আগন্তুক পর্ব-১

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আজ আমি আপনাদের প্রথমে এক পৃষ্ঠার একটা ছোট লেখা পড়ে শোনাব। লেখাটা নাম না জানা কোন বিদেশী লেখকের। অনুবাদ আমার। এই প্রবন্ধটার নাম হচ্ছে ‘আগন্তুক’। এটা থেকেই আমরা আজকের মূল আলোচনায় যাব। 

এখানে লেখক বলছেন: “আমার জন্মের কয়েক মাস আগে, আমার বাবার সাথে একজন আগন্তুকের দেখা হয়েছিল – যে আমাদের ছোট্ট শহরে তখন নতুন এসেছিল। শুরু থেকেই আমাদের বাবা ওই মুখর আগন্তুকের প্রতি অত্যন্ত আকৃষ্ট বোধ করেন এবং শীঘ্রই তাকে আমাদের সাথে এসে বসবাস করতে আমন্ত্রণ জানান। তার চেহারা বাহির থেকে দেখতে খুব আকর্ষণীয় মনে না হলেও সবাই তাকে খুব তাড়াতাড়ি আপন করে নিল এবং কয়েক মাস পর যখন পৃথিবীতে আমার আগমন ঘটল (অর্থাৎ ঐ লেখকের জন্ম হলো) তখন আর সবার সাথে, সেও আমাকে স্বাগত জানাল। আমি যখন বড় হচ্ছিলাম তখন বাড়িতে এই আগন্তুকের অবস্থান নিয়ে মনে কোন প্রশ্ন আসেনি। আমার কচি মনে পরিবারের সকল সদস্যের জন্য একেকটা আসন ছিল। আমার পাঁচ বছরের ছোট ভাই ইউসুফ ছিল আমার জন্য অনুসরণীয় উদাহরণ।” ..

এখানে একটা মুসলিম পরিবারের কথা বলা হচ্ছে। .. “আমার ছোট বোন সাদিয়া আমার খেলার সাথী ছিল। সে আমাকে, নিজেকে বড় ভাই ভাবার যোগ্যতা দান করে ও মানুষকে ক্ষ্যাপানোর বিদ্যা অর্জনে সহায়তা করে। আমার বাবা-মা ছিলেন সম্পূরক, পরিপূরক শিক্ষক। মা আমাকে আল্লাহকে ভালোবাসতে শেখান আর বাবা শেখান কী করে আল্লাহর আনুগত্য করতে হয়। কিন্তু ওই আগন্তুক আমাদের গল্প শোনাত। সে অদ্ভুত সুন্দর সব হৃদয়গ্রাহী গল্প বানাতে ও শোনাতে পারত – অ্যাডভেঞ্চার, রহস্য, কমেডি আরও কত কী! এসবই ছিল তার দৈনন্দিন সংলাপ। প্রতিদিন বিকালে সে আমাদের গোটা পরিবারকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা তার শ্রোতা হিসাবে ধরে রাখতে পারতো – আর সপ্তাহান্তে আমাদের জেগে থাকা সময়টুকুর প্রায় সবটুকু সে-ই নিয়ে নিতো। আমি যদি রাজনীতি, ইতিহাস বা বিজ্ঞান সম্পর্কে কিছু জানতে চাইতাম, সে তা জানাত। সে অতীত সম্পর্কে জানাত এবং মনে হতো বর্তমান সম্পর্কেও তার সম্যক জ্ঞান রয়েছে। সে এমন সব জীবন্ত ছবি আঁকতে পারত যে আমি প্রায়ই সেগুলো দেখে কাঁদতাম অথবা হাসতাম। সে আমাদের গোটা পরিবারের একজন বন্ধুর মতো ছিল। 

সে আমাকে, আমার বাবাকে ও ইউসুফকে আমাদের জীবনে দেখা প্রথম আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট ম্যাচে নিয়ে যায়। সে আমাদের সবসময় সিনেমা দেখতে উৎসাহ দিত। এমনকি বহু নামী-দামী মানুষের সাথে আমরা যেন পরিচিত হতে পারি, সে তারও ব্যবস্থা করে দিত। সে অনর্গল কথা বলতে পারত। আমার বাবা মনে হয় তাতে কিছু মনে করতেন না বা বিরক্ত হতেন না। কিন্তু আমরা বাকিরা যখন হাঁ করে তার বলা কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলের কথা শুনতাম, মা তখন মাঝে মাঝেই তার সভা থেকে উঠে যেতেন। নিজের ঘরে গিয়ে তিনি কুরআন পড়তেন। কখনো তিনি সন্তর্পণে আমাদের বলতেন, নবী ﷺ বলেছেন: ‘ঈমানের সুন্দর দিক হচ্ছে সকল নিষ্ফল কাজ-কর্ম এড়িয়ে চলা’।”

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment