কিতাবঃ ইসলামের মূলধারাঃ (পর্ব ১৫) মওদুদী/জামাতে ইসলামের ভ্রান্ত মতবাদ

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

মওদুদী মতবাদ
মওদুদী মতাবলম্বীদের রাজনৈতিক সংগঠন-জামাতে ইসলামী প্রতিষ্ঠাতা পাকিস্তানের মৌং আবুল আলা মওদুদী। যিনি মাসিক “তরজমানুল কোরআন হায়দারাবাদ” এর সম্পাদক থেকে জামাতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় আমীর হন এবং রাজনৈতিক ও ইসলামী শরীয়তে বিভিন্ন বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বিংশ শতাব্দীর বিতর্কিত ব্যক্তিতে পরিণত হন। বিশ্ব ওলামা যেসব কারণে মৌং মওদীর সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন তন্মধ্যে ইসলামী আাঈদ ও শরীয়তের বিভিন্ন বিষয় প্রাধান্য পেয়েছেন। তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ও তৎপূর্ব অবস্থায় তিনি ইসলাম ও মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয়ে গঠনমূলক বক্তব্যের কারণে সাধারণ মুসলমান ও ওলামা কেরামের নিকট যেভাবে প্রশংসিত হয়েছিলেন পরবর্তী সময়ে একই বিষয়ে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি, মনগড়া ব্যাখ্যা, নবী-রাসুল, সাহাবা, তাবেয়ীন, তবে তাবেঈন, আইম্ম্যায়ে মুজতাহেদীন, চার ইমাম, মুজাদ্দিদগণ, আউলিয়া কেরাম সম্পর্কে মানহানিকর উক্তির ফলে সেভাবে বিতর্কিতও হয়েছেন। আকর্ষণীয় ও ইসলামী গবেষণালব্ধ প্ৰবন্ধ সমূহ অনেক আলেমকে তার প্রতি অন্ধভক্তে পরিণত করে। অনেকে শুধুমাত্র তার প্রবন্ধ পড়ে তাকে না দেখেও তার একান্ত সমর্থক হয়ে পড়েন। তন্মধ্যে মাওলানা মুহাম্মদ মানযুর নোমানী অন্যতম ।নোমানী “মাসিক তরজমানুল কোরআন” পাঠে রীতিমত অভ্যস্থ হয়ে গেলেন এবং মওদুদীর মাধ্যমে একটি সফল ইসলামী আন্দোলন হতে পারে বলে দৃঢ় বিশ্বাস করতে লাগলেন। অতঃপর নোমানী মওদূদীর সাথে পত্র মারফত সম্পর্ক স্থাপন করেন। ইতোমধ্যে মওদুদী ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষ্যে অকৃত্রিম ইসলামী আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা মুসলমানদের নিকট পেশ করে মাসিক তরজমানুল কোরআনের মাধ্যমে। নোমানী বলেন, আমি এতে তার সাথে একমত ছিলাম। অতঃপর মওদুদী পত্রলিখে আমাকে জানালেন যে, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য হায়দারাবাদ অনুকূল ক্ষেত্র নয়। একারণে আমি পাঞ্জাবে অবস্থান ও এ পরিকল্পনার কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি স্থান নির্ণয় করেছি এবং এখানে স্থানান্তরিত হবার কারণে আমি ব্যস্ত। এরপর তিনি আমাকে একসময় খবর দিলেন যে, আমি অমুখ তারিখ দিল্লী আসতেছি, এখানে আমি মহল্লা চুড়ী দালান শামণ্ডী কটেজে অবস্থান করব। আপনি উক্ত তারিখ দিল্লী আসেন, সেখানে বসে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। (মাওঃ মওদুদীকে ছাত মেরী রেফাকাত কী ছারগুযিস্ত আওর আ’ব মেরা মাওকাফ পৃষ্ঠা ২১-২৪ কৃত: মাওঃ মানযুর নো মানী)।

মাওলানা মানুযর নোমানী বলেন, তখনও পর্যন্ত মওদুদীর সাথে আমার সকল সম্পর্ক সাক্ষাৎহীন। ইতোপূর্বে তার সাথে সরাসরি সাক্ষাতের সুযোগ হয়নি।

অতএব, আমিও তার সাথে সাক্ষাত ও ভবিষ্যত পরিকল্পনা নির্ধারণে আলোচনার উদ্দেশ্যে দিল্লী সফর করলাম। ইতোপূর্বে আমি একথা শুনেছি যে, তার ঈমানী চেতনা লব্ধ প্ৰবন্ধসমূহ ও তার জীবন চলার পদ্ধতি একটি অপরটি থেকে ভিন্ন।
ধরণের। অর্থাৎ মওদুদী যে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার জোরালো সমর্থক কিন্তু তার মধ্যে সেই ইসলামী জীবন পদ্ধতি নেই। যে ব্যক্তি এ বিষয়ে আমাকে অবহিত। করেছেন তিনি মওদুদীর পরিচিত ব্যক্তি ছিলেন। আমার মতে “তরআমানুল কোরআন” দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। তিনি আমাকে মওদুদীর সম্পর্কে বলেছেন যে, মওদুদী দাড়ি মুণ্ডান অর্থাৎ তিনি এখনও দাড়ি রাখেননি। নোমানী বলেন, এটা শুনে আমি রীতিমত অবাক চিত্তে দুঃখপ্রকাশ ও আফসোস করলাম এবং হতাশায় নিমজ্জিত হলাম। কিন্তু দিল্লীতে এ সাক্ষাতের মাত্র কয়েকদিন পূর্বে হায়দারাবাদ থেকেই এক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানতে পেরেছি যে, এখন মওদুদীর জীবন পদ্ধতিতে আমাদের জন্য মনোরম পরিবর্তন সূচিত হয়েছে। একজন সম্মানিত ব্যক্তি লিখেছেন যে, এখন মওদুদীর চেহারায় ঈমানের ক্ষেত্র গযাতে শুরু করেছে। অর্থাৎ এখন দাড়ি রেখেছেন। এতে আমি বেশ আনন্দিত হলাম। যাই হোক আমি মওদুদীর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে দিল্লী পৌছলাম। চুড়ি দালানে “শামণ্ডী কটেজে” গিয়ে সাক্ষাত করলাম। বাস্তব হলো যে, তখন মওদুদীকে প্রথম বারের মত দেখে মন-মস্তিষ্ক নাড়া দিয়ে উঠল।কারণ তখনও পর্যন্ত মওদুদীর বাহ্যিক চাল চলন যা হওয়া উচিত ছিল তা থেকে অনেক ব্যতিক্রম। তখন যদিও একেবারে ক্লীনসেব ছিলেন না কিন্তু সেদিক থেকে তার মধ্যে নাম মাত্র পরিবর্তন এসেছিল। (মাওঃ মওদুদী কে ছাত মেরী রেফাকাত কী ছারগুযিন্ত পৃষ্ঠা ২৫ ও ২৬) এসব হলো ১৯৩৭ সনের।

নোমানী বলেন ইতোমধ্যে মওদুদী হায়দারাবাদ থেকে পাঞ্জাবের পাঠান কোর্টের নিকট “দারুল ইসলাম” নামক নবনির্মিত কমপ্লেক্সে স্থানান্তরিত হয়েছেন। দিল্লীর সাক্ষাতের কয়েক মাস পর মওদুদী সংগঠন প্রতিষ্ঠাকল্পে এক সভার আহবান। জানালেন তরজমানুল কোরআনের মাধ্যমে। নির্দিষ্ট তারিখে এ অধমও দারুল ইসলামে পৌছে গেলাম। বড় আশা ছিল যে, মওদুদীর চাল চলনে পরিবর্তনের যে কর্মসূচী আরম্ভ হয়েছিল মনে হয় তা এখন অনেক অগ্রসর হয়েছে এবং তিনি বেশ বদলে গেছেন। কিন্তু এখানে এসে তার সাথে দু’একদিন কাটালাম তখন বেশ দুঃখ পেলাম এবং হতাশ হলাম। এখনো তিনি নিজেকে বদলানোর ইচ্ছে করেন নি। (মাওঃ মওদুদীকে ছাত মেরী রেফাকাত কী ছারগুযিন্ত আওর আ’ব মেরা মাওকাফ, পৃষ্টা-২৭-২৯)

নো’মানী বলেন, অতঃপর একপর্যায় ‘এদারা-এ -দারুল ইসলামের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। তারপর ১৯৩৯ সনে শুরু হয় দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ। এ সময় আমি লাহোরে সফরে গিয়ে মওদুদীর ব্যক্তিগত জীবনে আমূল পরিবর্তনের খবর জানতে পেরে আনন্দিত হই এবং পুনরায় ইসলামী আন্দোলনের লক্ষ্যে সংগঠন প্রতিষ্ঠার বিষয়। নিয়ে তার সাথে আলাপ আলোচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। অতঃপর তার সাথে সাক্ষাৎ পূর্বক তার ব্যক্তিগত বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করার প্রস্তাব করলে তিনি রাজী হন। (মাওঃ মওদুদীকে ছাত মেরী রেফাকাত কী ছারগুযিন্ত আওর আব মেরা মাওকাফ পৃষ্ঠা ৩৪-৩৮)
➖➖➖
মওদুদীর সাথে নো’মানীর সম্মুখ আলোচনা
আলোচনার বিষয়-

(১) নির্দিষ্ট ইমামের তাক্বলীদ,
(২) দাঁড়ি ও
(৩) সুন্নতী চুল।

তখনও মওদুদীর দাঁড়ি খুব ছোট ও মাথায় ইংলিশ স্টাইলের চুল ছিল। (মাওঃ মওদুদীকে ছাত মেরী রেফাকাত কী ছারগুযিস্ত আওর আ’ব মেরা মাওকাফ পৃষ্ঠা ৩৮)

নো’মানী উপরোক্ত কোরআন-সুন্নাহ ও হানাফী মাযহাবের নির্ভরযোগ্য কিতাবের উদ্বৃতি দিয়ে আলোচনা পেশ করলে মওদুদী শেষ পর্যন্ত হার মানেন এবং নো’মানীর সাথে ঐক্যমত পোষণ করেন। (মাওঃ মওদুদী কে ছাত মেরী রেফাকাত কী ছারগুযিস্ত পৃষ্ঠা ৩৪-৩৮)। কিন্তু পরবর্তীতে মওদুদী উপরোক্ত বিষয়ে মত পরিবর্তন করে ফেলেন।

তাকলীদ সম্পর্কে মওদুদী বলেন, আমি না আহলে হাদিসের মাযহাবকে তার বিস্তারিত বিবরণ সহকারে সঠিক মনে করি, না আমি হানাফি বা শাফেয়ী কোন মাযহাবের অনুসারী। (রাসায়েল মাসায়েল, জামাতে ইসলামী কা শীষমহল পৃষ্ঠা ৭৮)

মওদুদী দাঁড়ি সম্পর্কে বলেন, দাঁড়ি কাটা ছাটা জায়েয।কেটে ছেটে একমুষ্ঠির কম হলেও ক্ষতি নেই। নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পরিমান দাঁড়ি রেখেছেন সে পরিমাণ দাড়ি রাখাকে সুন্নাত বলা হয় এবং উহার অনুকরণে জোর দেয়া আমার মতে মারাত্মক অন্যায়। (রাসায়েল মাসায়েল ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা ২৭৪; মিস্টার মওদুদীর নুতন ইসলাম পৃষ্ঠা ৪০)

এ সভায় যোগদানের পূর্বে মওদুদীর প্রতিষ্ঠিত সংগঠনে নিজকে সংযুক্ত রাখার মানসিকতা নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু উপরোক্ত কারণে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তাকে স্পষ্টভাবে আমার অপারগতা জানিয়ে দিলাম এবং সদস্য হওয়া থেকে বিরত থাকলাম। তখন গঠিত কমিটির নাম ছিল এদারা-এ- দারুল ইসলাম। যার আমীর মৌং মওদুদী সদস্য ছিলেন চারজন।
➖➖➖
জমাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠা
১৩৬০ হিজরী শাবান ১৯৪১ হিজরী আগষ্ট মাসে জামাতে ইসলামী নামে একটি নতুন দল প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এর আমীর মওদুদী এবং নায়েবে আমীর ৪ জন-

(১) মৌং মুহাম্মদ মানুযর নো’মানী,
(২) মাওঃ আমিন এছলাহী,
(৩) মাওঃ ছিবগাতুল্লাহ মারাছী ও
(৪) মাওঃ জাফর নদভী।

অতঃপর একসময় জামাতের কেন্দ্রীয় অফিস পুনরায় পাঞ্জাব পাঠান কোর্টের নিকটে দারুল ইসলামে স্থানান্তরিত হয়। অত্র অফিসে আমি এক সপ্তাহ কাল অবস্থান করতেই আমার নিকট এমন কিছু বিষয় ধরা পড়ে যদ্বারা বুঝতে পারলাম যে, জামাতের প্রত্যেক রুকন’ এর শরীয়তের পাবন্দী আমলী তাকওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরণের শর্তারোপ করা হয়েছিল স্বয়ং মওদুদী নিজেকে তখনও পর্যন্ত শরীয়তের প্রতি অতটুকু পাবন্দ বা যত্নবান করে তুলেননি। জামাতে ইসলামী প্রতিষ্ঠার কয়েকদিন পূর্বে তার সাথে একান্ত আলোচনায় তাকওয়া ও শরীয়তের
বিধান পালনে যত্নবান হবার যে অবস্থা মওদুদী সম্পর্কে আমি অনুধাবন।করেছিলাম, বাস্তবে তার অবস্থা সেরূপ নয়। বরং এ বিষয়ে তার মধ্যে অলসতা পরিলক্ষিত হয়েছে যা তাকওয়ার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। (মাওঃ মওদুদীকে ছাত মেরী রেফাকাত কী ছারগুযিস্ত আওর আ’ব মেরা মাওকাফ )

এমনি ভাবে শরীয়তের বিভিন্ন বিষয়ে মওদুদীর কথায় ও কাজে গরমিলের ফলে। জামাতে ইসলামী প্রতিষ্ঠার পর পৌনে দু’বছর যাবৎ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে। শেষ পর্যন্ত জামাত থেকে ইস্তেফা দেন। (মাওঃ মওদুদীকে ছাত মেরী রেফাকাত কী ছারগুযিস্ত আওর আ’ব মেরা মাওকাফ পৃষ্ঠা ৬৮ ও ৬৯)

অতঃপর নোমানী বলেন, আমি আমার খোদার সামনে আরয করব যে, আমি আপনার কিতাব ও আপনার দ্বীনের আলোকে (মওদুদীর) এসব ভুল ভ্রাত্তিকে বক্রতা গোমরাহি ও উম্মতের জন্য ফিতনা মনে করি। এ জন্য ফরয মনে করি এগুলো সুস্পষ্ট ভাবে মুসলমানদের নিকট পেশ করা। বয়সের দিক থেকে মৃত্যু কাল নিকটে মনে করে গুরুদায়িত্ব পালন ও দায়মুক্ত হবার নিয়তে ঐ সব বিষয় লিখে প্রকাশ করলাম। (এ সম্পর্কে তার লিখিত কিতাবের নাম – মাওঃ মওদুদীকে ছাত মেরী রেফাকাত কী ছারগুযিস্ত আওর আ ব মেরা মাওকাফ)

এমনিভাবে আরো অনেকে “জামাতে ইসলামীর” মনগড়া ইসলামের স্বরূপ সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত হয়ে জামাত ত্যাগ করে তাওবা করেছেন। তাদের কয়েকজনের নাম দু ‘টি ছন্দে মুহিউদ্দীন আহমদ – এর পক্ষ থেকে জনৈক প্রকাশ করেছেন-

مع تنهاازين بمكانه رفتم-على أشرف ومنظور هم فرت زغازىومحى الدين احمد-وعالم ان شب ديكور هم رفت

অর্থাৎ আমি একা মওদুদীর অন্ধকার ঘর থেকে বের হইনি, বরং আলীহাকীম, আবছার, রহিম, আশরাফ ও মৌং মানযুর নো’মানীও বেরিয়ে গেছেন। আর আবদুল জব্বার গাজী, মুহীউদ্দীন আহমদ ও মাওলানা মসউদ আলম নদভী থেকেও ঐ অন্ধকার রাত দূরিভূত হয়ে গেছে। (মওদুদী সাহেব আকাবেরে উম্মত কী নযর মে, পৃষ্ঠা ১৫৫)।

অনুরূপভাবে মৌং সায়াদ খালেদ,  মাওঃ আবদুল গাফফার হাসান, শায়খ সোলতান আহমদ, মাওঃ আমিন আহসান এসলাহী, মাওঃ আবুল হাসান আলী নদভী ও মাওঃ কাউসার নেয়াযী প্রমুখ আলেমগণ জামাতে ইসলামীর স্বরূপ বুঝতে পেরে ত্যাগ করেন । (মিষ্টার মওদুদীর নতুন ইসলাম, পৃষ্ঠা ৭)
➖➖➖
যে বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সাথে মৌং মওদূদীর মতবিরোধ
আল্লাহ তা’আলা হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের মান-মর্যাদা, ফেরেস্তা, আম্বিয়া, সাহাবা, মুজতাহিদ, মুজাদ্দিদ, ইমাম মাহদী ওলামা কেরাম, পীর মাশাইখ, সাধারণ মুসলমান, ইসলাম, কোরআন, হাদিস, উসূলে হাদিস, তাফসীর , ফিকাহ, তাসাউফ, আসমাউর রেজাল, মাযহাব, তাক্বলীদ, আদম আলাইহিস সালামের সিজদা, সাত আসমান, পর্বত উত্তোলন, ঈসা আলাইহিস সালামের আসমানে উত্তোলন, দাজ্জাল, ইসলামী বিধিবিধান, ইসলামী চাল চলন, সুন্নাত, দাঁড়ি, সিনেমা, নামায, রোযা, যাকাত, সেহেরী ইফতার, মোতা বা সাময়িক বিয়ে, হারাম জীব জন্তু, বন্দুকের শিকার, সিজদায়ে তেলাওয়াত, মোজার উপর মাসেহ, সফর, খোলা তালাক, যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর, গাউস, কুতুব, মোরাকাবা, মোশাহাদা, ফাতেহা, ওরশ, এমাতে আধীয়া ও পীরের হাতে বাইআত ইত্যাদি বিষয়ে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত-এর ওলামা কেরামদের সাথে মওদুদীর দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য রয়েছে। অনুরূপভাবে দেওবন্দী ওলামাদের সাথেও মওদুদীর মতবিরোধ রয়েছে। সুন্নী ও দেওবন্দী উভয় পক্ষের আলেমগণ মওদুদী ও জামাতে ইসলামীর ভ্রান্ত আকীদা ও মনগড়া মতবাদের খণ্ডনে কলম ধরেছেন।
➖➖➖
মৌওদুদী ও জামাতে ইসলামীর ভ্রান্তমতবাদ খন্ডনে লিখিত গ্রন্থের তালিকা
নিম্নে মওদুদী ও জামাতে ইসলামীর খণ্ডনে লিখিত কিতাব সমূহের তালিকা পেশ করা হলো-

• ইসলাম কী চার বুনিয়াদী এস্তেলাঁহিঃ হাকিমুল উম্মত মুফতি আহমদ ইয়ার খাঁ নঈমী আশরাফী (রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)

• মুকালামা-এ- কাযেমী ও মওদুদীঃ গাযযালীয়ে জমাঁ আল্লামা আহমদ সাঈদ কাযেমী (রাহমাতুল্লাহ আলাইহি)

• জামাতে ইসলামী কা শীষ মহলঃ আল্লামা মোস্তাক আহমদ নেযামী

• ইসলাম কা তাছাব্বুরে ইলাহ আওর মওদুদী সাহেবঃ কাছওয়াছা শরীফ, ফয়েযাবাদ

• ‎সতর্ক বাণীঃ মাওলানা মোহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর

• ‎জামায়াতে ইসলামী নামধারী মওদুদী জামায়াতের স্বরূপঃ মাওলানা আজিজুর  রহমান (শর্ষিনা হতে প্রকাশিত)

• ‎জামায়াতে ইসলামী কোন পথঃ মুফতী মুফাজ্জল আলী

• ‎মকামে আম্বিয়া ও সাহাবাঃ মাওলানা তাজাম্মুল আলী লাউড়ী, সিলেট

• ‎সত্যের মাপকাঠিঃ মাওলানা আঃ মতীন, ফুলবাড়ী, সিলেট

• ‎ইসলামী ইউনিফরমঃ মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী

• ‎মওদুদীর কলমে নবী রাসুলগণের অবমাননাঃ মাওলানা আবদুল্লাহ বিন সাঈদ

• ‎সংশোধনঃ মাওলানা শামছুল হক ফরিদপুরী (ছদর সাহেব)

• ‎মওদুদী ফেতনাঃ মাওলানা যাকারিয়া

• ‎ইসলামের নামে একটি নতুন ধর্মঃ মাওলানা আবু তাহের, (কলিকাতা)

• ‎জামায়াতে ইসলামী ছে মুখালাফাত কেউঃ মাওলানা হাবীবুর রহমান

• ‎আদেলানা মে’য়ারঃ মাওলানা আবুল হাসান, হাটহাজারী

★পাকিস্তান হতে প্রকাশিত

• মওদুদী জামায়াত পর তানকীদী নজরঃ মাওলানা মাজাহার হোসাইন

• ‎ঈজাহে ফওয়া (উর্দুঃ) মাওলানা আবদুল হক

• ‎ছেরাতে মুস্তাকীম (উর্দুঃ) মাওলানা আবদুস সালাম

• ‎জামায়াতে ইসলামী পর এক নজরঃ শায়খ মুহাম্মদ ইকবাল এম.এ

• ‎সাবলুল মো’মেনীন (আরবী)ঃ মাওলানা কাজী আবদুস সালাম

• ‎মওদুদী কী তাহরীকে ইসলামীঃ প্রফেসর মুহাম্মদ সরওয়ার

• ‎জামায়াতে ইসলামী আওর ইসলামী দস্তুরঃ প্রফেসর মুহাম্মদ সরওয়ার

• ‎জামায়াতে ইসলামী কা রুখে কিরদারঃ চৌধুরী হাবীব আহমদ

• ‎জামায়াতে ইসলামী কা নজরিয়্যায়ে হাদীসঃ মাওলানা ইসমাঈল

• ‎হক্ব পুরুস্ত ওলামা কী মওদুদীয়্যাত ছে নারাজী কি আছবাবঃ মাওলানা আহমদ
আলী লাহোর

• আদেলানা দেফাঃ মাওলানা নুরুল হাসান বোখারী (লাহোর)

• ‎আহমেদ হাজের কে দ্বীনি ফোৎনাঃ মাওলানা জাফর আহমদ

• ‎রদ্দে মওদুদীয়্যাতঃ মাওলানা আবদুর রশীদ ইরাকী

• ‎মওদুদীয়্যাত কা আকছঃ মাওলানা শফীকুর রহমান বেরলভী

• ‎হক্ব ও বাতেল কা মা’রেকাঃ মাওলানা মুরতজা আহমদ খান

• ‎মুহাসাবাঃ মাওলানা মুরতজা আহমদ খান

• ‎হাকীকত কী রৌশনীঃ মুফতী আবদুল কুদ্দুছ রুমী

• ‎এক্স রে রিপোর্টঃ মুফতী আবদুল কুদ্দুছ রুমী

• ‎এক আয়না মেঁ তীন চেহরেঃ মুফতী আবদুল কুদ্দুছ রুমী

• ‎মওদুদীয়্যত বে-নেকাবঃ মুফতী আবদুল কুদ্দুছ রুমী

• ‎আলাইছা মিনকুম বজলুর রশীদঃ মুফতী আবদুল কুদ্দুছ রুমী

• ‎ডারহী কী শরয়ী হাইছিয়্যতঃ মাওলানা শামসুদ্দীন নকশবন্দী

• ‎বে-বাক মুহাছাবাঃ মাওলানা শামসুদ্দীন নকশবন্দী

• ‎মওদুদীয়ত কা পোষ্ট মর্টেমঃ মাওলানা খলিলুল্লাহ পানিপথী

• ‎মওদুদীয়্যতকে এক্স-রে রিপোর্ট (২ খণ্ডঃ) মুফতী আবদুল কুদ্দুছ

• ‎ইসলাম আওর মা’আশী এসলাহাতঃ মাওলানা মূর্তজা আহমদ

• ‎আয়নায়ে মওদুদীয়্যাতঃ মাওলানা শফীকুর রহমান বেরলভী

• ‎ফোয়ে মওদুদীয়্যাতঃ মাওলানা আবুল মুজাফফর

• ‎জামায়াতে ইসলামী কা পাছ মানজারঃ মাওলানা ছানাউল্লাহ

• ‎হাায়েকে মওদুদীয়্যাতঃ মাওলানা ছানাউল্লাহ (অমৃতসরী)

• ‎ডারহী কী শরয়ী হাইছিয়্যতঃ মাওলানা আহমদ মাদানী

• ‎মওদুদী আকায়েদ পর এক নজরঃ হাফেজ মুহাম্মদ গোন্দলভী

• ‎তানকীদুল মাছায়েলঃ হাফেজ মুহাম্মদ গোন্দলভী

• ‎মওদুদীয়্যাত কা নছবুল আইনঃ মাওলানা লাল হোসাইন

• ‎নজরিয়্যায়ে বাতেলঃ আখতার হুসাইন সাওয়াতী

• ‎মওদুদী সাহেব আকাবেরে উম্মত কে নজর মেঃ হাকীম মাওলানা আখতার খলীফায়ে থানভী

• ‎মওদুদী কী হুছে একতেদার (ছন্দেঃ) মাওলানা এলহাম লাহোরী

• ‎দাওয়াত ও ফিরঃ মাওলানা সিরাজুদ্দীন

• ‎ফেৎনায়ে মওদুদীয়্যাতঃ এইচ, এস, আর,

• ‎ফেৎনোঁকী রোক তামঃ হাফেজ মুহাম্মদ সাঈদ

• ‎মওদুদীয়্যাতঃ ফিরোজ উদ্দীন মনছুর (লাহোর)

• ‎মওদুদী এক আমরকী হাইছিয়াত মেঁঃ ফিরোজ উদ্দীন মনছর

• ‎মওদুদী মাসলাক পর নদ ও নজরঃ মাওলানা আমিনুল হক

• ‎মওদুদী আওর জামায়াতে ইসলামীঃ মমতাজ আলী (লাহোর)

• ‎মওদুদী শাহপারেঃ নাজেম এদারায়ে তাহাফফুজ-পাকিস্তান

• ‎মওদুদী আওর এক হাজার ওলামায়ে উন্মতঃ মাওলানা মনজুর আহমদ

• ‎মওদুদী সাহেব খত্ব ও কিতাবাতঃ ডক্টর আহমদ হোসাইন

• ‎মওদুদী মাযহাবঃ মাওলানা কাজী মাজহার হোসাইন (লাহোর)

• ‎এনকেশাফাতঃ ঝারী আবদুল হামীদ (পাকিস্তান)

• ‎মওদুদী হাকায়েকঃ মাওলানা আবু দাউদ মোহাম্মদ সাদেক

★ভারত থেকে প্রকাশিত

• জামায়াতে ইসলামী পর তাবছিরাহঃ আবদুস সামাদ রহমানী

• ‎জামায়াতে ইসলামী পর তাবছিরাহ (২খণ্ডঃ) আবদুস সামাদ রহমানী

• ‎জামায়াতে ইসলামী কা দ্বীনি রুখঃ (১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ খণ্ড )

• ‎জামায়াতে ইসলামী কে দ্বীনি রুজহানাতঃ মাওলানা জাফরুদ্দীন

• ‎দেওবন্দ কা এক নাদান দোস্তঃ মাওলানা নাজমুদ্দীন

• ‎মাকতুবে হেদায়াতঃ মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী

• ‎আয়নায়ে তাহরীকে মওদুদীয়াতঃ মাওলানা মুফতী মাহদী হাসান

• ‎কাশফে হাকীকতঃ মাওলানা মুফতী মাহদী হাসান

• ‎এ’ফাউল লেহয়াতেঃ মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী

• ‎মুসলমান আগরচে বে আসল হোঃ মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী

• ‎মাকতুবাতে সালাছাঃ মাওলানা আবদুর রশীদ মাহমুদ

• ‎হাকীকতে মে’রাজঃ মাওলানা মোহাম্মদ সালেম

• ‎দারুল উলুম কা এক ফতওয়া হাকীকতঃ কারী তৈয়ব

• ‎কাওলে ফাইছেলঃ কারী তৈয়্যব

• ‎দুরারে মনচুরাহঃ মাওলানা মোহাম্মদ মিয়া

• ‎দো জরুরী মাসআলেঃ মাওলানা মোহাম্মদ মিয়া

• ‎মওদুদী মাযহাবঃ মাওলানা আজীজ আহমদ কাছেমী বি, এ

• ‎মওদুদী মাযহাব (দ্বিতীয় খণ্ডঃ) মাওলানা আজীজ আহমদ কাছেমী বি,এ

• ‎এজতেমায়ে গাংগুহঃ হাকীম আবদুর রশীদ গাংগুহী

• ‎তা’বীর কী গালাতীঃ মাওলানা ওহিদুদ্দীন খান

• ‎তাহরীকে জামায়াতে ইসলামীঃ মাওলানা দাউদ রায়

• ‎নয়া মাযহাবঃ মাওলানা দাউদ রায়

• ‎কামেলুন নেছারঃ মুফতী মাহবুব আলী খান কাদেরী

• ‎কহরে মা’বুদী পর জাসারতে মওদুদীঃ মুফতী মাহবুব আলী খান কাদেরী

• ‎মওদুদী কা উল্টা মযহাবঃ মুফতী মাহবুব আলী খান কাদেরী

• ‎আয়নায়ে মওদুদীয়্যাতঃ মুফতী রেজওয়ানুর রহমান বেরলভী

• ‎ঈমান ও আমলঃ মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী

• ‎আলু উস্তাজুল মওদুদী (আরবী)ঃ মাওলানা ইউসুফ বিন্নোরী (রহঃ)

• ‎ফেতনায়ে মওদুদীঃ মাওলানা যাকারিয়া

• ‎হযরত মোয়াবিয়া (রাঃ) আওর তারিখী হাঙ্কায়েকঃ তকী ওসমানী

• ‎আছরে হাজের মেদীন কী তাফহীম ও তাশরীহঃ হযরত মাওলানা আবুল হাসান আলী নদভী

• জামায়াতে ইসলামী ছে মজলিসে মাশারাহুতঃ হযরত মাওলানা মানজুর নো’মানী

• মওদুদী সাহেব কে গলৎ নজরিয়্যাতঃ মাওলানা করীমুদ্দীন

• এজহারে হাকিস্কৃতঃ মাওলানা ইসহাক সিন্দিলভী

• ‎মওদুদী দস্তুর ও আকাঈদ কী হাকীকতঃ শায়খুল ইসলাম, মাওলানা হোসাইন আহম্মদ মাদানী (রহঃ)

• তানকীদ আওর হঝে তানকিদঃ মাওলানা ইসহাক লুধয়ানবি

• ‎তফসীর বির রায় কা শরয়ি হুকুমঃ মুফতি সাইয়্যেদ আবদুর রহিম

• ‎তাছবীর কা দোসরা রুখঃ মাওলানা আবদুল কুন্দুছ রুমী

ইসলাম ও মুসলিম সমাজের উদ্ভুত ফিতনা সমূহের মধ্যে মওদুদী জামাতের ফিতনা খুবই মারাত্মক। তার পূর্ববর্তী সমস্ত বাতিল ফিরকার ভ্রান্ত মতবাদের অধিকাংশের বিশ্বাসী, অথচ স্থানভেদে সুন্নী লেবেলে আত্মপ্রকাশ করে। ফলে সাধারণ মুসলমান সন্দেহের আবর্তে জর্জরিত। মওদুদী – জামাতীদের আকীদার সাথে ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আত্নীদা তুলনামূলকভাবে উপস্থাপন করা গেল। যাতে সচেতন পাঠক মহল নিজ ঈমান, আক্বীদা ও আমলকে হেফাজত করতে পারেন।
➖➖➖
মওদূদী অাক্বিদা ও আকায়েদে অাহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের তুলনামূলক আলোচনা
★মওদুদী আকীদা – ১

সমগ্র সৃষ্টি জগতের রহমত ও কল্যাণ হুযুর পুর নুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে মওদুদীর জঘন্য মন্তব্য-“রাসুল না অতি মানব, না মানবীয় দুর্বলতা থেকে মুক্ত। তিনি যেমন খোদার ধনভাণ্ডারের মালিক নন, তেমনি খোদার অদৃশ্য জ্ঞানেরও অধিকারী নন বলে সর্বজ্ঞও নন। তিনি অপরের কল্যাণ বা অকল্যাণ সাধন তো দূরে নিজেরও কোন কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে অক্ষম।”  ১৯৭৬ সালের এপ্রিল মাসে লণ্ডনে ইউরোপীয় ইসলামী পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত তিনমাসব্যাপী ইসলামী সম্মেলনে মওদুদীর লিখিত এ ভাষণটি পাঠ করে শুনান- অধ্যাপক গোলাম আযম। (লণ্ডনের ভাষণ পৃষ্ঠা ১৬)

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-১

অতি মানব অর্থ অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি, সুতরাং হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিঃসন্দেহে অতি মানব। তিনি অবশ্যই মানবীয় দুর্বলতা থেকে সম্পূর্ণ পুত পবিত্র।তাঁকে আল্লাহ তা’আলা ধনভাণ্ডারের বন্টনকারী ও খাজাঞ্চি করেছেন। হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, “আমাকে জমিনের খনি সমূহের চাবি দেয়া হয়েছে। (বোখারী শরীফ) সুতরাং, তিনি রূপক অর্থে আল্লাহর ধনভাণ্ডারের মালিক। নিঃসন্দেহে তিনি খোদা প্রদত্ত অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী ও সৃষ্টির তুলনায় সর্বজ্ঞ। তিনি খোদা প্রদত্ত ক্ষমতা দ্বারা সৃষ্টির কল্যাণ সাধনে সক্ষম, অকল্যাণ সাধনের ক্ষমতা থাকলেও রাহমাতুল্লিল আলামীন হিসেবে সৃষ্টির অকল্যাণ করেন না। কল্যাণ সাধনে অক্ষম।
বলা মানে-

وماارسلناك الا رحمة للعالمين

এর প্রকাশ্য অস্বীকার।  তার দ্বারা সৃষ্টির কল্যাণ সাধন যদি অসম্ভব হয়, তা হলে সমগ্র সৃষ্টির জন্য নবী হিসেবে আগমন করে লাভ কি। তিনি কি অন্ধকারে নিমজ্জিত সমাজকে সত্য ও ন্যায়ের আলোতে আলোকিত করেন নি। এটা কি কল্যাণ নয় ?

★মওদুদী আকীদা – ২

“ইসলামী সূক্ষ্ম মর্যাদাবোধ” এর উপর আলোচনা করতে গিয়ে মওদুদী ইসলামের প্রথম খলীফা আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর সমালোচনা করে বলেন, এটা এমন স্পর্শকাতর বিষয় যে, একসময় সিদ্দিকে আকবর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মত নিঃস্বার্থ খোদাভীরু আপাদমস্তক লিল্লাহিয়াতে পূর্ণ ব্যক্তিও এটাকে পূর্ণ করতে ভুল করেছেন। (তরজমানুল কোরআন পৃষ্ঠা ৩২)।

প্রিয় পাঠকবৃন্দ!
মওদুদী মতাবলম্বীদের মতে “রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরের কল্যাণ সাধনে অক্ষম,” আর তাদের ইসলামী সমাজ কল্যাণ পরিষদ সমাজের সার্বিক কল্যাণ করতে সক্ষম এ হলো তাদের স্বরূপ। হযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সারাটা জীবন পরের কল্যাণে উৎসর্গ করেছেন। হযরত আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহহু হুযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আবু তালেব (হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের চাচা) এর কোন কল্যাণ করেছেন? উত্তরে হুযুর বললেন- হ্যাঁ (বোখারী শরীফ)। তিনি যদি পরের কল্যাণ করতে অক্ষম হন “হ্যা” কিভাবে বললেন। এক্ষেত্রে তারা বলবে এটা তো কোরআনের ঘোষণা –

قل لا أملك نفسى نفعا ولا رضا الا ماشاءالله

অর্থাৎ (হে প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম!) আপনি বলুন, আমি আমার লাভ-ক্ষতির মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। মওদুদী এখানে বড় ধরণের বর্ণচুরি করেছেন, তিনি

الاماشاءالله

অর্থাৎ “কিন্তু, আল্লাহর ইচ্ছা ক্রমে” এ অংশ টুকু এক্ষেত্রে গোপন করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের শানে অবমাননা করার সুযোগ নিলেন। বাতিল পন্থীগণ এভাবেই সরল প্রাণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করে থাকে।

★আকায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত – ২

এটা আল্লাহ তা’আলা ও হুযুর পুর নুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট সর্বাধিক মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকেও সমালোচনার বিষয় পরিণত করার ক্ষেত্রে মওদুদীর সূক্ষ্ম আক্রমণ। যার শ্রেষ্ঠত্ব মর্যাদা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অকপটে স্বীকার করেছেন; তিনিও মওদুদীর সূক্ষ্ম আক্রমণ থেকে রেহাই পাননি। সাহাবা এ কেরাম নিয়ে এ ধরণের মন্তব্য হারাম।

★মওদুদী আক্বীদা-৩

ব্যক্তি পূজা সম্পর্কিত জাহেলী ধ্যান-ধারণার উপর আলোকপাত করতে গিয়ে মওদুদী ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর ফারুক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর উপর সূক্ষ্মভাবে আক্রমণ চালালেন- “‘পযগাম্বর সুলভ ব্যক্তিত্বের মহান মর্যাদার যে প্রভাব (হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর) হৃদয়ে অংকিত ছিল। এরই ভিত্তিতে তিনি (হযরত ওমর) তাঁর (হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের) ওফাতের বিষয়টিকে বিশ্বাস করতে প্রস্তুত ছিলেন না। (তরজমানুল কোরআন, মওদুদী, জামাতে ইসলামী পৃষ্ঠা ৩৩০)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-৩

বিশুদ্ধ হাদিসের স্পষ্ট মর্মের মনগড়া ব্যাখ্যা পূর্বক মওদুদী হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর নবী প্রেমের অকৃত্রিম নিদর্শনকে জাহেলী যুগের। ব্যক্তি পূজার সঙ্গে তুলনা করলেন। এটা সাহাবীর শানে সুস্পষ্ট সমালোচনা: বিধায় হারাম। এ উক্তি দ্বারা তিনি বুঝাতে চেয়েছেন যে, সাহাবা কেরামের মধ্যে জাহেলিয়াতের চরিত্র কোন কোন সময় প্রকাশ পেত। (নাউযুবিল্লাহ)।  হাদিস শরীফে হুযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে সমালোচনার পাত্র বানাতে বারং বার আল্লাহর নামে নিষেধ করেছেন। কিন্তু, মওদুদী ঐ সব বিশুদ্ধ হাদিসেরও তোয়াক্কা করেন না।

★মওদুদী আক্বীদা-৪

খোলাফায়ে রাশেদার উপর জাহেলীয়াতের আক্রমণ কিভাবে করলো তা মওদুদীর মুখেই শুনেন। একদিকে ইসলামী হুকুমতের দ্রুত প্রসার লাভের ফলে (রাষ্ট্রপরিচালনার) কাজ কঠিন হতে চলেছিল। একদিকে যেমন হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু যাঁর উপর এ বিরাট কাজের দায়িত্ব অর্পিত ছিল, তিনি ঐসব বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন না, যা তার পূর্ববর্তী সম্মানিত ব্যক্তিদের ছিল। এ কারণে ইসলামী সামাজিক ব্যবস্থায় জাহেলীয়াত প্রবেশের পথ সুগম হয়েছিল। (তাজদীদ ওয়া এহইয়া এ দ্বীন কৃতঃ মওদুদী, জামাতে ইসলামী পৃষ্ঠা ৩৪)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-৪

বিশুদ্ধ হাদিসে হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার পরবর্তী ত্রিশবছর ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠিত থাকবে বলে, ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। এ দিক থেকে হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর শাসনামল, ‘ইসলামী খেলাফত’ বা খোলাফায়ে রাশেদা হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। কিন্তু, মওদুদীর দৃষ্টিতে খোলাফায়ে রাশেদাও জাহেলীয়াতের অনুপ্রবেশ ও মিশ্রন মুক্ত নয়। এটা হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রকাশ্য অস্বীকার মওদুদীর বিবেচনায় হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর মধ্যে খলীফা হবার বৈশিষ্ট্য অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু, হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু কর্তৃক গঠিত ছয় সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচনী কমিটির সদস্যবর্গ যথাক্রমে হযরত আলী, হযরত ওসমান, হযরত যুবাইর, হযরত তালহা, সাআদ ও হযরত আবদুর রহমান রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুমদের মত বিজ্ঞ পাঁচ জন সাহাবীদের বিবেচনায় হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু খলীফা হবার যোগ্যতা সম্পন্ন
ছিলেন। বিধায় তাঁকে খলীফা নিৰ্বাচিত করেছেন। “হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহু বলেন, এদের চেয়ে খেলাফতের অধিক যোগ্য আর কেউ হতে পারে না। হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের উপর সন্তুষ্ট অবস্থায় ওফাত পেয়েছেন” (বোখারী শরীফ)। অতএব হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুই ছিলেন বরহক খলীফা।

★মওদুদী আকীদা-৫

ইসলামের চতুর্থ খলীফা হযরত মাওলা আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর খেলাফতের উপর আলোচনা করে মওদুদী প্রশংসার কৌশলে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, এরপর (অর্থাৎ হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুর খেলাফত কাল শেষ হবার পর) হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু এগিয়ে আসলেন। তিনি ইসলামের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব ও পরিবেশকে জাহেলীয়াতের প্রভাবমুক্ত করার জন্য অসীম চেষ্টা চালিয়েছেন। কিন্তু তার বিনিময় এ উল্টো আন্দোলনকে দমাতে পারলেন না। (তাজদীদ ওয়া এহইয়া-এ দীন, জামাতে ইসলামী-পৃষ্ঠা ৩৫)।

★অাকায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-৫

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর খেলাফত কালীন রাজনৈতিক গোলযোগকে জাহেলীয়াতের প্রভাব হিসেবে মূল্যায়ন করা মওদুদীর চরম ভ্ৰষ্টতা ও সাহাবা কেরামের প্রতি লাগামহীন মন্তব্যের শামিল। জগত বরেণ্য ইমাম মুজতাহিদগণ ঐসব বিষয়গুলোকে “ইজতেহাদী ভুল” হিসেবেই মূল্যায়ন করেছেন সমালোচনা করতে নিষেধ করেছেন। এ সিদ্ধান্ত হাদিস
এবং এর শরীফের আলোকে সম্পূর্ণ সঠিক।এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের গ্রহণযোগ্য মত। (আবাঈদ-এ-নাসাফী)। এর চেয়ে জঘন্য আক্রমণ করেছেন জামাতে ইসলামীর অগ্নিপুরুষ, মাসিক তাজল্লী এ দেওবন্দ এর প্রশাসক মৌং আমের ওসমানী (হযরত ওসমান রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুর হত্যার বিচারের দাবী জানানো হলে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলে ছিলেন অবস্থা প্রতিকূলে নয়। প্রতিকূল পরিবেশ সষ্টি হলে অবশ্যই বিচার করা হবে। এর উপর সমালোচনা করতে গিয়ে মৌং আমের ওসমানী বলেন, ইনসাফ করুন! যদি তোমরা মুয়াবিয়া বা সিরিয়ার একজন সাধারণ নাগরিক হতে তাহলে বর্ণিত পরিস্থিতিতে হযরত আলী রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনহুর উত্তরকে-বাহানা, উপেক্ষা ও সুন্দর অস্বীকার ছাড়া সৎ উদ্দেশ্যের উপর প্রয়োগ করতে ? (তাজাল্লী – এ- দেওবন্দ; ডিসেম্বর- ১৯৫৮ সন, জামাতে ইসলামী পৃষ্ঠা ৩৫)।

★মওদুদী আক্কীদা- ৬

আল্লাহ তাআলা কখনো নবীগণের উপর থেকে হেফাজত বা রক্ষণের দৃষ্টি উঠিয়ে নেন, যাতে তাদের দ্বারা কোন গুনাহ (ক্ৰটি-বিচ্যুতি)প্রকাশ পায় এবং একথাও প্রমাণিত হয় যে, তারা মানুষ ছিলেন, খোদা নন। (তাফহীমুল কোরআন)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-৬

নবী আলাইহিস সালাম সর্বদা আল্লাহরই হেফাজত বা রক্ষণাবেক্ষনেই থাকেন; তাঁরা সর্বদা নিষ্পাপ নবুয়্যাত প্রকাশের পূর্বে ও পরে। এ বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের ইমাম ও ওলামা কেরাম ঐকমত্য পোষণ করে।

নবী আলাইহিমুস সালাম যে খোদা নন বরং মানুষ তা প্রমাণ করার জন্য মৌং মওদুদী যে ভুল ত্রুটি হওয়ার কথা বলেছেন সেটা তার মন গড়া।হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে খোদা ছিলেন না তা প্রমাণ করার জন্য তথাকথিত গুনাহ সম্পাদনকে অপরিহার্য করে নেয়া একটা নেহায়ত বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়, কারণ হযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম।পানাহার, চলা ফেরা এবং ওফাত মোবারক কি এতে যথেষ্ট ছিল না? মনগড়া মতবাদ দ্বারা তিনি নবী আলাইহিমুস সালামদের কি মানহানি করেন নি।

★মওদুদী আক্বীদা-৭

দজ্জাল কখন কোথায় আবির্ভূত হবে হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানানো হয়নি। হযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম। হাদিস শরীফে দজ্জাল সম্পর্কে বলেছেন প্রকৃত পক্ষে তা তার কাল্পনিক ও অনুমানমাত্র। এ ব্যাপারে তিনি নিজেও সন্ধিহান ছিলেন। (নাউজুবিল্লাহ) (তরজমানুল কোরআন- পৃষ্ঠা ৪৬)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত-৭

অতীতে যা কিছু সংঘটিত হয়েছে এবং ভবিষ্যতে যা কিছু ঘটবে এমনকি কে বেহেশতী কে জাহান্নামী, কে কখন কি কাজ করবে সব কিছুই হযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। কারণ হাদিস দ্বারা তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহ তা’আলা বিশ্ব জগৎকে আমার সম্মুখে সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করে দিয়েছেন। অতএব আমি বিশ্ব জগতকে এবং কেয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে সব কিছু এমন স্পষ্টভাবে দেখেছি যেমনি আমার হাতের মুষ্ঠি বা তালুকে সুস্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। (শরহে মাওয়াহেব, আল্লামা জুরকানী)। সুতরাং কেয়ামতের চিহ্ন ও দজ্জালের আত্মপ্রকাশের ভবিষ্যদ্বাণীকে অস্বীকার করার কোন যৌক্তিকতা নেই। বোখারী ও মুসলিম শরীফ ইত্যাদি সর্বজনমান্য হাদিস গ্রন্থাদিতে বর্ণিত হাদিস সমূহের অস্বীকার গোমরাহী ব্যতীত আর কি হতে পারে?

★মওদুদী আক্বীদা-৮

রাসুলে খোদা ব্যতীত কোন মানুষকে সত্যের মাপকাঠি মানা যাবে না। কাউকে সমালোচনার উর্ধে মনে করা যাবে না। (দৰ্ত্তরে জামাতে ইসলামী পৃষ্ঠ ৭৪, গঠনতন্ত্র জামাতে ইসলামী)

★আক্কায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-৮

সাহাবা কেরাম সত্যের মাপকাঠি-এতে আহলে সুন্নাত ওয়াল জমাআতের ইমাম আলেমদের দ্বিমত নেই। তাদের সমালোচনা করা হারাম। হযুর সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সমালোচনা ও মানহানির লক্ষ্যস্থলে পরিণত করতে নিষেধ করেছেন। তাঁরা ইসলামের সমুজ্জ্বল স্বরূপ। রাসুলে পাক ইরশাদ করেন, আল্লাহ তাঁদের উপর সন্তুষ্ট তাঁরা আল্লাহ উপর সন্তুষ্ট অর্জনে কামিয়াব। (সূরা বাইয়্যেনাহ-৮)

★মওদুদী আকীদা-৯

আলেম ব্যক্তির জন্য তাফুলীদ’ বা মাযহাব গ্রহণ কবীরা গুণাহ, বরং তার চেয়েও জঘন্য (নাউজুবিল্লাহ)। (ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-৯

তাক্বলীদ বা মাযহাব অনুসরণ করা ওয়াজিব। তার উপর ‘ইজমা’ হয়েছে। হযরত গাউসে পাক আবদুল কাদের জিলানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হাম্বলী মাযহাবের অনুসারী ছিলেন। হযরত গরীব নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মোজাদ্দিদে আলফেছানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, শাহ ওয়ালী উল্লাহ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম মুসলিম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম নাসায়ী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, ইমাম গাজ্জালী রাহমাতুল্লাহি আলাইহিও ‘মাযহাবের’ অনুসারী ছিলেন। মৌং মওদুদী কি এঁদেরকে পাপী হিসেবে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা চালিয়েছিলেন ?

★মওদুদী আক্বীদা-১০

ফাতেহা, জেয়ারত, নজর-নেওয়াজ ও ওরশ ইত্যাদি শিরক। (ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-১০

ফাতেহা, জিয়ারত, বুজৰ্গানে দ্বীনের দরবারে নজর, নেওয়াজ, ওরশ, অলীর মাজারে আলোক সজ্জাফুলের তোড়া ও গিলাপ চড়ানো জায়েয এবং সাওয়াবের কাজ। (ফতোওয়া-এ- শামী, আলমগীরী, হাজী এমদাদুল্লাহর হাত মছয়ালা)।

★মওদুদী আক্বীদা-১১

মোরাকাবা, মোশাহাদা, কাশফ ও ওজীফা পাঠ ইত্যাদি তরীকতের কার্যাদি শিরক। (ইসলামী রেনেসাঁ আন্দোলন)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-১১

মোরাকাবা মোশাহাদা, নির্জনে বসে এবাদত, ওজীফা পাঠ সুন্নাত। হযুর সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেরা পর্বতের গুহায় এসব কার্যাদি সম্পাদন করেছেন,আউলিয়া কেরামেরও তা অন্যতম আমল। মওদুদীর এ ফতোয়া কি হযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আউলিয়ায়ে কেরামের
সুন্নাত নিয়ে বিভ্রান্ত করার শামিল নয় ?

★মওদুদী আক্বীদা-১২

ইবনে তাইমিয়া ইমাম গাজ্জালী অপেক্ষাও শক্তিশালী মুজাদ্দেদ ছিলেন– মওদূদী।

ইবনে তাইমিয়া ছিলেন সপ্তম হিজরী শতকের মুজাদ্দিদ- মৌং আধুর রহিম।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-১২

ইবনে তাইমিয়া একজন ভ্রান্ত । কারণ তিনি এমন একজন ব্যক্তি, যিনি শুধু আউলিয়া কেরামের মাজার,হাদিস শরীফের নির্দেশাবলী উপেক্ষা করে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা পাক জিয়ারতে উদ্দেশ্যে সফর করাকে হারাম বলতে দ্বিধাবোধ করেন নি।তারই অনুসরণে বর্তমানে মৌং মওদুদী ও আবদুর রহিম এ ধরণের ভ্রান্তি ও কুফরী মতবাদ প্রচারে সোচ্চার। তাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের ইমামগণ এ বিষয়ে ঐক্যমত যে, এসব ভ্রান্ত ও বাতিল পন্থীদের সমর্থন, তাদের দলে যোগদান ও তাদের সাহায্য প্রদান শরীয়ত মতে হারাম ও গোমরাহীর নামান্তর মাত্র।

★মওদুদী আক্বীদা-১৩

নবীগণ ‘মাসুম’ বা গুনাহ থেকে পবিত্র নন। হযরত মুসা আলাইহিস সালাম নবুয়্যাত লাভের পূর্বে এক মিশরীকে হত্যা করে কবীরা গুণাহ করেছেন । (রাসায়েল ও মাসায়েল, কুতঃ মৌং মওদুদী)।

★আকায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-১৩

নবী আলাইহিমুস সালামগণ নবুয়্যাত প্রকাশের পূর্বে ও পরে সম্পূর্ণ নিষ্পাপ। (আকাঈদ -এ- নাসাফী ও তফসীরে খাযাইনুল ইরফান) ইত্যাদি। উল্লেখ্য যে, হযরত মুসা আলাইহিস সালাম শাসনের উদ্দেশ্যে এক মিশরীকে শাস্তি দিয়েছিলেন। এতে তার মৃত্যু ঘটে। তা হল শাসন ও ন্যায় বিচার, গুনাহ নয়।

★মওদুদী আক্বীদা-১৪

পীর সাহেবান ও বুজানে দ্বীনের রূহানী শক্তি থেকে কোন সাহায্যের আশা করা এবং তাদেরকে ভয় করা পরিস্কার শিরক। (কলেমা তৈয়বাকৃতঃ যৌং আদুর রহিম)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-১৪

পীর সাহেবান ও বুজর্গ ব্যক্তিদের রূহানী শক্তি থেকে সাহায্য চাওয়া জায়েয। (আতোয়া -এ- আফিযী ১ম খণ্ডঃ যয়াউল কুবতাকিরাতুল আউলিয়া ইত্যাদি)।

★মওদুদী আক্বীদা-১৫

কোন নবী বা অলীর মাজার জেয়ারত করার উদ্দেশ্যে সফর করা হারাম। (ইবনে তাইমিয়াহ ও মৌং আন্দুর রহিম)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-১৫

আম্বিয়া কেরাম, আউলিয়া কেরাম ও বুজুর্গানে দ্বীনের মাজার জেয়ারতের উদেশ্যে বিশেষতঃ হযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামেরভরওজা মোবারক জিয়ারতের নিয়তে সফর করা সর্ব সম্মত জায়েয এবং সাওয়াবের কাজ। (ফতোয়া-এ-শামী ১ম খণ্ড, শেফাউস সিকাম ফী জিয়ারাতে খায়রিল আনাম)

★মওদুদী আক্বীদা-১৬

কোরআনুল করীমে ঘোষিত শাস্তির বিধানের সমালোচনা করে মৌং মওদুদী লিখেন, যেখানে চরিত্রের মাপকাঠি এতো অবনতির দিকে যে অবৈধ সম্পর্ক সমূহকে বেশী দুষনীয় বলে মনে করা হয় না।সেখানে যেনা ও অপবাদ’ এর শরয়ী শান্তি প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে জুলুম।(তাফহীমুল কোরআন ২য় খণ্ড পৃষ্ঠা ২৮১)

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-১৬

কোরআন পাকে ‘যিনা’র যে শাস্তি নির্দিষ্ট রয়েছে তন্মধ্যে কোন পারিপার্শ্বিক অবস্থা বাদ পড়েনি। এ পরিপ্রেক্ষিতে মওদূদীর উল্লেখিত অবস্থায়ও ঐ সকল শাস্তি প্রযোজ্য হবে। কিন্তু এটাকে জুলুম বলা আল্লাহর প্রতি বিদ্রোহ করা। মওদুদীর দৃষ্টিতে নিঃসন্দেহে জুলুম।

এখন মওদুদীর নিকট জিজ্ঞাস্য যে, তা’যিরাত (শাস্তির হুকুম) সম্পর্কিত আয়াতগুলো কি মনসুখ (রহিত) বা মুকায়্যাদ বিশেষ অবস্থার সাথে নির্দিষ্ট তা নাহলে কি পবিত্র কোরআন করীমকে এ জঘন্য অপবাদ থেকে রক্ষা করা যাবে?ভআল্লাহর পানাহ।

★ মওদুদী আক্বীদা-১৭

মৌং মওদুদী কোরআন পাক সম্পর্কে লিখেছেন, কোরআনুল করীম নাজাতের জন্য নয় বরং নিছক হেদায়তের জন্য। (তাফহীমুল ১ম কোরআন খণ্ড পৃষ্ঠ ৩১২)

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত-১৭

কোরআনুল করীম নাজাত ও হেদায়ত উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।এখন মৌং মওদুদীর নিকট জিজ্ঞাস্য যে, যারা হেদায়তের সাথে সাথে নাজাতও চায়, তারা কোরআন পাক ছাড়া কোন কিতাবকে নাজাতের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করবে ?

★মওদুদী আক্বীদা-১৮

হুুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও মনোবৃত্তিকে সাধারণ মানুষের ধ্যান-ধারণা ও মনোবৃত্তির মত মূল্যহীন চিহ্নিত করে মৌং মওদুদী নুবুয়্যাতের মর্যাদার উপর আক্রমণ করে বলেন, “রাসুল হিসাবে যে সকল দায়িত্ব হুযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অর্পিত হয়েছিল এবং যেসব সেবামূলক কাজ তাকে সোপর্দ করা হয়েছিল এগুলোর পরিচালনায় তাকে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও মনোবৃত্তি অনুযায়ী কাজ করার জন্য স্বাধীন ভাবে ছেড়ে দেয়া হয়নি।” (অরজুমানুল কোরআন, মনসবে রেসালত, পৃষ্ঠা ৩১০)।

*এর পর লিখেছেন:-
বাকী রইল বিবেক তো কোন মতেই এটা মেনে নেয় না যে, কোন ব্যক্তিকে আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসুল নির্বাচিত করা হবে এবং তাকে রেসালতের কার্যক্রম নিজস্ব মনোবৃত্তি স্বীয় ও অভিমতানুযায়ী পরিচালনা করার ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া হবে। (মনসবে রেসালত পৃষ্ঠা ৩১০)।

এর পর তিনি আরও লিখেছেন, এখন কি খোদার পক্ষ থেকেই এ অসতর্কতার আশা করা যায় যে, তিনি এক ব্যক্তিকে স্বীয় রাসুল নির্বাচিত করবেন বিশ্ববাসীকে তার উপর ঈমান গ্রহণের আহবান করবেন, তাকে নিজের তরফ থেকে আদর্শের মাপকাঠি দাঁড় করবেন (ইত্যাদি ইত্যাদি) আবার এসব কিছু করার পরও তাকে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী যেভাবে ইচ্ছা রেসালতের খেদমত আঞ্জাম দেওয়ার জন্য ছেড়ে দেবেন? (মনসবে রেসালত পৃষ্ঠা ৩১১)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-১৮

মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ পাক তার প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এমনি ভাবে সৃষ্টি করেছে যে, জীবনে কখনো তিনি খোদার ইচ্ছার পরিপন্থী কোন কাজ করেননি এবং কথা বলেননি। যা বলেছেন বা করেছেন, আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী করেছেন। কোরআন করীমের ভাষায়-

وما ينطق عن الهوى ان هو اللوحة يوحى-

অর্থাৎ তিনি স্বীয় প্ৰবৃত্তি থেকে কিছু বলেন না। যা বলেন তা অবিকল ওহীই। এজন্যই ইমামগণ বলেছেন অহী দু’প্রকার (১) অহী মতলু তথা পবিত্র কোরআন ও (২) অহী গায়রে মতলু বা হাদিস শরীফ। সুতরাং তার প্রত্যেকটা কথা ও কর্ম যে কোন প্রকার ওহীরই অন্তর্ভুক্ত।বস্তুতঃ আম্বিয়া কেরাম বিশেষতঃ আমাদের প্রিয় নবী হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা,কর্ম অনুমোদন ওহী সম্মত হওয়া সৃষ্টিগত। হযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের শক্কে সদর বক্ষ বিদীর্ণের বা ঘটনা এ হাকীকাতকে আরো করে স্পষ্ট দেয়।

সতরাং হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে তাকে ধর্মীয় কার্যাদি সম্পাদনে স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া বা না দেয়ার কোন প্রশ্নই উঠেনা; শরীয়তের বিধানের ব্যাপারে হুযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে তাতো সহীহ হাদিস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। হজ্ব প্রতি বছর ফরয কিনা জিজ্ঞাসা করা হলে হযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন –

لو قلت نعم لو جبت-

অর্থাৎ যদি আমি হ্যাঁ বলতাম তবে তা
প্রতি বছর ওয়াজিব (ফরয) হতো। এসব নিয়ে আলোচনা করার পেছনে মৌং মওদুদীর উদ্দেশ্য হল তিনি হযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজস্ব ও মনোবৃত্তিকে সাধারণ মানুষের পর্যায় থেকে সামান্য উন্নত ধ্যান-ধারণা বলেও মনে করেন না। যেভাবে সাধারণ মানুষ স্বীয় ধ্যান-ধারণা ও মনোবৃত্তি অনুযায়ী চললে পথভ্রষ্ট হয়ে যায় তেমনিভাবে হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও যদি নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও মনোবৃত্তি মত রেসালতের কার্যাদি সম্পাদন করার ক্ষেত্রে স্বাধীনতা দেয়া হতো, তাহলে হযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামও আল্লাহর ইচ্ছার পরিপন্থী কাজ করে বসতেন। (আল্লাহর পানাহ)

আল্লাহপাক এরশাদ করেন-

هو الذى أرسل رسوله بالهدى ودين الحق ليظهر على الدين كله-

অর্থাৎ সে মহান সত্তা (আল্লাহ তা’আলা যিনি আপন রাসুল (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে প্রেরণ করেছেন হেদায়ত ও সত্যদ্বীন সহকারে। যাতে করে তিনি সেটাকে (ইসলাম) সকল ধর্মের উপর বিজয় দান করেন। (সুরা সফফাত)

এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় আল্লাহ তা’আলা দ্বীনের বিজয়ের জন্য রাসুলকে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু মওদুদীর আক্বীদা তার পরিপন্থী।

★মওদুদী আকীদা-১৯

মৌং মওদুদী নবীকুলের সর্দার হযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের যোগ্যতার উপর আক্রমণ করে বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের যোগ্যতার উপর আক্রমণ করে বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি
ওয়াসাল্লামের আরবের মধ্যে যে বিশেষ সফলতা অর্জিত হয়েছে তার কারণ। এটাই তো ছিল যে, তাঁর (ভাগ্যে) আরবের উত্তম মানবীয় পূজি জোটে ছিল, খোদা না চান, যদি তিনি সাহসহীন, দুর্বল ইচ্ছা সম্পন্ন অযোগ্য মানুষের দল পেতেন, তার পরও কি এ সফলতা অর্জন হতো? (না)। (তাহরীকে ইসলামী কী আখলাকী বুনিয়াদী, পৃষ্ঠা ১৭)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-১৯

মওদুদীর প্রতি এ প্রশ্ন জাগে যে, তিনি কি একথা বলতে চান যে, ‘হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরবে যে মহান বিজয় অর্জিত হয়েছে তাতে খোদার গায়বী সাহায্য হুযুর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের পায়গাম্বর সুলভ যোগ্যতা বিশ্বব্যাপী মহত্ব এবং কলমাই-হকের সমুজ্জল সততার কোন দখলই ছিল না।

(মওদুদীর ভাষায়) সৌভাগ্যক্রমে হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুযোগ্য লোকদের পেয়েছিলেন। খোদা না চান যদি এধরণের লোকদের না পেতেন তবে হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য অকৃতকাৰ্যতা অনিবার্য ছিল। (নাউজুুবিল্লাহ)। অর্থাৎ সমস্ত যোগ্যতা কি যারা মুমিন হয়েছেন তাদের জন্য? যিনি তাদের মুমিন বানিয়েছেন তার কি কোন কামালিয়াতই ছিল না। কেমন সুস্পষ্ট রূপে নুবুওয়াতের কামালাত এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে মওদুদী অস্বীকার করলেন।

উল্লেখ্য যে, মওদুদী জামাতীদের মতবাদসমূহ পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, তাদের ভ্রান্ত আক্বীদা সমূহের সাথে পূর্ববর্তী যুগে ইবনে তাইমিয়া, ইবনে আবদুল ওহাব নজদী, খারেজী, শিয়া, মোতাজিলা প্রভৃতি বাতিল দলসমূহের ভ্রান্ত মতবাদের সাথে যথেষ্ট সামঞ্জস্য রয়েছে।

★মওদুদী আক্বীদা-২০

ইসলামে এক নুতন অধ্যায় সৃষ্টি প্রয়োজন। প্রবীণ ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষকদের জ্ঞান পূঁজি এখন কোন কাজে আসবে না। কারণ জগত অনেক উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়েছে। (তানকীহাত)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত-২০

প্রবীণ ইসলামী চিন্তাবিদগণের গবেষণালব্ধ রচনাবলী পরবর্তী মুসলিম উম্মার জ্ঞান-গবেষণার ক্ষেত্রে পূ্জি ও পথ প্রদর্শক নিঃসন্দেহে। এদের একান্ত প্রচেষ্টা ও সারা জীবনের গবেষণার ফলে ইসলাম প্রত্যেক যুগে তার বিরোধী শক্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। আজও কোরআন হাদিসের সঠিক অর্থ অনুধাবনের ক্ষেত্রে তাদের রচনাবলীর আশ্রয় নিতে হয়। জগত উন্নতির পথে এগিয়ে যাবার পেছনে তাদের অবদানকে অস্বীকার করলে জগতের উন্নতিকেই অস্বীকার করা হবে। জ্ঞানবিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষের ক্ষেত্রে তাদের রচনাবলীর একান্ত প্রয়োজন রয়েছে। বলেই বিশ্বের গবেষণাগারসমূহে সেগুলো সংগ্রহ করে সংরক্ষিত রেখেছে। প্রবীণ মুসলিম গবেষকদের গ্রন্থাবলী সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অমুসলিমরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে তুলনামূলক ভাবে বেশী। ফলে বিজ্ঞানের উৎকর্ষ সাধনে তারাই সফলকাম হয়ে চলেছে। আর মুসলিম নামধারী গবেষক(?) মুসলিম চিন্তাবিদ ও গবেষকদের অপরিসীম অবদান অস্বীকার করতে বিন্দুমাত্রও কুষ্ঠিত হননি মওদুদী। কারণ “জগত অনেক উন্নতির দিকে অগ্রসর হয়েছে”। বলা যেতে পারে মুসলিম গবেষকদের রচনাবলী ইসলাম ও তার মৌলিক নীতিমালার আলোকেই রচিত। এতে বুঝা গেল ইসলাম ঐ রচনাবলী হতেও পুরাতন। তাহলে কি এখন ঐ ইসলামও কোন কাজে আসবে না। ইসলাম কি সর্বকালের জন্য গ্রহণযোগ্য ধর্ম নয়? মওদুদী উপরোক্ত উক্তির অনুচ্চারিত ধ্বনি হলো, এখন ইসলামকেও পরিবর্তন করে ঢেলে সাজাতে হবে। (নাউজুবিল্লাহ)।

★মওদুদী আক্বীদা-২১

কোরআন বুঝার জন্য কোন তাফসীরের প্রয়োজন নেই। একজন দক্ষ প্রফেসার যথেষ্ট, যিনি গভীর দৃষ্টিতে কোরআন অধ্যয়ন করেছেন। (তালুক্লীহাত, পৃষ্ঠা ৩১২)

★আকায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা আত-২১

কোরআনুল করীমের বর্ণনা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। তার বিস্তারিত ও স্পষ্ট অর্থ বুঝার জন্য তাফসীরের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তাফসীর ছাড়া কোরআনের সরাসরি শব্দের অর্থ করলে অনেক সমস্যা রয়েছে। এমনকি ঈমান হারানোর আশংকাও আছে। এ ক্ষেত্রে হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবা কেরাম ও তাবেয়ীনের প্রদত্ত ব্যাখ্যার আশ্রয় নেয়া অপরিহার্য। পবিত্র হাদিস হলো কোরআনুল করীমের সর্বোত্তম তাফসীর, তারপর সাহাবা কেরাম ও তাবেয়ীনের তাফসীর। তারা আরবী ভাষাভাষী বলে তাদের তাফসীর নিঃসন্দেহেননির্ভরযোগ্য। (আত্তানবীর ফী উগুলী তাফসীর) ।

তাফসীর রেওয়ায়াত দ্বারাই হতে হবে। এতে কারো মনগড়া কিছু বলার অবকাশ নেই। ইমাম তিরমিযী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি কোরআনের তাফসীর নিজস্ব মত বা ধ্যান -ধারণার আলোকে করবে, সে যেন নিজের ঠিকানা জাহান্নামে করে নেয় ।”

কিন্তু মওদুদী একজন অভিজ্ঞ আলেমের কথাও বললেন না। বরং একজন দক্ষ প্রফেসারকেই কোরআন তাফসীরের ক্ষমতা দিয়ে দিলেন এবং অন্য কোন তাফসীরের প্রয়োজনীয়তাকেও স্পষ্ট ভাষায় অস্বীকার করেছেন। একজন
প্রফেসারকে এ ক্ষমতা দিয়ে মওদুদী কি উপরোক্ত হাদিসের সরাসরি বিরোধীতা করেননি। এটা তাঁর নিম্নোক্ত উক্তি দ্বারা আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠে যে, আমি “তাফহীমুল কোরআনে” কোরআনের শব্দগুলোকে উর্দু ভাষায় হুবহু অনুবাদ করার স্থলে এ চেষ্টা করেছি যে,কোরআনের একটি এবারত বা বচন পড়ে যে মর্মার্থ আমার বুঝে আসে এবং যে প্রভাব আমার অন্তরে বিস্তার করে ওটাকেই সম্ভাব্য রূপে শুদ্ধভাবে নিজ ভাষায় রূপান্তরিত করি। (তাফহীমুল কোরআন ভূমিকা ১ম খণ্ড পৃষ্ঠা ১০)।

মওদুদীর এ উক্তি দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, তিনি কোরআনের তাফসীরের ক্ষেত্রে আরবী ভাষা ভিত্তিক কোন নীতিমালা অনুসরণ করতে রাজী নন। অন্যথায় তিনি এ ধরণের লাগামহীন উক্তি করতেন না। কোরআন অবতীর্ণের পর হতে অদ্যাবধি যারা পবিত্র কোরআনের তাফসীর করার কাজে হাত দিয়েছেন তারা প্রত্যেকেই হাদিস শরীফ ও আরবী পরিভাষাসহ আরবী ব্যাকরণের নীতিমালা এবং আরবী ভাষার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয় সমূহকে সামনে রেখেই করেছেন। উল্লেখ্য যে, এ নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা যেভাবে তাফসীরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য অনুরূপভাবে অনুবাদের ক্ষেত্রেও। অন্যথায় অনুবাদক মারাত্মক ভ্রান্তির স্বীকার হবেন ।

মওদুদীর উপরোক্ত উক্তিই তার “তাফহীমুল কোরআন”-এর বিশুদ্ধতার ব্যাপারে পাঠক সমাজকে সন্দিহান করে তোলে এবং বাস্তবেও তা প্রমাণিত হয়েছে। (বিস্তারিত দেখুন তাফহীমুল কোরআন ফী তানকীদী জায়েযা)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment