আল-বিদআত ইমাম ও মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে
মূলঃ শায়খুল ইসলাম ড. মুহাম্মদ তাহেরুল কাদেরী
Post written & edited by (Masum Billah Sunny)
বিদ’আতের ব্যাপারে কয়েক রকম হাদিস আছে। যেমন-
১) এক প্রকার তা বিদআত শব্দের উল্লেখ আছে কিন্তু তা ভাল বিদআত না-কি মন্দ বলা নেই।
রাসূলের পরে সেগুলাের আবিষ্কার হবে বলা আছে। তা ভালােও হতে পারে হতে হতে পারে।
২) স্পষ্টভাবে সেই সব বিদআত যা নিষিদ্ধ করা করা হয়েছে । লানত, শাস্তি, অভিশাপ ইত্যাদি বর্নিত আছে, তা কুরআন ও সুন্নাহর পরিবর্তন বলা আছে, যা বিআতে সাইয়্যা এবং
৩) স্পষ্টভাবে এক প্রকার নতুন প্রবর্তনকে সওয়াব ও কল্যানময় বলা হয়েছে যা কুরআন-সুন্নাহ-ইজমা-কিয়াস কোনটার বিপরীতে নয়, যা বিদ্আতে হাসানা। যেমন- ভাল কিছু বিদ্আতের প্রচলন হল : ইটের তইরি মসজিদ-মাদ্রাসা,
♣ জুমা’আর ২ আজান হযরত উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফত কালে চালু হয়।
♣ কুরআন শরীফ একত্রিত করন হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর নির্দেশে করা হয়।
♣ তারাবিহ নামাজ জামায়াতে আদায় হযরত উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত কালে চালু হয় ইত্যাদি এরূপ অসংখ্য পূণ্যময়, কল্যাণময় ও ভালাে কাজ।
♣ মিশকাত শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
“যেই ব্যক্তি আমাদের এই দ্বীনে এমন কিছু আবিষ্কার করে, যা এর অন্তর্ভূক্ত নয়, সে গর্হিত।”
এটা সব সময়ই খারাপ। এমন বিদ্আত সম্পর্কে যত হাদিস এসেছে অভিশাপ ও লানতের ব্যাপারে সেগুলাে মন্দ বিদআতকে বুঝানাে হয়েছে। যে কেউ ইসলামের মধ্যে ভাল রীতি প্রচলন করেন, তিনি এর জন্য সাওয়াব পাবেন; যারা এর উপর আমল করবেন, এর জন্যও সাওয়াব পাবেন, তবে তাঁদের সাওয়াবের মধ্যে কোন কমতি হবে না; এবং যারা ইসলামে মরীতি প্রচলন করে, এর জন্য তাদের পাপ হবে এবং যারা এর উপর আমল করবে, তার জন্যও পাপের ভাগী হবে, তবে ওদের পাপের বেলায় কোন কমতি হবে না।
♣ মহান আল্লাহ বলেন,
“যে ব্যক্তি কল্যাণ ও সৎকাজের সুপারিশ করবে, সে তা থেকে অংশ পাবে এবং যে ব্যক্তি অকল্যাণ ও অসৎকাজের সুপারিশ করবে, সে তা থেকেও অংশ পাবে। ‘আল্লাহ সব জিনিসের প্রতি নজর রাখেন।”
♣ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন,
“যখন কোন বিশেষজ্ঞ হুকুম দেয়, আর তাতে সে ইজতিহাদ করে তারপর সেটা সঠিক হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে দুটি সওয়াব। আর যদি ইজতিহাদ করে ভুল করে তাহলে তার জন্য রয়েছে একটি সওয়াব।”
♣ আশঅতুল লুমআত গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে হাদীছটি প্রসংগে উল্লেখিত আছে,
যে বিদ্আত ধর্মের মূলনীতি, নিয়ম-কানুন ও সুন্নাতের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এর সাথে কিয়াস করা হয়েছে, একে বিদ’আতে হাসানা বলা হয়। আর যা বিপরীত, সেটাকে বিদআতে গুমরাহী বা বিআতে সায়্যিয়াহ বলা হয়।
→ মুহাম্মদ আবু তৈয়ব চৌধুরী
(সঞ্জরি পাবলিকেশন)
সূচীপত্র *
০১ * অবতরণিকা/ ০২।
(১) ইমাম মােহাম্মদ বিন ইদরিস বিন আব্বাস শাফেঈ (ওফাত: ২০৪ হি.)/১২
(২) ইমাম আবু আবদুল্লাহ মােহাম্মদ বিন আহমদ আল-কুরতুবী (ওফাত: ৩৮০ হি.)/১৫
(৩) ইমাম আলী বিন আহ্মদ ইবনে হাযম আল উন্দুলুসী (৪৫৬ হি.)/১৭
(৪) ইমাম আবু বকর আহমদ বিন হােসাইন আল বায়হাকী (৪৫৮ হি.)/ ১৮
(৫) ইমাম আবু হামেদ মােহাম্মদ বিন মােহাম্মদ আল গাজ্জালী (ওফাত: ৫০৫হি)/১৯
(৬) ইমাম মােবারক বিন মােহাম্মদ ইবনে আছীর আল-জারী (ওফাত: ৬০৬হি)/২১
(৭) ইমাম ইযযুদ্দীন আবদুল আযীয ইবনে আবদুস সালাম (৬৬০ হি.)/ ২৪
(৮) ইমাম আবু যাকারিয়া মুহিউদ্দীন ইবনে শরফ আন্-নওয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি (ওফাতঃ ৬৭৬ হি.)/ ২৬
(৯) ইমাম শিহাবুদ্দীন আহমদ আল-ক্বিরানী আল-মালেকী (৬৮৪ হি.) ৩১
(১০) আল্লমা জামালুদ্দীন মােহাম্মদ বিন মুকাবুরাম বিন মনযুর আল-আফ্রিকী রাহমাতুল্লাহি আলাইহু (ওফাত: ৭১১ হি.)/ ৩৬।
(১১) আল্লামা তকিউদ্দীন আহমদ বিন আবদুল হালীম ইবনে তাইমিয়া (ওফাত:৭২৮ হি.) ৪০।
(১২) ইমাম হাফেজ ইমাদুদ্দীন আবুল ফিদা ইসমাঈল ইবনে কছীর রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহ (ওফাত: ৭৭৪ হি.)/ ৪১
(১৩) ইমাম আবু ইসহাক ইবরাহীম বিন মুসা আশ-শাতেবী (ওফাত: ৭৯০হি.) ৪২
(১৪) ইমাম বদরুদ্দীন মােহাম্মদ বিন আবদুল্লাহ্ আয-যারকাশী (ওফাত: ৭৯৪হি.) ৪৮
(১৫) ইমাম আবদুর রহমান বিন শিহাবুদ্দীন ইবনে রজব আল-হাম্বলী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহ (ওফাত: ৭৯৫ হি.)/ ৪৮
(১৬) আল্লামা শামসুদ্দীন মােহাম্মদ বিন ইউসুফ আল-কিরমানী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহু (ওফাত: ৭৯৬ হি.)/ ৫৩
(১৭) আল্লামা আবু আবদুল্লাহ্ মােহাম্মদ বিন খালফা আল-ওশতানী আল-মালেকী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহ্ (ওফাত: ৮২৮ হি.) ৫৫
(১৮) ইমাম আবুল-ফল আহমদ বিন আলী বিন মােহাম্মদ ইবনে হাজর আস্কালানী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহ (ওফাতঃ ৮৫২ হি.) ৫৭
(১৯) ইমাম আবু মােহাম্মদ বদরুদ্দীন মাহমূদ আল-আইনী আল-হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহু (ওফাত: ৮৫৫ হি.) ৫৮
(২০) ইমাম মােহাম্মদ বিন আবদুর রহমান শমসুদ্দীন মাহমুদ আস-সাখাবী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহু (ওফাত: ৯০২ হি.) ৫৮
(২১) ইমাম জালালুদ্দীন আবদুর রহমান বিন আবু বকর আস-সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহু (ওফাতঃ ৯১১ হি.) ৫৯
(২২) ইমাম আবুল-আব্বাস আহমদ বিন মােহাম্মদ শিহাবুদ্দীন আল কাভ রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহ (ওফাত: ৯১১ হি.)/ ৬২.
(২৩) ইমাম আবু আবদুল্লাহ মােহাম্মদ বিন ইউসুফ সালিহী আশ-শান্ত | রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহ (ওফাতঃ ৯৪২ হি.)/ ৬৪
(২৪) ইমাম আবদুল ওয়াহ্হাব বিন আহমদ আল আশ-শারানী (৯৭৩ হি.) ৬৯
(২৫) ইমাম আহমদ শিহাবুদ্দীন ইবনে-হাজর আল-মক্কী আল-হাইতমী (রহঃ) (ওফাতঃ ৯৭৪ হি.)/ ৬৬
(২৬) শায়খ মােহাম্মদ শামসুদ্দীন আশ-শারবীনী আল-খতীব (৯৭৭ হি.)/ ৬৭
(২৭) ইমাম মােল্লা আলী ইবনে সুলতান মােহাম্মদ আল-কারী (ওফাত: ১০১৪হি)/ ৬৯ (সকল বিদ্আতই গােমরাহী)-র ব্যাখ্যা/ ৭০
(২৮) শায়খ আবদুল হামিদ আশ-শারওয়ানী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহ্/ ৭১
(২৯) ইমাম মােহাম্মদ আবদুর রউফ যায়নুদ্দীন আল-মুনাবী আশ-শাফেঈ রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহ (ওফাত: ১০৩১ হি.)/ ৭৩।
(৩০) শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলবী (ওফাত: ১০৫২ হি.)/ ৭৪
(৩১) আল্লামা আলাউদ্দীন মােহাম্মদ বিন আলী বিন মােহাম্মদ আল-হাদুকাফী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহ্ (ওফাত: ১০৮৮ হি.)/ ৭৫।
(৩২) ইমাম আবু আবদুল্লাহ্ মােহাম্মদ বিন আবদুল বাকী আয-যারকানী আল মালেকী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহ (ওফাত: ১১২২ হি.) ৭৫
(৩৩) আল্লামা মুরতাজা হােসাইনী আ-যােবায়দী আল-হানাফী (ওফাত: ১২০৫হি)/৭৬
(৩৪) আল্লামা সাইয়েদ মােহাম্মদ আমীন ইবনে আবেদীন আশ-শামী (১২৫২ হি.)/ ৭৯
(৫) শায়খ মােহাম্মদ বিন আলী বিন মােহাম্মদ আশ-শাওকানী রাহমাতুল্লাহি তা’আলা আলাইহু (ওফাত: ১২৫৫ হি.)/৮০
(৩৬) আল্লামা শিহাবুদ্দীন সাইয়েদ মাহমূদ আসী (ওফাত: ১২৭০ হি.)/ ৮০
(৩৭) মাওলানা আহমদ আলী সাহারানপুরী (১২৯৭ হি.)/ ৮২
(৩৮) নাওয়াব সিদ্দীক হাসান খান ভূপালী (ওফাত: ১৩০৭ হি.)/ ৮৪
(৩৯) মাওলানা ওয়াহীদুজ্জামান (ওফাতঃ ১৩২৭ হি.)/ ৮৪
(৪০) মাওলানা আবদুর রহমান মােবারকপুরী (১৩৫৩ হি.) ৮৬
(৪১) মাওলানা শব্বীর আহমদ ওসমানী (ওফাতঃ ১৩৬৯ হি.)/ ৮৭
(৪২) মাওলানা মােহাম্মদ যাকারিয়া কান্ধলবী (ওফাতঃ ১৪০২)৮৯
(৪৩) শায়খ আবদুল আযীয বিন আবদুল্লাহ বিন বায (১৪২১ হি.)/ ৯০
(৪৪) মােহাম্মদ বিন আলী আল-মালেকী আল-মক্কী (১৪২৫ হি.)/ ৯৩
____________________________________________________
আল-বিদআত ইমাম ও মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে
মূলঃ শায়খুল ইসলাম ড. মুহাম্মদ তাহেরুল কাদেরী
Post written & edited by
(Masum Billah Sunny)
♣ হুজুর নবী-পাক (ﷺ) নিকট প্রশ্ন করেছিলেন
-(হে মুয়ায!) আপনার নিকট যখন কোন বিচার নিয়ে আসা হবে, তখন আপনি কীভাবে সেটির ফায়সালা করবেন?
– তিনি জবাবে বললেন, আমি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী ফায়সালা করব।
– নবী-পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আপনি যদি বিষয়টি আল্লাহর কিতাবে না পেয়ে থাকেন?
– হযরত মুয়ায রাদিয়াল্লাহ তা’আলা আনুহ জবাব দিলেন, তখন আমি আল্লাহর রসুলের সুন্নাহ মােতাবেক ফায়সালা করব।
– অত:পর হুজুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি যদি সুন্নায়ও ফায়সালাটি না পেয়ে থাকেন?
– তিনি জবাব দিলেন, তখন আমি আমার মতামত অনুযায়ী ইজতিহাদ করব। কোনরূপ কার্পণ্য করব না। হযরত মুয়ায রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলছেন,
– অত:পর তিনি (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার আদরমাখা হাত মােবারক দিয়ে আমার বক্ষে (আলতাে ভাবে) আঘাত করলেন। আর বললেন, সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহরই জন্য, যিনি তাঁর রসুলের প্রেরিত প্রতিনিধিকে
এমন তাওফিক দান করলেন, যা তাঁর রসুলকে সন্তুষ্ট করে। “
Reference :
(ক) আবু দাউদ : আস সুনান, বাকুল ইজতিহাদির রাইয়ি ফীল ক্বদা ৯:৪৮৯, হাদিস নং-৩১১৯।
(খ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, বাবুল আমলি ফীল ক্বদা, গ. ৫০।
(গ) বায়হাকী : সুনানুল কুবরা , ১০:১১৪।
(ঘ) তাহাবী : মুশকিলুল আসার, ৮: ১১৮।
এই বিষয়টি সাব্যস্ত হয় যে, যে বিষয়টি কুরআন এবং সুন্নায় বিদ্যমান না পাওয়া যায়, বরং ইজতিহাদ এবং গ্রহণযােগ্য মতামতের ভিত্তিতে সম্পাদন করতে হয়, তা কেবল মুস্তাহসান তথা উৎকৃষ্টই নয়, বরং তা নবীপাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামেরই গৃহীত পন্থা। এই মূলনীতিটি সেই ‘বি’আতে-হাসানাহটির ক্ষেত্রেই প্রযােজ্য, যা এই হাদিসটি দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। এ দ্বারা একটি মূলনীতির সৃষ্টি হয় যে, নির্দিষ্ট কোন বিষয় কিংবা সেটির সমাধান স্বয়ং কুরআন ও সুন্নাতে বিদ্যমান না থাকলে, সেটির সমাধানের পন্থা যে মতামত ও ইজতিহাদ’, তা সুন্নাত দ্বারাই স্বীকৃত। সুতরাং নির্দিষ্ট বিষয়টি ও সেটির সমাধান নতুন হওয়ার ভিত্তিতে ‘বিদ্আত হয়, কিন্তু সেই সমাধানের পন্থা শরীয়ত ভিত্তিক। তাই তা সুন্নাহরই আওতাভূক্ত হয়ে গেল। সুতরাং, নতুনত্ব সেই আমলটিকে আভিধানিক অর্থে বিদ্আত বানিয়েছিল, কিন্তু পন্থাগত শরীয়ত সেটিকে ‘বিদআতে-হাসানাহু বানিয়ে দিল। এটিই হল সেই স্থায়ী মূলনীতি যা দীন-ইসলামের শিক্ষাকে কাল ও সামাজিক পরিবর্তিত অবস্থা এবং মানবজীবনের নব নব চাহিদাদি পূরণের স্বার্থে স্থায়ী ভাবে কার্যকর রাখে। এই মূলনীতির সুবাদে ইসলামী জীবন-ব্যবস্থায় স্থবিরতা ও জটিলতা।
♣ হযরত আবু হােরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন,
“কোন বিচারক যখন ইজতিহাদ দ্বারা বিচার করে, আর বিশুদ্ধ বিচার করে, তখন তার জন্য রয়েছে দুইটি প্রতিদান। আর যদি ইজতিহাদ সহকারে বিচার করে, কিন্তু তাতে ভুল হয়ে যায়, তাহলেও তার জন্য রয়েছে একটি প্রতিদান।”
Reference :
(ক) বুখারী : আস সহীহ বাবু ইযা হাকামাল হাকীমু ২২:৩৩৫, হাদিস নং- ৬৮০৫।
(খ) মুসলিম : আস সহীহ বাবু বয়ানি আজরুল হাকেম, ৯:১১৪, হাদিস নং-৩২৪০।
(গ) তিরমিযী : আসসুনান, বাবু মা-জা’আ ফীল ক্বদা, ৫:১৬০, হাদিস নং-১২৪৮।
(ঘ) নাসায়ী : আস-সুনান,বাবুল ইসাবা ফীল হুকমি, ১৬:২১২, হাদিস নং-৫২৮৬।
(ঙ) আবু দাউদ: আল সুনান, বাবু ফীল ক্বদা বিখাতায়ি ৯:৪৬৪, বলিস – ৩১০৩।
♣ যা নিচের হাদিসটি দ্বারা পরিষ্কার রূপেই প্রতীয়মান হয়,
“যেই ব্যক্তি ইসলামে কোন নেক কাজের সূচনা করবে, সে তার কাজটিরও প্রতিদান পাবে এবং পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী আমলকারীদের আমলেরও প্রতিদান পাবে। আর সেই আমলকারীদের প্রতিদানে কোনরূপ ঘাটতি হবে না।
– পক্ষান্তরে যেই ব্যক্তি ইসলামে কোন মন্দ কাজের সূচনা করল, কাজটি প্রচলনের গুনাহ্ এবং পরবর্তীতে সেই অনুযায়ী আমলকারীদের আমলের গুনাহ তার উপর বর্তাবে। আর সেই আমলকারীদের গুনাহে কোনরূপ ঘাটতি হবে না।”
Reference :
(ক) মুসলিম : আস সহীহ, বাবুল হাসি আলাস সাকাহ ৫:১৯৮, হাদিস নং- ১৬১১।
(খ) নাসায়ী : আস্ সুনান, বাবুত তাহরিদী আলা সদকাহ, ৮:৩২৯, হাদিস নং- ২৫০৭।
(গ) আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ, ৩৯:১৬৬, হাদিস নং- ১৮৩৬৭।
(ঘ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, কিতাবুল ইলম, প্রথম পরিচ্ছেদ, পু, ৪৫।
(ঙ) ইবনে আবু শায়বা : আল মুসান্নাফ, ৩৪।
♣ ইমাম বুখারী (রহঃ) তার সহীহ বুখারীতে হাদিসটি বর্ননা করেন,
“হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর সাথে রমজানের কোন একটি রাতে আমি মসজিদের দিকে গমন করলাম। লােকজন ছিল বিক্ষিপ্ত অবস্থায়। এক ব্যক্তি একা একা নামাজ পড়ছিল। আর কতগুলাে ব্যক্তি জামাতে নামাজ পড়ছিল। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, আমার মনে হয়, এদেরকে কোন একজন কারি (ইমাম) সাহেবের পেছনে জড়াে করে দিলে ভাল হয়। অতএব, তিনি সবাইকে হযরত ওবাই বিন কাআব রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর পেছনে জড়াে করে দিলেন। পরের রাতেও আমি তার সাথে বের হলাম। দেখতে পেলাম, সবাই তাদের কারি (ইমাম) সাহেবের পেছনেই নামাজ পড়ছে। হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বললেন, এ কতই উত্তম বিদ্আত! রাতের যেই অংশে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে, তা থেকে সেই অংশই উত্তম, যেই অংশে এরা নামাজ পড়ে। উদ্দেশ্য ছিল রাতের শেষাংশ। অথচ সবাই প্রথমাংশেই নামাজ পড়ছিল।”
(একেই বলে ‘বিদআত এ হাসানাহ্।)
(ক) বুখারী : আস্ সহীহ, কিতাবু সালাতি তারাবীহ, ২:৭০৭, হাদিস নং ১৯০৬; ৭:১৩৫, হাদিস নং-১৮৭১।
(খ) তাবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ, বাবু কিয়ামী শাহরি রমদ্বান, ১:২৯০, হাদিস নং-১৩০১।
(গ) বায়হাকী : সুনানুল কুবরা, ২:৪৯৩।
(ঘ) বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান ৭:২৭১, হাদিস নং-৩১২২।
(১) ইমাম মােহাম্মদ বিন ইদরিস বিন আব্বাস শাফেঈ (ওফাত: ২০৪ হি.)
♣ (A) ইমাম বায়হাকী (ওফাত: ৪৫৮হি.) স্বীয় সনদ সহকারে ‘মানাকিবে-শাফেঈ’তে রেওয়ায়ত করেন, ইমাম শাফেঈ বিদ্আতের প্রকারভেদ এভাবে ব্যক্ত করেছেন,
যে কোন নতুন কাজ বা বিষয় দুই ধরনের।
প্রথম প্রকার হল, সেসব নতুন কাজ বা বিষয় যা কুরআন, সুন্নাহ্, সাহাবাগণের জীবনাদর্শ এবং ইজমায়েউম্মতের পরিপন্থী। আর তা হল ‘বিদ’আতে-ঘালালাহ্ তথা গােমরাহীপূর্ণ বিদ্আত।
দ্বিতীয় প্রকার হল, সেসব নতুন কাজ বা বিষয় যেগুলাে মঙ্গল কিংবা কল্যাণের স্বার্থে প্রণয়ন করা হয়েছে এবং কুরআন, সুন্নাহ্, সাহাবাগণের জীবনাদর্শ এবং ইজমায়ে-উম্মতের কোন একটির পরিপন্থী নয়। সুতরাং, এই ধরনের নতুন কাজ বা বিষয় ‘গাইরে-মাযমূমাহ’ তথা নিন্দনীয় নয়।
তাই তাে হযরত ওমর ফারূক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু রমজানের তারাবীহর নামাজের ব্যাপারে বলেছিলেন, এ কতই যে উত্তম বিদআত’।
(ক) মালেক : আল মুয়াত্তা ,১:১১৪, হাদিস : ২৫০।
(খ) বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান, ৩:১১৭, হাদিস : ৩২৬৯।
(গ) সুয়ুতী : তানভীরুল হাওয়ালেক শরহে মুয়ায়ে মালেক, ১:১০৫, হাদিস :২৫৩।
(ঘ) ইবনে রজব হাম্বলী : জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, ১:২৬৬।
(ঙ) ফুরকানী : শরহে ফুরকানী আলা মুরায়ে ইমাম মালেক, ১:৩৪০।
(B) আল্লামা ইবনে রজব হাম্বলী (৭৯৫হি) শীয় কিতাব ‘জামেউল-উলুমি ওয়ালহিকাম’-এ বিদআতের প্রকারভেদ বিষয়ে ইমাম শাফেঈর বরাত দিয়ে লিখছেন,
ইবরাহীম বিন জোনাইদীর সনদে হাফেজ আবু নাঈম রেওয়ায়ত করছেন। তিনি বলেন, আমি ইমাম শাফেঈকে এই কথা বলতে শুনেছি যে, বিদ্আত দুই প্রকারঃ
১. বিদ’আতে মাহমুদা (নন্দিত বিদআত) এবং
২. বিআতে মাযমূমাহ (নিন্দিত বিদ্আত)।
যেই বিদআত সুন্নাহর অনুকূলে এবং সুন্নাহর অনুসরণে হবে, সেটি মাহমুদা তথা নন্দিত।
পক্ষান্তরে যেই বিদ্আত সুন্নাহর বিপরীতে এবং সুন্নাহর পরিপন্থী হবে, সেটি মাযমূমাহ্ তথা নিন্দিত। তিনি (হযরত ওমর ফারূক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর বাণী “এটি কতই যে উত্তম বিদ্আত”)-টিকে দলিল রূপে গ্রহণ করেছেন। এদিকে ইমাম শাফেঈর উদ্দেশ্যও একই। যা আমরা ইতােপূর্বে আলােচনা করেছি। ‘বিদ’আতে-মাযমূমাহ’ বা নিন্দিত বিদ্আত বলতে সেটিকেই বুঝায় যার কোন মূল ভিত্তি কিংবা দলিল শরীয়তে নাই, যেদিকে এটি ধাবিত হয়। এবং সেটিকেই ‘বি’আতে-শরঈ’ তথা শরীয়ত ভিত্তিক বিদ্আত বলা হয়। পক্ষান্তরে বিআতে-মাহমূদাহ্ হল সেই বিদ্আত যা সুন্নাহর অনুকুল ও সুন্নাহর অনুসরণে হয়ে থাকে। অর্থাৎ সেটির মূল ভিত্তি শরীয়তে বিদ্যমান রয়েছে, যেদিকে এটি ধাবিত হয়। আর এটিই হল বিদআতে-লুগাবী তথা আভিধানিক অর্থে বিদ্আত; এটি শরঈ বিদ’আত নয়। অর্থাৎ এটিকে শরীয়ত ভিত্তিক বিদ্আত বলা যায় না। এরই ব্যাখ্যায় ইমাম শাফেঈর দ্বিতীয় দলিল তার এই উক্তি যে, নব-আবিষ্কৃত বিষয়াদি দুই ধরনেরঃ
প্রথম, সেসব বিদআত যা কিতাব, সুন্নাহ্, সাহাবাগণের জীবনাদর্শ এবং উম্মতগণের ইজমার পরিপন্থী হবে এটি হল ‘বি’আতে-দ্বালালাহু’ তথা গােমরাহীপূর্ণ বিদ্আত।
পক্ষান্তরে এমন আবিষ্কার যাতে মঙ্গল ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে, আর ওসবের (কিতাব, সুন্নাহ্, সাহাবাগণের জীবনাদর্শ ও ইজমার) পরিপন্থী নয়, সেটি ‘বিদআতে গাইরে-মাযমূমাহ্’ তথা অনিন্দনীয় বিদ্আত। আর বহু বিষয় এমন রয়েছে যে, যেগুলাে আবিষ্কার হয়েছে, পূর্বে ছিল না। যেগুলােতে ওলামাদের মতবিরােধ রয়েছে যে, এগুলাে বিদআতে-হাসানাহ্ কি না। এমনি এগুলাে সুন্নাহর দিকে ধাবিত হয় কি হয় না। আর সেসবের মধ্যে রয়েছে হাদিস লেখার বিষয়টিও যে সম্পর্কে হযরত ওমর ফারূক রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এবং সাহাবাদের একটি দল নিষেধও করেছেন। অথচ অধিকাংশ সাহাবা অনুমতি প্রদান করেছেন এবং দলিল হিসাবে তারা সুন্নাহ হতে কিছু হাদিসও পেশ করেছেন। আর সেসবের মধ্যে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের তাফসীর তথা ব্যাখ্যা করাও রয়েছে; যেটিকে কোন কোন ওলামা অপছন্দ করেছেন। আবার সেসব ওলামাগণের অধিকাংশ সেটির অনুমতিও দিয়েছেন। অনুরূপ হারাম-হালাল সহ এই ধরনের অপরাপর ব্যাপারগুলােতেও নিজের মতামত ব্যক্ত করার বিষয়ে ওলামাদের মতবিরােধ রয়েছে। অনুরূপ বিভিন্ন ব্যাপার এবং অন্তরের কথা, যা সাহাবা ও তাবেঈদের পক্ষ থেকে প্রকাশ পায় নি, সেগুলাে সম্পর্কে কথাবার্তা বলার ব্যাপারেও ওলামাদের মতবিরােধ রয়েছে।
(২) ইমাম আবু আবদুল্লাহ মােহাম্মদ বিন আহমদ আল-কুরতুবী রাহমাতুল্লহি আলাইহি (ওফাত: ৩৮০ হি.)
[সুপ্রসিদ্ধ মুফাসসিরে-কুরআন ইমাম আবু আবদুল্লাহ্ মােহাম্মদ বিন আহমদ কুরতুবী]
বিদূ’আতের বিভিন্ন ধরনের প্রকারভেদ সম্পর্কে আলােচনা করতে গিয়ে তাঁরই বিখ্যাত তাফসীর ‘আল জামিউল আহকামিল কুরআন’-এ লিখছেন,