আউলিয়ায়ে কেরামের কাছে সাহায্য প্রার্থনার বিধান।

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আউলিয়ায়ে কেরাম সম্পর্কে আল্লাহ রব্বুল আলামিন কোরআনে পাকে এরশাদ করেন,


[62] اَلَاۤ اِنَّ اَوۡلِیَآءَ اللّٰہِ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا ہُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ
[63]الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ کَانُوۡا یَتَّقُوۡنَ
[64]لَہُمُ الۡبُشۡرٰی فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ فِی الۡاٰخِرَۃِ ؕ لَا تَبۡدِیۡلَ لِکَلِمٰتِ اللّٰہِ ؕ ذٰلِکَ ہُوَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ 

কানযুল ঈমানে ১৪শ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ইমাম আলা হযরত আহমদ রেযা খাঁ ফাদ্বেলে ওয়া কালান্দারে বেরেলী এর তরজমা করেন,সুরা ইউনুসে আছে,

৬২.শুনে নাও! নিশ্চয় আল্লাহর ওলীগণের না কোন ডর আছে, না কোন দুঃখ।
৬৩. ঐসব লােক, যারা ঈমান এনেছে এবং খােদাভীতি অবলম্বন করে;
৬৪. তাদের জন্য সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনে এবং পরকালে।

এই আয়াতের তো অসংখ্য ব্যাখ্যা আছে।তার একটা উত্তম ব্যাখ্যা হতে পারে সহিহুল বুখারীর একটা হাদীস যেটা বর্ণিত হচ্ছে কিতাবুর রিক্বাক এর বাব-উ-তাওয়াযো’ পরিচ্ছদে,৬৫০২ নং হাদীস।হাদীসে কুদসি।

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلىﷺ إِنَّ اللهَ قَالَ مَنْ عَادَى لِي وَلِيًّا فَقَدْ آذَنْتُهُ بِالْحَرْبِ وَمَا تَقَرَّبَ إِلَيَّ عَبْدِي بِشَيْءٍ أَحَبَّ إِلَيَّ مِمَّا افْتَرَضْتُ عَلَيْهِ وَمَا يَزَالُ عَبْدِي يَتَقَرَّبُ إِلَيَّ بِالنَّوَافِلِ حَتَّى أُحِبَّهُ فَإِذَا أَحْبَبْتُهُ كُنْتُ سَمْعَهُ الَّذِي يَسْمَعُ بِهِ وَبَصَرَهُ الَّذِي يُبْصِرُ بِهِ وَيَدَهُ الَّتِي يَبْطِشُ بِهَا وَرِجْلَهُ الَّتِي يَمْشِي بِهَا وَإِنْ سَأَلَنِي لأُ×عْطِيَنَّهُ وَلَئِنْ اسْتَعَاذَنِي لأعِيذَنَّهُ وَمَا تَرَدَّدْتُ عَنْ شَيْءٍ أَنَا فَاعِلُهُ تَرَدُّدِي عَنْ نَفْسِ الْمُؤْمِنِ يَكْرَهُ الْمَوْتَ وَأَنَا أَكْرَهُ مَسَاءَتَهُ

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বলেছেনঃ “আল্লাহ্ বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার উপর ফরয করেছি, তা দ্বারাই কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ‘ইবাদাত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নেই যে, 

☞আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শুনে। 

☞আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। 

☞আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে।

☞ আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। 

☞সে যদি আমার কাছে কোন কিছু চায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি।

☞ আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দেই। আমি কোন কাজ করতে চাইলে তা করতে কোন দ্বিধা করি-না, যতটা দ্বিধা করি মু’মিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি।”

এখন কোনো আউলিয়ায়ে কেরাম যদি সাহায্য করেও থাকেন,তবে সেটা উনি নিজের ক্ষমতায় করেন না।আল্লাহর ইচ্ছায় এবং আল্লাহর ক্ষমতায় দিয়েই করেন।এবং তাদের সাহায্য করাটা আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেকই হয়ে থাকে।

কোনো ব্যক্তি যদি বিপদাপন্ন হয় তবে সে সরাসরি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে পারে।এটাকে দো’আ বা ইবাদাত বলে।

ঐ ব্যক্তি আল্লাহর কোনো নেক বান্দা বা পবিত্র বস্তু/অবস্থানের মাধ্যমেও আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে পারে।একে ‘তাওয়াসসুল বা ওসীলা‘ তালাশ করা বলে।

আর,কোনো বিপদগ্রস্থ ব্যক্তি যখন প্রকৃতপক্ষে সাহায্যকারী আল্লাহ, এটা বিবেচনায় রেখে, আল্লাহর সাহায্যকারী মাধ্যমটির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে,তবে সেটাকে বলে ‘ইস্তিগাছা’ বা ‘ইস্তিয়ান’ বা সাহায্য প্রার্থনা করা।

তিনটি পদ্ধতিই জায়েজ। প্রথম দুটি নিয়ে প্রশ্ন না থাকলেও তৃতীয়টি অনেকে না জেনে উলোটপালোট করে ফেলেন,শিরিকের উল্টাপাল্টা ফতোয়া দেন।আমরা চেষ্টা করবো তাদের সঠিক তথ্য পর্যন্ত পৌছানোর যা আক্বায়েদে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামআ সমর্থিত। 

আপত্তিকারীদের প্রথম প্রশ্ন, সুরা ফাতেহায় আছে

اِیَّاکَ نَعۡبُدُ وَ اِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ

বা,”আমরা শুধু আপনারই ইবাদাত করি এবং শুধু আপনারই সাহায্য প্রার্থনা করি”।

এখন,কি প্রকারে আল্লাহ ব্যতীর অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে?এটা তো স্পষ্ট শির্ক!

জবাবে বলবো,লক্ষ করূন সূরা ফাতেহার বাক্য টায়ঃ

,আমরা আপনারই ইবাদত করি(আ’বুদূ)এবং আপ্নারই সাহায্য প্রার্থনা(ইস্তা’ঈন).

ইবাদাত(আ’বুদু) এবং সাহায্য (ইস্তিয়ান) এই দুইয়ের মাঝে একটা ‘ওয়াও’ /(وَ) আছে।এটা হল ‘হরফে আতফ’।অল্প গ্রামার বুঝা লাগবে এখানে। 

এটা কোনো সন্দেহের অবকাশ রাখে না যে ইবাদাত-বন্দেগী আল্লাহরই জন্য।এখানে কারো ভাগ নেই।কেউ এবাদতে ভাগ বসাতে চাইলে সেটা শিরক হবে।ইবাদতের হুকুম কেবল আল্লাহর।সাহায্যের হুকুম আল্লাহর প্রতি এবং আল্লাহর দেয়া ক্ষমতায় কিছু বান্দাদের প্রতি।(বিশেষ সাহায্য বুঝানো উদ্দেশ্য)।

