মানাকিবে মাওলা আলী আলায়হিস সালাম

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

১৩ ই রজব। এই দিনে অতি সম্মানিত স্থান পবিত্র কাবা শরীফের অভ্যন্তরে জন্মগ্রহণ করেন হায়দারে কাররার, মাওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু। 

যাঁর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ (হে আলী!) তুমি কি এতে খুশী হবে না যে, তোমার মর্যাদা আমার কাছে মূসা (আঃ) এর কাছে হারূন (আঃ) এর মতো। এ কথা ভিন্ন যে, আমার পর আর কোন নবী আসবে না।(সহীহ মুসলিম ৬১১২)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ আমি যার মাওলা, আলীও তার মাওলা।(সূনান আত তিরমিজী ৩৭১৩)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “কি বলতে চাও? তোমরা ‘আলী প্রসঙ্গে কি বলতে চাও? ‘আলী প্রসঙ্গে তোমরা কি বলতে চাও? আলী আমার হতে এবং আমি আলী হতে। আমার পরে সে-ই হবে সমস্ত মুমিনের ওয়ালি। 

(সূনান আত তিরমিজী ৩৭১২)

আম্মাজান আয়িশাহ্ (রাঃ) বলেন, (একদিন) রাসূলুল্লাহ ﷺ সকালে বের হলেন। তার পরনে ছিল কালো নকশী দ্বারা আবৃত একটি পশমী চাদর। হাসান ইবনু আলী (রাঃ) এলেন, তিনি তাকে চাদরের ভেতর প্রবেশ করিয়ে নিলেন। হুসায়ন ইবনু আলী (রাঃ) এলেন, তিনিও চাদরের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়লেন। ফাতিমাহ (রাঃ) এলেন, তাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। তারপর ‘আলী (রাঃ) এলেন তাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। তারপরে বললেনঃ “হে আহলে বায়ত আল্লাহ তা’আলা তোমাদের হতে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করে তোমাদের পবিত্র করতে চান।” (সূরা আল আহযাব ৩৩ঃ ৩০)। (সহীহ মুসলিম ৬১৫৫)

সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, আর যখন (এই) আয়াতঃ “অতঃপর (হে মাহবুব!) যে ব্যক্তি আপনার সাথে (ঈসা সম্পর্কে) বিতর্ক করে এর পরে যে, আপনার নিকট জ্ঞান (ওহী) এসেছে, তবে তাদেরকে বলে দিন, ‘এসো, আমরা ডেকে নিই আমাদের পুত্রদেরকে ও তোমরা তোমাদের পুত্রদেরকে এবং আমরা আমাদের নারীদেরকে ও তোমরা তোমাদের নারীদেরকে; আর আমরা আমাদের নিজেদেরকে ও তোমরা তোমদের নিজেদেরকে। অতঃপর মুবাহালাহ্ (বিনীত প্রার্থনা) করি। তারপর মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লা’নত দিই।”(সূরা আলে ইমরান ৩ঃ ৬১) 

অবতীর্ণ হলো, তখন রাসূলুল্লাহ ﷺ আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসায়ন (রা.) কে ডাকলেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহ! এরাই আমার পরিবার-পরিজন। (সহীহ মুসলিম ৬১১৪)

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ হাসান ও হুসায়ন জান্নাতী যুবকদের সর্দার এবং তাঁদের পিতা তাঁদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১১৮)

আল-বারা বিন আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ (তিনি বলেন) আমরা রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর সঙ্গে বিদায় হজ্জে উপস্থিত ছিলাম। তিনি পথিমধ্যে এক স্থানে (গাদিরে খুম) অবতরণ করেন, অতঃপর নামাজের জামা’আতে একত্র হওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি আলী (রাঃ)-এঁর হাত ধরে বলেন, আমি কি মু’মিনদের নিকট তাদের নিজেদের চাইতে অধিক প্রিয়/ ঘনিষ্টতর নই? তারা বলেন, হাঁ অবশ্যই। তিনি আবার বলেন, আমি কি প্রত্যেক মু’মিনের নিকট তার নিজের চাইতে অধিক ঘনিষ্টতর নই? তারা বলেন, হ্যাঁ অবশ্যই। তিনি ﷺ বলেন, আমি যার ওয়ালি/ মাওলা, আলীও তার ওয়ালি/ মাওলা। হে আল্লাহ্‌! যে তাকে ভালোবাসে আপনি তাকে ভালোবাসুন। হে আল্লাহ্‌! যে তার সাথে শত্রুতা করে আপনিও তার সাথে শত্রুতা করুন। (সূনান ইবনে মাজাহ ১১৬, মুসনাদে আহমাদ ১৮০১১)

মুসলিম শরীফে “আনসারদের এবং আলী (রা)-কে ভালোবাসা ঈমানের অংশ ও চিহ্ন এবং তাঁদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করা নিফাকের চিহ্ন” পরিচ্ছেদে, নাসাঈ শরীফে “ঈমানের আলামত” এবং “মুনাফিকের আলামত” আলাদা আলাদা দুটি পরিচ্ছেদেই, এছাড়াও তিরমিজি, ইবনে মাজাহ’তেও যে হাদিস শরীফটা এসেছে তা হল হযরত আলী রা. কে মুমিনরাই ভালবাসবে এবং মুনাফিকরাই তাঁর প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে।

অন্যদিকে রাসুলুল্লাহ ﷺ এর আর একটি ভবিষ্যদ্বাণী যার মূলকথা হচ্ছে, 

রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন, “হে আলি! তোমার উপমা হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের মত। ঈসা আলাইহিস সালামকে ভালোবেসে অতিরঞ্জিত করে একদল পথভ্রষ্ট হয়েছে তারা হলো খ্রীষ্টান, আর তাঁকে হিংসা করেও একদল পথভ্রষ্ট হয়েছে তারা ইহুদী। অনুরুপ তুমি আলির সাথেও হবে। একদল তোমার ভালোবাসাতে অতিরঞ্জিত করে পথভ্রষ্ট হবে, আরেক দল তোমার সাথে হিংসা বিদ্বেষ রেখে পথভ্রষ্ট হবে।” (মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল, খন্ড-১, পৃষ্ঠা নং-১৬০; ফাজায়েলে সাহাবা, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, খন্ডঃ ২, পৃষ্ঠা নং-৬৩৯, হাদিস নং-১০৮৭)

আল্লাহ তায়ালা যেন আমাদের সকলকে আহলে বাইত এবং সকল সাহাবায়ে কেরামের প্রতি পূর্ণ ভালবাসা পোষণ করার তাওফিক দান করেন। আহলে বাইত বিদ্বেষী এবং সাহাবী বিদ্বেষীদের ধোঁকা থেকে হেফাজত করেন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment