১) এক রোযার পরিবর্তে এক ফিদয়া ফরয হয়। এক ফিদয়া হল, কোনো মিসকীনকে দু বেলা পেট ভরে খানা খাওয়ানো অথবা এর মূল্য প্রদান করা। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক: হাদীস- ৭৫৮৫; আলমুহীতুল বুরহানী: ৩/৩৬৯; আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪২৬)
২) যাদের জন্য রোযার পরিবর্তে ফিদইয়া দেওয়ার অনুমতি রয়েছে তারা রমযানের শুরুতেই পুরো মাসের ফিদয়া দিয়ে দিতে পারবে। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪২৭; আলবাহরুর রায়েক: ২/২৮৭)
৩) ছুটে যাওয়া রোযার কাযা সম্ভব না হলে মৃত্যুর পূর্বে ফিদয়া দেওয়ার অসিয়ত করে যাওয়া জরুরি। অসিয়ত না করে গেলে ওয়ারিশরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে ফিদয়া দেয় তবে আশা করা যায় যে, আল্লাহ তাআলা তা কবুল করবেন। তবে মৃত ব্যক্তি অসিয়ত না করে গেলে সেক্ষেত্রে মিরাসের ইজমালী সম্পদ থেকে ফিদয়া দেওয়া হবে না। একান্ত দিতে চাইলে বালেগ ওয়ারিশগণ তাদের অংশ থেকে দিতে পারবে। (রদ্দুল মুহতার: ২/৪২৪-৪২৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া: ১/২০৭)
কাফফারা
৪) রোযার কাফফারা হলো-
ক. একজন দাম আযাদ করা। অথবা,
খ. বিরতিহীন ষাটটি রোযা রাখা। অথবা,
গ. ষাটজন মিসকিনকে মধ্যমপন্থায় খাওয়ানো। (বুখারি-১৭৯৮)
কাফফারার মাসআলাসমূহ:
মাসআলাঃ রোযার কাফফারা হল, একটি রোযার জন্য (একটি কাযা রোযা ব্যতীত)টানা ২ মাস রোযা রাখতে হবে।
মাসআলাঃ কাফফারা যদি চান্দ্র মাসের পহেলা তারিখে শুরু করে তবে দুমাস রোযা রাখলেই হবে । আর যদি মাসের মাঝখান থেকে শুরু করে তবে ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোজা পূর্ন করতে হবে ।
মাসআলাঃ এই ৬০ দিন রোযা রাখতে গিয়ে যদি কোন কারনে ধারাবাহিকতা ছুটে যায় তবে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে ।
মাসআলাঃ কাফফারার রোযা আদায় করতে গিয়ে যদি মধ্যখানে দুই ঈদের কোনদিন এসে পড়ে তবে পূনরায় নতুন করে শুরু করতে হবে।
মাসআলাঃ হায়েযের কারনে মহিলাদের যে দিনগুলো বিরতী যাবে তাতে কোন সমস্যা নেই । কিন্ত নেফাসের কারনে বিরতী পড়লে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে।
মাসআলাঃ পুরো এক রমজানে একটি কাফফারাই ওয়াজিব হবে,চাই যত গুলো রোযা ইচ্ছাকৃত ভাঙ্গা হোক না কেন । ভিন্ন বছরের রমজানের কারনে ভিন্ন কাফফারা ওয়াজিব হবে।
মাসআলাঃ কাফফারার রোযার নিয়ত সুবহে সাদিকের পূর্বে করা জরুরী।
মাসআলাঃ যদি কেউ ধারাবাহিকভাবে ৬০টি রোযা রাখতে সমর্থ না হয় তবে সে ৬০ জন মিসকীনকে দুবেলা পেট ভরে খাওয়াবে । অথবা তাদের প্রত্যেককে একটি ফেতরা পরিমান (১৬৬২ গ্রাম) গম বা আটা কিংবা তার মুল্য দিয়ে দিবে।
মাসআলাঃ একজন মিসকীনকে ৬০দিন দুবেলা পেট ভরে খাওয়ালে অথবা ৬০ দিনের প্রতিদিন একটি করে ফেতরা আদায় করলেও কাফফারা আদায় হয়ে যাবে । তবে একজনকে ৬০ দিনেরটা এক দিনেই দিয়ে দিলে এক দিনের কাফফারা আদায় হবে। অবশ্য খানা খাওয়ানোর ক্ষেত্রে মাঝে দু-একদিন বিরতী পড়লে কোন সমস্যা নেই।
যাদের জন্য রোযা না রাখার সুযোগ রয়েছে:
০১.মুসাফিরের জন্য শরঈ সফররত অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি আছে । তবে কষ্ট না হলে রোযা রাখাই উত্তম। না রাখলে পরে কাযা করে নিবে।
০২. হায়েয নেফাস অবস্থায় মাহিলারা রোযা ছেড়ে দিবে । এমতাবস্থায় রোযা রাখা জায়েয নেই। পরে কাযা করে নিবে।
০৩.যদি রোযা রাখার কারনে রোগীর রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা হয় অথবা সুস্থতা বিলম্বিত হয় তবে দ্বীনদার বিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোযা ভাঙ্গা বা না রাখা জায়েয আছে। পরে কাযা করে নিবে।
০৪. গর্ভবতী বা দুগ্ধ দানকারিনী মহিলা রোযা রাখলে যদি তার বা সন্তানের প্রানহানী বা সাস্থ্যহানীর প্রবল আশংকা হয় তবে তার জন্য রোযা ভাঙ্গা বা না রাখা জায়েয।
০৫.কেউ যদি কাউকে রোযা ভাঙ্গার হুমকি দেয় যে, সে রোযা রাখলে তাকে হত্যা করবে বা মারাত্মক কোন ক্ষতি করবে তবে তার জন্য রোযা ভাঙ্গা জায়েয।পরে কাযা করে নিবে।
০৬. শারীবিক দূর্বলতার কারনে যদি রোযা রাখলে নতুনভাবে কোন রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশংকা হয় তবে রোযা না রাখার অনুমতি আছে। পরে কাযা করে নিবে।
উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রে বাহানা তালাশ করে রোযা ছেড়ে দেওয়া অনেক বড় গুনাহের কাজ ও জঘন্যতম অপরাধ। মনে রাখতে হবে আল্লাহ তাআলা অন্তরের খবর সম্পর্কে সম্যক অবগত।
০৭. বার্ধক্যজনিত কারনে কেউ রোযা রাখতে সক্ষম না হলে তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে।
এক্ষেত্রে সে রোযার ফিদয়া আদায় করবে । অনরুপ ভাবে রোযা রাখতে অক্ষম এমন রোগাক্রান্ত ব্যক্তির যদি ভবিষ্যতে রোগমুক্তির আশা না থাকে সেও ফিদয়া আদায় করবে।
ফিদয়া সংক্রান্ত মাসায়েল:
মাসআলাঃ ফিদয়া হল প্রতিটি রোযার পরিবর্তে ১জন মিসকীনকে দুবেল পেট ভরে খানা খাওয়ানো অথবা ছদকায়ে ফিতর(১৬৬২ গ্রাম) পরিমান গম বা আটা কিংবা তার মুল্য ছদকা করে দেওয়া।
মাসআলাঃ রোযার ফিদয়া কেবল দুধরনের লোক দিতে পারবে। ১। অতিশয় বৃদ্ধ যার রোযা রাখার সামর্থ নেই। ২। রোযা রাখাতে অপারগ এমন রোগী যার ভবিষ্যতে সুস্থ হওয়ার কোন আশা নেই। কাজেই এই দুধরনের লোক ব্যতীত যারা সাময়ীক কারনে আপাতত রোযা রাখতে পারছেন না তারা ফিদয়া দিতে পারবেন না বরং পরবর্তিতে কাযা করে নিবে।
মাসআলাঃ কেউ যদি তার জিম্মায় থাকা কাযা রোযা আদায় করতে না পারে তবে তার জন্য মৃত্যুর পূর্বে ফিদয়ার ওছিয়ত করে যাওয়া জরুরী। ওছিয়ত করে গেলে তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে তা আদায় করা হবে।
মাসআলাঃ যদি উক্ত ব্যক্তি ওছিয়ত না করে থাকে তবে এজমালী সম্পদ থেকে ওছিয়ত আদায় করা যাবে না। তবেঁ যদি সকল ওয়ারিশগন সতঃস্ফূর্ত অনুমতি দিয়ে দেয় তবে সেক্ষেত্রে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা তাকে মাফ করে দিবেন।
উল্লেখ্য যে, ওয়ারিশগনের মধ্যে কোন নাবালেগ থাকলে তার অনুমতি সাপেক্ষেও তার সম্পদ থেকে ফিদয়া আদায় করা যাবে না।
মাসআলা: ওযরের কারনে যারা রোযা রাখতে পারেনি তারা যদি উক্ত ওযর অবস্থায় মারা যায় তবে তাদের জন্য কাযা বা ফিদয়ার ওছিয়ত কোনটিই জরুরী নয়। ওযর দূরীভূত হয়ে যাওয়ার পর যদি সময় পাওয়া সত্তেও কাযা না করে তবে যে কয়দিন সে সময় পেয়েছে সেই দিনগুলোর ফিদয়ার ওছিয়ত করে যাওয়া জরুরি।
মাসআলাঃ একটি রোযার পরিবর্তে একটি ফিদয়া দিতে হয়। রমযান শুরু হলে পুরো মাসের ফিদয়া একত্রে দেওয়া যায় ।
মাসআলাঃ যাদের জন্য ফিদয়া দেওয়ার অনুমতি রয়েছে তারা যদি ভবিষ্যতে কখনও রোযা রাখতে সমর্থ হয়ে যায় তবে তাদের ছুটে যাওয়া রোযা কাযা করতে হবে। যদিও তারা ফিদয়া আদায় করে থাকে । অবশ্য সে ফিদয়ার জন্য ছদকার ছাওয়াব পাবে।
মাসআলাঃ একটি ফিদয়া একজনকে দেওয়া উওম, তবে একাধিক ব্যক্তিকেও দেওয়া য়ায়। অনুরুপভাবে একাধিক ফিদয়াও একজনকে দেওয়া যায়।
মাসআলাঃ নাবালেগকে ফিদয়া দিলে বা খাওয়ালে তা আদায় হবে না।
রমযানে সফর সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ন কয়েকটি মাসআলা:
মাসআলাঃ মুসাফিরের জন্য সফররত অবস্থায় রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। তবে যদি রোযা রেখে ফেলে তাহলে তা ভাঙ্গা জায়েয নয়। ভেঙ্গে ফেললে গুনাহ হবে। তবে এক্ষেত্রে তার উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে।
মাসআলাঃ কেউ যদি রোযা রাখার পর সফর শুরু করে তবে তার জন্যও রোযা ভাঙ্গা জায়েয নেই। ভেঙ্গে ফেললে গুনাহগার হবে। অবশ্য এক্ষেত্রেও তার উপর শুধু কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়।
উল্লেখিত মাসআলা দুটি খুব ভালভাবে বুঝে নেওয়া দরকার। অনেকেই মনে করে সফররত অবস্থায় মুতলাক্বভাবে (সর্ববস্থায়)রোযা ভেঙ্গে দেওয়া যায়। বরং শরঈ সফররত অবস্থায় যদি সুবহে সাদিক এসে যায় তবে সেই কেবল রোযা না রাখতে পারে । তবে যদি রোযা রাখার পর সফর করে অথবা সফর শুরু করার পর রোযা রেখে ফেলে তাহলে তা আর ভাঙ্গা জায়েয হবে না।
মাসআলাঃ মুসাফির যদি সূর্য উঠার আগে মুকীম হয়ে যায় আর তার থেকে রোযা ভঙ্গ হওয়ার কোন কারন প্রকাশ না পায় তবে তার জন্য রোযার নিয়ত করা জরুরী । অন্যথায় সে গুনাহগার হবে।তবে রোযা না রাখলে তার জন্য শুধু কাযা ওয়াজিব হবে কাফফারা নয়।
বিবিধ মাসআলা:
মাসআলাঃ রমজান মাসের দিনের বেলায় যদি কোন মহিলা হায়েয বা নেফাস থেকে পাক হয় অথবা নাবালেগ বালেগ হয় অথবা মুসাফির মুকীম হয় অথবা কোন কারনে কারো রোযা ভেঙ্গে যায় তবে সকলকে রমযানের সম্মান রক্ষার জন্য দিনের বাকি অংশ পানাহার থেকে বিরতি থাকতে হবে। যদিও তাদেরকে উক্ত দিনের রোযা পরবর্তিতে কাযা করে নিতে হবে।
মাসআলাঃ যদি এমন পিপাসা বা ক্ষুধা লাগে যে, প্রাণের আশংকা হয় তবে তার জন্য রোযা ভেঙ্গে ফেলা জায়েয।
মাসআলাঃ কাযা রোযার জন্য সুবহে সাদিকের পূর্বেই নিয়ত করা জরুরী। অন্যথায় রোযা সহীহ হবে না। নফল রোযার নিয়ত সুর্য ঢলার পূর্ব পর্যন্ত করা যায়।
মাসআলাঃ বছরে ৫ দিন রোযা রাখা হারাম। দুই ঈদের দিন এবং ক্বোরবানীর ঈদ পরবর্তি ৩ দিন।