➤➤দুটি বাক্যের মাঝখানে থাকা ভিন্নতা নির্দেশক হরফের কারণে বাক্যদ্বয়ের আহকাম তথা বিধানের পার্থক্য বুঝা যাচ্ছে। যদি [ইয়্যাকা নাস্তাঈন] এর মধ্যে সাহায্য প্রার্থনার দ্বারা আল্লাহর ইবাদাত উদ্দেশ্য হতাে তাহলে কুরআন মাজীদ এটাকে ওয়াও/(و) দ্বারা [ইয়্যাকা না’বুদু] থেকে আলাদা করা হতো না।হরফে আতফ ‘ওয়াও’ এর ব্যবহার এটাই বলছে যে [ইয়্যাকা না’বুদূ] ও [ইয়্যাকা নাস্তাঈন] এ উভয়ের প্রকৃতি ভিন্ন ভিন্ন।যদি ইবাদাত ও ইস্তিআনার বিধান একই হতো, তাহলে এ দুটির মাঝখানে ভিন্নতা নির্দেশক হরফে আতফ বা و আনার প্রয়ােজন ছিল না।বরং বাক্যটি হতাে এমন — [اِیَّاکَ نَعۡبُدُ اِیَّاکَ نَسۡتَعِیۡنُ ؕ]/ ইয়্যাকা না’বুদূ ইয়্যাকা নাস্তাঈন।(ওয়াও নেই)।

কুরআন মাজীদ আল্লাহ তায়ালার বাণী হওয়ায় স্বীয় অনুপম বৈশিষ্ট্য, ব্যাপকতা ও পরিপূর্ণতার কারণে মানুষের সমালােচনার উর্ধে। এর প্রতিটি হরফের নির্দিষ্ট অর্থ ও উদ্দেশ্য রয়েছে। একটি হরফও অপ্রয়ােজনীয় বলা যাবে না। তাই যদি আলােচ্য আয়াতে ইবাদত ও ইস্তিআনার মধ্যকার ভিন্নতা উদ্দেশ্য না হতাে, তাহলে ভিন্নতা নির্দেশক হরফ কখনােই আনা হতাে না। কুরআন মাজীদে এর সমর্থনে যথেষ্ট উদাহরণ এসেছে। তেমনিভাবে যেখানে ভিন্নতা উদ্দেশ্য নয় সেখানে و/আতফ আনা হয়নি।

এর উদাহরণ সূরা ফাতিহার প্রথম তিনটি আয়াতেই দেখা যায়। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতের পবিত্র বাণীঃ—

{اَلۡحَمۡدُ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ۙ﴿١﴾الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ ۙ{٢﴾مٰلِکِ یَوۡمِ الدِّیۡنِ ؕ﴿٣﴾}

➤খেয়াল করুল আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিনার রহমানিররহিমী মালিকী ইয়াওমিদ্দীন।

একই লাইনে লিখলাম কারণ “ওয়াক্বফে لا’ বিদ্যমান।এবং হামদ-রহিম-রহমান-মালিক এগুলো সব আল্লাহর এবং অন্য কারো নয়, তাই মাঝে হরফে ওয়াফ/و নেই।

➤➤আরো একটা উদাহরণ দিই।যেমন সূরা হাশরে উল্লেখ –

هُوَ اللّٰهُ الَّذِیۡ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ اَلۡمَلِکُ الۡقُدُّوۡسُ السَّلٰمُ الۡمُؤۡمِنُ الۡمُهَیۡمِنُ الۡعَزِیۡزُ الۡجَبَّارُ الۡمُتَکَبِّرُ ؕ سُبۡحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا یُشۡرِکُوۡنَ ﴿۲۳

বা,তিনিই আল্লাহ্‌, তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। তিনিই অধিপতি, মহাপবিত্র, শান্তি-ত্রুটিমুক্ত, নিরাপত্তা বিধায়ক, রক্ষক পরাক্রমশালী, প্রবল, অতীব মহিমান্বিত। তারা যা শরীক স্থির করে আল্লাহ তা হতে পবিত্র, মহান।

কোনো ‘ওয়াও’ নাই।

➤আবার, আয়াতুল কুর্সির শুরু এভাবে

[اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ]

দেখুন,একটা হরফে আতফও নেই।

অর্থাৎ বুঝা গেলো মাঝখানে কোন ধরনের ভিন্নতা না থাকায় কোথাও হরফে আতফ নেয়া হয়নি। যদিও অন্যান্য আয়াতসমূহে যেখানে ভিন্ন ভিন্ন আমল ও কাজের উদ্দেশ্য ছিল সেখানে হরফে আত্ফ নেয়া হয়েছে।

☞এখন দেখতে হবে,বান্দা কর্তৃক ‘সাহায্য করা’ মর্মে কোনো ইশারা কোরানে আছে কিনা।

➤সুরা তাহরীম এ আল্লাহ রব্বুল আলামিন এরশাদ করেন—

সূরা তাহরীমের চতুর্থ আয়াতে উল্লেখ— 

فَاِنَّ اللّٰہَ ہُوَ مَوۡلٰىہُ وَ جِبۡرِیۡلُ وَ صَالِحُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ۚ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃُ بَعۡدَ ذٰلِکَ ظَہِیۡرٌ ﴿۴

বা, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর (নবীজীর) সাহায্যকারী এবং জিব্রাঈল ও সৎকর্মপরায়ণ মুমিনগণ(ও তাঁর সাহায্যকারী হবেন)। এবং এরপর ফিরিশতাগণ সাহায্যকারী রয়েছে। (সূরা তাহরিম-০৪)

এখানে ‘মওলা’ শব্দের অর্থ ‘নাসির’ বা সাহায্যকারী হবে যা সৈয়্যদ মাহমুদ আলূসী বাগদাদী হানাফি র. উনার ‘রুহুল মাআনী’ তে উল্লেখ করেছেন।

ইমাম কালবী বলছেন,

সালিহ-মুমিন এর একটি তাফসির, এরা হলো সেই সকল অনুগত ব্যক্তি,যারা মুনাফিক নয়।

[★তাফসিরে মা’আলিমুত তানযীল,৮/১৬৮,আল্লামা মুহিউসসুন্নাহ বাগাবী

★তফসিরে কাশফুল বায়ান,২৭খন্ড ৪৪পৃষ্ঠা ,আল্লামা ছা’লাবী(৪২৭হিজরী)]

হাকীমুল উম্মত আল্লামা মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহঃ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন—

“এ থেকে বুঝা গেলো যে, আল্লাহ্ তা’আলার বান্দাগণ সাহায্যকারী; কেননা, এ আয়াতে হযরত জিব্রাঈল এবং নেককার মুসলমানদেরকে ‘মাওলা’ অর্থাৎ সাহায্যকারী বলা হয়েছে। আর ফিরিশতাদেরকে “যহীর”  অর্থাৎ সহযোগিতাকারী সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেখানে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সাহায্যের অস্বীকৃতি প্রকাশ করা হয়েছে, সেখানে ‘প্রকৃত সাহায্য’ বুঝানো উদ্দেশ্য। সুতরাং আয়াতগুলো পরস্পর বিরোধী নয়”।

☞এখন কথা হলো মৃত্যুর স্বাদ লাভের পর কারো পক্ষে সাহায্য করা সম্ভব কিনা?

উত্তরে বলবো,আউলিয়া কেরাম সাহায্য করতে পারেন,এটা মূলত দুইটা ভিত্তিতে বলা হয়ে থাকে।

➤প্রথমত, প্রথমত মুমিন বান্দা কবরে জীবিত,এবং 

➤দ্বিতীয়ত গায়েবের থেকে সাহায্য চাওয়ার বিধান। 

কারণ,যে জীবিত থাকবে সে যদি আহূত হয়,এবং আল্লাহ যদি তাকে ক্ষমতা দেন তবে তার রূহের পক্ষে সাহায্য না করার কোনো কারণ নেই।

এদিকে কোরআন বলছে-
وَ لَا تَقُوۡلُوۡا لِمَنۡ یُّقۡتَلُ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ اَمۡوَاتٌ ؕ بَلۡ اَحۡیَآءٌ وَّ لٰکِنۡ لَّا تَشۡعُرُوۡنَ ﴿۱۵۴

বা,এবং আল্লাহর পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না, হ্যাঁ তারা জীবিত; তোমাদের খবর নেই।(বাকারা ১৫৪)

➤তফসীরে মাযহারীতে আল্লামা কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী রহঃ {بَلۡ اَحۡیَآءٌ }/বালআহয়াউঁ এর তাফসিরে বলেন,

يعني أن الله تعالى يعطي لأرواحهم قوة الأجساد فيذهبون من الأرض والسماء والجنة حيث يشاؤون وينصرون أولياءهم ويدمرون أعداءهم إن شاء الله تعالى، 

বা, ‘তারা জীবিত’ বলার অর্থ এই যে,আল্লাহ পাক শহিদদের রূহসমূহকে শরীর বিশিষ্ট মানুষের মতই শক্তি প্রদান করেছেন।তারা আসমান,যমিন, জান্নাত সকল স্থানে পরিভ্রমণ করতে সক্ষম।তারা তাদের বন্ধুদের সাহায্য করতে,এবং শত্রুর ক্ষতিসাধন করতেও সক্ষম।এবং এটা আল্লাহ সুবহান এর ইচ্ছায় হয়ে থাকে। 

উনি আরো বলেন,

فذهب جماعة من العلماء إلى أن هذه الحياة مختص بالشهداء والحق عندي عدم اختصاصها بهم بل حياة الأنبياء أقوى منهم وأشد ظهورا آثارها في الخارج حتى لا يجوز النكاح بأزواج النبي ة بعد وفاته بخلاف الشهيد، والصديقون أيضا على درجة من الشهداء والصالحون يعني الأولياء ملحقون بهم كما يدل عليه الترتيب في قوله تعالى : [مِّنَ النَّبِیّٖنَ وَ الصِّدِّیۡقِیۡنَ وَ الشُّہَدَآءِ وَ الصّٰلِحِیۡنَ ۚ] ولذلك قالت الصوفية العلية: أرواحنا أجسادنا وأجسادنا أرواحنا ،وقد تواتر عن كثير من الأولياء أنهم ينصرون أولياءهم ويدمرون أعداءهم ويهدون إلى الله تعالی من يشاء الله تعالى،

বা, বর্ণিত হাদিসগুলোর প্রেক্ষিতে কিছু ওলামায়ে কেরামের অভিমত এই যে, বর্ণিত মর্যাদা কেবল শহীদগণের জন্য নির্দিষ্ট। আমি বলি(আল্লামা পানিপথী),এই অনন্যসাধারণ জীবন লাভ কেবল শহীদগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়।বরং নবীগণও এ রকম জীবনের অধিকারী। তাঁদের জীবন পার্থিব জীবনের মতোই প্রভাবশীল । রসুলুল্লাহ্ স, এর জন্য এই অনন্য মর্যাদা অধিকতর শক্তিশালী। তাই তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর পবিত্র সহধর্মীনীগণের পুনর্বিবাহ নিষিদ্ধ। শহীদগণের স্ত্রীদের প্রতি এ রকম নিষেধাজ্ঞা নেই। আবার সিদ্দিকগণের মর্যাদা শহীদগণেরও উর্ধ্বে। সলেহীন, অর্থাৎ আউলিয়া-ই- কেরামের মর্যাদা শহীদগণের নিম্নেকিন্তু তাঁরাও এই মর্যাদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যেমন আল্লাহপাক বলেছেন, {এরা তারাই যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহভাজন করেছেন, তারা হচ্ছেন নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সলেহীন। নিসা ৬৯}এই আয়াতে তাদের মর্যাদার ক্রমধারা সূচিত হয়েছে। এ কারণেই সুফীয়ায়ে কেরামগণ বলেছেন, আমাদের রূহগুলি আমাদের দেহ এবং আমাদের দেহগুলি আমাদের রূহ। শতসহস্র নির্ভরযোগ্য ঘটনাপঞ্জীর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, অলি আল্লাহগণ তাদের বন্ধুদেরকে সাহায্য করেন এবং শত্রুদেরকে নিপাত করেন। তারা আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী পথপ্রদর্শনও করেন।

মুমিনগণ  কবরে জীবিত থাকাটা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়।যেমনঃ

➤তিরমিযী শরীফে উল্লেখ আছে, [#২৮৯০,সূরা মূলকের ফযিলত]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ ضَرَبَ بَعْضُ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ خِبَاءَهُ عَلَى قَبْرٍ وَهُوَ لاَ يَحْسِبُ أَنَّهُ قَبْرٌ فَإِذَا فِيهِ إِنْسَانٌ يَقْرَأُ سُورَةَ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ حَتَّى خَتَمَهَا فَأَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنِّي ضَرَبْتُ خِبَائِي عَلَى قَبْرٍ وَأَنَا لاَ أَحْسِبُ أَنَّهُ قَبْرٌ فَإِذَا فِيهِ إِنْسَانٌ يَقْرَأُ سُورَةَ تَبَارَكَ الْمُلْكُ حَتَّى خَتَمَهَا ‏.‏ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلىﷺ “‏ هِيَ الْمَانِعَةُ هِيَ الْمُنْجِيَةُ تُنْجِيهِ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ ‏”‏

অর্থাৎ,ইবনু আব্বাস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ কোন এক সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ এর এক সাহাবী একটি কবরের উপর তার তাবু খাটান। তিনি জানতেন না যে, তা একটি কবর। তিনি হঠাৎ বুঝতে পারেন যে, কবরে একটি লোক সূরা আল-মুলক পাঠ করছে। সে তা পাঠ করে সমাপ্ত করলো। তারপর তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে এসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমি একটি কবরের উপর তাঁবু খাটাই। আমি জানতাম না যে, তা কবর। হঠাৎ বুঝতে পারি যে, একটি লোক সূরা আল-মুলক পাঠ করছে এবং তা সমাপ্ত করেছে। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ এ সূরাটি প্রতিরোধকারী নাজাত দানকারী। এটা কবরের আযাব হতে তিলাওয়াতকারীকে নাজাত দান করে।

ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীসটি হাসান এবং দুর্লভ।

➤➤

عن مالك بن أنس قال : بلغني أن أرواح المؤمنين مرسلة تذهب حيت شاءت.

বা, মালেক বিন আনাস রাঃ বর্ণনা করেন,আমার কাছে হাদীস পৌঁছল যে,মুমিনদের রূহ সমূহ স্বাধীনভাবে যেখানে ইচ্ছা গমন করে।

[★কিতাবুল মাওত,হাদীস নং ৪৭,ইমাম আবিদ দুনইয়া রাঃ

★আল হাভী লিল ফতোয়া,২/১৭৩,ইমাম জালালুদ্দিন সূয়ুতী]

এই হাদীসদ্বয় দ্বারা স্পষ্ট হয় যে ,আউলিয়ায়ে কিরামগণ উনাদের রওজা শরীফে জীবিত থাকতে পারেন এবং তা শরীয়তবিরোধী নয়।

দ্বিতীয়ত,গায়েবের থেকে সাহায্য চাওয়া যায় কিনা।ইমাম জাযারী রহঃ হাদিস বর্ণনা করছেন,উতাবা বিন গাযওয়ান রাঃ বর্ণনা করেন নবীজী বলেন যে,কারো যদি সওয়ারী/জন্তু জানোয়ার বনে হারিয়ে যায়,তারা যেন বলে,

وإن أراد عونا فليقل : »يا عباد الله أعينوني، يا عباد الله أعينوني، يا عباد الله أعينوني» 

বা,হে আল্লাহর বান্দা! আমাকে সাহায্য করুন!(৩বার।তাবারানি মু’জামুল কাবীরে আলফাজের ব্যবধানে উল্লেখ আছে,আগিছনী বা আমাকে সাহায্য করুন)

[★আল হিসনুল হাসীন,২০৯পৃষ্ঠা,ইমাম মুহাম্মদ ইবনে জাযারী দামেস্কি (৭৩৩হিজরী)

★আল মুজামুল কাবীর, ১৭/১১৭-১১৮পৃষ্ঠা,ইমাম তাবারানী

★মুজমাউয যাওয়াইদ,#১৭১০৩,ইমাম হায়সামী(দারুল কুতুব ইল্মিয়্যাহ) ]

হাদিস খানা বর্ণনা করার পর রাবী (উতবাহ ইবনে গাযওয়ান) বলেন

وقد جرب ذلك

বা,”আমি দেখেছি এটা খুবই কার্যকারী”।

➤ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী, হুসনুল হিসনের ব্যাখ্যায় এই হাদীসের ব্যাপারে বলেন,

قال بعض العلماء الثقات: »حديث حسن يحتاج إليه المسافرون، وروي عن المشايخ أنه مجرب قرن به الجح 

বা,অনেক নির্ভরযোগ্য ওলামায়ে কেরাম বলেছেন হাদীসটির মান সুন্দর।পরিব্রাজকদের জন্য এটা খুবই উপকারী।অনেক সূফীয়ায়ে কেরাম বলেছেন এটি বিশুদ্ধ।

[হিরয-এ-সামিন লি হিসনে হাসীন,২য় খন্ড ৯৩৬পৃষ্ঠা,ইমামুল হারামাইন মোল্লা আলি ক্বারী হানাফি]

‘ইয়া ইবাদী’ এর ব্যাখ্যায় উনি আরো বলেন,

المراد بهم الملىكة او المسلمون من الجن او رجال الغيب المستمون بابدال

বা,এর মানে হল মালাইকা/ফেরেশতা,মুসলিম জ্বীন অথবা রিজালুল গায়ব/অদৃশ্যের মানুষ যেমনঃআবদাল।

➤➤মুসলিম শরিফের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী বলেন,

قُلْتُ: حَكى لِي بَعْضُ شَيُوْخِنَا الْكِبَارِ فِي الْعِلْمِ أَنُّه اِنْفَلَتَتْ لَه دَابَّةٌ أَظُنُّهَا بَغْلَةً، وَكَانَ يَعْرِفُ هَذَا الْحَدِيْثَ، فَقَالَه: فَحَبَسَهَا اَللهُ عَلَيْهِمْ فِي الْحَالِ؛ وَكُنْتُ أَنَا مَرَّةً مَعَ جَمَاعَةٍ فَانْفَلَتَتْ مِنْهَا بَهِيْمَةٌ، وَعَجَزُوْا عَنْهَا، فَقُلْتُه، فَوَقَفَتْ فِي الْحَالِ بِغَيْرِِ سَبَبٍ سَوَىٰ هَذَا الْكَلَامِ

অর্থঃ(ইমাম নববী বলেন) ‘‘আমাকে এক বুযুর্গ একটি ঘটনা বর্ণনা করেন যে, একদা আমার একটি খচ্ছর হারিয়ে গেল। রাসূলপাক’র হাদীস খানা আমার জানা ছিল। তখন আমি বললাম “হে আল্লাহর বান্দা! আমাকে সাহায্য করুন! তখন আল্লাহ তা‘য়ালার দয়ায় আমার খচ্ছর মিলে গেল।” মুহাদ্দিস আল্লামা নববী রহঃ বলেন, “একদা আমি নিজেই এক বড় দলের সাথে ছিলাম, হঠাৎ আমাদের চতুষ্পদ জন্তুটি পালাতে লাগল। আমরা অনেক চেষ্টা করেও তা পেলাম না, তখন আমিও “হে আল্লাহর বান্দা, আমাকে সাহায্য করুন! বলে চিৎকার দিলাম। সাথে সাথে তা আটকে গেল।’’

আহলে হাদীস স্কলার চমৎকার লিখেছেন যা তাক লাগানোর মতো। 

কাযী শাওকানী উল্লেখ করেন —

وَأخرج الْبَزَّار من حَدِيث ابْن عَبَّاس رَضِي الله عَنْهُمَا أَن رَسُول الله صلى الله عَلَيْهِ وَسلم قَالَ إِن لله مَلَائِكَة فِي الأَرْض سوى الْحفظَة يَكْتُبُونَ مَا سقط من ورق الشّجر فَإِذا أصَاب أحدكُم شَيْء بِأَرْض فلاة فليناد أعينوني يَا عباد الله قَالَ فِي مجمع الزَّوَائِد رِجَاله ثِقَات وَفِي الحَدِيث دَلِيل عَلى جَوَاز الِاسْتِعَانَة بِمن لَا يراهم الْإِنْسَان من عباد الله من الْمَلَائِكَة وصالحي الْجِنّ وَلَيْسَ فِي ذَلِك بَأْس كَمَا يجوز للْإنْسَان أَن يَسْتَعِين ببني آدم إِذا عثرت دَابَّته أَو انفلتت 

বা, “ইমাম বায্যার হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ এর সূত্রে বর্ণনা করেন, নবীজি হতে বর্ণিত আছে যে,ফেরেশতা ছাড়াও পৃথিবীতে এমন কতগুলো ফেরেশতা আছেন, যারা কোন একটি গাছের পাতাও ঝড়ে পড়লে তা লেখেন। সুতরাং তোমাদের কেউ যখন কোন জঙ্গলে বিপদে পড়বে, তখন সে যেন বলে, হে আল্লাহর বান্দা, আমাকে সাহায্য করুন!

➤ (ইমাম হাইসামীর) মাযমাউয যাওয়ায়েদে রয়েছে এ হাদিসের সমস্ত রাবীগণ বিশ্বস্ত।

➤এ হাদীসের মধ্যে বৈধতা আছে যে, অদৃশ্য ব্যক্তি তথা ফেরেশতা এবং নেককার জিনদের কাছে সাহায্য চাওয়া বৈধ। ➤যেমনিভাবে মানুষের কোন জন্তু হারিয়ে গেলে বনী আদম থেকেও সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ।

অতএব,বুঝা গেলো।গায়েবের কাছে আল্লাহর দেয়া ক্ষমতায় ক্ষমতাবান মনে করে সাহায্য চাওয়া বৈধ।

এরকম কিছু উদাহরণ আরো দেয়া যাবে।

➤মা হাজেরা আলাইহাসসালাম যখন সৈয়্যদুনা ইসমাইল আলাইহিসালাম কে মরুভুমিতে রেখে সাফা-মারওয়া দৌড়াদৌড়ি করছিলেন,তখন একপর্যায়ে উনি অদৃশ্যে জিব্রাইল আলাইহিসসালাম এর পাখার আওয়াজ শুনতে পেয়ে ডাক দেন—

فَإِذَا هِيَ بِصَوْتٍ فَقَالَتْ أَغِثْ إِنْ كَانَ عِنْدَكَ خَيْرٌ 

বা, “হঠাৎ তিনি(হাজেরা) একটি শব্দ শুনতে পেলেন।বললেন,আগিছ বা আমাকে সাহায্য করুন,যদি আপনার ভাল করার ইচ্ছা থাকে তবে।”

এরপর উনি জিব্রাঈল আঃ কে দেখতে পান। অর্থাৎ উনি অদৃশ্য সাহায্যকারীর (যিনি আল্লাহর পক্ষ হতে প্রেরিত,আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতায় সাহায্যকারী) নিকট সাহায্য চান।

[বুখারী,৩৩৬৫ নং হাদীস]

➤➤

عبد الله بن أحمد بن حنبل قال سمعت أبي يقول حججت خمس حجج اثنتين راكب وثلاث ماشي أو ثلاث راكب واثنتين ماشي فضللت الطريق في حجة وكنت ماشيا فجعلت أقول يا عباد الله دلوني على الطريق قال فلم أزل أقول ذلك حتى وقفت على الطريق أو كما قال أبي

ইমাম বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমানে জাইয়্যেদ বা অতি উত্তম সনদে উল্লেখ করেন,হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল,উনার পিতা ইমাম আহমদকে বলতে শুনেছেন যে,ইমাম আহমদ বলেন,”আমি মোট পাঁচবার হজ্জ্ব করি।দুইবার পায়ে হেঁটে,তিনবার সওয়ারী সহ বা দুইবার সওয়ারী সহ,তিনবার পায়ে হেঁটে।একবার পায়ে হেঁটে হজ্জ্ব কালে আমি পথ হারিয়ে ফেলি।আমি তখন চিৎকার করতে থাকি,হে আল্লাহর বান্দারা! আমাকে পথ দেখান।আমি এভাবেই করতে থাকলাম,যতক্ষন না আমি সঠিক রাস্তায় ফিরে এলাম। “

(★শো,আবুল ঈমান,৬/১২৮,হাদীস নং ৭৬৯৭,দারুল কুতুব ইলমিয়াহ।

➤➤মুজমাউয যাওয়ায়েদে উল্লেখ আছে-

وعن ابن عمر قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ان لله خلقا خلقهم لحوائج الناس تفزع الناس إليهم في حوائجهم أولئك الآمنون من عذاب الله

বা,ইবনে উমর রাঃ হতে বর্ণিত,নবীজী বলেন,নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলার কিছু খাস বান্দা রয়েছে যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা উনার বান্দাদের হাজত/সমস্যা পূরণের জন্য সৃষ্টি করেছেন।আর মানুষ ভীত হয়ে তাদের কাছে সমস্যা নিয়ে আসে।তারা এমন বান্দা যারা আল্লাহর আযাব হতে নিরাপদ।

[★মুজমাউয যাওয়ায়েদ,৮/১৯২,১৩৭৩২ নং হাদীস।ইমাম হায়সামী

★মু’জামুল কাবীর,১২/৩৫৮,১৩৩৩৪নং হাদীস।ইমাম তাবারানি

★মুকারিমুল আখলাক,৮২নং,ইমাম তাবারানি।

★হিলইয়াতুল আউলিয়া ৩/২২৫,৬/১১৫, ১০/২১৫  ইমাম আবু নঈম আসবাহানী

★তারিখে দামেস্ক,৫/৫৪, ইমাম ইবনে আসাকের ]

এখন দেখা যাক কারা আযাব হতে নিরাপদ।সূরা আম্বিয়ায় আল্লাহ বলেন—

اِنَّ الَّذِیۡنَ سَبَقَتۡ لَہُمۡ مِّنَّا الۡحُسۡنٰۤی ۙ اُولٰٓئِکَ عَنۡہَا مُبۡعَدُوۡنَ ﴿۱۰۱

অর্থঃ নিশ্চয় যাদের জন্য আমাদের কাছ থেকে পূর্ব থেকেই কল্যাণ নির্ধারিত রয়েছে তাদেরকে তা থেকে (জাহান্নামের আযাব হতে) দূরে রাখা হবে।

এই আয়াতের ব্যাখায় তফসিরে দূররে মনসুর,৪/৩৩৯, এ উল্লেখ আছে

وأخرج ابن المنذر ، و ابن أبي حاتم ، عن ابن عباس :{اِنَّ الَّذِیۡنَ سَبَقَتۡ لَہُمۡ مِّنَّا الۡحُسۡنٰۤی ۙ } . قال : أولئك أولياء الله

অর্থাৎ,ইমাম ইবনে আবি হাতেম,ইমাম ইবনে মুনযির  হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ হতে বর্ণনা করেন,উক্ত আয়াতের ব্যাপারে ইবনে আব্বাস বলেন (এখানে যাদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন আউলিয়া আল্লাহ।

➤➤আরেকটি বড় হাদীস বর্ণিত হচ্ছে মুজমাউয যাওয়ায়েদে,যার প্রথম অংশ এরূপ—

وعن ميمونة بنت الحارث زوج النبي صلى الله عليه وسلم أن رسول الله صلى الله عليه وسلم بات عندها في ليلة فقام يتوضأ للصلاة قالت: فسمعته ص ٢٤٠ يقول في متوضئه: “لبيك لبيك” ثلاثا “نصرت نصرت” ثلاثا فلما خرج قلت: يا رسول الله سمعتك تقول في متوضئك: “لبيك لبيك” ثلاثا “نصرت نصرت” ثلاثا كأنك تكلم إنسانا وهل كان معك أحد؟ قال: “هذا راجز بني كعب يستصرخني ويزعم أن قريشا أعانت عليهم بكر بن وائل”. ثم خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم فأمر عائشة أن تجهزه ولا تعلم أحدا قالت: فدخل عليها أبو.بكر فقال: يا بنية ما هذا الجهاز؟

হযরত মায়মুনা সালামুল্লাহি আলাইহা বলেন, আমি নবীজি ﷺ কে  একদিন অযু করার স্থানে  তিনবার লাব্বাইকা (আমি উপস্থিত, আমি উপস্থিত) এবং তিনবার নুসরিত (তোমাকে সাহায্য করা হয়েছে, তোমাকে  সাহায্য করা হয়েছে) বলতে শুনলাম।তিনি যখন বাইরে তাশরিফ আনলেন। তখন আমি আরয করলাম: ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমি আপনাকে অযু করার স্থানে তিনবার লাব্বাইক এবং তিনবার নুসরিত বলতে শুনলাম। এমন মনে হচ্ছিল যেন আপনি কোন মানুষের সাথে কথা বলছিলেন। অযুখানায় কি কেউ আপনার সাথে ছিল? হুযুর ﷺ ফরমালেন: হ্যাঁ, এ বনু কাবের জিহাদের ময়দানে পদ্য পাঠকারী আমাকে সাহায্যের জন্য আহবান করছিল এবং সে বলছিল যে, কুরাইশের লোকেরা তাদের বিরুদ্ধে বনু বকরকে সাহায্য করেছে। তিনদিন পর হুযুর ﷺ সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে ফজরের নামায পড়ালেন, তখন আমি শুনলাম যে, জিহাদের ময়দানে পদ্য পাঠকারী এ পংক্তিমালা পেশ করছিলেন:হে আল্লাহ! আমি মুহাম্মদ ﷺ কে আমার এবং হুযুর ﷺ এর পিতার প্রাচীন অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। নিঃসন্দেহে কুরাইশগণ হুযুর ﷺ এর সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছে। তারা এ ধারণা পােষণ করে যে, আমি আমার সাহায্যের জন্য কাউকে ডাকতে পারব না। আল্লাহ তাআলা হুযুর ﷺ কে তাওফিক দান করুন যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দৃঢ়ভাবে সাহায্য করেছেন।

[★মুজমাউয যাওয়ায়েদ,৬/১৬৩,১০২৮৮ নং হাদীস

★মু’জামুস সাগীর,১/৭৩-৭৫]

➤➤আলবিদায়া ওয়ান্নিহায়া তে আল্লামা হাফেয এমাদুদ্দীন ইবনে কাছীর উল্লেখ করেন-ইয়ারমুকের যুদ্ধে মুসলমানদের স্লোগান ছিল ‘ইয়া মুহাম্মাদ ﷺ ,৬/৩৪,দারু ইবনে কাছীর)

➤➤ওয়াক্বেদী উল্লেখ করেন,মাসউদ ইবনে ‘আউন আল ‘আজী থেকে বর্ণিত,উনি বলেন,’আমি সেই সৈন্যবাহিনীতে ছিলাম যা হযরত সৈয়্যদুনা উবায়দা ইবনে জাররাহ রাঃ এর বাহিনীর অগ্রগামী হিসেবে কা’ব ইবনুল যামারাহ রাঃ এর নেতৃত্বে ছিল।মুসলিম বাহিনীর উপর্যুপরি বিপদের কালে,এক পর্যায়ে হযরত কাব পতাকা হাতে নিয়ে বললেন,“ইয়া মুহাম্মাদ!হে মুহাম্মাদ ﷺ! হে আল্লাহর পক্ষ হতে আমাদের সাহায্যকারী!অবতীর্ণ হোন।”

[ফুতুহুশশাম,১/২৪০,ওয়াক্বেদী]

এখন আমরা জগৎবিখ্যাত মুহাদ্দিস এবং মনীষীগণের গৃহিত সিদ্ধান্ত এবং ফতোয়া ইত্যাদি দেখার চেষ্টা করবো।

➤➤শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দিহলভী উল্লেখ করেন,

قال الإمام الشافعي رحمة الله عليه: قبر موسى الكاظم ترياق مجرب لإجابة الدعاء ، وقال حجة الإسلام محمد الغزالي: كل من يستمد به في حياته يستمد به بعد وفاته

মানে,ইমাম শাফেয়ী র. বলেন,ইমাম মুসা আল কাযিম আলাইহিসসালাম এর মাজার পাক,দোয়া কবুলের কষ্টিপাথর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।এবং হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মাদ গাজ্জালী র. বলেন, যে হায়াতে থাকাকালে(জীবিত)  সাহায্য করতে পারে,সে ওফাতের পরেও সাহায্য করতে পারে।

[লুম’আতুত তানকীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবিহ,বাব যিয়ারাতিল ক্বুবুর,৪/২১৫, শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিসে দিহলভী র.]

শায়খ দেহলভী ঐ একই পৃষ্ঠায় এবং ‘যুব্দাতুল আছার ফি তালখিছে বাহজাতুল আসরার‘ কিতাবে উল্লেখ করেন, “আল্লামা শায়খ আক্বীল মানাজিহ র. বলেন,আমি এমন তিন/চার বুজুর্গানে কিরাম কে দেখেছি,যাদের হস্তক্ষেপ কবরের মধ্যেও বলবৎ আছে।তারা হলেন,শায়খ মারূফ কারখী,শায়খ আব্দুল ক্বাদের গাউসে আযম,শায়খ হায়াত বিন কায়েস হাররানী”।

➤➤ইমাম ইমাম ইবনে হিব্বান র. বলেন—

وما حلت بي شدة في وقت مقامي بـطوس فزرت قبر على بن موسى الرضا صلوات الله على جده وعليه ودعوت الله إزالتها عنى إلاّ استجيب لي، وزالت عنى تلك الشدة، وهذا شيء جرّبته مراراً، فوجدته كذلك. أماتنا الله على محبة المصطفى وأهل بيته صلى الله عليه وسلم الله عليه وعليهم أجمعين

মানে, (পারস্যের) “তুস শহরে অবস্থানকালে যখনই আমার কোন কঠিন অবস্থা পেশ হত এবং হযরত ইমাম আলী ইবনে মুসা আল- রেযা রাঃ র মাযার মুবারকে উপস্থিত হয়ে, আল্লাহ তা’আলার কাছে সেই মুশকিল দূর করার জন্য দোয়া করতাম। তখন সেই দোয়া অবশ্যই কবুল হয়ে যেত এবং মুশকিল দূর হয়ে যেত। এটা এমনই সত্য যা আমি বহুবার পরীক্ষা করেছি”।

[কিতাবুস সিকাত ,৮/৪৫৭পৃষ্ঠা, ক্রম-১৪০২, ইমাম ইবনে হিব্বান]

➤➤বিশ্বনন্দিত সীরাত গ্রন্থ “মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া” এবং বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার,আল্লামা শিহাবুদ্দীন কাস্তাল্লানী র. এর উস্তাদ শায়খ সৈয়্যদ যাররূক র.।শায়খ যাররূক র. আহলে কাশফ ছিলেন।অনেক কিতাবাদি রচনা করেন যার একটি হল ‘হাওয়াদিছুল ওয়াক্ত’।এটি খুবই উপকারী গ্রন্থ।যা ততকালীন সময়ে বিদ’আতী ফকির ও সূফিদের রদে, প্রায় ১০০অধ্যায় জুড়ে রচিত গ্রন্থ।[নাইলুল ইবতিহাজ,১/১৩১-১৩২ ,শায়খ আহমদ বাবা আল-তান্ বাকি র.]

 শায়খ যাররূক র. আল্লামা ইবনে তায়মিয়ার ভ্রান্ত আক্বিদা রদে কিতাব লিখেছেন।যার বর্ণনা এসেছে শায়খ ইউসুফ বিন ইসমাঈন নাবাহানি প্যালেস্টাইনির “শাওয়াহেদুল হাক্ব ফিল ইস্তিগাছায়ে সৈয়্যদুল খাল্ক”— কিতাবের মধ্যে।

সেই মহামনিষী শায়খ যাররূক বলেন,
→أنا لمريدي جامع الشتاته←
→إذا ما سطا جور الزمان بنكبة←
→وإن كنت في کرب وضيق ووحشة←
→فناد أيا زروق آت بسرعة

বা,(শায়খ যাররূক বলেন) “আমি আমার মুরীদের পেরেশানীতে শান্তনা দান করে থাকি, যখন যামানার বিপদাপদ তার উপর হামলা করে। যদি তুমি কোনরূপ বিপদাপদ ও কষ্টের মাঝে থাক, তবে হে যাররূক বলে, আমাকে আহবান করো, আমি তৎক্ষণাৎ তোমার কাছে গিয়ে হাজির হব।

[বুস্তানুল মুহাদ্দিসীন,২৪৩পৃষ্ঠা(আরবী),হাশিয়াতুশ শায়খ সৈয়্যদ যাররূক অধ্যায়,ইমাম শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী র. ]

➤➤শায়খুল ইসলাম,হিজরী ৮ম শতক এর মহান মুজাদ্দিদ,আল্লামা তকিউদ্দিন সুবকী র. বলেন, “(হে সত্যের অন্বেষণকারী!) তুমি জেনে রাখ, হুজুর নবী আকরাম ﷺ ওসীলা গ্রহণ, সাহায্য চাওয়া এবং আল্লাহ তা’আলার দরবারে শাফায়াতের প্রার্থনা করা বৈধ ও উত্তম এর বৈধতা ও সৌন্দর্য এমন সব বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত যা সকল মুমিনগন অবগত আছে এবং তা আম্বিয়া, মুরসালীন, সলফে সালেহীন, ওলামা ও সর্বসাধারণ মুসলমানদের পস্থা।”

[শিফাউস সিকাম,১৬০পৃষ্ঠা]

ইমাম সূয়ুতি উনার ‘তাবাকাতুল হুফফাজ’ এর প্রথম খন্ড ৫২৫পৃষ্ঠায় লিখেন-

الإمام الفقيه المحدث الحافظ المفسر الأصولي النحوي اللغوي الأديب المجتهد

আল্লামা তকিউদ্দিন সুবকি হলেন ইমাম,আল ফকিহ,মুহাদ্দিস,হাফিয,মুফাসসিরিল উসুলি ওয়ান নাহুই ওয়াল্লুগয়ি ওয়াল আদাব বা উসুল-নাহু-লুগাত-আদব এ পারদর্শী মুফাসসির।এর  মুজতাহিদ।উনি শায়খুল ইসলাম এবং যুগের ইমাম।

➤➤ফতহুল বারী প্রণেতা শায়খুল ইসলাম ইমাম আসকালানী বলেন,”হযরত আব্বাস রাঃ এর ঘটনা দ্বারা বুঝা গেলো,নবী ﷺ র পরিবার ও সালেহীন(নেককার) বান্দাদের উসীলা অন্বেষণ করা মুস্তাহাব।

[ফতহুল বারী,#১০১০ নং হাদীসের ব্যাখ্যা]

➤➤ইমাম শাফেয়ী র. বলেন, “আমি ইমাম আবু হানিফার সত্ত্বা দ্বারা বরকত লাভ করি এবং প্রত্যহ তার কবর যিয়ারতে আসি। যখন আমার কোন প্রয়ােজন ও মুশকিল পেশ হয়। তখন তার কবরে এসে  দুরাকাত নামায পড়ে এবং তার পাশে দাড়িয়ে হাজত পূরণের জন্য আল্লাহ তা আলার নিকট দোয়া করি। অতঃপর আমি সেখান থেকে আসতে না আসতেই আমার প্রয়ােজন পূর্ণ হয়ে যেত।”

[তারিখে বাগদাদ,১/১২৩,আল্লামা খাতিবে বাগদাদী]

➤➤ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল র. আল্লাহ তা’আলার কাছে দোয়া প্রার্থনা করে হযরত ইমাম শাফেয়ী র. ওসীলা বানিয়েছেন। এতে তাঁর পুত্র আবদুল্লাহ আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তখন ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল র. বললেন,”ইমাম শাফেয়ী র. মানুষের জন্য সূর্য এবং শরীরের জন্য সুস্থতা স্বরূপ।”
[শাওয়াহেদুল হক্ব,১৬৬পৃষ্ঠা,ইমাম ইউসুফ বিন ইসমাঈল নাবাহানী]

➤➤ইমাম ইবনে আব্দিল বার উল্লেখ করেন,লোকজন হযরত আবু আইয়্যুব আনসারী রাঃ এর মাজারের নিকট গিয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করলে বৃষ্টি হয়।
[আল ইস্তিয়াব,১/৪০৪-৪০৫,ইমাম ইবনে আব্দিল বার মালেকী]

ইমাম জওযী উল্লেখ করেন,”শায়খ হযরত মারূফ করখী রাঃ অত্যন্ত বুযর্গ মানুষ ছিলেন,যার দোয়া কবুল হতো।লোকেরা আরোগ্য লাভের জন্য আজও তার রওজা মুবারকের নিকট দাঁড়িয়ে দোয়া করে।বাগদাদবাসীরা বলেন, শায়খ মারূফ কারখীর রওজা এই ব্যাপারে অত্যন্ত পরিক্ষীত।”

[★সিফাতুস সফওয়া,২/২১৪,ইমাম ফারাজ ইবনুল জওযী★তারিখে বাগদাদ,১/১২২,ইমাম খাতিবে বাগদাদী★রিসালাতুল কুশাইরীয়া,৪১পৃষ্ঠা]

➤➤হুজুর গাউসে আযম রাদিআল্লাহু আনহু মুসিবত ও কষ্টের সময় ওসীলা নিয়ে হাজত পূরণের বরাত দিয়ে বলেছেন:”যে ব্যক্তি কোন কষ্টের সময় আমার ওসীলা নিয়ে সাহায্যের আবেদন করবেন। তার সেই কষ্ট দূর করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি কোন বিপদের সময় আমার নাম নেবে তার বিপদ দূর করে দেওয়া হবে। যে কোন হাজতের জন্য আল্লাহ তাআলার দরবারে আমার ওসীলা পেশ করবে, তার হাজত পূরণ করা হবে।”[বাহজাতুল আসরার ওয়ামা দিনুল আনওয়ার,পৃষ্ঠা ১০২,ইমাম শাত্বনূফী]

➤➤ইমাম ইবনুল হাজ (৭৩৭হি.) বলেন,
“আল্লাহ তাআলার একটি মহান সুন্নাত হচ্ছে যে, তিনি আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামদের কারণে এবং তাদের হাতেই  মানুষের হাজত সমূহ পূরণ করেন। যে লােক তাদের দরবারে উপস্থিত হতে পারবেনা, সে তাদের দরবারে সালাম প্রেরণ করবে এবং স্বীয় হাজত সমূহ ও গুণাসমূহের ক্ষমা, যাবতীয় গােপন দোষত্রুটি ইত্যাদি উল্লেখ করবে। কেননা তারা হচ্ছেন সম্মানিত সম্রান্ত বংশের অধিকারী। দয়ালু বুযুর্গগণ প্রশ্নকারী, ওসীলা গ্রহণকারী, আশাপােষনকারী এবং আশ্রয় প্রার্থীদের দোয়া ফিরিয়ে দেননা।”
[আল মাদখাল,১/২৫১-২৫২,ইমাম ইবনুল হাজ্জ আল ফার্সী]
উনি ২৫২ পৃষ্ঠায়,আরো লিখেন,”হুজুর সৈয়্যদুল আউয়ালীন ওয়াল আখেরীন ﷺ র যিয়ারতের সময় নিজের দুর্বলতা তথা বিনম্রতা, অনুনয় ও মুখাপেক্ষীতা অধিক হারে প্রকাশ করবে। হুজুর ﷺ এমন মকবুল উশ শাফায়াত ও সুপারিশকারী যাঁর শাফায়াত ফিরিয়ে দেওয়া হয়না। তার নিকট প্রত্যাশাকারী তার দরবারে হাজিরা প্রদানকারী তাঁর কাছ থেকে সাহায্য ও সহযােগিতা অক্বেষণকারীকে বঞ্চিত ফেরত দেওয়া হয়না। কেননা হুজুর নবী আকরাম ﷺ দায়েরা এ কামাল (সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের) কুতুব এবং আল্লাহর সাম্রাজ্যের দুলহা।”

➤➤আল্লামা হামযাভী র. উনার কিতাব ‘মাশারিকুল আনোয়ার’ এর ৫৯পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন—

“শায়খুল ইসলাম আল্লামা শিহাবুদ্দীন রামাল্লীকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল সর্বসাধারণ লােকেরা বিপদপাদের সময় ইয়া শায়খ অমুক ইত্যাদি বলে থাকে। মাশায়েখ কেরাম কি বেসালের পর সাহায্য করেন? তিনি বললেন, আউলিয়া আম্বিয়া, সালেহীন এবং আলেমগণের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া বৈধ। কেননা তারা বেসালের পর তেমনিভাবে সাহায্য করেন।যেমনি ভাবে স্বীয় জীবদ্দশায় সাহায্য করতেন।কেননা আউলিয়া কেরামের কারামত হচ্ছে নবীগণের মুজিযা।”

➤➤আল্লামা খায়রুদ্দিন রামাল্লী হলেন আল্লামা ইবনে আবেদীন শামির শিক্ষক।উনি বলেন,

সর্বসাধারণ মুসলমানদের ‘ইয়া শায়খ আব্দুল কাদির’ বলাটা আহবান এবং যখন এর সাথে ‘শাইয়াল্লিল্লাহ’ বৃদ্ধি করল তাহলে তা আল্লাহর মর্যাদা ও সম্ভুষ্টির জন্য কোন জিনিস কামনা করা। এটা হারাম হবার কী কারণ থাকতে পারে! এটাকে কুফর বলার কারণ এটা বলা হয় যে, এটা আল্লাহ তা’আলার কোন বস্তুর অন্বেষণ করা হয়। অথচ আল্লাহ তাআলা সবকিছু থেকে অমুখাপেক্ষী এবং সকলে তাঁর মুখাপেক্ষী। এ অর্থ কারাে ধারণায়ও আসে না। কেননা আল্লাহ তা’আলার যিকর হচ্ছে মর্যাদার জন্য যেমন আল্লাহর ইরশাদ হচ্ছে: তাহলে এর এক পঞ্চমাংশ আল্লাহর জন্য (রয়েছে) (ফাইন্না লিল্লাহি খুমুসাহ) এবং এর উদাহরণ অনেক।

[ফতোয়ায়ে রামাল্লী,২/২৮২]

➤➤আশরফ আলী থানভী দেওবন্দী এমদাদুল ফতােয়ার কিতাবুল আকায়েদ ওয়াল কালামে লিখেছেন যে, মানুষের পরাধীন শক্তি মেনে নিয়ে তার কাছে সাহায্য চাওয়া বৈধ। যদি ও মৃত ব্যক্তির কাছ থেকে চাওয়া হােক। তার বক্তব্য নিম্নরূপ:

“যেই এস্তেআনত ও এস্তেমদাদ (সাহায্য প্রার্থনা) ইলম ও কুদরত এর আকীদায় স্বতন্ত্র হয় তা শিরক এবং ইলম ও কুদরতের আকীদায় যা পরাধীন হয় এবং সেই ইলম ও কুদরত কোন দলীল দিয়ে প্রমাণিত হয়ে যায়, তখন তা বৈধ। চাই যার কাছে সাহায্য চাওয়া হয় সে জীবিত হােক কিংবা বেসালপ্রাপ্ত হােক।”

[আশরাফ আলী থানবী : এমদাদুল ফতােয়া, কিতাবুল আকায়েদ, খন্ড : ৪, পৃষ্ঠা : ৯৯]

উনি উনার পীর হাজী এমদাদুল্লাহ মহাজেরে মক্কীর ব্যাপারে লিখেন,

“হে আমার মুর্শিদ! আমার মওলা! আমার ভয়ের সময়ের আশ্রয়স্থল। আমার দুনিয়ার, আমার দ্বীনের হে আশ্রয়স্থল। হে আমার সাহায্যকারী! আমার উপর দয়া কর, কেননা আমি আপনার মুহাব্বত ব্যতীত পথের সম্বল অন্য কিছু রাখি না। আপনার কারণে মানুষ সফল হয়েছে। আমি পেরেশান, সুতরাং হে পথপ্রদর্শক, আমার প্রতি দয়ার দৃষ্টি দান করুন। আমার সর্দার! আল্লাহর ওয়াস্তে কিছু দান করুন। আপনি আমার দাত’, আমি আল্লাহর ওয়াস্তে আপনার ভিখারী।”

[তাযকেরাতুর রশীদ,১/১১৪]

এসব আলোচনা থেকে এটাই স্পষ্ট হয় যে,আল্লাহর সালেহীন বান্দাদের কাছে,আল্লাহর দেয়া ক্ষমতায় তারা ক্ষমতাবান এটা মনে করে সাহায্য চাওয়া,উসীলা তালাশ করা বৈধ হবে।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment