ওহাবী সম্প্রদায়
এ সম্প্রদায়ের প্রবক্তা মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদী ১১১৪/১৫ হিজরী ১৭০৩ খ্ৰীষ্টাব্দ আরবের নজদ-এর দক্ষিণে “ওয়াদিয়ে হানাফিয়া” র ওয়াইনা নামক স্থানে বনি তামিম গোত্রে জন্মগ্রহণ করে। সহী হাদিসে খারেজী সম্প্রদায় সম্পর্কে বর্ণিত হাদিসে আলোচ্য যুলখোয়াইসারা ও তামীমী গোত্রের কথা উল্লেখ ছিল। এ গোত্রের অবস্থান মদীনা শরীফ থেকে পূর্ব দিকে । এ দিক থেকেই বাতিল ফিরকা হবে বলে হাদিসে মহানবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। শেখ নজদী প্রথম থেকেই মেধাবী ও সুস্থ ছিলো এবং দশ বছর বয়সে কোরআন শরীফ পড়া সমাপ্ত করে। বার বছর বয়সে “বালিগ” (প্রাপ্ত বয়স্ক) হয়। ঐ বছরই তার বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। ছোট বেলায় নিজ পিতার নিকট লেখা পড়া করে। পিতার কাছে “হাম্বলী ফিকাহ” পড়ে। অত:পর লেখা-পড়ার উদ্দেশ্যে একাধিকবার হেজাজ গমন করে। শেখ নজদী উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে মদীনা শরীফে গমন করে। এখানে কষ্টরপন্থী গোড়া গায়রে মুকাল্লিদ শেখ মুহাম্মদ হায়াত সিন্দীর সাথে শেখ নজদীর সাক্ষাৎ হয়। অতঃপর শেখ ইবনে ইব্রাহিম ইবনে সাইফের সাহচর্য লাভ হয়। এ দু’জন ইবনে তাইমিয়ার কিতাব সমূহ দ্বারা লেখ নজদীর ধ্যান-ধারণা পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। (তারীখে নজদ ও হেজায পৃষ্ঠা ২৮-৩০; তারিখে ওহাবীয়া পৃষ্ঠা ৪৬, আদদুরাবচ্ছানীয়া পৃষ্ঠা ৪২)।”
শেখ নজদীর দাদা সুলাইমান ইবনে আলী শরফ হাম্বলী-যুগের প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ছিলেন। তার চাচা ইব্রাহীম ইবনে সুলায়মানও প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন ছিলেন।তার পুত্র আব্দুর রহমান দেশ বরেণ্য ফকীহ, মুফতী ও আরবী সাহিত্যের পন্ডিত ছিলেন। শেখ সাদীর পিতা শেখ ওহাব ইবনে সুলাইমান (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, ওফাত ১৭০৪ খৃষ্টাব্দ) অত্যন্ত নেককার, সুন্নী আক্বীদার বিশ্বাসী বুযর্গ আলেমে দ্বীন, ফকীহ ও ‘ওয়াইনা’ এর ‘কাযি’ (বিচারক) ছিলেন। এক সময়। পিতা শেখ আব্দুল ওহাব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) ও পুত্র শেখ মজদীর মধ্যে আক্বীদাগত বিষয় নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। এ সম্পর্কে মিশরের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা তান্তানাভী জৌহুরী (ওফাত ১৩৫৮ হিজরী) লিখেন, শেখ নজদী স্বীয় পিতার পাঠদান পর্বে উপস্থিত হতো এবং তার দৃষ্টিতে যেগুলোকে বেদআত মনে করতো সেগুলো সম্পর্কে আপত্তি তুলতো । শেখ নজদীর পিতা শেখ আবদুল ওহাব এবং তার সহপাঠিরা সকল জিজ্ঞাসার উত্তর দিতেন এবং বলতেন, ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা-বিরুদ্ধাচারণ করোনা। শেখ নজদী তার পিতার উত্তরে ক্ষিপ্ত হয়ে তর্কে লিপ্ত হতো এবং বলতো বিরোধীতা আমি করবোই। ১১৫৩ খৃষ্টাব্দে শেখ আবদুল ওহাবের ওফাত হলে শেখ নজদী প্রকাশ্যে তার ভ্রান্ত আকীদার প্রচার শুরু করে।(তারীখে নজদ ও হেজায পৃষ্টা-২১-২২)
শেখ নজদীর ভাই শেখ সুলাইমান ইবনে আবদুল ওহাব (ওফাত ১২০৮ হিজরী) স্বীয় পিতার মতো সুন্নী আক্বীদায় বিশ্বাসী ছিলেন তার সম্পর্কে আল্লামা তানতানাভী জৌহুরী বলেন, শেখ আব্দুল ওহাব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি) এর দুই ছেলে যথাক্রমে
(১) মুহাম্মদ (শেখ নজদী) ও
(২) সুলাইমান।
শেখ সুলাইমান প্ৰখ্যাত আলেম ও ফকীহ ছিলেন। “হারি মালায়” পিতার পরবর্তী সময়ে “কাযী’’ পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তার দুই পুত্র ছিল। (১) আব্দুল্লাহ (২) আব্দুল আযীয। এ দু’জন তাকওয়া ও ইবাদতে আল্লাহ তা’আলার নিদর্শন সমূহের অন্যতম নিদর্শন ছিলেন । শেখ সুলাইমান ইবনে আব্দুল ওহাব (রাহমাতুল্লাহি আলাইহিম) সারা জীবন শেখ নজদীর ভ্রান্ত আকীদার বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন । তিনি শেখ নজদীর ভ্রান্ত আকীদার খন্ডনে “আসসাওয়ায়েকুল ইলাহিয়া’ নামে নির্ভরযোগ্য দলীল সম্বলিত কিতাব রচনা করেন। যা সর্ব সাধারণের কাছে বেশ সমাদৃত হয়। (তারীখে নজদ ও হেজাজ পৃষ্ঠা ২৪)।
শেখ নজদী পিতার জীবদশায় “ওয়াইনার” সুন্নী মুসলমানদের প্রবল বিরোধীতার সম্মুখীন হয়ে সেখান থেকে হেজায গমন করেন। এখানে এসে শেখ মুহাম্মদ হায়াত সিন্দী ও ইবনে সাইফের কাছে আহলে হাদিসের শীষ্যত্ব গ্রহণ করায় তার গোমরাহী আরো বৃদ্ধি পায় । এ সম্পর্কে আল্লামা তানতানাভী লিখেন যে, ‘শেখ নজনী বলেন, আমি একদা ইবনে সাইফের নিকট বসেছিলাম। এমতাবস্থায় তিনি আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি কি তোমাকে এসব হাতিয়ার দেখাব যা আমি মাজমাবাসীদের জন্য সংগ্রহ করেছি। আমি বললাম হ্যাঁ । তখন তিনি
আমাকে একটি কক্ষে নিয়ে গেলেন। যে কক্ষটি ইবনে তাইমিয়ার কিতাবে পরিপূর্ণ ছিল । ইবনে সাইফ বললেন, এগুলো ঐ হাতিয়ার যা আমি মাজমাবাসীদের জন্য সংগ্রহ করেছি। ইবনে সাইফ ও মুহাম্মদ হায়াত সিন্দী- মূলতঃ শেখ নজদীকে ইবনে তাইমিয়ার ভ্রান্তিপূর্ণ রচনাবলীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আর সে থেকেই শেখ নজদী ভ্রান্তি থেকে ভ্রাপ্তির অতল গহবরে তলিয়ে যেতে থাকে । উল্লেখ্য যে, যে সকল মুসলমান নবী করিম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের শাফায়াত, উসিলা গ্রহণ এবং বুজর্গানে দীনের সম্মানকে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জায়েয মনে করে তাদেরকে শেখ মুহাম্মদ হায়াত সিন্দী কাফির বলে আখ্যায়িত করে। যেসব আয়াত মুশরিকদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে ঐগুলোকে মুসলমানদের বেলায় প্রয়োগ করত । (তারিখে নাজদ ও হেজাজ পৃষ্ঠা ৩০-৩১) (বোখারী শরীফে হযরত আন্দুল্লাহ ইবনে ওমর কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে এটা খারেজীদের গোমরাহির অন্যতম কারণ। হাদিসের আলোকে।খারেজীদের অধ্যায় দেখুন)।
অতঃপর ‘ওনূওয়ানুল মাজদ ফী তারীখে নজদ “-এর প্রণেতা ওসমান ইবনে বশর (ওফাত ১২৮৮ হিজরী)’র বর্ণনা শুনুন, একদা শেখ নজদী হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা শরীফের সামনে দণ্ডায়মান হয়ে দেখতে পেল যে, লোকজন হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের উসিলায় প্রার্থনা করছে। তখন শেখ নজদী শেখ মুহাম্মদ হায়াত সিন্দীকে উদ্দেশ্য করে বলল, এসব মানুষ সম্পর্কে আপনার মতামত কি? উত্তরে শেখ হায়াত কোরআন পাকের নিম্নোক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন-
ان هولاء متبر ما هم فیه وباطل ما کانوا یعلمون-
অর্থাৎ এরা ধ্বংস হবার, আর এদের আমল সমূহ বাতিল । (তারিখে নজদ ও হেজায পৃষ্ঠা ২৯, তারীখে ওহাবীয়া ৪৬-৪৭,কিতাবুত তাওহিদ এর ভূমিকা পৃষ্ঠ১১)
অতঃপর মদীনা শরীফের সুন্নী মুসলমানদের নিকট তার স্বরূপ উন্মোচিত হলে সে মদীনা শরীফ ত্যাগ করে ‘বসরা’ গমন করে। সেখানে শেখ মুহাম্মদ মাজমূয়ী নামক এক গায়রে মুকাল্লীদ আলেমের নিকট কিছুদিন অবস্থান করে। এখানে সে।উপরোক্ত বিষয় সমূহের (উসিলা গ্রহণ ও শাফায়াত কামনা) কারণে মুসলমানদেরকে শিরক, কুফরের ফতোয়া দিতে শুরু করে। অবশেষে এখান থেকেও বিতাড়িত হয়ে সিরিয়া’ যাওয়ার মনস্থ করে। কিন্তু সহায় সম্বলের স্বল্পতার কারণে সিরিয়া যাওয়ার পরিবর্তে পুনরায় “হুরাইমালার” ফিরে যায়। এখানেও তার ভ্রান্ত আক্বীদার প্রচার শুরু করলে চারিদিকে প্রতিবাদের ঝড় উঠে এবং অনসাধারণের প্রবল চাপের মুখে পৈত্রিক শহর ‘ওয়াইনায় ’ চলে যায়। ওয়াইনার গভর্ণর আমীর ওসমান ইবনে মুয়াম্মারের সাথে সাক্ষাৎ করে এ পরিকল্পনা দিলো যে, আমীর যদি তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে সফল হয় তাহলে অনতিবিলম্বে তিনি ওয়াইনার বাদশা হয়ে যাবেন। এতে খুশী হয়ে আমীর মুয়াম্মার কন্যা “জোহরা’র সাথে শেখ নজদীর বিয়ের ব্যবস্থা করলেন। অতঃপর শেখ নজদী প্রশাসনিক পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে তার মনগড়া দর্শন প্রচারে আরো অধিক সোচ্চার হয় এবং ওয়াইনার মুসলমানদেরকে শক্তি প্রয়োগ করে ওহাবী বানানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়। ফলে যারা তার আন্ত আক্বীদা কবুল করে তার দলে যোগ দিতো সে সকল প্রকার যুলুম নিপীড়ন থেকে রেহাই পেতো। আর যেসব ঈমানদার তার ভ্রাপ্ত আক্বীদা গ্রহণ করতো না তাদের উপর কঠোর শান্তি প্রয়োগ করা হতো; এতেও যদি ঈমানদারগণ তার ভাত আক্বীদা গ্রহণ করতে সম্মত না হতো তাদেরকে কঠোর শাস্তি দিতো এবং তাদের ধনসম্পদ ছিনিয়ে নিত। এমনি করে সে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে কিছু অনুসারী তৈরী করে। (তারীখে নজদ ও হেজায ৪০-৪১ পৃষ্ঠা, তারীখে ওহাবীয়া পৃষ্ঠা ৪৮-৪৯)।
➖➖➖
শেখ নজদীর সর্বপ্রথম কর্মকাণ্ড
শেখ নজদী তার ওহাবী আন্দোলনের সুদূর প্রসারী কর্মসূচী সাহাবা কেরামের মাজার শরীফ ভাঙ্গার মধ্য দিয়ে সূচনা করে। এ সম্পর্কে ওসমান ইবনে বশর বলেন, ১৪ হিজরীতে মুসাইলামা কাযযাব নামক ভন্ডনবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে হযরত যায়েদ ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহ শহীদ হন। শেখ নজদী সর্ব প্রথম সেই হযরত যায়েদ ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মাজার শরীফ ভাঙ্গার দৃঢ় ইচ্ছে পোষণ করলো । অতঃপর আমীর ওসমানের সম্মতিক্রমে ছয়শত সৈন্য নিয়ে ‘জাবীলা’ নামক স্থানে যায়েদ ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মাজার শরীফ আক্রমণ করে স্বহস্তে ভেঙ্গে নিশ্চিহ্ন করে দেয়।
(তারীখে নজদ ও হেজায পৃষ্ঠা-৪২; তারীখে ওহাবীয়া পৃষ্ঠা ৪৯; কিতাবুত তাওহিদ পৃষ্ঠা ১৩)।
অতঃপর শেখ নজদী আরো শক্তিশালী পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজনে ‘দেরঈয়া’ গমন করে তার একান্ত অনুগত শিষ্য ইবনে সুয়াইলামের মাধ্যমে দেরঈয়ার গভর্ণর মুহাম্মদ ইবনে সউদের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে তার সার্বিক সহযোগিতা কামনা করে। প্রথমদিকে ইবনে সউদকে সম্মত করতে ব্যর্থ হয়ে তার স্ত্রীর মাধ্যমে অমীর মুহাম্মদ ইবনে সউদকে সম্মত করতে সক্ষম হয়। (তারিখে নজদ ও হেজাজ পৃষ্ঠা ৪৩)।
এ মুহাম্মদ ইবনে সউদ-ই হলেন বর্তমান সউদ রাজ পরিবারের পূর্ব পুরুষ । তারই নামানুসারে নামকরণ করা হয় সউদী আরব। সূচনালগ্ন থেকেই শেখ নজদী সউদ রাজপরিবারের উপর প্রভাব বিস্তার করে যা বর্তমানেও অব্যাহত রয়েছে। এখানে ওহাবী মতবাদের পুরো ইতিহাস বর্ণনা করা সম্ভব নয় এবং উদেশ্যও নয়। এখানে ওহাবী সম্প্রদায়ের সামান্য পরিচিতি এবং তাদের ধ্যান-ধারণা ও মতবাদ তুলে ধরাই মূল উদ্দেশ্য।
★ওহাবী সম্পর্কে অভিমত
নিম্নে ওহাবী মতবাদ সম্পর্কে বিশ্ব বরেণ্য কয়েকজন আলেমের অভিমত উপস্থাপন করছি।
• হযরত আল্লামা শামী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ফতোয়-এ-শামীর সংকলক )
হযরত আল্লামা শামী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদীর অনুসারীগণ, যারা নজদ থেকে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং হারামাইন (মক্কা ও মদীনা শরীফ)-এর উপর দখল বিস্তার করেছে। তারা নিজেদেরকে হাম্বলী বলে দাবী করে, কিন্তু তাদের আক্বীদা বা বিশ্বাস হলো, মুসলমান শুধু তারাই; যারা তাদের আক্বীদার বিরোধীতা করে তারা মুসলমান নয়, বরং মুশরিক। এরই ভিত্তিতে তারা (ওহাবীগণ) “ওলামায়ে আহলে সুন্নাতকে হত্যা করা জায়েয মনে করে । ” (ফতোয়া-এ-শামী, বাবুল বোগত; তারীখে নজদ ও হেজায পৃষ্ঠা ১২২ ও তারীখে ওহাবীয়া পৃষ্ঠা ৬৬।)
• হযরত আল্লামা শেখ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ আসসাবী মালেকী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
তিনি পবিত্র কোরআনের আয়াত –
ان الشیطان لکم عدو فاتخذه عدوا
অর্থাৎ নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের দুশমন। সুতরাং তোমরা তাকে দুশমন হিসেবে গ্রহণ করো। এর ব্যাখ্যায় খারেজীদের দৃষ্টান্ত পেশ করতে গিয়ে বলেন, বর্তমানে যে ফিরকা বা দল হেজাজে আত্মপ্রকাশ করেছে, যাদেরকে ওহাবী বলা হয়। তাদের ধারণা তারাই হকের উপর প্রতিষ্ঠিত। প্রকৃত পক্ষে এরা মিথ্যাবাদী। (তারীখে ওহাবীয়া পৃষ্ঠা ৬৫)
মসজিদে হারামের অন্যতম শিক্ষক আল্লামা সৈয়দ আহমদ ইবনে যি’নী দাহলান শাফেয়ী মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ওফাত ১৩০৪ হিজরী) শেখ নজদী সম্পর্কে বলেন, শেখ নজদী বলতেন, হিজরী ষষ্ঠ শতাব্দী থেকে এ পর্যন্ত সবাই শিরকে লিপ্ত। সে মানুষের জন্য দ্বীনকে সংস্কার করেছে। যখন কেউ তার ধর্মে যোগদান করত এ অবস্থায় যে, ঐ ব্যক্তি পূর্বে হজ্ব আদায় করেছে, তখন তাকে বলত-পুনরায় হজ্ব কর; কারণ, প্রথম হজ্ব মুশরিক অবস্থায় আদায় করেছ; “তোমার হজ্ব আদায় হয়নি। বাইরের কেউ তার অনুসারী হলে তাকে বলত মুহাজির, আর এলাকার কেউ তাকে অনুসরণ করলে তাকে বলত আনসার । এতে বুঝা যায় যে,শেখ নজদী নবুওয়্যাতের দাবীদার। কিন্তু স্পষ্ট ভাষায় দাবী করার সাহস পায়নি। যদি সম্ভব হতো তাও দাবী করত। সে তার অনুসারীদের বলত, আমি তোমাদের জন্য নতুন দ্বীন এনেছি। (আদদুরারুস সানীয়া পৃষ্ঠা ৪৬ ও ৪৭, ইস্তাম্বুল; ফিতনাতুল ওহাবীয়া পৃষ্ঠা ৬৭ ইস্তাম্বুল, তুর্কী)।
➖➖➖
নজদী ওহাবী আক্বীদা ও আকায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের তুলনামূলক আলোচনা
★নজদী ওহাবী আক্বীদা-০১
আল্লামা আবু হামেদ ইবনে মারযুক বলেন, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদীর মৌলিক ভ্রান্ত আক্বীদা চারটি। আল্লাহ তাআলাকে সৃষ্টির মত মনে করা। অর্থাৎ পবিত্র কোরআনে বর্ণিত আল্লাহর হাত, চেহারা ইত্যাদির শাব্দিক অর্থ গ্রহণ করে আল্লাহ তা’আলাকে দেহ বিশিষ্ট মনে করা। (আততাওয়াসসুল বিন্নবী ওয়া জাহালাতুল ওয়াহাবীয়ীন, পৃষ্ঠা ১)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
সুন্নীদের মতে, আল্লাহ তা’আলার মত কোন বস্তু নেই। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলার ক্ষেত্রে বর্ণিত- হাত ও চেহারা ইত্যাদি আয়াতে মোতাশাবাহ। এগুলোর উপর ঈমান রাখতে হবে এবং আল্লাহর জন্য শোভনীয় পন্থায় অর্থ গ্রহণ করতে হবে।
তাওহিদ দুই ভাগে বিভক্ত;
(১) তাওহিদে উলুহিয়াত,
(৪) তাওহিদে রাবুবীয়াত।
এ দু’তাওহিদ সমার্থক নয়। শেখ নজদীর মতে তাওহিদে রাবুবীয়াত দ্বারা মুসলমান হবে না। কাশফুশ শোবহাতে বলেন-
عرفت ان اقرارهم بتوحید الربوبتة لم یدخلهم فی الاسلام وان قصدهم الملائکة والانبیاء والاولیاء ویدعودن شفاعتهم والتقرب الی الله بذالک هو الذی احل دماء هم واموالهم
অর্থাৎ তুমি জানতে পেরেছ যে, এদের (মুসলমানদের) তাওহিদে রাববীয়াতকে অর্থাৎ এক আল্লাহ তা’আলাকে রব (প্রতিপালক) স্বীকার করা তাদেরকে ইসলামে প্রবেশ করাবে না। ফেরেস্তা,নবী ও অলীগণের শাফায়াত প্রার্থনা করা এবং তাদের সম্মানের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার (বিশ্বাস) ফলে তাদের জান-মাল লুট করা হালাল হয়ে গেছে। (তারীখে নজদ ও হেজাজ, পৃষ্ঠা ৩৮; আততাওয়াসসূল বিন্নবী ওয়া জাহালাতুল ওহাবীয়ীন, পৃষ্ঠা ১)।
প্রথমতঃ হুযুর করিম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবা কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীনের সময় তাওহিদের এ প্রকারভেদ ছিল না। তাছাড়া হুযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফিরদেরকে দু’ধরণের তাওহিদের কোন আহবান জানান নি।
দ্বিতীয়তঃ তাওহিদে উলুহিয়াত ও তাওহিদে রুবুবীয়াত উভয় এক ও অভিন্ন। সুন্নীদের আকীদা যিনি ইলাহ (ম বুদ), তিনিই রব (প্রতি পালক)। অনুরূপ যিনি রব, তিনিই ইলাহ । সুন্নীদের বিশ্বাস বিশুদ্ধ হাদিসের আলোকে কবরে জিজ্ঞেস করা হবে من ربك؟“তোমার রব কে?” উত্তরে ربی الله “আল্লাহ আমার রব” বলতে হবে। এখানে উলুহিয়াতের পৃথক কোন প্রশ্ন হবে না। এতে প্রমাণিত হয় উভয় তাওহিদ এক ও অভিন্ন। এটাকে ভিন্নভাবে দেখা মুসলমানদেরকে কাফির বানানোর কুট-কৌশল মাত্র।
★নজদী ওহাবী আক্বীদা-০২
নবী করিম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্মান না করা। (তারীখে নজদ ও হেজাজ, পৃষ্ঠা ১৫৮; আততাওয়াসসুল বিন্নী ওয়া আইলাতুল ওয়াহাবীয়ীন পৃষ্ঠা ১ম)। এটি অত্যন্ত বাস্তব; কারণ, এ পর্যন্ত ওহাবীগণ এ সব বিষয়ে সর্বাধিক আপত্তি উত্থাপন করেছে, যেগুলো হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভুক্ত। শেখ নজদী এটাকে তাওহিদের
হেফাযত ও সংরক্ষণ বলে ব্যাখ্যা করতেন। আদদুরারুসসানীয়া় পৃষ্ঠা ৪১)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাামের প্রতি সর্বাধিক সম্মান প্রদর্শন ঈমানদারের উপর ফরয। পবিত্র কোরআনে পাকে আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন-
و تعزروه و توقروه
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অধিক সম্মান করো।
★নজদী ওহাবী আকীদা-০৩
তাকফীরুল মুসলেমীন অর্থাৎ মুসলমানদেরকে কাফির বানানো। (তারীখে নজদ হেজায পৃষ্ঠা ১৫৮; আততাওয়াসসসুল বিন্নবী ওয়া জাহালাতুল ওয়াহাবীয়ীন পৃষ্ঠা ২)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
অাল্লামা সৈয়দ আহমদ ইবনে যি’নী দাহলান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদী “দেরঈয়া” এর মসজিদে প্রত্যেক খোতবায় বলতেন, যে ব্যক্তি নবীর উসিলা গ্রহণ করবে, নিশ্চয়ই সে কাফির হয়ে যাবে। একদা তার ভাই শেখ সুলাইমান ইবনে আব্দুল ওহাব রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ইসলামের রুকন বা ভিত্তি কয়টি? শেখ নজদী বললেন, পাঁচটি। তখন শেখ সুলাইমান বললেন, আপনি ছয়টিতে পরিণত করেছেন। ষষ্ঠটি হলো-যে ব্যক্তি আপনার অনুসরণ করবে না সে মুসলমান নয়।
তখন তিনি কোন উত্তর দিতে পারলেন না। (আৰ্দদুরারুসসানীয়া, পৃষ্ঠা ৩৯)
এই চারটি অক্বীদার সবগুলোই শেখ নজদী ইবনে তাইমিয়ার কিতাব থেকে গ্রহণ করেছেন। (তারীখে নজদ ও হেজায, পৃষ্ঠা ১৫৮; আত তাওয়াসসুল বিন্নবী ওয়া জাহালাতুল ওয়াহাবীয়ীন, পৃষ্ঠা ২)।
কোন মুসলমানকে কোন গুনাহর কারণে, এমনকি তা যদি কবীরা গুনাহও হয় কাফির বলা যাবে না। যতক্ষণ কোন মুসলমানের মধ্যে কুকরী নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে কাফির বলা যাবে না। কোন মুসলমানকে কাফির বললে ফতোয়া দাতাই কাফির হয়ে যাবে। আর যখন কোন মুসলমানের কুফুরী নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হবে, তখন যে ব্যক্তি, তার কুফরী ও স্থায়ী আযাব প্রাপ্তির বিষয়ে সন্দেহ পোষণ করবে, সেও কাফির হয়ে যাবে। কিতাবুশ শেফা,কৃতঃ আল্লামা কাজী আয়ায মালেকী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)।
★নজাদী ওহাবী আকীদা-০৪
শেখ নজদী হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ শরীফ পাঠ থেকে বিরত থেকে বলতেন দরুদ শরীফের ধ্বনিতে তিনি কষ্টবোধ করতেন। বিশেষতঃজুমার দিন দরূদ শরীফ পাঠ নিষেধ করতেন। মসজিদের মিনারায় উচ্চ স্বরে দরুদ শরীফ পাঠ নিষেধ করতেন। যে ব্যক্তি তার নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে দরুদ শরীফ পাঠ করত, তাকে কঠোর শাস্তি দিত। একজন পূণ্যবান সুন্দর কঠের অধিকারী অন্ধ মুয়াযযিন মিনারায় আযানের পর দরুদ শরীফ পাঠ করতেন। শেখ নজদী উক্ত মুয়াযযিনকে দরুদ শরীফ পাঠ নিষেধ করলে মুয়াযিন তার নির্দেশ অমান্য করে পুনরায় দরুদ শরীফ পাঠ করলে শেখ নজদী তাকে হত্যা করে। শেখ নজদী এ প্রসঙ্গে বলত, মসজিদের মিনারায় দরুদ শরীফ পাঠ গুনাহ, একজন পতিতার ঘরে বাদ্যবাজনার মতই। শেখ মজাদী-দালায়েলুল খায়রাত ও অন্যান্য দরুদ শরীফের অনেক কিতাব জ্বালিয়ে দিয়েছেন। (নাউযুবিল্লাহ)। আদদুৱারুসসানীয়া পৃষ্ঠা ৪১, আততাওয়াসসুল বিন্নবী ওয়া জাহালাতুল ওয়াহাবিয়িন পৃষ্ঠা ২৪৪; ফিতনাতুল ওহাবীয়া পৃষ্ঠা ৭৭; তারীখে ওহাবীয়া, পৃষ্ঠা ৬৩; তারীখে নজদ ও হেজায পৃষ্ঠা ১৫৮)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
জীবনে একবার দরুদ শরীফ পাঠ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয। হুযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম মুবারক শ্ৰবণে প্রথমবার দরুদ শরীফ পাঠ করা ওয়াজিব। অতঃপর প্রত্যেকবার নাম মুবারক শ্রবণে দরুদ শরীফ পাঠ করা মুস্তাহাব। তাঁর মুবারক নাম শ্ৰবণে যে ব্যক্তি দরুদ শরীফ পাঠ করে না, পবিত্র হাদিসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বড়
কৃপণ বলেছেন। (মিশকাত শরীফ )। হাদিস শরীফে জুমার দিন অধিক পরিমান দরুদ শরীফ পাঠের নির্দেশ এসেছে। (মিশকাত শরীফ)। সুতরাং জুমার দিনের দরুদ শরীফ পাঠ অধিক সাওয়াবের কাজ। দরুদ শরীফ পাঠের বৈধ ক্ষেত্রে বাধা দান, শাস্তি দান, হত্যা,দরুদ শরীফের কিতাব জ্বালিয়ে দেয়া ও অবমাননাকর উক্তি, নিঃসন্দেহে পবিত্র কোরআনের বর্ণিত দরুদ শরীফ পাঠের আদেশ সূচক আয়াতের অস্বীকার ও মহানবী সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান মর্যাদায় চরম অবমাননা, বিধায় এটা কুফরী। অধিক সংখ্যক দরুদ শরীফ পাঠকারী কেয়ামতের কঠিন দিবসে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সর্বাধিক নিকটে অবস্থান করবে । মিশকাত শরীফ)। দরূদ শরীফ পাঠের ফযিলত ও সাওয়াব সম্পর্কে অসংখ্য বিশুদ্ধ হাদিস বর্ণিত। তাই সুন্নী মুসলমানগণ অধিক সংখ্যায় দরুদ শরীফ পাঠ করে থাকেন।
★নজদী ওহাবী আক্বীদা-০৫
শেখ নজদী পবিত্র কোরআনের মনগড়া তাফসীর করতেন। অনুরূপভাবে তার অনুসারীদেরকেও এর অনুমতি দিতেন। আর যদি কোরআনের কোন আয়াত তাদের জানা না থাকত তবে নিজেদের মনগড়া তাফসীর মোতাবিক আমল করার নির্দেশ দিতেন। ফিকাহ, তাফসীর ও হাদিসের কিতাব সমূহ পাঠে তার অনুসারীদেরকে নিষেধ করতেন। এ ধরণের অনেক কিতাব শেখ নজদী জ্বালিয়ে দিয়েছেন। মনগড়া মতামতকে নির্ভরযোগ্য কিতাব ও বিজ্ঞ ওলামাদের মতামতের উপর প্রাধান্য দিতেন। চার মাযহাবের ইমামগণের মতামতকে ‘কিছুই নয়” বলে উড়িয়ে দিতেন। তিনি কখনো বলতেন, শরীয়ত এক, সুতরাং চার মাযহাব কিসের? আবার কখনো নিজেকে হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী হিসেবে প্রকাশ করতেন। তার মূলনীতি ছিল “হক ওটা, যা তার মনপূতঃ যদিও শরীয়তের দলীল সমূহ ও ইজমা-এ-উম্মতের পরিপন্থী হয়। আর বাতিল ওটা, যা তার মনপূতঃ নয়৷” ( আদদুরারুসসানীয়া পৃষ্ঠা ৪১ ও ৪২: আততাওয়াসসুল বিন্নবী ওয়া জাহালাতুল ওয়াহাবীয়া পৃষ্ঠা ২৪৪ ও ২৪৫; তারীখে নজদ ও হেযাজ পৃষ্ঠা ১৫৯ তারীখে ওহাবীয়া পৃষ্ঠা ৬২)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত
পবিত্র কোরআনের মনগড়া ও ভিত্তিহীনভাবে তাফসীর করা হারাম ও নিষিদ্ধ। (এতকান ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৭৩)।
হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি কোরআন শরীফের মনগড়া তাফসীর করল, সে তার স্থান জাহান্নামে করে নিল” (তিরমিযী শরীফ ২য় খন্ড,পৃষ্ঠা ১৯)
সাহাবা কেরাম মনগড়া তাফসীরের ক্ষেত্রে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করেছেন। পবিত্র কোরআনের তাফসীর করতে হলে তার পনেরটি বিষয়ের জ্ঞান থাকতে হবে। অন্যথায় তাফসীর বা ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে ভুল হবার সম্ভাবনা থাকবে। অপর হাদিসে বর্ণিত, “কোন ব্যক্তি নিজস্ব ধ্যান-ধারণা মত তাফসীর করল, অতঃপর সেটা সঠিক প্রমাণিত হল। তারপরও সে নিঃসন্দেহে ভুল করল । (তিরমিযী শরীফ ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১১১)। মনগড়া তাফসীর দ্বারা নিজেও গোমরাহ হবে এবং অপরকেও গোমরাহ করবে। তাফসীর বা ব্যাখ্যা হতে হবে বিশুদ্ধ হাদিস ও আরবী ব্যাকরণ, অলংকারশাস্ত্র ইত্যাদির বিধি নিয়মের আলোকে; অন্যথায় মনগড়া বলে বিবেচিত হবে। ইমাম মুজতাহিদগণের মতামতের তোয়াক্কা না
করাও গোমরাহির পরিচয় । চার মাযহাবের ইখতেপাফ বা মতানৈক্য মৌলিক নয়, বরং তাদের এ ইখতেলাফ উম্মতের জন্য রহমত ও কল্যাণ স্বরপ।
★নজদী ওহাবী আক্বীদা-০৬
নবী-ওলীদের উসিলা গ্রহণ শিরক । এমনকি নবীকুল শিরোমণি হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের উসিলা গ্রহণও শিরক। যারা উসিলা গ্রহণ করে তারা মুশরিক। ফিতনাতুল ওহাবীয়া ” ৬৬; আততাওয়ানসসূল বিন্নবী ওয়া জাহালাতুল ওয়াহাবীয়ীন পৃষ্ঠা২৪৭)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
নবী-অলীগণের উসিলা জায়েয এর পক্ষে কোরআন-সুন্নাহর অসংখ্য দলীল বিদ্যমান। নবী করিম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের উসিলা আল্লাহ তাআলার নিকট সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত-
یا ایها الذین امنوا اتقوا الله وابتغوا الیه الوسیلة
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ। আল্লাহকে ভয় কর এবং তার নিকট উসিলা তালাশ কর। বিস্তারিত অবগতির জন্য দেখুন-জা আল হক আল, বাচাঈর; ইস্তাম্বুল; আততাওয়াসসুল বিন্নবী ইস্তাম্বুল, তুর্কী; রহমতে খোদার উসিলা এ আউলিয়া ইত্যাদি।
★নজদী ওহাবী আকীদা-০৭
হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লমের রওজা শরীফ, নবী-অলীগণের রওজা শরীফের যিয়ারত শিরক এবং এতদুদ্দেশ্যে সফর করা বিদআত। (ফিতনাতুল ওহাবীয়া পৃষ্ঠা ৬৬; আততাওয়াসসূল বিন্নবী পৃষ্ঠা ১১১)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
ইসলামী শরীয়তে কবর যিয়ারত সুন্নাত; আর হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিয়ারত উত্তম ইবাদত ও সর্বোত্তম মুস্তাহাব, বরং ওয়াজিবের কাছা কাছি। (নুরুল ইজাহ, পৃষ্ঠা ১৮১)। অনুরূপভাবে অপরাপর নবী আলাইহিমুস সালাম ও আউলিয়া কেরামের মাজার শরীফ যিয়ারত সুন্নাত এবং সাওয়াবের কাজ। বিস্তারিত দেখুন-জা’আল হক শেফাউচ্ছেকাম, ইস্তাম্বুল, তুর্কী।
★নজদী ওহাবী আক্বীদা-০৮
উসীলা গ্রহণের বেলায় হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী-অলীগণকে আহবান করা (যেমন ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ইয়া গাউসে আযম দস্তগীর ইত্যাদি) শিরক। ফিতনাতুল ওহাবীয়া পৃষ্ঠা ৬৬)।
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
উসিলা গ্রহণের বেলায় ইয়া রাসুলাল্লাহ বলা নিসন্দেহে যায়েয। হুজুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক আন্ধ ব্যক্তিকে চোখ ফিরিয়ে পেতে যে পদ্ধতি শিখিয়ে দিয়েছেন, তন্মধ্যে স্বয়ং তিনি এভাবেই আহবান করতে বলেছিলেন। অনুরূপ ভাবে সাধারণ মুসলমানদের কবর যিয়ারতের বেলায়ও বর্ণিত আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল কুবুুর। তিরমিযী শরীফ)। বিস্তারিত দেখুন জা’আল হক; আনওয়ারুল ইন্তেবাহ ফী হিল্লে নেদায়ে ইয়া রাসুলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম। ফতোয়া-এ-আলমগীরি, কছীদায়ে বোরদা,কছিদায়ে ইমাম জয়নুল আবেদীন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু, কছিদা নোমান (আবু হানিফ রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু) ইত্যাদি।
★নজদী ওহাবী আক্বীদা-০৯
হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-নবী ও অলীগণের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা ও শাফায়াত কামনা করা শিরক। ফিতনাতুল ওহাবীয় পৃষ্ঠা ৬৭)
★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত
মুসিবতের সময় আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের সাহায্য প্রার্থনা করা জায়েয। হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের কেউ কোন বস্তু হারিয়ে ফেলবে, আর সাহায্য চাইবে এমতাবস্থায় যে, সেখানে কোন আপনজন নেই। তখনই এভাবে আহবান করবে, হে আল্লাহর বান্দাগণ। আমাকে সাহায্য করুন। নিশ্চয় আল্লাহর এমন কিছু বান্দা আছেন যাদের তোমরা দেখনা। (আমলুল ইয়াওম ওয়াল লাইলাঃ ইমাম আবু বকর ইবনুচ্ছুমী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, আলকালিমাতুত তাইয়্যিব ইবনুল কাইয়ুম ফিতনাতুল ওহাবীয়া, পৃষ্ঠা ৭) বিস্তারিত দেখুন জা’আল হক, আল ইস্তেমদাদ কৃত: ইমাম আহমদ রেযা খান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি; শেফাউচ্ছেকাম কৃত: ইমাম তকীউদ্দীন ছুবকী ইত্যাদি।
শাফায়াতের ক্ষেত্রে শেখ নজদী যেসব আয়াতের আশ্রয় গ্রহণ করেছে সেসব আয়াত মূর্তি পূজক মুশরিকদের সম্পর্কে অবতীর্ণ। এসব আয়াতকে ঈমানদার মুসলমানদের উপর প্রয়োগ করা খারেজীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুমা। (বোখারী শরীফের ২য় খন্ড খারেজীদের বর্ণনা অধ্যায়)। খারেজী সম্পর্কে হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমার বর্ণিত হাদিস অক্ষরে অক্ষরে আজও সত্য প্রমাণিত হচ্ছে।
➖➖➖
শেখ নজদীর রচনাবলী
(১) কিতাবুত তাওহীদ,
(২) কাশফুশ শোবহাত,
(৩) কোরআন শরীফের কিছু অংশের পাদটীকা মাসায়েল।
(৪) কিতাবুল কাবায়ির,
(৫) মাসায়েলুল জাহেলীয়া ও
(৬) ফাওয়ায়েদু দ্দিরাতিন নববীয়া।
(কিতাবুত তাওহীদ এর ভূমিকা পৃষ্ঠা ১৬)।
ওহাবীরা বলে বেড়ায় যে, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদীর অনুসারীদেরকে ওহাবী বলা শুদ্ধ নয়। কারণ, এ মতবাদের প্রবক্তার নাম মুহাম্মদ, আবদুল ওহাব নয়। অতঃপর যাদেরকে ওহাবী বলা হয়, তারা এ নামে পরিচিত হতে চায়না এবং এ পরিচয় দেয় না। (কিতাবুত তাওহীদের ভূমিকা পৃষ্ঠা ২০)।
• এ আপত্তির একাধিক উত্তর হচ্ছে-
প্রথমতঃ কোন মাযহাবের প্রবক্তার নামে মাযহাবের নাম করণ না হওয়ার দৃষ্টান্ত স্বয়ং হাম্বলী মাযহাব। হাম্বলী মাযহাবের ইমামের নাম-আহমদ। আর হাম্বল হলেন তার দাদার নাম । সুতরাং দাদার নামে মাযহাবের নাম করণ হতে পারলে পিতার নামে নাম করণ হতে আপত্তি কি? একইভাবে ‘ওহাবী মতবাদ’ শেখ নজদীর পিতার নামে নাম করণ করা হয়েছে।
দ্বিতীয়তঃ শেখ নজদীর নামে তার মতবাদের নামকরণ করতে গেলে, মুহাম্মদী বলতে হবে। তখন প্রিয় নবীর মুবারক নামের অবমাননার সম্ভাবনা থাকত। ওহাবী মতবাদ নিঃসন্দেহে বাতিল। ‘মুহাম্মদী’ শব্দ উচ্চারণ পূর্বক এ ধরণের মন্তব্য করা কোন ঈমানদারের পক্ষে সম্ভব হতো না। অর্থাৎ মুহাম্মদী মতবাদ বা আক্বীদা বাতিল এটা উচ্চারণ করাও দুষ্কর হয়ে পড়ত।
তৃতীয়তঃ তখন শেখ নজদীর অনুসারীগণ নিজেদেরকে মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের একান্ত অনুসারী দাবী করার একটা সহজ সুযোগ হত।
চতুর্থতঃ শেখ নজদীর অনুসারীগণ নিজেদেরকে ওহাবী পরিচয় দিতে অস্বীকৃতীর কারণ নামের জটিলতা নয়, বরং নিজেদের ভ্রান্তিকে গোপন করার উদ্দেশ্যে।