কবি নজরুল লিখেন,
আমি যদি আরব হতাম মদিনারই পথ
এই পথে মোর চলে যেতেন নূর নবী হজরত।
পয়জা তাঁর লাগত এসে আমার কঠিন বুকে
আমি ঝর্ণা হয়ে গলে যেতাম অমনি পরম সুখে
সেই চিহ্ন বুকে পুরে
পালিয়ে যেতাম কোহ-ই-তুরে
সেথা দিবানিশি করতাম তাঁর কদম জিয়ারত
মা ফাতেমা খেলত এসে আমার ধূলি লয়ে
আমি পড়তাম তার পায়ে লুটিয়ে ফুলের রেণু হয়ে
হাসান হোসেন হেসে হেসে
নাচত আমার বক্ষে এসে
চক্ষে আমার বইত নদী পেয়ে সে ন্যামত।
অন্যত্র লিখলেন,
একদিকে মাতা ফাতেমার বীর দুলাল হোসেনী সেনা
আরদিকে যত তখত বিলাসী লোভী এজিদের কেনা
মাঝে বহিতেছে শান্তিপ্রবাহ পূর্ণ ফোরাত নদী
শান্তিবারিতে তৃষাতুর মোরা ওরা থাকে তাহা রোধি
একদিকে নবী পরিবার ওরা কেবলি শান্তিব্রতী
আর একদিকে স্বার্থান্বেষী হিংসুক ক্রোধমতি
ঐক্য যে ইসলামের লক্ষ্য এরা তাহা দেয় ভেঙে
ফোরাত নদীর কুল যুগে যুগে রক্তে উঠেছে রেঙে-
এই ভোগীদের জুলুমে। ইহারা এজীদী মুসলমান
এরা ইসলামী সাম্যবাদের করিয়াছে খান খান
এক বিন্দুও প্রেম অমৃত নাই ইহাদের বুকে
শিশু আজগরে তীর হেনে হাসে পিশাচের মত সুখে
সার্বজনীন ভ্রাতৃত্ব ইসলামের সাম্যবাদ
যুগে যুগে এই অসুর সেনারা করিয়াছে বরবাদ।’
—
৩রা শাবান। জান্নাতী যুবকদের সর্দার ইমাম হুসাইন রাঃ এঁর জন্মদিবস। উনার সম্মানিত পিতা মাওলা আলী রাঃ বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বলেনঃ যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসে এবং এ দু’জন ও তাঁদের পিতা-মাতাকে ভালোবাসে, সে কিয়ামতের দিন আমার সাথেই থাকবে। (সূনান আত তিরমিজী ৩৭৩৩)
উসামাহ্ ইবনু যাইদ (রাঃ) বলেন, এক রাতে আমার কোন দরকারে নবী ﷺ-এঁর কাছে গেলাম। অতএব নবী ﷺ এমন অবস্থায় বাইরে এলেন যে, একটা কিছু তার পিঠে জড়ানো ছিল যা আমি অবগত ছিলাম না। আমি আমার দরকার সেরে অবসর হয়ে প্রশ্ন করলাম, আপনার দেহের সঙ্গে জড়ানো এটা কি? তিনি পরিধেয় বস্ত্র উম্মুক্ত করলে দেখা গেল তার দুই কোলে হাসান ও হুসাইন (রা.)। তিনি বললেনঃ এরা দু’জন আমার পুত্র এবং আমার কন্যার পুত্র। হে আল্লাহ! আমি এদের দু’জনকে মুহাব্বাত করি। সুতরাং তুমি তাদেরকে মুহাব্বাত কর এবং যে ব্যক্তি এদেরকে মুহাব্বাত করবে, তুমি তাদেরকেও মুহাব্বাত কর। (সূনান আত তিরমিজী ৩৭৬৯)
একবার হুযাইফাহ্ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ ﷺ এঁর নিকট এলে তিনি ﷺ জানানঃ একজন ফেরেশতা যিনি আজকের এ রাতের আগে কখনও পৃথিবীতে অবতরণ করেননি। তিনি আমাকে সালাম করার জন্য এবং আমার জন্য এ সুখবর বয়ে আনার জন্য আল্লাহ তা’আলার কাছে অনুমতি চেয়েছেনঃ ফাতিমাহ জান্নাতের নারীদের নেত্রী এবং হাসান ও হুসাইন জান্নাতের যুবকদের নেতা। (সূনান আত তিরমিজী ৩৭৮১, ইবনে আসাকির রহঃ সহীহুল জামে’ হা/৭৯)
ইবনে উমার রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেনঃ হাসান ও হুসায়ন জান্নাতী যুবকদের সর্দার এবং তাঁদের পিতা তাঁদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ ১১৮)
প্রিয় নবী ﷺ বলতেন, হাসান ও হুসাইন (রাঃ) আমার কাছে দুনিয়ার দুটি পুষ্প বিশেষ। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, এরা দুজন পৃথিবীতে আমার নিকট দু’টি সুগন্ধি ফুল। (সহীহ বুখারী ৫৯৯৪, সহীহ বুখারী ৩৭৫৩)