রোজা অবস্থায় আধুনিক চিকিৎসা বিষয়ক মাসায়েল (পর্ব ২)
📌 কনডম (Condom), কপার-টি (Coper-T) or Other Contraceptive Method (জন্মনিরোধক ডিভাইস) :
কপার-টি একটি Contraceptive Method. যার মাধ্যমে জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এতে যোনিদ্বারে প্লাস্টিক সহ কপারের পাত সংযুক্ত থাকে। যা Spermicidal (শুক্রানুকে মেরে ফেলতে) সহায়তা করে, যেন সহবাসের সময় বীর্যপাত হলে বীর্য জরায়ুতে পৌঁছাতে না পারে। রোজা অবস্থায় যদি (কনডম/কপার-টি) লাগিয়েও সহবাস করা হয় তবুও রোযা ভেঙ্গে যাবে। বীর্যপাত হোক না হোক যোনিদ্বারে পুরুষাঙ্গ প্রবেশ করালেই রোজা ভেঙ্গে যাবে। কাযা ও কাফফারা উভয়টাই ওয়াজিব হবে।
📌 সিরোদকার অপারেশন (Shirodkar Operation):
সিরোদকার অপারেশন হল অকাল গর্ভপাত হওয়ার আশংখা থাকলে জরায়ুর মুখের চতুষ্পার্শ্বে সেলাই করে মুখকে খিচিয়ে রাখা।এতে অকাল গর্ভপাত রোধ হয়।যেহেতু এতে কোন ঔষধ বা বস্তু রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য খালি স্থানে পৌছে না তাই এর দ্বারা রোযা ভাঙ্গবে না।
📌 ডি এন্ড সি (Dilatation and Curettage):
ডি এন্ড সি হল এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে আট থেকে দশ সপ্তাহের মধ্য Dilator এর মাধ্যমে জীবত কিংবা মৃত বাচ্চাকে মায়ের গর্ভ থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়। যাকে বলা হয় miscarriage or abortion. এতে রোযা ভেঙ্গে যাবে। অযথা এমন করলে কাযা কাফফারা উভয়টি দিতে হবে এবং তওবা করতে হবে। (হেদায়ার হাশিয়া)
📌 এম আর (M.R):
এম আর (Menstrual Regulation) হল গর্ভধারণের ফলে যখন ঋতুস্রাব বন্ধ হয়ে যায় তখন ঋতুস্রাব পুরনায় চালু করার একটি প্রক্রিয়া। যার মাধ্যমে পাঁচ থেকে আঁট সপ্তাহের মধ্যে যোনিদ্বার দিয়ে জরায়ুতে এম,আর সিরিন্জ (MR Syringe) প্রবেশ করিয়ে জীবিত অথবা মৃত ভ্রণকে নিয়ে আসা। যার ফলে ঋতুস্রাব পুনরায় চালু হয়। অতএব মাসিক শুরু হওয়ার কারণে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং কাযা করতে হবে।
📌 আলট্রাসনোগ্রাম (Ultrasongram): আলট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষায় যে ঔষধ বা যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সবই চামড়ার উপরে থাকে, তাই আলট্রাসনোগ্রাম করলে রোযা ভাঙ্গবে না। (হেদায়ার হাশিয়া)
📌 স্যালাইন (Saline):
স্যালাইন নেয়া হয় রগে। এটা দুর্বল ও অসুস্থ ব্যক্তিকে শক্তি যোগানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
জীবানুমুক্ত প্রতি লিটার দ্রাবকে ৯ গ্রাম লবণ যুক্ত করাকে নরমাল স্যালাইন বলা হয়। এটা গ্রহণ করলে সন্দেহব্যতীত রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। কারণ রক্তে খাদ্য উপাদান সাপ্লাই করা হলে রোজা ভেঙ্গে যায়।
তাছাড়া ডায়রিয়া-আমাশয়-কলেরা রোগী স্যালাইন গ্রহণ করলে সন্দেহব্যতীত রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
📌 ঢুস লাগানো (Douche) :
[ঢুস / Suppository মলদ্বারের মাধ্যমে দেহের ভিতরে GIT তে প্রবেশ করে। পাকস্থলি যেমন GIT এর অন্তর্ভুক্ত তেমনি মলদ্বার (Rectum, Anal Canal ও GIT এর অংশ) যার মাধ্যমে ওষুধ রক্তে Absorb হয়।] তাই ঢুস নিলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। ঢুস যে জায়গা বা রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে এ জায়গা বা রাস্তা রোজা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য স্থান। (ফতওয়া শামীর হাশিয়া)
📌 মস্তিষ্ক অপারেশন (Brain Operation): রোজা অবস্থায় মস্তিস্ক অপারেশন করে ঔষধ ব্যবহার করা হোক বা না হোক রোজা ভাঙ্গবে না। (আল মাকালাতুল ফিকহীয়া)
📌 ইনসুলিন গ্রহণ করা (Insulin) :
ইনসুলিন নিলে রোজা ভাঙ্গবে না। কারণ, ইনসুলিন রোযা ভঙ্গ হওয়ার গ্রহণযোগ্য রাস্তা দিয়ে প্রবেশ করে না এবং গ্রহণযোগ্য খালী জায়গায় প্রবেশ করে না। (জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
[তবে এতে হবে কি হবে না এ বিষয়ে মতানৈক্য আছে তাই না নেয়াই উত্তম, নিলে ভঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে]
📌 মানসিক রােগীর রােযাঃ
মানসিক রােগীর রােযা রাখার কারণে অসুস্থতা বৃদ্ধির প্রবল আশঙ্কা থাকলে রােযা ভাঙার অনুমতি আছে, তবে সুস্থ হওয়ার পরে কাযা আদায় করে নিতে হবে অন্যথায় ফিদ্ইয়া আদায় করতে হবে।
[ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম, খ ৬, পৃ. ৪৮৭]
📌 প্রােস্টেট গ্লান্ডের রোগে আক্রান্ত রােগীর রােযাঃ
যদি রােগীর অবস্থা এমন হয় যে, তার প্রােস্টেট গ্লান্ডের অসুস্থতায় ক্যাথেটার লাগানাে হয়েছে অথবা ডাক্তার প্রস্রাবের রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে ভিন্ন পথে নলের মাধ্যমে প্রস্রাবের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন, এতে ইউরিন বক্সে আপনা আপনি প্রস্রাব ঝরছে; এমতাবস্থায় রােগী সক্ষম থাকলে রােযা চালিয়ে যাবে। তার এ ধরনের অসুস্থতায় রােযা নষ্ট হবে না। কেননা এ ধরনের রােগীর পেটের ভেতরে যাওয়ার মত কিছুই নেই। পাকস্থলী নিরাপদ থাকে বিধায় রােযা ভাঙার কোনাে সুযােগ নেই।
[পবিত্র মাহে রমজান ও সিয়াম সাধনা, পৃ ২৩৩]
📌 অপারেশনের রােগীর রােযাঃ
মেজর কোন অপারেশন হলে রােযা রাখা জায়িয নেই। কিন্তু সাধারণ অপারেশন যেমনঃ হাত অথবা পায়ের টিউমার অপারেশন
ভাঙ্গা-মচকা, পায়ে ছােটখাটো অপারেশন, হাত-পায়ের কোনাে ক্ষতস্থানের অপারেশনে রােযা ভঙ্গ হয় না।
মুখের ভিতরের দাঁতের অপারেশন, নাক-কানের অভ্যন্তরে অপারেশন অথবা প্রস্রাব ও বাহ্য ইন্দ্রিয়ের অভ্যন্তরে অপারেশন করে কোনাে অংশ কেটে ফেলে দিলে রোযা নষ্ট হবে না। তবে ওষুধ প্রবেশ করানাে হলে ওষুধের অংশ মস্তিষ্কে বা পাকস্থলীতে প্রবেশ করলে রােযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। পাকস্থলীর অপারেশনের সময় পেটের কোনাে অংশ বের করলে এবং পুনরায় সংযােজন করলে রােযা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
[আহসানুল ফাতাওয়া; জাদীদ ফিকহী মাসাইল।]
📌 মাথায় বা পেটে আঘাতপ্রাপ্ত রােগীর রােযাঃ
মাথার কোনাে ঘায়ের অপারেশন হলে অথবা আঘাতে মাথা ফেটে গেলে ক্ষতস্থানে ডাক্তার অপারেশন করলে রােযা নষ্ট হবে না। মাথার উপরিভাগের ক্ষত যদি মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে আর পেটের ক্ষত যদি পাকস্থলী পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং ওষুধও পাকস্থলীতে পৌঁছে তাহলে রােযা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এ ছাড়া শরীরে অন্য কোন স্থানের জখমে ওষুধ ব্যবহার করলে তাতে রােযা ভঙ্গ হবে না।
[পবিত্র মাহে রমজান ও সিয়াম সাধনা, পৃ ২৩৫]
📌 চক্ষু অপারেশন রােগীর রােযাঃ
চোখের সাথে পাকস্থলীর কোনাে যােগাযােগ পথ নেই। তবে নাক-কান-গলা তিনটি পাশাপাশি থাকার কারণে কখনাে গলার মাসআলা চোখ এর ক্ষেত্রে প্রয়ােগ করা হয়। চক্ষু অপারেশন হলে, চোখে ড্রপ, সুরমা বা মলম দিলে রােযা ভঙ্গ হয় না। যদি গলায় কোনাে স্বাদ পাওয়া যায় তাহলে থুতুর সাথে বাইরে ফেলে দিলেই চলবে। [অন্যাথায় পেটে প্রবেশ করলে রোজা ভেঙ্গে যাওয়া সম্ভাবনা রয়েছে]
[পবিত্র মাহে রমজান ও সিয়াম সাধনা, পৃ ২৩৫]