কিতাবুল ফিতানঃ নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকাল হতে কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য ফিতনা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

কিতাবঃ আল ফিতান

মূলঃ ইমাম নুয়াইম বিন হাম্মাদ (رحمة الله)

নবী করীম (ﷺ)-এর ইন্তেকাল হতে কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য ফিতনা ও তার সংখ্যা সম্পর্কে অভিহিত করণ

হাদিস – ১

হযরত আবু সাঈদ খুদরী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন একদা রাসূল (ﷺ) আমাদের নিয়ে একটু বেলা থাকতেই আসরের নামায আদায় করেন। অতঃপর সূর্য অস্ত ভাষণ দিলেন। উক্ত ভাষণে কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে তার সমস্ত কিছুই বর্ণনা করেন। তাঁর সেই ভাষণটি যারা ভুলে যাওয়ার তারা ভুলে গিয়েছে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ২

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা আমার সম্মুখে দুনিয়াকে উঁচু করে ধরলেন। অতঃপর দুনিয়াকে এবং তাতে কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য বিষয়গুলো দেখছিলাম যেমন আমার দুই হাতের তালুগুলো দেখছি এটা হলো আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট বিষয়, যা তিনি প্রকাশ করেছিলেন তার পূর্ববর্তি নবীগনকে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ২]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৩

হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কিয়ামত পর্যন্ত সংঘটিতব্য সমস্ত ফিতনা সম্পর্কে আমি সবচেয়ে বেশী অবগত। রাসূল (ﷺ) আমার নিকট সেই ফিতনা সম্পর্কে অনেক গোপন বিষয় আলোচনা করেছেন যা আমাকে ছাড়া অন্য কারো কাছে বর্ণনা করেন্নি। কিন্তু একদিন রাসূল (ﷺ) এক মজলিসে আগমণ করলেন। এরপর ছোট বড় বহু ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করলেন। উল্লেখ্য ঐ মজলিসে যারা উপস্থিত ছিল আমি ছাড়া প্রত্যেকেই দুনিয়া থেকে চলে গেছেন।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৪

হযরত হুযাইফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ঘোর অন্ধকার রাত্রির টুকরোর মত ফিতনা একের পর এক আসতেই থাকবে। তা তোমাদের কাছে গরুর চেহারার ন্যায় একই রকম মনে হবে। লোকেরা জানবেনা যে কোন টা কি কারণে হচ্ছে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৫

হযরত হুযাইফা বা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন। এই ফিতনা গরুর ন্যায়। তাতে বহু মানুষ ধ্বংশ হবে। তবে যারা পূর্বেই এ সম্পর্কে অবগতি লাভ করবে তারা ধ্বংশ হবে না।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৫]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৬

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেন, কিয়ামতের পূর্বে যখন যুগ পরস্পর নিকটে এসে যাবে তোমাদের কাছে কালো, বুড়ো ধরনের একটি উট এসে বসবে ফিতনার রূপ ধারণ করে। যেন মনে হবে সেটা অন্ধকারে ছেয়ে যাওয়া রাত্রের একটি টুকরা।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৭

র্কুয ইবনে আল্কামা খুযায়ী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে এক লোক জানতে চাইল ইসলামের কি কোনো শেষ রয়েছে? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন হ্যাঁ, আরব বা অনারব যে কোনো এলাকার কারো ঘরের সদস্যদের প্রতি আল্লাহ তাআলা কল্যাণ কামনা করলে তাদেরকে তিনি ইসলামের অন্তর্ভুক্ত করেন।

জিজ্ঞাসা করা হল, এরপর কি হবে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এরপর পাহাড় তুল্য ফিৎনা প্রকাশ পাবে। অতঃপর ঐ লোক বলল, আল্লাহর কসম! ইনশাআল্লাহ! ইয়া রাসূলুল্লাহ! এটা কখনো হতে পারেনা। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, কসম সে সত্ত্বার যার হাতে আমার রূহ, অবশ্যই হবে। এরপর উক্ত ফিৎনা চলাকালীন তোমরা আশ্রয় নিবে ফনাতুলা কালো বিষাক্ত সাপের। যেখানে তোমরা একে অপরের সাথে মারামারি, হানাহানিতে লিপ্ত হবে। বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইবনে শিহাব যুহরী (رحمة الله) বলেন, কালো বিষাক্ত যখন কাউকে দংশন করে তখন দংশিত স্থানে মুখের লালা জাতীয় কিছু বিষ লাগিয়ে দেয়ার পর মাথা উঠিয়ে লেজের উপর দাড়িয়ে যাবার চেষ্টা করে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৭]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৮

ভিন্ন সুত্রে উপরের হাদিস বর্নিত হয়েছে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৮]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৯

ফেৎনাকালীন আত্মরক্ষা করা মোস্তাহাব

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১০

হযরত আবু মুসা আশআরী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, কিয়ামত আসার পূর্বে ‘হারজ’ সংঘটিত হবে। লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো হারজ কী? তিনি বললেন হত্যা এবং মিথ্যা লোকেরা জিজ্ঞাসা করলো হে আল্লাহর রাসূল! এখন কাফেররা যে ভাবে নিহত হচ্ছে তার চেয়ে বেশী হত্যা সংঘটিত হবে? রাসূল (ﷺ) বললেন তোমাদের মাধ্যমে কাফেররা নিহত হবেনা বরং মানুষ তার প্রতিবেশী, আপন ভাই ও চাচাতো ভাইকে হত্যা করবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১০]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১১

হযরত উসাইদ ইবনে মুতাশাসি ইবনে মুয়াবিয়া  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আবু মুসা  (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি যে, কিয়ামত আসার পূর্বে মুসলমানদের মধ্য হতে ফিতনা ও হত্যা সংঘটিত হবে। এমনকি মানুষ তার দাদা,চাচাতো ভাই, পিতা ও আপন ভাইকে হত্যা করবে। আল্লাহর শপথ! আমি আশংকা করছি যে, না জানি আমি এবং তোমরা তাতে জড়িত হয়ে যাই।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১১]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১২

হযরত আবু মুসা আশআরী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় তোমাদের সম্মুখে ঘোর অন্ধকার রাত্রির একাংশের ন্যায় ফিতনা সংঘটিত হতে থাকবে,তাতে কোন ব্যক্তি সকালে মুমিন ও বিকালে কাফের এবং বিকালে মুমিন ও সকালে কাফেরে পরিণত হতে থাকবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১২]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১৩

হযরত মুজাহিদ (رحمة الله) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, অন্ধকার রাত্রির টুকরোর মত ফিতনা দেখা দিবে। সে সময় সকালে একজন মুমিন হলে বিকালে কাফের হয়ে যাবে। বিকালে মুমিন হলে সকালে কাফের হয়ে যাবে। তাদের মধ্যে কেউ পার্থিব সামান্য সামগ্রির বিনিময়ে তার দ্বীন বিক্রি করে বসবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৩]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১৪

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এই ফিতনা ঘোর অন্ধকার রাত্রির একাংশের ন্যায় ছায়া ফেলবে। যখনই কোন এক প্রকার ফিতনা চলে যাবে, তখনই আরেক প্রকার ফিতনা প্রকাশ পাবে। তাতে কোন ব্যক্তি সকালে মুমিন হলে বিকালে কাফের হয়ে যাবে, এবং বিকালে মুমিন হলে সকালে কাফের হয়ে যাবে। আর তখন লোকেরা পার্থিব সামান্য সামগ্রির বিনিময়ে তাদের দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৪]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১৫

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয় ফিৎনা আল্লাহর শহরগুলোতে এমনভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকবে তার লাগামকে সাড়ানো হবে। কারো জন্য তাকে জাগ্রত করা জায়েয হবেনা। ধ্বংস ঐসব ব্যক্তির জন্য যারা তার লাগাম ধরে টানাটানি করবে।

আবুয্ জাহিরিয়্যাহ বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর  (رضي الله عنه) বলেন, নিঃসন্দেহে তোমরা এ জগতে নানান ধরনের বালা-মসিবত এবং ফিৎনা-ফাসাদই দেখতে পাবে। ধীরে ধীরে মানুষের যাবতীয় অবস্থা কঠিনই হতে থাকবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৫]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১৬

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর রহস্য সম্বন্ধে অবগত সাহাবী হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) এরশাদ করেন, ফিৎনার সাথে সংশ্লিষ্ট লোক থেকে প্রায় তিনশতজন পর্যন্ত এমন রয়েছে, আমি ইচ্ছা করলে তাদের নাম, তাদের পিতা এবং গ্রামের নাম পর্যন্ত বলতে পারবো। যারা কিয়ামত পর্যন্ত। তার সবকিছুই রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে জানিয়ে গিয়েছেন।

উপস্থিত লোকজন জিজ্ঞাসা করলো, সরাসরি কি তাদেরকে দেখানো হয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন, তাদের আকৃতি দেখানো হয়েছে। যাদেরকে ওলামায়ে কেরাম এবং ফুকাহায়ে এজাম চিনতে পারবেন। হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) বলেন, তোমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কাছে কল্যাণ সম্বন্ধে জানতে চাও, কিন্তু আমি জানতে চেষ্টা করি অকল্যাণ বা খারাপী সম্বন্ধে আর তোমরা তাঁর কাছে জানতে চাও ঘটে যাওয়া বিষয় সম্বন্ধে, আমি জানতে চাই ভবিষ্যতে যা হবে সে সম্বন্ধে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৬]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১৭

হযরত হুজাইফা  (رضي الله عنه) এরশাদ করেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, আমার ওম্মতের মধ্যে এমন তিনশত লোক প্রকাশ পাবে যাদের সাথে তিনশত পতাকা থাকবে, যদ্বারা তাদের পরিচয় শনাক্ত করা যাবে। বংশীয়ভাবে এরা খুবই পরিচিত হবে। তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কথা প্রকাশ করলেও যুদ্ধ করবে সুন্নাতের বিপরীত পথভ্রষ্টার উপর।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৭]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১৮

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হুজাইফা ইবনুল এমান  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যাবতীয় ফিৎনা ফাসাদ আমি যা জানি, সেগুলো যদি তোমাদেরকে বয়ান করি তাহলে তোমরা আমার সাথে বিনিদ্র অবস্থায় থাকতে পারবে না।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৮]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১৯

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের ওপর ফিৎনা-ফাসাদ, অব্যাহত থাকবে এবং মোয়ামালা ধীরে ধীরে আরো কঠিন আকার ধারন করবে। যখন কোনো রাষ্ট্রপ্রধান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে দেশ পরিচালনা করে না এবং রাষ্ট্রনায়কগণ আল্লাহ তাআলার এবাদত করেনা তখন তোমরা আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হওয়াকে খুবই ভয় কর। কেননা, আল্লাহ তাআলা অসন্তুষ্ট হওয়া মানুষের অসন্তুষ্ট হওয়া থেকে মারাত্মক।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১৯]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ২০

আবু ইদরীস হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি, আবু সালেহ এবং আবু মুসলিম একসাথে ছিলাম। তারা দুইজনের একজন অপরকে বলল, তোমরা কি কোনো বিষয়ের ভয় করছ? তারা বলল, আমরা মানুষের লোভ সম্বন্ধে শংকিত। অতঃপর আমি বললাম, এমন লোভ একমাত্র আখেরী যামানার মানুষের মাঝে প্রকাশ পাবে।

উত্তরে তার বলল, তুমি ঠিকই বলেছ, কেউ লোভবিহীন কখনো ছিনতাই ডাকাতী করতে পারেনা এবং মানুষ সবচেয়ে বেশি ছিনতাই ইত্যাদির সম্মুখিন হবে একমাত্র ইসলামের ক্ষেত্রে। নিঃসন্দেহে যাবতীয় ফিৎনা ফাসাদ ইসলামের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে এবং উক্ত ফিৎনা আখেরী যামানাতেই ব্যাপক আকার ধারন করবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ২০]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ২১

কায়েস ইবনে আবু হোসেন থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, বৃষ্টির ন্যায় পৃথিবীতে ফিতনা বিস্তার লাভ করবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ২১]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ২২

হযরত ওবাইদুল্লাহ ইবনে আবু জাফর (رحمة الله) বলেন, যখন আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা আঃ এর কাছে উম্মাতে মুহাম্মাদিয়া মর্যাদা সম্বন্ধে আলোচনা করলেন তখন হযরত মুসা আঃ উম্মাতে মুহাম্মাদিয়ার অন্তর্ভুক্ত হওয়ার জন্য আবেদন করলেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, হে মুসা! উক্ত ওম্মতের মাঝে আখেরী যুগে অনেক ধরনের বালা মসিবত প্রকাশ পাবে। একথা শুনে হযরত মুসা আঃ বললেন, হে আল্লাহ! এধরনের বালা মসিবতকালীন কে ধৈর্য্য ধারন করতে পারবে? জবাবে আল্লাহ তাআলা বললেন, ঐ মুহূর্তে যারা ধৈর্য্য ধারন করে ঈমানের উপর অটল থাকবে তাদের জন্য বিভিন্ন ধরনের বালা মসিবত সহজ হয়ে যাবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ২২]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ২৩

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল’আস থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে এমন ফিতনা আসবে যে, তাতে মানুষ তার পিতা ও ভাই থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এমনকি মানুষ তার বিপদের ব্যাপারে অপমান বোধ করবে, যেমন ব্যভিচারীনি মহিলা তার ব্যভিচারের অপমান বোধ করে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ২৩]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ২৪

আবু তামীম জায়শানী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, অবিরাম বৃষ্টির ন্যায় তোমাদের নিকট ফিতনা প্রবলভাবে বর্ষন হতে থাকবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ২৪]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ২৫

হযরত উসামা ইবনে যায়েদ  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী করীম (ﷺ) একটি দুর্গের উপর আরোহন করে (লোকদেরকে) বললেন, আমি যা দেখছি তোমরাও কি তা দেখছ? নিশ্চয় আমি দেখছি যে, তোমাদের গৃহের ফাঁকে ফাঁকে বৃষ্টির ন্যায় ফিতনা পতিত হচ্ছে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ২৫]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ২৬

মিশর-শাম এলাকায় মতপার্থক্য সৃষ্টিকারী ঝান্ডার বর্ননা ও তাদের বিজয়

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ২৬]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ২৭

হযরত হুজাইফা  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর কসম শহরের রাস্তাগুলো থেকে এমন কোনো রাস্তা কিংবা গ্রামের গলিসমূহ থেকে এমন কোনো গলি নেই যার সম্বন্ধে আমি জানিনা যে, হযরত ওসমান  (رضي الله عنه) কে শহীদ করার পর যাবতীয় ফিৎনা ফাসাদ প্রকাশ পাবে। অর্থাৎ, সবকিছু আমার কাছে পূর্ব থেকে জানা আছে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ২৭]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ২৮

হযরত আবু সালেম জায়শানী (رحمة الله) বলেন, আমি হযরত আলী  (رضي الله عنه) কে কূফাতে বলতে শুনেছি, কিয়ামতের পূর্বে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এমন তিনশত লোক প্রকাশ পাবে আমি ইচ্ছা করলে তাদেরকে পরিচালনাকারী এবং উৎসাহদাতাদের নাম ঠিকানা সবকিছু বলে দিতে পারব।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ২৮]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ২৯

হুযাইফা  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট কল্যাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করত। আর আমি ক্ষতিকর বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম এই ভয়ে যেন আমি তাতে লিপ্ত না হই। হযরত হুযায়ফা  (رضي الله عنه) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমরা এক সময় মুর্খতা ও মন্দের মধ্যে নিমজ্জিত ছিলাম অতঃপর আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে এই কল্যাণ (অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম) দান করেন। তবে কি কল্যাণের পর পুনরায় অকল্যাণ (ফিতনা-ফাসাদ) আসবে? রাসূল (ﷺ) বললেন হ্যাঁ, আসবে। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম সেই অকল্যাণের পরে কি আবার কল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ আসবে। তবে তা হবে ধোঁয়াযুক্ত। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সেই ধোঁয়া কি প্রকৃতির? তিনি বললেন, লোকেরা আমার সুন্নত বর্জন করে অন্য তরিকা গ্রহণ করবে এবং আমার পথ ছেড়ে লোকদেরকে অন্য পথে পরিচালিত করবে। তখন তুমি তাদের মধ্যে ভাল কাজও দেখতে পাবে এবং দেখতে পাবে মন্দ কাজও। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম, সেই কল্যাণের পরও কি অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন হ্যাঁ, দোজখের দ্বারে দাঁড়িয়ে কতিপয় আহ্বানকারী লোকদেরকে সেই দিকে আহ্বান করবে। যারা তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে তাদেরকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে তাদের পরিচয় জানিয়ে দিন। তিনি বললেন, তারা আমাদের মতোই মানুষ হবে এবং আমাদের ভাষায় কথা বলবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ২৯]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৩০

হযরত হাসসান ইবনে আতিয়্যাহ হযরত হুযায়ফা  (رضي الله عنه) থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেন, (অর্থাৎ ২৯ নং হাদীসের অনুরূপ বর্ণনা করেন)।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩০]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৩১

হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার সঙ্গির কল্যাণ সম্পর্কে শিক্ষা করতে। আর আমি অকল্যাণ বিষয় সম্পর্কে শিক্ষা করতাম তার মধ্যে পতিত হওয়ার ভয়ে। (বর্ণনাকারী ঈসা বলেন) অর্থাৎ ফিতনার মধ্যে পতিত হওয়ার ভয়ে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩১]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৩২

হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামানে  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা এক সময় মুর্খতা ও মন্দের মধ্যে নিমজ্জিত ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই কল্যাণ (অর্থাৎ দ্বীন-ইসলাম) দান করেন। তবেকি এই কল্যাণের পর পুনরায় অকল্যান আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আসবে। তবে তা হবে ধোঁয়াযুক্ত। ঐ সমস্ত লোকেরা আমাদের মতই মানুষ হবে এবং আমাদের ভাষাই কথা বলবে। তুমি তাদের মধ্যে ভালো কাজও দেখতে পাবে এবং মন্দ কাজও দেখতে পাবে। জাহান্নামের দ্বারে দাঁড়িয়ে কতিপয় আহ্বানকারী লোকদেরকে সেই দিকে আহ্বান করবে। যে ব্যক্তি তাদের অনুসরণ করবে, তাকে তারা জাহান্নামে প্রবিষ্ট করে ছাড়বে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩২]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৩৩

হযরত হুযায়ফা  (رضي الله عنه) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেন (অর্থাৎ ৩২ নং হাদীসের অনুরূপ)।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৩]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৩৪

হযরত হুযায়ফা  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকেরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর নিকট কল্যাণ সম্পর্কে প্রশ্ন করত। আর আমি ক্ষতিকর বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতাম এই ভয়ে যেন আমি তাতে লিপ্ত না হই। একদিন আমি রাসূল (ﷺ) এর নিকট বসা ছিলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে যেই কল্যাণ দান করেছেন সেই কল্যাণে পর কি পুনরায় অকল্যাণ দান করেছেন। সেই কল্যাণের পর কি পুনরায় অকল্যাণ আসবে? যা পূর্বেও ছিল। তিনি বললেন হ্যাঁ, আসবে। আমি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম তারপর কি হবে? রাসূল (ﷺ) বললেন, ধোকার উপর সন্ধি চুক্তি হবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, সন্ধিচুক্তির পর কি হবে? তিনি বললেন,কতিপয় আহ্বানকারী গোমরাহীর দিকে আহ্বান করবে। যদি তুমি তখন আল্লাহর কোন খলীফা (শাসক) এর সাক্ষাৎ পাও তাহলে অবশ্যই তার আনুগত্য করবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৪]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৩৫

হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন। আমার ওম্মত ধ্বংস হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের মধ্যে তামায়ুয, তামায়ুল ও মাআমূ প্রকাশ না পাবে।

হুজাইয়া  (رضي الله عنه) বলেন, আমি বললাম, ইয়ারাসূলুল্লাহ আমার আব্বা, আম্মা আপনার জন্য কুরবান হউক তামায়ুম কি জিনিস? রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তামায়ুম হচ্ছে আমাবিয়্যাত বা স্বজনপ্রীতি যা আমার পরে মানুষের মাঝে ইসলামের ক্ষেত্রে প্রকাশ পাবে।

অতঃপর জিজ্ঞাস করলাম, তামায়ুল কি জিনিস? জবাবে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এক গোত্র অন্য গোত্রে প্রতি হামলা করবে এবং অত্যাচারের মাধ্যমে একে অপরের উপর আক্রমণ করাকে বৈধ মনে করবে।

এরপর জানতে চাইলাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! মাআমূ কি জিনিস? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জবাব দিলেন, এক শহরবাসী অন্য শহরবাসীর সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হবে, যার কারণে তারা একে অপরের বিরোধীতায় মেতে উঠবে। এটা বুঝাতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতে প্রবেশ করালেন। তিনি আরো বললেন, এ অবস্থা তখনই হবে যখন ব্যাপকভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশৃংঙ্খলা দেখা দিবে এবং বিশেষ কিছু লোকের অবস্থা তুলনামূলক ভালো থাকবে। সুসংবাদ ঐ ব্যক্তির জন্য যাকে আল্লাহ তাআলা খাছ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে এসলাহ দান করেছেন।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৫]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৩৬

হযরত ইবনে আব্বাস  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, বনী ইসরাঈলদের মধ্যে এমন কোন বিষয় ছিলনা যা তোমাদের মধ্যে সংঘটিত হবেনা।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৬]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৩৭

হযরত আবুল আলিয়া (رحمة الله) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন তাসতুর নামক এলাকা বিজয় হয়,তখন আমরা হরমুজের স্টোর রুমে একটা জিনিষ পেলাম, দেখলাম, খাটিয়ার উপর রাখা একটি লাশের মাথার পার্শ্বে একটা লিখিত কিছু রেখে দেয়া আছে। ধারনা করা হয় এটা হযরত দানিয়াল আঃ এর লাশ।

অতঃপর আমরা সেটাকে আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওমর  (رضي الله عنه) এর কাছে পাঠিয়ে দিলাম। হযরত আবুল আলিয়া বলেন, আরবদের থেকে আমিই সেটাকে সর্বপ্রথম পাঠ করি। পরবর্তীতে লিখিত কাগজগুলোকে কা’ব এর নিকট পাঠানো হলো তিনি সেগুলো আরবী ভাষায় অনুবাদকালে, দেখা গেল; হযরত দানিয়াল আঃ এর সাথে থাকা কাগজের মধ্যে যাবতীয় সব ফিৎনার বর্ণনা স্পষ্টভাবে রয়েছে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৭]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৩৮

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি নিম্নের আয়াত সম্বন্ধে বলেন, এখনো পর্যন্ত উক্ত আয়াতের মর্ম প্রকাশ পায়নি। আয়াতটি হচ্ছে, ———————- অর্থাৎ, হে মুমিনগন! তোমরা নিজেদের চিন্তা কর। তোমরা যখন সৎপথে রয়েছে, তখন কেউ পথভ্রান্ত হলে তাতে তোমাদের কোনো ক্ষতি নেই। (সূরা মায়েদাহ-১০৫)

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ  (رضي الله عنه) বলেন, আল্লাহ তাআলা সর্ব বিষয়কে সামনে রেখে কুরআন শরীফ নাযিল করেছেন। তার মধ্যে এমন কতক বিষয় রয়েছে, যা কুরআন অবতির্ণ হওয়ার পূর্বেই প্রকাশ পেয়েছে, আবার কতক আয়াত এমন রয়েছে যার ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে প্রকাশ পেয়েছে। কিছু আয়াত এমন আছে, যার সামান্য ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার পর সংঘটিত হয়েছে। কিছু আয়াত এমন আছে, যার ব্যাখ্যা পরবর্তী যুগে প্রকাশ পাবে। আবার কিছু আয়াতের ব্যাখ্যা ফুটে উঠবে হিসাব-নিকাশের দিন। সেগুলো হচ্ছে, ঐ সব আয়াত যার মধ্যে হিসাব-নিকাশ, জান্নাত-জাহান্নাম সম্বন্ধে লেখা রয়েছে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৮]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৩৯

ওমাইর ইবনে হানী (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমাদেরকে বর্ণনা করেছেন এমন কতক শাইখ যারা সিফফীন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন। তারা বলেন, আমরা যূদী পাহাড়ে এসে হঠাৎ করে আবু হুরাইরা  (رضي الله عنه) এর সাক্ষাৎ হলো। আমরা তাকে একহাত অন্যহাতের উপর রেখে পিছনে ধরে রাখা অবস্থায় পেলাম। পাহাড়ের সাথে ঠেশ দিয়ে বসে আল্লাহ তাআলার যিকিররত থাকতে দেখলাম। আমরা তাকে সালাম দিলে তিনি সালামের উত্তর দিলেন। আমরা তাঁকে বললাম,এ ফিৎনা সম্বন্ধে আমাদেরকে কিছু অবগত করুন। অতঃপর তিনি বললেন, নিশ্চয় তোমরা উক্ত ফিৎনার ক্ষেত্রে তোমরা তোমাদের শত্র“র বিরুদ্ধে সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। এরপর তিনি বলেন, বিভিন্ন ধরনের ফিৎনা প্রকাশ পাবে, যা মূলতঃ মধুর মধ্যে পানির ন্যায়। তেমনিভাবে তোমাদেরকে ধ্বংস করে দেয়াহবে, অথচ তোমরা নগন্য এবং লজ্জিত হবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৩৯]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৪০

হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব  (رضي الله عنه) বলেন, কিয়ামত সংঘঠিত হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা বড় বড় কিছু বিষয় স্বচক্ষ্যে দেখবেনা এবং তোমরা সেগুলো নিজেদের মধ্যেও আলোচনা করার সাহস পাবে না।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪০]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৪১

হযরত সালমা ইবনে নুকাইল  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তোমরা আমার পর এমন কিছু সময় অবস্থান করবে, যার মধ্যে তোমরা একে অপরের শত্র“তে পরিণত হবে এবং অতিসত্ত্বর তোমরা কিছু সন্যের উপর হামলা করবে, যারা এক দল অন্য দলের উপর হামশে পড়বে। কিয়ামতের পূর্বে ব্যাপক হত্যা প্রকাশ পাবে এবং এর পর কিছু বৎসর এমনভাবে অতিবাহিত হবে যেন সেগুলো ভুমিকম্পের বৎসর।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪১]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৪২

হযরত মাকহুল (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, আল্লাহতায়ালর বাণী ———————————- অর্থাৎ “তোমরা এক সিঁড়ি থেকে আরেক সিঁড়িতে আরোহন করবে।” (সূরা ইনশিক্বাক্বঃ ১৯) (বর্ণনাকারী এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ) প্রত্যেক বিশ বছরের মধ্যে তোমরা যে অবস্থাতে ছিলে, সেটা ছাড়া অন্য অবস্থাতে থাকবে। (অর্থাৎ প্রতি বিশ বছর পর পর তোমাদের অবস্থা পরিবর্তন হতে থাকবে।)

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪২]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৪৩

হযরত সা’য়াদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন, তথা ——————————— অর্থাৎ “হে নবী আপনি বলে দিন ঃ তিনিই (আল্লাহ) শক্তিমান যে, তোমাদের উপর কোন শাস্তি উপর দিক থেকে অথবা তোমাদের পদতল থেকে প্রেরণ করবেন।” (সূ (رضي الله عنه) আন’আমঃ ৬৫)। অতঃপর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, জেনে রেখ! নিশ্চয় তা সংঘটিত হবে। (বর্ণনাকারী বলেন) এর পর তার আর কোন ব্যাখ্যা করেননি।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৩]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৪৪

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত মুআম ইবনে জাবাল  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিঃ সন্দেহে তোমরা দুনিয়াতে ফিৎনা ফাসাদ এবং বালা-মসিবতই দেখতে পাবে। ধীরে ধীরে মোয়ামালা কঠিন থেকে কঠিনতর হতে থাকবে। যেসব বালা মসিবতগুলো তোমাদের কাছে ভয়াবহ এবং মারাত্মক মনে হবে কিন্তু তোমাদের পরবর্তীদের কাছে খুবই সহজলভ্য মনে হবে, যেহেতু তারা এর থেকে আরো কঠিন বিপদ আপদের সম্মুখিন হবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৪]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৪৫

মির ইবনে হুবাইশ (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আলী  (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছেন, তোমরা আমার কাছে জানতেচাও, আল্লাহর কসম! কিয়ামতের পূর্বে প্রকাশ পাওয়া শত শত দল যারা যুদ্ধে লিপ্ত হবে তাদের সম্বন্ধে আমার কাছে জানতে চাওয়া হলে,আমি তাদের সেনাপ্রধান, পরিচালনাকারী এবং আহবানকারী সকলের নাম বলে দিতে পারব। তোমাদের এবং কিয়ামতের মাঝখানে যা কিছু সংঘটিত হবে সবকিছু পরিস্কারভাবে বলতে পারব।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৫]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৪৬

হযরত মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, জেনে রাখ! দুনিয়াতে বিপদ ও ফিতনা ছাড়া কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৬]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৪৭

হযরত যুবায়ের ইবনে আদী আনাস ইবনে মালেক  (رضي الله عنه)-কে বলতে শুনেছেন যে, আগামীতে তোমাদের উপর যে বছর আসবে তা অতীত অপেক্ষা আরো মন্দ হবে। একথাগুলো আমি তোমাদের নবী (ﷺ) হতে শুনেছি।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৭]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৪৮

হযরত আবুল জিল্দ জিলান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় মুসলমানরা বিপদে আপতিত হবে পর মানুষ তাদের চতুর্দিকে ঘোরাঘুরি করতে থাকবে। ফলে মুসলমান কষ্টের কারণে ইহুদী ও খৃষ্টান হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৮]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৪৯

হযরত হুযায়ফা  (رضي الله عنه) ও হযরত আবু মুসা  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছেন, যে, কিয়ামতের পূর্বে এমন দিন আসবে যে তাতে মুর্খতা অবতীর্ণ হতে থাকবে এবং ‘হারজ’ বেড়ে যাবে। লোকেরা প্রশ্ন করলো ইয়া রাসূলাল্লাহ ‘হারজ’ কী? তিনি বললেন হত্যা।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৪৯]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৫০

বিশিষ্ট তাবেঈ হযরত আ’নাস (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তার কাছে যিনি বর্ণনা করেছে তার কাছ থেকে তিনি নকল করেছেন, তিনি বলেন, তোমাদের কাছে যখনই এমন কোনো বালা মসিবত প্রকাশ পায়,যার কারণে তোমরা চিল্লাচিল্লি করবে, কিন্তু পিছনে এমন আরো বালা-মসিবত অপেক্ষা করছে যা এর থেকেও মারাত্মক। যে বালা মসিবত তোমাদেরকে পূর্বের মসিবতকে ভুলিয়ে দিবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৫০]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৫১

হযরত আবু ওয়ায়েল হযরত আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যখন ফিতনা তোমাদেরকে জড়াবে তখন তোমাদের কি অবস্থা হবে? তাতে বড়রা অতিবৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং ছোটরা বড় হতে থাকবে। মানুষ তাকে সুন্নত হিসাবে গ্রহণ করবে। যখন তা থেকে কোন কিছু ছেড়ে দিবে,তখন বলা হবে তুমি সুন্নতকে ছেড়ে দিয়েছ। কেউ প্রশ্ন করল হে আবু আব্দুর রহমান, তা কখন হবে? তিনি বললেন যখন তোমাদের মধ্যে অজ্ঞব্যক্তিরা ব্যাপকতা লাভ করবে,আর আলেমগণ কমে যাবে। কারী ও নেতা বৃদ্ধি পেতে থাকবে আমানতদার ব্যক্তি কমে যাবে। আখেরাতের আমলের মাধ্যমে দুনিয়া অন্বেষণ করবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৫১]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৫২

হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,তোমাদের মাঝে এবং তোমাদের উপর অকল্যান নিপতিত হওয়ার মাঝে একমাত্র দুরত্ব হলো ওমর  (رضي الله عنه) এর মৃত্যু। (অর্থাৎ ওমর (رضي الله عنه) এর মৃত্যুর পর থেকেই অকল্যাণ তথা ফিতনা আসতে থাকবে।)

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৫২]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৫৩

হযরত হুযায়ফা  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তোমাদের মাঝে এবং অকল্যাণের মাঝে একমাত্র দূরত্ব হলো একজন ব্যক্তি। তিনি যখন মৃত্যুবরণ করবেন তখন তোমাদের উপর অকল্যাণকে ঢেলে দেওয়া হবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৫৩]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৫৪

হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ  (رضي الله عنه) এর এক গোলাম বলেন, আমি একদিন হযরত আবু হুরায়রা  (رضي الله عنه) কে দেখলাম, যে অবস্থায় তিনি কতক বাচ্চাকে একথা বলতে শুনেছেন, “পরবর্তীতে অবস্থা খুবই ভয়াবহ হবে”। একথা শুনার সাথে সাথে হযরত আবু হুরায়রা  (رضي الله عنه) বলে উঠলেন,কসম যে সত্ত্বার যার হাতে আমার প্রাণ, কিয়ামতের দিন পর্যন্ত আরো অনেক কঠিন ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখিন হতে হবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৫৪]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৫৫

হযরত হুজায়ফা  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি একদিন আমেরকে বললেন, হে আমের! তুমি যা অবলোকন করছ যেগুলো যেন তোমাকে ধোকায় ফেলে না দেয়, হতে পারে এগুলো খুব দ্রুত তাদেরকে তাদের দ্বীন থেকে বের করে আনবে। যেমন,এক মহিলা অন্য মহিলার সামনে তার লজ্জাস্থানকে প্রকাশ করে থাকে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৫৫]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৫৬

হযরত আবু হুরায়রা  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত,তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, সর্বপ্রথম পারস্যবাসীরা ধ্বংস হবে। তাদের ধ্বংসের পরপর আরবের অধিবাসীগণ ধ্বংস হতে থাকবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৫৬]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৫৭

হযরত উবাই ইবনে কা’ব  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) এর যুগে আমরা একদিকে মনোযোগি ছিলাম, অতঃপর যখন রাসূল (ﷺ) ইন্তেকাল করলেন তখন আমরা এদিক সেদিক মনোযোগ দিতে লাগলাম।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৫৭]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৫৮

মুহাম্মদ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আবিযি’ব (رحمة الله) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুয যুবায়ের  (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি, আমার রাষ্ট্র পরিচালনা সম্বন্ধে হযরত কা’ব যেসব মসিবতের কথা বলেছেন আমি আমার জিম্মাদারী পালন করতে গিয়ে সবকিছুর সম্মুখিন হয়েছি।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৫৮]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৫৯

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে  (رضي الله عنه) হতে বিশিষ্ট তাবেঈ হযরত মুজাহিদ (رحمة الله) বর্ণনা করেন। একদিন হযরত ইবনে ওমর  (رضي الله عنه) আবু কুবাইদের উপর কিছু সূউচ্চ বাড়ি দেখতে পেয়ে বললেন, হে মুজাহিদ! যখন তুমি মক্কার ঘর বাড়িকে তার আশ্বপাশ্বের বাড়ি ঘর থেকে উঁচু দেখতে পাবে এবং তার অলি-গলিতে পানি প্রবাহিত হতে দেখবে তখন তুমি অবশ্যই এগুলো থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৫৯]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৬০

হযরত আবু ওয়ায়েল (رحمة الله) বলেন, আমি হুযায়ফা  (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি একদা আমরা হযরত ওমর  (رضي الله عنه) এর বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ফিতনা সম্পর্কীয় বাণী স্মরণ আছে? হযরত হুযায়ফা  (رضي الله عنه) বলেন, আমি বললাম, আমার স্মরণ আছে তিনি যে ভাবে বলেছেন, হযরত ওমর (رضي الله عنه) বললেন, এ ব্যাপারে তুমি সৎসাহসী সুতরাং তা পেশ কর। আমি বললাম মানুষ ফিতনায় পড়বে তার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে, মালসম্পদের ব্যাপারে, তার নিজের সন্তানসন্ততি ও পাড়া প্রতিবেশীর ব্যাপারে। তবে নামাজ, সদকা এবং ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধ তা মিটিয়ে দেবে। হযরত ওমর  (رضي الله عنه) বললেন, আমি এ ফিতনা সম্পর্কে জানতে চাইনি, বরং যে ফিতনা সমুদ্রের তরঙ্গমালার মত উত্থিত হবে এবং তোলপাড় করে ফেলবে, সে ফিতনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) বলেন, তখন আমি বললাম,হে আমীরুল মু’মিনীন! আপনি ভয় করবেন না, (তা তো আপনাকে পাবেনা।) কেননা সেই ফিতনা ও আপনার মধ্যে একটি আবদ্ধ দরজা রয়েছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা সেই দরজাটি কি ভেঙ্গে দেওয়া হবে, না খোলা হবে? হযরত হুযায়ফা  (رضي الله عنه) বলেন, আমি বললাম, খোলা হবে না; বরং ভেঙ্গে দেওয়া হবে। তখন হযরত ওমর (رضي الله عنه) বলেন, তাহলে তা আর কখনো বন্ধ করা হবেনা। আমি বললাম হ্যাঁ। রাবী বলেন, তখন আমরা হযরত হুযায়ফা ( (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করলাম আচ্ছা হযরত ওমর (رضي الله عنه) কি জানতেন দরজাটি কে? উত্তরে তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি এমন নিশ্চিতভাবে জানতেন যেমন আগামীকালের পূর্বে রাত্রির আগমন সুনিশ্চিত। আমি তাঁকে (ওমর (رضي الله عنه)কে) এমন একটি হাদীস বর্ণনা করেছে,যা কোন গোলক ধাঁধা নয়। রাবী শাক্বীক্ব বলেন, আমরাতো এ ব্যাপারে হযরত হুযায়ফা  (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞাসা করতে ভয় পাচ্ছিলাম তাই হযরত মাসরূক্বকে বললে তিনি হযরত হুযায়ফাকে জিজ্ঞাসা করলেন, দরজাটি কে? উত্তরে তিনি বললেন, দরজাটি হলেন ‘ওমর’ নিজেই।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬০]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৬১

হযরত কা’ব  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় মানুষের উপর এমন যুগ আসবে যে, মুমিন ব্যক্তি তার ঈমানের ব্যাপারে অপমানবোধ করবে। যেমন আজকাল পাপিষ্ট তার পাপের ব্যাপারে অপমান বোধ করে। এমনকি যে কোন ব্যক্তিকে বলা হবে যে, তুমি মুমিন, ফকীহ। (ফিক্হশাস্ত্রবিদ)

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬১]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৬২

হযরত আব্দুল্লাহ  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন মিথ্যা প্রকাশ পাবে তখন হত্যা বেশী হতে থাকবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬২]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৬৩

হযরত আয্রা ইবনে কাইছ থেকে বর্ণিতঃ একদিন হযরত খাশেদ ইবনে ওলীদ  (رضي الله عنه) শামের মধ্যে খুতবা দেয়া অবস্থায় এক লোক দাড়িয়ে বলল, নিঃ সন্দেহে ফিৎনা প্রকাশ পেয়ে গেল। একথা শুনে হযরত খালেদ বিন ওলীদ  (رضي الله عنه) বললেন, হযরত ওযর (رضي الله عنه) যত দিন জীবিত থাকবেন ততদিন নয়। সেটা তখনই হবে যখন মানুষ বিভিন্ন প্রকার বালা মসিবতে লিপ্ত হয়ে পড়বে। যে বালা-মসিবত থেকে বাঁচার জন্য মানুষে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিতে চেষ্টা করবে কিন্তু যে রকম কোনো আশ্রয়স্থল তারা পাবে না। মূলতঃ তখনই ফিৎনাসমূহ প্রকাশ পেতে থাকবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৩]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৬৪

হযরত আব্দুল্লাহ  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নিশ্চয় রাত্রি সমূহ, দিন সমূহ, মাস সমূহ এবং যুগ সমূহ এর অকল্যাণ কিয়ামতের বেশী নিকটবর্তি।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৪]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৬৫

হযরত হুজাইফা ইবনুল এমান  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন হযরত ওমর  (رضي الله عنه) এর কাছে আসলে তিনি আমাদেরকে নিয়ে কথাবার্তা বলতে গিয়ে বললেন, তোমাদেরকে নিয়ে কথাবার্তা বলতে গিয়ে বললেন, তোমাদের মাঝে এমন কে আছ, যে লোক ফিৎনা সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বাণীর হেফাজতকারী। তারা সকলে বললেন, এ সম্বন্ধে তো আমরা সকলেই শুনেছি, এক পর্যায়ে হযরত ওমর  (رضي الله عنه) বললেন, হয়তো বা তোমরা তোমাদের ব্যক্তিগত এবং পরিবার গত ফিৎনার কথা বলছো। তারা সকলে বললো, হ্যাঁ আমরা সকলে এরকম ধারনা করেছি। তাদের কথা শুনে হযরত ওমর (رضي الله عنه) বললেন, আমার উদ্দেশ্য কিন্তু সেটা নয়, সেটা তো নামায-রোযা দ্বারা মাফ হয়ে যাবে। বরং এমন ফিৎনা সম্বন্ধে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাচ্ছি, যা,সমুদ্রের যত বিশাল বিশাল আকারের ঢেউ তুলবে। হযরত ওমর  (رضي الله عنه) এর কথা শুনে উপস্থিত সকলে চুপ হয়ে যায়। আমি ভাবলাম তিনি আমারই মনোযোগ আকৃষ্ট করতে চাচ্ছেন। ফলে আমি বলে উঠলাম, হে আমীরুল মুমিনীন! আমি বলতে পারব। আমার কথা শুনে তিনি বললেন অবশ্যই, তোমার পিতা আল্লাহর জন্য কুরবান হোক।

আমি বললাম, হে আমীরুল মুমিনীন! উক্ত ফিৎনার বিপরীত একটা শক্তভাবে বন্ধ দরজা রয়েছে যে দরজা খোলা হবে না হয় ভাঙ্গা হবে। হযরত ওমর  (رضي الله عنه) বললেন তোমার ধ্বংস হোক যে দরজা ভাঙ্গ হবে?

আমি বললাম, হ্যাঁ! ভাঙ্গ হবে, আমার কথাশুনে তিনি বললেন, যদি যে দরজা ভাঙ্গা হয়, হয়তো সেটা আর বন্ধ করা সম্ভব হবেনা। অতঃপর আমি বললাম, হ্যাঁ যেটা ভেঙ্গে ফেলা হবে এবং যে দরজা হচ্ছেন, একজন মহান ব্যক্তি, হয়ত তাকে হত্যা করা হবে, না হয় তিনি স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করবেন। এটা এমন হাদীস যার মধ্যে সন্দেহের লেশমাত্র নেই।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৫]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৬৬

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত নু’মান ইবনে বশির  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, কিয়ামতের পূর্বে এমন কিছু ফিৎনা প্রকাশ পাবে, যেন যেগুলো অন্ধকার রাতের একটা টুকরা। সকাল বেলা যে লোক মুসলমান থাকবে বিকালে যে কাফের হয়ে যাবে। একদিন সন্ধ্যার সময় যে মুসলমান থাকবে, পরের সকালে সে কাকের হয়ে যাবে। মানুষ তাদের চরিত্রকে দুনিয়ার সামান্য ও নগন্য বস্তুর বিনিময়ে বিক্রি করে দিবে। উক্ত হাদীসের বর্ণনাকারীদের একজন হযরত হাসান বসরী (رحمة الله) বলেন, আল্লাহর কসম, যিনি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, নিঃসন্দেহে আমি তাদেরকে এমন সূরতে দেখেছি, যেন তাদের মধ্যে কোনো বোধশক্তি নেই, তারা যেন জ্ঞান-বুদ্ধিবিহীন কিছু শরীর। তাদেরকে দেখলে মনে হয় আগুনের বিছানা এবং লোভি মাছি। সকার করে দুই দেরহাম দ্বারা, সন্ধ্যা করে দুই দেরহামের মাধ্যমে। তারা নিজেদের দ্বীনকে বিক্রি করে দিবে, সামান্য একটা ছাগলের টাকার বিনিময়ে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৬]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৬৭

হযরত আবু ওয়ায়েল শাকীক বলেন, হুযায়ফা  (رضي الله عنه) বলেছেন, একদা হযরত ওমর (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) এর সাহাবীদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কোন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর ফিতনা সম্পর্কীয় বাণী শুনেছ? হযরত হুযায়ফা  (رضي الله عنه) বলেন,আমি বললাম, আমি রাসূল (ﷺ) কে বলতে শুনেছি যে, মানুষ ফিতনায় পড়বে তার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে, মাল সম্পদের ব্যাপারে এবং তার পাড়া-প্রতিবেশীর ব্যাপারে। তবে রোজা, নামাজ ও সদকা তা মিটিয়ে দেবে। হযরত ওমর  (رضي الله عنه) বলেন, আমি এ ফিতনা সম্পর্কে জানতে চাইনি, বরং যে ফিতনা সমুদ্রে তরঙ্গমালার মতো উত্থিত হবে এবং তোলপাড় করে ফেলবে, আর তা একের পর এক আসতে থাকবে, সে ফিতনা সম্পর্কে রাসূল (ﷺ) এর বাণী জানতে চেয়েছি। হযরত হুযাইফা  (رضي الله عنه) বলেন, তখন আমি বললাম হে আমীরুল মুমিনীন! উক্ত ফিতনা সম্পর্কে আপনি ভয় করবেন না! (তা আপনাকে পাবেনা) কেননা সেই ফিতনা ও আপনার মধ্যে একটি আবদ্ধ দরজা রয়েছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা সেই দরজাটি কেমন হবে? তা কি ভেঙ্গে দেওয়া হবে, না খোলা হবে? হুযায়ফা  (رضي الله عنه) বলেন, আমি বললাম, খোলা হবে না; বরং ভেঙ্গে দেওয়া হবে। অতঃপর কিয়ামত পর্যন্ত তা আর কখনো বন্ধ করা হবে না।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৭]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৬৮

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু মুসা আশআরী  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়, কিয়ামতের পূর্বে হারজ বা গণহত্যা হবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! হারজ কী? রাসূলুল্লাহ যাঃ বললেন, ব্যাপক হত্যা। আমরা সহসা জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ! বর্তমানে যেমন হত্য চলছে তার থেকেও বেশি হবে! জবাবে তিনি বললেন, মুসলমানদের অবস্থা তখনকার যুগে বর্তমানের চেয়ে আরো উন্নত হবে।

এক পর্যায়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমাদেরকে কাফেররা হত্যা করবেনা, বরং তোমরা নিজেরাই একে অপরকে হত্যা করবে। এমন কি মানুষ তার আপন ভাই, চাচাত ভাই এবং প্রতিবেশিকে হত্যা করবে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মুখ থেকে একথা শুনার সাথে সাথে উপস্থি সকলে এমনভাবে আশ্চর্য্যন্বিত হয়ে পড়ল, যার ফলে অনেক সময় স্পষ্ট বস্তুও আমাদের দৃষ্টিগোচর হতোনা।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৮]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৬৯

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন ফিতনা তোমাদেরকে জড়াবে তখন তোমাদের কি অবস্থা হবে? তাতে বড়রা আরো বৃদ্ধ হবে এবং ছোটরা বড় হয়ে থাকবে। মানুষ তাকে দ্বীন হিসেবে গ্রহণ করবে। যখন তাতে কোন কিছু পরিবর্তিত হবে তখন লোকেরা বলবে এটা দ্বীন পরিপন্থি। কেউ জিজ্ঞাসা করলো তা কখন ঘটবে? তখন তিনি বললেন, যখন তোমাদের মধ্যে নেতারা আধিক্যতা লাভ করবে আর আমানতদার ব্যক্তি কমে যাবে। বক্তাবৃন্দ আধিক্যতা লাভ করবে আর দ্বীনের বিজ্ঞ আলেমগন (ফকীহ) কমে যাবে। তার দ্বীন ব্যতিত অন্য কিছু (বদদ্বীন) শিক্ষা করবে এবং তারা আখেরাতের আমলের বিনিময়ে দুনিয়া অন্বেষণ করবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৬৯]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৭০

আবু কুবাইল  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মাসলামা ইবনে মাখলাদ আল আনসারীকে বলতে শুনেছি, তিনি সামুদ্রিক সৈন্য প্রেরণের ক্ষেত্রে কিছুটা বৃদ্ধি করেছিলেন, যার কারণে তার অন্য সৈন্যরা অসন্তুষ্ট হয়েছিল। তিনি তাদের এ অবস্থা দেখে মিম্বরে দাড়িয়ে বললেন, হে মিশরবাসী! তোমরা আমাকে ভর্ৎসনা করোনা। আল্লাহর কসম নিঃসন্দেহে আমি বৃদ্ধি করেছি তোমাদের সৈন্য সংখ্যায় এবং তোমাদের রসদপত্রের মধ্যে অনেক বৃদ্ধি করেছি আর আমি তোমাদের শত্র“দের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে শক্তিশালী করেছি। একথা জেনে রেখ, নিশ্চয় আমি তোমাদের পরবর্তীদের থেকে অনেক-অনেক উত্তম। কেননা ধীরে ধীরে মানুষের মাঝে ফিৎনা বৃদ্ধি পাবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৭০]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৭১

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, কিয়ামত সংঘটিত হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের ইমামকে হত্যা করবেনা এবং তোমরা অযথা তোমাদের তলোয়ার পরিচালনা করবেনা। এপৃথিবীর মালিক বনে যাবে নিকৃষ্টতম লোকজন।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৭১]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৭২

হযরত আওফ ইবনে মালেক আশজারী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাকে বললেন, হে আওফা কিয়ামতের পূর্বের ছয়টি নির্দেশনকে তুমি গণনা করে রাখ। (১) আমার ওফাত। (হযরত আওফ বলেন) একথা আমাকে কাদিয়ে দিল। তখন রাসূল (ﷺ) আমাকে চুপ করিয়ে দিলেন। অতঃপর রাসূল (ﷺ) বললেন বলো এক, (২) বায়তুল মুকাদ্দস বিজয়, (রাসূল (ﷺ) বললেন বলো দুই। (৩) ব্যাপক মহামারী যা আমার উম্মতের মধ্যে বকরির মাড়কের ন্যায় দেখা দিবে। (রাসূল (ﷺ) বললেন) বলো তিন। (৪) আমার উম্মতের মধ্যে ফিতনা সংঘটিত হবে এবং বিরাট আকার ধারন করবে। (রাসূল (ﷺ) বললেন) বলো চার। (৫) তোমাদের মধ্যে ধন সম্পদের এত প্রাচুর্য হবে যে, কোন ব্যক্তিকে একশত দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) প্রদান করলেও সে (এটাকে নগন্য মনে করে) অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবে। (রাসূল (ﷺ) বললেন) বলো পাঁচ। (৬) বনুল আসফার (রোমবা) দের সাথে তোমাদের একটি সন্ধিচুক্তি হবে। অতঃপর তারা তোমাদের নিকট গিয়ে তোমাদেরকে হত্যা করবে এবং মুসলমানরা তখন এমন ভূমিতে থাকবে যাকে মদীনার নিম্নাঞ্চল বলা হয় এবং তাকে দামেস্ক (নগরী) ও বলা হয় (যা সিরিয়ার রাজধানী)।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৭২]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৭৩

হযরত আউফ ইবনে মালেক  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে সম্মোধন করে বলেছেন হে আউফ! তুমি কিয়ামতের ছয়টা আলামত চিহ্নিত করে রেখো, তার মধ্যে সর্বপ্রথম তোমাদের নবীর মৃত্যুবরণ করা। এটা হচ্ছে একটা, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, বায়তুল মোকাদ্দাসের জয়লাভ করা, তৃতীয় হচ্ছে, ছাগলের মাড়কের ন্যায় ব্যাপক মহামারী দেখা দিবে। চতূর্থ হচ্ছে, তোমাদের মাঝে এমন ব্যাপক ফিৎনা দেখা দিবে যার সাথে আরবের প্রতিটি ঘর জড়িয়ে যাবে। পঞ্চম হচ্ছে, তোমাদের আর বলিল —– তথা রোমবাসীদের মাঝে চুক্তি হওয়া। অতঃপর তারা তোমাদের বিরুদ্ধে নয় মাসের গর্ভবতী মহিলাদের ন্যায় ভারি অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জমায়েত হবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৭৩]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৭৪

হযরত আওফ ইবনে মালেক  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) আমাকে কিয়ামতে পূর্বের ছয়টি নিদর্শনের কথা বলেছেন। (১) তোমাদের নবীর ওফাত। (২) বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়। (৩) বকরির মাড়কের ন্যায় ব্যাপক মহামারী। (৪) তোমাদের মাঝে এবং বনুল আসফার (রোমকদের) মাঝে সন্ধি-চুক্তি হবে। (৫) মদীনাতে কুফরীর সূচনা (৬) এবং মানুষ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে (নগন্য মনে করে) একশত দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) ফিরিয়ে দিবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৭৪]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৭৫

হযরত আওফ ইবনে মালেক  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাকে কিয়ামতের পূর্বের ছয়টি নিদর্শনের কথা বলেছেন। ১. আমার ওফাত। ২. অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়। ৩. আশ্রয় স্থল হবে, যেখানে আমার উম্মত শাম থেকে অবতরণ করবে। ৪. তোমাদের মধ্যে এমন ফিতনা সংঘটিত হবে যে, আরবে এমন কোন ঘর অবশিষ্ট থাকবেনা যে ঘরে ফিতনা প্রবেশ করবেনা (অর্থাৎ প্রতিটি ঘরেই তা প্রবেশ করবে। ৫. অতঃপর তোমাদের সাথে রোমকদের সন্ধি-চুক্তি হবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৭৫]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৭৬

হযরত হুয়ান ইবনে আমর  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, তুয়ানার যুদ্ধে আমরা রোম ভুখন্ডে প্রবেশ করে একটি উঁচু টিলাতে অবস্থান করি। এক পর্যায়ে আমি আমার সাথীদের বাহন থেকে একটি বাহনের মাথা উঁচু করে ধরি। আর আমার সাথীরা তাদের বাহনের জন্য দানা-পানির ব্যবস্থা করতে যায়। এমন অবস্থায় হঠাৎ শুনলাম কেউ যেন বলছে “আস্সালামু আলাইকা ওয়ারাহমাতুল্লাহ” সালামের আওয়াজ শুনে দেখলাম সাদা কাপড় পরিহিত এক লোক। আমি সালামের জবাব দিলে তিনি বললেন, তুমি কি আহমদের উম্মতের অর্ন্তভুক্ত আমি হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলে তিনি বললেন, তোমাদে ধৈর্য্যধারন করতে হবে। কেননা এ উম্মত মুলতঃ উম্মতে মারহুমা হতে গণ্য। আল্লাহ তাআলা তাদের উপর পাঁচ ধরনের ফিৎনা রেখেছেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ করেছেন।

অতঃপর আমি বললাম, সেগুলোর নাম উল্লেখ করুন। তিনি বললেন, পাঁচটির একটি হচ্ছে, তাদের নবীর মৃত্যুবরণ করা, যাকে কিতাবুল্লাহর ভাষায় বাগ্তাহ্ বা হঠাৎ বলা হয়েছে। অতঃপর হযরত ওসমান  (رضي الله عنه) এর শাহাদাত বরণ করা। যেটা কিতাবুল্লাহ ‘যক্ষ্মা’ — বা বধির ফিৎনা হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এরপর হচ্ছে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه) এর ফিৎনা যা কিতাবুল্লাহর ভাষায় আল আমইমা বা অন্ধফিৎনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তারপর হলো, ইবনুল আসআছ এর ফিৎনা। যাকে কিতাবুল্লাহতে আল বুতাইরা বা বেজোড় ফিৎনা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। অতঃপর এ বলে চলে যেতে লাগল, “ছালাম বাকি রইল, ছালাম বাকি রইল”। সে কীভাবে চলে গেল আমি কিন্তু জানতে পারলামনা।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৭৬]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৭৭

হযরত আলী ইবনে আবু তালেব রায়িঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা এ উম্মতের জন্য পাঁচটি ফিৎনা নির্ধরন করেছেন। প্রথমে ব্যাপক ফিৎনা হবে এরপর হবে খাস ফিৎনা। অতঃপর আবারো ব্যাপক ফিৎনা দেখা দিবে। তারপর আসবে খাছ ফিৎনা। তারপর এমন কালো অন্ধাকারাচ্ছন্ন ফিৎনা প্রকাশ যদ্বারা মানুষ চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় হয়ে যাবে। অতঃপর কিছু চুক্তি হবে এবং লোকজনকে পথভ্রষ্টার দিকে আহ্বানকারী প্রকাশ পাবে। যদি তখন আল্লাহ তাআলার দ্বীনের উপর অটল থাকার মত কোনো খলীফা বাকি থাকে তাহলে তোমরা তার আনুগত্য কর।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৭৭]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৭৮

হযরত আলী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এ উম্মতের জন্য পাঁচ প্রকার ফিৎনা নির্ধারন করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি হচ্ছে, সর্বদা অন্ধ,বধির হিসেবে থাকার ফিৎনা।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৭৮]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৭৯

হযরত হুযায়ফা  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ফিতনা সংঘটিত হবে, অতঃপর জামাত ও তাওবা হবে। অতঃপর জামাত ও তাওবা হবে। (এর পর চতুর্থবার উল্লেখ করলেন) অতঃপর তাওবাও হবেনা এবং জামাতও হবেনা।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৭৯]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৮০

হযরত যেলা – (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত হুজায়ফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি, ইসলামের মধ্যে চার প্রকারের ফিৎনা প্রকাশ পাবে। যাদের থেকে চতুর্থ প্রকারের ফিৎনা গিয়ে বহুরূপি দাজ্জালের নিকট আত্মসমর্পণ করবে। তখন সবদিকে অন্ধকারে ছেঁয়ে যাবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৮০]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৮১

হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, ফিতনা সংঘটিত হবে। অতঃপর জামাত হবে। অতঃপর ফিতনা হবে, অতঃপর জামাত হবে। অতঃপর এমন ফিতনা হবে যেখানে পুরুষদের বুদ্ধি থেমে যাবে।

Save Cancel

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৮১]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৮২

হযরত আব্দুল্লাহ  (رضي الله عنه) থেকেত বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে চারটি ফিতনা হবে। আর চতুর্থবার হবে ধ্বংশ (মৃত্যু)।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৮২]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৮৩

কিছু প্রবীণ সৈন্য থেকে বর্ণিত, তারা বলেন একদিন খালেদ ইবনে ইয়াযিদ ইবনে মোয়াবিয়া মারওয়ান ইবনে হাকামের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন এবং তিনি ওমর ইবনে মারওয়ানের মেহমান ছিলেন, ঐ সময় তার সাথে একটি চাকু ছিল এবং হাতে কিছু কাগজ ছিল। হঠাৎ তিনি বলে উঠলেন, পাঁচ এবং দশ অতিবাহিত হয়েছে কেবলমাত্র বিশ বাকি রয়েছে, যার ক্ষতি মাশরিক-মাগরিবের সকলকে গ্রাস করে নিবে। তার থেকে একমাত্র এন্তাবলিসের বাসিন্দা ব্যতীত কেউ মুক্তি পাবেনা। শফি ইবনে ওবাইর তাকে সেই ফিৎনা সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, প্রথম ফিৎনা হচ্ছে পাঁচ, দ্বিতীয় ফিৎনা দশ বৎসরে। অর্থাৎ, ফিৎনায়ে আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর। এরপরে প্রকাশ পাবে তেইশ বৎসরের ফিৎনা মাশরিক মাগরিবকে গ্রাস করে দিবে। এন্তাবলিসের বাসিন্দা ব্যতীত কেও উক্ত ফিৎনা থেকে মুক্তি পেতে পারেনা।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৮৩]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৮৪

আব্দুল আযীয ইবনে সালেহ হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান থেকে বর্ণনা করেন (বর্ণনাকারী বলেন, রাবী ওয়ালিদ তার মাঝে ও হুযায়ফা  (رضي الله عنه) মাঝে আরেকজন রাবীর কথা উল্লেখ করেন তবে তা আমার স্মরণ নেই) তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত চারটি ফিতনা সংঘটিত হবে। প্রথমটি হলো ‘পাঁচ’, দ্বিতীয়টি হলো ‘দশ’, তৃতীয়টি হলো ‘বিশ’, চতুর্থটি হলো দাজ্জাল।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৮৪]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৮৫

ইয়াযিদ ইবনে আবি হাবীব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার কাছে রাসূলুল্লা (ﷺ) থেকে সংবাদ পৌছেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, এমন কিছু ফিৎনা প্রকাশ পাবে যা সবাইকে গ্রাস করে নিবে। তার থেকে পশ্চিমা সৈন্য ব্যতীত কেও মুক্তি পাবেনা।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৮৫]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৮৬

হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, চার প্রকারের ফিতনা সংঘটিত হবে। ১. খুন করাকে বৈধ মনে করা হবে। ২. অন্যের সম্পদকে বৈধ মনে করা হবে। ৩. নারীর লজ্জাস্থানকে বৈধ মনে করা হবে। ৪. দাজ্জালের আগমন।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৮৬]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৮৭

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ যা, এরশাদ করেছেন, আমি তোমাদেরকে আমার পরে প্রকাশিত সাত প্রকারের ফিতনা থেকে ভয় প্রদর্শন করছি। তার মধ্যে একটি পেশ আসবে মদীনা থেকে, আরেকটি প্রকাশ পাবে মক্কায়। অন্য পেশ আসবে ইয়ামান থেকে, আরেকটি শাম থেকে, আরেকটি মাশরিক থেকে, আরেকটি মাগরিব থেকে। অন্যটি প্রকাশ পাবে শামের মূলভুখন্ড থেকে এবং যেটিই হচ্ছে, ‘সুফইয়ানী ফিতনা’। এরপর হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ  (رضي الله عنه) বললেন, তোমাদের মাঝে এমন অনেকে রয়েছে যারা প্রথম ফিতনাগুলো অবলোকন করবে এবং এ ওম্মতের অন্যরা সর্বশেষ ফিতনাগুলো অবলোকন করবে। ওয়ালিদ ইবনে আইয়াশ বলেন, মদীনার ফিতনা হচ্ছে, তালহা এবং যুবায়ের এর পক্ষ থেকে। মক্কার ফিতনা হলো, আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের এর ফিতনা। ইয়ামানের ফিতনা হচ্ছে, যেটা নাজদার পক্ষ থেকে সংঘটিত হয়েছিল। শামের ফিতনা সংঘটিত হবে বনূ ওমাইয়ার পক্ষ থেকে আর মাশরিকের ফিতনা হচ্ছে, এদের পক্ষ থেকে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৮৭]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৮৮

হযরত আবু হুরাইরা  (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আমার পরে আমার ওম্মতের মাঝে চার প্রকারের ফিতনা সংঘটিত হবে। প্রথমতঃ পরস্পর মারামারি, হানাহানি বৃদ্ধি পাবে। দ্বিতীয়তঃ মানুষকে হত্যা করা এবং মানুষের সম্পদ বৈধ মনে করা হবে।

তৃতীয়তঃ মানুষ হত্যা, অন্যের সম্পদ এবং বিনা ব্যভিচার ইত্যাদি জায়েয মনে করা হবে। চতুর্থতঃ অন্ধ বধিরের ফিতনা, যা মানুষের সাথে চামড়ার ন্যায় মিশে যাবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৮৮]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৮৯

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা  (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, আমার পরে তোমাদের মাঝে চার ধরনের ফিতনা প্রকাশ পাবে। এক. এমন ফিতনা যার মধ্যে লোকজন মানুষ হত্যা করাকে বৈধ মনে করবে।

দুই. মানুষ হত্যা এবং অন্যের সম্পদকে হালাল মনে করা হবে।

তিন. এমন ফিতনা যার মধ্যে মানুষ হত্যাকরা অন্যের সম্পদ দখল করা এবং বিনা-ব্যভিচারকে বৈধ মনে করা হবে।

চার. অন্ধ-বধিরের ফিতনা, যা ব্যাপক আকার ধারন করবে। সমুদ্রের ঢেউয়ের তীব্রভাবে আসতে থাকবে। কেউ তার থেকে মুক্তির কোনো উপায় খুজে পাবে না। যে ফিতনা শাম দেশকে অবরুদ্ধ করে রাখবে এবং ইরাকেও গ্রাস করবে। উক্ত ফিতনার হাত-পা দ্বারা জাযিরাতুন আরবকে শড়াতে থাকবে। তখন বিভিন্ন ধরনের বালা-মসিবত মানুষের শরীরের সাথে এমনভাবে মিশ্রিত হয়ে যাবে, যেমন চামড়া শরীরের সাথে মিশে যায়। এহেন পরিস্থিতিতে উক্ত ফিতনা প্রতিরোধ করার মত শক্তি কারো থাকবেনা। অতঃপর উক্ত ফিতনা সম্বন্ধে পরিপূর্ণ অবগত হওয়ার পূর্বেই ঝড়ের গতিতে চূর্ণবিচূর্ণ করে অন্যদিকে বের হয়ে যাবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৮৯]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৯০

হযরত আবু হুরাইর  (رضي الله عنه) বলেন একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) নিম্নের আয়াতটি তিলাওয়াত করেন।

———————– অর্থাৎ, তোমাদেরকে তিনি দলে উপদলে বিভক্ত করে পরস্পর মুখোমুখী দাড় করাবেন । (সূরা আনআম ৬৫)

এরপর রাসূলুল্লহ (ﷺ) বললেন, আমার উম্মতের মধ্যে চারটি ফিতনা প্রকাশ পাবে। প্রথম ফিতনা যখন দেখা দিবে, তখন মানুষকে হত্যা করা হালাল মনে করা হবে। দ্বিতীয় ফিতনা এমন আকার ধারন করবে, মানুষ অন্যকে হত্যা করা এবং অন্যের সম্পদ দখল করাকে বৈধ জানবে। তৃতীয় ফিত্নাকালীন হত্যা, ডাকাতি এবং ধর্ষণ ইত্যাদি জায়েয মনে করা হবে। চতুর্থ ফিতনা হচ্ছে অন্ধকারাচ্ছন্ন অন্ধ ফিতনা, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের বিস্তৃত হয়ে আছড়ে পড়বে। আরবের প্রত্যেক ঘরকে উক্ত ফিতনা গ্রাস করে নিবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯০]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৯১

আরতাত ইবনুল মুনযির (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর বক্তব্য আমাদের নিকট পৌঁেছছে, তিনি এরশাদ করেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে লাগাতার ভাবে চার প্রকারের ফিৎনা দেখা দিবে। প্রথমতঃ তাদের উপর এমনভাবে বালা-মসিবত আসতে থাকবে, যার কারণে মুমিনগণ বলতে থাকবে, এইতো আমি মরে গেলাম! এরপর সেটা কিছুটা হালকা হয়ে যাবে। দ্বিতীয়তঃ এত বেশি তীব্রতার সাথে ফিতনা আসতে থাকবে, যার ফলে প্রত্যেক মু’মিন মৃত্যুর প্রহর গুনবে, এরপর একটু হালকা হবে। তৃতীয়তঃ একের পর এক ফিতনা আসতে থাকবে। মনে হবে যেন ফিতনা থেকে কিছুটা মুক্ত হতে পেরেছি, কিন্তু পরক্ষণে সেটা আবারো তীব্রভাবে আসবে। চতুর্থ ফিতনা এমনভাবে প্রকাশ পাবে, যার কারণে মানুষ ইসলাম ত্যাগ করতে বাধ্য হবে। এমন অবস্থার সম্মুখিন হলে মানুষ ইমাম এবং জামাআত ও একতাবদ্ধতাবিহীন দিগি¦দিক শুন্য হয়ে ছুটতে থাকবে। অতঃপর মসীহে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। এরপর সূর্য্য পশ্চিম দিকে উদিত হওয়া ও কিয়ামতের মাঝখানে বাহাত্তর জন দাজ্জাল প্রকাশ পাবে। তাদের মধ্যে অনেক এমন হবে যার অনুসরণকারী হবে মাত্র একজন।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯১]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৯২

আবুততোফাইল (رحمة الله) বলেন, আমি হযরত হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি, মারাত্মক মারাত্মক তিন ধরনের ফিতনা প্রকাশ পাওয়ার পর চতুর্থ ফিতনা লোকজনকে দাজ্জালের দিকে নিক্ষেপ করবে, যা মানুষকে ধ্বংসের মূখে পতিত করবে। যে দাজ্জালের কারণে কখনো মানুষ ভালো অবস্থার সম্মুখিন হবে আবার কখনো সম্মুখিন হবে ভয়াবহ অবস্থার। আরেকটি ফিতনা হচ্ছে, অন্ধকারাচ্ছন্ন কালো ফিতনা, যা সমুদ্রের ঢেউয়ের ন্যায় লোকজনের উপর আছড়ে পড়বে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯২]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৯৩

হযরত উমাইর ইবনে হানী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘ফিতনায়ে আহলাস’ হলো,তাতে পলায়ন হবে। (অর্থাৎ পরস্পরের মধ্যে এমন শত্র“তা দেখা দিবে যে, একে অন্য হতে পলায়ন করতে থাকবে।) এবং ছিনতাই হবে। ‘ফিতনাতুস সাবরা’ (অর্থাৎ ধরেন প্রাচুর্যের কারণে বিলাসিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ার ফিতনা), উক্ত ফিতনার ধোঁয়া কোন এক ব্যক্তির পায়ের নিচ হতে নির্গত হবে। (অর্থাৎ সেই ব্যক্তিই উক্ত ফিতনার নায়ক হবে।) সে আমার খানদানের লোক বলে দাবি করবে,অথচ সে আমার আপনজনদের মধ্যে হবেনা। প্রকৃতপক্ষে পরহেজগার লোকই হলেন আমার বন্ধু। অতঃপর লোকেরা এক ব্যক্তির উপর ক্ষমতা অর্পনে একমত হবে, তারপর আরম্ভ হবে অন্ধকারাচ্ছন্ন ফিতনা। যখন বলা হবে ফিতনা শেষ হয়ে গেছে, তখন তা এত প্রসারিত হবে যে, আরবের এমন কোন ঘর অবশিষ্ট থাকবে না। যেখানে তারা প্রবেশ করবেনা, (অর্থাৎ প্রতিটি ঘরে তা প্রবেশ করবেই। আর মানুষ তখন এমন ভাবে লড়াই করতে থাকবে যে, সে একথা জানবেনা যে, সেকি সত্যের বিরুদ্ধে লড়াই করছে? নাকি বাতিলের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এভাবে সব সময় তা চলতে থাকবে। অবশেষে সকল মানুষ দু’টি তাবুতে (দলে) বিভক্ত হয়ে যাবে। একটি দল হবে ঈমানের,এখানে মুনাফেকী থাকবে না। আর অপর দলটি হবে মুনাফেকীর যার মধ্যে ঈমান থাকবে না। যখন উভয়টি একত্রিত হবে, তখন তুমি দাজ্জালের আগমন প্রত্যক্ষ কর, সে ঐ দিনই অথবা পরের দিন আবির্ভূত হবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯৩]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৯৪

হযরত আব্দুলাহ ইবনে যবীর গাফেকী (رحمة الله) বলেন, আমি হযরত আলী  (رضي الله عنه) বলতে শুনেছি যে, চার ধরনের ফিতনা হবে। ১. ‘ফিতনাতুস সাররা’; (অর্থাৎ প্রাচুর্যের কারণে বিলাসিতায় লিপ্ত হয়ে পড়ার ফিতনা, ২. ‘ফিতনাতু র্দরা’ (অর্থাৎ দরিদ্রতার কারণে কষ্টে নিমজ্জিত হয়ে পড়ার ফিতনা), ৩. ‘এই রূপ ফিতনা’ এ কথা বলে তিনি স্বর্ণের খনির কথা আলোচনা করলেন। অতঃপর নবী করীম (ﷺ) এর বংশধর থেকে এমন এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবেন, যার হাতে আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমত ন্যাস্ত করবেন।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯৪]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৯৫

হযরত আবু সাঈদ খুদরী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমার পরে বহু ফিতনা সংঘটিত হবে। তন্মধ্যে একটি হলো, ‘ফিতনায়ে আহলাম’ তাতে পলায়ন হবে, (অর্থাৎ পরস্পরের মধ্যে এমন শত্র“তা দেখা দেবে যে, একে অন্য হতে পলায়ন করতে থাকবে।) এবং তাতে ছিনতাই হবে। অতঃপর এর পরে এমন ফিতনা সংঘটিত হবে যা তার চেয়েও আরো ভয়াভহ হবে, তারপর এমন ফিতনা হবে যে, যখন বলা হবে ফিতনা শেষ হয়ে গেছে, তখন তা এত প্রসারিত হবে যে, প্রত্যেক ঘরে তা প্রবেশ করবেই। এবং প্রত্যেক মুসলমানকে আঘাত করবেই। এরপর আমার বংশধর থেকে কোন এক ব্যক্তি আবির্ভূত হবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯৫]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৯৬

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হুবায়রা  (رضي الله عنه) বলেন চার প্রকারের ফিতনা হবে। ১. দৃষ্টি সম্পন্ন ফিতনা, ২. প্রবৃত্তি ফিতনা, ৩. অন্ধ ফিতনা, ৪. দাজ্জালের ফিতনা।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯৬]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৯৭

হযরত কা’ব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন তিন ধরনের ফিতনা প্রকাশ পাবে, যেমন অনেক ক্ষেত্রে পথচারীকে আটকানো হয়। কিছু ফিতনা প্রকাশিত হবে শাম দেশে, অতঃপর পূর্বদিকে এত মারাত্মক ফিৎনা দেখা দিবে যদ্বারা বড় বড় রাজা বাদশাহগন সর্শেফুল দেখতে থাকবে। এরপর সাথে সাথে প্রকাশ পাবে পশ্চিমা ফিতনা। অতঃপর হলুদ রংয়ের পতাকা বিশিষ্ট কিছু লোকে আবির্ভাব ঘটবে। বর্ণনাকারীর বক্তব্য হচ্ছে, পশ্চিমা ফিতনা হচ্ছে, মূলতঃ অন্ধ ফিতনা।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯৭]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৯৮

হযরত কা’ব (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর এন্তেকালের পচিশ বৎসর পর পর্যন্ত আরবের উম্মানের মাঁথা ঘুরতে থাকবে। এরপর বিভিন্ন ধরনের ফিতনা প্রকাশ পাবে, যার মধ্যে গণহত্যা থেকে শুরু করে সবকিছুই ঘটবে। এরপর মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ও নিরপত্তা অনুভব হবে। এক পর্যায়ে তারা ঘুরতে ঘুরতে লাটিমের মত স্থীর হয়ে যাবে। এরপর এমন ফিতনা প্রকাশ পাবে যা মূলত ব্যাপক হত্যার রূপ নিবে। আমি কিতাবুল্লাহতে উক্ত ফিতনা সম্বন্ধে পেয়েছি, যেটা এমন অন্ধকারচ্ছন্ন ফিতনা যা প্রত্যেক মর্যাদা সম্পন্ন লোককে গ্রাস করে নিবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯৮]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ৯৯

ভিন্ন সুত্রে উপরের হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ৯৯]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১০০

আবু সালেহ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত কা’ব মসজিদে নববীর সংস্কার কাজ চলতে দেখে বললেন, আল্লাহর কসম! আমার ইচ্ছা হচ্ছে, মসজিদে নববীর সংস্কার করা নাহোক। কেননা তার একটি গম্বুজ স্থাপন করা হলে আরেকটি গম্বুজ খসে পড়বে।

একথা শুনে কা’বকে বলা হলো, হে আবু ইসহাক উক্ত মসজিদে নামায আদায় করলে এক হাজার নামায থেকে বেশি সওয়াব দেয়া হবে একথা কি বলা হয়নি। অর্থাৎ, মসজিদে হারামের পর সওয়াবের দিক দিয়ে কি মসজিদে নববীর অবস্থান নয়।

জবাবে হযরত কা’ব (رحمة الله) বলেন, হ্যাঁ আমি একথা বলছি, কিন্তু আসমান থেকে জমিনের দিকে যে ফিতনা ধাবমান হচ্ছে, সেটা একেবারে নিকটে এসে পড়েছে, আর মাত্র এক বিঘত পরিমান বাকি রয়েছে, যা মসজিদে নববীর সংস্কার কাজ সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে আছড়ে পড়বে। তখনই এই শেখ, অর্থাৎ, হযরত ওসমান ইবনে আফ্ফানকে হত্যা করা হবে। একথা শুনে জনৈক লোক বলে উঠল, তার হত্যাকারীর সাথে কি হযরত ওমর  (رضي الله عنه) এর হত্যাকারীর ন্যায় আচরন করা হবে না।

জবাবে কা’ব (رحمة الله) বললেন, লক্ষ বার অথবা তার থেকেও বেশি। এরপর বিশাল, বিস্তৃত এলাকা জুড়ে যুদ্ধ-বিগ্রহ হতে থাকবে। অতঃপর পশ্চিমা এলাকা এবং পূর্ব দিক থেকে দুই দল সৈন্যের আগমন ঘটবে। উভয়দল ‘সিফ্ফীন’ নামক স্থানে একে অপরের মুখোমুখী হবে এবং তাদের মাঝে তীব্র লড়াই সংঘটিত হবে। অতঃপর তারা ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির অধীনস্থতা গ্রহণ পূর্বক যুদ্ধে বিরতী দিবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১০০]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১০১

হযরত কা’ব (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি একদিন ‘সিফ্ফীন’ নামক এলাকায় রাস্তার মধ্যে কিছু পাথর দেখতে পেয়ে হঠাৎ করে দাড়িয়ে পড়লেন এবং উক্ত পাথর খন্ডকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে থাকলেন। তার অবস্থা দেখে সফরসঙ্গীদের একজন বলল, হে আবু ইসহাক! এভাবে কি দেখছেন?

জবাবে তিনি বলেন, উক্ত পাথরের যে বৈশিষ্ট রয়েছে সেটা আমি কিতাবে দেখতে পেরেছি যে, উক্ত পাথরের জন্য বণী ইসরাঈল নয় বার যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনেছে এবং নিঃসন্দেহে আরবরাও অতিসত্ত্বর দশমবারে যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং ধ্বংস হয়ে যাবে, অথবা পাথরগুলো ছুড়ে মারতে হবে, যেমন বনী ইসরাঈল গণ ছুড়ে মেরেছিল।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১০১]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১০২

হযরত আবুল জাল্দ (رحمة الله) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একেরপর এক ফিতনা প্রকাশ পাবে। প্রথম ফিতনা এবং দ্বিতীয় ফিতনা চাবুকের অগ্রভাগের গিঁটের মত হবে যা আঘাত করবে তরবারির ধারালো অংশের মত। এরপর এত ব্যাপক ফিতনা প্রকাশ পাবে, যার মধ্যে সব ধরনের হারাম বস্তুকে হালাল ও বৈধ মনে করা হবে। উম্মতের সকলে কল্যাণ কামনার উপর ঐক্যমত পোষণ করলেও সেটা তাদের প্রতি খুব ধীরে ধীরে আস্তে থাকবে, যেন ঘরের ভিতর বসেথেকে তার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১০২]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১০৩

আবুল ওক্কাছ (رحمة الله) হযরত আলী  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তোমাদেরকে কি আমি ‘তারাস্সুন’ ফিতনা সম্বন্ধে বলবোনা, তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘তারাস্সুল’ ফিতনা কি? জবাবে তিনি বললেন, যদি কাউকে বাতেলরা দশ প্রকারের বাঁধন দ্বারা কয়েদ করে রাখে তারপরও তার মাধ্যমে আহলে হক্বের অনেক ক্ষতি হবে। তেমনিভাবে যদি কেউ হক্বের কারণে পরিপূর্ণভাবে গ্রেফতার অবস্থায় থাকে তারপরও তার মাধ্যমে বাতেলদের মারাত্মক ক্ষতি হবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১০৩]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১০৪

বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আউফ ইবনে মালেক আমজাঈ  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ করেছেন, হে আউফ! কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি ফিতনা প্রকাশ পাবে। তার মধ্যে প্রথম ফিতনা হচ্ছে, তোমাদের নবীর ওফাত পাওয়া, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর কথা শুনে আমি কেঁদে উঠলাম। অতঃপর তিনি বললেন, দ্বিতীয় ফিতনা হচ্ছে, বায়তুল মোকাদ্দাসের বিজয় হওয়া। তৃতীয় ফিতনাটি এত ব্যাপক হবে যা শহর এবং গ্রামের প্রতিটি ঘরকেই গ্রাস করে নিবে। চতুর্থ ফিতনা হচ্ছে, মানুষের মধ্যে গণহারে মৃত্যু দেখা দিবে, যেন সকলে ছাগলের মাড়কের ন্যায় মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। পঞ্চম ফিতনা হচ্ছে, লোকজন প্রচুর সম্পদের মালিক হবে। এমনকি কাউকে একশত দিনার দান করা হলেও যে কম মনে করে রাগে ক্ষোভে ফেটে পড়বে। আর ষষ্ঠ ফিতনা হলো, তোমাদের এবং রোমবাসীদের মাঝে একটা চুক্তি হবে। অতঃপর তারা আশি দলে বিভক্ত হয়ে বারো হাজার সৈন্যের বিশাল কাফেলা সহকারে তোমাদের দিকে ধেয়ে আসবে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১০৪]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১০৫

সিলা ইবনে যুরার (رحمة الله) বিশিষ্ট সাহাবী হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছেন। তাঁকে একজন লোক বলল, “দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটেছে”। একথা শুনে হযরত হোজাইফা  (رضي الله عنه) বললেন, না আল্লাহর কসম! সেটা কক্ষনো হতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের মাঝে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) এর সাহাবায়ে কেরাম উপস্থিত থাকবেন, ততক্ষণ দাজ্জাল আসতে পারে না। বিশেষ এক গোত্র দাজ্জালের আগমনের আশা করলেও তার আগমন ঘটবেনা। এমনকি কারো কারো নিকট দাজ্জালের আবির্ভাব এতই প্রিয় হবে, যেমন তীব্র গরমের দিন মানুষের কাছে ঠান্ডা পানি পান করা খুবই প্রিয় হয়। এক পর্যায়ে হযরত হোজাইফা ইবনুল ইয়ামান  (رضي الله عنه) বললেন, হে উম্মতে মুহাম্মদিয়া! অতিসত্ত্বর তোমাদের মাঝে চার প্রকারের ফিতনা প্রকাশ পাবে। তার মধ্যে এককিট হচ্ছে, সাদা-কালো মিশ্রিত ফিতনা। আরেকটি হলো, অন্ধকারাচ্ছন্ন ফিতনা। তৃতীয়টি হচ্ছে, অমুক অমুক ফিতনা। আর চতুর্থ ফিতনা তোমাদেরকে দাজ্জালের প্রতি ঠেলে দিবে, অতঃপর উক্ত সমতল ভূমিতে দুই দল যুদ্ধে বিগ্রহে লিপ্ত হয়ে পড়বে। আমার জানা নেই উভয় দল থেকে কোন দল সত্য বা হক্বের উপর রয়েছে এবং আমার তূণীরের তীর দ্বারা আমি উভয় দলের কোন দলকে সাহায্য করব।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১০৫]

━━━━━━━━━━━━

হাদিস – ১০৬

বিশিষ্ট তাবেঈ হযরত তাউস (رحمة الله) বলেন, জনৈক লোক হযরত আবু মুসা আশআরী  (رضي الله عنه) এর কাছে জানতে চাইলো যে, এসব কি ঐ ফিতনা যা আপনি আমাদের সামনে বর্ণনা করতেন। উক্ত ঘটনাটি মূলতঃ তখনই যখন আবু মুসা আশআরী  (رضي الله عنه) এবং হযরত আমর ইবনুল আম (رضي الله عنه) এর মাঝে কোনো এক সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল জবাবে হযরত আবু মুসা আশআরী  (رضي الله عنه) বললেন, এগুলো হচ্ছে, ফিতনার মারাত্মক মারাত্মক অংশসমূহ হতে একটি। অতঃপর বাকি রইল, বড় বড় অন্ধকারচ্ছন্ন ফিতনা, যা গোটা জাতিকে গ্রাস করবে। যারা উক্ত ফিতনার প্রতি মনোনিবেশ কবে তাদেরকে অত্যন্ত নির্মমভাবে আকৃষ্ট করে নিবে। উক্ত ফিতনাকালীন যারা বসে থাকবে তারা দন্ডায়মান থাকা লোকজন থেকে উত্তম, আর একস্থানে দাড়িয়ে থাকা লোক চলাচলকারী থেকে ভালো। স্বাভাবিক গতি সম্পন্ন লোক দ্রুতগামী থেকে অনেক উত্তম। ফিতনা সম্বন্ধে মন্তব্যকারী থেকে নীরবতা অবলম্বনকারী উত্তম আর উক্ত ফিতনার সময় ঘুমন্ত ব্যক্তি অনেক ভালো জাগ্রত লোক থেকে।

➥[আল ফিতান: নুয়াইম বিন হাম্মাদ – ১০৬]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment