলেছেন।
● তিরমিযী শরীফঃ কিতাবুল মানাকিব (গুণাবলীর বই), মহানবী (ﷺ) এর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত অধ্যায়, হাদীস নং ৩৬০৮/৩৬১৬]
●মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৭৮৮,
●আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-৬৭৫,
●মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩২২৯৬
●বায়হাকীঃ দালায়েলুল নবুওয়াতঃ ১ম খন্ড ১৬৯ পৃ,
●কানযুল উম্মাল ২য় খন্ড ১৭৫ পৃঃ
●খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবিহ, – ৫১৩ পৃ.,
●আশরাফ আলী থানভীঃ শরীয়তের দৃষ্টিতে ঈদে মিলাদুন্নবী (ﷺ) : অধ্যায় ৪ : নবী প্রেমের দাবী : ৪৩ পৃ, বাড কম্প্রিন্ট & পাব্লিকেশনস।
❏ মিলাদুন্নবী (ﷺ) উপলক্ষে কাফির আবু লাহাবের আযাব লাঘব
🕋 হাদিস :
হযরত উরওয়া ইবনে জুবায়ের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,
ﻗﺎﻝ ﻋﺮﻭﺓ ﻭﺛﻮﻳﺒﺔ ﻣﻮﻻﺓ ﻻﺑﻰ ﻟﻬﺐ ﻛﺎﻥ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﺍﻋﺘﻘﻬﺎ ﻓﺎﺭﺿﻌﺖ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻠﻤﺎ ﻣﺎﺕﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﺍﺭﻳﻪ ﺑﻌﺾ ﺍﻫﻠﻪ ﺑﺸﺮ ﺣﻴﺒﺔ ﻗﺎﻝ ﻟﻪ ﻣﺎﺫﺍ ﻟﻘﻴﺖ ﻗﺎﻝ ﺍﺑﻮﻟﻬﺐ ﻟﻢ ﺍﻟﻖ ﺑﻌﺪﻛﻢ ﻏﻴﺮ ﺍﻧﻰ ﺳﻘﻴﺖ ﻓﻰ ﻫﺬﻩ ﺑﻌﺘﺎﻗﺘﻰ ﺛﻮﻳﺒﺔ ০
হযরত সুহাইবাহ (رضي الله عنه) আবু লাহাবের দাসী ছিল। আবু লাহাব ওনার কাছে থেকে [রাসুল ﷺ] এর বেলাদাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হয়ে কৃতদাসী সুহাইবাহ (رضي الله عنه) কে আযাদ করে দিয়েছিল। যখন আবু লাহাব মৃত্যুবরণ করেছিল তখন (এক বছর পর) তার ঘনিষ্ঠদের কেউ [হযরত আব্বাস (رضي الله عنه)] তাকে স্বপ্নে শোচনীয় অবস্থায় দেখে তার উদ্দেশ্যে বলেন,“তোমার অবস্থা কেমন?”
আবু লাহাব উত্তরে বলল, “তোমাদের নিকট থেকে আসার পর আমি কোন প্রকার শান্তি পাইনি, কেবল যে দিন [রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বেলাদতের খুশিতে] দাসী সুহাইবাকে আযাদ করে দিয়েছিলাম, ঐ কারনে প্রতি সোমবার আংগুল দুটির মধ্যে কিছু পানি জমে আমি ঐ পানি পান করে থাকি ঐদিন (জাহান্নামের কঠিন) আযাবকে হাল্কাবোধ করে থাকি।”
তথ্যসূত্রঃ
●সহিহ বুখারী : ২৬৪৪, ২৬৪৫, ২৬৪৬, ৩১০৫, ৪৭৯৬, ৫০৯৯, ৫১০০, ৫১০১, ৫১০৩, ৫১০৬, ৫১০৭, ৫১২৪, ৫১৩৩, ৫২৩৯, ৫৩৭২, ৬১৫৬
●ইমাম আহমদ : মুসনাদে আহমদ : হাদিস ২৫৯৫৩ উক্ত শিরোনামে لو كانت تحل لي لما تزوجتها قد أرضعتني وأباها ثويبة مولاة بني هاشم فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن পুনরায় হাদিস ২৬৮৬৫, মতন :
ابنة أخي من الرضاعة وأرضعتني وأبا سلمة ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن
●ইমাম নাসাঈ : আস সুনানুল কুবরা : হাদিস ৫৩৯৪, ৫৩৯৫
●ইমাম নাসাঈ : আস সুনান আস-সুগরা : হাদিস ৩২৮৪, ৩২৮৫, ৩২৮৬, ৩২৮৭
●ইবনে মাজাহ : হাদিস ১৯৩৯ শিরোনাম( ابنة أخي من الرضاعة أرضعتني وأباها ثويبة فلا تعرضن علي أخواتكن ولا بناتكن)
● মুসলিম : হাদিস ২৬৩৪, ২৬৩৫।
● সহিহ ইবনে হিব্বান : ৪১১০, ৪১১১ হাদিসের মতন :
إن زينب تحرم علي وإنها في حجري وأرضعتني وإياها ثويبة فلا تعرضن علي بناتكن ولا أخواتكن ولا عماتكن ولا خالاتكن ولا أمهاتكن
اطراف الحدیث
●ইমাম বায়হাকী : সুনান আল কুবরা : বিবাহ অধ্যায়।
●জামেউল হাদিস : মাসানিদুস সাহাবা : হাদিস ৪৩৫৪৫।
●ইমাম বাগবি : শরহুস সুন্নাহ : ৯ম খন্ড : ৭৫ পৃ।
●ইমাম হিন্দি : কাঞ্জুল উম্মাল : ৬ খন্ড, হাদিস ১৫৭২৫।
●মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, ৭ম খন্ড, হাদিস ১৩৫৪৬।
●ইমাম আঈনী : উমদাতুল কারী শরহে বুখারী : ১৪ খন্ড, পৃ ৪৫।
●ইমাম ইবনে কাসীর : সিরাত আন নববিয়্যাহ : ১ম খন্ড , পৃ ২২৪।
●শরহে যুরকানী, ১ম খন্ড, ২৬১ পৃ।
●সুবলুল হুয়া ওয়ার রশদ : ১ম খন্ড, ৩৬৭ পৃ।
●ইবনে হাজর আসকালানী : ফতহুল বারী : ৭ম জিলদের ১২৫।
●ইবনুল কাইয়্যুম : তোহফাতুল মাওদুদ বি আহকাম আল মাওলুদ, ১৯ পৃ।
●ইবনে আব্দুল ওহাব, মুখতাসার সিরাতুর রাসূল, মাওলিদুন্নবী।