ফাযায়েলে মোস্তফা (ﷺ) : সাহাবীগণ থেকে নবীপ্রেমের শিক্ষা
সংকলকঃ মাসুম বিল্লাহ সানি
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর চুল মুবারক পেতে সাহাবীগণের প্রতিযোগিতা
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا أَبُو النَّضْرِ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ، عَنْ ثَابِتٍ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَالْحَلاَّقُ يَحْلِقُهُ وَأَطَافَ بِهِ أَصْحَابُهُ فَمَا يُرِيدُونَ أَنْ تَقَعَ شَعْرَةٌ إِلاَّ فِي يَدِ رَجُلٍ .
তিনি বলেন, আমি দেখেছি নাপিত রসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চুল ছাটছে আর সহাবীরা তাঁর চতুর্পাশ ঘিরে রেখেছেন। তাঁরা চাইতেন যে, কোন চুল যেন মাটিতে না পড়ে তা যেন কারো না কারো হাতে পড়ে। (৫৯৩৭, ই.ফা. ৫৮৩৬, ই.সে.৫৮৭১)
হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস
সহিহ মুসলিমঃ ৪৪ ফযীলত, ১৯. অধ্যায়ঃ সৎ লোকদের সাথে নবী (আঃ)-এর আচরণ, তাঁর মাধ্যমে তাঁদের পুণ্য লাভকরণ।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর উযূর পানি নিয়ে সাহাবীগণের প্রতিযোগিতাঃ
وَعَنْ أَبِي جُحَيْفَةَ قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ بِمَكَّةَ وَهُوَ بِالاَبْطَحِ فِي قُبَّةٍ حَمْرَاءَ مِنْ أَدَمٍ وَرَأَيْتُ بِلَالًا أَخَذَ وَضُوءَ رَسُولِ اللهِ ﷺ وَرَأَيْتُ النَّاسَ يَبْتَدِرُونَ ذَاكَ الْوَضُوءَ فَمَنْ أَصَابَ مِنْهُ شَيْئًا تَمَسَّحَ بِه وَمَنْ لَمْ يُصِبْ مِنْهُ أَخَذَ مِنْ بَلَلِ يَدِ صَاحِبِه ثُمَّ رَأَيْتُ بِلَالًا أَخَذَ عَنَزَةً فَرَكَزَهَا وَخَرَجَ رَسُوْلُ الله ﷺ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مُشَمِّرًا صَلّى إِلَى الْعَنَزَةِ بِالنَّاسِ رَكْعَتَيْنِ وَرَأَيْتُ النَّاسَ وَالدَّوَابَّ يَمُرُّونَ مِنْ بَيْنِ يَدَيْ الْعَنَزَةِ. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
আবূ জুহায়ফাহ্ (রাঃ) তিনি বলেন, আমি একবার মাক্কার ‘আবতাহ্’ নামক স্থানে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে একটি চামড়ার লাল তাঁবুতে দেখতে পেলাম। বিলালকে দেখলাম রাসূলু্ল্লাহ (ﷺ)-এর উযূর পানি হাতে তুলে নিতে। আর (অন্যান্য) লোকদেরকে দেখলাম উযূর অবশিষ্ট পানি নিবার জন্য কাড়াকাড়ি করছে। যারা তাঁর ব্যবহারের অবশিষ্ট উযূর পানি আনতে পেরেছে তারাই তা’ বারাকাতের জন্যে সারা শরীর ও মুখমণ্ডলে মাখছে। আর যারা উযূর পানি আনতে পারেনি তারা সঙ্গী সাথীদের (যারা পানি পেয়েছে) ভিজা হাত স্পর্শ করছে। এরপর আমি বিলালকে দেখলাম, হাতে একটি বর্শা নিল ও তা মাটিতে পুঁতে দিল। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বের হয়ে এলেন। কাপড়ের কিনারা সামলে লোকদেরকে নিয়ে দুই রাক’আত সলাত আদায় করলেন। সে বর্শাটি তখন তাঁর সামনে ছিল। এ সময় মানুষ ও জন্তু-জানোয়ারকে দেখলাম বর্শার বাইরে দিয়ে যাতায়াত করছে।
[সহীহ : বুখারী ৩৭৬, মুসলিম ৫০৩, আবূ দাঊদ ৫২০, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ্ ২৩৯৪। হাদিসের মানঃ সহিহ হাদিস]
773 -[2] (مُتَّفق عَلَيْهِ)
وَعَن أَبِي جُحَيْفَةَ قَالَ: رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِمَكَّةَ وَهُوَ بِالْأَبْطَحِ فِي قُبَّهٍ حَمْرَاءَ مِنْ أَدَمٍ وَرَأَيْتُ بِلَالًا أَخَذَ وَضُوءَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَرَأَيْتُ النَّاسَ يبتدرون ذَاك الْوَضُوءَ فَمَنْ أَصَابَ مِنْهُ شَيْئًا تَمَسَّحَ بِهِ وَمن لم يصب مِنْهُ شَيْئا أَخَذَ مِنْ بَلَلِ يَدِ صَاحِبِهِ ثُمَّ رَأَيْتُ بِلَالًا أَخَذَ عَنَزَةً فَرَكَزَهَا وَخَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي حُلَّةٍ حَمْرَاءَ مُشَمِّرًا صَلَّى إِلَى الْعَنَزَةِ بِالنَّاسِ رَكْعَتَيْنِ وَرَأَيْت النَّاس وَالدَّوَاب يَمرونَ من بَين يَدي العنزة
মিশকাত শরীফ ৭৩ পৃঃ হযরত বেলাল (রাঃ) ও হযরত হুযায়ফা (রাঃ) (বুখারী শরীফ ১ম খন্ড ৪২৪ পৃঃ ও মুসলিম শরীফ) (বুখারী শরীফ ১ম খন্ড ১৩১ পৃঃ ও ২য় খন্ড ৮৭১ পৃঃ) (বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৬৫৮ পৃঃ হযরত জাবের (রাঃ) বুখারী শরীফ ২য় খন্ড ৮৭৪)
মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদিস নং ৭৭৩, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস
4990 -[44] (حسن)
عَنْ
عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي قُرَادٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَوَضَّأَ يَوْمًا فَجَعَلَ أَصْحَابُهُ يَتَمَسَّحُونَ بِوَضُوئِهِ فَقَالَ لَهُمُ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَا يَحْمِلُكُمْ عَلَى هَذَا؟» قَالُوا: حَبُّ اللَّهِ وَرَسُولِهِ. فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ سَرَّهُ أَنْ يحب الله وَرَسُوله أويحبه اللَّهُ وَرَسُولُهُ فَلْيُصَدِّقْ حَدِيثَهُ إِذَا حَدَّثَ وَلْيُؤَدِّ أَمَانَتَهُ إِذَا أُؤْتُمِنَ وَلِيُحْسِنَ جِوَارَ مَنْ جَاوَرَهُ»
মিশকাত শরীফ ৪২৪ পৃঃ[15] بَابُ الشَّفَقَةِ وَالرَّحْمَةِ
عَلَى الْخَلْقِ কিতাবুল আদব ,বাবুশ শফকা ওয়ার রাহমাতি আলাল খালকি , আব্দুর রহমান ইবনে আবু কুরাদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,
রাসূলে খোদার সময়ে সাহাবায়ে কেরামগণ নবীজী এবং তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবহার্য দ্রব্যাদির ও বিচিত্র বস্তুকে তাবাররুক হিসেবে গ্রহণ করার জন্যে উদগ্রিব থাকতেন। তাঁর ব্যবহৃত জিনিস-পত্রকে তাঁরা অত্যন্ত পবিত্র মনে করে সেগুলোকে পবিত্র উদ্দেশ্যেই ব্যবহার করতেন। নবীজীও কখনো সাহাবাদেরকে এ কাজ করতে নিষেধ করেন নি।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর থুথু মুবারক, চুল মুবারক ও উযূর পানি নিয়ে সাহাবীগণের প্রতিযোগিতাঃ
ثُمَّ إِنَّ عُرْوَةَ جَعَلَ يَرْمُقُ أَصْحَابَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِعَيْنَيْهِ. قَالَ فَوَاللَّهِ مَا تَنَخَّمَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم نُخَامَةً إِلاَّ وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمُ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ، وَإِذَا تَوَضَّأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ، وَإِذَا تَكَلَّمَ خَفَضُوا أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَهُ، وَمَا يُحِدُّونَ إِلَيْهِ النَّظَرَ تَعْظِيمًا لَهُ، فَرَجَعَ عُرْوَةُ إِلَى أَصْحَابِهِ، فَقَالَ أَىْ قَوْمِ، وَاللَّهِ لَقَدْ وَفَدْتُ عَلَى الْمُلُوكِ، وَوَفَدْتُ عَلَى قَيْصَرَ وَكِسْرَى وَالنَّجَاشِيِّ وَاللَّهِ إِنْ رَأَيْتُ مَلِكًا قَطُّ، يُعَظِّمُهُ أَصْحَابُهُ مَا يُعَظِّمُ أَصْحَابُ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم مُحَمَّدًا، وَاللَّهِ إِنْ تَنَخَّمَ نُخَامَةً إِلاَّ وَقَعَتْ فِي كَفِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ، فَدَلَكَ بِهَا وَجْهَهُ وَجِلْدَهُ، وَإِذَا أَمَرَهُمُ ابْتَدَرُوا أَمْرَهُ وَإِذَا تَوَضَّأَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ، وَإِذَا تَكَلَّمَ خَفَضُوا أَصْوَاتَهُمْ عِنْدَهُ، وَمَا يُحِدُّونَ إِلَيْهِ النَّظَرَ تَعْظِيمًا لَهُ،
অতঃপর ‘উরওয়াহ চোখের কোণ দিয়ে সাহাবীদের দিকে তাকাতে লাগল। সে বলল, আল্লাহর কসম!
*আল্লাহর রসূল (ﷺ) কখনো থুথু ফেললে তা সাহাবীদের হাতে পড়তো এবং তা তারা গায়ে মুখে মেখে ফেলতেন।
*তিনি তাঁদের কোন আদেশ দিলে তা তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে পালন করতেন।
*তিনি ওযু করলে তাঁর ওযুর পানির জন্য তাঁর সাহাবীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হত।
*তিনি যখন কথা বলতেন, তখন তাঁরা নীরবে তা শুনতেন এবং তাঁর সম্মানার্থে সাহাবীগণ তাঁর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেন না।
*অতঃপর ‘উরওয়াহ তার সঙ্গীদের নিকট ফিরে গেল এবং বলল, হে আমার কওম, আল্লাহর কসম! আমি অনেক রাজা-বাদশাহর দরবারে প্রতিনিধিত্ব করেছি। কায়সার, কিসরা ও নাজাশী সম্রাটের দরবারে দূত হিসেবে গিয়েছি; কিন্তু আল্লাহর কসম করে বলতে পারি যে, কোন রাজা বাদশাহকেই তার অনুসারীদের মত এত সম্মান করতে দেখিনি, যেমন মুহাম্মাদের অনুসারীরা তাঁকে করে থাকে। আল্লাহর কসম! আল্লাহর রসূল (ﷺ) যদি থুথু ফেলেন, তখন তা কোন সাহাবীর হাতে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে তারা তা তাদের গায়ে মুখে মেখে ফেলেন। তিনি কোন আদেশ দিলে তারা তা সঙ্গে সঙ্গে পালন করেন; তিনি ওযু করলে তাঁর ওযুর পানি নিয়ে সাহাবীগণের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়; তিনি কথা বললে, সাহাবীগণ নিশ্চুপ হয়ে শুনেন। এমনকি তাঁর সম্মানার্থে তারা তাঁর চেহারার দিকেও তাকান না। (বুখারী-২৭৩১, ২৭৩২)
হজ্বের সময় রাসূলে আকরাম ﷺ যখন তাঁর চুল মোবারক কাটতেন, সাহাবাগণ তখন নবীজীর কর্তিত চুল মোবারকগুলো জমা করতেন পবিত্রতা ও বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে। একইভাবে নবীজী যখন কোনো পানির মশকের মুখ দিয়ে পানি পান করতেন সাহাবিগণ ঐ মশকের মুখ কেটে নিতেন বরকতের উদ্দেশ্যে।
তাই মদিনা শরিফের মাটি, ধুলো-বালি এমনকি ফল-ফলাদি অন্য কোন মাটি, ধুলো-বালি ও ফল-ফলাদিও সাথে তুলনা হয় না। মদিনা শরিফের মাটি, ধুলো-বালি হলো জ্বর, কুষ্ঠ রোগ ও শ্বেত রোগের জন্যে শিফা।
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا: أَنَّ النَّبِيِّ – صلى الله عليه وسلم – كَانَ يَقُولُ لِلمَرِيضِ: ” بِسْمِ اللهِ تربَةُ أَرْضِنَا، بِرِيقةِ بَعْضِنَا، يُشْفَى سَقِيمُنَا، بإِذْنِ رَبِّنَا “.
হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম ﷺ তাঁর নিকট আসা রোগীদের চিকিৎসা করতেন এভাবে: “বিসমিল্লাহ, আমাদের এ মাটি আমাদের কারও লালার সাথে মিশ্রিত করে রোগীর জণ্য ব্যবহার করলে আমাদের রোগীরা আরোগ্য লাভ করবে আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায়।” (বোখারী, ১১২৪)
নবীজী মদীনা শরীফে প্রবেশ করলে মদীনার অবস্থাঃ
5962 -[7] (صَحِيح)
عَن أَنَسٍ قَالَ: لَمَّا قَدِمَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ لَعِبَتِ الْحَبَشَةُ بِحِرَابِهِمْ فَرَحًا لِقُدُومِهِ. رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ
وَفِي رِوَايَةِ الدَّارِمِيِّ (صَحِيح)
قَالَ: مَا رَأَيْتُ يَوْمًا قَطُّ كَانَ أَحْسَنَ وَلَا أَضْوَأَ مِنْ يَوْمٍ دَخَلَ عَلَيْنَا فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا رَأَيْت يَوْمًا كَانَ أقبح وأظلم مِنْ يَوْمٍ مَاتَ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
وَفِي رِوَايَةِ التِّرْمِذِيِّ قَالَ: لَمَّا كَانَ الْيَوْمُ الَّذِي دَخَلَ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمَدِينَةَ أَضَاءَ مِنْهَا كُلُّ شَيْءٍ فَلَمَّا كَانَ الْيَوْمُ الَّذِي مَاتَ فِيهِ أَظْلَمَ مِنْهَا كُلُّ شَيْءٍ وَمَا نَفَضْنَا أَيْدِيَنَا عَنِ التُّرَابِ وَإِنَّا لَفِي دَفْنِهِ حَتَّى أَنْكَرْنَا قُلُوبنَا
মিশকাত শরীফ ৫৪৭ পৃঃ হযরত আনাস (রাঃ) (মুসলিম শরীফ ২য় ৪১৯পৃঃ )